id
stringlengths
8
103
url
stringlengths
33
357
title
stringlengths
0
175
summary
stringlengths
0
1.51k
text
stringlengths
30
235k
151206_india_sunny_leoni_joins_intolerance_debate
https://www.bbc.com/bengali/news/2015/12/151206_india_sunny_leoni_joins_intolerance_debate
ভারতে 'অসহিষ্ণুতা' বিতর্কে যোগ দিলেন সানি লিওনি
ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তাতে এবার যোগ দিয়েছেন বলিউড চিত্রনায়িকা সানি লিওনি। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অভিনেতা আমির খানের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করলেও তিনি বলছেন, "ভারত যদি নিরাপদ না হতো - তাহলে আমি এখানে থাকতাম না।"
সানি লিওনি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ায় বলিউডের জনপ্রিয় তারকা আমির খান 'ভারত ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবেন কিনা' এ বিষয়ে তার স্ত্রীর সাথে আলাপ করেছেন - এ কথা বলার পর থেকেই ভারতের রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তবে বলিউড অভিনেত্রী এবং সাবেক পর্নো-তারকা সানি লিওনি আজ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "অসহিষ্ণুতা শব্দটি ব্যবহার আমার কাছে 'ইন্টারেস্টিং' বলে মনে হয়েছে। আমি আমার নিজের ব্যাপারে বলতে পারি, ভারতকে আমি ভালোবাসি এবং থাকার জন্য এটা একটা দারুণ জায়গা। যদি এ দেশ নিরাপদ না-ই হতো, তাহলে আমি এখানে থাকতাম না।" আমির খান তবে তিনি এটাও বলেন, "মিডিয়ায় সাধারণ মন্তব্যকেও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয় এবং আমার ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে। সে কারণে আমির খানের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে।" ভারতীয়-কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত সানি লিওনিকে সাধারণত রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে দূরেই থাকতে দেখা গেছে। তবে 'অসহিষ্ণুতা-বিতর্ক' নিয়ে মুখ খোলার পর সমালোচকরা বলছেন, সানি লিওনির আগামি ছবি 'মস্তিজাদে' যাতে সেন্সর বোর্ডের কাঁচি এড়িয়ে মুক্তি পেতে পারে - সে জন্যই তিনি এসব কথা বলে বর্তমান হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারকে খুশি করতে চাইছেন।
news-49886803
https://www.bbc.com/bengali/news-49886803
বেঁটে হওয়ার যত সুবিধা এবং অসুবিধা
পুরুষদের কাছে বেঁটে হওয়া অপছন্দের একটা ব্যাপার, কিন্তু অ্যালান মট্ট, যিনি কানাডার পুরুষদের চেয়ে গড়ে সাত ইঞ্চি বেশি খাটো, এই অভাবকেই বিশেষভাবে কাজে লাগিয়েছেন। এখানে বলা হয়েছে তার সেই গল্প:
ভাইয়ের ছেলে স্নাতক হওয়ার দিকে জড়িয়ে ধরেছেন অ্যালান আপনি কি কখনো বিপরীত লিঙ্গের সদস্যদের কাছে (নারী) জনপ্রিয় হওয়ার অভিজ্ঞতা পেয়েছেন? যখন আমি স্কুলের খেলার জায়গায় খেলা করতে যেতাম, তখন আমার ক্ষেত্রে ঠিক এই ব্যাপারটি ঘটেছে। যখন আমি সেখানে যেতাম, তখনি বড় বড় মেয়েরা চিৎকার করতে শুরু করতো আর আমার পেছনে ছুটতে শুরু করতো, যতক্ষণ না আমার পালানোর সব পথ বন্ধ হয়ে যেতো। যখন তারা আমাকে ধরতে পারতো, আমাকে জড়িয়ে ধরে গলায় চুমু দিতো। এরপরে আমি খেলার সুযোগ পেতাম অথবা আরেকটা দলের কাছে একই ঘটনায় পড়তে হতো। আমার বয়স ছিল পাঁচ যাকে সবাই আদর করতো, যে ছিল ক্যানাডার আলবার্টা অঙ্গরাজ্যের এডমন্টনের মি-হা-নোহ স্কুলের সবচেয়ে ক্ষুদে শিশু। এমনকি ওই বয়সেও, আমি বুঝতে পারতাম যে, ছোট হওয়ার কারণেই মানুষজন আমার সঙ্গে আলাদাভাবে ব্যবহার করছে। যেটা তখন আমি বুঝতে পারিনি, তা হল, পরের বছরেই এই আচরণ পাল্টে অগ্রহণযোগ্য একটা অবস্থায় রূপ নেয়। আরো পড়ুন: বেঁটে মানুষদের ফুটবলার হয়ে ওঠার লড়াই 'আমি তো বলিনি যে কিম জং আন 'বেঁটে আর মোটা' দেখুন: আপনি কতদিন তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন স্কুলে পড়ার সময় অ্যালান মট্ট আমি ছিলাম সবার আদরের একটি ছোট্ট শিশু, ক্লাসের সবচেয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থী। আগে আমি বাইরে যেতে পছন্দ করতাম। কিন্তু খেলার স্থানে বাজে মন্তব্যের কারণে খেলার সময়ে আমি বরং লাইব্রেরিয়ানকে বই গোছাতে সাহায্য করতে শুরু করলাম। সত্যি কথাটি হলো, বংশগত কারণেই আমার আর লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আমার মা মাত্র পাঁচ ফুট লম্বা আর আমার বাবা ছিলেন পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা। সুতরাং আমাদের চিকিৎসক ধারণা করলেন, ভাগ্য খুব ভালো হলে আমি হয়তো সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা হতে পারি, যা কানাডার পুরুষদের গড় উচ্চতা থেকে বেশ নিচে। এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, চিকিৎসক ভুল বলেননি। আমার ১৩-তম জন্মদিনের পর আমার উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেল। আমার সারা জীবনের উচ্চতা শেষ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ালো পাঁচ ফিট এক ইঞ্চি। বামন হিসাবে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সরকারি বা চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে উচ্চতার কথা বলা হয়েছে, তার চেয়ে আমার উচ্চতা মাত্র চার ইঞ্চি বেশি। পশ্চিমা সমাজে একজন বেঁটে ব্যক্তি হিসাবে জন্ম নেয়ার কারণে যা ঘটে, পরের বছরগুলোতে আমি সে বিষয়গুলো লক্ষ্য করলাম: ১. এটা ভীতিকর একটা ব্যাপার। ২. এ নিয়ে আপনার অভিযোগ কেউ শুনতে চায় না। আমি এই বিষয়ে অনেকটা চুপ করে থাকতে শুরু করলাম। আমি শুনতাম অনেক মানুষ আমাকে বলছে, ''এই যে, এদিকে আসো। বেঁটে হওয়ার জন্য তোমার সঙ্গে কেউ আলাদা আচরণ করবে না।'' (যেসব মানুষ এই কথা আমাকে বলেছে, তাদের সবার উচ্চতা কমপক্ষে পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি।) কিন্তু আমি জানি, আমাদের সমাজে খাটো হিসাবে জন্ম নেয়ার বাস্তবতা কি? লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম নিয়ে যতটা বৈষম্য রয়েছে, তেমনি উচ্চতা নিয়েও তেমন বৈষম্য রয়েছে। ফরচুনের পাঁচশ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের একটি তালিকা একবার আমার চোখে পড়ে। সেখানে বেশিরভাগই পুরুষ, হাতে গোনা কয়েকজন সপ্রতিভ নারী, তাদের সবার উচ্চতা প্রায় ছয় ফিট। অনেকে এর চেয়েও বেশি লম্বা ছিলেন। এটা গোপন কিছু নয় যে, একই কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে কম আয় করে। মানুষের এটাও জানা উচিত যে, চাকরির বেতনের ক্ষেত্রে উচ্চতাও একটি বড় বিষয়। ম্যালকম গ্লাডওয়েলের লেখা বই, ব্লিকের তথ্য অনুযায়ী, ধারণা করা হয় যে, প্রতি ইঞ্চি উচ্চতার জন্য বার্ষিক বেতনে অতিরিক্ত ৭৮৯ ডলার বেশি হতে পারে। এর মানে হল, যে ব্যক্তির উচ্চতা ছয় ফিট, তিনি আমার সঙ্গে একই চাকরি থাকলেও, আমার চেয়ে বছরে ৭৮৯০ ডলার বেশি আয় করবেন। যখন আমি এটা পড়লাম, আমার কাছে অবাক লাগলো না। আমার হৃদয় জানতো, আমি সবসময়েই জানতাম, এটা সত্যি। বেঁটে ব্যক্তিদের সমাজ এই শিক্ষা দেয় যে, তাদের দিকে যা ছুড়ে দেয়া হবে, সেটাই তাদের গ্রহণ করা উচিত। যখন আমি একটা নতুন চাকরি পেলাম আর তারা আমাকে নির্দিষ্ট একটা বেতনের কথা বললো, আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বললো, ''আমি যা আশা করছিলাম এটা তার চেয়ে কম। আচ্ছা, ঠিক আছে, আমার এটা গ্রহণ করা উচিত।'' হয়তো একটা লম্বা ব্যক্তির অন্যরকম অনুভূতি হতো, তিনি হয়তো বলতেন, ''না, আমার আরো দশ হাজার বেশি দরকার।'' আপনার কি কখনো একটি রুমে ঢোকার পরে মনে হয়েছে যে, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনাকে যাচাই করে বাতিল করে দেয়া হল? বেঁটে মানুষরা এই অনুভূতি খুব ভালো করে জানে। এখানেই সেই কষ্টকর শব্দ ''লিটল নেপোলিয়ন'' এসেছে, যার মাধ্যমে খাটো মানুষের সফল হওয়ার স্বপ্ন নাকচ করে দেয়া হয়। যদি ছয় ফিট উচ্চতার একজন পুরুষ নিজের জন্য দাঁড়ায়, সেটাকে বলা হয় আত্মবিশ্বাস। কিন্তু আমার উচ্চতার কাউকে লড়াই করতে দেখলে বলা হয় নিরাপত্তাহীনতায় এবং অভাবে রয়েছে। কানাডার নারীদের গড় উচ্চতা পাঁচ ফিট সাড়ে চার ইঞ্চি একসময় বাজারজাতকরণের একটি চাকরি করতাম, সেখানে নানা মিটিংয়ে আমাকে কথা বলতে হতো। আমি যেসব পরামর্শ দিতাম, সেগুলো বাতিল করে দেয়া হতো, কিন্তু কয়েক মিনিট পরে আরেকজনের একই ধরণের পরামর্শ মেনে নেয়া হতো। মিটিংয়ের লোকজন বলতো, ''খুব ভালো একটা আইডিয়া হয়েছে।'' আমার নিজের বক্তব্য শোনানোর জন্য আমাকে লড়াই করতে হতো, কিন্তু এরপরে বিরক্তিকরভাবে চাপ দিতে শুরু করলাম। কারণ আমার পরামর্শ যত ভালোই হোক না কেন, সেটা গ্রহণ করা হবে না বলে যেন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে,যে আমার ভালো কিছু বলার ক্ষমতা নেই। আমি দেখেছি, আমার অনেক নারী সহকর্মী ও বন্ধুদের একই ধরণের ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তারা এই ধরণের বৈষম্যকে লিঙ্গ বৈষম্য বলে দেখলেও, আমি অবাক হয়ে ভাবতাম আকৃতির কারণেও এটা কতটা হচ্ছে? অনেক সময় আমি নিজেকে প্রশ্ন করতাম যে, আমি কি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ''হয়তো এই মানুষগুলো সবার সঙ্গে এরকম আচরণই করে?'' আমি ভাবতাম। তবে একটি বৈঠকে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল। সেখানে চিন্তা করার একটা পর্ব ছিল, যেখানে একটা প্রকল্পের ব্যাপারে সবাই পরামর্শ দিচ্ছিল। সেই পর্বে আমি বললাম, ''এটা বিপরীত দিক থেকে শুরু করা যায় না?'' ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে চুপ করতে বললেন। পুরো রুমটি নীরব হয়ে গেল এবং তিনি বুঝতে পারলেন কাজটা ঠিক হয়নি। আমি একজন সহকর্মীকে ধন্যবাদ দেবো, তিনি আমার পক্ষে অবস্থান নিলেন। ''এই বৈঠকে চালিয়ে যাওয়া সত্যিই খুব কঠিন, যখন আপনি অ্যালানকে এভাবে চুপ করিয়ে দেবেন।'' তিনি বললেন। অন্য সবাই একমত হওয়ায় আমার কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল, কোন কারণ ছাড়াই তিনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে আসছিলেন। গানের মঞ্চে জনপ্রিয় গায়ক প্রিন্স প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি ঘটে? বাস্তবতা হলো, একজন বেঁটে মানুষ হিসাবে দশজন নারীর মধ্যে আটজনই আপনাকে একজন সম্ভাব্য যৌন সঙ্গী হিসাবে প্রথম দেখায় নাকচ করে দেবে। বাকি দুইজনও হয়তো চলে যাওয়ার কারণ খোঁজার আগে, আপনাকে তুলে ধরার জন্য কয়েক মিনিটের সুযোগ দিতে পারে। যখন আমি আমার নারী বন্ধুদের বলি যে, নারীরা বেঁটে মানুষদের সঙ্গে ডেটিং করতে পছন্দ করে না, তারা সবসময়েই একই কথা বলে: ''এটা সত্যি নয়। "আমি নিশ্চিত, অনেক মেয়ে আছে যারা বেঁটে মানুষদের পছন্দ করে।'' ''তুমি কি এরকম কারো সঙ্গে প্রেম করেছো?'' আমি জানতে চাই। ''উমম, না...'' তাদের জবাব। ''তুমি কি করবে?'' তখন একটি অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে আসে। স্টিভেন লেভিট এবং স্টিফেন ডুবনারের জনপ্রিয় বই ফ্রেকোনোমিক্সে বলা হয়েছে, অন্য যেকোনো গ্রুপের তুলনামূলক বেঁটে মানুষরা অনলাইনে ডেটিং প্রোফাইলে অনেক কম সাড়া পেয়ে থাকে। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে, যা অনেকেই তুলে ধরতে পছন্দ করে। ''নারীরা প্রিন্সকে (গায়ক) ভালোবাসে এবং সেও ছিল বেঁটে,'' এমন কথা আমি অনেকবার শুনেছি। সুতরাং এখন আমার যা করা উচিত যে, আমার পুরো জীবনটা আট ইঞ্চি উঁচু জুতা পড়ে থাকতে হবে, এবং সংগীতের একজন জনপ্রিয় তারকা হতে হবে, যার লাইভ কনসার্টগুলো হবে তার প্রজন্মের সেরা অনুষ্ঠান। আমি একজন বেঁটে পুরুষের কথা শুনেছি, যে লম্বা নারীদের পাশে অস্বস্তিতে ভুগতো। আমার ধারণা, সব নারীরাও একই রকম অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়। আমার লম্বা নারী বন্ধুদের বলতে শুনেছি: '' সে আমাকে হাই হিল পড়তে দেয় না'' এবং ''মানুষ আমাদের দিকে কিভাবে তাকাচ্ছে, সেটা নিয়ে সে খু্বই চিন্তিত'' ইত্যাদি। কিন্তু আমার সঙ্গী যদি ছয় ফিট লম্বাও হতো, আমি তা নিয়ে একদম ভাবতাম না। অনেক মানুষ অবচেতন মনে ভাবে যে উচ্চতার সঙ্গে শক্তি, বুদ্ধি এবং প্রভাবের সম্পর্ক আছে। এ কারণে বেঁটে মানুষদের তুলনায় লম্বা ব্যক্তিরা ভালো নেতা হয় বলে মনে করা হয়। আমি স্বীকার করি, অনেক সময় আমি মনে করি, যেমন হওয়া উচিত, তার চেয়েও আমি আমার জীবনটা খারাপভাবে কাটাচ্ছি। যদি আমার উচ্চতা আর পাঁচ ইঞ্চি বেশি হতো, তাহলে কি জীবনটা আরো সহজ হতো? হয়তো। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি যে জীবন কাটাচ্ছি, সেটা অসহ্য কষ্টের আর যন্ত্রণায় ভরা। মঞ্চে অ্যালান মট্ট আজ আমি যা হয়েছি, তার কারণও আমার উচ্চতা। এটা আমাকে ঝুঁকি নেয়ার সাহস দিয়েছে, যাকে আমি বলি 'প্যারাসুট সিনড্রোম। ভীতিকর একটি পরিস্থিতিতে, আমি অন্যদের মতো ভয় পেলেও, আমার প্রতিক্রিয়া হয়: আচ্ছা ঠিক আছে, আমি একটি বিমানের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি-হয়তো লাফ দিতেও হবে। এর চেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে?'' একসময় যখন আমি নতুন একটি চাকরি শুরু করি, তখন কোম্পানি সব কর্মীকে নিয়ে এডমন্টনে একটি কনসার্ট এরিনায় বৈঠকের আয়োজন করেছিল। তখন একটা রীতি ছিল যে, কোম্পানিতে যোগ দেয়া নতুন কর্মীদের জন্য একটি অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। ওই ভ্যেনুতে ব্রুনো মার্স (যে আমার চেয়ে ৩ ইঞ্চি লম্বা) গান গেয়েছিল, তাই তার একটি গান আমাদেরও গাইতে বলা হল। স্টেজে সবাই গুঞ্জন শুরু করলো যে, আমরা এটা করবো না। আমি ব্রুনো মার্সের কোন গান কখনো শুনি নি। সুতরাং আমি আমার ফোনে গুগল করে তার গানের কথা খুঁজে বের করলাম এবং মাইক্রোফোন কাছে টেনে নিলাম। আমি সুরটা জানতাম না, সুতরাং আমি চোরুসের 'লকড আউট অফ হেভেন' গানের সুরে গান গাইতে শুরু করলাম, সবার সামনে, যাদের সঙ্গে আমার নতুন কর্মজীবন শুরু হচ্ছে। যখন আমি সবার সামনে এই কাজটি করলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঙ্গে সঙ্গে আমার নাম জেনে গেলেন। এটা করার আত্মবিশ্বাস আমার ছিল, কারণ আমার সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে দেয়ার অদম্য ইচ্ছা আমার ছিল। তারা হয়তো আশা করে আমি চুপচাপ থাকবো আর নিজেকে গুটিয়ে রাখবো। কিন্তু আমি তো বিমান থেকে ঝাপ দিতে পারি। আশা করা যায়, তখন আমার প্যারাসুট ঠিকঠাক কাজ করবে। আমি এখন একজন লেখক, আর কারণও হয়তো আমার বেঁটে হওয়া। আমি আগেই উল্লেখ করেছি, খাটো মানুষরা যখন কথা বলে, তাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়না। সুতরাং নিজেকে প্রকাশ করার জন্য লেখালেখি ভালো একটা উপায় হতে পারে। এটা আমার নিজস্ব দক্ষতা। প্রথমে আমি ভুতের গল্প লিখতে শুরু করি। যদিও আমার বই আঞ্চলিক সেরা বিক্রির তালিকা পার হতে পারেনি, কিন্তু আমার অনেক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়েছে, যারা আমার বই পড়েছে এবং সেটা চমৎকার একটা অনুভূতি। আমার বয়স যতো বাড়ছে, আমি মনে করি, আমার দৃষ্টিভঙ্গি ততো ভালো হচ্ছে। কয়েক বছর আগে আমি উপলব্ধি করেছি: আমি আগে ভাবতাম, আত্ম-সমালোচনা করলে আমাকে ভালো লাগবে। কিন্তু একটা পার্টিতে একজন ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হলো, যে আমাকে বললো, আর একবার তুমি নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বললে তোমাকে ঘুষি মারবো। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি কতটা চমৎকার আর দেখতে সুন্দর, তা নিয়ে কৌতুক করবো। আমি দেখতে পেলাম, মানুষ এটা পছন্দ করছে। তারা যখন আমার সঙ্গে হাসছে, সেটা খুবই ভালো আর ইতিবাচক। আমি সুদর্শন সেটা সমাজ মনে করে না, কিন্তু আমি নিজেকে সুন্দর বলে সবসময়েই দাবি করতে পারি। ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা প্রতিটা সেলফিতে আমি লিখেছি, ''আরেকটি সুন্দর দিন' অথবা 'তুমি কি এতোটা সুন্দর সহ্য করতে পারবে?' আমি আর নিজেকে নিয়ে আত্ম-সমালোচনায় ভুগি না। যখন আমি অতীতের কিছু অর্জনের দিকে তাকাই, তখন ভাবি, একজন বেঁটে লোক না হয়ে সাধারণ একজন মানুষ হলে এর কিছুই সম্ভব হতো না। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলাইন চোঙ্গ '
news-44200632
https://www.bbc.com/bengali/news-44200632
ইতিহাসের সাক্ষী: ইন্দোনেশিয়ার লৌহমানব সুহার্তোর পতন ঘটেছিল যেভাবে
ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালে দেশজুড়ে উত্তাল বিক্ষোভ ও দাঙ্গার মুখে পদত্যাগ করেছিলেন সেসময় ৩১ বছর ধরে ক্ষমতাসীন দেশটির স্বৈরতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট সুহার্তো। চারজন সুহার্তো বিরোধী ছাত্রকে সশস্ত্র পুলিশ রাজধানী জাকার্তায় গুলি করে হত্যার জেরে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত।
সুহার্তো ক্ষমতা গ্রহণ করেন ১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভরত এই ছাত্ররা চাইছিল দেশটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন। ১৯৯৮ সালের মে মাস। ভরত ইবনু রেজা তখন রাজধানী জাকার্তার বেসরকারি ত্রি-শক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্র এবং ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিবিসির অ্যালেক্স লাস্টকে তিনি বলছিলেন, সে সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ আন্দোলনের সঙ্গে পরিচিতি ছিলেন না। "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ ছাত্রের জন্যই বিক্ষোভ ছিল নতুন একটা ব্যাপার। স্বভাবতই ছাত্ররা তখন বিক্ষোভের নামে উত্তেজিত হতো। আমরা বলতাম- এই বিক্ষোভ হচ্ছে - চল্ চল্ রাস্তায় নামি।" ১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থা তখন বেশ খারাপ। এশিয়ার অর্থনৈতিক বাজারে যে ধস নেমেছিল তার ঢেউ তখন যেভাবে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে তার ফলে ভেঙে পড়েছে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি। জনসাধারণের রোষ গিয়ে পড়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর ওপর। স্বৈরশাসক সুহার্তো তখন তিরিশ বছরের বেশি ক্ষমতায়। বিক্ষোভ বেআইনি ঘোষণা করা হলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় তখন প্রতিবাদ বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। আরো পড়ুন: যে আগ্নেয়গিরির কারণে ইন্দোনেশিয়ার সুনামি ডিভোর্স, কিন্তু এর জন্য দায়ী কবুতর খেলা? ভোট গণনা করতে গিয়েই ২৭২ জন কর্মীর মৃত্যু প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে ওঠে ১৯৯৮ সালে এই পরিবেশের মধ্যেই শীর্ষস্থানীয় ত্রি-শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজেরাই বিক্ষোভ সংগঠনের উদ্যোগ নেন। ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন বেশিরভাগই ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় সদস্যদের ছেলেমেয়ে। তারা শুধু সংস্কারের জন্য আন্দোলনে নামেন নি- তারা চাইছিলেন বিপ্লব। হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজপথে নামলেন- মিছিল করে এগুতে লাগলেন সংসদ ভবনের দিকে। তাদের পথ অবরোধ করা হল। রাজপথে অবস্থান নিলেন তারা- তাদের অবস্থান বিক্ষোভে শহর থেকে শহরের বাইরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। "আমরা সেখানে বক্তৃতা দিতাম- গান গাইতাম- গানের মধ্যে আমাদের বক্তব্য ছিল - আমরা এখান থেকে সরব না- বড় গাছ যেমন উপড়ে ফেলা যায় না- আমাদেরও তেমনি উপড়ানো যাবেনা," বলছিলেন ভরত ইবনু রেজা। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী শক্তি ব্যবহারের কঠোর সিদ্ধান্ত নিল। বিকেল ৫টা নাগাদ অনেক শিক্ষার্থী যখন ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছে ঠিক তখনই মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থী সাদা পোশাকের এক ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল হাতাহাতিতে। ওই ব্যক্তি তখন ছুটে গেছে পুলিশ লাইনের দিকে - আর পুলিশও তাদের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করেছে। "পুলিশ কমাণ্ডার বলে- তৈরি হও," মি: রেজা জানান, "দাঙ্গা পুলিশের মুখোমুখি দাঁড়ানো বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বলেছিল- সার মারবেন না- গুলি করবেন না- আমরা ক্যাম্পাসে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু দাঙ্গা পুলিশ শোনেনি- তারা বন্দুকে গুলি ভরেছিল। আমরা আবার অনুরোধ করেছিলাম। তারপরই দৌড় দিই ক্যাম্পাসের দিকে। আর তখনই পালানোর সময় আমাদের উপর গুলি ছুঁড়তে শুরু করে পুলিশ।" শিক্ষার্থীরা প্রাণভয়ে ছুটতে শুরু করলে, পুলিশ প্রথমে আকাশে ফাঁকা গুলি চালায়। কিন্তু পরমুহূর্তেই বন্দুকের নল নামিয়ে গুলি চালাতে থাকে ছুটতে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর। "আমরা তখন উদভ্রান্তের মত ছুটছি- ছড়িয়ে পড়েছি নানা দিকে- গুলি থেকে বাঁচতে কেউ লুকিয়েছে গাড়ির পেছনে, কেউ দেয়ালের আড়ালে- কেউ চেচাঁচ্ছে- কেউ কাঁদছে- বিশেষ করে মেয়েরা- কারণ তারা রীতিমত ভয় পেয়ে গেছে।" ভরত ইবনু রেজা তখন ছিলেন ক্যাম্পাসের ফটকের মুখে। অন্য শিক্ষার্থীদের ভেতরে ঢুকতে তিনি সাহায্য করছিলেন। "আমার মনে আছে কয়েকটা বুলেট এসে লাগল আমাদের ফটকের গায়ে। জীবনে সেই প্রথমবারের মত আমি মৃত্যুভয় পেয়েছিলাম- মনে হয়েছিল এই শেষ। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত- কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কোথা থেকে যেন সাহস পেয়ে গেলাম। আমি নড়লাম না। পুলিশ যারা গুলি করছিল- তাদের দিকে চেয়ে রইলাম।" মি: রেজা বলেন, তার বন্ধুরা পরে তাকে বলেছিল- তিনি গুলির মধ্যে দিয়ে এমনভাবে অবলীলায় হেঁটে গিয়েছিলেন যেন কিছুই হয়নি। ১৯৯৮ সালে জাকার্তায় ছাত্রবিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর গুলি চালায় লুকিয়ে পড়া অনেক শিক্ষার্থীই আশঙ্কা করেছিলেন পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকবে। মি: রেজা তার মাকে ফোন করলেন। "মা খুবই উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। তিনি গুলির আওয়াজ শুনেছিলেন। আমি বললাম -আমি ঠিক আছি মা- বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের ভেতরে আছি আমি। আমাদের জন্য প্রার্থনা কোরো।" বেশ কিছু শিক্ষার্থীর গায়ে গুলি লেগেছিল। ভরত রেজা ক্যাম্পাসের রেডিও স্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন । সেখানে গুরুতর আহত একজন ছাত্রকে নিয়ে আসা হল। "আমি তাকে আগে চিনতাম না। ওর নাম শুনলাম - হেনরি ওয়েন-সি। রেডিও স্টেশনের ভিতর দেখলাম তার ঘাড়ের কাছ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। খুব দ্রুত বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছিল ছেলেটি। ও মারা যাচ্ছিল। তার চোখের ভেতরটা সাদা হয়ে গিয়েছিল- মনে হচ্ছিল ওর চোখের মণি নেই।" "ওর একজন বন্ধু ওর ওয়ালেটটা আমার হাতে দিয়ে বলল - এটা কিছুক্ষণ তোমার জিম্মায় রাখো। ওর বন্ধুরা আহত অবস্থায় ওকে ভেতরে নিয়ে এসেছিল, কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার আগেই ও মারা গেল।" সেদিন গুলিতে মারা গিয়েছিল চারজন শিক্ষার্থী। "হেনরিকে যখন কবর দিল, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। কবরস্থানে ওর ওয়ালেটটা আমি ওর মার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। ওর মা খুব কাঁদছিলেন- আর মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন।" শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ রক্তাক্ত মৃত্যুর ঘটনায় মোড় নেবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের মানুষও তাদের আন্দোলনের সমর্থনে পথে নামল। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠল জনতা- ক্ষোভে ফেটে পড়ল মানুষ । জাকার্তার বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালানোর ঘটনার নিন্দায় সরব হল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে মুখ খুলল তারা। ক্রুদ্ধ ইন্দোনেশীয় জনতা ১৯৯৮ সালের ১৪ই মে জাকার্তায় গাড়ি পোড়ায় এবং চীনাদের দোকানে আগুন দেয়। তিনদিনের সহিংসতায় প্রাণ হারায় অন্তত নয়জন। সে রাতেই এক চীনা দোকানের ওপর হামলা চালায় ক্রুদ্ধ মানুষ- দোকানের পণ্য তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। জাকার্তার চীনা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। জনতা বেশ কিছু দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের খবর অনুযায়ী, সে রাতেই চীনা পাড়ায় দোকানের ভেতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় নয়জন দোকানি। বিশ কোটি মানুষের দেশ ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হয় ব্যাপক নৈরাজ্য। একদিকে অব্যাহত ছাত্র বিক্ষোভ, অন্যদিকে উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভাঙচুর ও লুটতরাজের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সুহার্তোর সরকার। তিনদিনের দাঙ্গায় প্রাণ হারায় প্রায় হাজার খানেক মানুষ। এক সপ্তাহ থেকে দশদিনের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট সুহার্তো। ভরত ইবনে রেজা বলছেন, প্রেসিডেন্ট সুহার্তো পদত্যাগের ঘোষণা দেবার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে ফেটে পড়েন তারা। "আনন্দে কাঁদতে থাকি আমরা।" কিন্তু বর্তমানে মানবাধিকার কর্মী ভরত ইবনে রেজা জানান, প্রেসিডেন্ট সুহার্তো ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশশাসনের দায়িত্ব নেয় যে সরকার তারাও তাদের আশা পূরণে সফল হয়নি। যে পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছিলেন সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। তার মৃত্যুর কয়েক মাস আগেও তার ৩১ বছরের শাসনকালে মানবাধিকার লংঘনের জন্য সুহার্তোর বিচার চেয়ে জাকার্তায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা "আমরা কখনই দাবি করি না যে আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছিলাম, তার ফলশ্রুতিতেই সুহার্তো পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের আন্দোলন ছিল ইন্দোনেশিয়ায় গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের একটা অংশ।" তিনি মনে করেন, এটা শুধু প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল না, দেশের সরকারের প্রতিও তারা ছিলেন ক্ষুব্ধ ও হতাশ। "হেনরি ওয়ান-সির জীবনের সঙ্গে লড়াই আমি আজও ভুলিনি। আমার চোখের সামনে তার মৃত্যু আমি দেখেছি। আমরা যে গণতন্ত্র অর্জনের জন্য লড়াই করেছিলাম- ছাত্ররা তাদের রক্ত দিয়েছিল তা আজও অর্জিত হয়নি।" বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: সাপ দেখিয়ে পুলিশের স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা জঙ্গীবাদের 'অভিজাত' স্কুল গঠন করেছিলেন যিনি ইন্দোনেশিয়ায় ঘন ঘন সুনামি হয় কেন? কেমন জীবন যাপন করেন ইন্দোনেশিয়ার 'চরম বড়লোকেরা'
news-42747789
https://www.bbc.com/bengali/news-42747789
তুরস্কের সেনাবাহিনী কী কারণে সিরিয়ার কুর্দিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযানে যাচ্ছে?
তুরস্ক জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার ভেতরে ঢুকে কুর্দিদের একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক এক সামরিক অভিযানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। নেটো জোটের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও তুরস্ক এই অভিযান চালাতে যাচ্ছে। তুরস্ক এই অভিযান শুরু করলে সিরিয়ার সাত বছরের গৃহযুদ্ধ আবারও একটি নাটকীয় মোড় নেবে। কিন্তু কেন এমন একটি বড় সংঘাতে যাচ্ছে? পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে।
সিরিয়া সীমান্ত বরাবর এরকম বহু ট্যাংক মোতায়েন করেছে তুরস্ক। সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলের আফরিন অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে একটি সিরিয়ান কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ওয়াইপিজি। তুরস্ক এই কুর্দি মিলিশিয়াদের সন্ত্রাসী বলে গণ্য করে। তুরস্কের ভেতরে পি-কে-কে নামের যে কুর্দি গোষ্ঠীটি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে, সিরিয়ার এই কুর্দি মিলিশিয়াদের তাদের সহযোগী বলেই মনে করে তুরস্ক। সিরিয়ার আফরিন অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ যাতে এই কুর্দি মিলিশিয়াদের হাতে চলে না যায়, তুরস্ক সেটা নিশ্চিত করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র এই কুর্দি মিলিশিয়াদের নিয়ে ৩০ হাজার সদস্যের একটি সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তৈরি করতে চায় বলে খবর প্রকাশের পর তুরস্ক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সিরিয়ায় যাতে আবার ইসলামিক স্টেটের পুনরুত্থান না ঘটে সেজন্যে এ ধরণের মিলিশিয়াদের কাজে লাগানোর কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এমন অভিযোগ তোলেন যে যুক্তরাষ্ট্র আসলে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করতে চাইছে। তিনি এই চেষ্টা ভন্ডুল করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। সিরিয়ার সীমান্ত লাগোয়া দুটি শহর আফরিন এবং মানবিজ থেকে তিনি এই কুর্দিদের নির্মূল করার জন্য শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। তবে কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ওয়াইপিজি তাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের এসব অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে। ওয়াইপিজি বলছে, তাদের সঙ্গে তুরস্কের কুর্দি গোষ্ঠী পি-কে-কে'র কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই। সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াইপিজি বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব যোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তুরস্ক ইতোমধ্যে আফরিন অঞ্চল বরাবার তাদের সীমান্তে বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে। সেখানে ট্যাংক বহর মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে কুর্দি মিলিশিয়া নেতারা যে কোন মূল্যে তুরস্কের আক্রমণ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। আরো পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতিতে বড় পরিবর্তন সিরিয়ার কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন এরদোয়ান সিরিয়ায় আমেরিকা গড়ে তুলছে 'বিএসএফ' বাহিনী সিরিয়ার ইডলিব থেকে পালিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ আফরিনে সতর্ক নজরদারি রাখছে ওয়াইপিজি যোদ্ধারা তুরস্কের এই অভিযানের পরিণতি কী দাঁড়াতে পারে: তুরস্কের এই অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। যদিও এই দুই দেশ নেটো জোটের সদস্য হিসেবে সামরিক মিত্র। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। আফরিনে রাশিয়ার শত শত সৈন্য আছে। সেখানকার আকাশসীমা মূলত রুশ বাহিনীই নিয়ন্ত্রণ করে। তবে রাশিয়া যদি তুরস্ককে এই অভিযান চালানোর সবুজ সংকেত দেয়, তাহলে মস্কো এবং আংকারার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে। এই লড়াই আফরিনে বিরাট মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি করতে পারে। সেখানে প্র্রায় দশ লাখ মানুষের বাস। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বলছে, সেখান থেকে লোকজনের পালিয়ে যাওয়ার কোন খবর তারা এখনো পায়নি। তবে প্রয়োজনে জরুরী ত্রাণ সাহায্য পৌঁছানোর জন্য তারা প্রস্তুত। বিবিসি নিউজ বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে আরো দেখুন: ইয়েমেনে চলমান সংঘাতের কারণ কী?
news-48182928
https://www.bbc.com/bengali/news-48182928
ভিন্ন বর্ণের পাত্র বিয়ে করায় ভারতের মহারাষ্ট্রে মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করলো বাবা
রুক্মিণী রণসিংহে বয়স হয়েছিল মাত্র ১৯ বছর।
মঙ্গেশ রণসিংহে ও রুক্মিণী রণসিংহে। মাত্র মাস ছয়েক আগেই মঙ্গেশকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল সে। কিন্তু মঙ্গেশের জাত ছিল আলাদা, তাই রুক্মিণীর পরিবার ওই বিয়ে মেনে নেয় নি। এতটাই ক্ষেপে গিয়েছিল রুক্মিণীর পরিবার, যে তার বাবা, কাকা আর মামা মিলে রুক্মিণী আর তার স্বামীকে বাড়িতে ডেকে এনে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের মহারাষ্ট্রে আহমেদনগর জেলার এই ভয়াবহ ঘটনায় আরও একবার 'অনার কিলিং'-এর বিষয়টি সামনে এসেছে। রুক্মিণীর পরিবার তাদের বিয়েতে মত না দিলেও মঙ্গেশের বাড়ি থেকে মেনে নেওয়া হয়েছিল এই বিয়ে। "বিয়েতে রুক্মিণীর বাড়ি থেকে শুধু তার মা এসেছিলেন," বিবিসিকে বলছিলেন রুক্মিণীর দেবর মহেশ রণসিংহে। আরো পড়তে পারেন: ভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিয়ে করে পালিয়ে বেড়ানো যাদের নিয়তি ১৭ বছরের ছেলেকে বিয়ে করায় ভারতীয় নারী গ্রেফতার প্রেম, বিয়ে - অতঃপর বন্দী আর শঙ্কার জীবন একটি ঘরে একসাথে বেঁধে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় রুক্মিণী ও মঙ্গেশের গায়ে। বিয়ের পরেও রুক্মিণীর পরিবার এই সম্পর্ক নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল। মহেশ জানাচ্ছিলেন, "রুক্মিণী বা মঙ্গেশের সঙ্গে রাস্তায় ওদের বাড়ির কারও দেখা হলেই হুমকি দেওয়া হত। ফেব্রুয়ারি মাসে এই হুমকির ব্যাপারটা জানিয়ে রুক্মিণী আর মঙ্গেশ থানায় অভিযোগও জানিয়েছিল।" এই অশান্তির মধ্যেই রুক্মিণীর বাবা-মা ৩০শে এপ্রিল তাকে বাড়িতে ডাকেন। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রুক্মিণীর ওপরে চড়াও হয় তার বাপের বাড়ির লোকেরা। মারা হতে থাকে তাকে। সেই রাতেই রুক্মিণী স্বামীকে ফোন করে জানায় যে তার পরিবারের লোকেরা তাকে মেরেছে। স্বামীকে অনুরোধ করে সেখান থেকে তাকে নিয়ে যেতে। পরের দিন সকালেই মঙ্গেশ রুক্মিণীদের বাড়িতে যায়। তার আগেই উত্তরপ্রদেশ থেকে রুক্মিণীর কাকা আর মামা সেখানে পৌঁছিয়ে যায়। বাড়িতে তুমুল অশান্তি শুরু হয়, আর তার মধ্যেই মঙ্গেশ আর রুক্মিণী - দুজনকেই মারধর করে রুক্মিণীর কাকা আর মামা। তারপরে দুজনকে একসঙ্গে একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পরে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গেশ রণসিংহে বলছিলেন, "ঘর থেকে তীব্র চিৎকার শুনে পড়শিরা ওই বাড়িতে গিয়ে দরজা খুলে রুক্মিণী আর মঙ্গেশকে উদ্ধার করেন। তারাই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে পুনে শহরে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান।" হাসপাতালে ভর্তি করার সময়ে রুক্মিণীর শরীরের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মঙ্গেশের শরীরের প্রায় ৪৫ শতাংশ জ্বলে গিয়েছিল। তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ৫ই মে রুক্মিণী মারা যায়। মঙ্গেশের ভাই মহেশ রণসিংহে। সসুন হাসপাতালের চিকিৎসক অজয় তাবড়ে বলেন, "মঙ্গেশ এখনও সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছে।" রুক্মিণীদের বাড়ির কাছেই থাকেন সঞ্জয় বেদী। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "ঘর থেকে ধোঁয়া বেরচ্ছিল। চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম ভেতর থেকে। শেষমেশ আমরা দরজা ভেঙ্গে ফেলে ওদের উদ্ধার করি।" রুক্মিণীর পরিবারের সম্পর্কে খুব একটা ভাল করে জানেন না প্রতিবেশীরা। শুধু এটুকুই জানা গেছে যে ওই পরিবারটি প্রায় আট মাস আগে উত্তর প্রদেশ থেকে এখানে এসেছিল। পুলিশ রুক্মিণীর কাকা সুরেন্দ্র ভারতী আর মামা ঘনশ্যামকে গ্রেপ্তার করেছে। আহমেদনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট মনীষ কলভানিয়া বলছিলেন, "রুক্মিণীর বাবা রামা রামফল ভারতী পালিয়ে গেছে। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। ঘটনাস্থল থেকে এক বোতল পেট্রোল উদ্ধার করা গেছে।" তবে মঙ্গেশের ভাই মহেশ বলছিলেন, "পুলিশ যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত, তাহলে এই পরিণতি হত না দাদা আর বৌদির। দুটো থানায় আলাদা করে অভিযোগ জানানো হয়েছিল যে ওদের পরিবার হুমকি দিচ্ছে।" এখন মহেশের একমাত্র আশা তার দাদা আর বৌদিকে নির্যাতনকারীদের শাস্তি হবে। আরো পড়ুন: মিয়ানমারে কারাদণ্ড পাওয়া রয়টার্স সাংবাদিকদের মুক্তি একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী মারা গেছেন 'প্রতি কেজি গরুর মাংস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব' কেন শীর্ষ তালিকায় নেই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়
news-57219179
https://www.bbc.com/bengali/news-57219179
মেহমেত আজিজ: সাইপ্রাসের যে ম্যালেরিয়া নির্মূলকারী 'বীর'কে সবাই ভুলে গেছে
তাকে বলা হতো 'এক মহান মুক্তিদাতা।' তার নাম ছিল মেহমেত আজিজ। ভূমধ্যসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাস গত শতাব্দীতে যা কিছু অর্জন করেছে - তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কীর্তিগুলোর একটির পেছনে ছিলেন এই মেহমেত আজিজ।
মাত্র তিন বছরের কিছু বেশি সময়ে সাইপ্রাসকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত করেছিলেন মেহমেত আাজজ কিন্তু তবু অল্প কিছু সাইপ্রিয়ট ছাড়া আর বিশেষ কেউই তার নাম শোনেনি। আজিজ ছিলেন একজন তুর্কী সাইপ্রিয়ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। সে সময় সাইপ্রাসে প্রতি বছরই ম্যালেরিয়া হতো। কিন্তু মেহমেত আজিজ বিশ্বে প্রথমবারের মত একটি ম্যালেরিয়া-প্রবণ দেশ থেকে এই রোগটি সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পেরেছিলেন। তার সহকর্মীরা তাকে ডাকতেন "দ্য ফ্লাই ম্যান" বলে। সেসময়কার নোবেল পুরস্কারজয়ী ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ স্যার রোনাল্ড রসের কাছে অধ্যয়ন করেছিলেন এই মেহমেত আজিজ। এ্যানোফিলিস নামে বিশেষ এক ধরনের মশার মাধ্যমেই যে ম্যালেরিয়া ছড়ায় তা প্রথম প্রমাণ করেছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রোনাল্ড রস। মেহমেত আজিজের কথা আমি প্রথম জানতে পারি ঔপনিবেশিক যুগের সাইপ্রাস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে। স্যার রোনাল্ড রস সেটা ১৯৩৬ সালের কথা। সাইপ্রাস তখন ছিল একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ। দেশটিতে তখন ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ছিল ব্যাপক। প্রতি বছর প্রায় ১৮ হাজার লোক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতো। বিশেষ করে শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়া ছিল খুবই মারাত্মক এক ব্যাধি। সাইপ্রাসের একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেছেন, তার শৈশবে "বহু শিশু ম্যালেরিয়ায় মারা যেতো। যারা বেঁচে যেতো, তারাও এত দুর্বল হয়ে পড়তো যে একদিনের জন্যও তারা কোন কাজ করতে পারতো না।" সামরিক বাহিনীর স্টাইলে লড়াই এর প্রায় ১০ বছর পরের কথা। মেহমেত আজিজ তখন সাইপ্রাসের প্রধান স্বাস্থ্য পরিদর্শক। তিনি একটা আর্থিক অনুদান পেলেন ঔপনিবেশিক উন্নয়ন তহবিল বা সিডিএফ থেকে। এর লক্ষ্য সাইপ্রাস থেকে এ্যানোফিলিস মশা নির্মূল করা - যা ম্যালেরিয়া রোগের বাহক। তিনি তার অভিযানের পরিকল্পনা করলেন সামরিক কায়দায়। সাইপ্রাসে ছোট ছোট গ্রিডে ভাগ করে মৗালেরিয়া নির্মূল অভিযান চালান মেহমেত আজিজ পুরো সাইপ্রাস দ্বীপটিকে তিনি ৫০০ এলাকায় ভাগ করলেন - যার নাম দেয়া হলো গ্রিড। প্রতিটি গ্রিডের আয়তন ছিল এমন - যেখানে ১২ দিনের মধ্যে মশা নির্মূলের কাজটা করতে পারে মাত্র একজন লোক । এই পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে মাঠে নামলো মেহমেত আজিজের দল । প্রতিটি গ্রিডে প্রতি বর্গমিটার এলাকা তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করলেন সেই গ্রিডের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক। যেখানেই তিনি দেখলেন পানি জমে আছে - সেখানেই তিনি ছড়িয়ে দিলেন ডিডিটি নামে মশা ধ্বংসকারী রাসায়নিক। এমনকি পানীয় জলের উৎসও বাদ পড়লো না। এই ডিডিটির ব্যবহার যাতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায় - তারও একটা উপায় উদ্ভাবন করলেন আজিজের দল। তারা এমনভাবে জমে থাকা পানির ওপর ডিডিটি ছড়ালেন - যেন পানির ওপর অতি পাতলা পেট্রোলিয়ামের একটি স্তর তৈরি হয় - যার ফলে মশার ডিম ফুটতে না পারে। ১৯৪৮ সালের জুন মাসে সাইপ্রাস রিভিউ পত্রিকায় এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে - প্রতিটি গ্রিডে প্রত্যেকটি জলাশয়, নদী এবং জলাবদ্ধতা-তৈরি-হয়েছে-এমন-এলাকায় পানির ওপর কীটনাশক ছড়িয়ে দেয়া হলো। এমন গরু-ঘোড়া-ছাগলের মত প্রাণীর খুরের চাপে তৈরি হওয়া গর্তগুলোর ওপরও দেয়া হলো কীটনাশক। আজিজের লোকেরা জলাভূমিতে নামলেন, দড়িতে ঝুলে গুহার ভেতর ঢুকলেন। কোন জায়গাই তাদের কাজের আওতার বাইরে রইলো না। কীটনাশক ছড়ানো জায়গাগুলো প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা করে দেখা হতো - সেখানে আবার মশার শূককীট জন্মাচ্ছে কিনা। দরকার হলে সেখানে আবার কীটনাশক ছিটানো হতো। যতদিন এই অভিযান চলেছিল - ততদিন কোন "অপরিষ্কার" এলাকা থেকে কোন যানবাহন "পরিষ্কার" এলাকায় ঢুকলে সেই যানবাহনগুলোর ওপরও কীটনাশক প্রয়োগ করা হতো। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় বড় অগ্রগতির খবর ভূমধ্যসাগরে যে কারণে চলছে গ্রিস-তুরস্ক দ্বন্দ্ব রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান: রুটি বিক্রেতা থেকে যুদ্ধংদেহী তুর্কী প্রেসিডেন্ট ম্যালেরিয়া কিভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠলো? ম্যালেরিয়া কী? মানবদেহে ম্যালেরিয়া তৈরি হয় প্লাজমোডিয়াম নামে একরকম পরজীবী থেকে। এটা স্ত্রী জাতীয় এ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা যখন মানুষের রক্ত পান করার জন্য কাউকে কামড়ায়, তখনই এই পরজীবী জীবাণু এক দেহ থেকে আরেক দেহে ছড়ায়। ম্যালেরিয়া এমন একটি রোগ যা প্রতিরোধ করা সম্ভব, সারানোও সম্ভব। এ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায় ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ঘটলে মানুষের দেহে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দেয়। প্লাজমোডিয়াম পরজীবী জীবাণু মানুষের যকৃত এবং রক্তের লোহিত কণিকা সংক্রমিত করে। পরে মস্তিষ্কসহ সারা দেহেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে - এবং তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ২০১৯ সালে সারা পৃথিবীতে ২২ কোটি ৯০ লাখ লোক ম্যালেরিয়ায় সংক্রমিত হন, এবং তার মধ্যে আনুমানিক ৪০৯,০০০ জন মারা যান - যার দুই তৃতীয়াংশই শিশু। মশার কলোনির সন্ধান সাইপ্রাসে এ্যানোফিলিস মশার আবাসস্থলের সন্ধান চলেছিল তিন বছর ধরে। মেহমেত আজিজের মেয়ে তুরকানের মনে আছে তার পিতার স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ইউনিফর্ম। সেটা ছিল পুরোদস্তুর সামরিক কায়দার ইউনিফর্ম। তার মনে আছে, ছোটবেলায় পিকনিকে গিয়েও তার বাবা শুকিয়ে যাওয়া নদীর পার ধরে হাঁটতেন - পানির ধারার উৎস কোথায় তা বের করতে। আর তার পেছনে পেছনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হতো তুরকানকে। একবার একটি সাইপ্রিয়ট গ্রাম দেখতে গেলেন মেহমেত আজিজ। তার সাথে ছিলেন একজন আমেরিকান ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ। সফরের কারণ ছিল - ওই গ্রামটিতে ৭২% শিশুর দেহে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল। সেই আমেরিকান বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আজিজ কীভাবে মশার আবাসস্থল খুঁজে বের করতেন। "ঘরের উঁচু সিলিংএ মশার সন্ধান করতে মই খুঁজে বের করার কাজে আজিজ ছিলেন খুবই দক্ষ। এভাবেই শেষপর্যন্ত গ্রামের একটি স্নানঘরের ভেজা দেয়ালের মধ্যে তিনি মশার একটি ঝাঁক আবিষ্কার করে ফেললেন।" তিন বছরের কিছু বেশি সময় পর - ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাইপ্রাস পৃথিবীর প্রথম ম্যালেরিয়া-মুক্ত দেশে পরিণত হয়। বীরের সম্মান দেবার পরও কেন লোকে তাকে ভুলে গেল লন্ডন নিউজ ক্রনিকল অনেক প্রশংসা করে মেহমেত আজিজকে নাম দিয়েছিল "মহান মুক্তিদাতা" বা দ্য গ্রেট লিবারেটর। আজিজের গ্রিক ও তুর্কি সাইপ্রিয়ট সহকর্মীদের বর্ণনা করা হলো "ম্যালেরিয়া-বিরোধী লড়াইয়ে সম্মুখ-সারির যোদ্ধা।" এম বি ই বা মেম্বার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার খেতাব দিয়ে সম্মানিত করা হলো আজিজকে। ব্রিটেনের উপনিবেশ বিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রশংসা করে বললেন, সারা বিশ্বের ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন মেহমেত আজিজ। অবসর জীবনে মেহমেত আজিজ, সাথে স্ত্রী হিফসিয়ে ম্যালেরিয়া নির্মূলের মিশন শেষ হবার পরও মেহমেত আজিজ সাইপ্রাসের প্রধান স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি টাইফয়েড ও যক্ষার মত সংক্রামক রোগ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অভিযান চালিয়েছেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু এই সাফল্য সত্বেও তার খ্যাতি কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে তার জীবন-কাহিনির সবচেয়ে কৌতুহলোদ্দীপক বিষয় কিন্তু ম্যালেরিয়া উচ্ছেদে তার সাফল্য নয় - বরং কিভাবে একটি জাতির ইতিহাস থেকে তা পুরোপুরি মুছে দেয়া হলো, সেখানেই। সেই কারণ নিহিত আছে ছোট্ট সাইপ্রাস দ্বীপ কীভাবে এক স্বাধীনতা সংগ্রামের কারণে দু-টুকরো হয়ে গেল - তার মধ্যে। সেই ঘটনাপ্রবাহ সাইপ্রাসের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জনগোষ্ঠীর জন্যই ক্ষতির কারণ হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক সাইপ্রিয়টই বীরত্বে সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর ব্রিটেনে যখন লেবার পার্টি নির্বাচনে জিতলো, তখন অনেকেই আশা করেছিলেন সাইপ্রাস এবার ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পাবে। স্বাধীনতা ও বিভক্তি সাইপ্রাসকে বলা হতো ভূমধ্যসাগরে 'ব্রিটেনের বিমানবাহী জাহাজ - যা কখনো ডুববে না।' সাইপ্রাসের দুর্ভাগ্য ছিল এই যে - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অংশগুলোতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ায় এই দ্বীপটির কৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। তাই ব্রিটেন সেখান থেকে যেতে চাইছিল না। মেহমেত আজিজের ম্যালেরিয়া নির্মূলে অভাবনীয় সাফল্যের পাঁচ বছর পর ১৯৫৫ সালে - ব্রিটেনের সাইপ্রাস ছেড়ে যেতে অনিচ্ছার কারণে শুরু হলো সহিংস সংঘাত। শেষ পর্যন্ত ১৯৬০ সালে দ্বীপটি স্বাধীনতা পায়। কিন্তু জাতিগত, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিভেদের কারণে দ্বীপটি ক্রমশঃ বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই বিভক্তির মাঝে পড়ে হারিযে যায় মেহমেত আজিজের কাহিনি। ১৯৭৪ সাল থেকে সাইপ্রাস তুর্কী ও গ্রিক - এই দুই অংশে ভাগ হয়ে যায় - যখন গ্রিসের তৎকালীন সামরিক শাসকদের সমর্থনে দ্বীপটিতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়, এবং তার জবাবে তুরস্ক অভিযান চালায় সাইপ্রাসে। তখন থেকেই সাইপ্রাসের উত্তরের এক-তৃতীয়াংশে বাস করছে তুর্কি সাইপ্রিয়ট জনগোষ্ঠী, আর দক্ষিণের দুই-তৃতীয়াংশে বাস করছে গ্রিক সাইপ্রিয়টরা। এই বিভক্তির কারণে মেহমেত আজিজের মত কোন ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। মেহমেত আজিজ মারা যান ১৯৯১ সালে ৯৮ বছর বয়সে নিকোশিয়ার উত্তর প্রান্তে। রাষ্ট্রীয় পেনশনের ওপর নির্ভর করেই নিভৃতে তার অবসর জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি। কোন সরকারি শেষকৃত্যানুষ্ঠান ছাড়াই তাকে সমাহিত করা হয়। তুর্কি এবং গ্রিক, উভয় সাইপ্রিয়ট জনগোষ্ঠীই যদি ম্যালেরিয়া-দমন অভিযানের এই নেতার স্মৃতিকে আবার জাগিয়ে তুলতে পারতো - হয়তো তাহলে তা হয়ে উঠতো সাইপ্রাসের সবার কাছে বলার মতো আরেকটি গল্প।
news-52158941
https://www.bbc.com/bengali/news-52158941
করোনাভাইরাস: কীভাবে বদলে দেবে জাতীয় নিরাপত্তা ও গুপ্তচরবৃত্তি, গোয়েন্দা নজরদারি
একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সদ্য পাওয়া একটা রিপোর্ট নিয়ে মিটিংরুমে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন, রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারকদের উদ্বিগ্ন চোখের সামনে জানালেন কী ধরনের বিপদের সঙ্কেত তারা পাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে সন্ত্রাসবাদ এবং সাইবার অপরাধ এতদিন, অন্তত সাম্প্রতিক অতীতে, গোয়েন্দাদের কাছে এ ধরনের হুঁশিয়ার করার মত রিপোর্টের বিষয়বস্তু হয়েছে সন্ত্রাসবাদী হামলার ছক- হয়তো বা মধ্যপ্রাচ্যের কোথাও থেকে খবর পাওয়া গেছে যে সন্ত্রাসীরা নতুন কায়দায় একটা বিমান হামলার ছক কাটছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে শুরু করেছে বহু পরীক্ষিত জাতীয় নিরাপত্তা যন্ত্রের চাকা। হামলা ঠেকাতে জাতীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপরতা শুরু হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এই চিত্রে অন্যরকম মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে। এখন গোয়েন্দা কর্মকর্তার আনা রিপোর্টে হয়ত থাকবে বহু দূরের কোন দেশে একটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে- এমন বিপদ সঙ্কেত। এমন রিপোর্ট যে সে দেশের সরকার এই রোগ সংক্রমণের বিষয়টা লুকাচ্ছে। প্রায় বিশ বছর আগে আমেরিকায় ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রে চলে এসেছে সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি। তবে এরপরেও নিরাপত্তা জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে, 'নিরাপত্তার' সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত করা উচিত। এখন করোনাভাইরাস সংকটের পটভূমিতে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রে বিবেচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত কিনা। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনে সবশেষ যখন পর্যালোচনা হয়, তখন আন্তর্জাতিক মহামারিকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলোর তালিকায় শীর্ষে রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বা সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ব্রিটেনে তার কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছে সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ এবং সাইবার হামলা। কিন্তু অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এখন বলছেন তারা স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে সমানভাবে অগ্রাধিকার দেবার যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা তখন রাজনীতিকরা কানে তোলেননি। বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন এই ক্ষেত্রে 'লাল বাতির সতর্ক সঙ্কেত কিন্তু জ্বলতে শুরু করেছে'। তবে বিশ্ব জুড়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এবং গুপ্তচরদের এজন্য তাদের কাজ ও মানসিকতায় বড়ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। নীতি নির্ধারকদেরও অন্য দেশে স্বাস্থ্যখাতে পরিস্থিতি পরিবর্তনের বাস্তবতা বুঝতে পারতে হবে। জৈব-ঝুঁকি যুক্তরাজ্যে এমআইসিক্স এবং আমেরিকায় সিআইএ-র মত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যারা গুপ্তচর হিসাবে মানুষ নিয়োগ করে থাকে, তাদেরও ভবিষ্যতে ভাবতে হবে ঠিক কোথায় তারা কী ধরনের লোক নিয়োগ করবে যারা কী ঘটছে সে বিষয়ে ঠিকমত তথ্য সরবরাহ করতে পারবে। গোয়েন্দারা যেভাবে আড়ি পেতে কথাবার্তা শোনে তার ধরণও বদলাবে, কারণ তাদের ঠিক করতে হবে তারা কীধরনের তথ্য শুনতে চাইছে। এছাড়াও উপগ্রহ বা অন্যধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়, সেগুলোকেও হয়ত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কবরস্থান, শশ্মান এসব জায়গায় কাজে লাগানো হবে। পারমাণবিক বস্তুর নিশানা পাওয়ার জন্য দূর নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব জিনিসের 'গন্ধ শোঁকার' যেসব কৌশল বর্তমানে আছে, এখন তার সঙ্গে যুক্ত করা হবে স্বাস্থ্য ও জৈব-ঝুঁকি খোঁজার কৌশল। তবে এসবই করা হবে মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের চিরাচরিত প্রথা মেনে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স ভবিষ্যতে আসল পরিবর্তন আমরা দেখব আরও জটিল তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে। যেমন একটা জনগোষ্ঠির মধ্যে কোনধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে কিনা, তা বুঝতে বা খুঁজতে ব্যবহার করা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) বা প্রযুক্তির বুদ্ধি। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: তাবলিগ জামাতের ঘটনা নিয়ে ভারতে ইসলাম বিদ্বেষের বিস্তার সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এলেন তিন করোনাভাইরাস রোগী করোনাভাইরাস: পহেলা বৈশাখের বাজারে ধস করোনাভাইরাস: ইসরায়েলে গোঁড়া ইহুদিদের এলাকা লকডাউন আমেরিকায় সিআইএর দপ্তরে ইতোমধ্যেই এ আই নিয়ে নানাধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলেছে। ফোনের মেটাডেটা (ফোনে সংরক্ষিত তথ্যভাণ্ডার), অনলাইনে ফোন ব্যবহারকারী কী খুঁজছে বা কী করছে সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হতে পারে। চার বছর আগে, সেসময় সিআইএ-র ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিভাগের পরিচালক আমাকে বলেছিলেন যে তারা এআই এবং 'আবেগ-অনুভূতি বিশ্লেষণ'-এর মত পদ্ধতি ব্যবহার করে একটা গোটা দেশের জনগোষ্ঠি পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে কীধরনের কাজ করছেন। তাদের কাজের লক্ষ্যটা ছিল মূলত কোন একটা ঘটনা ঘটার আগে সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ পাওয়া- যেমন কোথাও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার মত অবস্থা তৈরি হচ্ছে কিনা অথবা কোথাও একটা বিপ্লব হতে যাচ্ছে কিনা। বর্তমান দুনিয়ায় আমেরিকা আর চীনের মধ্যে ইতোমধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের একটা প্রতিযোগিতা চলছে। ওয়াশিংটনে অনেকেরই আশংকা যে আমেরিকা এই প্রতিযোগিতায় চীনের কাছে হয়ত হেরে যাবে, কারণ চীন তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের প্রযুক্তি উন্নয়নে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ভবিষ্যতের তথ্য আদানপ্রদান তবে যে বিষয়টা এখনও অজানা সেটা হল করোনাভাইরাস মহামারির মত ভবিষ্যত মহামারি সম্পর্কে তথ্য আদানপ্রদানে দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে কীধরনের সহযোগিতা করবে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর ব্যাপারে দেখা গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভবিষ্যতে এধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দেশগুলো তাদের গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করার ব্যাপারে কতটা খোলামেলা আচরণ করবে, নাকি সেক্ষেত্রে তাদের জাতীয়তাবাদী মনোভাব প্রাধান্য পাবে সেগুলো এখনও অনিশ্চিত। এমন আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যায় না যে এরকম ঘটনা ঘটলে ভবিষ্যতে দেশগুলো তাদের সীমানা বন্ধ করে দেবে এবং সমস্যা মোকাবেলা করবে অভ্যন্তরীন পর্যায়ে। তারা হয়ত তখন তাদের গোয়েন্দা নজরদারি কেন্দ্রীভূত করবে অন্য দেশ কীভাবে এই সঙ্কট মোকাবেলা করছে, তারা তথ্য লুকাচ্ছে কিনা, কিংবা তারা নতুন গবেষণায় সমাধান পেয়েছে কিনা সেসব জানতে। জীবাণু সংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরি 'জীবাণু গোয়েন্দাগিরি'র ইতিহাস অনেকদিনের। শীতল যুদ্ধের সময় পাশ্চাত্ত্যের দেশগুলো এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন আপ্রাণ চেষ্টা করত জানার জন্য যে প্রতিপক্ষ কোন গোপন জীবাণু বা স্নায়ু বিকল করার উপাদান (নার্ভ এজেন্ট) তৈরি করছে কিনা। ভবিষ্যতে হয়ত এই গোয়েন্দাগিরিতে জোর দেয়া হবে মারণাস্ত্র তৈরির দিকে নয়, বরং জানার চেষ্টা হবে কে কোন্‌ ধরনের টিকা তৈরি করছে। অনেকদিন থেকেই মানুষের একটা আশংকা ছিল যে, সন্ত্রাসীরা বা কোন গোষ্ঠি হয়ত যে কোন সময় জীবাণু অস্ত্র ছেড়ে দিতে পারে। বর্তমান করোনা সঙ্কটের পর এই ধারণা আরও বদ্ধমূল হবে কারণ ইতোমধ্যেই কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে কোন কোন চরম দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠি ইচ্ছাকৃতভাবে ভাইরাস ছড়ানোর কথা ভেবেছে। তবে আমেরিকার বিচার বিভাগ বলেছেন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ আনা যাবে। বর্তমান সঙ্কটের পর একটা প্রশ্ন সামনে আসতে পারে যে যেসব দেশের অভ্যন্তরীন নজরদারি ব্যবস্থা উন্নত তারা এধরনের ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে কতটা আগ্রহী বা উদ্যোগী হবে, যে তথ্য মানুষের চলাচল সীমিত করে এর আরও ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে কাজে লাগবে। সোজা কথায়, স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে গোয়েন্দা নজরদারির জন্য দেশগুলোর ওপর ভবিষ্যতে দেশের ভেতরে যেমন, তেমনি বাইরেও আন্তর্জাতিক পরিসরে চাপ বাড়বে। মস্কোর পুলিশ কিছুদিনের মধ্যেই নাগরিকদের কাছে মোবাইলে তাদের কিউআর বারকোড চাইবে দেখার জন্য তাদের ঘর থেকে বেরনোর অনুমতি আছে কিনা। চীন স্মার্টেফানের ওপর নজরদারির জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার দিয়ে ইতোমধ্যেই একাজ করেছে। রাশিয়া সিসিটিভি এবং মুখ চেনার পদ্ধতি ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা লংঘনকারীদের ধরেছে। অন্যান্য অনেক দেশ 'ইলেকট্রনিক বেড়া' তৈরি করেছে যার মাধ্যমে তারা কোয়ারেন্টিন ভেঙে যারা চলে গেছে তাদের সম্পর্কে অন্য দেশের সাথে তথ্য আদানপ্রদান করেছে। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে কী করা সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। কিন্তু নাগরিকের স্বাধীনতা নিয়ে যারা কাজ করে তারা এধরনের পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য এধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার যৌক্তিক হলেও, এ প্রযুক্তি হাতের কাছে থাকলে অন্য সময়ে কোন দেশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন লোকের প্রয়োজন থাকবে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি কাজ করতে হবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও। অন্যদিকে সংগ্রহ করা তথ্যের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ রাজনীতিকদের কাছে কোনধরনের 'নিরাপত্তার' আলোকে উপস্থাপন করা হবে সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে। বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে বিশ্ব জুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের জ্ন্য এই মুহূর্তে বড় প্রশ্ন এই সংক্রমণের ধাক্কা সরকারের প্রশাসন ও তার সামরিক শক্তিকে কতটা দুর্বল করে দিতে পারে এবং তার থেকে কে কোন্ দিক দিয়ে কীধরনের সুযোগ নিতে পারে। কিছু গোয়েন্দা সংস্থা এই ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে ইতোমধ্যেই কিছু কাজ করেছে। যেমন জানা গেছে ইসরায়েলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এক অভিযান চালিয়ে এক লাখ টেস্টিং কিট বিদেশ থেকে আনিয়েছে, কিন্তু পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সেখানে নেই। আমেরিকার গোয়েন্দারা জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসেই এই ভাইরাস সম্পর্কে গোপন কিছু তথ্য নীতি নির্ধারকদের হাতে তুলে দিয়েছিল। চীন থেকে সংগ্রহ করা সেসব তথ্যে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। কিন্তু খবরে জানা যায় হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ সেসব হুঁশিয়ারি আমলে নেয়নি। ফলে একটা বিষয় থেকেই যায় যে, গোয়েন্দারা যত ভালই গোপন তথ্য সরবরাহ করুক না কেন, ক্ষমতার শীর্ষে যারা আছে তারা এসব তথ্য কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে এবং তা কাজে লাগাচ্ছে তার ওপরই নির্ভর করে এসব তথ্য শেষ পর্যন্ত মানুষের কতটা উপকারে আসবে। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি?
news-54255504
https://www.bbc.com/bengali/news-54255504
ধর্মীয় বৈষম্য: শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে হোটেল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হল পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা লাগোয়া এক এলাকার দুটি গেস্ট হাউস থেকে ১০ জন মুসলমান শিক্ষককে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অগ্রিম অর্থ দিয়ে ঘর বুকিং করার পরেও 'পাড়ার লোকেরা মুসলমানদের থাকতে দিতে চায় না' -- এই অজুহাতে গেস্ট হাউসের কর্মীরা তাদের চলে যেতে বলেন। পুলিশ ওই গেস্ট হাউস দুটির তিনজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষকদের দলটি। ওই ১০জন মাদ্রাসা শিক্ষক মালদা থেকে সোমবার খুব ভোরে পৌঁছেছিলেন কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর বা সল্ট লেকে। তাদের কেউ প্রধান শিক্ষক, কেউ সহকারী শিক্ষক। রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরে সরকারি কাজেই এসেছিলেন তারা। ক্লান্ত শিক্ষকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে বুক করে রাখা গেস্ট হাউসের ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে চাইছিলেন দ্রুত। একটু পরে রাস্তায় বেরিয়ে জলখাবার খেতে গিয়েছিলেন। তখনই যে পাড়ার লোক তাদের দাড়ি-টুপি-পাজামা-পাঞ্জাবী দেখে সন্দেহ করেছেন, সেটা অনেক পরে বুঝতে পারেন ওই দলে থাকা একজন প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান। "সবাই রাত জেগে এসেছি। তাই স্নান করে একটু টিফিন করতে বেরিয়েছিলাম। ফিরে এসে ঘরেই কয়েকটা কাজ করছিলাম। এমন সময়ে গেস্ট হাউসের এক বেয়ারা এসে বলে যে আপনাদের আরও ভাল ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে। আমার সঙ্গে চলুন। আমরা সেই কথা শুনে তার সঙ্গে যাই। দ্বিতীয় ওই গেস্ট হাউসে আমাদের বসিয়েই রাখে বেশ কয়েক ঘণ্টা। যখন তাদের বলি যে 'কী ব্যাপার। এখানে নিয়ে এসে বসিয়ে রেখেছেন, ঘর দিচ্ছেন না?' ম্যানেজার তখন ফিসফিস করে বলে আপনাদের এখানে থাকতে দেওয়া যাবে না মাস্টারমশাই। আপনারা চলে যান," বলছিলেন মি. রহমান। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো অভিযোগপত্র, যার ভিত্তিতে তিন জন গ্রেপ্তার। তারা সবাই খুব অবাক হয়েছিলেন এভাবে হেনস্থা হওয়ার জন্য। কিন্তু কারণটা তখনও বুঝতে পারেন নি। যে শিক্ষক সংগঠনের নেতার মাধ্যমে ঘর বুকিং করেছিলেন তারা, তাকে খবর দেন তারা। তিনি বলছিলেন, "তখনও আমরা কারণটাই বুঝতে পারছি না যে কেন এমন ব্যবহার করল। আমাদের সংগঠনের নেতা মইদুল ইসলামকে ফোন করি। তিনি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানান যে থাকতে হবে না আপনাদের ওখানে। বেরিয়ে আসুন। পরে মি. ইসলাম আমাদের আসল কারণটা বলেন, যে ম্যানেজার তাকে বলেছে পাড়ার লোকজন আপত্তি করছে এদের কয়েকজনের দাড়ি আর টুপি দেখে। আমাদের খুবই অপমানিত লেগেছে ঘটনাটায়।" এই শিক্ষকরা সকলেই একটি অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্তি মঞ্চ নামের ওই সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলামের মাধ্যমেই ওই শিক্ষকরা ঘর বুকিং করেছিলেন। শিক্ষকদের হেনস্থার খবর পেয়ে যখন তিনি যোগাযোগ করেন গেস্ট হাউসে, তাকেই জানানো হয় যে এলাকার মানুষদের আপত্তিতেই থাকতে দেওয়া হয়নি মি. রহমানদের। "ওই গেস্ট হাউসটা আমার পরিচিত। ম্যানেজারকে আমি যখন ফোন করে জানতে চাই ব্যাপারটা, তখন সে আমায় বলে যে ওই মাস্টারমশাইরা সবাই আপনার স্বজাতির। ওরা যখন রাস্তায় বেরিয়েছিলেন তখন পাড়ার লোকজন দেখেছে যে কয়েকজনের দাড়ি আছে, টুপি আর পাজামা পাঞ্জাবী পড়া। এলাকার লোকেদের আপত্তিতেই মাস্টারমশাইদের গেস্ট হাউসটায় থাকতে দেওয়া হয় নি। এটা ভীষণ অপমানজনক একজন শিক্ষকের পক্ষে," বলছিলেন মইদুল ইসলাম। সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন। "আমরা স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াই 'মোরা একই বৃন্তের দুটি কুসুম - হিন্দু মুসলমান। মাদ্রাসা হলেও অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী হিন্দু, স্টাফরাও অনেকে হিন্দু। সেরকম জায়গায় দাড়ি-টুপি আর পাজামা-পাঞ্জাবী দেখে বয়স্ক শিক্ষকদের গেস্ট হাউস থেকে তাড়িয়ে দেয়া হল - এটা কি আমাদের বাংলার সংস্কৃতি! এই ঘটনায় সত্যিই উদ্বেগজনক," মন্তব্য মইদুল ইসলামের। কলকাতায় সাধারণভাবে হোটেল গেস্ট হাউসে ধর্মীয় পরিচিতির কারণে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না - এমন ঘটনা সচরাচর শোনা যায় না। যদিও বেশ কয়েকজন বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কলকাতার হোটেলে থাকতে গিয়ে তারা বাধা পেয়েছেন শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে। কিন্তু বিধাননগর বা সল্ট লেকে মূলত শিক্ষিত - সম্পন্ন মানুষ বসবাস করেন। সেরকম একটি এলাকার মানুষ দাড়ি টুপি পড়া মুসলমানরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে দেখে আপত্তি তুললেন? তাদের থাকতে না দিতে গেস্ট হাউসের মালিককে চাপ দিলেন। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ও লেখিকা মীরাতুন নাহার অবশ্য মনে করেন, সম্পন্ন মানুষদের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব বেশি দেখা যায়। আরও পড়তে পারেন: মুসলমানেরা ভারতে থেকে গিয়ে 'ধন্য' করেনি: আদিত্যনাথ দিল্লিতে মুসলমান নারীদের বর্ণনায় ককটেল আর আগুনের ভয়াবহতা সাম্প্রদায়িক হামলার মধ্যেই হিন্দু মুসলমানদের হাতে হাত রাখার গল্প পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি চারু করার জন্য বিজেপিকে দায়ী করা হয়। "আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, সম্পন্ন, তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক মন বেশি দেখা যায়। সাধারণ মানুষকে কখনও-সখনও সাম্প্রদায়িকতার নামে উস্কানি দেয়া যায়, কিন্তু তাদের মনে সাম্প্রদায়িকতা থাকে না। একজন হিন্দু পটল-ওয়ালা কিন্তু মুসলমান কুমড়ো-ওয়ালার পাশে বসেই বাজারে সবজি বিক্রি করে।" "আসলে আমাদের দেশের ক্ষমতায় আছে যে দলটি, তারা তো একটা বিষয়ের ওপরেই খুব মনোযোগ দিয়েছে - হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে হবে। এদিকে রুজি নেই, চিকিৎসা নেই, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে - সেসব দিক থেকে মানুষের মন সরিয়ে একটা দিকেই মনোযোগ দেওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। তারই ফলশ্রুতি এই ঘটনা," বলছিলেন মীরাতুন নাহার। মইদুল ইসলাম একটি অভিযোগ-পত্র পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর দপ্তরে। ওই চিঠি পেয়েই দুটি গেস্ট হাউসের মোট পাঁচ জন কর্মীকে আটক করে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তার মধ্যে তিনজনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দুই দিনের পুলিশ হেফাজতের আদেশ দিয়েছে কোর্ট। পুলিশ সূত্রগুলি বলছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া, বিশ্বাসভঙ্গ এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির চারটি ধারায় মামলা করা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে।
news-55791069
https://www.bbc.com/bengali/news-55791069
স্বাধীনতার ৫০ বছর: ২৫শে মার্চের হত্যাযজ্ঞের পর যেভাবে এল স্বাধীনতার ঘোষণা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ২৫শে মার্চ ছিল একটি নির্মম গণহত্যার দিন। উনিশ'শ একাত্তর সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলশ্রুতিতে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতার লড়াই।
সাতই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর বোঝা যাচ্ছিল পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি কোন দিকে এগুচ্ছে। "অপারেশন সার্চ লাইট" নামে পরিচালিত ২৫শে মার্চের সেই অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করে বাংলাদেশ। ওই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকাসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তার করে ও সামরিক অভিযান চালিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করা এবং পূর্ব পাকিস্তানে, পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তখন তুমুল অসহযোগ আন্দোলন চলছে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকার রাজপথ। সাতই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে আরও অগ্নিগর্ভ। মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় এলেন সে সময়ের পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং ১৬ই মার্চ থেকে শুরু হল মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। মার্চের ২৪ তারিখ পর্যন্ত আলোচনায় সময় গড়িয়ে গেলেও সমাধান মিলল না। পঁচিশে মার্চ রাতে ঢাকায় শুরু হলো সামরিক অভিযান। এরই মধ্যে জানা গেল ইয়াহিয়া খান সেদিনই ঢাকা ত্যাগ করেছেন। একদিকে যখন এই আলোচনা চলছে, তখনই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে শিপিং করপোরেশনের জাহাজে করে পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র ও সৈন্য আনার খবর প্রকাশ হয়। ধারণা করা হয় আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। পঁচিশে মার্চ আক্রমণ চালানোর সবুজ সঙ্কেত দেন জেনারেল টিক্কা খান টিক্কা খানের সবুজ সঙ্কেত সেই সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক তার বই 'উইটনেস টু সারেন্ডার' এ লিখেছেন, শেখ মুজিব আর ইয়াহিয়া খানের মধ্যে আলোচনার কী পরিণাম হয়, তা নিয়ে ২৫শে মার্চ দুপুরে মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন নিজের দপ্তরে বসে যখন ভাবছিলেন, তখন তাকে ফোন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান। সরাসরি বলেন, "খাদিম, আজই করতে হবে কাজটা।" খাদিম এই নির্দেশের জন্যেই অপেক্ষাই করছিলেন। নিজের কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গে ওই আদেশ পালনের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, "ক্র্যাকডাউনের সময় ঠিক করা হয়েছিল ২৬শে মার্চ রাত একটায়। আশা করা হচ্ছিল যে ততক্ষণে ইয়াহিয়া খান করাচিতে পৌঁছে যাবেন।" পঁচিশ তারিখ রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার সময় ঢাকার স্থানীয় কমান্ডার টিক্কা খানের কাছে অনুমোদন চেয়েছিলেন ক্র্যাকডাউনের সময়টা এগিয়ে আনার। সালিক লিখছেন, "জেনারেল টিক্কা আদেশ দিয়েছিলেন যতটা সম্ভব দেরি করতে। এরপর রাত সাড়ে এগারোটায় পুরো শহরের ওপরে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা করেছিল। শুরু হয়েছিল অপারেশন সার্চলাইট।" যে চার নেতা বদলে দিলেন ১৯৪৭-পরবর্তী পূর্ব বাংলার রাজনীতি ভাষা আন্দোলন কীভাবে সৃষ্টি করেছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা যে বৈষম্যের কারণে বাঙালিরা পাকিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ছয় দফা ঘোষণা করে যেভাবে নেতা হয়ে ওঠেন শেখ মুজিব যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল যুদ্ধের প্রস্তুতি তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতা ড. কামাল হোসেন বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় তার বাসভবন, ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে টেলিফোনে সারা দেশে যুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশনা দেন। ড. হোসেন বলেন নির্দেশনা পৌঁছনর ওই প্রক্রিয়ায় তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। "পঁচিশ তারিখ সন্ধ্যার দিকে আমরা রিপোর্ট পাওয়া শুরু করলাম যে, সব ট্যাংক ক্যান্টনমেন্টে লাইন আপ করা হচ্ছে, আক্রমণ করার প্রস্তুতি সেখানে চলছে। আমরা এটা বঙ্গবন্ধুকে রিপোর্ট করলাম, বঙ্গবন্ধু তখন বললেন, হ্যাঁ এখন তো মনে হয় তারা অ্যাকশনে যাবে। শেখ মুজিবুর রহমানের যুদ্ধের প্রস্তুতির সেই নির্দেশ ছিল খুবই সুস্পষ্ট। "ইনস্ট্রাকশানের একটা ফর্মূলা ছিল, যে মুহূর্তে তারা আক্রমণ শুরু করবে, সেই মুহূর্ত থেকে আমরা স্বাধীন। আঘাত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা স্বাধীন। যে যা কিছু পাই, তা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ প্রতিরোধে নেমে যাব। এই কথাটা ফোনে আমরা বলা শুরু করলাম। যে যেখানে যে কোন অস্ত্র ধরতে পার, সেটা নিয়ে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোল," বলেন ড. হোসেন। পাকিস্তানিদের আক্রমণ পাকিস্তানি বাহিনী ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে আক্রমণ চালায় ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এবং পিলখানায় তৎকালীন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ইপিআর-এর সদর দপ্তরে। পাকিস্তানি বাহিনী ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে শুরু করে "অপারেশন সার্চ লাইট" নামে পরিচালিত বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করার অভিযান। সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হল জগন্নাথ হল এবং নীলক্ষেতে শিক্ষকদের একটি আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্যাংকসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র মানুষের উপর চড়াও হয় পাকিস্তানি বাহিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন রবিউল আফতাব। তখন তার বয়স মাত্র ছয়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার পাশা ছিলেন তার পিতা। বিবিসি বাংলাকে ওই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন রাত্রি একটু বেশি হতেই শোনা গেল প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ। তার এটুকু মনে আছে যে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তা বেড়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করল। "কান ফাটানো আওয়াজ, কিছুক্ষণের মধ্যে চারিদিকে প্রচণ্ড আলো- এখন যেমন আমরা ফ্লাড-লাইট বলি, সেরকম আলো। কিছুক্ষণের মধ্যে শোনা গেল অনেক গাড়ির আওয়াজ। আমাদের ছাদের ওপর কেমন জানি ভারী মচমচে জুতার আওয়াজ। আমরা ভয়ে খাটের নিচে ঢুকে গিয়েছিলাম।" পরে তিনি শুনেছিলেন ছাদের দেয়ালে চারিদিক থেকে পাকিস্তানি সেনারা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে। চারিদিকে মানুষের "বাঁচাও বাঁচাও" ভয়ার্ত চিৎকারের মধ্যে ২৫শে মার্চের সেই "বিভীষিকাময়" গোটা রাত্রি কাটায় তার পরিবার। সেই আক্রমণের মধ্যেই ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রেফতার করে শেখ মুজিবুর রহমানকে । গ্রেফতারের ঘটনার কয়েক ঘন্টা আগে রাত ন'টার দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে শেষ দেখা করে বিদায় নিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং আমীর-উল ইসলাম। ড. হোসেন বিবিসিকে বলেন তারা সেসময় নিরাপদ জায়গায় গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। তাদের বিদায় দেবার সময় শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন তিনি থেকে যাচ্ছেন অন্য এক হিসাব থেকে, বলেন ড. কামাল হোসেন। "বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেখ, আমার সারা জীবনে আমি ঘন ঘন অ্যারেস্ট হয়েছি। আমি জানি আমাকে ধরলে হয়ত তাদের আক্রমণের তীব্রতা অন্তত কিছুটা কমবে। আর আমাকে যদি না পায়, তাহলে প্রতিশোধ নেবে তারা এলোপাথাড়ি আরও লোক মেরে।" সেই রাতেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে পাকিস্তানি বাহিনী শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। তাকে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে। পঁচিশে মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রেফতার করে শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং তাকে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। করাচি বিমানবন্দরে পাকিস্তানি সেনাদের পাহারায় শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামে হামলা বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। সেসময় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) নামের এই বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতৃত্বে ছিলেন বাঙালি কর্মকর্তা মেজর রফিকুল ইসলাম। বিবিসিকে তিনি বলেন ২৪শে মার্চ রাতেই চট্টগ্রাম অঞ্চলের সীমান্তগুলোতে তাদের বাহিনীতে পাকিস্তানি সদস্যদের হত্যা করে পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়েছিল। তারা ২৫শে মার্চ রাতেই চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন ২৫শে মার্চ ষোলোশহরের সেনা হেডকোয়ার্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুরো শহরের দখল তারা গ্রহণ করেন রাত ১১টা বিশ মিনিটে। "আমি অবস্থান নিয়ে ফেলেছি রেলওয়ে পাহাড়ে-২৫শে রাত্রি- তখন ১১টা কুড়ি মিনিট। কিছুক্ষণ পর রাত ১১টা তিরিশের দিকে দেখি একটা গাড়ি রেলওয়ে হিল এবং বাটালি হিলের মধ্যে যে রাস্তা, সে রাস্তা দিয়ে পোর্টের দিকে যাচ্ছে। আমার এক সুবেদার, আইজুদ্দীন নায়েব সুবেদার বলল যে, সার এখানে তো অনেকগুলো পাকিস্তানি সৈন্য আছে- পাঞ্জাবি, একটা রকেট লঞ্চার মারি! আমি বললাম রাখো, ওরা বোধহয় দেখছে রাস্তাটা পরিষ্কার আছে কিনা!" মেজর ইসলাম বলেন তার ধারণা পাকিস্তানি সেনাদের পরিকল্পনা ছিল রাস্তা পরিষ্কার থাকলে পোর্টে যেসব অস্ত্রশস্ত্র আছে সেগুলো নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে যাবে। তিনি তার সুবেদারকে বলেছিলেন সেটা হলে অস্ত্র নিয়ে ফেরার সময় আমরা আক্রমণ চালিয়ে অস্ত্রগুলো ধ্বংস করতে পারব। তিনি জানান ওই গাড়িটা কিছুদূর গিয়ে আগ্রাবাদে ঢোকার মুখে একটা পেট্রল পাম্পে থামে। "ওখানে আমাদের বাঙালিরা টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। এর দু তিন মিনিটের মধ্যে দেখি খুব দ্রুত একটা জিপ সেখানে গিয়ে পৌঁছয়। সেটাও ওখানে থামে এবং কিছুক্ষণ পর দুটো গাড়িই একসাথে ফিরে আসে। পরে জেনেছিলাম প্রথম গাড়িতে জিয়া সাহেব পোর্টে যাচ্ছিলেন। সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করার জন্য তাকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। তখনও শহর আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।" তিনি বলেন ওই ব্যারিকেডে আটকে যাবার সময় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের খবর জিয়াউর রহামনের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় বলে তিনি পরে জেনেছিলেন। পাকিস্তানি সেনাদের অভিযানের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তৎকালীন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) মেজর রফিকুল ইসলাম জানান চট্টগ্রাম শহরে তাদের নিয়ন্ত্রণের ওপরে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছিল পরের দিন ২৬শে মার্চ। বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে পাকিস্তানি সেনাদের এই অভিযান 'অপারেশন সার্চলাইট' চলে ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত। স্বাধীনতার ঘোষণা শেখ মুজিবুর রহমান ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে আটক হবার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেই ঘোষণা তিনি দেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকেই। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তাদের সম্প্রচার শুরু করে ২৬শে মার্চ। তৎকালীন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বেতারের চট্টগ্রামের কয়েকজন কর্মী শহর থেকে অনেকটা দূরে নিরাপদ জায়গা হিসাবে কালুরঘাটে বেতারেরই ছোট্ট একটি কেন্দ্রে তাদের প্রথম অনুষ্ঠান করেছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক বেলাল মোহম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেন ওই অনুষ্ঠানেই স্বাধীনতার সেই ঘোষণা প্রথম সম্প্রচার করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন রাজনীতিকদের মধ্যে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান। "সকালবেলা ২৬শে মার্চ আমরা শুনতে পেয়েছি একটা মাইকিং যে গত রাতে ঢাকায় আকস্মিকভাবে পাকিস্তান আর্মি নিরস্ত্র জনপদে আক্রমণ করেছে। এবং খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ চলছে। এই অবস্থায় আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এইটুক মাইকিং আমরা শুনেছি। "ওই সময় দুপুরবেলা একটা লিফলেট পেলাম হাতে। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের ড. আনোয়ার আলি একটা কাগজ আমার হাতে দিলেন। উনি নিজে বললেন একটা তারবার্তা এসেছে ঢাকা থেকে। আমরা এটার অনুবাদ করে এখন লিফলেট আকারে ছেড়েছি আর মাইকিংও করেছি আমরা।" বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্প্রচারিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে (প্রতীকী ছবি) তিনি বলেন কালুরঘাট থেকে প্রথম সেই ঘোষণা সম্প্রচারের ব্যবস্থা তারা করতে পেরেছিলেন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। তিনি বলেন সেই প্রথম অনুষ্ঠানে এম এ হান্নান শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি পড়েন এবং তার ভিত্তিতে একটি বক্তৃতাও দেন। "আর আমরা বেতার কর্মীরা নিজেদের ভয়েসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার তারবার্তার অনুবাদ যেটা লিফলেট আকারে পেয়েছিলাম, সেটা বিভিন্ন কণ্ঠে বারবার প্রচার করি ২৬শে মার্চ প্রথম ট্রান্সমিশানের এক ঘন্টার মত অনুষ্ঠানে।" কালুরঘাট কেন্দ্র থেকে ২৭শে মার্চ সন্ধ্যাতেও দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠান সম্প্রচারে সক্ষম হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। সেদিনের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন জিয়াউর রহমান। সেসময় তিনি সেনবাহিনীতে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন। বেলাল মোহম্মদ জানান জিয়াউর রহমান ওই ঘোষণা পাঠ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য আমি যখন এদিক ওদিক খোঁজ করছি, এক বন্ধু আমাকে বললেন যে, একজন মেজর আছেন পটিয়াতে। তিনি সোয়াতের অস্ত্র নামাবার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দেড়শ সৈন্য নিয়ে হেডকোয়ার্টারের বাইরে আছেন পটিয়াতে। এ খবর শুনে ২৭শে মার্চ দিনের বেলায় আমি পটিয়াতে চলে যাই।" বেলাল মোহম্মদ জানান, তার অনুরোধে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পটিয়া থেকে সৈন্য নিয়ে কালুরঘাটে যান জিয়াউর রহমান । "পটিয়া থেকে আমরা যখন কালুরঘাট পৌঁছলাম, তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয়। এবং এসেই প্রোগ্রাম শুরু করা হল। এবং আমি হঠাৎ, কী মনে করে আমি জানি না, বললাম- আচ্ছা মেজর সাহেব, এখানে তো আমরা সব মাইনর। আপনি একমাত্র মেজর। আপনি কি নিজের কণ্ঠে কিছু বলবেন? উনি নড়েচড়ে উঠলেন। বললেন- হ্যাঁ সত্যি তো, কী বলা যায় বলুন তো? কাগজ বের করা হল, উনি কলম নিলেন। প্রত্যেকটি যে শব্দ তিনি উচ্চারণ করেছেন, আমিও উচ্চারণ করেছি। তারপরে লেখা হয়েছে।" বেলাল মোহম্মদ বলেন এভাবেই তৈরি হয়েছিল জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭শে মার্চ রাত সাড়ে সাতটার অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবের নামে যে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন তার বয়ান। তবে, এই স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি হয় রাজনৈতিক মতপার্থক্য। বিএনপি দাবি করে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণার খবর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের ঢাকার পরিস্থিতি ও শেখ মুজিবকে আটকের ঘটনা ২৭শে মার্চেই বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশের পত্রিকা বা সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশিত হয়। "বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা: ফ্যাক্টস অ্যান্ড উইটনেস (আ.ফ.ম সাঈদ)" বইতে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বিদেশী সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টের একটি সংকলন প্রকাশ করা হয়েছে। ছাব্বিশে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকের আগেই শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করে তারবার্তা পাঠানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ২৫শে মার্চ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতার লড়াই ওই সংকলন অনুযায়ী বিবিসির খবরে তখন বলা হয়, "...কলকাতা থেকে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের খবরে প্রকাশ যে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।..." ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়: "...ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবুর রহমান একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের নিকট সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।..." দিল্লির দ্য স্টেটসম্যান-এর খবর ছিল: "বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে রহমানের পদক্ষেপ। একটি গোপন বেতার থেকে প্রচারিত ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।" দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, লন্ডন: ২৭শে মার্চের পত্রিকায় 'সিভিল ওয়ার ফ্লেয়ারস ইন ইস্ট পাকিস্তান: শেখ এ ট্রেইটর, সেইস প্রেসিডেন্ট' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা ও ইয়াহিয়া খান তার বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক বলার কথা উল্লেখ করা হয়। ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় ২৭শে মার্চের এক খবরে বলা হয়, "...২৬শে মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে রেডিওতে ভাষণ দেয়ার পরপরই দ্য ভয়েস অব বাংলাদেশ নামে একটি গোপন বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর এই ঘোষণা অপর এক ব্যক্তি পাঠ করেন।" এর বাইরে ভারতের বহু সংবাদপত্র এবং আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ক্যানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, হংকং, নরওয়ে, তুরস্ক, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের খবরে স্থান পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস হেরাল্ডের ২৭শে মার্চের সংখ্যার একটি খবরের শিরোনাম ছিলো, "বেঙ্গলি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডিক্লেয়ার্ড বাই মুজিব।" নিউইয়র্ক টাইমস-এও শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার ছবি ছাপানো হয়। পাশেই লেখা হয় "স্বাধীনতা ঘোষণার পরই শেখ মুজিব আটক"। বার্তা সংস্থা এপির খবর ছিল: "ইয়াহিয়া খান পুনরায় মার্শাল ল দেয়ার ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে।" আয়ারল্যান্ডের দ্য আইরিশ টাইমস-এর শিরোনাম ছিল - পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা আর সাথে ছিল শেখ মুজিবের ছবি। ব্যাংকক পোস্ট-এর খবরে বলা হয়, "শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নাম দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।" পঁচিশে মার্চের গণহত্যা ১৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয় পাকিস্তানি বাহিনীর ২৫শে মার্চের আক্রমণের মুখে যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানে, যে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাঙালি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, নিরস্ত্র বাঙালির সেই প্রতিরোধ রূপ নিয়েছিল নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী রাতের আঁধারে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত কোনও বাহিনীর আক্রমণের সেই ঘটনা, পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিরল ও ভয়াবহ একটি গণহত্যার ঘটনা। পঁচিশে মার্চকে "জাতীয় গণহত্যা দিবস" হিসাবে পালনের জন্য বাংলাদেশের সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় ২০১৭ সালের ১১ মার্চ।
news-38012694
https://www.bbc.com/bengali/news-38012694
সড়ক ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযানে লাভ কি ?
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাংলামটরে অটোমোবাইল ব্যবসায়ীদের দখলে থাকা সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আজ একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু ঢাকায় এ ধরনের অভিযান প্রায়শই চালানো হয় এবং অভিযানের পর আবার দখল হয় ফুটপাত কিংবা সড়ক। কেন এ অভিযানগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ? কেন সত্যিকার অর্থেই দখল মুক্ত করা সম্ভব হয়না নগরীর সড়ক কিংবা ফুটপাতগুলো ?
ঢাকায় সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তখন অনেকেই ফুটপাতে রাখা মালামাল সরিয়ে নেন ঢাকার বাংলামটর থেকে ইস্কাটন যাওয়ার সড়কটির অধিকাংশ জায়গাতেই অটোমোবাইলের দোকান, যারা যানবাহন সারানো বা যন্ত্রাংশ সংযোজনের কাজটি করে ফুটপাতে কিংবা ফুটপাত সংলগ্ন সড়কে। আজ সেখানেই অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে অভিযানের সূচনা হয়েছে একটি ছোট দোকান উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে, যে দোকানটির দশ গজের মধ্যেই মূল সড়কের ওপরেই দাড়িয়ে আছে একটি পুলিশ ফাঁড়ি, সেটি অবশ্য অক্ষতই থেকে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল টীম যখন ফুটপাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলো ততক্ষণে ফুটপাতের বাকী অংশ অনেকটাই পরিষ্কার করে রাখেন দোকানগুলোর কর্মচারীরা। ম্যাজিস্ট্রেট সরে যাওয়ার পর একজন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে পুলিশ চলে গেলে তিনি আবার ফুটপাত দখল করবেন কি-না । জবাবে তিনি বলেন, " গাড়ীর কাজ যদি না করতে পারি তাহলে ব্যবসা করা সম্ভব হবেনা। ট্যাক্স দোকান ভাড়া কিংবা স্টাফ খরচ আছে। আমাদের জায়গা কম তাই এভাবেই কাজ করতে হবে"। আরেকজন ব্যবসায়ী ফুটপাত দখলের জন্য সরাসরি দোষ চাপালেন যারা যানবাহনের কাজ করাতে আসেন তাদের ওপর। উচ্ছেদ অভিযানের পর ঢাকার বাংলামটরের একটি ফুটপাতের দৃশ্য। সাধারণত এসব ফুটপাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যে ভরা থাকে। তাহলে এ ধরনের অভিযান চালিয়ে লাভ কি হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মশিউর রহমান সবাই মিলে মনিটরিং করতে হবে এবং শুধু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়। নগর ও পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারীদের একজন স্থপতি ইকবাল হাবিব বলছেন দখল মুক্ত করতে হুট করে চালানো উচ্ছেদ অভিযানগুলো একেবারেই মূল্যহীন বরং তার মতে এগুলো দুর্নীতির আরও ক্ষেত্র তৈরি করে। তিনি বলেন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না হলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। মিস্টার হাবিব বলেন রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকে সম্পৃক্ত করে রাস্তাঘাট ফুটপাত দখল মুক্ত করে পরেও তা রক্ষা করা যে সম্ভব তার প্রমাণ হলো ঢাকার তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল। অবশ্য এর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে গুলিস্তানে। সেখানে একটি ব্যস্ততম সড়ক কয়েক দফায় চেষ্টা করেও দখল মুক্ত করতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। তাই শেষ পর্যন্ত নগরীর সব সড়ক ও ফুটপাত কবে সম্পূর্ণ দখল মুক্ত হবে কিংবা আদৌ হবে কি-না সেটি বলা সত্যিই কঠিন।
news-43819224
https://www.bbc.com/bengali/news-43819224
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কী রয়েছে?
বাংলাদেশে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের দুই মন্ত্রী আর এক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করে করে উদ্বেগ জানিয়েছেন সম্পাদক পরিষদের সদস্যরা। তাদের আপত্তিগুলো অনেকাংশে যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৯ ও ২০ ধারার সংযুক্তি তৈরি করেছিলো নতুন বিতর্ক গত ২৯শে জানুয়ারি ২০১৮ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা। গত জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইনটির ব্যাপারে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, "আইসিটি অ্যাক্টের অপরিচ্ছন্ন যে ৫৭ ধারা ছিলো, সেটিকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ৫৭ ধারার যে অপরাধ, সেগুলো বিস্তারিতভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে"। কিন্তু এর আগে থেকেই প্রস্তাবিত নতুন এই আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের কর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, আইনটির অনেক ধারায় হয়রানি ও অপব্যবহার হতে পারে। আরো পড়তে পারেন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আইসিটি অ্যাক্ট থেকে ভিন্ন? প্রস্তাবিত আইনের প্রতিবাদে ফেসবুকে #আমি গুপ্তচর স্থায়ী চুক্তিতে 'মাত্র' ১০ ক্রিকেটার রাখা নিয়ে বিতর্ক বাংলাদেশের কয়েকজন মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবিত আইন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন সম্পাদকরা সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে এই আইনের বিষয়ে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সম্পাদকদের একটি সংগঠন, সম্পাদক পরিষদ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য যোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলকের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন সম্পাদক পরিষদের সদস্যর। সেখানে এই আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেন। তাদের মুখপাত্র ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বিবিসিকে বলেন, ''আমাদের উদ্বেগ বেশ কয়েকটি ধারাতে। আমরা মনে করি, স্বাধীন সাংবাদিকতা ব্যহত হবে, স্বাধীন মতপ্রকাশ ব্যাহত হবে, এরকম বেশ কয়েকটি ধারা উপধারা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেগুলো আমরা তাদের বলেছি। আরেকটি ধারাতে পুলিশকে যে অধিকার দেয়া হয়েছে যে, সন্দেহ বশবর্তী হয়ে তারা একটি মিডিয়া হাউজে ঢুকতে পারবে বা প্রয়োজনে গ্রেপ্তারও করতে পারবে, এ ধরণের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।'' ''অনেক ব্যাপারেই ওনারা (মন্ত্রীরা) আমাদের উদ্বেগটা সিরিয়াসলি গ্রহণ করেছেন,'' বলছেন মি.আনাম। আইনের খসড়ায় ৫৭ ধারার আদলে বিতর্কিত ইস্যুগুলো সংযুক্ত হওয়ায় নতুন করে এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ''সম্পাদক পরিষদ যে আপত্তিগুলো তুলেছে, সেগুলো অনেকাংশে যৌক্তিক। তবে আইনটি এখন সংসদীয় কমিটিতে আছে। সেখানে আমি প্রস্তাব করবো যেন সম্পাদক পরিষদকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়।'' ২২শে এপ্রিল সংসদীয় কমিটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আইনমন্ত্রী বিষয়টি তুলবেন বলে জানিয়েছেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ''সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, এটা ফ্রিডব অব প্রেস বা ফ্রিডম অব স্পিচ বন্ধ করার জন্য নয়। আইনে কোন ক্রুটি বা দুর্বলতা থাকলে সেগুলো সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে।'' সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে এই বৈঠকে সম্পাদক পরিষদ একমত পোষণ করেছেন যে, সাইবার সিকিউরিটির জন্য একটি আইনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু স্বাধীন সাংবাদিকতা বা মতপ্রকাশের কোন বাধা দেশের জন্য, সাংবাদিকতার জন্য ভালো হবে না বলে তারা বৈঠকে জানিয়েছেন। ফেসবুকে মানহানিকর বা অবমাননাকর বক্তব্যের জন্য প্রস্তাবিত আইনে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কী রয়েছে? গত জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইনটির ব্যাপারে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, "আইসিটি অ্যাক্টের অপরিচ্ছন্ন যে ৫৭ ধারা ছিলো, সেটিকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ৫৭ ধারার যে অপরাধ, সেগুলো বিস্তারিতভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে"। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, যে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বাতিল করে তার পরিবর্তে এসব ধারার অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হবে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেকবার সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছে। এ ধরনের অপরাধ দমনে বা আইসিটি বা অন্য আইনে যা নেই, সেটিই নতুন আইনে রাখা হয়েছে। নতুন এই আইনের অধীনে মামলা হলে অভিযোগ গঠনের তারিখে হতে ৬ মাসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার বিধান রাখা হয়েছে। অনেকে আশংকা করছেন, ৫৭ ধারার মতো ধারা ১৯শের অপব্যবহার হতে পারে অর্থাৎ এখানে হ্যাকিং-এর শাস্তি ১৪ বছর কারাদণ্ড বা কমপক্ষে এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী- • ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জন শৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্লক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। •কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত যদি কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তি বলে গণ্য হবে এবং এজন্য ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। •খসড়া আইনে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের জন্য জাতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। •আইনের ২১ ধারার প্রস্তাব অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালালে বা মদদ দিলে অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। •আর ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কিছু প্রচার বা প্রকাশ করলে অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। •ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্বিতীয় খসড়ায় দেখা যাচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় আলোচিত 'মানহানি', 'মিথ্যা-অশ্লীল', 'আইন শৃঙ্খলার অবনতি' ও 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত' এই বিষয়গুলো আইনের ১৯ ও ২০ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, 'সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, এটা ফ্রিডব অব প্রেস বা ফ্রিডম অব স্পিচ বন্ধ করার জন্য নয় •৫৭ ধারায় সাজা ছিল ৭-১৪ বছর ১৯ ধারায় সেটি ২ মাস থেকে দুই বছর ও ২০ ধারায় ১ থেকে ৭ বছর। জরিমানার ক্ষেত্রেও ৫৭ ধারায় সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ থেকে ৭ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। আর ৫৭ ধারায় মামলা জামিন অযোগ্য থাকলেও ১৯ ও ২০ ধারায় মামলা জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। •আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় যেখানে 'নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ' এবং 'রাষ্ট্র ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ' এই শব্দগুলি ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সেটি 'মনকে বিকৃত ও দূষিত করা' এবং 'মর্যাদাহানি ও হেয় প্রতিপন্ন'- এভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। •কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়েও বিধান রয়েছে এই আইনে। সেখানে ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম. কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে, এমন ডিজিটাল সন্ত্রাসী কাজের জন্য অপরাধী হবেন এবং এজন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড অথবা এনধিক এক কোটি অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। •ছবি বিকৃতি বা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ করা বা বিকৃত করা বা ধারণ করার মতো অপরাধ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির অপরাধে সাত বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। •কোন ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আগে ৫৭ ধারায় মামলা হলেই যে গ্রেফতার করার বিধান ছিল, সে বিষয়ে এখন অপরাধ বিবেচনা করে কোনটি জামিনযোগ্য আর কোনটি অজামিনযোগ্য, তা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে অনলাইনে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না আইনটি কোন পর্যায়ে রয়েছে? গত ২৯শে জানুয়ারি বাংলাদেশের মন্ত্রীসভায় আইনটির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন সেটি আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে যাচাই বাছাই এবং আলোচনা হবে। ২২শে এপ্রিল কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তাদের অনুমোদন পাওয়া গেলে খসড়াটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপিত হবে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে আইন পাশের জন্য। সেখানে পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর শেষে এটি আইন হিসেবে কার্যকর হবে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ তথ্য প্রযুক্তি আইনের বেশ কয়েকটি ধারার অপব্যবহার নিয়ে গণমাধ্যম কর্মী ও সামাজিক মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই আইনের সুযোগে অনেককে হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে। তবে আইনের নানা দিক নিয়ে অনেক সমালোচনাও তৈরি হয়েছে। আশংকা করা হচ্ছে যে, প্রস্তাবিত আইনটিতে সেই ধারাগুলোই ভিন্ন আঙ্গিকে রয়েছে। অনেকে আশংকা করেন, এর অনেক ধারার হয়রানি আর অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশের সরকার বরাবরই দাবি করে আসছে যে, বাক্ স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রোধ করা এই আইনের উদ্দেশ্য নয়। সাইবার অপরাধ দমনই আইনটির লক্ষ্য। বিবিবি বাংলায় আরো পড়ুন: সুদানের যে গ্রাম চালাতো ইসরায়েলি মোসাদ এজেন্টরা তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরানোর আইনী উপায় কি? ধর্ষণ বিরোধী কার্টুনে রাম -সীতা, হুমকিতে সাংবাদিক
news-48314899
https://www.bbc.com/bengali/news-48314899
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: যেভাবে মাঠে এবং টেলিভিশনে
দেড় মাস ধরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১১টি মাঠে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯। তবে বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ বিশ্বকাপ দেখবে টিভিতে, এবং তাদের মাঠে বসে ক্রিকেট দেখতে না পারার দুঃখ ঘোচাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি 'স্টেট-অব-দি-আর্ট' টিভি কভারেজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিশ্বকাপ ট্রফি ৩০শে মে থেকে ৪৬ দিন ধরে চলা বিশ্বকাপে ম্যাচ হবে মোট ৪৮টি। আইসিসি টিভি সবগুলো ম্যাচই লাইভ প্রচার করবে। আইসিসি বলছে প্রযুক্তি এবং ক্যামেরা ব্যবহারের দিক থেকে এবারের বিশ্বকাপের কভারেজ হবে অভূতপূর্ব, ''স্টেট-অব-দি-আর্ট''। প্রতিটি ম্যাচে মাঠে কমপক্ষে ৩২টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে যেগুলোর আটটি থাকবে 'আলট্রা-মোশন' 'হক-আই' ক্যামেরা। স্ট্যাম্পের সামনে এবং পেছনে দুদিকেই ক্যামেরা থাকবে। সেইসাথে মাঠের ওপর টাঙানো দড়িতে থাকবে চলমান ''স্পাইডার ক্যামেরা''। আকাশে থাকবে ড্রোন চালিত ক্যামেরা যা দিয়ে ওপর থেকে পুরো স্টেডিয়াম এবং আশপাশের ছবি দেখবেন দর্শকরা। বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকারদের কজন আইসিসি বলছে, এই প্রথমবারের মতো ম্যাচের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর রি-প্লে এবং সেই সাথে বিশ্লেষণ এমনভাবে এবার টিভি দর্শকরা দেখবেন যে অভিজ্ঞতা আগে তাদের কখনো হয়নি। এই '৩৬০ ডিগ্রি' রিপ্লেতে কয়েকটি ক্যামেরার ফুটেজ যোগ করা হবে। ধারাভাষ্যকারদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে আইসিসি। নাসের হুসেইন, ইয়ান বিশপ, কুমার সাঙ্গাকারা, মাইক অ্যাথারটান, সৌরভ গাঙ্গুলি, সঞ্জয় মাঞ্জরেকার,ওয়াসিম আকরাম, রমিজ রাজা এবং মার্ক নিকোলাসের মতো তারকা ধারাভাষ্যকারদের পাশাপাশি থাকবেন : মেলানি জোন্স, আ্যালিসন মিচেল, ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, গ্রায়েম স্মিথ, শন পোলক, মাইকেল স্লেটার, মার্ক নিকোলাস, মাইকেল হোল্ডিং, ইশা গুহ, পমি বাঙ্গাওয়া, হর্শ ভোগলে, সাইমন ডল, ইয়ান স্মিথ, আতহার আলি খান, ইয়ান ওয়ার্ড এবং গতবারের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। এবারের বিশ্বকাপ কেমন হবে? ক্রিকেট পন্ডিতরা উচ্ছ্বসিত। তারা বলছেন, এবারের বিশ্বকাপ হতে পারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে চমকপ্রদ, উপভোগ্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট। নাসের হুসেইন: "সবচেয়ে উপভোগ্য বিশ্বকাপ হতে পারে এবার...এই ইতিহাসের একজন সাক্ষী হওয়ার জন্য আমি উন্মুখ।" ব্রেন্ডন ম্যাকালাম: "... বিশ্বকাপের সাথে এবার যুক্ত হচ্ছি ভিন্ন এক ভূমিকায়। নাটকীয়তায় ভরা একটি বিশ্বকাপের অপেক্ষা করছি।" কুমার সাঙ্গাকারা: "এবারের বিশ্বকাপ হবে সম্ভবত এযাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট। ইংল্যান্ড ফেভারিট, কিন্তু যোগ্য একাধিক চ্যালেঞ্জার রয়েছে।" মেলানি জোন্স: "১০টি দলেরই যে শক্তি, তাতে নজিরবিহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা এবার প্রবল। আগাগোড়া বহু অঘটন ঘটতে পারে, আগে পায়নি এমন কোনো দল এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিততে পারে।" ওয়াসিম আকরাম: "১৯৯২ বিশ্বকাপের ফরম্যাটে হবে এবারের বিশ্বকাপ। কোয়ালিফাই করার জন্য প্রতিটি দল অনেক সুযোগ পাবে... শক্ত প্রতিযোগিতা হবে এবং অভূতপূর্ব ক্রিকেট দক্ষতা দেখার আশা করছি।" 'হোম অফ ক্রিকেট' লর্ডস। ফাইনাল সহ পাঁচটি ম্যাচ হবে এখানে যে যে ভেনুতে বিশ্বকাপ হবে ৩০ মে থেকে ৪৬দিন ধরে চলা বিশ্বকাপে ৪৮টি ম্যাচ। এই ম্যাচগুলো হবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১১টি স্টেডিয়ামে। ১. এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, বার্মিংহাম, আসন - ২৫,০০০ ১৮৮৬ সালে তৈরি ওয়ারিকশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের এই হোম গ্রাউন্ড লর্ডস, ওভাল এবং ওল্ড ট্রাফোর্ডের পর ব্রিটেনের চতুর্থ বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। নিয়মিত টেস্ট ম্যাচ ভেনু এটি। ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল হয়েছিল এজবাস্টনে। ঐ প্রথম লর্ডসের বাইরে কোথাও আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ হয়েছিল। এবারের বিশ্বকাপে এজবাস্টনে একটি সেমিফাইনাল সহ পাঁচটি ম্যাচ হবে। দোসরা জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচটি হবে এজবাস্টনে। ২. ব্রিস্টল ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল, আসন - ১১০০০ ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম ১৩০ বছর ধরে গ্লস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হোম-গ্রাউন্ড। এতো পুরনো মাঠ হলেও, এখানে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ হয় ১৯৮৩ সালে (নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে)। তারপর থেকে গড়ে বছরে একটি ওডিআই ম্যাচ হয় এখানে। টেস্ট ম্যাচ এখনও হয়নি। আয়তনের দিক থেকে অনেক বড় মাঠ হলেও আসন সংখ্যা মাত্র ১১০০০। এই মাঠে তিনটি ম্যাচ হবে। ১১ই জুন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ রয়েছে এই মাঠে। ৩. সোফিয়া গার্ডেনস, কার্ডিফ, ওয়েলস, আসন - ১৫,২০০ ১৯৬৭ সাল থেকে মাঠটি গ্লামোরগান কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হোম গ্রাউন্ড। তবে এখানে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় ১৯৯৯ সালের ২০শে মে (অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড)। ২০০১ সাল থেকে নিয়মিত ওডিআই ম্যাচ হচ্ছে। এবারের বিশ্বকাপে চারটি ম্যাচ রয়েছে। ৮ই জুন বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের ম্যাচটি হবে কার্ডিফের এই মাঠে। ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম। ৪. রিভারসাইড, চেস্টার লে স্ট্রিট, ডারহাম, আসন - ১৪,০০০ অপেক্ষাকৃত নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ১৯৯৫ তে শুরু হলেও ২০০৩ সালে টেস্ট ভেনুর মর্যাদা পেয়েছে ডারহাম কাউন্টির এই হোম গ্রাউন্ড। তিনটি ম্যাচ হবে এই মাঠে। ৫. হেডিংলি, লিডস, আসন - ১৮,৩৫০ ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্লাবের এই মাঠে ১৮৯৯ সাল থেকে টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মাঠে প্রথম ওডিআই ম্যাচ হয় ১৯৭৩ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে। ২০১৯ বিশ্বকাপে ৪টি ম্যাচ হবে হেডিংলিতে। ৬. লর্ডস, লন্ডন, আসন- ২৮,৫০০ 'হোম অব ক্রিকেট' নামে খ্যাত লন্ডনের এই ক্রিকেট মাঠের পত্তন হয়েছিল ১৮১৪ সালে। মিডলসেক্স কাউন্টি ক্লাবের এই হোম গ্রাউন্ডের মালিকানা এমসিসি'র। ২০০৫ সাল পর্যন্ত আইসিসির সদর দপ্তর ছিল এখানে। ফাইনাল ম্যাচ সহ পাঁচটি ম্যাচ হবে লর্ডসে। ৫ই জুলাই এই মাঠে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ৭. ওভাল, লন্ডন, আসন - ২৫,০০০ ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি হয়েছিল ওভালের মাঠে, ১৮৮০ সালে। ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টেডিয়ামে একসময় ফুটবলও খেলা হতো। তবে সারে কাউন্টি ক্লাবের এই হোম গ্রাউন্ডে এখন শুধু ক্রিকেটে খেলা হয়। এই বিশ্বকাপে মোট পাঁচটি ম্যাচ হবে ওভালের মাঠে। বাংলাদেশের পর পর দুটো ম্যাচ রয়েছে ওভালে। জুনের ২ তারিখে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে। ৫ই জুন নিউজিল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের পরের ম্যাচটিও হবে ওভালের মাঠে। ওভালের মাঠ, লন্ডন ৮. ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যানচেস্টার, দর্শক - ২৪,৬০০ ওল্ড ট্রাফোর্ড ইংল্যান্ডের আরেকটি বহু পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেট মাঠ যার বয়স দেড়শ' ছাড়িয়ে গেছে। প্রথমে এটি ছিল ম্যানচেস্টার ক্রিকেট ক্লাবের গ্রাউন্ড, তবে ১৮৬৪ সাল থেকে এটি ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্লাবের হোম গ্রাউন্ড। ১৮৮৪ সালে (জুলাই ১০-১২)অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি হয়েছিল ওল্ড ট্রাফোর্ডে। এ মাঠে প্রথম ওডিআই হয় ১৯৭২ সালের ২৪শে আগস্ট, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। একটি সেমিফাইনাল সহ ছয়টি ম্যাচ হবে এখানে। তার মধ্যে রয়েছে ১৬ই জুন ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ। ৯ ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম, আসন - ১৭,০০০ ১৮৯৯ সাল থেকে ট্রেন্ট ব্রিজে টেস্ট ম্যাচ খেলা হচ্ছে। প্রথম ওডিআই হয়েছিল ১৯৭৪ সালে ৩১শে আগস্ট ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যে। প্রচুর রান হয় এই মাঠে। ওডিআই ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ ৪৮১ রানের রেকর্ডটি নটিংহ্যাম কাউন্টি ক্লাবের এই মাঠেই হয়েছে। এই বিশ্বকাপে পাঁচটি ম্যাচ হবে ট্রেন্টব্রিজে। ২০শে জুন বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার লড়াই হবে এখানে। ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যানচেস্টার ১০. রোজবোল, সাদামটন, আসন - ১৭,০০০ হ্যাম্পশায়ার ক্রিকেট কাউন্টির এই হোম গ্রাউন্ড অন্য মাঠগুলোর তুলনায় নতুন ক্রিকেট মাঠ। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এই মাঠে অবশ্য তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটই (টেস্ট, ওডিআই, টি-টুয়েন্টি) হচ্ছে। তবে বিশ্বকাপ হচ্ছে এই প্রথম। এই বিশ্বকাপে রোজবোলের মাঠে পাঁচটি ম্যাচ হবে। এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের ম্যাচ, ২৪শে জুন। ১১. টনটন, সমারসেট, আসন - ৮,০০০ সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হোম গ্রাউন্ডটি ১৮৮২ সালে চালু হলেও এখনও এটি টেস্ট ভেনুর মর্যাদা পাইনি। তবে ১৯৮৩ সাল থেকে এখানে ওডিআই ম্যাচ হচ্ছে। বাংলাদেশে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে ১৭ই জুনের ম্যাচটিসহ এবারের বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচ হবে টনটনে।
news-51802294
https://www.bbc.com/bengali/news-51802294
করোনাভাইরাস: যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তাদের কী করতে হবে?
করোনাভাইরাসে যে কেউই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে যারা আগে থেকে বিশেষ কিছু অসুখে ভুগছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া বয়স্ক লোকেরাও এই ভাইরাসে সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন এবং তাদের জীবন এর ফলে হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত যে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, চীনসহ সারা বিশ্বে, তাদের বেশিরভাগই বৃদ্ধ রোগী। তাদের ছিল নানা রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে তারা হৃদরোগে ভুগছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে হৃদরোগের মতো বিশেষ কিছু অসুখে ভুগে থাকলে আপনি হয়তো করোনাভাইরাসের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হতে পারেন। এরকম মানুষের জন্যে এখানে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো: কাদের ঝুঁকি বেশি অসুখে ভুগলেই যে আর কারো চেয়ে আপনার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তা নয়। শুধু আপনাকে বাড়তি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার দেহে যাতে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ না ঘটে সেজন্যেই এসব সাবধানতা। কারণ আপনি আক্রান্ত হলে এর উপসর্গ গুরুতর রূপ নিতে পারে এবং আপনি সহসাই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে, যারা একটু বয়স্ক অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন, করোনাভাইরাসে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যারা নিচের রোগগুলোতে ইতোমধ্যেই আক্রান্ত তাদের সাবধান থাকা জরুরি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ মানুষই কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্বাভাবিক সর্দি কাশির মতোই প্রথম কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে তারা সেরে ওঠেন। তবে কিছু কিছু মানুষের জন্যে এটা গুরুতর রূপ নিতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে, এই সংখ্যা যদিও অনেক কম, এই ভাইরাসটি প্রাণহানিরও কারণ হয়ে উঠতে পারে। কীভাবে নিরাপদ থাকবো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্যে সাধারণ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এসব বিষয় মেনে চললেই আপনি খুব সহজেই ভাইরাসটিকে ঠেকাতে পারবেন। বলা হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশি থেকে যে জলীয় পদার্থ নির্গত হয় তার মাধ্যমেই এটি ছড়িয়ে থাকে। ওই জলীয় পদার্থের সংস্পর্শে এলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। আমরা যখন হাঁচি কাশি দেই তখন সেই জলীয় পদার্থ টেবিলে চেয়ারে কিম্বা আমাদের হাতে এসে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে নির্গত ওই পদার্থের মধ্যেই থাকে করোনাভাইরাস। তার পর আমরা যখন হাত না ধুয়ে কিছু স্পর্শ করি তখন সেই ভাইরাসটি অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ে। যেমন সিঁড়ির হাতল, দরজার হ্যান্ডল ইত্যাদি। একারণে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যা যা করা জরুরি: আমি কি মুখে মাস্ক পরবো? ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশন বলছে: "ভাইরাসটি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমরা মাস্ক পরার সুপারিশ করি না। এগুলো যে খুব একটা কার্যকর তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এছাড়াও যাদের ফুসফুসের সমস্যা আছে তারা মুখে মাস্ক পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।" জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে? বেশিরভাগ মানুষই তাদের কাজে যেতে পারেন, যেতে পারেন স্কুল কলেজে এবং অন্যান্য জায়গাতেও যেখানে লোকজন আসা যাওয়া করে। আপনাকে তখনই ঘরের ভেতরে আলাদা হয়ে থাকতে হবে যখন ডাক্তাররা আপনাকে এভাবে থাকার উপদেশ দেবেন। অসুস্থ বোধ করলে কী করবো? করোনাভাইরাসের উপসর্গ হচ্ছে: এসব উপসর্গ থাকলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। লন্ডনে রয়্যাল কলেজের একজন চিকিৎসক ড. জনাথন লিচ বলছেন, "সবচেয়ে জরুরি রোগীর আতংকিত না হওয়া। হয়তো দেখা যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ঠাণ্ডা কাশি বা ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে, করোনাভাইরাসে নয়।" যদি মনে হয় যে আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাহলে প্রথমেই হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি কিম্বা ডাক্তারখানায় ছুটে না গিয়ে ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র নার্স ফিলিপা হবসন বলছেন, "আপনার শরীরে যদি উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে নিজেকে আর সকলের কাছ থেকে আলাদা করে রাখুন। এবং ডাক্তারকে ফোন করে পরামর্শ নিন। ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করবেন, খেয়াল রাখবেন শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না যায় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম করুন।" আমি কি ওষুধ অব্যাহত রাখবো? অসুস্থ হয়ে পড়লেও স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে আপনি আগে থেকে যেসব ওষুধ খাচ্ছিলেন সেগুলো চালিয়ে যেতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় আপনার যদি ওষুধ ফুরিয়ে যায় তাহলে বন্ধু বান্ধব বা পরিবারের কাউকে সেই ওষুধ এনে দেওয়ার অনুরোধ করুন। লন্ডনে ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রফেসর পিটার ওপেনশ বলছেন, এরকম অসুস্থ লোকজনের ঘরে কমপক্ষে চার সপ্তাহের ওষুধ থাকা দরকার। ঘরে অতিরিক্ত কিছু খাবার দাবার রেখে দেওয়াও ভালো, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ফ্লু-র টিকা নিতে হবে? করোনাভাইরাস ফ্লুর মতো নয়। এটি একেবারেই আলাদা ধরনের ভাইরাস। ফ্লুর কারণেও আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এবং কোন কোন ব্যক্তির বেলায় এই ফ্লু গুরুতর রূপ নিতে পারে। ফ্লু-র টিকা নেয়া থাকলে ভালো। বিশেষ করে যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, শিশু, যাদের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা ছাড়াও গর্ভবতী নারীরাও ফ্লু-র টিকা (ফ্লু জ্যাব) নিতে পারেন। শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি থাকলে? অ্যাজমা ইউকে নামের সংস্থা বলছে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে প্রতিদিন ইনহেলার (সাধারণত বাদামী) নিন। করোনাভাইরাসসহ অন্য কোনো ভাইরাসেও যদি আক্রান্ত হন তাহলে ইনহেলার অ্যাজমা অ্যাটাক থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। তবে নীল রঙের ইনহেলারটিও সবসময় সাথে রাখুন। যদি দেখেন শ্বাস কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে তখন এটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট যদি তীব্র হয় এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ডায়াবেটিস থাকলে যারা টাইপ ওয়ান বা টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের বেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তাদের বেলায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। ডায়াবেটিস ইউকে নামের একটি সংস্থার কর্মকর্তা ড্যান হাওয়ার্থ বলছেন: "যাদের ডায়াবেটিস আছে করোনাভাইরাস কিম্বা কোভিড-১৯ তাদের শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।" "আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং কাশি, জ্বর এবং শ্বাস কষ্টের উপসর্গ থাকে, তাহলে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রার ওপর সতর্ক নজর রাখতে হবে।" দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে যারা দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে সমস্যা এবং দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা দুর্বল হলে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এবং এই অসুস্থতা মারাত্মক রূপও নিতে পারে। ব্রিটেনে চিলড্রেন্স ক্যান্সার ও লিউকেমিয়া গ্রুপের পরামর্শ হচ্ছে: যেসব শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের পিতামাতার উচিত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে কী করা উচিত এবিষয়ে পরামর্শ নেওয়া। ব্রিটিশ লিভার ট্রাস্ট বলছে, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমানোর উপায় হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার নিয়ম কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা। তবে কারো শরীরে এসব উপসর্গ দেখা দিলে তাকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। গর্ভবতী নারীদের কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত? গর্ভবতী নারীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি- এমন কথা বলার পক্ষে এখনও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সংক্রমণ এড়াতে অন্যদের মতো তাদেরও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গাইড লাইন মেনে চলতে হবে। ধূমপায়ী হলে যুক্তরাজ্যে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি দাতব্য সংস্থা অ্যাশের প্রধান নির্বাহী ডেবোরা আর্নট বলছেন, যারা ধূমপান করেন তাদের উচিত করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে ধূমপান কমিয়ে ফেলা কিম্বা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া। "ধূমপায়ীদের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাদের নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা ধূমপান করেন না তাদের দ্বিগুণ।" তিনি বলেন, "ধূমপান ছেড়ে দেওয়া নানা কারণেই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। করোনাভাইরাসের কথা মাথায় রেখেই তাদের উচিত ধূমপান ছেড়ে দেওয়া। এতে তার দেহে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।" ধূমপান ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বলে তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। বয়স্ক হলে কি আলাদা থাকা দরকার? ব্রিটেনে কর্তৃপক্ষের উপদেশ হচ্ছে বয়স্ক লোকজনদের আলাদা থাকার প্রয়োজন নেই। বয়স্ক লোকজনদের নিয়ে কাজ করে এরকম একটি দাতব্য সংস্থা এইজ ইউকের একজন পরিচালক ক্যারোলিন আব্রাহামস বলেছেন, পরিবারের সদস্যদের উচিত তাদের বয়স্ক আত্মীয় স্বজনের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা। "তাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কোন উদ্বেগ থাকলে অথবা এবিষয়ে তথ্যের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।" আরো পড়তে পারেন: বাংলাদেশে করোনাভাইরাস: আপনার প্রশ্নের উত্তর করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন আক্রান্ত দেশ থেকে এলে ১৪ দিন বাড়িতে থাকুন - আইইডিসিআর
140928_mk_aarong_photo_campaign_apology
https://www.bbc.com/bengali/news/2014/09/140928_mk_aarong_photo_campaign_apology
বিতর্কিত ছবি নিয়ে ক্ষমা চাইলো আড়ং
ঈদ এবং দুর্গা পুজাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং-এর বিজ্ঞাপনের কিছু ছবি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর কর্তৃপক্ষ দু:খপ্রকাশ করেছে এবং বিতর্কিত ছবি ও বিলবোর্ডগুলো সরিয়ে নিয়েছে।
বিতর্কিত ছবিগুলোর একটি (ছবি: আড়ং) ফেসবুক পাতায় এক বিবৃতিতে আড়ং বলছে, বর্ষা ও বিসর্জনকে থিম হিসেবে ধরে তারা যে প্রচার কৌশল তৈরি করেছিল, বর্তমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশার বিচারে সেটিতে অনেকের কাছে সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে বলে মনে হতে পারে। ''এটা অনিচ্ছাকৃত এবং এর জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী,'' বিবৃতিতে বলা হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অনেকগুলো জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বানভাসী মানুষ নানা দু:খকষ্টে রয়েছে। তবে এই বিজ্ঞাপনী প্রচারের ধরণাটি বন্যার আগেই তৈরি করা হয়েছিল বলে আড়ং কর্তৃপক্ষ ব্যাখ্যা করছে। আড়ং-এর ফেসবুক পাতার ঈদ-উল আজহা ও পুজা শিরোনামের অ্যালবামে ১১টি ছবিতে মডেলদের এক হাঁটু পানির মধ্যে নানা ভঙ্গীমায় দেখা যাচ্ছে। তবে পানিভর্তি ঘরের মধ্যে চেয়ারে বসা এক নারীসহ চার জন মডেলের বিতর্কিত ছবিটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ছবিটির অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে ক্রেতাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, আড়ং-এর বিলবোর্ড থেকেও বিতর্কিত ছবিগুলিয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
news-44365415
https://www.bbc.com/bengali/news-44365415
ভারতীয় সেক্স গুরু ভগবান রাজনীশের দেহরক্ষী ছিলেন যে স্কটিশ
ভারতীয় 'সেক্স গুরু' ভগবান শ্রী রাজনীশের প্রথম দিকের শিষ্য হিউ মিলন্'এর স্বপ্ন ছিল ভালবাসা ও উদারতার উপর ভিত্তি করে একটি আলোকিত সমাজ গড়া। কিন্তু তাঁর এই স্বপ্নভঙ্গ হয় আশাতীতভাবে।
হিউ মিলন্'এর মতে আশ্রমের সবাই 'যৌনতার দিক থেকে মুক্ত' ছিলেন জনপ্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ 'ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড কান্ট্রি'তে উঠে আসে ভগবান রাজনীশের চমকপ্রদ কিন্তু বিতর্কিত জীবনকাহিনী। ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন রাজ্যের ৬৪ হাজার একর এলাকাজুড়ে এক খামারে হাজার হাজার শিষ্য নিয়ে ছিল ভগবান রাজনীশের আশ্রম। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে নানা ধরণের আইনি জটিলতাসহ হত্যাচেষ্টা, নির্বাচনে কারচুপি, অস্ত্র চোরাচালানের মত নানান বিতর্ক তৈরি হয়। ১৯৮৪ সালে বড় মাপের একটি বিষপ্রয়োগের ঘটনাও ঘটে সেখানে, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জৈব-সন্ত্রাসমূলক ঘটনা বলে মনে করা হয়। রহস্যজনক এই ব্যক্তির সাহচর্যে - যার ৯০টি রোলস রয়েস আছে বলে মনে করা হয় - প্রায় এক দশক কাটান এডিনবারা'র হিউ মিলন্। ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন ভগবান রাজনীশ এই সময়ে ভগবান রাজনীশ তাঁকে অনুপ্রাণিত করেন, তার মেয়েবন্ধুর সাথে সহবাস করেন এবং হিউকে কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করেন। ভগবান রাজনীশের দেহরক্ষী হিসেবে বেশ কয়েকবছর দায়িত্বপালন করেন হিউ। সেসময় তার প্রধান কাজ ছিল অনুসারীরা যেন ভগবান রাজনীশের দেহ স্পর্শ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। হিউ রাজনীশের সাথে থাকার সময়কালীন ১০ বছরে রাজনীশের ভক্ত সংখ্যা "২০ থেকে ২০ হাজার" এ উন্নীত হয়। হিউ বলেন, "এই অনুসারীদের মধ্যে অধিকাংশই ঘরবাড়ি,পরিবার,কাজ সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে সপ্তাহে ৬০ থেকে ৮০ ঘণ্টা কাজ করতো এবং আশ্রমে থাকতো। এটি এমনই এক অঙ্গীকার ছিল।" প্রায় এক দশক যাবত ভগবান রাজনীশের একান্ত সহচর ছিলেন হিউ স্কটল্যান্ডের লানার্কে জন্ম নেয়া হিউ মিলন্'এর বেড়ে ওঠা এডিনবারায়। এডিনবারায় কিংস্টন ক্লিনিকের সাথে যুক্ত ছিল হিউর পরিবার। হিউর পিতামহ জেমস সি থম্পসন ছিলেন ক্লিনিকটির প্রতিষ্ঠাতা যিনি হাইড্রোথেরাপি ব্যবহার করে চিকিৎসা পদ্ধতির বিস্তার করেছিলেন। ভগবান রাজনীশের অডিও ক্যাসেট শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৩ সালে অস্টিওপ্যাথ হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে ভারত যান ২৫ বছর বয়সী হিউ। "এরকম অসাধারণ একজন ব্যক্তির সাথে পরিচয় হওয়ার পর নিজের অস্তিত্বের ওপর তাঁর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আমার তাঁকে মনে হয়েছিল অসাধারণ, জ্ঞানী,উদার, সংবেদনশীল একজন চরিত্র হিসেবে।" ভারতে থাকাকালীন হিউ পরিচিত ছিল স্বামী শিবমূর্তি হিসেবে। ভগবান রাজনীশকে নিয়ে হিউ'র লেখা বই 'দ্য গড দ্যাট ফেইলড' এ তিনি বলেছেন খ্রিস্টীয় মতবাদ বিচার করলে কোনো দিক থেকেই তিনি ঈশ্বরের মত ছিলেন না। হিউ বলেন, "আমার দৃষ্টিতে তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যার মানুষকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ।" আরো পড়ুন: কে এই 'রকস্টার বাবা' গুরু রাম রহিম সিং? ভারতে ধর্ষণের দায়ে ধর্মগুরু আসারামের যাবজ্জীবন বাবা রামদেব: ভারতে ইয়োগা গুরু থেকে কোম্পানির বস হলেন যেভাবে হিউ'র মতে, রাজনীশের অসাধারণ মানবিক গুণাবলী ছিল হিউ'র মতে ভগবান রাজনীশ, যিনি ১৯৯০ সালে মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে ওশো নাম নেন, একজন বহুরূপী ছিলেন যিনি মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে তাদের কাছে উপস্থাপন করতে পারতেন। হিউ বলেন, প্রথমদিকে তাঁর সাথে ভগবান রাজনীশের বৈঠক, যেগুলোকে 'দর্শন' বলা হতো, খুবই আমোদপূর্ণ ছিল। প্রথম ১৮ মাসের মধ্যেই ভগবান রাজনীশ হিউ'র মেয়েবন্ধুর সাথে সহবাস শুরু করেন এবং হিউকে ভারতের উষ্ম একটি অঞ্চলের এক খামারে কাজ করতে পাঠিয়ে দেন। হিউ বলেন, ঐসময় রাজনীশের বয়স ছিল চল্লিশের কিছু বেশি। রাজনীশ তাঁর নারী অনুসারীদের সাথে ভোর ৪টায় 'বিশেষ' দর্শন দিতেন বলে জানান হিউ। "তাঁকে সেক্স গুরু উপাধি দেয়া হয়েছিল কারণ তিনি যৌনতা বিষয়ে তাঁর ভাষণে ও বক্তৃতায় অনেক কথা বলতেন এবং তিনি যে তার নারী অনুসারীদের সাথে সহবাস করেন তা সর্বজনবিদিত ছিল।" হিউ বলেন যে একপর্যায়ে তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন ও আশ্রম ত্যাগ করার কথা চিন্তা করেন। তবে শেষপর্যন্ত তিনি আশ্রম না ছেড়ে সেখানে থেকে যাওয়ার কথা চিন্তা করেন। বর্তমানে হিউ'র বয়স ৭০; তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থাকেন "যৌনতার দিক থেকে আমরা সবাই ছিলাম মুক্ত। সেখানে খুব কম মানুষই একগামী ছিল। ১৯৭৩ সালে এটিকে ভিন্নভাবে দেখা হতো।" হিউ বলেন, বিশেষ দর্শনের পর তার বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক "নতুন রূপ" পায়। তবে এর কিছুদিন পরই ভগবান রাজনীশ তাঁকে ৪০০ মাইল দূরের একটি খামারে কাজ করতে পাঠিয়ে দেয়। ফিরে আসার পর রাজনীশের ব্যক্তিগত সচিব মা যোগলক্ষ্মী'র দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ পান। ভক্তদের কাছে আসতে না দেয়ার ব্যাপারে ভগবান রাজনীশ কিছুটা বিব্রত থাকলেও তিনি মানুষের ছোঁয়া সহ্য করতে পারতেন না বলে জানান মি. হিউ। পরের সাত বছর হিউ ভগবান রাজনীশের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেন। নিজের একটি রোলস রয়েস থেকে নামছেন ভগবান রাজনীশ অনুসারীদের আরেকটি গোষ্ঠী ছিল মা আনন্দ শীলা কেন্দ্রিক। নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারির ওরেগন সম্প্রদায়ের একজন প্রধান চরিত্র হিসেবে তাঁকে দেখানো হয়েছে। শীলা ভারতীয় নাগরিক হলেও নিউ জার্সিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ভারতে ভগবান রাজনীশের সাথে যোগ দেয়ার আগে একজন আমেরিকান নাগরিককে বিয়ে করেন। হিউ জানান, পুনেতে আশ্রমের ক্যান্টিনে কাজ করার সময় শীলার সাথে কাজ করেছিলেন তিনি। হিউ বলেন, সেসময় মাস খানেকের জন্য শীলার সাথে তাঁর গভীর প্রণয় গড়ে উঠেছিল। শীলার স্বামী রাজনীশকে জানানোর পর তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়। এই সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর হিউ'র প্রতি শীলার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয় এবং শীলা দ্রুত আশ্রমের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়। একসময় লক্ষ্মীকে ছাড়িয়ে রাজনীশের ব্যক্তিগত সচিব হয় শিলা। ভারতে বিতর্কের জন্ম দেয়া শুরু করলে আশ্রমের জন্য নতুন জায়গা খুঁজতে শুরু করেন রাজনীশ। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনে চলে যাওয়ার পেছনে শীলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হিউ মিলন্ ১৯৮১ সালে ওরেগনের একটি খামার কিনে নেন শীলা এবং রাজনীশের মতাদর্শ অনুযায়ী নতুন একটি শহর তৈরি করতে আশ্রমের সন্ন্যাসীদের নিয়োগ দেন। হিউ বলেন, "আমার মতে, ওরেগনে যাওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।" শুরু থেকেই স্থানীয় আইন ভঙ্গ করে ওরেগন আশ্রমের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল বলে জানান হিউ। শীলা ও তাঁর অনুসারীদের কয়েকজন কিন্তু তাদের পরিকল্পনা-মাফিক কাজই করছিল। তারা পার্শ্ববর্তী অ্যান্টেলপ এলাকার মানুষজনকে ভয় দেখানো ও হয়রানিমূলক কাজও করতে থাকে। একপর্যায়ে রাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের হত্যার প্রচেষ্টাও চালায় তারা। শীলা ও ভগবান রাজনীশ একটি নির্বাচনে কারচুপি করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টের সালাদে বিষ মেশানো হয়। এর ফলে ৭৫০ জনের বেশী মানুষের মধ্যে সালমোনেলা সংক্রমণ হয়। রাজনীশের লোকজন দাবী করে যে তারা কর্তৃপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে হিউ'র মতে, আইনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করার ফলে তারা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছিল। হিউ বলেন, ১৯৮২ সালের দিকে এই সম্প্রদায়ের ওপর থেকে ভক্তি উঠে আসতে শুরু করে তার। আশ্রম গড়ে তোলার জন্য সপ্তাহে ৮০-১০০ ঘণ্টা কাজ করতে থাকা সন্ন্যাসীরা ধীরে ধীরে সরে পড়ছিল। এই সময় আশ্রমের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অস্টিওপ্যাথ হিসেবে কাজ করছিলেন হিউ। হিউ বলেন, শীলার 'অমানুষিক' নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা ব্যক্তিদের চিকিৎসা করা হতো। মোটর সাইকেলের পেছনের আসনে শীলা (পুনে ১৯৮০) তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর না দিয়েই জোরপূর্বক কাজ করানো হতো। "একপর্যায়ে আমার মনে হলো, আমরা সবাই পিশাচ হয়ে যাচ্ছি। আমি কেন এখনো এখানে আছি?" ১৯৮২ সালের নভেম্বরে হিউ ওরেগন ছাড়েন। নতুন করে জীবন শুরু করার আগে প্রায় ৬মাস মানসিক চিকিৎসা নেন তিনি। প্রাত্যহিক বক্তৃতা শেষে পুনের আশ্রম হিউ বলেন, ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড কান্ট্রি ডকুমেন্টারিতে যা দেখানো হয়েছে তার অধিকাংশ ঘটনা তিনি ওরেগন ছাড়ার পর ঘটেছে। তবে তিনি নিশ্চিত যে ঐসময় শীলা যেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছিলেন তা সম্পর্কে রাজনীশ জ্ঞাত ছিলেন।। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: যেসব বিষয় প্রাধান্য পাবে ট্রাম্প-কিম বৈঠকে যে কারণে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারে পিছিয়ে বাংলাদেশ 'সৌদি থেকে ফেরার পর পরিবারেও ঠাঁই নেই'
news-56723297
https://www.bbc.com/bengali/news-56723297
ইউরি গ্যাগারিন: মহাশূন্যে মানুষের প্রথম যাত্রায় অজানা যেসব বিপদ ছিল
“ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক অনেক উপরে আমি টিনের একটি কৌটার ভেতর বসে আছি। নীচে নীলরঙা পৃথিবী। আমার এখন কিছুই করার নেই“ - এই পঙক্তিগুলো পপ স্টার ডেভিড বউয়ি‘র বিখ্যাত ‘স্পেস অডিটি‘ অ্যালবামের অংশ।
ইউরি গ্যাগারিন আজ থেকে ৬০ বছর আগে ইউরি গ্যাগারিন যখন প্রথম মহাশূন্যে গিয়েছিলেন তার ভেতরেও সেদিন হয়ত একই বোধ কাজ করছিল। যে নভোযানে চড়ে গ্যাগারিন সেদিন মহাশূন্যে যাত্রা করেছিলেন সেটি ছিল খুবই ছোট। সেটির ব্যাসার্ধ ছিল মাত্র দুই মিটার। সবচেয়ে বড় কথা ক্ষুদ্র ঐ নভোযানে তার ভূমিকা ছিল নেহাতই একজন যাত্রীর, নভোচারীর নয়। কারণ, সে সময় নভোযানের ভেতর কোনো যন্ত্রপাতি ছোঁয়ার অধিকার পাইলটের ছিলনা। গ্রাউন্ড কন্ট্রোল অর্থাৎ মাটিতে বসে নভোযানটির নিয়ন্ত্রণ যারা করছিলেন, তাদের সাথে গ্যাগারিনের যে কথোপকথন হয়েছিল তা থেকে জানা যায় যে ক্যাপসুলের মত ছোট ঐ নভোযানের জানালা দিয়ে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর “সৌন্দর্যে“ মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ভূপৃষ্ঠের ওপর মেঘের ছায়া দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। মস্কোতে ইউরি গ্যাগারিনের একটি ভাস্কর্য পরিষ্কার করা হচ্ছে একই ধরণের খবর: উনিশশো একষট্টি সালের ১২ই এপ্রিল গ্যাগারিনের মহাশূন্য যাত্রা এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার ঘটনাটি ছিল আমেরিকার বিরুদ্ধে সোভিয়েতের ইউনিয়নের অনস্বীকার্য এক টেক্কা। কিন্তু ঐতিহাসিক সেই সাফল্য পেতে গ্যাগারিনকে চরম বিপজ্জনক এক ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। তখন পর্যন্ত অজানা মহাকাশে এমন একটি ক্ষুদ্র যানে চড়ে তিনি রওনা দিয়েছিলেন যেখানে কোনো বিপদ ঘটলে বিন্দুমাত্র কোনো রক্ষাকবচ তার ছিলনা। যে রকেট তার নভোযানটিকে মহাশূন্যে নিক্ষেপ করেছিল, সেটি তার আগে বহুবার ব্যর্থ হয়েছিল।ফলে, গ্যাগারিন সেদিন গবেষণাগারের এক গিনিপিগের ভূমিকা নিয়েছিলেন। তার মাধ্যমে মহাশূন্য সম্পর্কে অজানা কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছিল - মহাকাশে কি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? কোনো নভোযানের পক্ষে সেখানে পৌঁছুন কি সম্ভব ? এবং যদি সেটি মহাকাশে পৌঁছুতে পারেও, সেখান থেকে কি ভূপৃষ্ঠের সাথে যোগাযোগ রক্ষা সম্ভব? এবং সেখান থেকে কি নিরাপদে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসা সম্ভব? যে নভোযানে চড়ে গ্যাগারিন মহাকাশে গিয়েছিলেন ঐ সময় রকেট থেকে শুরু করে নভোযান এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে কেউই শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন না। এমনকি মহাশূন্যে পৌঁছুতে পারলেও ভেতরের মানুষটি বাঁচবে কিনা তাও ছিল অজানা। “এখনকার বিজ্ঞানীদের সামনে যদি ভোস্টক নামের ঐ নভোযানটিকে রাখা হতো, কেউই সেটিকে মহাশূন্যে পাঠানোর পক্ষে মত দিতেন না,“ ঐ অভিযানের প্রায় ৫০ বছর পর রুশ প্রকৌশলী বরিস চেরটক তার লেখা ‘রকেট অ্যান্ড পিপল‘ বইতে লিখেছেন। “ (সে সময়) আমি এমন এক নথিতে আমি সই করেছিলাম যেখানে অমি লিখেছিলাম সবকিছু ঠিকঠাক আছে এবং আমি এই অভিযানের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিচ্ছি। কিন্তু সে রকম কোনো লিখিত গ্যারান্টি আমি আজ কোনোভাবেই দিতাম না। অনেক অভিজ্ঞতার পর আমি এখন বুঝি সেদিন আমরা কতটা ঝুঁকি নিয়েছিলাম।“ মহাকাশ অভিযানের আগে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন গ্যাগারিন। বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: ভোস্টকের দুর্বলতা যে প্রক্ষেপণ যানটির ওপর ভোস্টক নামে ঐ নভোযানটিকে বসানো হয়েছিল সেটির নামও ছিল ভোস্টক। প্রক্ষেপণ যানটির ভিত্তি ছিল আর-সেভেন ধরণের একটি রকেট যেটি ছিল আসলে দুই-ধাপ ভিত্তিক একটি আন্ত:মহাদেশীয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। ঐ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ১৯৫৭ সালের অগাস্ট মাসে। সে বছরই আর-সেভেন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক ওয়ান তৈরি করা হয়। আর-সেভেন রকেটের নকশা খুবই জুতসই বলে প্রমাণিত হয়। এখনও রাশিয়ায় প্রধানত ঐ প্রযুক্তি নির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মহাকাশে নভোযান পাঠানো হয়। যদিও অনেক পুরনো প্রযুক্তি, কিন্তু কক্ষপথে নভোযান পাঠাতে এটির নির্ভরযোগ্যতা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৬১ সালে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। কাজাকিস্তানের বাইকানুর মহাকাশ বিজ্ঞান যাদুঘরে গ্যাগারিনের ব্যবহৃত পোশাক। “আমরা যদি আধুনিককালের রকেটের নিরাপত্তা বিবেচনা করি, তাহলে ১৯৬১ সালের আগে ঐ অভিযান নিয়ে আমাদের আশাবাদী হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না ...“ চেরটক তার বইতে লিখেছেন। উনিশশো ষাট সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঁচটি কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) উৎক্ষেপণের চেষ্টা হয় যার মধ্যে তিনটি কক্ষপথে ঢুকতে পারলেও, দুটি ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। সেই দুটোর একটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। ভোস্টক কর্মসূচির আওতায় প্রথম কোনো মহাকাশযান উৎক্ষেপণ হয় ১৯৬০ সালের মে মাসে, অর্থাৎ গ্যাগারিনের অভিযানের এক বছরেরও কম সময় আগে। ঐ নভোযানে বসানো হয় একটি মানুষের মূর্তি যার নাম দেওয়া হয়েছিল ইভান ইভানোভিচ।নভোযানটি পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছুতে পারলেও সেটিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিকমত কাজ করেনি। কয়েক মাস পর ১৯শে অগাস্ট দুটো কুকুর - বেলকা এবং স্ট্রেলকা - মহাশূন্যে গিয়ে প্রাণ নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। ১৯৬০ সালে সেটাই ছিল প্রথম মহাকাশে পুরোপুরি সফল একটি যাত্রা। কিন্তু তার পরের আরো কিছু চেষ্টায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। পহেলা ডিসেম্বর আবারো দুটি কুকুরকে - মুশকা এবং চেলকা - বসিয়ে একটি নভোযান পাঠানো হলে তা ব্যর্থ। হয়। নভোযানটি সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে অন্য কোনো দেশে গিয়ে যাতে না পড়ে, তার জন্য সেটিকে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়া হয়। প্রায় নিখুঁত উনিশশো একষট্টি সালের ১২ই এপ্রিল গ্যাগারিনের ফ্লাইটের দিন রকেট একদম প্রায় নিখুঁতভাবে কাজ করেছিল। তবে মহাকাশ প্রযুক্তিতে ‘প্রায়‘ শব্দটির তেমন কোনা জায়গা নেই কারণ অল্প গোলমালেও সেদিন গ্যাগারিনের জীবন চলে যেতে পারতো। ছোটোখাটো কিছু যান্ত্রিক ঝামেলা নিয়ন্ত্রণ-কক্ষের বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। যেমন, তারা আগে যা ভেবেছিলেন গ্যাগারিনের নভোযানটি কক্ষপথে ঢোকার পর তার চেয়ে আরো উঁচুতে উঠে গিয়েছিল। যদিও ভোস্টকে এক সপ্তাহ চলার মত অক্সিজেন, খাবার এবং পানি ছিল, কিন্তু উঁচুতে চলে যাওয়ায় পৃথিবীতে ফিরতে সময় বেশি লেগে যেতে পারতো। ফলে, অক্সিজেন বা খাবারের অভাবে গ্যাগারিনের মৃত্যু হতে পারতো। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে নভোযানের ভেতর পাইলটের জন্য ফিট করা ব্রেকটি কাজ করেছিল, এবং ব্রেক চেপে গ্যাগারিন নভোযানটির উঁচুতে ওঠা থামাতে পেরেছিলেন। আরো বড় সমস্যা হয়েছিল নেমে আসার সময়। নভোযানের মূল ক্যাপসুলকে যে তারটি সার্ভিস ক্যাপসুলের (যন্ত্রপাতি এবং পাইলটের ব্যবহারের জিনিসপত্র ভর্তি অংশ) সাথে যুক্ত করে রাখে ফিরে আসার সময় সেটি আলগা হচ্ছিল না। ফলে ভূপৃষ্ঠে অবতরণের সময় গ্যাগারিনের ক্যাপসুলটি অনেক ভারী ছিল যেটি হওয়ার কথা ছিলনা। ফলে ক্যাপসুলের ভেতরের তাপমাত্রা বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে গিয়েছিল। “আমি যেন আগুনের ধোঁয়ায় চড়ে ঝড়ের গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছিলাম, “ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন গ্যগারিন। ক্যাপসুল মাটিতে পড়ার আগে গ্যাগারিন প্যারাসুটে করে সেটি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। নিরাপদে ভল্গা নদীর কাছে এসে নামেন। কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিলনা। ফেডারেশন অব অ্যারোনটিকস ইন্টারন্যাশনালের (এফএআই) শর্ত-মতো নভোচারীতে পৃথিবীতে নামতে হবে নভোযানে করে, নাহলে সেটিকে সফল অভিযান বলে গণ্য করা হবেনা। গ্যাগারিন যে শেষ কয়েক কিলোমিটার পথ প্যারাসুটে করে নেমেছিলেন তা সোভিয়েত কর্মকর্তারা স্বীকার করেননি। তবে এফএআই এই অভিযানকে সার্টিফাই করেছিল। এমনকি পরে তারা তারা শর্তও পরিবর্তন করেছিল। তারা মেনে নেয় যে সফল অভিযানের প্রধান কথা - নিরাপদ উৎক্ষেপণ, কক্ষপথে ঢোকা এবং পাইলটের জীবিত ফিরে আসা। ‘আমি অনেক বেশি জানি‘ বিবিসির রুশ সার্ভিস তিনজন রাশিয়ান নভোচারীকে জিজ্ঞেস করেছিল যে ১৯৬১ সালে ভোস্টক যে অবস্থায় ছিল তেমন একটি নভোযানে চড়ে তারা এখন মহাকাশে যাবেন কিনা। পাভেল ভিনোগ্রাদভ - যিনি ১৯৯৭, ২০০১৬ এবং ২০১৬ সালে মহাকাশে গেছেন- বলেন ঝুঁকি থাকা স্বত্বেও তিনি হয়ত ভোস্টকে চড়বেন, কিন্তু সেটা শুধু অ্যাডভেঞ্চারের কারণে। কিন্তু, তিনি বলেন, গ্যাগারিনের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন, “গ্যাগারিন হয়তো সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে ততটা অবগতই ছিলেন না।“ “আমি যখন প্রথম মহাকাশের যাত্রী হয়েছিলাম, আমি অনেক কিছু জানতাম, “ বলেন ভিনোগ্রাদভ। “আমি একজন প্রকৌশলী, অনেক কিছু জানি। কিন্তু গ্যাগারিন সম্ভবত কিছুই জানতেন না।“ নভোচারী মিখাইল করনিয়েনকো, যিনি ২০১০ এবং ২০১৫ সালে মহাকাশে গেছেন, বলেন ১৯৬১ সালে তিনিও হয়তো গ্যাগারিনের মত ভোস্টকে চড়ে বসতেন, কিন্তু এখন হয়ত তিনি যাবেন না। কারণ, তিনি বলেন, ঝুঁকি অনেক। সের্গেই রিয়াজানস্কিও দুই বার মহাকাশে গেছেন। তিনি বলেন, শুরুর দিকে নভোচারী হিসাবে বাছা হতো সামরিক বিমান চালকদের যারা দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকতেন। প্রথম প্রজন্মের রুশ ঐসব নভোচারীরা ছিলেন কমবয়সী। “আমারও যদি এখন বয়স কম থাকতো আমিও হয়তো অ্যাডভেঞ্চারের টানে ভোস্টকে চড়ে রওয়ানা হতাম। কিন্তু আমার এখন পরিবার রয়েছে। চার সন্তান।“ রিয়াজানস্কি বলেন, মহাকাশে যাওয়া এখন অনেক বিপজ্জনক এবং ভীতিকর। “সাধারণ মানুষের মনে ভয় থাকে। সেটা ভালো কারণ মানুষ তখন অনেক মনোযোগী হয়, দায়িত্বশীল হয়।“ ‘আমাদের জীবন আমূল বদলে গেছে‘ কৃষক বাবার ছেলে গ্যাগারিন অতশত চিন্তা করে মহাকাশে যাননি। কিন্তু জীবন্ত ফিরে আসার পর সারা বিশ্বে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় নায়কে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। বিশ্বজুড়ে সেলিব্রেটির মর্যাদা পেয়েছিলেন। মহাকাশ বিজ্ঞানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাফল্য প্রচারে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। “অবশ্যই আমাদের জীবন আমূল বদলে গিয়েছিল, “ ২০১১ সালে বিবিসিকে বলেন ইউরি গ্যাগারিনের মেয়ে এলেনা গ্যাগারিনা। “আমার বাবা-মায়ের ব্যক্তিগত জীবন ছিলনা বললেই চলে। বাবার ঐ অভিযানের পর মায়ের জন্য সময় বের করা বাবার কঠিন হয়ে পড়েছিল।“ “হয়ত নেহাতই ব্যক্তিগত কারণে বাবা কোথাও গেলেন, সাথে সাথে মানুষজন তাকে ঘিরে ধরতো। তার সাথে কথা বলতে চাইতো, তাকে স্পর্শ করতে চাইতো। বাবাও মনে করতেন এটা তার কাজের অংশ। তিনি মেনে নিতেন।“ গ্যাগারিন আবারো মহাকাশে যেতে চাইতেন, কিন্তু জাতীয় নায়কের মর্যাদা পেয়ে যাওয়ার তাকে আর পাঠানো হয়নি। বেশ কজন নভোচারীতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন তিনি। পরে রাশিয়ার প্রখ্যাত জুকোভস্কি ইন্সটিটিউট অব অ্যারোনটিক্যাল ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে ১৯৬৮ সালে অনার্স সহ গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন। ঐ বছর মার্চে মিগ-১৫ যুদ্ধবিমানের একটি টেস্ট ফ্লাইট চালানোর সময় সেটি বিধ্বস্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। তখন তার বয়স হয়েছিল ৩৪।
news-54764121
https://www.bbc.com/bengali/news-54764121
আমেরিকা নির্বাচন ২০২০: ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করলে কী হতে পারে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত ভোটগণনায় যা দেখা যাচ্ছে - তাতে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছেন বলেই সবাই মনে করছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর: ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পরাজয় স্বীকার করবেন না, এবং ''ভোটযুদ্ধের অনেক কিছুই এখনো বাকি আছে''। প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করলে কী ঘটতে পারে? 'এতে কিছুই এসে যায় না' যুক্তরাষ্ট্রের আইন সম্পর্কে যারা জানেন সেই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট যদি নির্বাচনে পরাজিত হন এবং সেই ফলাফল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে, তাহলে তিনি পরাজয় স্বীকার করলেন কি করলেন না - তাতে কিছু এসে যায় না। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করেন জয়ী প্রার্থীকে একটা ফোন করে এবং সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতার মাধ্যমে। নিকট অতীতে হিলারি ক্লিনটন, জন ম্যাককেইন, এ্যাল গোর, জর্জ এইচ বুশ - সবাই তাই করেছেন। অবশ্য হিলারি ক্লিনটন নির্বাচনে মি. ট্রাম্পের কাছে হারার পর তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্টকে প্রথম দিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ফলাফল খুব অল্প ব্যবধানের হলে পরাজয় স্বীকার না করে ঘটনা কোন দিকে যায় তা দেখতে। তবে এই পরাজয় স্বীকার করা একটা আনুষ্ঠানিকতা বা রাজনৈতিক সৌজন্য মাত্র - এর কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। ২০শে জানুয়ারির পর কী হতে পারে ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২১ সালের ২০শে জানুয়ারি দুপুর ১২টায়। "এর পর তিনি আর প্রেসিডেন্ট থাকবেন না, যদি না তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে জয়লাভ করেন।" তিনি বলছেন, আগামী ২০শে জানুয়ারি মি. ট্রাম্পের বর্তমান ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবে এবং সেসময়ই ২০২০-এর নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী শপথ নেবেন এবং শপথ নেবার সাথে সাথে তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন। হোয়াইট হাউজ অনেকটা ফাঁকা বলে জানাচ্ছেন সংবাদদাতারা এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সাধারণত: কংগ্রেস ভবনের সামনে হয়ে থাকে, কিন্তু আইনগতভাবে এরও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অধ্যাপক ড. রীয়াজ বলছেন, আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিতে পারেন। পরাজিত প্রার্থী নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকেন, যেমনটা মি. ট্রাম্পের শপথের দিন ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। তবে জো বাইডেন যদি জিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে মি. ট্রাম্প জো বাইডেনের শপথে উপস্থিত থাকবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয় । ট্রাম্প হারলে তাকে কি হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেয়া হবে? যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মি. ট্রাম্প ভোটের ফলাফলে হেরে গেলেও হয়তো ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে আইনি লড়াই চালানোর চেষ্টা করতে পারেন, তবে সেসব মামলায় তেমন কোন কাজ হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মি. ট্রাম্প যাই করুন - আগামী ২০শে জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নিলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগ সহ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নতুন প্রেসিডেন্টের হাতেই চলে আসবে। মি. বাইডেন নতুন প্রেসিডেন্ট হলে তিনি চাইলে মি. ট্রাম্পকে তখন হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেবার নির্দেশ দিতে পারবেন। উল্লেখ্য, জো বাইডেন নিজেই একবার বলেছিলেন যে তিনি নিশ্চিত করছেন যে মি. ট্রাম্প হেরে যাবার পর হোয়াইট হাউস ছাড়তে না চাইলে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যাবে। অবশ্য সিক্রেট সার্ভিস ঠিক কী করবে তা এখনো স্পষ্ট নয় তবে তারা এখনই জো বাইডেনকে নিরাপত্তা দিতে শুরু করেছে। তাহলে কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন নির্বাচনের ফল না মানা এবং এর বিরুদ্ধে যে আইনি লড়াইয়ের কথা বলছেন - সেগুলো কি সবই ফাঁকা বুলি? আরো পড়তে পারেন: জো বাইডেন: এবারের দৌড় হোয়াইট হাউসের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প: টিভি তারকা থেকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কী ও কীভাবে কাজ করে ফলাফল চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ তার হাতে কি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কোন পথই নেই? বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু জটিল আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে এখনও একটা সংকট তৈরি হবার সম্ভাবনা আছে। সংকট কীভাবে তৈরি হতে পারে? সবশেষ ভোট গণনার খবর অনুযায়ী - ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পাবার দৌড়ে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন । তবে সংবাদমাধ্যমে নির্বাচনের খবর জানানো আর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা এক কথা নয়। তাহলে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে বিজয়ী হলেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হবে কখন ও কীভাবে? এটা আসলে বেশ দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, "এখন পপুলার ভোটগুলো গোণা হচ্ছে । এই গোণা যখন শেষ হবে তখন তা দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সার্টিফাই করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা করে থাকেন অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নর বা সেক্রেটারি অব স্টেট।" এর পর ১৪ই ডিসেম্বর পপুলার ভোটের ভিত্তিতে রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা সমবেত হয়ে তাদের ভোটগুলো দেবেন। সাধারণত নিয়ম হলো - একেকটি রাজ্যে পপুলার ভোটে যে প্রার্থী বিজয়ী হন তিনিই ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যান। সেকারণেই পপুলার ভোটের ফল জানার সাথে সাথেই সবাই ধরে নেন যে ইলেকটোরাল ভোটের ফল কী হবে। সাংবিধানিক সংকট দেখা দিলে কংগ্রেসের ভুমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এ ক্ষেত্রে কি এমন কিছু ঘটতে পারে যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গিয়েও ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে পারেন? কী ঘটতে পারে? অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, এ ক্ষেত্রে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দু দিকে সমস্যা হতে পারে। তিনি বলছেন, এমন হতে পারে যে ভোটগণনায় যে ফল পাওয়া গেল - তা অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষ সার্টিফাই করলেন না। তবে এর সম্ভাবনা কম, এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে রাজ্যগুলোর ফল নিয়ে আপত্তি করছেন - সেগুলোও হয়তো অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ সার্টিফাই করবেন। দ্বিতীয় সমস্যাটি হতে পারে ইলেকটোরাল কলেজ নিয়ে। অধ্যাপক রীয়াজ বলছেন, ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব হচ্ছে অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনসভার। আইনসভাগুলো চাইলে জো বাইডেনের সমর্থক প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দমত ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইলেকটোরাল ভোটের দুটো স্লেট হতে পারে একটা হচ্ছে যা আসলেই পপুলার ভোটের রায় প্রতিফলিত করবে - আরেকটি রাজ্যের আইনসভাগুলোর আলাদা করে পাঠানো রায়। তারা যে ভোট দেবেন তা আবার গোণা হবে জানুয়ারির ৬ তারিখ কংগ্রেসে। কংগ্রেসের সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি যদি ইলেকটোরাল কলেজের ভোটগুলোর দুটি স্লেটের একটা রেখে অন্যটা ফেলে দেন বা দুটোর কোনটাই গ্রহণ না করেন - তাহলে একটা সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে। সংকটটা হলো - ভাইস প্রেসিডেন্ট দুটো স্লেটই প্রত্যাখ্যান করলে কোন প্রার্থীরই ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট হবে না। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ধারণ করবে কংগ্রেস। "সেক্ষেত্রে প্রতিটা অঙ্গরাজ্য একটা করে ভোট পাবে। কিন্তু বর্তমানে ২৩টি অঙ্গরাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ডেমোক্র্যাটদের, ২৬টিতে রিপাবলিকানদের। এভাবে ভোট হলে ২৬টি ভোট পেয়ে যাবেন ট্রাম্প, এবং তিনিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন। এটা হবে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি। তবে হাউজের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি হয়তো এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে বা থামিয়ে দিতে পারেন, তাহলে এক পর্যায়ে হয়তো তার হাতে দায়িত্ব এসে পড়তে পারে।" রিপাবলিকান পার্টি ও ভাইস প্রেসিডেন্টের ভূমিকাই আসল এ‌ই জটিল আইনি পরিস্থিতিতে রিপাবালিকান পার্টির ভূমিকার ওপর নির্ভর করছে যে দেশ কোন সাংবিধানিক সংকটের মধ্যে পড়ে যায় কিনা। ভোট জালিয়াতির যে প্রশ্ন তুলছেন ট্রাম্প - তা কতটা বড় সংকট তৈরি করতে পারে? জো বাইডেন বলছেন, তারাই নির্বাচনে জয়ী হতে যাচ্ছেন ড. আলী রীয়াজ বলছেন, "বিশেষত পোস্টাল ভোটে যে জালিয়াতির কথা মি. ট্রাম্প বলছেন, তা তাকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু তার পক্ষের লোকজনের করা এরকম অনেক মামলাই রাজ্য পর্যায়ের আদালতে গৃহীত হচ্ছে না। " তবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, মি. ট্রাম্প আসলে যেতে চাইছেন সুপ্রিম কোর্টে। "এ ক্ষেত্রে তার একমাত্র পথ হচ্ছে পেনসিলভেনিয়ার আদালতে পোস্টাল ভোটের জন্য তিনদিন পর্যন্ত সময় দেবার ব্যাপারে একটি রায় দেয়া হয়েছিল - যে রায়ের ফুটনোটে একটি মন্তব্য আছে যে রাজ্য পর্যায়ের সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখছে, কিন্তু তা 'আপাতত:' - নির্বাচনের পরে এ মামলায় আবার ফিরে যাওয়া যেতে পারে। " এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটা আবার নিতে পারে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে এ রায়ের কারণে যাদের পাঠানো পোস্টাল ভোট নির্বাচনের পরের তিনদিন পর্যন্ত গৃহীত হয়েছে - সেই ভোটারদের মৌলিক অধিকার সংকুচিত হবে। সেটা আরেক ধরণের সংকট তৈরি হতে পারে। এগুলোকে কেন্দ্র করে কি কোন অস্থিরতা বা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? ড, আলী রীয়াজ বলছেন, সেই সম্ভাবনা আছে। মি. ট্রাম্প তার সমর্থক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী বা মিলিশিয়াদের পথে নেমে আসার জন্য টুইটারে আহ্বান জানাতে পারেন । সেক্ষেত্রে বড় প্রশ্নটা হবে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ এবং ন্যাশনাল গার্ড কী ভূমিকা পালন করে। মি. ট্রাম্প কি করছেনএখন? জানা যাচ্ছে, মি. ট্রাম্পের মেজাজমর্জি ভালো নেই। তিনি হোয়াইট হাউজে তার বাসভবন এবং ওভাল অফিসে সময় কাটাচ্ছেন, টিভি দেখছেন, নানাজনকে ফোন করছেন। তার সমর্থকরা সেভাবে রাস্তায় নামছে না দেখে তিনি ক্ষুব্ধ। হোয়াইট হাউস অনেকটা ফাঁকা, অনেকে কাজে আসেনি। প্রেসিডেন্ট তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের বলছেন যে তিনি আইনি চ্যালেঞ্জের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবেন।
news-49799432
https://www.bbc.com/bengali/news-49799432
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে এতো শত্রুতা কেন? কার সামরিক শক্তি কতখানি?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উপসাগরীয় এলাকায় সৈন্য মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়ার পর ইরান বলছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্যে হুমকির কারণ হয়ে উঠছে।
ইরানের আয়াতোল্লাহ খামেনী ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, এসব বিদেশি শক্তি সবসময় "দুঃখ দুর্দশা" বয়ে এনেছে এবং এখানে "অস্ত্র প্রতিযোগিতা" তৈরি করা উচিত নয়। সৌদি আরবের দুটি তেল স্থাপনায় সাম্প্রতিক হামলার পর সৌদি আরবে মার্কিন সৈন্যসংখ্যা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র । এই দুটো দেশই এই হামলার জন্যে ইরানকে দায়ী করছে। ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা দীর্ঘদিনের, কিন্তু এবছর সেই উত্তেজনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে। কিন্তু সবশেষ সৌদি আরবের আবকাইক তেলক্ষেত্র ও খুরাইস তেল শোধনাগারে গত ১৪ই সেপ্টেম্বরের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর শুক্রবার বলেছে যে সৌদি আরবের অনুরোধে তারা সেখানে সৈন্য প্রেরণ করবে, তবে এই সংখ্যা হাজার হাজার হবে না। যুক্তরাষ্ট্র মূলত সৌদি আরবের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপরেই জোর দেবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি এর পর বলেছেন, বিদেশি শক্তি এ অঞ্চলে অতীতেও বিপর্যয় নিয়ে এসেছে এবং তিনি তাদেরকে এখান থেকে দূরে থাকতে বলেন। ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ড বাহিনী এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। এতো শত্রুতার কারণ সৌদি আরব ও ইরান -শক্তিশালী দুটো প্রতিবেশী দেশ- আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে তারা বহু বছর ধরেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বহু দশক ধরে চলে আসা এই শত্রুতা আরো তীব্র হয়েছে দুটো দেশের ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে। এ দুটো দেশ ইসলাম ধর্মের মূল দুটো শাখার অনুসারী - ইরান শিয়া মুসলিম বিশ্ব এবং অন্যদিকে সৌদি আরব সুন্নি মুসলিম জগতের শীর্ষ শক্তি হিসেবে বিবেচিত। ধর্মীয় এই বিভাজন মধ্যপ্রাচ্যের বাকি মানচিত্রেও দেখা যায়। বাকি দেশগুলোর কোনটিতে হয়তো শিয়া আবার কোনটিতে সুন্নি অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের কেউ ইরানের সাথে, আবার কেউ সৌদি আরবের সাথে ঘনিষ্ঠ। ঐতিহাসিকভাবেই সৌদি আরব - যেখানে ইসলামের জন্ম হয়েছে - তারা নিজেদেরকে মুসলিম বিশ্বের নেতা বলে দাবী করে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে এই দাবীকে চ্যালেঞ্জ করে ইরানের ইসলামি বিপ্লব। ইরান ও সৌদি আরবের শত্রুতার একটি উদাহরণ ইয়েমেনের যুদ্ধ। আরো পড়তে পারেন: সৌদিতে আঘাত হানে ১৮টি ড্রোন আর ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে কি আরেকটি সর্বাত্মক যুদ্ধ আসন্ন? সৌদি তেল শোধনাগারের ওপর ড্রোন হামলা কিসের ইঙ্গিত এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে নতুন এক ধরনের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয় - এক ধরনের বিপ্লবী মোল্লাতান্ত্রিক রাষ্ট্র - এবং তাদের একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের বাইরেও এমন রাষ্ট্রের মডেল ছড়িয়ে দেওয়া। পরিস্থিতি কিভাবে এতো খারাপ হলো? গত ১৫ বছরে একের পর এক নানা ঘটনার জের ধরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে বিভেদ বাড়তে বাড়তে আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ইরানের বিরোধী অন্যতম বৃহৎ শক্তি ছিলেন ইরাকি প্রেসিডেন্ট ও সুন্নি আরব নেতা সাদ্দাম হোসেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভিযানে তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো হয়। কিন্তু এর ফলেই ইরানের সামনে থেকে বড় একটি সামরিক বাধা দূর হয়, খুলে যায় বাগদাদে শিয়া-প্রধান সরকার গঠনের পথ। শুধু তাই নয়, এরপর থেকে দেশটিতে ইরানের প্রভাব বেড়েই চলেছে। এরপর ২০১১ সাল থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। সরকারবিরোধী এসব আন্দোলন, যা 'আরব বসন্ত' নামে পরিচিত, পুরো অঞ্চল জুড়েই বিভিন্ন দেশকে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল করে তোলে। এই টালমাটাল পরিস্থিতিকে সৌদি আরব ও ইরান নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে তাদের প্রভাব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে সিরিয়া, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে। এর ফলে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস ও শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইরানের প্রভাব বাড়তে থাকায় মরিয়া হয়ে উঠেছে সৌদি আরব ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে শত্রুতা দিনে দিনে ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ আঞ্চলিক নানা লড়াই-এ বিভিন্নভাবে ইরান জয়ী হচ্ছে। বিশেষ করে এটা ঘটেছে সিরিয়াতে। সেখানে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপকে সমর্থন দিয়ে আসছিল সৌদি আরব, কিন্তু সিরিয়ার সরকারি বাহিনী রাশিয়া ও ইরানের সাহায্য নিয়ে তাদেরকে হটিয়ে দিতে সমর্থ হচ্ছে। তাই সৌদি আরব এখন মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে ওই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান ইরানি প্রভাবের লাগাম টেনে ধরতে। কিন্তু সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে সেখানে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইরানের প্রভাব ঠেকাতে যেকোন ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আরো পড়তে পারেন: সৌদি আরবে হামলার ঝুঁকি ইরান কেন নেবে? নিষেধাজ্ঞা কী প্রভাব ফেলছে ইরান-বাংলাদেশ সম্পর্কে? তেল ক্ষেত্রে হামলার প্রতিশোধ নেবে সৌদি আরব সৌদি যুবরাজ এখন প্রতিবেশী ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করছেন। এ‌ই যুদ্ধের একটি উদ্দেশ্য সেখানে ইরানি প্রভাব প্রতিহত করা। কিন্তু চার বছর পর মনে হচ্ছে, এই যুদ্ধ সৌদি আরবের জন্যে ব্যয়বহুল এক বাজিতে পরিণত হয়েছে। হুথিদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। কিন্তু জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেলের দেওয়া কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তেহরান হুথি বিদ্রোহীদেরকে অস্ত্র ও প্রযুক্তি দিয়ে বড় রকমের সাহায্য ও সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে, লেবাননেও আছে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপ হেযবোল্লাহ - যারা শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, একই সাথে নিয়ন্ত্রণ করছে সশস্ত্র যোদ্ধাদের বিশাল একটি বাহিনীকে। অনেক পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন যে ২০১৭ সালে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি সৌদি আরবে গেলে তাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছিল সৌদি আরব। মি. হারিরি পরে সৌদি আরব থেকে লেবাননে ফিরে গেছেন ঠিকই, কিন্তু পদত্যাগের বিষয়টিকে তিনি স্থগিত করে রাখেন। পেছনে 'বাইরের শক্তির' খেলাও আছে বিবিসির বিশ্লেষক জনাথন মার্কাস বলছেন, এখানে বাইরের শক্তির খেলাও আছে। সৌদি আরবকে সাহস যোগাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আর তেহরানকে নিয়ন্ত্রণে সৌদি আরবকে সমর্থন দিচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের একটি ভয় হচ্ছে, সিরিয়ায় ইরানপন্থী যোদ্ধারা জয়ী হতে থাকলে একসময় তারা তাদের সীমান্তের কাছে চলে আসতে পারে। ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে যে পরমাণু চুক্তি সই হয়েছিল ইসরায়েল ও সৌদি আরব তার তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল। তাদের কথা ছিল, এরকম একটি চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা বানানোর আকাঙ্ক্ষা থেকে ইরানকে বিরত রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। কারা তাদের আঞ্চলিক মিত্র? মোটা দাগে বলতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র শিয়া-সুন্নি বিভাজনে বিভক্ত। সৌদি শিবিরে আছে উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য সুন্নি দেশগুলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর এবং জর্ডান। অন্যদিকে ইরানের সাথে আছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, লেবাননের হেযবোল্লাহ গ্রুপ। ইরাকের শিয়া নিয়ন্ত্রিত সরকারও ইরানের মিত্র, আবার একই সাথে তারা ওয়াশিংটনের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের সাথে যুদ্ধে তারাও যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি বলেছেন, বিদেশি শক্তি সবসময় উপসাগরীয় অঞ্চলে "দুঃখ দুর্দশা" বয়ে এনেছে। সৌদি-ইরান শত্রুতার প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে এই দুটো দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে নানা কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দীর্ঘদিনের শীতল যুদ্ধের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ইরান ও সৌদি আরব একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছে না ঠিকই, কিন্তু বলা যায় যে তারা নানা ধরনের ছায়া-যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাতে তারা একেক গ্রুপকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিচ্ছে যেগুলোর একটি আরেকটির বিরোধী। এই সমীকরণের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে সিরিয়া। উপসাগরীয় সমুদ্রপথেও পেশীশক্তি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে ইরানের বিরুদ্ধে। এই চ্যানেল দিয়ে সৌদি আরবের তেল পাঠানো হয় বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি এরকম বেশ কয়েকটি তেলের ট্যাংকারে হামলার জন্যে ওয়াশিংটন ইরানকে দায়ী করেছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তেহরান। সরাসরি যুদ্ধ লেগে যেতে পারে? এখনও পর্যন্ত ইরান ও সৌদি আরব প্রত্যক্ষভাবে বিভিন্ন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু কখনো তারা নিজেদের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি নেয়নি। তবে সৌদি আরবের অবকাঠামোতে হুথিদের সাম্প্রতিক বড় ধরনের হামলা তেহরান ও রিয়াদের শত্রুতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার সাথে আছে উপসাগরীয় চ্যানেলে তেলবাহী জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির বিষয়টিও। অনেকেই মনে করছেন, এসবের ফলে এই দুটো দেশের উত্তেজনা হয়তো এখন আরো ব্যাপক সংঘাতেও রূপ নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো বহু দিন ধরেই ইরানকে দেখে আসছে এমন একটি দেশ হিসেবে - যারা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। সৌদি নেতৃত্ব ইরানকে দেখছে তাদের অস্তিত্বের জন্যে হুমকি হিসেবে। আর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তো ইরানের প্রভাব ঠেকাতে প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা নিতেই প্রস্তুত। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইরান- এই দুটো দেশের মধ্যে যদি শেষ পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে সেটা হবে দুর্ঘটনাবশত, তাদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কমই।
news-49736618
https://www.bbc.com/bengali/news-49736618
কানাডা নির্বাচন: জাস্টিন ট্রুডো কি বিপদে আছেন?
চার বছর আগে, সত্যিকারের পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে বিশাল এক বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন জাস্টিন ট্রুডো। লিবারেল পার্টির এই নেতা এবং তার দল কি আবারো কানাডার জনগণের সমর্থন আদায় করতে পারবেন?
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যেদিন মি. ট্রুডো শপথ গ্রহণ করেন, তখন তিনি তার মন্ত্রিসভায় নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণের কারণে বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিলেন। যা তার দলের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বলে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। ''কারণ এটা ২০১৫ সাল'' হালকা হাসির সঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী। ওই তিনটা শব্দ সারা বিশ্বে খুব চমৎকার জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এটা ছিল মি. ট্রুডোর মধুচন্দ্রিমার শুরু। এরপরে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বারাক ওবামার সঙ্গে সেলফি তুলেছেন, ভোগ ম্যাগাজিনের বিশেষ প্রতিবেদনের বিষয় হয়েছেন, যেখানে তাকে কানাডার রাজনীতির নতুন তরুণ মুখ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আরো পড়ুন: যেভাবে বিখ্যাত হয়ে উঠলেন 'আফগান জাস্টিন ট্রুডো' বিশ্বনন্দিত ট্রুডো ভারতে এসে উপেক্ষিত কেন? প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ও তার বাচ্চার কিছু ছবি যখন ভাইরাল আগা খানের বাড়িতে অবকাশ যাপন:তদন্তের মুখে ট্রুডো টরেন্টোতে ভক্তদের সঙ্গে ট্রুডো পরবর্তীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন দক্ষিণের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেন, তখন রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের একটি প্রচ্ছদে প্রত্যাশা করা হয় যে, মুক্ত বিশ্বের নতুন নেতা হতে পারেন মি. ট্রুডো- যিনি আমেরিকান প্রেসিডেন্টের নতুন ধরণের জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে, জলবায়ু পরিবর্তনের পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে জোরালো কণ্ঠ এবং সামাজিক নানা বিষয়, অভিবাসনের পক্ষে প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা ধারণ করেন। কিন্তু এটা ২০১৯ সাল এবং এখনকার ভোটাররা মি. ট্রুডোর লিবারেলকে আর চার বছর আগের মতো করে দেখেন না। তখন দেশটি প্রায় এক দশক ধরে রক্ষণশীল নেতা স্টিফেন হারপারের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে এবং ভোটাররা অনেকটা সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। ''তখন পরিবর্তনের জন্য সত্যিই একটা মনোভাব তৈরি হয়েছিল যে, হারপারের শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, রক্ষণশীলদের ক্ষমতার অবসান ঘটাতে হবে আর সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে,'' বলছেন ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক লরা স্টিফেনসন। মি. ট্রুডোর প্রথম ফেডারেল কর্মসূচী ছিল জোরালো প্রতিশ্রুতি- বিনোদনের জন্য গাজাকে বৈধতা দেয়া, ক্ষমতা গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যে ২৫ হাজার সিরিয়ান শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া এবং কানাডার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর মতো পদক্ষেপ। ভোটাররা তার এসব ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন জুগিয়েছে, যা ছিল আগের প্রধানমন্ত্রী মি. হারপারের একেবারে বিপরীত। এ সপ্তাহে ফেডারেল কর্মসূচী শুরুর সময় মি. ট্রুডো তার বিজয়ী রাতের বক্তব্যে আবার ফিরে যান এবং আবারো মি. হারপারের সময় ফিরে আসার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন, যাকে তিনি বর্ণনা করেছেন বছরের পর বছর ধরে চলা 'ব্যর্থ রক্ষণশীল নীতি'। ''কানাডার বাসিন্দারা একটি নতুন দলকে বাছাই করেছে, মানুষ এবং নিজেদের সমাজের পেছনে বিনিয়োগ করতে চাইছে, যে দল বুঝতে পারে যে, বিশ্বের সেরা দেশটিতে বসবাসের পাশাপাশি সেটিকে আরো সেরা করে তোলা যায়,'' তিনি বলেছেন। ''যদিও এখনো আমাদের অনেক কাজ করার বাকি রয়েছে, তবে গত চারবছর ধরে আমরা সবকিছু আরো উন্নত করার চেষ্টা করেছি এবং সেটা প্রমাণ করার মতো তথ্য আমাদের রয়েছে।'' তবে মি. ট্রুডো এসব দাবি করলেও তার সরকারের সময়কে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন মিজ স্টিফেনসন। গত বছরের এসএনসি-লাভালিনের নৈতিকতাজনিত কেলেঙ্কারির বড় প্রভাব পড়েছে তার সমর্থনের ওপর। কানাডায় চার রাজনৈতিক দলের নেতা গত মাসে নৈতিকতা বিষয়ক একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা দেখতে পেয়েছে, কানাডার বৃহৎ প্রকৌশল কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের ফৌজদারি মামলার ব্যাপারে সাবেক একজন মন্ত্রীকে অন্যায্যভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। অগাস্ট মাসে অ্যাঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট বলেছেন, কানাডার মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ তার এই কাজকে অনুমোদন দিয়েছে আর ৬০ শতাংশ অনুমোদন করেনি। গত শরতে ওই ঘটনার সময় লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যদিও দলটি কিছুটা সমর্থন ফিরে পেয়েছে এবং এখন জাতীয় নির্বাচনে রক্ষণশীল দলের সঙ্গে বেশ শক্ত লড়াই শুরু করেছে। তার যেসব সিদ্ধান্তে প্রগতিশীলরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, সেসব সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও মি. ট্রুডোকে ব্যাখ্যা করতে হবে। ট্রান্স মাউন্টেন ওয়েল পাইপলাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পে তার সমর্থন দেয়া এবং পাইপলাইন অবকাঠামো ক্রয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছে পরিবেশবাদীরা। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস ২০০৫ মাত্রার নীচে নামিয়ে আনতে প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হলেও, দেশটি সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনো যথেষ্ট কাজ করতে পারেনি। নির্বাচনী সংস্কারের বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি শুরুর পরপরই বাতিল করা হয়, যা অনেক বাম ঘরানার ভোটারকে ক্ষুব্ধ করেছে, যারা আশা করছিলেন যে, বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে হাউজ অব কমন্সে নির্বাচিত হওয়ার রীতির বদল হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে করা বিতর্কিত একটি অস্ত্র চুক্তি বাতিল না করার জন্যও মি. ট্রুডো সমালোচনার শিকার হয়েছেন। বিরোধী বামপন্থী দল এনডিপির নেতা জগমিৎ সিং মি. ট্রুডোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ''তার মিষ্টি কথা থাকলেও কোন প্রতিশ্রুতি নেই।'' তবে সাবেক লিবারেল নেতা বব রে বলছেন, মি. ট্রুডো অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন, যার মাধ্যমে তিনি নিজের এবং কানাডার একটি পরিচিতি তুলে ধরেছেন। ''অন্য দলগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে বলা যেতে পারে যে, তিনি (জাস্টিন ট্রুডো) এটা বোঝাতে পেরেছেন যে, তিনি কে এবং তার দেশ কেমন? বিশ্বের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও এ ব্যাপারে তুলনা করা যায়।'' তিনি বলছেন। অনেক সিরিয়ান শরণার্থীকে কানাডায় আশ্রয় দিয়েছেন মি. ট্রুডো রাজনীতিতে আর নতুন ছেলেটি নয় তার সরকার বেশ কয়েকটি অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন করেছে। গাজাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে, কানাডার মানবাধিকার আইনের ফলে নারী-পুরুষের বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং লিঙ্গ সমতার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় আলোচনায় আনলে, উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে মেক্সিকো আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছে কানাডা, যদিও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের বাজারের ব্যাপারে রক্ষণশীল নীতি নেয়ার চেষ্টা করেছে। কানাডায় বেকারত্ব ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন কম। এখন প্রশ্ন হলো, মি. ট্রুডো কি মধ্য-বাম এবং বামপন্থী প্রগতিশীল ভোটারদের তার নিজের এবং লিবারেল পার্টির সমর্থনে নিয়ে আসতে পারবেন, যেমনটা হয়েছিল চার বছর আগে। ''এখন আর তিনি নতুন মুখ নন,'' বলছেন মিজ স্টিফেনসন। ''তাহলে এখন ব্যাপারটা কেমন হবে?'' লিবারেল এবং কনজারভেটিভদের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য বোঝানোর জন্য মি. ট্রুডো প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন। তিনি এনডিপি, গ্রিন পার্টি, ব্লক কুইবেকোসিস দলগুলোকে লিবারেল পার্টির ব্যানারে নিয়ে এসে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি তিনি এই চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন যেন, লিবারেল ভোটাররা অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে আসে। যদি প্রগতিশীলদের ভোট ভাগ হয়ে যায়, তাহলে তার সুবিধা পাবে রক্ষণশীলরা। কানাডায় গাজা বৈধ হওয়ার পর একটি গাজা বিক্রির দোকান কনজারভেটিভ প্রার্থীদের ব্যাপারে বিব্রতকর তথ্য বের করার ব্যাপারে বেশ মরিয়া হয় কাজ করছে লিবারেল পার্টির কর্মীরা। যার ব্যাপারে কনজারভেটিভ নেতা অ্যান্ড্রু স্কেহের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ''লিবারেল নেতাদের এখন প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে ভোটারদের বোঝানো যে, ভোট অনেক ভাগ হয়ে যাওয়ার মানে হলো কনজারভেটিভদের বিজয়ী হওয়া,''বলছেন মি. রে। কানাডার নির্বাচনের বাকি রয়েছে আর মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। ২১ অক্টোবর ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেটির জন্য এখন সবচেয়ে উত্তেজনাকর প্রচারণা চলছে। তবে মি. ট্রুডো বেশ কিছু সুবিধাও পাচ্ছেন। কনজারভেটিভদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরেও, জরিপে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ভোটার সমৃদ্ধ কুইবেক ও অন্টারিও প্রদেশে এগিয়ে রয়েছেন লিবারেল প্রার্থীরা। হাউজ অব কমন্সের ৩৩৮টি আসনের মধ্যে ১৯৯টি আসন রয়েছে এই দুইটি প্রদেশে। সাধারণত কানাডায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কোন সরকারকে এক মেয়াদের পরে ক্ষমতা থেকে সরতে হয় না। জাস্টিন ট্রুডো (ডান দিকে, হাই তুলছে) একটি রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়েছেন। তার বাবা পিয়েরে ছিলেন কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী তবে নির্বাচনী প্রচারণার অনেক গুরুত্ব আছে। মি. রে বলছেন, মি. ট্রুডোর রাজনৈতিক প্রচারণার ব্যাপারে ব্যাপক সহজাত ক্ষমতা রয়েছে- কঠিন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ইস্যুর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে। ''আমি মনে করি, যারা এই নির্বাচনের প্রচারণায় অবহেলা করবে, তারা বড় ধরণের ভুল করবে।'' অনেক সময় অপ্রত্যাশিত অনেক ঘটনা নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব তৈরি করে, নেতাদের সক্ষমতার পরীক্ষা করে দেখে, শেষপর্যন্ত যার প্রভাব পরে ফলাফলে। ''এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা হয়তো মূল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে এবং আমি মনে করি, সেসব ঘটনায় দলগুলো কী করবে, সেটাই তখন ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে,'' বলছেন মি. স্টিফেনসন। আরো খবর: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে কেন এতো বিতর্ক? প্রাথমিক শিক্ষা: ৬৫% শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারেনা চিকিৎসায় অবহেলা: যেভাবে অভিযোগ করবেন বাংলাদেশে ছাত্র সংগঠনগুলোর আয়ের উৎস কী?
news-51514992
https://www.bbc.com/bengali/news-51514992
অযোধ্যা: নিজের ছেলের মৃত্যুশোক ভুলতে যিনি হাজার হাজার বেওয়ারিশ লাশের সৎকার করেছেন
"একদিন এক পুলিশ অফিসারকে নদীতে একটি লাশ ছুঁড়ে ফেলতে দেখলাম। আমি দেখে সাংঘাতিক বিচলিত হয়ে পড়লাম", বলছিলেন মোহাম্মদ শরিফ।
মোহাম্মদ শরিফ নিজের ছেলের লাশ দাফন করতে না পারার বেদনা ভুলতে পেরেছেন অন্যদের লাশ সৎকার করে। "সেদিন আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলাম, আজ থেকে আমিই হবো বেওয়ারিশ লাশের অভিভাবক। আমি বেওয়ারিশ লাশের সৎকার করবো।" গত ২৮ বছর ধরে মোহাম্মদ শরিফ সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে চলেছেন। তার নিজের ছেলে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত হয়েছিলেন অযোধ্যায়। ছেলের লাশ কোনদিন তিনি খুঁজে পাননি। উত্তর ভারতের অযোধ্যা শহরে অশীতিপর মোহাম্মদ শরিফকে সবাই ডাকেন 'শরিফ চাচা' বলে। বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন তার জীবনের ব্রত সম্পর্কে: দাফন এবং শবদাহ নিজের পরিবারের কারও লাশ হলে যেভাবে করতেন, সেভাবেই তিনি দাফন করেন বেওয়ারিশ লাশ। এই জীবনে ঠিক কত বেওয়ারিশ লাশ তিনি দাফন করেছেন, কত শবদেহ চিতায় পুড়িয়েছেন, তার হিসেব নিজের কাছেই নেই। অযোধ্যা ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের প্রধান অনুজ কুমার ঝা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা কত বেওয়ারিশ লাশ মোহাম্মদ শরিফের হাতে তুলে দেন, সেই তথ্য তাদের কাছেও নেই। "আমাদের অনুমান হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার লাশ হয়তো আমরা তার হাতে তুলে দিয়েছি", বলছেন তিনি। মোহাম্মদ শরিফের পরিবারের ধারণা তিনি হয়তো প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বেওয়ারিশ লাশের সৎকার করেছেন। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমে এই সংখ্যা ২৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে বলে বলা হচ্ছে। নানা কারণে বেওয়ারিশ লাশের স্তুপ জমে ওঠে। কেউ হয়তো সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। কেউ রেল দুর্ঘটনায়। কেউ নিজের বাড়ি থেকে বহুদূরের কোন জায়গায় মারা গেছেন। তীর্থযাত্রী, অভিবাসী, সন্তান পরিত্যক্ত বৃদ্ধ- এরকম নানা মানুষের লাশ। হাসপাতালে মারা যাওয়া দরিদ্র মানুষ, যাদের লাশ সৎকার করার করার কেউ নেই। হাজার হাজার বেওয়ারিশ লাশের জানাজা পড়েছেন তিনি। এরকম লাশের সৎকার করা হয় বেসরকারি সংস্থা বা মোহাম্মদ শরিফের মতো স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে। কিন্তু এই কাজের জন্য ধন্যবাদ মেলে খুব কমই। মোহাম্মদ শরিফের এই অসাধারণ কাজের কথা প্রথম জানা যায় ভারতে তাকে একটি মর্যাদপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সন্মাননা 'পদ্মশ্রী' দেয়ার পর। 'শরিফ চাচা'র জন্য এই সন্মাননা এলো এক দীর্ঘ কষ্টসাধ্য জীবনের শেষপ্রান্তে। নিখোঁজ সন্তান মোহাম্মদ শরিফ জন্মের পরই তার মাকে হারিয়েছিলেন। বড় হয়েছেন দাদা-দাদীর কাছে। তাকে স্কুলে পাঠানোর সাধ্য তাদের ছিল না। খুব অল্প বয়সে তাকে কাজে নেমে পড়তে হয়। কিভাবে বাইসাইকেল সারাই করতে হয়, সেই কাজ শিখেছিলেন। কিন্তু নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া এক বিয়োগান্তক ঘটনার পর পঞ্চাশোর্ধ জীবনে এসে সমাজসেবকের কাজে জড়িয়ে যান। "আমার ছেলে যখন নিখোঁজ হয়ে গেল, তখন আমি তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম চারিদিকে। একমাস ধরে খুঁজেছি পাগলের মতো।" মোহাম্মদ শরিফের ছেলে মোহাম্মদ রইস। ১৯৯২ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় নিহত হয়েছিলেন। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ১৯৯২ সালে ভারতে যে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়েছিল, তার বিরাট ধাক্কা লেগেছিল অযোধ্যায়। সেই দাঙ্গায় নিহত হন তার ছেলে মোহাম্মদ রইস। "পুলিশ আমাকে বলেছিল, তার লাশ পচে গিয়েছিল। আমরা ওর লাশ দেখিনি। আমরা শুধু তার কাপড়-চোপড় পেয়েছিলাম।" ভারতে এখন যে দলটি ক্ষমতায়, সেই ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির নেতৃত্বে হিন্দু মৌলবাদীরা ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে অযোধ্যায় ষোড়শ শতকে নির্মিত বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে। এই ঘটনার পর ‌ উত্তর ভারত জুড়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। শত শত নিরীহ মানুষ সেই দাঙ্গায় মারা যান। মোহাম্মদ শরিফের স্ত্রী বিবি ছেলে হারানোর শোক সামলে উঠতে পারেননি আজ পর্যন্ত। আমার ছেলের হত্যাকারী কে? মোহাম্মদ শরিফ আজও জানেন না, তার ছেলেকে কে কোথায় কীভাবে হত্যা করেছে। "আমার মনে হয়, অন্যদের লাশ যেভাবে নদীতে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে, আমার ছেলের লাশও হয়তো সেভাবে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল।" সেই সময় ভারতের অনেক জেলাতেই কোন মর্গ ছিল না। কাজেই বেওয়ারিশ লাশ এভাবে ফেলে দেয়াটাই ছিল নিয়ম। এরকম লাশ এমনিতে মাটি চাপা দেয়ার কথা। কিন্তু সময় এবং খরচ বাঁচাতে উত্তর ভারতে নদীতে লাশ ফেলে দেয়ার প্রচলনই বেশি ছিল। "আমি প্রায় একমাস ধরে আমার ছেলের লাশ খুঁজে বেড়াই। কোথাও খুঁজে পেলাম না। এমনকী আমি পাশের শহর সুলতানপুরেও গিয়েছিলাম।" ভারতের রাষ্ট্রীয় সন্মাননা 'পদ্মশ্রী' পাওয়ার পর মোহাম্মদ শরিফকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন জেলার সরকারি কর্মকর্তারা। শেষে তারা ধারণা করলেন, হয়তো মোহাম্মদ রইসের মরদেহ ৫০ কিলোমিটার দূরের গোমতি নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ রইসের অকাল মৃত্যু তার বাবা-মাকে সাংঘাতিক বিপর্যস্ত করে দিল। তার মা তীব্র বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলেন। এ থেকে তিনি এখনো সেরে উঠতে পারেননি। ছেলের লাশকে যে ঠিকমত দাফন পর্যন্ত করতে পারেননি, এটি তাদের জন্য আরও বেশি মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু এই মানসিক আঘাত মোহাম্মদ শরিফের জীবনে এক বড় বাঁক বদল ঘটিয়ে দিল। তিনি বেওয়ারিশ লাশ সন্মানজনকভাবে সৎকারের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করলেন এবং সেই কাজে নেমে পড়লেন। "আমি ঠিক করেছিলাম নিজের জেলায় কোন বেওয়ারিশ লাশ আমি নদীতে ছুঁড়ে ফেলতে দেব না", বলছেন তিনি। হিন্দুদের দেহ তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাহ করেন মোহাম্মদ শরিফ যে কাজ কেউ করতে রাজি নয়, তিনি সেই কাজটি করতে চান বলে জানালেন পুলিশকে। "প্রথম যেদিন আমাকে এই কাজে ডাকা হলো, আমার বুক ধুক-পুক করছিল। পোস্টমর্টেমের পর পুলিশ আমাকে লাশ নিয়ে যেতে বললো। আমার পরিষ্কার মনে আছে ঐ লোকটির ঘাড় কাটা ছিল।" লাশ সৎকারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মোহাম্মদ শরিফ। তার কাজের চাপ বেড়ে গেল। লাশ বহনের জন্য তখন তিনি চার চাকার একটি ঠেলাগাড়ি কিনলেন। পাগলামি বেওয়ারিশ লাশ সৎকার নিয়ে তার এই ঘোর পছন্দ করছিল না পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশিরা। "এটা নিয়ে কেউ খুশি ছিল না। সবাই বলতো, আমি পাগল হয়ে গেছি।" পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোহাম্মদ শরিফ ভারতের হিন্দুদের মধ্যে সবচেয়ে নিচু জাত বলে যাদের ভাবা হয়, তাদেরকেই কেবল এধরণের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু একজন মুসলিম হয়ে মোহাম্মদ শরিফ এরকম একটা কাজ বেছে নিয়েছেন, সেটা কেউ মানতে পারছিল না। তিনি রীতিমত একঘরে হয়ে পড়ার উপক্রম হলেন। কিন্তু মোহাম্মদ শরিফ তার কাজ চালিয়ে গেলেন। তিনি কোন বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে যেতেন না, কোন উৎসব-পার্বনে যেতেন না। এমনকি নামাজ পড়তেও যেতেন না। এই যে তিনি সবকিছু তিনি ত্যাগ করেছিলেন শুধুমাত্র বেওয়ারিশ লাশের একটা সন্মানজনক সৎকারের জন্য। এটা তাকে মানসিক শান্তি দিত। "নিজের ছেলের মৃত্যুর বেদনা ভুলতে এটি আমাকে সাহায্য করেছিল।" "আমি আমার ছেলের কথা ভাবি সবসময়। তার কথা মনে পড়ে খুব।" গোসল, দাফন এবং শেষ প্রার্থনা বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কারণে মোহাম্মদ শরিফ প্রায় সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন মোহাম্মদ শরিফ সাধারণত লাশ দাফন বা পোড়ানোর আগে সেটিকে গোসল করান। যদি তিনি বুঝতে পারেন যে মৃত ব্যক্তি মুসলিম, তখন তিনি লাশটি একটি কাপড় দিয়ে জড়িয়ে দেন। এরপর তিনি মৃতের জন্য দোয়া পড়েন। যদি মৃত ব্যক্তি হিন্দু হন, তিনি মৃতদেহটি তার বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে দাহ করেন। অন্যান্য খবর: মাছশূন্য হতে পারে বঙ্গোপসাগর? তৃতীয় বিয়ে করতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার বর রংপুরে শিশুকে হত্যার অভিযোগে মা গ্রেফতার "যখনই পুলিশ আমাকে বেওয়ারিশ লাশ নেয়ার জন্য খবর দেয়, আমি সব কাজ ফেলে ছুটে যাই।" সাধারণত কারও মৃত্যুর কয়েকদিন এমনকী কয়েকসপ্তাহ পর তিনি লাশটি পান। পুলিশ লাশটির পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কিন্তু কেউ যদি সেটি নিতে না আসে, তখন সেটি আর না রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ততদিনে লাশে পচন ধরে যায়। ''অনেক সময় পুলিশ আমার সঙ্গে গোরস্থান পর্যন্ত আসে, তবে তারাও অনেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।" হিন্দু ধর্মে যাদের সবচেয়ে নীচু জাত বলে মনে করা হয়, তাদেরকেই কাজ করতে হয় শ্মশ্মানে। শরিফ বলেন, কখনো লাশ দেখে তার ঘেন্না হয় না। কিন্তু আর যে কোন মানুষের মতই গলিত মৃতদেহ দেখে তার মনে আঘাত লাগে। লাশ পচা গন্ধ তার ওপরও প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। "কোন বিকৃত বা গলিত মৃতদেহ দেখার পর আমার ঘুমাতে কষ্ট হয়। আমি দুঃস্বপ্ন দেখি। তখন আমাকে ঘুমের বড়ি খেতে হয়।" নিঃসঙ্গ লড়াই মোহাম্মদ শরিফ একা একাই এই কাজ করে গেছেন দশ বছর ধরে। সরকার বা কোন বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে কোন সাহায্য তিনি পাননি। মোহাম্মদ শরিফ তার সাইকেল সারানোর দোকানটি এখনো চালান। তবে এখন স্থানীয় দোকানদাররা তাকে কিছু অর্থ দেন লাশের সৎকারের খরচ হিসেবে। তার দুজন সহকারীও আছেন, তাদের বেতন দেয়া হয়। "হিন্দু এবং মুসলিম, সবাই আমাকে সাহায্য করে। মানুষ আমাকে খাবার দেয়, কম্বল দেয়। সম্প্রতি আমার চোখের অপারেশন হয়েছিল। এক অপরিচিত মানুষ এসে আমাকে বিশ হাজার রুপি দিয়ে গেছে।" মোহাম্মদ শরিফের বয়স হয়েছে, কিন্তু এই কাজের ভার যে আর কারও কাছে ছেড়ে দেবেন, সেরকম কেউ নেই। তার সন্তান বা তাদের ছেলেরাও এই কাজ করতে নারাজ। হাজার হাজার বেওয়ারিশ লাশের জানাজা পড়েছেন তিনি। তবে একই সঙ্গে তার সাইকেল সারাই এর দোকানটিও তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে প্রতিদিন তার কিছু আয় আসে। সরকার তাকে যে সন্মাননা দিয়েছে, সেটি থেকে তার কোন আর্থিক লাভ হবে না, কিন্তু তার কাজের যে স্বীকৃতি মিলেছে, তাতেই তিনি খুশি। কিন্তু এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পরও মোহাম্মদ শরিফ থামতে চান না। কারণ, তিনি জানেন, যদি তিনি এই কাজ বন্ধ করে দেন, তাহলে কী ঘটবে। "যদি আমি না থাকি, পুলিশ আবার বেওয়ারিশ লাশ নদীতে ফেলে দেবে।" এটি তিনি মেনে নিতে পারেন না। "আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই কাজ করে যেতে চাই।"
news-54026757
https://www.bbc.com/bengali/news-54026757
সোনাদিয়া সমুদ্র বন্দর: প্রকল্প বাতিলের পর কী বিকল্প চিন্তা করছে সরকার?
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে এসেছে সরকার। ২০১২ সালে সোনাদিয়া দ্বীপে সমুদ্র বন্দর তৈরির প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে ঐ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে কোনো অগ্রগতি ছিল না।
চট্টগ্রাম বন্দর গত সোমবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে আট বছর আগে নেয়া ঐ সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সোনাদিয়ার জায়গায় কিছুটা দূরত্বে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান সোনাদিয়ার কাছে মাতারবাড়ীতে আরো বেশি গভীরতার সমুদ্র বন্দর তৈরি করার সুযোগ থাকায় সোনাদিয়ার গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। তিনি বলেন, "মাতারবাড়ীতে জাপানের অর্থায়নে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের শুরুর দিকে যখন কয়লার জন্য জেটি নির্মাণ করা হয়, তখন সেখানে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের একটি সম্ভাবনার কথা জানা যায়। মাতারবাড়ীতে ১৮ মিটার ড্রাফটের একটি তৈরি চ্যানেল পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, যেটা সোনাদিয়ায় সর্বোচ্চ ১৪ মিটার ড্রাফটের হত।" "এছাড়া সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর হলে ঐ এলাকায় পরিবেশগত ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি", বলেন মি. চৌধুরী। আরো পড়তে পারেন: সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি কতটা হলো বাংলাদেশের যে ৫টি স্থান পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয় চট্টগ্রামে আসছে ট্রান্সশিপমেন্টের প্রথম চালান, বেশি গুরুত্ব পাবে ভারতীয় পণ্য? চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেগুলো মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরের ক্ষেত্রে থাকবে না যে কারণে মাতারবাড়ীতে তৈরি হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ীর কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির উপকরণ আনার জন্য তিনটি জেটি তৈরি করার সময় সমুদ্র বন্দর তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই করা শুরু হয়। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসন ও পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য জাফর আলম জানান, "জাইকা ২০১৬ সালে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি সার্ভে করে, যেখান থেকে জানা যায় যে তিনটি জেটির সাথে যে চ্যানেলটি আছে সেটিকে ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে বন্দর তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।" "এই জরিপের পর মন্ত্রণালয় ঐ অঞ্চলে সমুদ্র বন্দর তৈরির সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য সমুদ্র বন্দর তৈরি করা সম্ভব বলে জানায়।" প্রাথমিক জরিপ শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে বন্দরের জন্য প্রায় ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রায় সাড়ে ১৮ মিটার গভীরতার একটি চ্যানেল তৈরি করা হবে, যেটির সিংহভাগ সমুদ্রে থাকলেও প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশ মাটি খুঁড়ে তৈরি করা হবে। জাফর আলম বলেন, "সোনাদিয়াকে 'ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া' বা পরিবশেগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই সোনাদিয়ায় এই ধরণের প্রকল্প করা হলে তা পরিবেশের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।" "সেই তুলনায় মাতারবাড়ী বন্দর মানুষের বসতি থেকে কিছুটা দূরে এবং তীরের চেয়ে কিছুটা ভেতরের দিকে নিয়ে 'খননকৃত বন্দর' হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে, কাজেই এখানে পরিবেশগত ঝুঁকি কম তৈরি হবে।" পাশাপাশি কম জনবহুল এলাকা হওয়ায় বড় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন মি. আলম। জাফর আলম জানান ২০২৬ সালে এই বন্দর বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হবে। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্র বন্দর যেসব কারণে মাতারবাড়ী বন্দর অন্যান্য বন্দর থেকে আলাদা হবে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেগুলো মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরের ক্ষেত্রে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জাফর আলম। "চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলি নদীর ওপর হওয়ায় এখানে শুধুমাত্র জোয়ারের সময়ই জাহাজ ঢুকতে বা বের হতে পারে। এছাড়া কর্ণফুলি নদীতে দু'টি বাঁক থাকায় ১৯০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ বন্দরে ঢুকতে পারে না। আর গভীরতা কম থাকায় সাড়ে ৯ মিটারের বেশী গভীরতার জাহাজও বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না।" মাতারবাড়ী বন্দরে এরকম কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকায় যে কোনো সময় সর্বোচ্চ সাড়ে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজ সেখানে ঢুকতে পারবে বলে জানান মি. আলম। ফলে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ থেকে পণ্য আনতে ব্যবসায়ীদের অপেক্ষাকৃত কম খরচ হবে এবং তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পণ্য আনা নেয়া করা যাবে। "এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের সাথেই বন্দর অবস্থিত হওয়ায় পণ্য বহনকারী ট্রাকের কারণে শহরের কার্যক্রমে ব্যাঘাত তৈরি হয়, যেটি এই বন্দরের ক্ষেত্রে থাকবে না।" মাতারবাড়ী বন্দর থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি রাস্তা সরাসরি হাইওয়ের সাথে যুক্ত হবে। পাশাপাশি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও বন্দরের ভেতর রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে তাদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষা চালাচ্ছে বলে জানান জাফর আলম। "অর্থাৎ নদীপথ, রেলপথ ও সড়কপথে বন্দরের সাথে ত্রিমুখী যোগাযোগ থাকবে, আর ডাবল গেজ ট্রেন ব্যবহার করায় কন্টেইনার বহনের ক্ষেত্রে সেগুলোর সক্ষমতাও বেশি থাকবে।" প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের খরচ বহন করা হবে জাইকার ঋণ, সরকারি অর্থায়ন ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে।
news-56984813
https://www.bbc.com/bengali/news-56984813
ভারত কোভিড: মোদীর আসন বারাণসী বিপর্যস্ত, ক্ষোভে ফুটছে মানুষ
ভারতে এখন কোভিডের যে তাণ্ডব চলছে, তার অন্যতম প্রধান শিকার হিন্দু তীর্থস্থান বারাণসী এবং তার আশপাশের অঞ্চল।
বারাণসীর এই শ্মশানঘাটে এখন রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা শবদাহ চলছে শুধু বারণসী শহরে নয়, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রামেও। চিকিৎসা ছাড়াই ঘরে বসে ঐ সব গ্রামের বাসিন্দারা মারা যাচ্ছেন। উত্তর প্রদেশ রাজ্যের এই অঞ্চলের ক্রুদ্ধ বাসিন্দাদের অনেকে এখন খোলাখুলি প্রশ্ন করছেন এই চরম দু:সময়ে তাদের এমপি নরেন্দ্র মোদী- ভারতের প্রধানমন্ত্রী - লাপাত্তা কেন। কোভিডের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ২,২০,০০০। কোভিডে সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম বারাণসীতে হাসপাতাল অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে, রোগীরা হাসপাতালে গিয়ে বেড পাচ্ছেন না, অক্সিজেন নেই, অ্যাম্বুলেন্স নেই। এমনকি কোভিড টেস্টের ফলাফল পেতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। গত দশদিনে, বারাণসী এবং আশপাশের অঞ্চলের ওষুধের দোকানগুলোতে ভিটামিন, জিংক বা প্যারাসিটামলের মত মামুলি ওষুধ পর্যন্ত মিলছে না। ''হাসপাতালে একটা জায়গা এবং অক্সিজেনের জন্য সাহায্য চেয়ে মিনিটে মিনিটে টেলিফোন আসছে,'' নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন স্থানীয় একজন ডাক্তার। ''খুব সাধারণ ওষুধও দোকানে পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে অনেক রোগী মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও খাচ্ছেন।'' ক্ষুব্ধ মানুষজন বলছেন যে মানুষটিকে ভোট দিয়ে তারা এলাকার এমপি নির্বাচিত করেছিলেন সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিকে পা পর্যন্ত মাড়াচ্ছেন না। আরও পড়তে পারেন: ২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদী বারাণসীর এমপি কীভাবে হলো এই ট্রাজেডি? বারাণসী শহরের বাসিন্দারা বলছেন মার্চে প্রথম অশনি সঙ্কেত দেখা দিতে শুরু করে। দিল্লি এবং মুম্বাইতে সংক্রমণ বাড়ার পর ঐসব শহরে যখন বিধিনিষেধ আরোপ শুরু হয়, হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক ভিড় উপচে পড়া বাসে, ট্রাকে, ট্রেনে করে বারাণসী এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে তাদের বাড়িতে ফিরে আসে। অনেক মানুষ আবার ২৯শে মার্চ হোলি উদযাপনের জন্যও আসে। এরপর ১৮ই এপ্রিল গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতেও শত শত মানুষ দিল্লি, মুম্বাই থেকে হাজির হয়। বিশেষজ্ঞরা বার বার সাবধান করলেও কেউ তাদের কথায় কান দেয়নি। এখন তার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে বারাণসী অঞ্চলকে। উত্তর প্রদেশ রাজ্যে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাজ্যের কমপক্ষে ৭০০ শিক্ষক। সংক্রমণ বাড়া শুরু হলে বারাণসীর হাসপাতালগুলো দ্রুত কোভিড রোগীতে ভরে যায়। ফলে সিংহভাগ মানুষকে এখন নিজ দায়িত্বে এই মহামারি সামলাতে হচ্ছে। শহরের ২৫ বছরের ব্যবসায়ী রিশাব জৈন বিবিসিকে বলেন তার ৫৫ বছরের পিসি অসুস্থ হয়ে পড়লে অক্সিজেন সিলিন্ডার রি-ফিল করে আনতে তাকে প্রতিদিন ৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ''সিলিন্ডারে অক্সিজেন ৮০ শতাংশ কমে গেলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। যখন হাসপাতালে কোনো জায়গা পেলাম না, পরিবারের সবাই টেলিফোন করে করে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড়ের চেষ্টা শুরু করি। ১২/১৩ ঘণ্টা ধরে ২৫টি নম্বরে ফোন করেও কোন লাভ হয়নি। পরে সোশ্যাল মিডিয়া এবং জেলা প্রশাসনের সাহায্যে একটি হয়। পিসি এখন ভালো হয়ে উঠছেন।'' করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই উত্তর প্রদেশ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। ১৯শে এপ্রিল নয়ডায় একটি ভোট কেন্দ্রের দৃশ্য। ভোটের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজ্যে কয়েকশ শিক্ষক কোভিডে প্রাণ হারিয়েছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে ১৯শে এপ্রিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট বারাণসী এবং উত্তর প্রদেশের আরো চারটি শহরে এক সপ্তাহের লক-ডাউন দেওয়ার আদেশ দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকার তাতে কান দেয়নি, বরঞ্চ সুপ্রিম কোর্টে ঐ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তারা। রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল - ''তাদেরকে জীবন বাঁচানোর সাথে জীবিকাও বাঁচাতে হবে।'' কিন্তু সমালোচকরা এখন বলছেন সরকার জীবন ও জীবিকা কোনোটাই বাঁচাতে পারছে না। বারাণসী জেলা প্রশাসন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কিছু সময়ের জন্য কারফিউ জারি করছে। আতঙ্কে অনেক দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে হাজার হাজার মানুষের কাজ নেই, এবং ভাইরাস এখনও ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যু চাপা দেয়া হচ্ছে? বারাণসীতে সরকারি হিসাবে মোট রোগীর সংখ্যা ৭০,৬১২, আর মৃত্যুর সংখ্যা ৬৯০। কিন্তু সংক্রমণের সংখ্যার ৬৫ শতাংশই রেকর্ড করা হয়েছে পহেলা এপ্রিল থেকে। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন মারা যাছে ১০ থেকে ১১ জন। রোববারের মৃতের সংখ্যা ছিল ১৯। কিন্তু সেখানে যাদের সাথেই বিবিসি কথা বলেছে তারা বলেছে সরকারের এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি ভুয়া, বানোয়াট, অসত্য। শহরের মনিকার্নিক ঘাটের কাছে বহুদিনের পুরনো এক বাসিন্দা বললেন গত এক মাস ধরে শ্মশান ঘাটে বিরতিহীনভাবে মরদেহ পোড়ানোর কাজ চলছে। ''যেদিকে তাকাবেন অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ এবং মরদেহ''। আগে, বারাণসীর দুটো প্রধান শ্মশান ঘাটে দিনে ৮০ থেকে ৯০টি দাহ হতো। কিন্তু, ঐ বাসিন্দার কথায়, গত এক মাস ধরে দিনে ৩০০-৪০০ দাহ হচ্ছে। ভিড়ে টাসা ট্রেনে করে মুম্বাই দিল্লি থেকে হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক গ্রামে ফিরে গেছে “হঠাৎ দাহ বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? মানুষ কি অন্য কোনো কারণে বেশি মরছে? মৃত্যুর কারণ হিসাবে অধিকাংশ সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কি করে এমনকি কম বয়সীদেরও হঠাৎ এত বেশি সংখ্যায় হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে?” সম্প্রতি বারাণসীর একজন বাসিন্দার তোলা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে শ্মশান ঘাটে যাওয়ার একটি সরু রাস্তার দুই ধারে এক কিলোমিটার পর্যন্ত সার ধরে রাখা রয়েছে মরদেহ। গত দশদিনে নগর প্রশাসন নতুন দুটো শ্মশান তৈরি করেছে। সেগুলোও রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত বলে খবর রয়েছে। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়েছে ভাইরাস এই ট্রাজেডি এখন শুধু বারণসী শহরে সীমাবদ্ধ নেই। আশপাশের ছোট ছোট শহর ছাড়িয়ে এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি। বারাণসীর অদূরে ১১০টি গ্রামের একটি ব্লক রয়েছে যার মোট জনসংখ্যা ২৩০,০০০। চিরাবগাঁও নামে ঐ ব্লকের প্রধান সুধীর সিং পাপ্পু বিবিসিকে জানান গত কয়েকদিনে তার ব্লকের প্রতিটি গ্রামে পাঁচ থেকে ১০ জন মানুষ মারা গেছে। কোনো কোনো গ্রামে, তিনি বলেন, মৃত্যুর এই সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০। “এই ব্লকে কোনো হাসপাতাল নেই। অক্সিজেন নেই, ওষুধ নেই,” সুধীর সিং বলেন। “সরকারি হাসপাতালে কোনো জায়গা নেই, বেসরকারি হাসপাতালের কাছে গেলে রোগীর অবস্থা দেখার আগেই দুই থেকে পাঁচ লাখ রুপি অগ্রিম চাইছে। আমাদের কোথাও আর যাওয়ার জায়গা নেই।” বারাণসীর কাছে আইধে নামের একটি গ্রামের বাসিন্দা কমল কান্ত পাণ্ডে বিবিসিকে বলেন, তার মনে হচ্ছে গ্রামের পরিস্থিতি এখন শহরের চেয়েও খারাপ। তিনি বলেন, “আমার গ্রামের ২৭০০ বাসিন্দার সবাইকে যদি আপনি টেস্ট করেন, কমপক্ষে অর্ধেক লোক পজিটিভ হবে। গ্রামের বহু মানুষ কাশিতে ভুগছে, গায়ে জ্বর, পিঠে ব্যথা, শরীর দুর্বল, খাবারের কোনো গন্ধ-স্বাদ তারা পাচ্ছে না।” আইধে গ্রামে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর কথা সরকারি পরিসংখ্যানে জায়গা পাচ্ছে না। “কারণ গ্রামে কোনো টেস্টিংই হচ্ছে না,'' বলেন মি পাণ্ডে যিনি নিজেও কোভিডে ভুগে সবে সেরে উঠেছেন। “আপনি ভাবতে পারেন এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা! সেই জায়গাতেও আমরা শ্বাস নেওয়ার জন্য কষ্ট করছি।“ বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্মদিন উদযাপন। গত সাত বছর ধরে বারাণসী মোদীর সংসদীয় আসন 'মোদী গা ঢাকা দিয়েছেন' নরেন্দ্র মোদী প্রায়ই বলেন বারণসী, এখানকার মানুষ এবং গঙ্গা নদীর সাথে তার ''বিশেষ সম্পর্ক''। কিন্তু করোনাভাইরাসের তোড়ে যখন শহরের দুর্গতি চরমে দাঁড়ায়, তারপর তাকে তার এই নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায়নি। অথচ এই শহরের বাসিন্দারা দেখেছেন তাদের এমপি ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ১৭ বার পশ্চিমবঙ্গে গেছেন। শহরের ক্ষুব্ধ একজন রেস্তোরাঁ মালিক বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে ১৭ই এপ্রিল বারাণসীর কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা সভা ছিল ''একটি প্রহসন''।“প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী গা ঢাকা দিয়েছেন। তারা বারাণসীকে ত্যাগ করেছেন, এখানকার মানুষকে তাদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন,'' বলেন ঐ রেস্তোরা মালিক। ''স্থানীয় বিজেপি নেতারাও গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের ফোন বন্ধ। অথচ এই সময় হাসপাতালে বেডের জন্য, অক্সিজেনের জন্য তাদের সাহায্য প্রয়োজন। পুরো অচলাবস্থা চলছে এখানে। মানুষজন ভীষণ রেগে আছে।'' ''সমস্ত দায় প্রধানমন্ত্রীর, আর কারো নয়,'' বিবিসিকে বলেন বিরোধী দল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা গৌরব কাপুর। ''তাকে এই দায় নিতে হবে। গত দেড় মাস বারাণসীতে এবং ভারতে যত মৃত্যু হয়েছে তার দায় প্রধানমন্ত্রীর।'' শহরের অনেক বাসিন্দার মত মি. কাপুরও ব্যক্তিগতভাবে কোভিডের শিকার। ১৫ দিন আগে তিনি তার এক চাচা এবং এক চাচীকে হারিয়েছেন। তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ভাই হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। শুক্রবার সাক্ষাৎকারের জন্য ফোন করলে তিনি জানান, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বাড়ির একটি ঘরে তিনি আইসোলেশনে আছেন। বারাণসীর অবস্থা খুব শিগ্রি ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ তো নেইই, বরঞ্চ আরো খারাপ হচ্ছে। শহরের পরিস্থিতি সঙ্গিন। সেই সাথে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের গ্রামে-গঞ্জে যেখানে চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে। “ছোট ছোট গঞ্জের ডাক্তাররা আমাকে বলছেন সেখানে এমনকি অক্সিমিটার পর্যন্ত নেই। সুতরাং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে অনেক মানুষ ঘুমের মধ্যে মারা যাচ্ছে,“ বিবিসিকে বলেন বারাণসী শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক। ''আমার স্ত্রী এবং ছেলের যখন কোভিড হলো, আমরা ডাক্তারকে জানালাম। তিনি যা করতে বলেছেন, তা করেছি। কিন্তু গ্রামের একজন নিরক্ষর মানুষের কী হবে? সেখানে কোনো ডাক্তারও নেই। আপনি জানেন সে কীভাবে বেঁচে আছে? ভগবানের দয়ায়।''
news-51634331
https://www.bbc.com/bengali/news-51634331
দিল্লির সহিংসতায় ১৩ জন নিহত: 'এখানে এখন একদম দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি'
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভে এ পর্যন্ত একজন পুলিশ সহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। ওই আইনের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষে আহত হয়েছে শতাধিক লোক। দিল্লিতে গত কয়েক দশকে এরকম সহিংসতা আর দেখা যায়নি বলে বলছেন অনেকে। উত্তর পূর্ব দিল্লির বহু বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেয়া হয়েছে এবং কিছু এলাকা সহিংসতার ফলে যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। ভারতের রাজনীতিবিদরা শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জা নাচ্ছেন । ওই এলাকায় মঙ্গলবার সারাদিন ছিলেন বিবিসির সংবাদদাতা সালমান রবি। ঘটনাস্থল থেকে তিনি বিবিসি বাংলাকে সবিস্তারে এই সহিংসতার বর্ণনা দিয়েছেন:
ব্যাপক সহিংসতায় রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি "আমি যে জায়গায় আছি সেটির নাম জাফরাবাদ। আমার একদিকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভকারীরা, আরেকদিকে নাগরিকত্ব আইনের সমর্থকরা। এই দুয়ের মাঝখানে আমি। পাথর ছোঁড়া হচ্ছে, পেট্রোল বোমা ছোঁড়া হচ্ছে। কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। দশজন মারা যাওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। দেড়শোর বেশি মানুষ আহত। আধা সামরিক বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। জাফরাবাদের পেছনে একটা জায়গা আছে চান্দবাগ, মোস্তফাবাগ। সেখানে রাস্তায় নাকি উন্মত্ত জনতা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে নাকি পুলিশ আর আধা-সামরিক বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ছিল রড-লাঠি স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বৈঠক হয়েছে। তারপর মনে হচ্ছে নিরাপত্তা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি এখনো খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। বন্দুক-পিস্তল নিয়ে উন্মত্ত জনতা বাইরে বেরিয়েছে, গুলি চালিয়েছে। আজও বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অনেকের হাতেই রড বা লাঠি, যার যা আছে তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। দোকানগুলো সব বন্ধ। যোগাযাগ বন্ধ। রাস্তাগুলোতে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। সেসব এলাকায় কেউ ঢুকতে পারছে না। গতকালও দিল্লির যেসব গোলযোগপূর্ণ এলাকায় গিয়েছিলাম, আজকে সেখানে যেতেই পারছি না। সংঘাত থামাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে জনতা খুবই উত্তেজিত। তারা সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করছে। সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভেঙ্গে দিচ্ছে, মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে। এখানে এখন একদম দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব গণ্ডগোল যে কেবল রাস্তায় হচ্ছে তা নয়, জনতা কখনো কখনো লোকের বাড়িঘরেও ঢুকে পড়ছে। অনেক জায়গায় দোকানপাটেও আগুন লাগানো হয়েছে। একটা মার্কেট আছে এখানে, সেখানে লুটপাট চলেছে। আমরা সাংবাদিকরা সেখানে যেতে পারছি না, কারণ জনতা সাংঘাতিক সহিংস। সাংবাদিকদের ওরা ভিডিও রেকর্ড করতে দিচ্ছে না। দোকানপাটে-গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ দাবি করছে যে জনতার ভেতর থেকেই গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটছে। পুলিশ কোথাও গুলি চালানোর কথা এখনো নিশ্চিত করেনি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। তবে দিল্লি পুলিশের যেসব উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়, তারা দাবি করছেন, পরিস্থিতি তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা এখানে কিন্তু দেখছি না যে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। কিছু ধর্মীয় স্থাপনাও হামলার শিকার হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় টুইট করছেন এই বলে যে তারা বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন, তাদের যেন উদ্ধার করা হয়।"
news-49395920
https://www.bbc.com/bengali/news-49395920
শিশু ধর্ষণ: ছেলেরা কেন বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে?
কন্যা শিশু ধর্ষণের পাশাপাশি গত কয়েক বছর জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনাও নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন' নামে একটি আলাদা কঠোর আইন থাকলেও বর্তমানে ছেলে শিশুর ধর্ষণের বিচার অনেক ক্ষেত্রেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে না হয়ে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের অধীনেই হচ্ছে।
হাইকোর্ট বিভাগ এক রায়ে ছেলে শিশুর ধর্ষণের ব্যাপারে অস্পষ্ট ধারনা থাকার বিষয়টি ইঙ্গিত করে। আইনের ব্যাখ্যা সম্বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অস্পষ্ট ধারনা এর একটি বড় কারণ। আর তাতে করে প্রাপ্য বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যৌন সহিংসতার শিকার ছেলে শিশুরা। বর্তমান প্রেক্ষাপট বেসরকারি তথ্য সূত্র মতে, এই বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ২৩৩টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৬টি ছেলে শিশু (সূত্র: মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন)। তবে ধর্ষণের শিকার শিশুদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে ধারনা করা যায়, ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনা প্রাপ্ত তথ্য থেকে বাস্তবে আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। তবে সেই পরিসংখ্যানটি কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্যে পুরোপুরি উঠে আসাটা হয়তো কঠিন। কেননা শিশুরা, বিশেষ করে ছেলে শিশুরা খুব কম ক্ষেত্রেই তার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া যৌন অপরাধের কথা প্রকাশ করতে পারে। যৌনতা সম্বন্ধে ধারনা না থাকায়, অথবা অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীর মাধ্যমে বিভিন্ন ভয়-ভীতি বা হুমকির শিকার হয়ে ছেলে শিশুরা যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের অভিযোগ গোপন করে। তাছাড়া, পরিবার বা এলাকার প্রাপ্তবয়স্কদের কাছেও একজন ছেলে শিশুর বিরুদ্ধে হওয়া যৌন অপরাধও যে আইনত ধর্ষণ হবে, বা এর বিরুদ্ধে যে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে, এই ব্যাপারটিই স্পষ্ট নয়। প্রতীকী প্রতিবাদ: বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৩৩জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। 'ধর্ষণ নয়' বলাৎকার কেন? অভিধানগুলোতে সাধারণত 'ধর্ষণ'-এর সমার্থক শব্দ হিসেবে 'বলাৎকার'-কে ব্যবহার করা হলেও, প্রচলিত ধারণাটি হল একজন পুরুষ যখন ধর্ষণের শিকার হয়, তখন তাকে বলাৎকার বলা হবে - ধর্ষণ নয়। লক্ষণীয় যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ছেলে শিশু ধর্ষণের খবর প্রচার করার সময় 'বলাৎকার' শব্দটিই ব্যবহার করা হয়। এমনকি পুলিশসহ বিচার ব্যবস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছেও ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে আইনত ধর্ষণ হবে কিনা, এই বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই পরিষ্কার নয়। এই ধারণার পিছনে প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে, যা ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি হিসেবে শুধু নারীকেই কল্পনা করে। ঠিক একই কারণে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে বুঝাতে অভিধানগুলোতে 'ধর্ষিতা'র মত স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, খোদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেই 'ধর্ষিতা' শব্দটি স্থান পেয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের করিডোর: প্রচলিত আইনে রয়েছে অনেক অস্পষ্টতা। প্রচলিত আইনে অস্পষ্টতা ধর্ষণকে সাধারণভাবে শুধুমাত্র নারীর বিরুদ্ধে হওয়া যৌন অপরাধ মনে করার পিছনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি বর্তমান আইনের অস্পষ্টতাও অনেকাংশে দায়ী। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার হতে পারে শুধু একজন 'নারী', একজন পুরুষের মাধ্যমে (দণ্ডবিধি ধারা-৩৭৫)। শুধু তাই নয়, দণ্ডবিধির সংজ্ঞাটি বলছে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে যৌন সঙ্গম বিবেচনা করার জন্য 'পেনেট্রেশন'-ই (প্রবিষ্ট করা) যথেষ্ট। অথচ সংজ্ঞাটিতে কোথাও 'পেনেট্রেশন'-এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। স্বভাবতই তাই বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ধর্ষণকে নারী-পুরুষের মধ্যে স্বাভাবিক যৌন সঙ্গমের প্রচলিত ধারনাকেই বুঝে থাকেন। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত দণ্ডবিধির ধর্ষণের এই সংজ্ঞাটি তাই ছেলে শিশুর ধর্ষণকে ধর্ষণ না বলার পিছনে একটি অন্যতম কারণ। তবে দণ্ডবিধি থাকা সত্ত্বেও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে ২০০০ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন'। এই আইনটিতে 'শিশু'র যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তাতে কোন লিঙ্গ বিশেষে নয় বরং ১৬ বছরের কম বয়সী যে কোন শিশুই এই আইনে বিচার পাওয়ার কথা। শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: কিন্তু আইনের জটিলতার কারণে ছেলে শিশুরা বিচার পাচ্ছে না। যেহেতু বর্তমানে প্রায় সব ধর্ষণের মামলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে, তাই স্বাভাবিকভাবে একজন সহিংসতার শিকার ছেলে শিশুর বিচারও আইনত এই আইনটির অধীনেই হওয়া উচিৎ। 'ধর্ষণ'-এর সংজ্ঞার ক্ষেত্রে 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন' বলছে, দণ্ডবিধির ৩৭৫ -এ দেয়া ধর্ষণের সংজ্ঞাটিই বলবৎ থাকবে, তবে তা হবে এই আইনের ধারা ৯-এর বিধান সাপেক্ষে। ধারা ৯-এ ধর্ষণকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত না করলেও ধারার শুরুতেই বলা হয়েছে, "যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন ......." অর্থাৎ, দণ্ডবিধির সংজ্ঞায় শুধু নারী ধর্ষণের শিকার হতে পারে বলা থাকলেও ধারা ৯-এর অধীনে 'শিশু'কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবার যেহেতু আইনে শিশু বলতে যে কোন লিঙ্গের শিশুকেই বোঝানো হচ্ছে, তাই সঠিক আইনি ব্যাখ্যা অনুযায়ী ছেলে শিশু ধর্ষণকেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনেই বিচার করতে হবে। তবে, গুরুত্বপূর্ণ হল 'পেনেট্রেশন' বলতে আসলে কী কী ধরনের যৌন সঙ্গমকে বুঝাবে, তা কোন আইনেই নির্দিষ্ট করা নেই। তাই পুলিশের কাছে যখন ধর্ষণের শিকার ছেলে শিশুর পক্ষ হয়ে বিচার চাওয়া হয়, তখন তার মামলাটি অনেক সময়ই 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে'র ধারা ৯-এ নেয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মামলার এফআইআর রুজু হয় বরং দণ্ডবিধির ধারা ৩৭৭-এ। ব্রিটিশ আমল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই ৩৭৭ ধারা, আসলে সমকামিতাসহ 'প্রাকৃতিক' নিয়মের বিরুদ্ধে করা কোন যৌন সঙ্গমকে দণ্ডনীয় করছে। সমলিঙ্গের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার ছেলে শিশুকেও তাই ৩৭৭-এর অধীনেই বিচার চাইতে হয়। এই ধারায় (৩৭৭-এ) অপরাধী বা অপরাধের শিকার ব্যক্তির বয়স, সম্মতি বা অসম্মতির প্রশ্নও অপ্রাসঙ্গিক। আবার, 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে'র ৯ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলেও, ৩৭৭-এ সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তাতে কোন সর্বনিম্ন শাস্তির বিধান নির্দিষ্ট করা নেই। অর্থাৎ, আইন প্রয়োগকারীদের আইন সম্বন্ধে অস্পষ্ট ধারণা থাকার কারণে ধর্ষণের শিকার বেশিরভাগ ছেলে শিশুই 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে'র কঠোরতম শাস্তির বিধান আর দ্রুত বিচার ব্যবস্থার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ধারা ৯-এর পাশাপাশি বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকেও এই ব্যাখ্যাটিকে সমর্থন করে ২০১৩ সালের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে। আবদুস সামাদ বনাম রাষ্ট্র (৯ বিএলসি, ২০১৪, পাতা-১৭১) - এই মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেন যে, ১৬ বছরের নিচে যে কোন ছেলে শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে'র ধারা ৯-এর অধীনেই বিচার্য হবে, দণ্ডবিধিতে নয় - এমনকি যদি যৌন সঙ্গমে শিশুর সম্মতিও থেকে থাকে। কেননা ধারা ৯ বলছে, ১৬ বছরের নীচে যে কোন শিশুর সাথে যৌন সঙ্গমকেই ধর্ষণ বলা হবে এবং শিশুর সম্মতি ছিল কিনা, তা বিচার্য হবে না। সম্পূর্ণ রায়ে আদালত ছেলে শিশুর ধর্ষণের ব্যাপারে বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অস্পষ্ট ধারনা থাকার বিষয়টিও ইঙ্গিত করেন। কী করনীয়? প্রথমত, আইনি ব্যাখ্যায় ছেলে শিশুর ধর্ষণকে ধারা ৯-এ অন্তর্ভুক্ত করা গেলেও প্রচলিত আইনে যে অস্পষ্টতা রয়েছে তা দূর করা প্রয়োজন। দণ্ডবিধির ধারা ৩৭৫-এ ধর্ষণের সংজ্ঞায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে বুঝাতে নারীর পাশাপাশি 'শিশু' শব্দটি যুক্ত করতে হবে। একই সাথে দণ্ডবিধির ৩৭৫-এর সংজ্ঞায় 'পেনেট্রেশন' বা 'প্রবিষ্ট করা' এই শব্দটির একটি যথাযথ ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে সমলিঙ্গের মাধ্যমে যৌন সঙ্গমকেও 'পেনেট্রেশন' বলা যায়। পাশাপাশি 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে' 'শিশু'র সংজ্ঞায় ছেলে, মেয়ে বা অন্য কোন লিঙ্গ পরিচয়ের অনধিক ১৬ বছর বয়সী শিশুর কথা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা যেতে পারে, যেকোন ধরনের অস্পষ্টতা দূর করার জন্য। যেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই এই বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট ধারনা রাখেন না, তাই থানা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে আইনজীবী, বিচারক এবং পাবলিক প্রসিকিউটারদেরকেও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন। একই সাথে জাতীয় পর্যায়েও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়া জরুরী, যাতে করে ছেলে শিশুও যে ধর্ষণের বিচারের বাইরে নয়, সেটি সাধারণের কাছে স্পষ্ট হয়। সর্বোপরি ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে, 'বলাৎকার' নামকরণ করে এই অপরাধের মাত্রা কমানোর কোন সুযোগ নেই। (তাসলিমা ইয়াসমীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক এবং একজন গবেষক)
news-49628265
https://www.bbc.com/bengali/news-49628265
নাইন-ইলেভেন: আগাম হুঁশিয়ারি পাত্তা দেননি জর্জ বুশ
২০০১ সালের গ্রীষ্মে অর্থাৎ ১১ই সেপ্টেম্বরের ঠিক আগে আগেই দেশের ভেতর বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি নিয়ে তৎকালীন মার্কিন সরকারকে বার বার হুঁশিয়ারি করা হয়েছিল।
নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০০১ এতদিন পর বিবিসির লুইজ হিদালগোর কাছে সেকথা প্রকাশ করেছেন সাবেক ডেমোক্র্যাট সেনেটর গ্যারি হার্ট যিনি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন। সেনেটর হার্ট বলেন, নাইন-ইলেভেনের আগের মাসগুলোতে দেওয়া সেসব হুঁশিয়ারি জর্জ বুশ সরকার অবজ্ঞা করেছিল। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কজন কট্টর ইসলামপন্থী দুটো যাত্রী বিমান অপহরণ করে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে গিয়ে আছড়ে পড়েছিল- সে কথা হয়তো কারোরই অজানা নয়। ঐ হামলার ৫০ মিনিট না যেতেই আরেকটি বিমান বিধ্বস্ত হয় ওয়াশিংটনে প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সদর দপ্তরের ওপর। অপহৃত চতুর্থ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় ওয়াশিংটনের কাছে একটি মাঠের ভেতর। আমেরিকায় ঐ সন্ত্রাসী হামলা ছিল নজিরবিহীন। প্রায় ৩,০০০ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল সেদিন। হতভম্ব হয়ে পড়েছিল সারা বিশ্ব। কিন্তু এ ধরনের হামলা হতে পারে, সে ব্যাপারে আগে থেকেই হুঁশিয়ারি ছিল। যে মানুষগুলো সেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তাদের একজন ছিলেন তৎকালীন ডেমোক্র্যাট সেনেটর গ্যারি হার্ট। সাবেক সেনেটর গ্যারি হার্ট, যিনি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক-ভিত্তিক এক তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের হুঁশিয়ারি অবজ্ঞা করেছিলেন জর্জ বুশের সরকার। বিবিসিকে তিনি বলেন, "আমি বা অন্যরা ঠিক জানতে পারিনি যে কোথা থেকে এই হামলা আসতে পারে, কিন্তু আমরা প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে খুব শীঘ্রি একটা হামলা হতে চলেছে।" নাইন-ইলেভেন হামলার মাত্র আট মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকির ওপর একটি তদন্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে ব্যাপক তদন্তের পর রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। যে সরকারি কমিশন ঐ তদন্ত করেছিল তার যৌথ নেতৃত্বে ছিলেন সেনেটর গ্যারি হার্ট এবং রিপাবলিকান দলের ওয়ারেন রাডম্যান। ঐ কমিশন ২০টি দেশের একশ'র মত লোকের কাছ থেকে সাক্ষ্য প্রমাণ জোগাড় করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এত বড় তদন্ত-পর্যালোচনা কখনো হয়নি। ঐ কমিশনে যুক্ত ছিলেন পররাষ্ট্র নীতি এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ে আমেরিকার সবচেয়ে খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞবৃন্দ। যে উপসংহার তারা টেনেছিলেন তা ছিল খুবই ভীতিপ্রদ। গ্যারি হার্ট বলেন, "কমিশনের ১১ জন সদস্য তাদের তদন্তের বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র বিপদের মুখে রয়েছে। আমরা ঐ রিপোর্টে বলেছিলাম - এমন ঝুঁকি রয়েছে যার পরিণতিতে বিপুল সংখ্যক মার্কিন নাগরিক মারা যেত পারে।" কিন্তু ঐ হুঁশিয়ারিকে সরকার কতটা গুরুত্ব দিয়েছিল? গ্যারি হার্ট বলেন, এমনকী সংবাদ মাধ্যমও ঐ তদন্ত রিপোর্টকে গুরুত্ব দেয়নি। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। সন্ত্রাসী হামলার আগাম হুঁশিয়ারিকে তিনি পাত্তা দেননি বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। "রিপোর্টটি চূড়ান্ত করার পর আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। আমাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাঝেই একজন সাংবাদিক চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান। তাকে প্রশ্ন করি- কেন তিনি আগেভাগে চলে যাচ্ছেন। তিনি উত্তর দেন 'এসব কিছুই ঘটবে না '।' ঐ সাংবাদিক নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একজন সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। "সুতরাং বলতে পারেন, মিডিয়া আমাদের ঐ রিপোর্টকে তখন পাত্তাই দেয়নি।" ঐ কমিশন গঠন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন, কিন্তু ২০০১ সালে জানুয়ারিতে যখন ঐ কমিশন তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করে প্রকাশ করে তখন হোয়াইট হাউজে নতুন সরকার। মাত্র ১১দিন আগে রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন। কমিশন সিদ্ধান্তই নিয়েছিল নতুন প্রেসিডেন্ট যিনি হবেন, তার হাতে তারা তাদের রিপোর্ট এবং সুপারিশ তুলে দেবে। কিন্তু তা হয়নি। সেনেটর গ্যারি হার্ট বলেন, "প্রেসিডেন্ট (বুশ) আমাদের সাথে দেখা করতেই রাজী হলেন না। আমরা ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড চেনির সাথে দেখা করার চেষ্টা করলাম। তাতেও আমরা ব্যর্থ হই।" তবে কমিশন নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের সাথে দেখা করেন। একইসাথে তারা প্রেসিডেন্ট বুশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কনডোলিজ্জা রাইসের সাথেও দেখা করেন। ঐ রিপোর্টকে ঐ তিনজন কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন? "দুই মন্ত্রী আমাদের কথা গুরুত্ব সহকারে শুনেছিলেন। তারা আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নও করেছিলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রামসফেল্ড নিজে তার নোটবুকে কিছু নোটও নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর কোনো ব্যবস্থা তারা নিলেন না।" প্রেসিডেন্ট বুশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কনডোলিজ্জা রাইস বুশ প্রশাসন পরে বলে - সুনির্দিষ্ট নয় এমন কোনো হুঁশিয়ারিকে বিবেচনায় নেওয়া কঠিন। তারা বলেন, বিমান অপহরণ করে তা দিয়ে হামলা চালানো হবে এমন কোনো ইঙ্গিতই কমিশন দেয়নি। বিমানের ব্যবহার নিয়ে সাবধান করা হয় কিন্তু ঐ গ্রীষ্মেই অন্য সূত্র থেকেও সন্ত্রাসী হামলায় বিমানের ব্যবহার সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছিল। ২০০১ সালের জুলাইতে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা মধ্যপ্রাচ্যের কজন নাগরিক, যারা তখন সেখানে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, তাদের ব্যাপারে তদন্তের সুপারিশ করেছিলেন। পরের মাসেই ফিনিক্স থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে মিনেসোটায় এফবিআই জাকারিয়া মুসাভি নামে একজন ফরাসী নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। বিমান চালানোর কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ঐ ব্যক্তি বোয়িং ৭৪৭ চালানোর প্রশিক্ষণের আশায় স্থানীয় একটি ফ্লাইং স্কুলে হাজির হলে, এফবিআইয়ের সন্দেহ হয়। এফবিআইয়ের আইনজীবী কলিন রাউলিকে গভীর রাতে ফোন করে ঐ গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। মুসাভির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং কম্পিউটার পরীক্ষা করার অনুমতি জোগাড় করে দেওয়ার জন্য ঐ আইনজীবীকে ফোন করেছিল এফবিআই এজেন্টরা। কিন্তু পরে এফবিআইয়ের কর্তাব্যক্তিরাই এ নিয়ে অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৫ সালে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে আইনজীবী কলিন রাউলি ঐ ঘটনা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছিলেন। "আমাদের একজন সুপারভাইজার সদর দপ্তরে একজন কর্মকর্তাকে বলেছিলেন - তুমি কী বুঝতে পারছ না যে এই লোক (মুসাভি) এমন এক মানুষ যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমান নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু ঐ কর্মকর্তা জবাব দিয়েছিলেন- এমন কোনা ঘটনা কখনই হবে না।" আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন। ১১ই সেপ্টম্বরের সন্ত্রাসী হামলার প্রধান হোতা বলে তাকে সন্দেহ করে আমেরিকা। জাকারিয়া মুসাভি পরে ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছিলেন। কলিন রাউলি মনে করেন, এসব হুঁশিয়ারি সরকার তখন অগ্রাহ্য করেছিল কারণ সরকারের কেউই বিশ্বাসই করতে পারেনি এমন কোনো ঘটনা সত্যিই কখনো ঘটতে পারে। কী বলেছিলেন সিআইএ প্রধান তবে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর ভেতরে সন্দেহ দানা বাঁধছিল। ২০০১ সালে সিআইএর প্রধান ছিলেন জর্জ টেনেট। নাইন-ইলেভেন হামলার ১৪ বছর পর মার্কিন টিভি চ্যানেল সিবিএস-এ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ঐ বছর গ্রীষ্মে তাদের কাছে তথ্য প্রমাণ আসে যে আল কায়দা আমেরিকায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে। সিআইএর যে ইউনিট আল কায়দার ওপর নজরদারী করতো তার প্রধান রিচ প্লি ঐ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। "জুলই মাসের শেষ দিকে একদিন আমরা আমার কনফারেন্স রুমে বসে কথা বলছিলাম । কীভাবে এই হামলা হতে পারে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। তখন রিচ ব্লি বলেছিল - তারা (আল কায়দা) আমেরিকাতেই আসছে।" "তার ঐ কথা শুনে সবাই যেন স্থবির হয়ে পড়েছিল। সবাই হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল," সিবিএসকে বলেছিলেন জর্জ টেনেট। তিনি জানান, প্রায় পরপরই তিনি কনডোলিজ্জা রাইসকে ফোন করেন। "আমি তাকে বলি- কনডি আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।। আমরা এখনই আসছি।" "তাকে বলি একাধিক হামলা হতে পারে । হামলার ধরন নাটকীয় হতে পারে। আল কায়দার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করা। আমেরিকাকে এখনই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।" সিআইএ-র সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট। কনডোলিজ্জা রাইস পরে বলেন, সন্ত্রাসী হামলার জন্য বিমান ব্যবহার হতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট হুঁশিয়ারি পাননি। তিনি বলেন, হোয়াইট হাউজের কাছে প্রতিদিনই নানা বিষয়ে নানারকম হুঁশিয়ারি এবং পরামর্শ আসে। প্রেসিডেন্ট বুশও বলেন, তিনি এমন কোনো গোয়েন্দা রিপোর্ট দেখেননি যাতে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছিল। তবে হোয়াইট হাউজ স্বীকার করেছিল যে ২০০১ সালের ৬ই আগস্ট প্রেসিডেন্টের কাছে দেওয়া এক ব্রিফে বলা হয়েছিল আমেরিকার ভেতরে হামলা চালাতে বিন লাদেন বদ্ধপরিকর। গ্যারি হার্ট বলেন, যে কোনো সময় হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় জানুয়ারি মাসে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার এই উদ্বেগের কথা তিনি কাকে জানিয়েছিলেন? "বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমি আমার আশঙ্কার কথা বলেছি। সাক্ষাৎকারও দিয়েছি।" বিশ্বাস করেনি হোয়াইট হাউজ কিন্তু বুশ প্রশাসনের যুক্তি ছিল কখন, কোথায় এবং কীভাবে হামলা হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা কমিশনের রিপোর্টে ছিল না, এবং এ ধরনের নানা হুঁশিয়ারি হোয়াইট হাউজে প্রতিদিনই আসে। নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০০১ সরকারের এই যুক্তি কি ফেলে দেওয়া যায়? বিবিসির এই প্রশ্নে গ্যারি হার্ট বলেন, "সুনির্দিষ্ট করে বলার কোনো উপায় তখন ছিল না। আমি কানাডার মন্ট্রিয়েলে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছিলাম । পরদিন সেখানকার পত্রপত্রিকায় খবরের শিরোনাম হয়েছিল - হার্ট আমেরিকাতে সন্ত্রাসী হামলা সন্দেহ করছেন।" সেটা সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকের কথা। পরপরই কনডোলিজ্জা রাইসের সাথে তার বৈঠক হয়। "আমি তাকে বলি অনুগ্রহ করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে প্রস্তুত করেন। আমাদের ওপর হামলা হতে চলেছে। সেটা ৬ই সেপ্টেম্বরের কথা।" "কনডোলিজ্জা রাইস আমাকে বলেন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলবেন। ...পাঁচদিন পর তিন হাজার আমেরিকান মারা গেল।" নাইন-ইলেভেন হামলার ওপর দ্বি-দলীয় যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়, তারা ২০০৪ সালে বলেছিল - "নীতি, ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল প্রশাসনে। গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ম পদ্ধতিতে ব্যাপক রদ-বদলের সুপারিশ করা হয়।"
42915461
https://www.bbc.com/bengali/42915461
একুশের বইমেলা: লেখক-প্রকাশকরা নিজেরাই সেন্সর করছেন তাদের প্রকাশনা
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির বইমেলা বাংলাদেশে লেখক প্রকাশক ও পাঠকদের জন্য মাসব্যাপী এক বড় উৎসব। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ হয় ফেব্রুয়ারির বই মেলাতেই। কিন্তু মেলায় প্রকাশিত বই নিয়ে গত কয়েকবছরে নানা বিতর্ক এবং অঘটনের প্রেক্ষিতে লেখকরা কতটা মুক্ত ও স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন এ প্রশ্নটি সামনে আসছে।
প্রতি বছর বইমেলায় প্রায় চার হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। ফাইল ফটো একসময়কার বাম রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখন লেখালেখি করেন মহিউদ্দিন আহমদ। মিস্টার আহমদের লেখার বিষয়বস্তু রাজনীতি, রাজনৈতিক দলের ইতিহাস ও গবেষণা। বাংলাদেশে লেখালেখির পরিবেশ নিয়ে মি: আহমদ বলেন, "একধরনের সেলফ সেন্সরশিপের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এটা আমি অস্বীকার করবো না। আমি অনেক কিছুই লিখতে চাই। কিন্তু আমি মনে করি যে এটা লেখা যাবে না কারণ, লিখলে হয়তো প্রকাশক ছাপবে না অখবা প্রকাশক বিপদে পড়বে।" "এখানে রাজশক্তি ঢুকে পড়েছে। এই হলো সমস্যা। এখন আমাদের দেশে অনেকেই আছেন যারা সমালোচনা সহ্য করেন না। অসহিষ্ণু মনোভাব। তারা চান তাদের ডিকটেশন অনুযায়ী মানুষ লিখবে।" আরো পড়ুন: একুশে বইমেলা: ভয়ের ছায়া এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় লেখক-প্রকাশকদের খাবার নিয়ে সাবধান হচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরা বাংলাদেশি তকমা’র ভয়ে তটস্থ পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা লেখক মহিউদ্দিন আহমদের লেখার বিষয়বস্তু রাজনীতি, রাজনৈতিক দলের ইতিহাস ও গবেষণা বাংলাদেশে ধারাবাহিক ব্লগার হত্যা, হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখন দেশান্তরী মাহমুদুল হক মুন্সী। রাজনৈতিক আশ্রয়ে এখন আছেন ইউরোপের একটি দেশে। ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে যে আন্দোলন হয়েছিল সেখানকার নেতৃস্থানীয় একজন তিনি। মৌলবাদ এবং সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বই প্রকাশের ইচ্ছা থাকলেও বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ সে বই আটকে দেবে বলেই তার আশঙ্কা। তিনি বলেন, "মামলা হামলা ও ধর্মের নামে অত্যাচারের যে সংস্কৃতি চলছে তাতে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডে আদৌ কোনো মুক্তমতের পক্ষের বই প্রকাশ করতে পারবো কিনা সে ব্যাপারে সন্ধিহান।" অতীতে বাংলাদেশে বইমেলা চলাকালীন উগ্রবাদী হামলার শিকার হয়েছেন লেখক হুমায়ুন আজাদ। তিন বছর আগে লেখক অভিজিৎ রায় মেলা থেকে বেরিয়ে হামলায় নিহত হন। এছাড়া অভিজিৎ রায়ের বই যে প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে সেখানেও হামলা হয়েছে। এছাড়া জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক খুন হয়েছেন নিজ অফিসের মধ্যেই। ২০১৫ সালে বইমেলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বই প্রকাশ করার অভিযোগে রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করা হয়। ২০১৬ সালে বদ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করা হয় একই অভিযোগ এবং গ্রেপ্তার হন লেখক ও প্রকাশক। বলাকা প্রকাশনীর মালিক শরিফা বুলবুল বলছিলেন এসব কারণেই লেখকদেরকে একধরনের নির্দেশনা তাদেরকে দিতে হচ্ছে। প্রকাশকরা কি বার্তা দিচ্ছেন লেখকদের? "লেখককে আমি বলেছি এইভাবে লেখা যাবে না। এইভাবে লিখলে আপনার বইটা হয়তো বাংলা একাডেমিতে প্রকাশ হবে না। মোল্লাদেরকে খেপিয়ে লাভ নেই। হয়তো ঘুরিয়ে অন্যভাবে লেখেন। আমার প্রকাশ করতে সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি কি জেল, জুলুম হুলিয়া এগুলো সহ্য করতে পারবেন?," বলেন তিনি। ইদানিং কর্তৃপক্ষ কিভাবে বইমেলায় নজরদারি করে সেটিও বলছিলেন তার অভিজ্ঞতা থেকে। "আমাদের প্রকাশনীর 'আহ পাকিস্তান' নামে একটা বই গত বছর মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। পুলিশ এসে এই বইটা কার, লেখক কে। কী ধরনের বই এরকম নানা প্রশ্নে জর্জরিত করে লেখককে। তারা একটা বই নিয়েও যায়। যদিও বইটি ছিল জঙ্গীবাদ বিরোধী একটা বই।" এদিকে এবছর স্পর্শকাতর বই প্রকাশে আগে থেকেই সতর্ক থাকার বিষয়টি সামনে আনছে পুলিশ। মেলার দুদিন আগে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে এসে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, "এমন কোনো বই এখানে আনা যাবে না যেটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত হানে। আমাদের গোয়েন্দারা রয়েছে, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এবং বাংলা একাডেমির অধীনে একটা ডেডিকেটেড কমিটি করা হয়েছে এগুলো খবরদারি রাখার জন্য। যখনই এ ধরনের খবর আসবে তখন ওই কমিটি ওইটা যাচাই করে দেখবে এ ধরনে কিছু আছে কিনা। যদি থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেব।" অতীতে বিতর্ক ও হামলার অভিজ্ঞতা থেকেই নজরদারি ব্যবস্থার কথা পুলিশ জানালেও লেখকরা বই প্রকাশে তদারকি বা যাচাই বাছাইয়ের বিরোধী। লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, " আমি মনে করি পুলিশের কোনো এখতিয়ারই নেই এ ব্যাপারে কথা বলার। সে বইটাতো আগে তাদের পড়তে হবে। মনে করেন একটি বই ছাপা হয়ে গেছে, বাংলা একাডেমি মনে করলো এর মধ্যে সমস্যার কিছু নেই। পুলিশও মনে করে সমস্যার কিছু নেই। কিন্তু একজন পাঠক হিসেবেতো আমি মনে করতে পারি সমস্যা আছে।" এদিকে পুলিশ বাংলা একাডেমির নেতৃত্বে কমিটি করে যাচাই বাছাইয়ের কথা বললেও একাডেমি জানাচ্ছে তাদের এমন কোনো উদ্যোগ নেই। একুশে বইমেলা: প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির নজরদারি কতটুকু? মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, "আমরা লেখকের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা লেখকের লেখা বইয়ে কোনোরকম হস্তক্ষেপ করতে চাই না। এটাতো আমাদের কাজ না। যদি বই নিষিদ্ধ হয় সেটা সরকার কিভাবে করে সেটাও আমাদের জানা নাই। আমি এক কথায় বলবো আমরা লেখকের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী তবে সেই লেখককে সৎ হতে হবে, চিন্তাশীল হতে হবে এবং তীক্ষ্ণভাবে বিষয়কে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।" যে কোনো অবস্থাতেই কোনো কর্তৃপক্ষ নয় লেখক প্রকাশকরা সবসময় বই পছন্দ অপছন্দ কিংবা গ্রহণ ও বর্জনের সিদ্ধান্ত পাঠকেরও ওপরই ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। এ প্রসঙ্গে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, "লেখক হিসেবে আমি যে কোনো শর্তের বিরুদ্ধে। একটামাত্র শর্ত, কোনো শর্ত থাকবে না।" আরো পড়ুন: ধর্মীয় অনুভূতিতে 'আঘাত' নিয়ে বইমেলায় সতর্কতা বইমেলায় নতুন লেখকরা কতটা সুযোগ পাচ্ছেন? বিশ্বাসঘাতকের তকমা যায়নি করাচীর ১৫ লাখ বাঙালির
news-54561226
https://www.bbc.com/bengali/news-54561226
ভাষা বিতর্ক: খোদা হাফেজ-এর জায়গায় আল্লাহ হাফেজ-এর প্রচলন কখন, কীভাবে হলো? আরবদের মাঝে বিদায়ী সম্ভাষণের ভাষা কী?
বাংলাদেশের এক টিভি অনুষ্ঠানে 'আল্লাহ হাফেজ' নিয়ে একজন অধ্যাপকের মন্তব্য নিয়ে অনলাইনে তুমুল আলোচনা-বিতর্ক চলছে।
উপমহাদেশে ও তার বাইরেও মুসলিম রীতিতে সম্ভাষণ জানানো হয় 'আসসালামু আলাইকুম' বলে টিভি চ্যানেল ডিবিসির এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন,"আগে আমরা 'স্লামালেকুম' বলতাম ... এখন যেভাবে স্ট্রেস দিয়ে 'আসসালামু আলাইকুম' বলে এটা এই পুরো বিএনপি-জামাত মাসলার মধ্যে শেখানো হয়েছে। কিংবা 'আল্লাহ হাফেজ' .... যে 'খোদা হাফেজ' আমরা বলতাম খুব সহজে, এটা আল্লাহ হাফেজ... এগুলো দিয়ে কিন্তু একটা ডিসকোর্স তৈরি করা হয়েছে।" অধ্যাপক জিয়া রহমানের এই মন্তব্য প্রচার হবার পরই শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা-বিতর্ক। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বলছেন, স্পষ্ট করে আসসালামু আলাইকুম বলায় দোষের কিছুই নেই, শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি বলা দোষের না হলে শুদ্ধভাবে এই ঐতিহ্যগত সম্ভাষণ উচ্চারণ করা দোষের হবে কেন? তারা বলছেন, 'আল্লাহ হাফেজ' বলাটাও তাদের মতে 'খোদা হাফেজ' বলার চাইতে ধর্মীয় দিক থেকে অধিকতর সংগত। অন্য অনেকের মত, বাঙালি মুসলিমদের সম্ভাষণ ও বিদায় জানানোর যে চিরাচরিত রীতি তা থেকে মানুষ বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে - এবং তার পেছনে আছে সৌদি-অনুপ্রাণিত ওয়াহাবি ভাবধারার ইসলামী মতাদর্শের উত্থান। এর সাথে কেউ কেউ উগ্রপন্থা বা জঙ্গিবাদের সম্পর্কও দেখছেন। কিন্তু পরস্পরকে সম্ভাষণ ও বিদায় জানাবার এই মুসলিম রীতিগুলো আসলে কোন পটভূমিতে সৃষ্টি হয়েছে? পৃথিবীর অন্য মুসলিম দেশে কি 'আল্লাহ হাফেজ' বা 'আসসালামু আলাইকুম' বলা হয়? মুসলমানরা কীভাবে পরস্পরকে সম্ভাষণ করেন সাধারণভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মুসলমানদের মাতৃভাষা যাই হোক না কেন সাধারণত: তারা পরস্পরকে সম্ভাষণ করেন 'আসসালামু আলাইকুম' বলে। এটা ঠিক যে কথাটা আগে যেমন একটু সংক্ষেপ করে স্লামালেকুম বলা হতো, আজকাল অনেকে তা না করে পুরো কথাটা স্পষ্ট করে উচ্চারণ করেন। আরব দেশগুলোতে সাধারণত সম্ভাষণ ও বিদায়ের সময় যথাক্রমে আসসালামু আলাইকুম ও মা'সালামা বলা হয় তা ছাড়া অনেককে 'আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহে ওয়া বারাকাতাহু' বলতেও শোনা যায়, তবে এটাকে একটু 'আনুষ্ঠানিক' বলা যেতে পারে - সাধারণ কথোপকথনের সময় এটা কমই বলতে শোনা যায়। আর বিদায়ের সময় এ অঞ্চলে 'খোদা হাফেজ' বা 'আল্লাহ হাফেজ' বলা হয়। মরক্কো থেকে ইরাক পর্যন্ত বিশ্বের যে বিস্তীর্ণ ভুখন্ডে আরবি ভাষাভাষীরা বাস করেন - তারা একে অপরের সাথে দেখা হলে 'আসসালামু আলাইকুম', এবং বিদায় নেবার সময় 'মা'সালামা' বলেন, তবে অঞ্চলভেদে কিছু স্থানীয় রীতিও আছে। ফারসি-ভাষী ইরানে সাক্ষাতের সময় পরস্পরকে 'সালাম' এবং বিদায় নেবার সময় 'খোদা হাফেজ' বলা হয়। আল্লাহ হাফেজ-এর উৎপত্তি কোথায়, কখন, কীভাবে? বলা যেতে পারে, মুসলিমদের মধ্যে বিদায়ের সময় 'আল্লাহ হাফেজ' বলার রীতি শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই আছে। এখান থেকেই হয়তো তা এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে। তাহলে প্রশ্ন, 'আল্লাহ হাফেজের' উৎপত্তি হলো কোথায়, কখন, কীভাবে? বাংলাদেশে ১৯৮০র দশকে প্রথম 'আল্লাহ হাফেজ' কথাটি শোনা যেতে থাকে। এর আগে বাঙালি মুসলমানরা প্রায় সার্বজনীনভাবেই বিদায়ের সময় খোদা হাফেজ বলতেন। 'আল্লাহ হাফেজ' কথাটির উৎপত্তি নিয়ে অনেক লেখক-গবেষকই বিভিন্ন সময় লিখেছেন। পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়া বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক সৈয়দ হামাদ আলি ২০১২ সালে ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানে এক নিবন্ধে লিখেছেন, পাকিস্তানে ১৯৯০এর দশকেও অধিকাংশ লোকই বিদায় নেবার সময় 'খুদা হাফিজ' বলতেন, কিন্তু এখন সবাই - ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে ফ্যাশন মডেল বা টিভির উপস্থাপক পর্যন্ত - সবাই 'আল্লাহ হাফিজ' বলছেন। তিনি মন্তব্য করেন, এ পরিবর্তন পাকিস্তানের উদারপন্থীদের অস্বস্তির কারণ হয়েছে, তাদের মতে এটা পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একটা পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। সৈয়দ হামাদ আলি বলছেন, 'আল্লাহ হাফিজ' কথাটা প্রথম ব্যবহার শুরু হয় পাকিস্তানে ১৯৮০র দশকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের শাসনকালে। জিয়া-উল-হক ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসক ছিলেন তার মতে, ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল পিটিভিতে একজন সুপরিচিত উপস্থাপক প্রথম 'আল্লাহ হাফিজ' কথাটা ব্যবহার করেন। তবে জনসাধারণের মধ্যে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে আরো অনেক পরে। মি. আলি লিখেছেন, এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ফারসি শব্দ 'খোদা'র অর্থ 'ঈশ্বর' যা যেকোন ধর্মের ঈশ্বর বোঝাতে পারে, তাই আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত যা শুধুমাত্র মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে উক্ত সৃষ্টিকর্তার নাম। তবে তিনি আরো লেখেন, মধ্যপ্রাচ্যের এক কোটি আরবি-ভাষী খ্রিস্টানও ঈশ্বর বোঝাতে 'আল্লাহ' শব্দটিই ব্যবহার করেন এবং আরবরা কখনোই পরস্পরকে বিদায় জানানোর সময় 'আল্লাহ হাফেজ' বলেন না। আরবরা সম্ভাষণের সময় কি বলেন? এ নিয়ে কথা হয় বিবিসির আরবি বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-কাসিরের সাথে। তিনি বলছিলেন, মরক্কো থেকে শুরু করে ইরাক পর্যন্ত এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অনেকগুলো দেশের অভিন্ন ভাষা আরবি, কিন্তু প্রতিটি দেশেই আরবি ভাষা কিছুটা আঞ্চলিক রূপ নিয়েছে। সেটা উচ্চারণের টান এবং শব্দ-বাক্য ব্যবহারের ভিন্নতা থেকেও বোঝা যায়। কিন্তু সাধারণভাবে সব আরবের মধ্যেই পরস্পরকে প্রথম সম্ভাষণের রীতি হলো 'আসসালামু আলাইকুম' বলা এবং বিদায় জানাবার সময় 'মা'সালামা' বলা। মোহাম্মদ আল-কাসির নিজে মিশরের লোক। তিনি বলছিলেন, মিশরে এমনকি আরব খ্রিস্টানরাও পরস্পরের সাথে দেখা হলে 'আসসালামু আলাইকুম' বলেন। সে হিসেবে হয়তো এটাকে কোন বিশেষ ধর্মীয় রীতি না বলে 'আরব রীতি' বলা যায়। আরব বিশ্বের কোথাও কোথাও অন্যভাবেও স্থানীয় রীতিতে সম্ভাষণ বা বিদায় জানানো হয়। বিদায় নেবার সময় 'মা'সালামা' বলা মোটামুটি সব আরব দেশেই প্রচলিত। আরবরা কেউই বিদায় নেবার সময় 'আল্লাহ হাফেজ' ব্যবহার করেন না। বিদায় নেবার সময় 'মা'সালামা' বলা ছাড়াও আরবি ভাষাতে ভিন্নভাবে বিদায় জানানোর রীতিও আছে। মোহাম্মদ আল-কাসির বলছিলেন, বিদায় নেবার সময় আরবরা কখনো কখনো "আল্লাহ ইয়া'আতিক আল'আসিয়া" - এটাও বলে থাকেন। তবে তারা কেউই বিদায় নেবার সময় 'আল্লাহ হাফেজ' ব্যবহার করেন না। কিন্তু 'আল্লাহ আপনার হেফাজত করুন' এরকম বাক্য কথাবার্তার মধ্যে প্রাসঙ্গিক জায়গায় ব্যবহার করা হয়। আরবদের মধ্যে সম্ভাষণ হিসেবে 'আহ্লান' বা 'আহ্লান ওয়া সাহ্লান' (অনেকটা ইংরেজি হ্যালো'র মত), বা সাবাহ্ আল-খায়ের (সুপ্রভাত), বা মাসা আল-খায়ের (শুভ সন্ধ্যা) - এগুলোও বলা হয়ে থাকে। বিদায় নেবার সময় মা'সালামা ছাড়াও আরবে ইলা'লিকা-ও বলা হয় - যার অর্থ খানিকটা 'আবার দেখা হবে'-র মতো। ফারসি ভাষীরা কি বলেন? এ নিয়ে কথা হয় বিবিসি ফারসি বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক আলি কাদিমির সাথে। তিনি বলছিলেন, ইরানের সর্বত্রই দুজন ব্যক্তির দেখা হলে সম্ভাষণ হিসেবে একে অপরকে বলেন 'সালাম', আর বিদায় নেবার সময় বলেন 'খোদা হাফেজ'। তবে তিনি বলছিলেন, ইরানে খুব কমসংখ্যক কিছু লোক আছেন - যাদের তিনি বিদায় জানানোর সময় আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতে শুনেছেন। তারা ফারসি ভাষায় 'আল্লাহ আপনাকে সুস্থ ও শান্তিতে রাখুন' এমন একটা বাক্য বলে বিদায় জানিয়ে থাকেন। তেহরানের একটি বাজার: ইরানীরা বিদায়ের সময় বলেন খোদা হাফেজ ইরানে এবং ফারসি ভাষায় 'খোদা' এমন একটি শব্দ - যা সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং তা যে কোন ধর্মের ঈশ্বরকে বোঝাতেই ব্যবহৃত হতে পারে। মধ্য এশিয়ার যেসব দেশে ফারসি বা তার কাছাকাছি ভাষাগুলো বলা হয়, যেমন আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, আজারবাইজান ইত্যাদি দেশেও বিদায়ের সময় 'খোদা হাফেজ' বলার প্রচলন আছে। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন কায়েম হবার পর থেকে ১৮৩০-এর দশক পর্যন্ত রাজদরবার ও আইন-আদালতের ভাষা ছিল প্রধানত ফারসি। তাই ফারসি আদব-কায়দার প্রভাবেই হয়তো উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে বিদায়ী শুভেচ্ছা হিসেবে 'খোদা হাফেজ' বলার' প্রথা চালু হয়। ১৯৮০র দশকে 'আল্লাহ হাফেজ' চালু? প্রশ্ন হলো, ১৯৮০র দশকে পাকিস্তানে 'আল্লাহ হাফেজ' চালু হবার কথাই বা কতটা সঠিক? পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং উর্দু ভাষাবিদ ড. রউফ পারেখের মতে, ১৮০ বছর আগেও উর্দু ভাষায় 'আল্লাহ হাফিজ' কথাটি ছিল । মুসলিমদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দেশে আচার আচরণের বেশ কিচু পার্থক্য আছে সম্প্রতি ডন পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লেখেন, উর্দু ভাষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অভিধান উর্দু লুঘাতে বলা হচ্ছে, বিদায়ী শুভেচ্ছা অর্থে 'আল্লাহ হাফিজ' কথাটি প্রথম ব্যবহারের নজির পাওয়া যায় ১৯০১ সালে। ড. পারেখ বলছেন, তারও আগে ১৮৮০ এবং ১৮৪৫ সালের পুরোনো উর্দু অভিধানেও 'আল্লাহ আপনাকে সুরক্ষা দিন' অর্থে 'আল্লাহ হাফিজ' বাক্যবন্ধটির উল্লেখ আছে, এবং উর্দু কবি হাজিম ১৮৬৮ সালে তার কবিতায় 'আল্লাহ হাফিজ' ব্যবহার করেছেন। ড. পারেখের সাথে আমার যোগাযোগ হয় ইমেইলে। তিনি জানালেন, উনিশশ' আশির দশকে 'আল্লাহ হাফিজ' কথাটা প্রথম ব্যবহার হয় এমন কথা ভুল, কারণ লোকের মুখে কথাটা ব্যবহৃত না হলে উনবিংশ শতাব্দীর কবি এটা ব্যবহার করতেন না, অভিধানেও তা থাকতো না। ড. পারেখের কথায় মনে হয়, 'আল্লাহ হাফেজ' কথাটার উৎপত্তি সম্ভবত পাকিস্তানেই - উর্দু ভাষার পরিমণ্ডলের মধ্যে। তবে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয় সেদেশে প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হকের সময় থেকে। আরো পড়তে পারেন: 'রমজান' কীভাবে 'রামাদান' হয়ে উঠেছে ভারতে আরবরা কি ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? ভারতের মুসলিম তরুণরা যে কারণে মজেছেন তুরস্কের এরতুগ্রুলে মুসলিমদের 'মিঞা কবিতা' নিয়ে আসামে বিতর্ক কেন?
news-56423616
https://www.bbc.com/bengali/news-56423616
মুজিব জন্মশতবার্ষিকী: মুসলিম লীগ দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও মুজিবের রাজনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন হয়েছে কীভাবে
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির সূচনা হয়েছিল মুসলিম লীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে, পরে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবোধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রবক্তা।
শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক দর্শন বা চিন্তায় কীভাবে এই পরিবর্তন হয়েছিল? এই প্রশ্ন নিয়েই কথা হয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং গবেষক কয়েকজনের সাথে। শেখ মুজিবের জন্ম ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। উনিশ বছর বয়সেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যাত্রা শুরু মুসলিম লীগে মুসলিম লীগের উদারপন্থী অংশের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে শেখ মুজিব কোলকাতায় গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন ১৯৩৯ সালে। সেই সাক্ষাতের পর ফিরে এসে সে বছরই তিনি গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ এবং মুসলিম লীগ গঠন করেছিলেন। তিনি নিজে মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক হয়েছিলেন। শেখ মুজিব ১৯৪১ সালে মেট্রিক পাশ করে কোলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়তে গিয়েও সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন রাজনীতি নিয়ে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় সারা দেশ ঘুরে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয় সরাসরি রাজনীতিতে জড়ানোর আগের বছর ১৯৩৮ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তাঁর পরিচয় হওয়ার প্রেক্ষাপটও ছিল ভিন্নরকম। সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে শেখ মুজিব লিখেছেন তার অসমাপ্ত আত্নজীবনীতে - পরে যা বই হয়ে বেরিয়েছে। "শেরে বাংলা তখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শ্রমমন্ত্রী। বাংলার এই দুই নেতা একসাথে গোপালগঞ্জে আসবেন। মুসলামানদের মধ্যে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হল। তখন স্কুলে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করার ভার পড়ল আমার ওপর। আমি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করলাম দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে।" সেই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ও তিনি তাঁর বইয়ে লিখেছেন। "পরে দেখা গেল, হিন্দু ছাত্ররা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থেকে সরে পড়তে লাগল। এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে বলল কংগ্রেস থেকে তাদের যোগদান করতে নিষেধ করেছে। আমি এ খবর শুনে আশ্চর্য হলাম। কারণ আমার কাছে তখন হিন্দু-মুসলমান বলে কোন জিনিস ছিল না" লিখেছেন শেখ মুজিব তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনীতে। হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদের মুখোমুখি মুজিব গোপালগঞ্জে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সেই সফরের সময়ই তাঁর সাথে শেখ মুজিবের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে কিছুদিন পত্রবিনিময়ও ঘটে। সে সময়ই গোপালগঞ্জে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবের এক সহপাঠীকে স্থানীয় একটি হিন্দু পরিবারে আটকিয়ে রাখার ঘটনা নিয়ে মারামারি হলে তাঁকে জীবনের প্রথম জেলে যেতে হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতা নূহ আলম লেনিন বলেছেন, হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদের জেরে কিছু নেতিবাচক ঘটনার মুখোমুখি হলেও সেই কিশোর বয়সেও শেখ মুজিবের ওপর সাম্প্রদায়িক চিন্তা প্রভাব ফেলতে পারেনি। "তাঁর যে মানস গঠন, সেটা কোনো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হয়নি। সেই কিশোর বয়সেই মাদারীপুরের পূর্ণ দাসের স্বদেশী আন্দোলনের গ্রুপের সাথেও তাঁর সংশ্লিষ্টতা ছিল। আর তিনি ব্রিটিশ শাসন এবং জমিদারী প্রথার প্রতিও তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন।" নূহ আলম লেনিন মনে করেন, সেই সময়ের বাস্তবতায় শেখ মুজিব মুসলিম লীগকে একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের চিন্তা থেকে ঐ দলে যোগ দিয়েছিলেন। "হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয়ের পর ঐ সময়ের বাস্তবতায় তারা মুসলিম লীগকে একটা প্ল্যাটফর্ম মনে করেছিলেন। সেই প্ল্যাটফর্ম মাধ্যমে জমিদারী প্রথার অবসান ঘটিয়ে একটা উদার রাষ্ট্রের স্বপ্ন তারা দেখেছিলেন" - মন্তব্য করেন মি: লেনিন। সুভাষ বসুর ভক্ত মুজিব শেখ মুজিব যে কিশোর বয়সেই ১৯৩৬ সালে স্বদেশী আন্দোলন বা ভারতের বিপ্লবী নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরাগী ছিলেন, সে কথা তিনি নিজেই তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনীতে লিখেছেন। "ইংরেজদের এদেশে থাকার অধিকার নেই। স্বাধীনতা আনতে হবে। আমিও সুভাষ বাবুর ভক্ত হতে শুরু করলাম। এই সভায় যোগদান করতে মাঝে মাঝে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর যাওয়া আসা করতাম। স্বদেশী আন্দোলনের লোকের সাথে মেলা মেশা করতাম" - লিখেছেন শেখ মুজিব। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: ছয় দফা ঘোষণা করে যেভাবে নেতা হয়ে ওঠেন শেখ মুজিব পঁচিশে মার্চের হত্যাযজ্ঞের পর যেভাবে এল স্বাধীনতার ঘোষণা যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যুবক শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মুজিব 'বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সময়'-এই শিরোনামে এক প্রবন্ধে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান লিখেছেন, মুসলিম লীগের রাজনীতিতেও উদার অংশের নেতা সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিমের সাথে থেকে শেখ মুজিব রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়েছেন। সেকারণে শুরু থেকেই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চিন্তা নিয়ে তার রাজনৈতিক মানস তৈরি হয়েছিল। শেখ মুজিব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর অল্প সময়ের মধ্যেই শেখ মুজিব অসাম্প্রদায়িক চিন্তা নিয়ে গণতন্ত্রের আন্দোলন শুরু করেন। "বঙ্গবন্ধু কখনোই সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। মুসলিম লীগে থেকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তিনি করেছেন, কিন্তু তাঁর রাষ্ট্র ভাবনায় ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশের ভূখণ্ডের সাথে আরও কিছু এলাকা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।" তিনি আরও বলেছেন, "৪৭ সালে যখন সেই আন্দোলন ব্যর্থ হলো, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলো - সেই ৪৭ সাল থেকেই নতুন করে তিনি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। এবং দেখুন মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যেই ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করলেন। আর ২২ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করলেন মুসলিম আওয়ামী লীগের।" শেখ মুজিব তার 'অসমাপ্ত আত্নজীবনী'তেও পাকিস্তানের প্রতি মোহভঙ্গ হওয়ার বিষয়ে কয়েকবার উদাহরণ দিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেবার সময় তোলা ছবি। মুজিবের রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগের বছরই ১৯৪৬ সালের কোলকাতায় সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ডের জেরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল নোয়াখালি এবং বিহারে। সাম্প্রদায়িক সেই দাঙ্গার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন শেখ মুজিব। পরে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবোধকেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক দর্শন হিসাবে নির্দিষ্ট করে আওয়ামী মুসলিম লীগের মাধ্যমে এগিয়েছেন বলে গবেষকরা বলেছেন। সেই আন্দোলনের একপর্যায়ে দলটির নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ করা হয়েছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খুরশিদা বেগম শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলছেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন শেখ মুজিব। "পাকিস্তান আন্দোলনের সময় ১৯৪৬ সালে ডাইরেক্ট অ্যাকশন একটি কর্মসূচি হয়েছিল। সেই কর্মসূচিতে ভয়ঙ্কর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা তিনি দেখেছেন। যা তিনি তার অসমাপ্ত আত্নজীবনীতেও লিখেছেন। ফলে তিনি সাম্প্রদায়িক মঞ্চে দাঁড়িয়েও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা করছেন।" অধ্যাপক খুরশিদা বেগম মনে করেন, শেখ মুজিব তাঁর রাজনৈতিক দর্শন স্থির করে এগিয়েছেন এবং সেজন্য তিনি হয়ে ওঠেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রবক্তা। "পরে তিনি (শেখ মুজিব) ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানে নিজেকে দেখেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনকে নিজের রাজনৈতিক দর্শন হিসাবে নির্দিষ্ট করছেন।" "অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র- এই দর্শনগুলো নির্দিষ্ট করার পাশাপাশি এগুলোর বাস্তবায়ন বা প্রায়োগিক রূপ দেয়ার জন্য তিনি যে অভিপ্রায়কে লালন করেছেন, সেটি স্বাধীনতা।" 'বাঙালী জাতীয়তাবাদের শক্তিকে ব্যবহার করেছেন মুজিব' বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার আন্দোলনও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বা ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম ধাপেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল শেখ মুজিবকে। তিনি জেলে থেকেই আন্দোলনের নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন। খুরশিদা বেগম বলেছেন, শেখ মুজিব তাঁর রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নের আন্দোলনে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। "জাতীয়তাবোধ বাঙালীর ছিল ১৯০৫ সাল থেকেই সেটা দেখা যায়। এই জাতীয়তাবোধকে তিনি (শেখ মুজিব) জাতীয়তাবাদে রূপান্তরিত করলেন। এই বাঙালী জাতীয়তাবাদ হলো চেতনার শক্তি। জনগণ নিজ পরিচয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বার্থ রক্ষার জন্য এটা চরম শক্তি। এই জাতীয়তাবাদকে সর্বজনীনতায় নিয়ে গিয়ে তিনি চরম শক্তিটিকে ব্যবহার করেছিলেন। যে শক্তিতেই শেষপর্যন্ত আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল" বলেন খুরশিদা বেগম। ছয়দফা প্রস্তাব শেখ মুজিবের রাজনৈতিক চিন্তা বাস্তবায়নের বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে কাজ করে। ছয়দফা টার্নিংপয়েন্ট: অবিসংবাদিত নেতা হন মুজিব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু হয় ১৯৬২ সালে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে ১৯৬৬ সালের ছয়দফা প্রস্তাব শেখ মুজিবের রাজনৈতিক চিন্তা বাস্তবায়নের বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে কাজ করে। ছয়দফা প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে গণঅভ্যূত্থান এবং এরপরে ৭০এর নির্বাচন - এসব রাজনৈতিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেখ মুজিব ধাপে ধাপে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেখ মুজিব তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে বছরের পর বছর মানুষের কাছে গেছেন, সেকারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছিল। "বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা একদিনে বা একটি ভাষণে বা একটি ঘোষণায় তৈরি হয়নি। পাকিস্তানের ব্যাপারে মোহভঙ্গ হতে ২৪ বছর সময় লেগেছিল। এই সময়ে রাজনীতির সবচেয়ে বড় অনুঘটক ছিলেন শেখ মুজিব। এবং ৬৬ সালে তাঁর দেয়া ছয় দফা ছিল ঐ সময়ের রাজনীতির এবং জনমানুষের আকাঙ্খার সবচেয়ে সুনির্দিষ্ট এবং ধারালো আটিকুলেশন। যার পথ বেয়ে এসেছে স্বাধীনতা" - বলেন মি: আহমেদ। মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, শেখ মুজিব মাঠের মানুষের ভাষা বুঝে তার ভিত্তিতে রাজনৈতিক চিন্তা ঠিক করে এগিয়েছেন। "রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মাতামাতি আছে। এরা অনেকেই কাগজে বাঘ। শেখ মুজিব ছিলেন মাঠের রাজা। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন কী - এটা এককথায় বলতে গেলে বলতে হয়-একটা বিষয় নিয়ে লেগে থাকা এবং মানুষের চোখ ও মনের ভাষা পড়ে তাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়।" বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ মুজিবকে তাঁর জীবনের চৌদ্দ বছরই কারাগারে কাটাতে হয়েছে। এরপরও রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থানে থেকে তিনি গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। সেজন্যই সেই সময়ের অন্য সব নেতাকে ছাপিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা হয়েছিলেন তিনি, এবং প্রতিষ্ঠা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের।
160415_the_grief_of_mothers_whose_children_joined_isis
https://www.bbc.com/bengali/news/2016/04/160415_the_grief_of_mothers_whose_children_joined_isis
আইসিস জঙ্গীদের মায়েদের দুঃখগাঁথা নিয়ে নাটক
“সিরিয়া শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হলো আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আমার মনে হলো আমি ‘মা’ হিসেবে আমার দায়িত্ব ঠিকমত পালন করিনি। আমি তাকে চুম্বন করতে পারিনি, আমি তাকে বলতে পারিনি তাকে আমি কত বেশি ভালোবাসি। বলতে পারিনি যে, সেই আমার কাছে সবকিছু।”
জঙ্গীদের মায়েদের মর্মযাতনা তুলে ধরা হয়েছে এই নাটকে ইসলামিক স্টেটের হয়ে সিরিয়ায় যুদ্ধে গেছে এমন এক ছেলের মায়ের আর্তি। ব্রাসেলসের মোলিনবিক বলে যে জায়গাটি এখন ইউরোপে ইসলামী জঙ্গীদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি বলে পরিচিতি পেয়েছে, সেখানকার বাসিন্দা এই মা এভাবেই তার নিদারুণ যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করেছেন। তার মতো আরও বহু মায়ের সন্তান এভাবে জঙ্গী হয়ে চলে গেছে সিরিয়া বা ইরাকে। অনেকে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিয়েছে। জঙ্গীদের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বড় শিরোণাম হয়েছে বিশ্ব জুড়ে, কিন্তু এই শিরোণামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে এই মায়েদের গভীর মর্মযাতনা। এই প্রথম এরকম মায়েদের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে মঞ্চস্থ করা হয়েছে একটি নাটক। ‘অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড- লুজিং আওয়ার চিলড্রেন টু ইসলামিক স্টেট’ নামের এই নাটকের কাহিনী গড়ে উঠেছে ৪৫ জন মায়ের বাস্তব জীবনকে অবলম্বন করে। গবেষকরা দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আর সেই সাক্ষাৎকারে তাদের বাস্তব কথা-বার্তার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে নাটকের সংলাপ। 'অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড' নাটকের একটি দৃশ্য কিসের আকর্ষণে আসলে এদের ছেলে-মেয়েরা জঙ্গী হয়ে গেলো? কিসের আকর্ষণে তারা মা-বাবাক-পরিবার পেছনে ফেলে এরকম ভয়ংকর মতাদর্শের দিকে ঝুঁকলো? নাট্যকার জিলিয়ান স্লোভো বলছেন, এর কোন একক কারণ নেই। ‘বর্ণবাদ, ইসলামোফোবিয়া, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা, এরকম নানা কারণ এর পেছনে কাজ করেছে। জিলিয়ান জানান, তার নাটকের প্রত্যেকটি সংলাপ তিনি নিয়েছেন এই নাটকের জন্য যে ৪৫ জন মায়ের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, সেখান থেকে। ব্রাসেলসের মোলিনবীকের কয়েকজন মায়ের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় গত বছরের অক্টোবরে। এর কিছুদিন পরেই ঘটে প্যারিসের সন্ত্রাসী হামলা। সেই সন্ত্রাসী হামলায় আত্মঘাতী বোমারু হিসেবে অংশ নিয়েছিল সাক্ষাৎকার দেয়া এক মায়ের সন্তান। গত অক্টোবরে যখন নাটকের রিহার্সেলের এক পর্যায়ে গবেষকরা ব্রাসেলসে ফিরে যান, তখন তারা প্রথম বিষয়টা জানতে পারেন। জিলিয়ান স্লোভো জানান, “আগের দফায় সাক্ষাৎকার দেয়া এক মাকে এবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন আমরা আবিস্কার করলাম যে এই মায়ের ছেলেই আসলে প্যারিসে স্টেডিয়ামের বাইরে আত্মঘাতী হামলা চালায়। এই ঘটনা আমাদের পুরো নাটককে তখন একটা অন্যরকম অর্থ দিলো। কারণ এই মা-ই তার সাক্ষাৎকারে নিজের অপরাধবোধের কথা বলেছিল। বলেছিল, আমি যদি মা হিসেবে সব দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতাম, তাহলে হয়তো এরকম ঘটতো না।“ জিলিয়ান স্লোভো আশা করছেন, এই নাটক মুসলিমদের সম্পর্কে মানুষের গৎবাঁধা ধারণা বদলাতে সাহায্য করবে। লন্ডনের 'ন্যাশনাল থিয়েটারে' এই নাটক চলবে আগামী ৭ই মে পর্যন্ত।
news-54198213
https://www.bbc.com/bengali/news-54198213
নারীর পোশাক: বাংলাদেশে মেয়েদের পোশাক নিয়ে এত বিতর্ক হয় কেন
ঢাকায় সম্প্রতি বোরকা পরিহিত এক নারীর তার সন্তানের সাথে ক্রিকেট খেলার দৃশ্য একটি সংবাদপত্রে প্রকাশের পর তা রীতিমত ভাইরাল হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি আর মা-সন্তানের মধ্যকার ক্রিকেটীয় উচ্ছ্বাস কিংবা খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি।
বাংলাদেশে নারীদের পোশাক নিয়ে শোরগোল ওঠে মাঝেমধ্যেই বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে বহু মানুষের আলোচনার বিষয় হয়েছে ওই নারীর পোশাক। এ নিয়ে পক্ষ- বিপক্ষে আছে যেমন পুরুষ , তেমনি অনেক নারীও। আবার শুধু চলার পথেই পোশাকের জন্য বিড়ম্বনায় পড়েছেন এমন অভিজ্ঞতা আছে বহু নারীর। তেমনি একজন ঢাকার একটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক নাজমুন নাহার। "আমি বোরকা ও হিজাব পরিধান করি ছোটবেলা থেকেই। আমাকে কেউ জোর করেছে পরার জন্য তা নয় কিন্তু। আমি যে আবহ বা পরিবেশে বড় হয়েছি তাতে মনে হয়েছে, এটাতে ভালো বোধ করি। কলেজে স্কুলে পড়ার সময় নানা জন নানা মন্তব্য করতো। পর্দা মানে বোরকা নাকি-মনের পর্দাই বড় পর্দা- এমন কথা বলতো। ''বোরকা পরে দুষ্টুমি ঢাকার জন্য কিংবা বোরকা প'রে এরা দেশের জন্য কি করবে এমন বলতো। মনে করে বোরকা সব কিছুর অন্তরায়। তারা টিপ্পনী কাটতো। অনেকে মিশতো না, কারণ তারা মনে করতো বোরকা পরে, এমন কারও সাথে মিশলে প্রেস্টিজ থাকবে না," বলছিলেন নাজমুন নাহার। শহরের বাইরের এলাকাগুলোতে বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজেও নারীকে নিয়মিতই নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয় পোশাকের কারণে। কুষ্টিয়া জেলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মৌসুমি আক্তার বলছেন, কোনো পোশাক পরেই নারীকে বাজে মন্তব্য শুনতে হওয়ার ঘটনা গ্রামীণ শহর এলাকাগুলোতেও নেহায়েত কম দেখা যায় না। "বোরকা পরলে অনেকে মনে করে মেয়েটা হয়তো কিছুটা ভদ্র। কিন্তু যে পোশাকই পরুক কটু মন্তব্য থেকে বের হতে পারছে না। বোরকা, শাড়ি, শার্ট প্যান্ট যাই পরুক, কোনো পোশাকেই মেয়েরা এখন নিরাপদ নয়, তাকে নিয়ে মন্তব্য হবেই," বলেন মৌসুমি আক্তার। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: বোরকা পরে ক্রিকেট খেলার ভাইরাল ছবি নিয়ে কী বলছেন মা শফী'র মন্তব্যে আপত্তি থাকলেও সমর্থন অনেকের পশ্চিমা পোশাক পরলে এরকম হবেই: ভারতীয় মন্ত্রী 'শাড়ি' নিয়ে লেখা, সামাজিক মাধ্যমে তুলকালাম ছেলে এবং মায়ের ক্রিকেট খেলার ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকার একজন গৃহিনী ফারজানা সাথী বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই হিজাব ও বোরকায় অভ্যস্ত। তার কাছে মনে হয়েছে যারা যেই পোশাকে অভ্যস্ত তারা নিজের সেই পোশাকটাই পছন্দ করেন। কিন্তু অন্য নারীদের পোশাককে কম পছন্দ করেন। বিশেষ করে অনেকের মধ্যে বোরকা হিজাবকে কিছুটা নিচু স্তরের বলে মনে করার প্রবণতা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। "যে যেভাবে চলে সে সেটাই প্রেফার করে। অনেকেই (বোরকা পরা) পছন্দ করে না এবং তাদের মধ্যে একটা সুপিরিয়র ভাব কাজ করে। বোরকা পরা বলতে তারা ভাবে স্ট্যান্ডার্ড না, ব্যাকডেটেড ভাবে তারা। আমিও আমার মতো সার্কেল মেনটেইন করতাম। কালচারে ভিন্নতা থাকবে। তবে ভার্সিটিতেও আমার সমস্যা হয়েছে, এখনও হচ্ছে," মন্তব্য ফারজানা সাথীর। নারীর পোশাক নিয়ে মন্তব্য শুধু যে পুরুষদের দিক থেকে আসে তাও নয়। যেমনটি বলছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শাহানা হুদা। "আমি ঢাকার ধানমন্ডিতে হাঁটছিলাম। হঠাৎ এক ভদ্রমহিলা আমাকে বললেন মাথায় তো কাপড় দিতে পারেন। আমি প্রথমে ইগনোর করলেও পরে আবার ফিরে এসে উনাকে বললাম যে আমি তো আপনার পোশাক নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। আপনি কেন আরেকজনের পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। ''আমি কি পরবো সেটাতো আমার সিদ্ধান্ত। আবার আমারই কয়েকজন বন্ধু আছে যারা ধর্মীয় বিধান মতো পর্দা করে তাদেরও এমন বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।" অর্থাৎ বাংলাদেশে কোনো ধরণের পোশাকই আসলে নারীকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারে না যে কেউ তার পোশাক নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে উঠবে না। যদিও ইসলামপন্থীদের দিক থেকে একটি অভিযোগ আছে যে এখন বোরকা, হিজাব এ ধরনের ধর্মীয় পোশাকগুলোকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য বেশি হয় বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা নুসরাত আমিন বলছেন নারীর পোশাক-কেন্দ্রিক যে সামাজিক সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটিকে বড় ধরণের একটি মনজাগতিক বা চিন্তার সমস্যা বলেই মনে করেন তিনি। "বোরকা পরা মানে যে আমি প্রোগেসিভ না, তাতো না। আমার অধিকার আছে নিজেকে আবৃত করার। এটা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা চিন্তা। দেখুন ছেলেকে ক্রিকেট শেখাচ্ছে, সেটা নিয়ে কেমন ট্রল হচ্ছে। কী পরিমাণ লেখালেখি বা মতামত বিভক্ত হয়ে গেছে। ''এটা কি আপনার মনে হয় যে পোশাক থেকে এসেছে? এটা হলো আমরা কীভাবে চিন্তা করছি। আমরা আসলে একটা ভোগ্যপণ্যের দৃষ্টি থেকেই নারীকে দেখছিলাম," বলছেন নুসরাত আমিন। ধীরে ধীরে ফ্যাশানের অংশ হয়ে পড়েছে হিজাব তিনি বলছেন যে পোশাকেই একজন নারী থাকুক না কেনো, কোনো না কোনো শ্রেণির একজন তাকে হয়রানি করছে। "হয়তো কখনো সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরছি। সেখানেই দেখছি মানুষ সহজলভ্য ভেবে ফেলছে। এমনকী ধরুন সব ক্যাটাগরির (মানুষ) -যেমন কোনো বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছি সেখানকার একজন গার্ড একটা কমেন্ট ছুঁড়ে দিলো," বললেন নুসরাত আমিন। নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন প্রায় সত্তর হাজার বছর আগে পোশাক পরিধান শুরু করেছিলো মানুষ। কালক্রমে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর অনেকের মধ্যে পোশাকের একটি ধরণও তৈরি হয়। ফলে সবক্ষেত্রে না হলেও অনেক সময় পোশাক দেখেও ধারণা করা হয় যে ব্যক্তিটি কোন দেশ বা সমাজ বা অঞ্চলের। তবে পোশাক বিষয়টি এভাবে একটা বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে মূলত সমাজ আর পরিবেশের প্রভাবে। গত কয়েক দশকে সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে যে কটি দেশে পোশাকের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে তার মধ্যে বাংলাদেশও একটি। নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলছেন পোশাকের ক্ষেত্রে নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতি সম্মান আগেও কম ছিলো, এখন আরও কমেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে এটি আরও দৃশ্যমান হয়েছে মাত্র। তিনি বলেন হিজাব বা বোরকা পরলেই অনেকে ট্যাগ দেন এই নারী পশ্চাৎপদ। আবার অনেকে চাইলেও তার ইচ্ছে মতো পোশাক পরার সাহস দেখাতে পারেন না। "আমার মাকে আশির দশকে স্লিভলেজ ব্লাউজ পরতে দেখেছি। তিনি কিন্তু মফস্বলের সাধারণ একজন নারী। কিন্তু আমি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লিভলেজ ব্লাউজ পরে ক্লাস নিবো চিন্তা করলেও ভরসা পাইনা। ''কারণ আমি জানি আজ স্লিভলেজ ব্লাউজ পরে আমি ক্লাস নিতে এলে সঙ্গে সঙ্গে মিছিল শুরু হবে। এমনকী ১২ বছর আগে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর পরীক্ষা হলে জিন্স প্যান্ট পরে ডিউটি করতে গিয়েছিলাম তখন একজন ডিন অভিযোগ করেছিলেন আমার বিরুদ্ধে," বলছিলেন জোবাইদা নাসরিন। বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেন অনেক নারী। কিন্তু ২০১৯ সালে একজন উপস্থাপককে ঘিরে শোরগোল হয়েছিলো কারণ যখন তিনি সংবাদ পাঠ করছিলেন , তখন শাড়ির সাথে তিনি স্লিভলেজ ব্লাউজ পরেছিলেন। তার সংবাদ পাঠ ছাপিয়ে তখন আলোচনার তুঙ্গে ছিলো ওই ব্লাউজ । আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলে টি শার্ট পরে হল অফিসে যাওয়া যাবে না এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা তুলে নিতে হয়েছিলো প্রবল সমালোচনার মুখে। ২০১৪ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি মহিলা হোস্টেলে একদল বখাটের হামলার পর গণমাধ্যমে খবর এসেছিলো যে হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক- যিনি ছিলেন একজন নারী তিনিই হোস্টেলের মেয়েদের বলেছেন তারা কেন শার্ট প্যান্ট পরে বাইরে যায়? আবার বছর খানেক আগে একটি বহুজাতিক কোম্পানির একটি পণ্যের ফ্যাশান শোতে একজন মডেল শাড়ির ওপর ব্লাউজ পরেছিলেন যা পণ্যটিকে নিয়ে আলোচনা থেকে সরিয়ে শোরগোল তুলেছিলো পোশাক নিয়ে। এই যে পোশাক এখন এতো আলোচনায় আসছে এটি কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে নাকি আসলে পোশাককেন্দ্রিক সামাজিক দ্বন্দ্বও প্রকট হয়ে উঠেছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজরিন আফরিন বলছেন, সব ধরণের পোশাক নিয়েই বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিক্রিয়া দেখানোর একটা প্রবণতা চলছে এখন আর এটা নিয়ে সব পক্ষের অতি কট্টররাই সক্রিয়। তারা নারীর যোগ্যতা, মেধা, কাজ, ভালো লাগা কিংবা ইচ্ছা অনিচ্ছাকে ঢেকে দেন পোশাককে সামনে নিয়ে আসার মাধ্যমে, অথচ পোশাক নির্বাচন ব্যক্তির নিজস্ব অধিকার ও পছন্দের বিষয়। "যে যেই পেশারই হোক না কেন সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় আসে পোশাক। পোশাক ডিফাইন করে দিচ্ছে আপনি কথিত 'প্রগতিশীল, উগ্রপন্থী, নাকি পশ্চাদ ধারণার অধিকারী'। পোশাক তো আর মানদণ্ড হতে পারেনা। অনেকে পোশাক পরে সামাজিক বা পারিবারিক চাপ বা আকাঙ্ক্ষার কারণে। এর সাথে আছে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য বা নিরাপত্তা বিবেচনা। ''বাংলাদেশে সাইবার বুলিং বাড়ছে। বিবিসির পেইজ দেখলেও দেখবেন কমেন্ট সেকশনে অনেকে পোশাককে আলোচনায় নিয়ে আসেন। দু ভাগে ভাগ হয়ে যায়- সেটা অতি প্রগতিশীলতা হোক বা অতি উগ্রবাদী হোক। এটা পোশাক এবং এ নিয়ে কমেন্টের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই," বলেন মিজ আফরিন। সব মিলিয়ে নারী কেন কোন পোশাক নির্বাচন করছেন তা নিয়ে চিন্তা না করেই পোশাক নিয়ে নিজের মতামতকেই চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা সমাজে জোরালো হয়েছে বলে মনে করেন আজরিন আফরিন।
news-48325788
https://www.bbc.com/bengali/news-48325788
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: সাকিব আল হাসান কি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার?
সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৬ সাল থেকে।
এরপর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। সাকিবের অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচন প্রক্রিয়া বা দল নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন, আলোচনা ও সমালোচনা থাকলেও একমাত্র সাকিব আল হাসানের দলে জায়গা নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠেনি। ব্যাটে ও বলে তিনি পারফর্ম করে যান নিয়মিত। মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে দলে সুযোগ পেলেও কোচ জেমি সিডন্সের অধীনে থাকাকালীন সাকিব পুরোদস্তুর স্পিনারও বনে যান। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে স্পিন দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর তার নেতৃত্বে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: বলুন কে জিতবে, কে হারবে? ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: দলে তুরুপের তাস হবেন যারা এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট কেন আগের চেয়ে আলাদা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: দেখে নিন বাংলাদেশের ম্যাচগুলো কবে, কখন বিবিসি বাংলার মুখোমুখি সাকিব আল হাসান কেরিয়ারের নানা দিক নিয়ে বিবিসি বাংলার সাথে ২০১৮ সালের নভেম্বরে কথা বলেন সাকিব আল হাসান। সেখান থেকে কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল। বোলার হয়ে ওঠা কিভাবে? বোলিং সব সময়ই করতাম ওয়ানডে ম্যাচে প্রতিদিন দশ ওভার বোলিং করি, কিন্তু টেস্টে মেইন স্পিনার হয়ে ওঠা হয়নি। জেমি আমাকে সেই দায়িত্ব দেয়। প্রিয় প্রতিপক্ষ? নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমার কিছু ভালো পারফরম্যান্স আছে। দেশ হিসেবে ওদের ভালো লাগে, ওরকম প্রিয় প্রতিপক্ষ নেই। তবে দর্শকদের কথা ভাবলে ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের ইনটেন্সিটি বেশি থাকে। বোলিংয়ের সময় সবচেয়ে কঠিন ব্যাটসম্যান? অনেকেই আছে, কঠিন হোক আর যাই হোক সবার উইকেটই পেয়েছি, শুধু ক্রিস গেইল বাদে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার বলা হয়ে থাকে সাকিব আল হাসানকে। ব্যাটিংয়ের সময় কঠিন বোলার? ব্যাটিংয়ের সময় মূলত কন্ডিশনের কারণে বোলারদের কঠিন লাগে। স্পিনিং ট্র্যাক হলে ব্যাটিংয়ের সময় স্পিন খেলতে কঠিন, সিমিং ট্র্যাক হলে সিমারদের কঠিন লাগে। পেশাদারিত্ব নাকি দেশপ্রেম? দেশপ্রেম সবার মধ্যেই আছে, যে যেখান থেকে যার সাধ্যমত করার চেষ্টা করে সবসময়। এটা ভাগ করে দেয়ার কিছু নেই। এটা একটা দায়বদ্ধতা। দলে প্রয়োজনে সেটুকু দেয়া প্রয়োজন সেটুকু দেখাই আমার লক্ষ্য। বিশ্বকাপে লক্ষ্য সবারই লক্ষ্য বিশ্বকাপ জেতা। কিন্তু আমাদের প্রথম টার্গেট হওয়া উচিৎ সেমিফাইনাল। ওই পর্যন্ত যাওয়াটাই কঠিন, কারণ এরপর দুটো ম্যাচ জিতলে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু সেমিতে খেলার আগে পাচঁ থেকে ছয়টি ম্যাচ ভালোমতো জিততে হবে। মাগুরায় নিজ বাড়ির সামনে সাকিব আল হাসান এক নজরে সাকিবের ওয়ানডে ক্যারিয়ার ম্যাচ২০৬ মোট রান ৫৬৩৮ উইকেট২৬২ ব্যাটিং গড় ৩৫ বোলিং গড়৩১.৫৫ ইকোনমি৪.৮১ * ২০শে মে, ২০১৯ পর্যন্ত সাকিবের যত রেকর্ড ক্রিকেট ইতিহাসেই টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ধরনের ক্রিকেটে একই সময়ে এক নম্বরে থাকা একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। ২০১৫ সালে সাকিব এই কৃতিত্ব প্রথম করে দেখান। সাকিব এই কৃতিত্ব আবার করে দেখিয়েছেন, যা আর কোন দেশের ক্রিকেটার পারেননি। ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান ও ২০০ মাইলফলক স্পর্শ করা দ্রুততম ক্রিকেটার সাকিব, মাত্র ১৭৮টি ওয়ানডে লেগেছে তার। সাকিব টেস্ট ক্রিকেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেট নেন। সাকিবসহ এই রেকর্ড আছে মাত্র চারজন অলরাউন্ডারের, বাকি তিনজন হলেন - ইয়ান বোথাম ও ইমরান খান ও অস্ট্রেলিয়ার একে ডেভিডসন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের সেরা তিন ওয়ানডে ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের সেরা তিন ওয়ানডে ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের সেরা তিন ওয়ানডে বোলার ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা তিন বোলার দু্‌ই তালিকাতেই বাংলাদেশের সেরা তিনে আছেন সাকিব আল হাসান। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: সাকিব: ‘এটা সবচেয়ে বড় গিফট আল্লাহর তরফ থেকে’ সাকিবের তর্কের ভিডিও ভাইরাল: কী বলছেন তিনি ক্রিকেটার সাকিব আইসক্রিম কিনতে যাবেন কিভাবে?
news-52271785
https://www.bbc.com/bengali/news-52271785
করোনাভাইরাস: প্রবীণদের ঝুঁকি কমানোর উপায় কী?
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়োজ্যেষ্ঠরা। নানান ধরণের শারীরিক জটিলতা থাকায় মৃত্যুর হারও তাদের বেশি।
এই অবস্থায় কীভাবে তাদের যত্ন নিতে হবে এবং যারা তাদেরও কী কী বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে জানতে দেখুন ভিডিওটি: বাংলাদেশে জেলাভিত্তিক কোভিড-১৯ সংক্রমণের মানচিত্র কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি?
news-57144216
https://www.bbc.com/bengali/news-57144216
ফিলিস্তিন ইসরায়েল: টিকটক সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে ভাইরাল হচ্ছে ইসরায়েল ফিলিস্তিন সংঘাতের খবর
ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে লড়াই যত তীব্র হচ্ছে, তত সেই উত্তেজনা প্রকাশের একটা বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে সামাজিক মাধ্যমের ভিডিও অ্যাপ টিকটক।
ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি তরুণ প্রজন্ম সংঘাতের ছবি স্মার্টফোনে তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে এই ভিডিও অ্যাপ একসময় সুপরিচিতি ছিল ভাইরাল হওয়া নাচ-গানের ভিডিওর জন্য। নাচ-গানের ভিডিও শেয়ারের এই সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এখন ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের তরুণ প্রজন্মের জন্য খবর শেয়ার করার একটা গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম হয়ে উঠেছে। চীনা মালিকানাধীন এই সাইট তরুণদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিশ্বব্যাপী এই অ্যাপ সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে মাসে প্রায় ৭০ কোটি তরুণ। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া রকেটের ফুটেজ, ইসরায়েলি হামলায় গাযা বিধ্বস্ত হওয়ার এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের নানা ছবি এই সাইটে এখন ভাইরাল হয়েছে। এর মাধ্যমে সংঘাতের চিত্র দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে মানুষের মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। পাশাপাশি এমন উদ্বেগও বাড়ছে যে, সামাজিক মাধ্যম ছড়িয়ে দিচ্ছে ভুয়া তথ্য বা উগ্রবাদ। আরও পড়তে পারেন: গাযা এবং ইসরায়েলের মধ্যে এটাই ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে তীব্র সহিংসতা। পূর্ব জেরুসালেমে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বাড়ার পটভূমিতে এবারের লড়াইয়ের সূত্রপাত। এই সংঘাত চরমে ওঠে যখন মুসলিম ও ইহুদী দুই ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র একটি স্থানে সংঘর্ষ শুরু হয়। গাযা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস গোষ্ঠী ওই এলাকা থেকে ইহুদিদের সরে যাবার হুঁশিয়ারি দেবার পর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে। ইসরায়েলও পাল্টা জবাবে বিমাান হামলা চালাতে শুরু করে। এমনকি সাম্প্রতিক লড়াই শুরুর আগেও ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে উত্তেজনার খবর টিকটক-এ ভাইরাল হতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে পূর্ব জেরুসালেমের বাসিন্দা দুই ফিলিস্তিনি তরুণের গণপরিবহনে দুজন কট্টরপন্থী ইহুদি তরুণকে চড় মারার ভিডিও এই অ্যাপে ভাইরাল হয়। পরের সপ্তাহে পুলিশ সন্দেহভাজন দুজন তরুণকে গ্রেপ্তার করে। ফিলিস্তিনে আক্রমণ জোরদার করেছে ইসরায়েলি সেনা বাহিনী ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের ক্লিপও টিকটক-এ ছড়াতে শুরু করে। অ্যাপ ব্যবহারকারীরা #SaveSheikhJarrah #সেভশেখজারাহ এই হ্যাশট্যাগে ভিডিও পোস্ট করে। পূর্ব জেরুসালেমের এই শেখ জারাহ এলাকা থেকেই ফিলিস্তিনি পরিবারদের উচ্ছেদের হুমকি থেকে এবারের সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে। এই ভিডিওগুলো এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষ দেখছে এবং শেয়ার করছে। টিকটক বুম: চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং পরাশক্তির সামাজিক মাধ্যম দখলের লড়াই নামে বইয়ের লেখক ক্রিস স্টোকলি-ওয়াকার বিবিসিকে বলছেন যে, টিকটক ব্যবহার করা যেহেতু খুবই সহজ এবং এই অ্যাপ যেহেতু ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়, তাই এই মাধ্যমের কন্টেন্ট ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে যায় খুবই দ্রুত। "এই অ্যাপে ভিডিও তৈরির পদ্ধতি এবং সরঞ্জামগুলো খুবই সহজ -এতই সহজ যে ১২ বছর থেকে শুরু করে ৯০ বছর বয়সের যে কেউ নিজেই, প্রযুক্তি বিষয়ে তেমন কোন জ্ঞান না থাকলেও এই অ্যাপে ভিডিও বানাতে পারে," তিনি বলেন। "আর এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বিশাল- আমরা জানি যে সারা পৃথিবীতে নিয়মিত টিকটক ব্যবহার করে মাসে ৭৩ কোটি বিশ লাখ মানুষ। কাজেই টিকটক-এ আপ যদি কিছু পোস্ট করেন, তা প্রচুর মানুষ দেখবে এটা বাস্তবতা।" আরও পড়তে পারেন: একটি ভিডিওর ছবিতে দাবি করা হচ্ছে গাযায় ইসরায়েলি বিমান হামলা থেকে বাঁচতে পালাচ্ছে গাযার মানুষ। এই হ্যাশট্যাগ দিয়ে ভিডিওটি পোস্ট করেছে 'মুসলিম' নামে আমেরিকার একটি নিউজ সাইট, যে ভিডিওটি টিকটক-এ দেখা হয়েছে চার কোটি ৪০ লক্ষ বার। সাব্রিনা আবুখদিয়ের নামে আরেকজন টিকটক ব্যবহারকারীর আরেকটি পোস্ট দেখেছে ১৫ লাখ মানুষ। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গাযার একটি বিধ্বস্ত বহুতল আবাসিক ভবন এবং ক্রন্দনরত শিশু- সাথে তার লেখা পোস্ট- "আপনারা জানেন কী করতে হবে,"। তিনি এই ভিডিওটি সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ জানিয়েছেন। টিকটক ব্যবহারকরী এবং একইসঙ্গে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ সাইট যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারেও ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘাতের ফুটেজ এবং গাযার ভেতরকার পরিস্থিতির ভিডিও ছবির সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে #সেভশেখজারাহ হ্যাশট্যাগ। পশ্চিম তীরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে বেরিয়ে আসা ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সমর্থকরাও টিকটক-এ তাদের পোস্ট দিচ্ছে। একটি ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া পাথর থেকে এক ফিলিস্তিনি নারীকে আড়াল করে রেখেছে একজন ইসরায়েলি সৈন্য। টিকটক-এ এই ভিডিওটিও দেখেছে ১৫ লাখের ওপর মানুষ। অনলাইনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ-এর জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। টুইটারে তাদের অনুসারীর সংখ্যা ১৩ লাখ এবং টিকটক-এ তাদের অনুসারী রয়েছে ৭০ হাজারের ওপর। তারাও ইসরায়েলের ভেতরকার চিত্র এবং ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের ভিডিও টিকটক-এ পোস্ট করছে। "এটা আপনার শহর হলে আপনি কী করতেন?" এমন প্রশ্ন তুলে টিকটক-এ পোস্ট করা তাদের একটি ভিডিও দেখেছে ৩ লাখ মানুষ। ইসরায়েলে হাইফা ইউনিভার্সিটির ড. গ্যাব্রিয়েল ওয়েইমান বলেছেন অনলাইনে এখন "হৃদয় ও মনের লড়াই চলছে" এবং এই মুহূর্তে "এটা অসম লড়াই"। "ইসরায়েলের দিক থেকেও সমানতালে পাল্টা পোস্টিং হচ্ছে, কিন্তু আমি বলব সেগুলো তেমন শক্তিশালী নয়, এবং মোটেও সুসংগঠিত নয়, এবং আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি বলব সেগুলো তেমন মানুষের বিশ্বাস তৈরি করে না," তিনি বিবিসিকে বলেন। "হয়ত ইসরায়েলে কেউই মনে করেনি যে টিকটক একটা শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।" জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করবে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা, এ রকম হুমকির কারণে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ার জের ধরেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত এ মাসে টিকটক এবং টুইটার-এ একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায় জেরুসালেমে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে যখন একটি গাছ পুড়ছে, তখন তা দেখে নাচছে এবং উল্লাস প্রকাশ করছে ইহুদিরা। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা দাবি করে মসজিদ ধ্বংস হওয়ায় তারা উল্লাস প্রকাশ করছে। বাস্তব ঘটনা ছিল, ওই ইহুদিরা সেখানে জড়ো হয়েছিলেন জেরুসালেম দিবস উদযাপনের জন্য। আগুনে মসজিদের কোন ক্ষতি হয়নি। ইসরায়েলি পুলিশ ওই ঘটনার দোষ চাপায় ফিলিস্তিনিদের ওপর। তারা বলে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া আতসবাজিতে আগুন লেগেছে, আর প্রতিবাদকারীরা বলে ইসরায়েলি সেনা অফিসারদের ছোঁড়া স্টান গ্রেনেডে থেকে আগুনের সূত্রপাত। বৃহস্পতিবার রাতে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গানৎয ফেসবুক এবং টিকটক-কে তাদের সাইট থেকে এসব পোস্ট সরিয়ে ফেলতে বলেন। তিনি বলেন এসব পোস্ট সহিংসতায় আরও উস্কানি যোগাবে। তিনি বলেন উগ্রপন্থীরা সামাজিক মাধ্যমে ইচ্ছা করে এসব ছড়াচ্ছে এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তিনি সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোর "সহযোগিতা আশা" করছেন। সংবাদ ওয়েবসাইট ইসরায়েল ন্যাশানাল নিউজ জানায় দুটি সংস্থার নির্বাহী কর্মকর্তারাই "তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহিংসতা ছড়ানো বন্ধে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের" প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভুয়া ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য অনলাইনে ছড়ানো প্রতিরোধে গড়ে তোলা একটি সংস্থা, ফার্স্ট ড্রাফট নিউজে কাজ করেন শেদানে আরবানি। "আমরা যেসব কন্টেন্ট দেখেছি তার মধ্যে অনেকগুলোই পুরনো সংবাদ মাধ্যম থেকে নেয়া পুরনো খবর, যেগুলো অপ্রাসঙ্গিকভাবে পোস্ট করা হয়েছে," তিনি বিবিসিকে বলেন। তিনি বলেন দু পক্ষ থেকেই সম্পূর্ণ অন্য সময়ের খবর এবং ভিন্ন জায়গার খবর ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়ানো হচ্ছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিন লড়াইয়ে আরেকটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বিশেষ করে সামাজিক ভিডিও অ্যাপ টিকটক।
news-45586783
https://www.bbc.com/bengali/news-45586783
দিল্লিতে নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে এক মৃত্যুর পর টুইটার ব্যবহারকারীরা তুলে দিল ৫১ লাখ রুপি চাঁদা
দিল্লিতে নালা পরিষ্কার করতে নেমে মৃত এক ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়ে তার ছোট ছেলেটি কাঁদছে - অর্থের অভাবে দেহ সৎকার করা যাচ্ছে না - এমন একটি ছবি টুইটারে ভাইরাল হওয়ার পরে ওই পরিবারের জন্য প্রায় ৫১ লক্ষ রুপি চাঁদা জমা তুলে দিয়েছেন টুইটার ব্যবহারকারীরা।
টুইটারে সাড়া জাগানো সেই ছবি: দিল্লিতে নালা পরিষ্কার করতে নেমে মৃত ব্যক্তির দেহের পাশে ছোট ছেলেটি কাঁদছে ছবিটি তুলেছিলেন দিল্লির একটি পত্রিকার সাংবাদিক, যিনি পেশাগত কারণেই ওই শ্মশানে গিয়েছিলেন। ওই দৃশ্য তাঁকে এতটাই নাড়া দেয়, যে পত্রিকায় ছাপা না হওয়া ছবিটি তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তবে, ভারতে নালা বা টয়লেট পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রতিবছর মারা যান একশোরও বেশী মানুষ। যদিও প্রায় ২৫ বছর ধরেই ভারতে নালা বা টয়লেট পরিষ্কারের জন্য কাউকে নিয়োগ করা বেআইনী। তবুও সেই কাজটাই করায় বহু ব্যক্তিমালিকানার বাড়ি অথবা সরকারি দপ্তরগুলো। দিল্লির ভূগর্ভস্থ পয়:প্রণালী পরিষ্কার করতে নেমেছিলেন ২৭ বছরের অনিল। আগে রিকশা চালাতেন। কিছুটা বেশী রোজগারের আশায় নর্দমার পাঁক পরিষ্কারের কাজ নেন বছর পাঁচেক আগে। রোজই ওইভাবেই ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে নোংরা, পাঁকের মধ্যে নামেন তিনি একটা দড়ির সাহায্যে। কিন্তু গত শুক্রবার দড়িটা ছিঁড়ে তিনি নীচে পড়ে যান। মারা যান সেখানেই। তার পরিবার দেহ নিয়ে গিয়েছিল শ্মশানে। কিন্তু সৎকারের অর্থ ছিল না। তখনই ওই পরিবারটিকে নিয়ে খবর যোগাড় করতে সেখানে পৌঁছিয়েছিলেন হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার রিপোর্টার শিভ সানি। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, "এই যারা নর্দমা পরিষ্কারের কাজ করেন, তাঁদের নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু খবর হয়েছে আমাদের কাগজে। সেই সূত্রেই ওই পরিবারটির বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে জানতে পারি যে তারা দেহ নিয়ে শ্মশানে চলে গেছে। আমিও যাই শ্মশানে। পরিবারটিকে কিছু প্রশ্ন করব বলে সবে প্যাড, পেন বার করেছি। হঠাৎ দেখি, একটি বাচ্চা ছেলে মৃতদেহের কাছে গিয়ে মুখ থেকে সাদা চাদরটা সরিয়ে দিল। আর মৃতদেহটার মুখে হাত বোলাতে বোলাতে 'বাবা, বাবা' বলে ডুকরে কেঁদে উঠল।" সাংবাদিকতার জীবনে অনেক কঠিন ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে, কিন্তু এটা দেখে তাঁর নিজের চোখেও জল এসে গিয়েছিল। বেশ কয়েক মিনিট কথা বলতে পারেন নি। তারপরেই মোবাইল দিয়েই কয়েকটা ছবি তোলেন শিভ সানি। টুইটারে নিজের একাউন্টে ছবিটি পোস্ট করেন শিব সানি আরো পড়তে পারেন: সরকারের হুমকিতে দেশ ছেড়েছি: সুরেন্দ্র সিনহা বিদেশে বসে 'মনগড়া বই' লিখেছেন সিনহা: কাদের 'বাংলাদেশ এখনো জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে' পরের দিন কাগজে ওই একটা ছবি তাঁর প্রতিবেদনের সঙ্গে বেরয় নি কারণ মৃতদেহ আর ছোট ছেলেদের ছবি ছাপা অনুচিত। কিন্তু তারপরেও সেই দৃশ্যটা সানিকে ভাবাচ্ছিল। তখনই তিনি ছবিটি টুইট করেন গোটা ঘটনা জানিয়ে। সানি বলছিলেন, "একটা বাচ্চা ছেলেকে বাবার মৃতদেহের সামনে ওইভাবে কাঁদতে দেখে বহু মানুষের মনকে নাড়া দেয় সঙ্গে সঙ্গে। অনেকে যোগাযোগ করে সাহায্য দেওয়ার কথা বলতে থাকেন। এঁদের মধ্যে নামীদামী ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে পাকিস্তান-বাংলাদেশ বা অন্য দেশেরও বহু সাধারণ মানুষ রয়েছেন। " "আমি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাঁদা তুলতে শুরুর উদ্যোগ নিই অনলাইনেই। কেউ যেমন ৫০ হাজার রুপি দিয়েছেন, তেমনই অনেকে আছেন যাঁরা ১৫-২০ রুপির বেশী দিতে পারেন নি। হয়তো ওইটুকুই তাঁদের ক্ষমতা। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও আরেকটি পরিবারের বিপদে তাঁরাও এগিয়ে এসেছেন।" অনিলের মৃত্যুর কয়েকদিন আগে দিল্লিতেই পাঁচজন মারা গেছেন একই ভাবে। সাফাই কর্মচারীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন বেজওয়াদা উইলসন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "অনিল নামের ওই সাফাই কর্মচারীর জন্য বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন, বহু টাকা চাঁদা উঠেছে - খুবই ভাল উদ্যোগ। কিন্তু যে ছোট ছেলেটিকে কাঁদতে দেখে সবার মন ভিজে উঠেছে, সেরকম কিন্তু শয়ে শয়ে আরও শিশু রয়েছে -- তাদের বাবারাও এইভাবে নোংরা পাঁক পরিষ্কার করতে গিয়েই মারা গেছেন.. সেই বাচ্চাগুলির কেউ শিশুশ্রমিক হয়ে গেছে, কাউকে বাবাদের মতো নদর্মায় নামতে হচ্ছে, অনেককে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছে কাজের খোঁজে।" গত দুই দশকে ১৭৬০ জন মানুষ মারা গেছেন নদর্মার নোংরা বা টয়লেট পরিষ্কার করতে গিয়ে। যদিও সাফাই কর্মচারীদের জন্য যে সাংবিধানিক কমিশন রয়েছে, তারা বিভিন্ন ইংরেজী এবং হিন্দী কাগজ থেকে খবর সংগ্রহ করে বলছে ২০১৭ সাল থেকে ১২৩ জন মানুষ নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে মারা গেছেন। তবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বলছে এই সংখ্যাটা আরও অনেক বেশী। তাদের হিসাবে শুধুমাত্র দিল্লিতেই ২০১৬ থেকে ২০১৮ - এই দুবছরে ৪২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে। যদিও এই কাজে কোনও মানুষকে নিয়োগ করা ১৯৯৩ সাল থেকেই বেআইনী। আর শহরাঞ্চলে কর্পোরেশন বা পুরসভাগুলির পয়প্রণালী পরিষ্কার করতে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে তার ভেতরে কোনও মানুষকে নামিয়ে দেওয়া অথবা বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের জন্য কোনও ব্যক্তিকে কাজে লাগানোটাও ২০১৩ সাল থেকে বেআইনী। কিন্তু ঘটনাচক্রে ভারতের সোশিও-ইকনমিক-কাস্ট সেনসাসে দেখা যাচ্ছে গ্রামীন এলাকায় ১,৮০,০০০ পরিবার আছে, যাদের অন্তত একজন করে সদস্য এই কাজ করেন। আবার সর্বশেষ জনগণনায় দেখা যাচ্ছে ২১ লক্ষ এমন বাড়ি রয়েছে, যেখান থেকে টয়লটের বর্জ্য সরাসরি উন্মুক্ত নালায় গিয়ে পড়ে অথবা সেইসব বাড়িতে এমন টয়লেট রয়েছে, যেগুলি পরিষ্কারের জন্য কোনও মানুষকেই নিয়োগ করতে হবে। এতেই বোঝা যাচ্ছে যে কী সংখ্যায় সাফাই কর্মীরা রয়েছেন ভারতে। আর সবক্ষেত্রেই তাদের দৈনিক মজুরীর ভিত্তিকে কাজে লাগানো হয়। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে এসব কাজের জন্য নিয়োগ না করা হলেও তাদের দিয়ে কাজ করানো চলছেই বেআইনীভাবেই। আর যেসব নারী-পুরুষ এই কাজে যুক্ত, তাঁরা মূলত বাল্মিকী দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। এঁদের তপশিলী জাতি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও রামায়নের রচয়িতার নাম থেকেই এই গোষ্ঠীর নামকরণ বলে মনে করেন অনেকে, তবে এঁদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে থাকেন বেশীরভাগ মানুষই। যে বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে যান, সেখানে জল পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয় না অনেক ক্ষেত্রে। টুইটারে ছবিটি দেখে চাঁদা দিতে এগিয়ে আসেন অনেকেই গলা পর্যন্ত পাঁকের মধ্যে নামানোর আগে এঁদের না দেওয়া হয় কোনও রকম সুরক্ষা সরঞ্জাম, না রয়েছে এঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে কারও চিন্তাভাবনা। ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে অতি বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে কাউকে নেমে গিয়ে সেখান থেকে বালতিতে করে ময়লা তুলে আনার কাজটা অতি বিপজ্জনক বলেই ধরা হয়। ম্যানহোলে নামার আগে এই সাফাইকর্মীরা একটা দেশলাই কাঠি ফেলে দিয়ে দেখে নেন যে আগুন ধরে যাচ্ছে কী না। আগুন জ্বলে উঠলে তাঁরা বুঝে যান যে বিপজ্জনক গ্যাস রয়েছে। আবার ম্যানহোলের ঢাকনা খুলতে গিয়ে যদি আরশোলা বেরিয়ে আসে, তাহলে এঁরা ধরে নেন যে গ্যাসের মাত্রা নিশ্চই বিপজ্জনক নয় - তাহলে আরশোলাগুলো জীবিত থাকত না। ড. আশিস মিত্তল নামের এক চিকিৎসকের দুটো সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে সাফাই কর্মচারীদের গড় আয়ু জাতীয় গড় আয়ুর থেকে অন্তত দশ বছর কম। এদের বয়স বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ৬০ ও পেরয় না। এরা যখন ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে নীচে নামেন, তখন সেখানে মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডের মতো গ্যাস মিশে বিষাক্ত করে তোলে। এবং বেশীরভাগ মৃত্যু হয় ওই গ্যাস নি:শ্বাসের সঙ্গে শরীরে যাওয়ার সাথে সাথেই। এই কাজে যন্ত্র ব্যবহার করা শুরু হয়েছে ঠিকই, তবে তা খুবই অপ্রতুল। সেই যন্ত্র কিনতে যত অর্থ ব্যয় হয়, তার তুলনায় সাফাই কর্মচারীদের খুবই কম টাকা দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। এবং কোনও ক্ষেত্রেই কোনওরকম প্রোটেক্টিভ গিয়ার, অর্থাৎ নি:শ্বাস নেওয়ার মুখোশ, গ্যাস চিহ্নিত করার যন্ত্র বা শরীর ঢাকা পোষাক, গামবুট কিছুই দেওয়া হয় না। মি. উইলসনের কথায়, "এত বড় সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সরকার প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় প্রকল্প স্বচ্ছ ভারত মিশনের অধীনে শুধু টয়লেট বানানোর দিকেই নজর দিচ্ছে। কিন্তু সেইসব টয়লেট তো পরিষ্কার করতে হবে নারী সাফাই কর্মচারীদের। এই দিকে কেউই নজর দেয় না। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয় না।" শিভ সানি বলছিলেন, তিনি ছবিটি টুইট করার পর থেকে দুদিনে এখনও পর্যন্ত ৫১ লক্ষ রুপি চাঁদা উঠেছে। তিনি ফিরে গিয়েছিলেন পরিবারটির কাছে - ওই মৃত সাফাই কর্মীর স্ত্রী বা তাঁর ১১ বছরের ছেলে আর ৭ এবং ৩ বছরের মেয়ে - কেউই সম্ভবত এখনও বুঝতেই পারে নি কত অর্থ তাঁদের জন্য জমা হয়েছে! তবে যে বাচ্চা ছেলেটিকে ছবিতে কাঁদতে দেখা গেছে, সে এখন ভুলে রয়েছে নতুন উপহার পাওয়া একটা সাইকেল নিয়ে। ওদের তিন ভাই বোনের ভবিষ্যতের জন্য, শিক্ষার জন্য ব্যাঙ্কে বেশীরভাগ অর্থই ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়েছে। আর চাঁদার অর্থ থেকেই এক কামরা বাসাটার বাকি পড়ে থাকা তিনমাসের ভাড়াও মেটানো হয়েছে।
news-48049831
https://www.bbc.com/bengali/news-48049831
ইয়াবা আসক্তি: 'আমার মাথা একেবারে খালি হয়ে যায়, আমি ভেঙ্গে পড়ি'- বলছেন একজন তরুণ
বিবিসির লিন্ডা প্রিসলির প্রতিবেদন
বাংলাদেশের অনেক তরুণের জন্য ভয়াবহ আসক্তি হয়ে উঠেছে ইয়াবা বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে- যে দ্রব্যটি তৈরি হয় মেথাম্ফেটামিন এবং ক্যাফেইনের সংমিশ্রণে। লাল বা গোলাপি রঙের ট্যাবলেট আকারের এই মাদকটি খুব সস্তায় বিক্রি হয়। কর্তৃপক্ষও এটি দমন করতে শক্ত পন্থা বেছে নিয়েছে, যেখানে অনেক ব্যক্তিকে তথাকথিত 'ক্রসফায়ারের' নামে হত্যা করা হয়েছে। ''আমি একাধারে সাত, আট বা দশ দিন পর্যন্ত জেগে থাকতে পারি। আমি সকালে ইয়াবা নেই, দুপুরে একবার নেই, আবার বিকালে, এরপর মধ্যরাতে একবার নেই। ফলে না ঘুমিয়ে আমি সারারাত কাটিয়ে দিতে পারি।'' মোহাম্মদ একজন ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তি। একাধারে কয়েকদিন জেগে থাকার পর তিনি শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়েন। ''আমার মাথা একেবারে খালি হয়ে যায়, আমি যেন একেবারে ভেঙ্গে পড়ি। দুইদিন বা তিনদিন পরে আমি জেগে উঠে একটু খাই, তারপর আবার বিছানায় চলে যাই। তখন যদি আমার কাছে ইয়াবার একটা টুকরোও থাকে, আমি সেটাকে আবার নিতে চাই।'' ঢাকায় কাজ করার সময় মোহম্মদের ইয়াবা খাওয়ার অভ্যাস শুরু হয়। আরো পড়ুন: ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন খেলে কী হয় 'টেলিফোন করলেই পৌঁছে যায় ইয়াবা' বাংলাদেশে 'ইয়াবা যুগ': মাদকের বাজার কতটা বড়? মাদক নিয়ন্ত্রণ: সরকারি পদক্ষেপ কি কাজে লাগছেনা? টেকনাফ সীমান্ত নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা আসে ''আমাদের মূল ব্যবসা হতো জাপানের সঙ্গে, সুতরাং সময় পার্থক্যের কারণে আমাদের রাত জেগে কাজ করতে হতো। আমার একজন সহকর্মী ইয়াবার কথা বলেন। তিনি বলেন, যদি আমি এটা নেই, তাহলে তা আমাকে জেগে থাকতে সাহায্য করবে আর আরো উদ্যমী করে তুলবে।'' প্রথমে তার সহকর্মীর পরামর্শ মতোই সুবিধা পেতে শুরু করেন মোহাম্মদ। কিন্তু তা ছিল খুবই স্বল্পস্থায়ী। তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন এবং একপর্যায়ে নিজেকে ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থায় চলে যান। ''প্রথম দিকে ইয়াবার অনেক ইতিবাচক সুবিধা পাওয় যায়, এটি খেলে অনেক কিছুর সুবিধা বেড়ে যায়,'' বলছেন ড. আশিক সেলিম, মাদকাসক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একজন মনোরোগবিদ। ''আপনি সামাজিকভাবে অনেক সক্রিয় হয়ে উঠবেন......গান পছন্দ করবেন, সিগারেট এবং যৌনতাও। বাংলাদেশে যৌনতার সঙ্গে ইয়াবার একটি অস্বাস্থ্যকর সংমিশ্রণ ঘটানো হয়-আপনি অনেকক্ষণ জেগে থাকতে পারবেন, বেশি শক্তি থাকবে।'' ''আপনি যদি ইয়াবা নেয়া বন্ধ করে দেন, তাহলে হয়তো মদ বা হেরোইনের মতো কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না, কিন্তু এটা এমন এটি মাদক যার ওপর আপনি নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। এটাই হচ্ছে এই মাদকের সবচেয়ে বিপদজনক দিক।'' মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রী বাংলাদেশে ২০০২ সালে প্রথম ইয়াবার ব্যবহার শুরু হয়, এরপর থেকে তা বাড়ছেই। মিয়ানমারে তৈরি হওয়া এই মাদকদ্রব্যটি দেশের দক্ষিণ পূর্বের নাফ নদী পার হয়ে চোরাচালান হয়ে বাংলাদেশে আসে। এই নদীর তীর জুড়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর এসে আশ্রয় নিয়েছে। ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসব ক্যাম্পে বসবাস করছে- যাদের অনেককে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছে মাদক কারবারিরা। এদের মধ্যে নারীরাও রয়েছে, যারা এমনকি যৌনাঙ্গের ভেতর ভরে ইয়াবা চোরাচালান করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে অপার সম্ভাবনাময় একটি ব্যবসা দেখতে পেয়েছেন মাদক কারবারিরা। বিশ্বের দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল অর্থনীতির একটি দেশ বাংলাদেশ- সুতরাং এখানে অনেক বেশি ইয়াবা চোরাচালান করে এবং সস্তায় বিক্রি করে একটি বাজার তৈরি করেছে। অর্থনীতি যতই সমৃদ্ধ হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন সেই সঙ্গে ইয়াবার ব্যবহারও দিনে দিনে বাড়ছে। ''আমি এর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম,'' বলছেন মোহাম্মদ। তার স্ত্রী নুসরাত তখন সদ্য মা হয়েছেন। তিনি বলছেন, সে সময় মোহাম্মদের আচরণ সম্পর্কে কোন ধারণা করা যাচ্ছিল না। ''সে বাড়িতে এসে সবকিছুর জন্য আমাকে দায়ী করতে লাগলো, এমনকি খাবার, বন্ধু, আমার চাকরি..সবকিছুর জন্য। এটা ছিল খুবই অস্বাভাবিক, এটা তার সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না।'' বলছেন নুসরাত। একদিন তিনি বাড়িতে বেশ কয়েকটি ইয়াবা ট্যাবলেট খুঁজে পান। এ নিয়ে তিনি মোহাম্মদকে প্রশ্ন করেন। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: যেসব খাবারের মাধ্যমে আপনার দেহে ঢুকছে ক্ষতিকর সুপারবাগ ভারতের নির্বাচনে কেন পুরোনো মহাকাব্যের আধিপত্য? পুতিন-কিম শীর্ষ বৈঠকে যা নিয়ে আলাপ হলো আকাশ থেকে পড়া পরমাণু বোমার সন্ধানে ইয়াবা কক্সবাজারে পাহারা ও তল্লাশি বসানো হলেও চোরাচালান রোধ করা যাচ্ছে না ''সে আমার সঙ্গে চিৎকার করে। সে যেন চিকিৎসা নিতে রাজি হয় সেই চেষ্টা করেছিলাম আমি, কিন্তু সে রাজি হয়নি। আমার মনে হচ্ছিল, সে যে কোন কিছুই করে ফেলতে পারে, সে আমাদের হত্যাও করে ফেলতে পারে।'' বলছেন নুসরাত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আশিক সেলিম বলছেন, ইয়াবা বাংলাদেশে সহজেই সুযোগ করে নিতে পেরেছে, যে দেশে মদ্যপান সহজলভ্য নয় এবং যা বিরূপ চোখেও দেখা হয়। ''একজন তরুণ আমার কাছে এসেছিল, যিনি চমৎকার একটি জীবনযাপন করতেন। তারা বাবা-মা খুবই রক্ষণশীল। যখন তিনি বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যেতেন, তার বন্ধুরা বিয়ার খেলেও তিনি সেটা খেতে পারতেন না, কারণ তাহলে মুখে মদের গন্ধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন না। পরবর্তীতে তিনি ইয়াবা খেতে শুরু করেন। যেহেতু এটার কোন গন্ধ নেই বা বাইরে থেকে বোঝা যায় না, তাই তিনি এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন।'' কিন্তু ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা খুব আরামে খুব বেশিদিন কাটাতে পারেননি। এই মাদকের বিস্তার থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে বাংলাদেশের সরকার। তারা ইয়াবা রাখার জন্য জরিমানার পাশাপাশি 'ক্রসফায়ারের' মতো ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। আবদুর রহমান, যার সন্তান 'ক্রসফায়ারে' নিহত হয়েছে ইয়াবা ব্যবসার মূল কেন্দ্র কক্সবাজার জেলার টেকনাফের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলছেন, ''একদিন যখন আমি নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাসায় ফিরছি, আমার বাড়ির সামনে অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তারা ঘরে ঢুকে আমার ছেলে আবুল কালামকে বাথরুম থেকে ধরে নিয়ে যায়। আমি তাদের বললাম,দয়া করে তাকে ছেড়ে দিন, সে কি করেছে? একজন পুলিশ সদস্য আমাকে বললেন, আপনি চুপ করে থাকুন, না হলে আপনাকে গুলি করে দেবো।'' এর আগে মানব চোরাচালানের জেল খাটা আবুল কালামকে পাঁচদিন থানায় আটকে রাখা হয়। এরপর তারা বাবা একটি খারাপ সংবাদ শুনতে পেলেন। ''পুলিশ আমাকে জানালো যে, আমার ছেলে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।'' তিনি বলছেন। ইয়ারা খোঁজে প্রায়ই পুলিশ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালায় থানা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ৯ই জানুয়ারি নিহত হয় আবুল কালাম। পুলিশ জানিয়েছে সে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সে সময় আরেকজন ব্যক্তিও নিহত হয় এবং তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার ইয়াবা আর পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৮ সালে সরকারের মাদক বিরোধী অভিযানে প্রায় ৩০০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। তবে ইচ্ছে করে গুলি করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন। ''অনেক সময় আমরা একটি অপারেশনে যাই, যেখানে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মোকাবেলা করতে হয়। আমি মনে করি, এটা সেরকম একটি ঘটনা ছিল।'' ''কাউকে গ্রেপ্তারের পর আমরা থানায় নিয়ে আসি। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য সংগ্রহের পর আমার অপারেশন শুরু করি। আপনি যখন অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন, অনেক সময় তারা পুলিশের সঙ্গে লড়াই করে। সে হয়তো সেরকম ঘটনায় নিহত হয়েছে।'' বলছেন মি. হোসেন। পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন কিন্তু সবগুলো ঘটনাতে একই রকম বর্ণনা পাওয়া যায়। সেটা কেন? ''সবগুলো ঘটনায় হয়তো একরকম, তখন পরিস্থিতিওতো একই হবে। সুতরাং আমি কিভাবে আরেকরকম বর্ণনা দেবো?'' এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে টেকনাফে একটি বিরল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পুলিশ। উৎসবমুখর পরিবেশে হাজার হাজার মানুষের সামনে সেখানে ১২০জন স্থানীয় বাসিন্দা- যাদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ আছে, তারা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপির আত্মীয়স্বজন এবং অন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। অস্ত্র ও সাড়ে তিনলাখ ইয়াবাও জমা দেয়া হয়। সেই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, ''আপনাদের আজকের উপস্থিতি প্রমাণ করছে যে, টেকনাফ ও সারাদেশ থেকে আমরা ইয়াবা দূর করে দিতে পারবো।'' তবে আত্মসমর্পণকারী শাখাওয়াত আলমের ভাই মোহাম্মদ আলমগীর বলছেন, জীবন বাঁচাতে তার ভাই আত্মসমর্পণ করেছেন। ''যাদের 'ক্রসফায়ার' করা হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। আমার ভাই যখন সেটি জানতে পেরেছে, সে খুবই ভয় পেয়েছিল, সে কারণে আত্মসমর্পণ করেছে।'' ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ইয়াবা ব্যবসায়ের অভিযুক্ত ১২০জন ব্যক্তি তবে কোন প্রকার চাপ সৃষ্টির অভিযোগ নাকচ করে দিলেন পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন। ''আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এখানে কোন 'ক্রসফায়ার' লিস্ট নেই। আমরা সবসময়েই তাদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করি।'' তিনি বলছেন, ফেব্রুয়ারির আত্মসমর্পণের পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ইয়াবার ব্যবসা ৭০% কমে গেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ইয়াবা আটক করে। এই অবৈধ ব্যবসার অর্থমূল্য প্রায় একশো কোটি ডলার। বাংলাদেশে কত মাদকাসক্ত রয়েছে, তার কোন নির্ভরযোগ্য জরিপ নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এই সংখ্যা হতে পারে প্রায় ৪০ লাখের মতো, কিন্তু বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে সেটি হবে প্রায় সত্তর লাখ। এদের অন্তত এক তৃতীয়াংশ ইয়াবা আসক্ত। ইয়াবা আসক্তির এক পর্যায়ে মানসিক সমস্যা হতে শুরু করে মোহাম্মদের। ''আমি সবসময়েই সংশয়ে থাকতাম এবং মনে হতো যে কেউ একজন আমার কথা শুনছে, কেউ আমার দিকে নজর রাখছে''- বলছেন মোহাম্মদ। মোহাম্মদ সুস্থ হওয়ার পর আবার তাদের পরিবারে শান্তি ফিরেছে যখন তার জীবন একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পথে, তখন জোর করে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয় মোহাম্মদকে। তার পরিবারের অনুরোধে একদল লোক এসে তাকে জোর করে সেই কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তিনি চার মাস চিকিৎসা নেন এবং প্রায় একবছর ধরে সুস্থ রয়েছেন। এখন সেই ক্লিনিকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করছে। ''এখন আমি মনে করি, সে আবার চাকরি করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে,'' বলছেন নুসরাত, মোহাম্মদের স্ত্রী। ''কিন্তু আমি তাকে কখনোই চাপ দেবো না। সে যদি কখনো কোন সাহায্য চায়, সেজন্য এখানে আমরা সবাই রয়েছি।''
news-53405880
https://www.bbc.com/bengali/news-53405880
দক্ষিণ চীন সাগর: বিতর্কিত এলাকা নিয়ে আমেরিকার সাথে চীনের নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে
এবছরটা চীনের জন্য কঠিন সময়। এ পর্যন্ত, এ বছর চীনকে ইতোমধ্যেই যেসব বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাস, আমেরিকার সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ, হংকং-য়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন এবং নানা অর্থনৈতিক টালমাটাল। এসবের সাথে এখন যোগ হয়েছে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে সম্প্রতি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা বড়ধরনের উত্তেজনা।
আমেরিকা আগেও চীনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক আয়োজনের অভিযোগ এনেছে (ফাইল চিত্র) আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও প্রথমবারের মত বলেছেন দক্ষিণ চীন সাগরের যেসব অঞ্চল, চীন নিজের বলে দাবি করছে তা ''সম্পূর্ণ অবৈধ''। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন সিঙ্গাপুরে কৌশলগত একটি পরামর্শ সংস্থার পরিচালক ও সামরিক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নেইল। দক্ষিণ চীন সাগর গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল পথ। তবে বহু বছর ধরে এই সাগরের ছোট ছোট অসংখ্য দ্বীপ, যার অনেকগুলোই প্রবাল দ্বীপ, প্রবালপ্রাচীর এবং দ্বীপগুলোর সম্পদের মালিকানা দাবি করে আসছে ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ এবং অনেকদিন ধরেই এই সাগর ওই অঞ্চলে একটা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন এই এলাকায় তাদের মালিকানার দাবি নিয়ে ক্রমশ আরও বেশি সোচ্চার হয়ে উঠেছে। দেশটি দাবি করছে বিতর্কিত এই এলাকাটি কয়েক শতাব্দী ধরে চীনের অংশ এবং চীন তাদের দাবির সমর্থনে সেখানে সামরিক উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে আরও জোরদার করেছে। আমেরিকার প্যাসিফিক কমান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস একসময় এটাকে উল্লেখ করেছিলেন "বালুর সুবিশাল প্রাচীর" হিসাবে। তিনি বলেছিলেন চীনের ঐতিহাসিক প্রাচীর- গ্রেট ওয়াল- যেমন চীনা ভূখণ্ডকে সুরিক্ষত রাখার জন্য তৈরি হয়েছিল, তেমনি সাগরে ওই এলাকাকে সুরক্ষিত করতে চীন জায়গাটি ঘিরে তৈরি করেছে বালুর প্রাচীর। আকাশ থেকে তোলা দক্ষিণ চীন সাগরে ফিয়েরি ক্রস রিফের ছবি। এই প্রবালপ্রাচীর স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন এবং আমেরিকার মধ্যে তীক্ষ্ম বাদানুবাদ হলেও, দুই দেশ এই বিরোধপূর্ণ এলাকা নিয়ে তাদের মতভেদ এতদিন পর্যন্ত, এক অর্থে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সংঘাতের মধ্যেও ওই এলাকার মালিকানা নিয়ে আঞ্চলিক বিবাদে কোন পক্ষ নেয়নি আমেরিকা। তারা শুধু ওই অঞ্চলে তাদের জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা দাবি করে এসেছে। এর মধ্যেই এসেছে কোভিড-১৯ মহামারি। এই করোনা প্রাদুর্ভাব চীন প্রথমদিকে কীভাবে মোকাবেলা করেছে তা নিয়ে আমেরিকার সমালোচনা চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। চীনকে নিয়ে আমেরিকার সমালোচনা এবং মি. পম্পেও-র মন্তব্যকে আপাতদৃষ্টিতে বেশ কিছু পশ্চিমা নেতাকে সমর্থন করতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে দুই শক্তিধর দেশের মধ্যেকার উত্তাপ এখন ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ চীন সাগরেও। উদ্বেগজনক একটা সময়ে সামরিক উত্তেজনা এপ্রিলের গোড়ায় চীনা উপকূলরক্ষীদের একটি জাহাজ প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের কাছে ভিয়েতনামের একটি জেলে নৌকা ডুবিয়ে দেয়। চীন এবং ভিয়েতনাম দুটি দেশই এই দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা দাবি করে থাকে। এর পরপরই বোর্নিও উপকূলের কাছে মালয়েশিয়ার একটি তেল উত্তোলন প্রকল্পের কাজে বাধা দেয় চীনা নৌ বাহিনী ও উপকূল রক্ষীবাহিনীর অধীনস্থ একটি চীনা পর্যবেক্ষণ জাহাজ। এর পরই আমেরিকান নৌবাহিনীর একটি রণতরী এবং অস্ট্রেলিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ কাছাকাছি সাগরে মোতায়েন করা হয়। আমেরিকা প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ এবং স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জে তাদের নৌবাহিনীর আরও দুটি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী জাহাজ পাঠালে উত্তেজনা আরও বাড়ে। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: বিপজ্জনক চেহারা নিচ্ছে চীন-মার্কিন বৈরিতা, পরিণতি কী? চীন আমেরিকা ঠাণ্ডা লড়াই 'বিশ্বের জন্য ভাইরাসের থেকে বড় হুমকি' বিশ্বে কি নতুন আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হলো? যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হঠাৎ চীনের 'আপোষের বার্তা' কেন দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা ''আগ্রাসনের'' বিরুদ্ধে ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে ২০১৯ সালে। মাত্র কিছুদিন আগেই চীন, দক্ষিণ চীন সাগরের একটা অংশ বন্ধ করে দেয় প্যারাসেল দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রে নৌবাহিনীর মহড়া চালানোর জন্য। আমেরিকা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলে, চীন বিতর্কিত ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন কর্মকাণ্ড না চালানোর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। উত্তরে আমেরিকা এলাকায় তার নৌ-শক্তির প্রদর্শন আরও জোরদার করে আরও রণতরী সেখানে মোতায়েন করে, যা চীনকে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ করে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে এই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ছিল খুবই স্পষ্ট। আমেরিকান নৌবাহিনী ওই এলাকায় তাদের উপস্থিতি এরপর আরও জোরদার করেছে, যার মাধ্যমে দক্ষিণ চীন সাগরে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মধ্যে বৈরিতা দ্রুত বেড়েছে, এবং একটা কিছু ঘটার আশংকা তৈরি হয়েছে। চীন ও ভারতের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্তে সম্প্রতি যে প্রাণঘাতী সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে, হংকংয়ে যেভাবে চীন জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারি করেছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন দক্ষিণ চীন সাগরে কোনরকম হুমকি দেখা দিলে তা মোকাবেলায় চীন হয়ত সংযত আচরণ নাও দেখাতে পারে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের লক্ষ্য কী? চীন মনে করে দক্ষিণ চীন সাগর তার সমুদ্র এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। হাইনান দ্বীপে চীনের পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যে সামুদ্রিক ঘাঁটি রয়েছে শুধু সে কারণেই নয়, চীনের বিশাল বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রকল্প, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসাবে সিল্ক রোডের সামুদ্রিক পথও এই সাগর এলাকা। প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জে চীনা পতাকার সামনে চীনা পর্যটকরা ফলে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য এই দক্ষিণ চীন সাগর নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা চীনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোতে উন্নয়ন ও বসতি তৈরির বড়ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। দ্বীপগুলোর প্রশাসনিক কাঠামো চীন উন্নত করেছে। প্যারাসেলের দ্বীপগুলোতে ছোট ছোট জেলে গ্রামগুলোতে আধুনিক আবাসন তৈরি করে দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক স্কুল, ব্যাংক, হাসপাতাল এবং মোবাইল যোগাযোগের ব্যবস্থা বসিয়েছে। মূল ভূখণ্ড থেকে পর্যটকরা নিয়মিত প্রমোদতরীতে দ্বীপগুলো ভ্রমণে যায়। উন্নয়নের দ্বিতীয় ধাপে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ অধিগ্রহণের কাজও চীন এগিয়েছে। প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। স্প্র্যাটলির ছোট ছোট প্রবালদ্বীপে গত ছয় বছরে চীন নৌ প্রকৌশল ও সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিমান অবতরণ ক্ষেত্র, নৌবাহিনীর রসদের মজুদ ও বিমান ঘাঁটি, গোলবারুদের বাঙ্কার, রেডার ক্ষেত্র এবং ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপক সরঞ্জাম। উপগ্রহ ও বিমান পর্যবেক্ষণ ক্যামেরায় এসব স্থাপনার ছবি, সেইসাথে হাসপাতাল, খেলাধুলার কেন্দ্র ও বিভিন্নধরনের ভবনের ছবি ধরা পড়েছে। কোন কোন প্রবাল দ্বীপে গড়ে উঠেছে ফল, সব্জি ও পশু খামার। এমনকী একটি প্রবাল দ্বীপের সামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্রে চীনা বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিও স্থাপন করা হয়েছে ২০১৯এর জানুয়ারি মাসে। এসব প্রবাল দ্বীপের বাসিন্দারা ফাইভ-জি মোবাইল ডেটার সুবিধা ভোগ করেন। জেলেদের হাতে এখন পৌঁছে গেছে উন্নত মাছ ধরার নৌকা, তাদের জীবন যাপন সেখানে অনেক স্বচ্ছল হয়েছে। এক কথায় দক্ষিণ চীন সাগরের এই দ্বীপগুলোর চেহারা গত ছয় বছরে অনেক বদলে গেছে। আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগরে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে সেখানে নৌ মহড়া চালায় বলে জানায় আমেরিকা কী করতে চাইছে এসব দ্বীপের উন্নয়নে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ থেকে এটা স্পষ্ট যে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই সমুদ্র এলাকায় চীন তার মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য গত কয়েক বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছে। সেখান থেকে ফেরা চীনের জন্য এখন একরকম অসম্ভব। আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগরে সম্প্রতি যে নৌ মহড়া চালিয়েছে, তার উদ্দেশ্য, আমেরিকার যুক্তি অনুযায়ী, ছিল আন্তর্জাতিক ওই "সমুদ্রপথের স্বাধীনতা" সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু সম্প্রতি মি. পম্পেও ওই এলাকার ওপর চীনের দাবি "সম্পূর্ণ অবৈধ" বলে আনুষ্ঠানিকভাবে যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপটে যে প্রশ্নটা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তা হল আমেরিকা আগামীতে কী করতে চাইছে। শুধু ওই দ্বীপগুলোর মালিকানার দাবিদার দেশগুলোর সাথে হাত মেলানো নয়, মি. পম্পেও কি চাইছেন তাদের পাশাপাশি আরও বড় শক্তির দেশগুলোকে সাথে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে একটা কূটনৈতিক জোট গড়তে? সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে চীনের এই নতুন দ্বীপ রাজ্যগুলোকে গুঁড়িয়ে দেবার ক্ষমতা আমেরিকা অবশ্যই রাখে। কিন্তু তার অর্থ হবে চীনের সাথে সরাসরি যুদ্ধ বাধানো, যেটা চীন এবং আমেরিকা দুজনের কারোর জন্যই বাঞ্ছনীয় হবে না।
news-50845244
https://www.bbc.com/bengali/news-50845244
ক্যান্সারকে পরাজিত করা নারী ফটোগ্রাফার যেভাবে ছোট ভাইয়ের ক্যান্সার নিরাময়েও সহায়তা করলেন
কার্লি ক্লার্কের যখন ২০১২ সালে ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন সে নিজের শেষ দিনগুলোর ছবি তুলতে শুরু করে। সাত বছর পরে নিষ্ঠুর কাকতালীয় ঘটনার মতো তাকে নিজের ভাইয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কাজ শুরু করতে হয়, যখন তার ভাইও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী হিসাবে ছয়মাস ধরে যে কষ্টকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন কার্লি ক্লার্ক, সেই সময়ের নানা প্রোট্রেট ছবি তুলে রেখেছেন তিনি। ''আমার নিজের চুল আমার হাতে, কাপড়ে লেগে থাকতো আর বাথরুমে পড়ে থাকতো। মাথা ধোয়ার পরে চুল আঁচড়ালে চুল পড়া শুরু হয়ে যেতো।'' ''আয়নায় আমি দেখতে পেতাম, আস্তে আস্তে আমার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।'' একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী হিসাবে ছয়মাস ধরে যে কষ্টকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন কার্লি ক্লার্ক, সেই সময়ের নানা পোর্ট্রেট ছবি তুলে রেখেছেন তিনি। সবশেষে তিনি তার বাবাকে অনুরোধ করেন যেন তিনি তার মাথা থেকে শেষ চুলগুলো কেটে ফেলে দেন। তখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছর। ''আমার মাথা ভর্তি চুল ছিল। আর এখন আমাকে দেখতে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মতোই লাগে',' তিনি বলছেন। আরো পড়তে পারেন: আমেরিকার কংগ্রেসে অভিশংসিত হলেন ট্রাম্প ট্রাম্পের অভিশংসন: এরপর কী ঘটবে? ট্রাম্পের অভিশংসন: এরপর কী ঘটবে? ইমপিচমেন্ট কী, কেন ও কিভাবে করা হয়? কার্লি ক্লার্কের যখন ২০১২ সালে ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন সে নিজের শেষ দিনগুলোর ছবি তুলতে শুরু করে। এই ছবিগুলো তোলার ছয় মাস আগে কার্লি ক্যানাডার একটি স্বপ্নচারী মেয়ে ছিলেন, যিনি ভ্যাঙ্কুভারে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের প্রজেক্ট হিসাবে শহরতলীর দারিদ্রের নানা ছবি তুলছিলেন। তবে ২০১২ সালের পরের ছয়মাস ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার সমস্যার মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া থেকে অ্যাজমা। চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই লড়াইয়ের সময় তার ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু তিনি সেসব কিছুই আর গুরুত্ব দেননি। ''এই অসুস্থতা, তা যাই হোক না কেন, আমার জীবনধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে দেবো না,'' তিনি বলেছেন। আরো পড়ুন: ক্যান্সার নিয়ে যে সুখবর আসছে আগামী দিনগুলোয় কী করে বুঝবেন আপনার স্তন ক্যান্সার হতে পারে? ক্যান্সার চিকিৎসার সময় যেসব খাবার নিষেধ মুরগির ডিম থেকে পাওয়া যাবে ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আগে কার্লি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের প্রজেক্ট হিসাবে শহরতলীর দারিদ্রের নানা ছবি তুলছিলেন তিন মাস পরে কার্লি নিজের বুকের এবং শরীরের পেছন দিকে কষ্ট কমানোর জন্য আরো বেশি মরফিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যাতে তিনি একটু ঘুমাতে পারেন। বিশেষ যত্ন পাওয়ার জন্য ক্যানাডার চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতে, ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন কার্লি। সেখানে ২০১২ সালের মার্চে তার শরীরে হজকিন লিম্ফোমা নামের একটি বিরল ও আগ্রাসী ধরণের ক্যান্সারের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তার বাম দিকের ফুসফুস ও বুকের দেয়ালে আঙ্গুর আকৃতির একটি টিউমার বড় হয়ে উঠেছে। নিজের পাশাপাশি হাসপাতালের অন্যান্য ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ছবি তুলতে শুরু করেন কার্লি তার পরিবারের জন্য এই সংবাদ মেনে নেয়া ছিল কষ্টকর একটা ব্যাপার। ''আমার বাবা-মার মনে হলো, কেউ যেন তাদের পাকস্থলী কেটে বের করে নিয়েছে। আমাদের পরিবারে ক্যান্সারের খুব বেশি ইতিহাস ছিল না।'' ''আমার ছেলেবন্ধুও ভেঙ্গে পড়লো। সে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ইংল্যান্ডে চলে এলো আমার সঙ্গে থাকার জন্য।'' ''আমার জীবন যেন ধীর গতিতে চলতে শুরু করলো। ওষুধের পর ওষুধ, অন্তহীন পরীক্ষা, বিশাল সূচ, গলার ভেতর দিয়ে পাইপ ঢুকানো আর এসবের মধ্যে আশা করা যে একদিন এসব কষ্টের দিন শেষ হবে,'' বলছেন কার্লি। কার্লির বাম দিকের ফুসফুস ও বুকের দেয়ালে আঙ্গুর আকৃতির একটি টিউমার ধরা পড়ে। সে সময় পৃথিবী সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি, এবং নিজের সম্পর্কেও, পাল্টে যাচ্ছিল। সেসব সময় ছবিতে তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ''আমি ভাবলাম, সৃষ্টিশীল কিছুর মধ্যে ব্যস্ত হলে হয়তো এই কঠোর বাস্তবতা থেকে নিজেকে বের করে নিতে পারবো এবং আমার বর্তমান মানসিক আঘাত সামলে উঠতে পারবো,'' কার্লি বলছেন। রিয়েলিটি ট্রমা হচ্ছে তার আত্মছবির একটি ধারাবাহিক, যেখানে হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে তার জীবন পাল্টে যাওয়ার ছবি রয়েছে। কার্লি ক্লার্কের ওষুধপত্র ছোট বা বড় সাক্ষাৎ, যাই হোক না কেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে যখন তখন ট্রাইপড এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহারের স্বাধীনতা দিয়েছে। অনেক সময় চিকিৎসক এবং সেবিকারা তার জন্য ক্যামেরার শাটার টিপে দিয়েছে। কার্লি চেয়েছেন, তার কাজ যেন অন্যদেরও উৎসাহিত করতে পারে যাতে তারা চেহারায় ক্যান্সারের ছাপ পড়লেও সেটার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারেন। সেটা যেন তাদের পরিচয়কে মুছে ফেলতে না পারে। দুই মাসেই ১২ কেজি ওজন হারিয়েছিল কার্লি এবং তাকে নিয়মিত রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তখন তার ঘনঘন হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হয়ে পড়ছিল। সবচেয়ে খারাপ অবস্থার সময় তিনি প্রায়ই অচেতন বা ঘুমিয়ে পড়তেন, হাসপাতালের প্রায় সব খাবার খেতে অনীহা প্রদর্শন করছিলেন। কোন পড়াশুনা করতে পারছিলেন না। এমনকি নিজের ছবি তুলতে বা ছেলে বন্ধুকে ফোন করতেও ক্লান্ত লাগতো। কেমোথেরাপি নিচ্ছেন কার্লি ক্লার্ক তার কাশির সঙ্গে মাঝে মাঝে রক্ত বেরিয়ে আসতে শুরু করছিল। কিন্তু তারপর একদিন, প্রায় তিন মাসের কেমোথেরাপির পর, তার কাশি বন্ধ হয়ে গেল। তার অন্যান্য লক্ষণগুলো কমে গেল। তিনি ভাবলেন, চিকিৎসায় কাজ হতে শুরু করেছে। বায়োপসিতেও সেটা নিশ্চিত হওয়া গেল যে, ক্যান্সার হারতে শুরু করেছে। জীবন সম্পর্কে তার ধারণা আবার বদলে গেল। ''অসহায়ত্ব বদলে যেন আশাবাদ তৈরি হতো শুরু করলো- এবং তারপরে আনন্দ। যখন আপনি মৃত্যুর খুব কাছাকাছি আসবেন, তখন আপনি আপনার জীবন পুরোদমে কাটাতে চাইবেন।'' হাসপাতালের ওয়ার্ড কষ্টের স্থান থেকে যেন অন্য কিছুতে রূপান্তরিত হয়ে গেল। হাসপাতাল কর্মীরা বন্ধু হয়ে উঠছে, এমনকি কোন কোন রোগীও। সেখানে এক বয়স্ক দম্পতি ছিল, যাদের ভিন্ন ধরণের লিউকেমিয়া ছিল। অনেক সময় কার্লির সঙ্গে একই দিনে তাদেরও চিকিৎসা দেয়া হতো। একদিন এক স্বামী জানালেন, তার স্ত্রী আর ক্রিসমাস দেখতে পারবে না। 'আমি সেই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারা কখনোই আমার স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না।'' চিকিৎসা চলার সময় হাসপাতালে কার্লি ক্লার্ক কার্লি যত ভালো বোধ করতে শুরু করলো, ততই সে বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে শুরু করলো। তার ছেলেবন্ধু এবং বন্ধুরা তাকে প্রায়ই দুপুরের খাবারের জন্য বাইরে নিয়ে যেতো, অনেক সময় গাড়িতে করে সৈকতে বেড়াতে নিয়ে যেতো। সহপাঠী এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে সে বুঝতে শুরু করলো যে, তার ছবিগুলো অন্যান্য মানুষকে স্পর্শ করতে শুরু করেছে। কার্লি বলছেন, এসব ছবিতে শুধুমাত্র ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের শারীরিক বা মানসিক প্রভাবের বিষয়গুলো আসেনি, বরং, এটা যে ভীতিকর নয়, সেটাই ফুটে উঠেছে। ''যেসব ছবি আমি তুলেছিলাম, সেগুলো যখন দেখি, তা আমাকে শক্তি যোগায় কারণ এসব ছবিতে আমি জীবনপ্রান্তের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার ভেতরের একটা অংশ তখনো বলতো যে, আমি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবো।'' হাসপাতালের বিছানায় কার্লি, ওষুধে প্রতিক্রিয়ায় পিঠে লালচে র‍্যাশ অন্যান্য ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের এসব ছবি দেখাতে শুরু করেছেন কার্লি। তাদের অনেকের ছবির পোর্ট্রেটও তিনি তুলতে শুরু করেছেন। সে সময় অনেকের মুখে হাসিও ফুটে ওঠে। কার্লি বলছেন, ''এটা যদি সত্যি হয় যে, একটু হাসি বা সহায়তা, আন্তরিকতা একজন মানুষের আবেগকে পরিবর্তন করতে পারে, দিনকে উজ্জ্বল করতে পারে, তাহলে একটি ইতিবাচক ছবি একজনের জীবন পরিবর্তনেও সহায়তা করতে পারবে'।' ''এটা হয়তো কারো কারো মানসিক শক্তির কারণ হতে পারে এবং তাদের ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারে যাতে তারা কষ্টের ভেতর দিয়ে গেলেও আশাবাদ ধরে রাখতে পারেন যে, খুব তাড়াতাড়ি এই কষ্টের শেষ হবে। আমার মতে, সব কঠিন সময়ের মধ্যেই এটাই মানুষকে ধরে রাখে'' কার্লি বলছেন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন কার্লির চিকিৎসার সমাপ্তি হয়, তখন সে তার এই যাত্রাপথের পুরো সময়টা পেছন ফিরে যেন দেখতে পেলেন। ১৫টি রোল আর দেড়শ ছবি- এবং তিনি ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কেমোথেরাপির এক পর্যায়ে কার্লি ক্লার্ক এটা ছিল তার জীবনে উৎসব করার একটি সময়। কিন্তু যখন তারা বাড়িতে ফেরার সময় এলো, সেটা তার জন্য সহজ ছিল না। যখন তিনি তার অব্যবহৃত ওষুধপত্র বাক্সে ভরে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলেন, তখন বরং তার খারাপ লাগতে শুরু করলো যে, তিনি আর এই হাসপাতালে থাকছেন না। ''হাসপাতালের কর্মীরা এবং কোন কোন রোগী যেন আমার পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছিল। আমরা অনেক মাস ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলাম।'' কয়েকমাস পরে কার্লি ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান এবং ছেলেবন্ধুর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার তিনি বাড়িতে আসেন এবং বছরে দুইবার ফলোআপের জন্য হাসপাতালে যান। যতবার তিনি সেখানে গিয়েছেন, তিনি পুরনো সেই মানুষগুলোকে দেখতে পান। আরোগ্য হয়ে ওঠার পর কার্লি ক্লার্ক চিকিৎসা শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরে যখন একবার পরামর্শ নেয়ার জন্য সেই হাসপাতালে কার্লি গেলেন, সেখানকার অপেক্ষা কক্ষে একজন নারীকে দেখতে পেলেন। ইনি ছিলেন সেই নারী, যার সম্পর্কে তার স্বামী বলেছিলেন যে, তিনি ক্রিসমাস পর্যন্ত বাঁচবেন না। ''আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, যে ইনিই সেই নারী। সময়টা যেন সুন্দর হয়ে গেল।'' কার্লি তখন চারপাশের মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে রাখার একটা তাগিদ বোধ করলেন। ২০১৪ সালে তিনি কয়েকমাস ভারতে কাটান। তার সেই ভ্রমণের ছবি ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র পুরস্কার পেয়েছে। সেই বছরই তার রিয়েলিটি ট্রমার 'লাস্ট ডে অফ কেমোথেরাপি' ছবিটি পোর্ট্রেট অব ব্রিটেন অ্যাওয়ার্ডের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পায়। যারা সফলভাবে চিকিৎসা শেষ করতে পেরেছেন যখন তার ইমেইলের ইনবক্স নানা ধরণের পুরস্কার অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে ভরা আর তার ক্যালেন্ডারে নানা ছবি তোলার কর্মসূচীতে ভরপুর, তখন তিনি স্থানীয় হাসপাতাল সেন্ট উলফ্রেডে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জীবনের শেষ সময়কার ছবি তোলার একটি প্রজেক্ট গ্রহণ করলেন। তিনি চাইছিলেন, কীভাবে অন্তিম অসুস্থতা মানুষের মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে মানুষ তাদের শেষ সময়গুলো কাটায়, কীভাবে শেষ বিদায় জানায় বা শখ মেটায়, সেগুলোর তথ্যচিত্র তৈরি করতে। কিন্তু গতবছরের সেপ্টেম্বর মাসে তার ভাই, লি-এর একটি টেলিফোন পেয়ে তার সেই পরিকল্পনা থমকে যায়। তিনি বোনকে জানালেন, তাদের ছোটভাই জো-র হজকিন লিম্ফোমা ক্যান্সার ধরা পড়েছে- যে ক্যান্সার ছয় বছর আগে কার্লির হয়েছিল। ''আমরা দুজনেই টেলিফোনের দুই প্রান্তে কাঁদতে শুরু করলাম,'' কার্লি বলছেন। এই ছবির শিরোনাম 'লাস্ট ডে অব কেমোথেরাপি' জোর বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর এবং কলেজে ভর্তি হয়েছে। কার্লির তুলনায় তার ক্যান্সার প্রাথমিক দিকে ছিল কিন্তু কার্লির মতো সেও রোগ সনাক্ত হওয়ার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। ''সে তার পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল না, আমরা কেউই ছিলাম না,'' কার্লি বলছেন। যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছিল জো, মেয়েবন্ধুর সঙ্গে সময় কাটিয়ে, গাড়ি চালনা শিখে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে। কিন্তু যত বেশি সে হাসপাতালে যাতায়াত করতে শুরু করলো, তার পড়াশোনার ফলাফলে প্রভাব পড়তে শুরু করলো এবং বন্ধু সংখ্যাও কমে গেল। ভাইয়ের সঙ্গে আরো বেশি সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে এ বছরের শুরুর দিকে কার্লি জানতে চাইলেন, সে তার কিছু ছবি তুলতে পারে কিনা। জো রাজি হলেন। ভারতে ছবি তোলার সময় কার্লি ক্লার্ক জো-র বয়স যখন অনেক কম, তখন বাড়ি ছেড়েছিল তার চেয়ে ষোল বছরের বড় কার্লি। কিন্তু তার একমাত্র বোন হিসাবে সে সব সময়েই তার প্রতি দায়িত্ব বোধ করেছে। ছোট থাকার সময় কীভাবে ছবি আঁকতে হয়, সেটা সে শিখিয়েছে। পরবর্তীতে কার্লি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য লন্ডন চলে যায়, তখন মাঝেমাঝে তাদের দেখা সাক্ষাৎ হতো। প্রতিটি সাক্ষাতের সময় কার্লি দেখতে পেতো জো খানিকটা লম্বা হয়েছে, গলা খানিকটা ভারী হয়েছে। কিন্তু এখন হাসপাতালের ওয়ার্ডে ক্যামেরার পেছনে তাকিয়ে কার্লি বুঝতে পারছে, তার ছবিতে জো-র বড় ধরণের পরিবর্তন ফুটে উঠছে। তার সোনালী চুলগুলো পড়ে যেতে শুরু করেছে। কার্লি বুঝতে পারছিল, তার মতো মাথা একেবারে কামানোর আগে এভাবেই চুল পড়তে থাকবে। পরবর্তী ধাপে কেমোথেরাপির জন্য যে স্টেরয়েড দেয়া হচ্ছিল জোকে, তা তাকে দেখতে বয়স্ক করে তুলছিল এবং তার ওপর নাটকীয় পরিবর্তন এনে দিচ্ছিল। আরো বেশি পরামর্শ এবং সহায়তার জন্য কার্লির ওপর নির্ভর করতে শুরু করলো জো। রোগ সনাক্ত হওয়ার আগে কার্লি এবং জোর ছবি ছোট থাকার সময় কার্লিকে ক্যান্সারের ভেতর দিয়ে যেতে দেখেছে জো, সে জানতো এই রোগ তার বোনের ওপর কী প্রভাব ফেলেছে। সেই সঙ্গে সে এটাও দেখেছে যে, তার বোন ক্যান্সারকে হারিয়ে দিয়েছে। ''যখন তার ভেতর দ্বিধা বা সন্দেহ তৈরি হয়, তখন তার ভেতর এটা আশাবাদ তৈরি করে, ইতিবাচকভাবে ভাবতে শেখায় যে, আমি এই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলাম,'' কার্লি বলছেন। কারণ জো-র ক্যান্সার বেশি গুরুতর পর্যায়ে যায়নি। সুতরাং কার্লি ধারণা করছিল, তার আরোগ্য লাভ তাড়াতাড়ি হবে এবং তার ছবির পর্বও কম হবে। এই পর্বটি হবে একজন তরুণের জীবন, যে ক্যান্সার থেকে সেরে উঠেছে। কিন্তু জো-র প্রথম দফার কেমোথেরাপি সফল হয়নি। ''খবরটি সবাইকে হতভম্ব করে দেয়। আমাদের সম্পর্ক যেন বদলে যায়, এটা যেন অনেকটা অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে,'' কার্লি বলছেন। সিটি স্ক্যানের জন্য অপেক্ষা করছেন জো আবার ভেঙ্গে পড়ে জো। তাকে আরো চারমাসের কেমোথেরাপি আর কোষ প্রতিস্থাপনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তার যেসব চুল গজিয়েছিল, সেগুলো আবার পড়ে যায়। জো জানায়, সে আর আলোকচিত্রের বিষয় হতে চায় না - যে সিদ্ধান্তের কারণ উপলব্ধি করতে পারে কার্লি এবং সম্মান করে। তবে প্রায় একমাস পরে সে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। ''তার যে বিষয়টি আমার ভালো লাগে তা হলো সে ইতিবাচকভাবে ভাবছে। সে জানতো, কি ঘটতে চলেছে এবং তার চোখ দূর থেকেই ঝলমল করতে শুরু করেছে,'' কার্লি বলছেন। ''এটা প্রমাণ করে যে, সে কতটা বদলে গেছে এবং একজন তরুণ ক্যান্সার রোগী হিসাবে সে নিজের অবস্থাকে মেনে নিয়েছে'।' রঙিন চুল সহ জো চিকিৎসকের পরামর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে কোষ প্রতিস্থাপন চিকিৎসা বন্ধ করে দেয় জো। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় হচ্ছিল তার-শ্বাসকষ্ট হওয়া, চামড়ার সমস্যা, ডায়রিয়া ইত্যাদি। দাতা কোষ যদি গ্রহীতা কোষকে আক্রমণ করে তাহলে তার জীবন কঠিন করে দিতে পারে। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছুদিনের মধ্যে মে মাসে তার স্ক্যান রিপোর্ট পরিষ্কার এলো। এর মানে হলো তার উপশম পর্যায় শুরু হবে এবং সে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যেতে পারবে, লি-র বিয়েতে অংশ নিতে পারবে। পরবর্তী কয়েক মাস ধরে তার অবস্থা পর্যালোচনার জন্য নিয়মিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা হলো চিকিৎসকের সঙ্গে, কিন্তু তার ওজন যতটা বেড়েছিল সেটা আমার কমে গেল এবং সবশেষে আবার চুল গজাতে শুরু করলো। সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে জো-র কার্লি বলছেন, তার ছবি দেখে পরিষ্কার বুঝতে পারা যায় যে, যখন সে এবং জো'র শরীর ও মন একটি অন্তহীন গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিল, তখন তারা কী অবস্থার ভেতর দিয়ে গেছে। ''যেসব ছবি আমি তুলেছি, আমার এবং জোর, অনেক কষ্টের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দেয়। তবে সেই সঙ্গে সেগুলো এটাও মনে করিয়ে দেয় যে, এ ধরণের কঠোর সময়ের মধ্যে মানব শরীর কতটা সক্ষমতা প্রকাশ করতে পারে'' বলছেন কার্লি। ''এসব ছবি হয়তো সেই সময়ের খানিকটা আভাস তুলে ধরতে পারে। কিন্তু আমার আশা হলো দর্শকরা শুধুমাত্র ভীতিকর দিকটাই দেখবে না, বরং ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফেরার প্রতিশ্রুতি এবং এই রোগে ভোগা মানুষদের অসাধারণ আশাবাদের ব্যাপারটিও দেখতে পারবে।'' কেমোথেরাপি দেয়া হচ্ছে জোকে
news-54533981
https://www.bbc.com/bengali/news-54533981
আরব বিশ্ব: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা সাধারণ আরবদের মধ্যে হুহু করে বাড়ছে, জনমত জরিপের তথ্য
মিশরকে সাথে নিয়ে উপসাগরীয় অধিকাংশ আরব দেশ তুরস্ককে কোণঠাসা করার উপায় খুঁজতে তৎপর হলেও সিংহভাগ আরব জনগণ মনে করছে যে তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানই তাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তুরস্ক এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ব্যাপারে আরব দেশের সরকার ও জনগণের এই বিপরীত অবস্থান উন্মোচিত হয়েছে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত আরব জনমতের ওপর একটি ব্যাপক-ভিত্তিক জরিপের ফলাফলে। আরব বিশ্বের ১৩টি দেশে পরিচালিত হয় এই জনমত জরিপ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৮ শতাংশই মনে করেন, অন্য যে কোনো দেশের নীতির তুলনায় তুরস্কের মধ্যপ্রাচ্যে নীতি আরব স্বার্থের পক্ষে। ফিলিস্তিন ইস্যু তো বটেই, এমনকি সিরিয়া এবং লিবিয়ায় তুরস্কের বিতর্কিত সামরিক হস্তক্ষেপও সিংহভাগ আরব জনগণ সমর্থন করছে। তুরস্কের পর চীন ও জার্মানির মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রতি আরবদের মনোভাব সবচেয়ে ইতিবাচক। চীনের নীতির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন ৫৫ শতাংশ, আর জার্মানির নীতির পক্ষে ইতিবাচক মতামত দেন ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক যে বার্তা দিচ্ছে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে তুরস্কের নতুন আইন কিসের ইঙ্গিত উল্টোদিকে, সবচেয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতির ব্যাপারে। এশিয়া ও আফ্রিকায় আরব বিশ্বের ১৩টি আরব রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাধারণ আরব জনগণের মনোভাব জানতে এই জরিপটি করেছে দোহা এবং বৈরুত ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা 'আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ'। এরদোয়ান ম্যাজিক লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি মনে করেন, তুরস্ক রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যে সাধারণ আরব জনগণের বিরাট একটি অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বিবিসি বাংলাকে মি. হামদি বলেন, “সন্দেহ নেই তুরস্কের গ্রহণযোগ্যতা, বিশেষ করে সাধারণ প্রান্তিক আরব জনগোষ্ঠীর কাছে, বাড়ছে। এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার পেছনে তুরস্ক রাষ্ট্রের চেয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভাবমূর্তি প্রধান ভূমিকা রাখছে।“ মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোরসির মৃত্যুর পর ইস্তান্বুলে এক প্রতীকী জানাজায় যোগ দেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, জুন ১৮, ২০১৯ “এরদোয়ানের আগের তুরস্ক এবং এরদোয়ান পরবর্তী তুরস্ক যে অনেক আলাদা আরবরা তা বুঝতে পারছে।। তারা জানে তুরস্কের নতুন যে বিদেশ নীতি তার স্রষ্টা এককভাবে মি. এরদোয়ান।“ সামি হামদির মতে, এরদোয়ানের আগের তুরস্ককে আরবরা দেখতো একটি নিপীড়নকারী রাষ্ট্র হিসাবে - যারা আরব এবং মুসলিমদের স্পর্শকাতরতাকে তোয়াক্কা করতো না। এটি ঐতিহাসিক সত্য যে একসময় আরবরা যখন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি আদায়ে এককাট্টা হয়ে কাজ করছিল, তুরস্ক তখন পুরো উল্টোপথে গিয়ে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। “কিন্তু আরবরা এখন দেখছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কের সেই অবস্থান বদলে দিয়েছেন। মিশর, ইউএই (সংযুক্ত আরব আমিরাত), তিউনিসিয়া এবং এমনকি সৌদি শাসকরা যখন আরবদের চিরাচরিত মুসলিম পরিচিতি এবং সত্ত্বাকে খাটো করার চেষ্টা করছেন, মিস্টার এরদোয়ান তখন মুসলিম পরিচিতি তুলে ধরতে দ্বিধাহীনভাবে সোচ্চার। "এটা আরব বিশ্বের বহু মানুষকে আকৃষ্ট করছে।“ শরবত বিক্রেতা থেকে 'নতুন সুলতান' এরদোয়ান মি. হামদি মনে করেন, এরদোয়ানের তুরস্কের প্রতি এই মুগ্ধতার সাথে ‘আরব বসন্ত‘ পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির যোগসূত্র রয়েছে। আরব বসন্তের পর মিশর-সহ যেসব দেশে নির্বাচন হয়েছিল, তাতে প্রধানত ইসলামপন্থীরা জয়ী হলেও কিছুদিনের মধ্যে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। “বিশেষ করে মিশরে নির্বাচিত মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে টেনে-হিঁচড়ে নামানো এবং তা নিয়ে পৃথিবীর অনেক ক্ষমতাধর দেশ যেভাবে চুপ ছিল, অনেক মানুষ তাতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেছে, একটি মুসলিম পুনঃজাগরণ ঠেকাতে চক্রান্ত হয়েছে।“ ফলে, সামি হামদির মতে, তুরস্কের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যখন জোর গলায় ইসলামী সত্ত্বার কথা বলেন, তখন আরব বিশ্বের বহু মানুষ মনে করে যে তিনি আসলে তাদেরই মনের কথা বলছেন। ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়াকে তুরস্ক আবার সম্প্রতি মসজিদে রূপান্তরিত করেছে “আরব বিশ্বের মানুষ দেখছে মিস্টার এরদোয়ান একজন ইসলামপন্থী হলেও গণতান্ত্রিক তুরস্কের রাজনীতিতে তিনি একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করতে পেরেছেন। তিনি তার দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিয়েছেন, দেশের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা ইউরোপের মত বড় বড় শক্তির সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন। এতে বহু আরব মুগ্ধ হচ্ছেন।“ তিনি বলেন, “আরবদেরও স্বপ্নও তেমন, তারা তাদের নিজেদের দেশকে, নিজেদের সরকার এবং নেতাদের এভাবেই দেখতে চায়। ফলে এরদোয়ানের সাথে তারা নিজেদের মেলাতে পারছেন ... এরদোয়ানের মধ্যে তারা বাস্তবে একটি আদর্শ মুসলিম নেতা খুঁজে পাচ্ছেন।“ ফিলিস্তিন এবং এরদোয়ান জনমত জরিপে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সাধারণ আরব জনগণের আবেগের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে ইচ্ছুক আরব নেতাদের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। ফলাফলে দেখা গেছে, এখনও ৮৯ শতাংশ আরব মনে করেন যে ফিলিস্তিন ইস্যু বিচ্ছিন্ন কোনো ইস্যু নয়, বরঞ্চ এটি একটি আরব ইস্যু। এমনকি উপসাগরীয় দেশগুলোর জনগণের মধ্যেও এই মনোভাব এখনও খুবই জোরালো। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখনও ৮৮ শতাংশ আরব ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিপক্ষে। মাত্র ছয় শতাংশ সমর্থন করে। ভূমধ্যসাগরে উত্তেজনা ছড়ানোয় তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি কেন? - এ প্রশ্নে উত্তরদাতারা প্রধান কারণ হিসাবে ফিলিস্তিনীদের প্রতি ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী আচরণ‘ এবং ফিলিস্তিনী ভূমি ‘জবর-দখল‘ করার কথা উল্লেখ করেছেন। কোন দেশ আরবদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি - এমন এক প্রশ্নের জবাবে ৬৬ শতাংশ উত্তরদাতাই ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসরায়েলের ব্যাপারে এই বৈরী জনমত বুঝেই হয়ত ইহুদি ওই রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে সৌদি শাসকরা দোটানায় পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপসাগরীয় রাজনীতির বিশেষজ্ঞ গিওর্গিও ক্যাফেইরো কিছুদিন আগে টুইট করেন: “অনির্বাচিত আরব শাসকদের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা আর আরব জনগণের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এক বিষয় নয়। ইসরায়েল নিয়ে মিশরের জনগণের মনোভাবের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়।“ মি. ক্যাফেইরো লেখেন, “ইরান এবং তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের এই বাস্তবতাকে ব্যবহার করবে।“ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের পুনঃনির্বাচনে উল্লাস করছেন গাজায় খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরের ফিলিস্তিনীরা, জুন ২৫, ২০১৮ তবে সামি হামদি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থান কিছুটা জটিল ও স্ব-বিরোধী, এবং শুধু এই ইস্যু ব্যবহার করে সৌদি আরব বা ইউএই-কে ঘায়েল করা তাদের জন্য অসুবিধা হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন যে তুরস্ক নিজেরাই ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ধরে রেখেছে। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত বিমান যোগাযোগ চালু রয়েছে এবং দুটো দেশের মধ্যে ব্যবসাও চলছে। “তবে এটা ঠিক এমন একটি ধারণা আরব দুনিয়ায় জোরালো হচ্ছে যে অনেক আরব দেশ যেখানে তাদের বহুদিনের নীতি ছুঁড়ে ফেলে ফিলিস্তিনী স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত হচ্ছে, সেখানে মিস্টার এরদোয়ান তার দেশের অবস্থান পরিবর্তন করে ফিলিস্তিনীদের পক্ষ নিয়েছেন।“ তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কেন নানা মঞ্চে কাশ্মীর প্রশ্ন তুলছেন প্রশ্ন হলো, আরব শাসকেরা কি তাদের জনগণের মধ্যে মি. এরদোয়ানের এই প্রভাব নিয়ে আদৌ বিচলিত? সাদি হামদি বলেন, আরব নেতাদের সামনে রাস্তা দুটো - এরদোয়ানের সাথে সন্ধি করা অথবা তার মোকাবেলা করা। “অনেক আরব শাসক মনে করেন, এরদোয়ান নতুন এক অটোম্যান সম্রাট হতে চাইছেন। তারা তাই ইসরায়েল এবং আমেরিকার সাথে মিলে এরদোয়ানকে সামলানোর চেষ্টাই করছেন।“ তার মতে, জনমতের ব্যাপারে এখনও অধিকাংশ আরব শাসক খুব বেশি গুরুত্ব দিতে রাজী নন। বরঞ্চ, তিনি বলেন, ইসরায়েলের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের একাংশের মধ্যে এখনও যে দ্বিধা, তার পেছনে বৃহত্তর মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। “সৌদি রাজপরিবার মক্কা ও মদিনার মসজিদের রক্ষক। বৃহত্তর ইসলামী দুনিয়ায় তাদের সেই মর্যাদা এবং গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হওয়া নিয়ে তারা বেশি চিন্তিত।“ বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: যেসব নতুন ফিচার নিয়ে এলো আইফোন ১২ ঢাকার অর্ধেক মানুষ আক্রান্ত: সামনে তাহলে কী হবে চীনের সাথে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কের এতো অবনতি হওয়ার কারণ কী
news-40763116
https://www.bbc.com/bengali/news-40763116
শেখ মুজিব হত্যার পর জেনারেল জিয়া যে মন্তব্য করেছিলেন
অন্যান্য দিনের মতোই রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ই অগাস্ট রাত ৮টা নাগাদ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ফেরেন।
শেখ মুজিবুর রহমান খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত ১২টার মধ্যেই সে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে যায়। তখন সে বাড়ির নীচ তলায় একটি কক্ষে কর্মরত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী এ এফ এম মুহিতুল ইসলাম। রাত তিনটা নাগাদ ঘুমাতে যান মি: ইসলাম। এর কিছুক্ষণ পরেই সে বাড়িতে টেলিফোনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি মি: ইসলামকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। কারণ রাষ্ট্রপতি তার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন। মুহিতুল ইসলাম ২০১৬ সালে মারা যান। ১৯৯৬ সালে মি: ইসলাম শেখ মুজিব হত্যা মামলার বাদী হয়েছিলেন। এর আগে ২০১০ সালে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাতকারে মি: ইসলাম বলেন, " বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় আক্রমণ করছে। ঐ অবস্থায় আমি পুলিশকে টেলিফোনের চেষ্টা করছিলাম। তারপরে বঙ্গবন্ধু উপর থেকে নিচে নেমে এলেন। গেঞ্জি গায়ে লুঙ্গি পরা। তখন উনি আমাকে বললেন যে আমার কাছে দে। "আমার কাছ থেকে তিনি রিসিভারটা নিলেন। নিয়ে বললেন যে , হ্যালো আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি। উনি একথা বলার সাথে সাথেই বৃষ্টির মতো গুলি আসা শুরু হলো। উনি গাড়ি বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে বললেন যে পুলিশ সেন্ট্রি,আর্মি সেন্ট্রি - এতো গুলি চলছে তোমরা কী করো? আমিও ওনার পিছু এসে দাঁড়ালাম। উনি একথা বলেই উপরে উঠে চলে গেলেন।" এ গোলাগুলির সময় রাষ্ট্রপতিসহ তাঁর বাড়ির কেউ ঘটনা সম্পর্কে আঁচ করতে পারেন নি। শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালকে যখন বাড়ির নিচ তলায় গুলি করে হত্যা করা হয় তখন ঘটনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল, বলছিলেন মুহিতুল ইসলাম। ধানমন্ডির সে বাড়িতে সশস্ত্র হত্যাকারীরা প্রথমে হত্যা করে শেখ কামালকে। গোলাগুলির আওয়াজ শোনার পর ঘটনা সম্পর্কে জানতে বাড়ির নিচ তলায় নেমে আসেন শেখ কামাল। "পাঁচ-ছয়জন আর্মি, কেউ কালো পোশাকধারী কেউ খাকি পোশাকধারী - ওনার সামনে এসে বললো হ্যান্ডস আপ। কামাল ভাই বলছে, আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। তখনই সাথে-সাথে ব্রাশ ফায়ার।" আরো পড়ুন: শেখ মুজিব হত্যার পর ৩২নং রোডের বাড়ী কেমন ছিল? বিটিআরসি কেন মোবাইলের কলরেট বাড়াতে চায়? সৌদি যুবরাজদের কারা অপহরণ করল এবং কেন? পরিবারসহ শেখ মুজিবুর রহমান গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শেখ কামাল। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে যখন আক্রমণ হয় তখন কোন ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই হত্যাকারীরা পুরো বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। মুহিতুল ইসলাম বলছিলেন, একজন রাষ্ট্রপতির বাড়িতে যে ধরণের নিরাপত্তা থাকা দরকার সেটি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ছিল না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির বাড়িতে আক্রমণের পরেও কোন তরফ থেকে কোন ধরনের সহায়তা আসেনি। শেখ কামালকে হত্যার পর হত্যাকারীরা বেপরোয়া গুলি চালিয়ে বাড়ির উপরের দিকে যাচ্ছিল। উপরে উঠেই শুরু হয় নির্বিচার হত্যাকাণ্ড। চারিদিকে তখন শুধু গুলির শব্দ। " উপরে তো তাণ্ডবলীলা চলছে। চারিদিকে একটা বীভৎস অবস্থা। ঠিক সে মুহূর্তে উপর থেকে চিৎকার শুরু করলো যে পাইছি পাইছি। এরপরে বঙ্গবন্ধুর একটা কণ্ঠ শুনলাম। তিনি বললেন, তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাস? এরপরে ব্রাশ ফায়ার। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ আমরা আর শুনতে পাইনি," সে রাতের ঘটনা এভাবে বর্ণনা করলেন মুহিতুল ইসলাম । মি: ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী ধানমন্ডির সে বাড়িটিতে সর্বশেষ হত্যা করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে। তখন তার বয়স মাত্র দশ বছর। এ হত্যাকাণ্ডটি হয়েছিল মুহিতুল ইসলামের সামনে। "রাসেল দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে। আমাকে বললো, ভাইয়া আমাকে মারবে না তো? ওর সে কণ্ঠ শুনে আমার চোখ ফেটে পানি এসেছিল। এক ঘাতক এসে আমাকে রাইফেলের বাট দিয়ে ভীষণ মারলো। আমাকে মারতে দেখে রাসেল আমাকে ছেড়ে দিল। ও (শেখ রাসেল) কান্নাকাটি করছিল যে 'আমি মায়ের কাছে যাব, আমি মায়ের কাছে যাব'। এক ঘাতক এসে ওকে বললো, 'চল তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি'। বিশ্বাস করতে পারিনি যে ঘাতকরা এতো নির্মমভাবে ছোট্ট সে শিশুটাকেও হত্যা করবে। রাসেলকে ভিতরে নিয়ে গেল এবং তারপর ব্রাশ ফায়ার।" রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সব সদস্যকে হত্যার পর ঘাতকরা একে অপরকে বলছিল, "অল আর ফিনিশড (সবাই শেষ)"। সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সাথে জড়িত ছিল সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা। সে সময় ঢাকা সেনানিবাসে লেফট্যানেন্ট কর্নেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিন আহমেদ চৌধুরী, যিনি পরে মেজর জেনারেল হয়েছিলেন। মি: চৌধুরী ২০১৩ সালে মারা যান। ২০১০ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর পাঁচটার দিকে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত একজন সেনা কর্মকর্তা মেজর রশিদের নেতৃত্বে একদল সেনা তার বাড়ি ঘিরে ফেলে। আমিন আহমেদ চৌধুরী তখনো জানতেন না যে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। মেজর রশিদের নেতৃত্বে সৈন্যরা আমিন আহমেদ চৌধুরী এবং তৎকালীন কর্নেল শাফায়াত জামিলকে নিয়ে যায় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাড়িতে। জেনারেল জিয়া তখন সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান। খন্দকার মোশতাক আহমেদ জেনালের জিয়াউর রহমানের বাড়িতে ঢোকার সময় রেডিওর মাধ্যমে আমিন আহমেদ চৌধুরী জানতে পারেন যে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। "জেনারেল জিয়া একদিকে শেভ করছেন একদিকে শেভ করে নাই। স্লিপিং স্যুটে দৌড়ে আসলেন। শাফায়াতকে জিজ্ঞেস করলেন, 'শাফায়াত কী হয়েছে?' শাফায়াত বললেন, 'অ্যাপারেন্টলি দুই ব্যাটালিয়ন স্টেজড্ এ ক্যু। বাইরে কী হয়েছে এখনো আমরা কিছু জানি না। রেডিওতে অ্যানাউন্সমেন্ট শুনতেছি প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন।' তখন জেনারেল জিয়া বললেন, সো হোয়াট? লেট ভাইস প্রেসিডেন্ট টেক ওভার। উই হ্যাভ নাথিং টু ডু উইথ পলিটিক্স।" সেনানিবাসের দুটি ব্যাটালিয়ন এ অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত থাকলেও পুরো সেনাবাহিনী সেটার পক্ষে ছিল না বলে উল্লেখ করেন আমিন আহমেদ চৌধুরী। ঢাকা সেনানিবাসে যখন এ অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়েছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এ অভ্যুত্থান পরিকল্পনার খবর কেন আগে জানা সম্ভব হয়নি এবং কেন সেনাবাহিনীর অন্য কোন ইউনিট এগিয়ে আসেনি সেটি আজও এক বিরাট প্রশ্ন। যেভাবে পিতার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জেনেছিলেন হাসিনা শেখ মুজিব হত্যার পর ৩২নং রোডের বাড়ী কেমন ছিল? ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট আক্রমণের সময় শেখ মুজিবুর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিনকে ফোন করে তার বাড়িতে আক্রমণের কথা জানিয়েছিলেন। কর্নেল জামিল তখন সাথে সাথে রওনা হয়েছিলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির দিকে। কিন্তু সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌঁছলে তার গাড়ি রোধ করে অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত সৈন্যরা। সে বাধা উপেক্ষা করে কর্নেল জামিল সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত সেনাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সকাল ১০টার দিকে আমিন আহমেদ চৌধুরী গিয়েছিলেন সে বাড়িতে। ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ হত্যাকাণ্ড হলেও তখন সেখানে মৃতদেহ দেখেছেন মি: চৌধুরী। জিয়াউর রহমান সামরিক পোশাক পর অবস্থায় মি: চৌধুরী সেখানে গেলেও তাকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিল না সৈন্যরা। মি: চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, " আর্টিলারি রেজিমেন্টের কিছু ট্রুপস ছিল সেখানে। মেজর হুদা ছিলেন। আমি যে যেহেতু হুদাকে চিনতাম, তাকে বলার পর সে আমাকে ঢুকতে দেয়। আমি দোতলার সিঁড়িতে উঠতেই বঙ্গবন্ধুর লাশটা দেখি। তার চশমা ও পাইপটাও পড়ে ছিল। দূর থেকে ভেতরে দেখলাম বেগম মুজিব পড়ে আছেন। যে লোকটার অঙ্গুলি হেলনে পঁচাত্তর মিলিয়ন লোক উঠছে বসছে, সে লোকটাকে তার সৃষ্ট আর্মি মেরে ফেললো। এটা কী করে সম্ভব? পাকিস্তানিদের কাছে মারা যায় নাই, মারা গেল শেষ পর্যন্ত বাঙালীর কাছে।" সে অভ্যুত্থানের পর অনেকে তাকিয়ে ছিলেন তৎকালীন রক্ষীবাহিনীর প্রতিক্রিয়ার দিকে। সেনাবাহিনীর সাথে রক্ষীবাহিনীর কোন সংঘাত তৈরি হয় কী না সেটি নিয়েও অনেকে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ধরণের কিছু ঘটেনি। রক্ষীবাহিনীর দিকে থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়ায় অনেকে অবাক হয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর উল্টো রক্ষীবাহিনী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল বলে জানান আমিন আহমেদ চৌধুরী। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে আমিন আহমেদ চৌধুরী দুপুর নাগাদ পৌঁছেন সাভারে অবস্থিত রক্ষীবাহিনীর সদরদপ্তরে। মি: চৌধুরীর দায়িত্ব ছিল রক্ষীবাহিনী যাতে আতঙ্কগ্রস্ত না হয় সে বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। " আমি সেখানে গিয়ে বলি যে সেনাবাহিনীর কিছু লোক এটার (হত্যাকাণ্ড) সাথে জড়িত থাকলেও পুরো সেনাবাহিনী এর সাথে জড়িত নয়। সে হিসেবে সেনা প্রধানের বানী নিয়ে আমি এখানে আসছি," বলছিলেন মি: চৌধুরী। হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন আওয়ামীলীগের একজন সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রী পরিষদের সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। সামগ্রিকভাবে ১৫ আগস্ট সারাদিন সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অভ্যুত্থানের খবর জানাজানি হবার পরে সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যেই এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন আমিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। কী করতে হবে তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। শেখ হাসিনা মি: চৌধুরীর বর্ণনায়, "যখন সকাল হয়ে গেছে তখন দেখা যাচ্ছে কোন পলিটিকাল ডিরেকশন আসতেছে না। বঙ্গবন্ধু মারা গেছে, এখন আমরা কী করবো? কার পেছনে দাঁড়াবো? তারা তো খন্দকার মোশতাককে বসিয়ে দিয়েছে। এখন আমরা তাকে ডিসলজ (ক্ষমতাচ্যুত) করবো? এর বিরুদ্ধে গেলে পুরোপুরি যুদ্ধ করতে হবে। কারণ ওরা ট্যাংক বের করে অলরেডি বঙ্গভবনে বসে গেছে, ফার্মগেটের সামনে বসে গেছে, জাহাঙ্গীর গেটের ভেতরে অলরেডি মুভ করছে। পরিস্থিতি অ্যাসেস করতে হচ্ছে। আমরা কি পারবো? আমাকে তো জানতে হবে আমার কাছে কত সৈন্য আছে এবং কত অ্যামুনিশন আছে। এতে গিয়া গোলমাল হয়ে গেল। কনফিউশনটা খুব বেশি ছিল।" খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত ঘাতক জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা। সে থেকে পরবর্তী প্রায় ১৫ বছর বাংলাদেশের ইতিহাস সেনাবাহিনীর ভেতরে অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান এবং সামরিক শাসনের ইতিহাস।
news-51987196
https://www.bbc.com/bengali/news-51987196
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো একজনের মৃত্যু
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনাভাইরাস স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন আজ একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেছেন "এই নিয়ে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা দুইজন"। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৪জন। অর্থাৎ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ জন। এই পর্যন্ত যে দুইজন মারা গেছে তাদের দুজনের বয়স ৭০ বছরের বেশি। তবে নতুন করে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেনি মন্ত্রণালয়। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এখন ৫০ জন রয়েছে। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রো ইন্সটিটিউট এবং শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউট এই নতুন দুটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। "এই দুটি হাসপাতাল যেকোন সময় গ্রহণ করে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করতে পারবো" বলে তিনি জানান। "কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য উত্তরার থার্ড ফেজে দিয়া বাড়ী এবং তাবলীগ জামায়াত যেখানে হয় সেই জায়গাটি আমরা নিয়েছি এবং এই দুইটি স্থান ম্যানেজ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা এই দুইটি স্থানকে ম্যানেজ করবেন যদি সেই ধরণের কোয়ারেন্টিন করতে হয়" মন্ত্রী জানান। স্বাস্থ্যসেবা যারা দিয়ে থাকেন সেই ডাক্তার, নার্স এবং সেবাকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গুরুতর রোগীদের জন্য ১০০ টি আইসিইউ স্থাপন করা হবে এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪'শ ইউনিট স্থাপন করা হবে। এছাড়া চীনের উহান যেখান থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় সেখান থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। আজ ছুটির দিনে কয়েকটি মন্ত্রণালয় নিয়ে জরুরি বৈঠক চলে প্রায় আড়াই ঘন্টা। এর পর সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: শনিবার রাত থেকে বিমান বন্ধ, বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বাংলাদেশ তিন সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন চলছে, ভোটার উপস্থিতি কম করোনাভাইরাস এলো কোত্থেকে, ছড়ালো কিভাবে- যতসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সংক্রমণ রোধে যেভাবে কাজ করেছেন সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দারা
news-47604507
https://www.bbc.com/bengali/news-47604507
নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে অভিধানে ঢুকল যে ছ'টি নতুন শব্দ
ভারতে গত পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের আমলে এমন কতগুলো নতুন শব্দের আমদানি হয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে আগে সে দেশের মানুষজনের কোনও পরিচয় ছিল না।
নরেন্দ্র মোদী কিন্তু এখন 'আচ্ছে দিন', 'মিত্রোঁ' বা 'নোটবন্দী'-র মতো বিভিন্ন শব্দ সমাজের প্রায় সব শ্রেণীর মানুষই অহরহ ব্যবহার করছেন। আবার গরু রক্ষার নামে ভারতে যারা মানুষ পিটিয়ে মারছেন, তাদেরকে বলা হচ্ছে 'গোরক্ষক'। দুবছর আগে উরি-তে জঙ্গী হামলার পর পাকিস্তানে ভারত যে অভিযান চালিয়েছিল তার পর থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপির অন্ধ অনুগামীদের ব্যঙ্গ করে বলা হচ্ছে 'ভক্ত্'। শব্দটাকে প্রায় গালিগালাজ বলেই ধরা হচ্ছে। পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অনেক সময়ই শব্দগুলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি, সাধারণ মানুষ কিন্তু তা ব্যবহার করছেন সম্পূর্ণ আলাদা অর্থে। ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক মানচিত্রে এই সব নতুন শব্দ কীভাবে জায়গা করে নিচ্ছে, এখানে তারই ছটি দৃষ্টান্ত ব্যাখ্যা করা হল। মিত্রোঁ পাঁচ বছর আগে নরেন্দ্র মোদী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন, তখন প্রায় নিয়ম করে প্রতিটি জনসভায় তিনি শ্রোতাদের সম্বোধন করতেন 'মিত্রোঁ' বলে, যার অর্থ বন্ধুরা। এমন কী, ২০১৬তে যে ভাষণে তিনি দেশে পাঁচশো আর হাজার রুপির নোট বাতিল ঘোষণা করেন, তার শুরুতেও তিনি বলেছিলেন মিত্রোঁ। মিত্রোঁ নিয়ে কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের টুইট তখন থেকেই এই শব্দটি ভারতে হাসিঠাট্টা কিংবা ভয় দেখানোর অস্ত্রে পরিণত হয়েছে, কমেডিয়ানরা এই মিত্রোঁ, যার উচ্চারণ অনেকটা 'মিটরন'-এর মতো, তাকে তুলনা করছেন প্রোটন-নিউট্রনের মতোই নতুন কোনও আণবিক কণার সঙ্গে। নরেন্দ্র মোদী আজকাল আর মিত্রোঁ তেমন একটা বলেনই না, কিন্তু শব্দটি প্রায় পাকাপাকিভাবে ঢুকে গেছে ভারতীয়দের অভিধানে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর টুইট করেছিলেন, "একটি ছোট্ট মেয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করল, সব রূপকথাই কি 'ওয়ানস আপন আ টাইম' দিয়ে শুরু হয়?" "বাবা জবাব দিলেন, না, আজকাল রূপকথা শুরু হয় মিত্রোঁ দিয়ে!" সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনও বিবিসিকে বলছিলেন, "আজকাল মিত্রোঁ শুনলে কেউ কিন্তু আর প্রিয় বন্ধুদের কথা ভাবে না, বরং চোখের সামনে মাঠভর্তি শ্রোতার ছবিই ভেসে ওঠে।" আচ্ছে দিন পাঁচ বছর আগে যে 'আচ্ছে দিন' বা সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি, সেই শব্দটিরও একই পরিণতি হয়েছে। অল্ট নিউজের প্রধান প্রতীক সিনহা বলছিলেন, 'আচ্ছে দিনে'র মতো শব্দ বিজেপি ব্যবহার করেছিল একটা বিপণনের উদ্দেশ্য নিয়ে - যাতে শব্দটা মানুষের মনে গেঁথে যায়। এই ইন্টারনেট আর হ্যাশট্যাগের যুগে এই শব্দগুলো ছড়িয়েওছিল ঝড়ের গতিতে। কৃষকদের দুর্দশার প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীরা এখন বিজেপিকে বিদ্রূপ করছেন 'আচ্ছে দিন' নিয়ে "কিন্তু আচ্ছে দিন শব্দটা বিজেপির জন্য পুরোপুরি ব্যাকফায়ার করেছে - যেমন বিজেপি নেতারা এখন আর মিটিং-মিছিলে আচ্ছে দিন কথাটা উচ্চারণ করারও সাহস পান না", বলছেন মি সিনহা। চাকরি বা রুজিরোজগারের অভাব কিংবা অর্থনীতির যে কোনও সঙ্কটের কথা উঠলেই ভারতের মানুষ এখন ব্যঙ্গ করে বলেন, "এই তো এসেছে আচ্ছে দিন!" মানুষের মুখে মুখে কথাটা ফিরলেও আসন্ন নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি কিন্তু ভুলেও আর ''আচ্ছে দিনে''র কথা তুলতে চায় না। নোটবন্দী ২০১৬-র নভেম্বরের এক সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদী যখন নাটকীয়ভাবে দেশে পাঁচশো আর হাজার রুপির সব পুরনো নোট বাতিল ঘোষণা করেন, সেদিনই ভারতে জন্ম হয় একটি নতুন শব্দের - নোটবন্দী। ইংরেজিতে যেটাকে বলা হয় 'ডিমনিটাইজেশন', হিন্দিতে তারই নামকরণ করা হল নোটবন্দী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর আগে কারেন্সি নোট বাতিল করা হলেও স্বাধীন ভারতে এই পদক্ষেপ ছিল প্রথমবারের মতো, ফলে হিন্দিতে এর আগে ডিমনিটাইজেশনের কোনও উপযুক্ত প্রতিশব্দ ছিল না। নোটবন্দীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। কলকাতা, ২০১৬ মোদী জমানায় সেই অভাবই শুধু মিটল না, টাকা তোলার জন্য এটিএমের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় গোটা দেশ এই নোটবন্দীর ভাল-মন্দ নিয়ে প্রায় দুভাগই হয়ে গিয়েছিল বলা চলে। একদল মনে করেছিলেন, কালো টাকার কারবারিদের মাজা ভেঙে দিতে এটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর দারুণ সাহসী ও কুশলী মাস্টারস্ট্রোক। অন্য দিকে নোট বাতিলের ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন দেশের কোটি কোটি মানুষ, তারা অনেকেই নিজেদের রুটিরুজি বিপন্ন হওয়ার জন্য সরাসরি দায়ী করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। আজ প্রায় আড়াই বছর পরও সে বিতর্ক পুরোপুরি থামেনি। আর ভারতে অর্থনীতি নিয়ে যে কোনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে সেই নোটবন্দী শব্দটি। গোরক্ষক / মব লিঞ্চিং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষত হিন্দি বলয়ে, গত কয়েক বছরে গরু রক্ষার নামে কত লোককে যে পিটিয়ে মারা হয়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্য বাদ দিলে প্রায় গোটা ভারতেই বিফ বা গরুর মাংস নিষিদ্ধ, আর সে সব রাজ্যেই বিশেষ করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাহারাদারের ভূমিকায় দেখা গেছে হিন্দুত্ববাদী টহলদার বাহিনীকে। অভিযোগ উঠেছে, গরু পাচার ঠেকানোর নামে তারা বেশির ভাগ সময় ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা আদায়ের কাজেই ব্যস্ত থাকছে। টাকা না-পেলে মেরে ফেলা হচ্ছে খামারিদের, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। ইংরেজিতে এই বাহিনীকেই বলা হচ্ছে 'কাউ ভিজিলান্টে', আর হিন্দিতে বলা হচ্ছে গোরক্ষক। রাজস্থানে একটি গোরক্ষক বাহিনীর টহল "তবু মিত্রোঁ আর আচ্ছে দিন নিয়ে হাসাহাসি চলতে পারে, কিন্তু এই গোরক্ষক বা মব-লিঞ্চিংয়ের তাৎপর্য আসলে অনেক ভয়াবহ," বিবিসিকে বলছিলেন সিপিআইএমএল দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। "দেশের অনেক মানুষ এই শব্দগুলো শুনলে আতঙ্কে সিঁটিয়ে যাচ্ছে।" "নইলে ভাবুন, জনতার সহিংসতা বা পিটুনিতে কাউকে মেরে ফেলার যে ইংরেজি শব্দ - সেই মব লিঞ্চিং কথাটা এখন গ্রামীণ ভারতের আনাচে-কানাচে, দেশের সবগুলো ভাষায় কীভাবে ঢুকে যেতে পারে?", প্রশ্ন তুলছেন তিনি। ভারতের কিছু মানবাধিকার সংগঠন বলছে, ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে 'গোরক্ষক' এখন একটা পুরোদস্তুর পেশার নাম। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গী হামলার দশদিনের মাথায় নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে অভিযান চালানোর দাবি করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনার তদানীন্তন ডিরেক্টর জেনারেল (মিলিটারি অপারেশনস) রণবীর সিং সে দিনই দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, সামরিক বা বেসামরিক কোনও স্থাপনায় নয় - নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গীদের লঞ্চপ্যাডগুলোতেই শুধু হামলা চালানো হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পালিত হচ্ছে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দিবস তিনি সেই হামলাকে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' বলে অভিহিত করেছিলেন, যে শব্দবন্ধটি এরপর সারা ভারতে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। শুধু যুদ্ধ বা সংঘাতের পটভূমিতে নয়, যে কোনও জায়গায় গিয়ে খুব সূক্ষভাবে কোনও অভিযান বা হামলা চালানো বোঝাতেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেন ভারতীয়রা। নোটবন্দীর পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে ভারতের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর যেমন বলেছিলেন, "এটা হল দেশের কালো টাকা, সন্ত্রাসবাদ কিংবা মাচক পাচারের অর্থের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক!" বামপন্থী রাজনীতিবিদ দীপঙ্কর ভট্টাচার্য আবার বলছেন, "আমি তো আবার হিন্দি বলয়ে লোকজনকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বদলে ফর্জিক্যাল স্ট্রাইক (জাল অভিযান) বলতেই বেশি শুনি!" ভক্ত্ বাংলায় 'ভক্ত' বলতে যা বোঝায়, ভারতের নতুন রাজনৈতিক পরিভাষায় তার চেয়ে এই 'ভক্ত্' শব্দটার কনোটেশান বা ভাবার্থ একটু আলাদা। ভারতে ভক্ত্ বলতে বোঝানো হয় নরেন্দ্র মোদী বা তার দল বিজেপির অন্ধ অনুগামীদের, যারা বিনা প্রশ্নে সব ইস্যুতে তাদের সমর্থন করে থাকেন। ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতে ভক্ত্ শব্দটা মোদী-অনুগামীদের বিরুদ্ধে প্রায় একটা গালিগালাজ হিসেবেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর অন্ধ অনুগামীদেরই ডাকা হচ্ছে ভক্ত্ বলে মিত্রোঁ বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের চেয়ে ভক্ত্ শব্দটা একটু বেশি পুরনো - তবে তা প্রবলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে গত পাঁচ বছরেই। তবে এই শব্দটা হিন্দি বলয়ে যতটা জনপ্রিয়, বাঙালিদের মধ্যে ততটা ঢুকতে পারেনি বলেই বলছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি ও অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। তার কথায়, "দিল্লিতে যখন থাকি বা পার্লামেন্টে যাই তখন এই ভক্ত্-জাতীয় শব্দগুলো অনেক বেশি শুনি। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামেগঞ্জে অবশ্য অতটা শুনি না - এখানে বরং দেখি বিজেপি জয় শ্রীরামের মতো স্লোগান জনপ্রিয় করতে চাইছে!" কিন্তু বিজেপি যাকে বলছে 'মোদীর ভারত', সেখানে সমাজ ও রাজনীতির আলোচনায় নতুন এই শব্দগুলো যে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিরাট জায়গা করে নিতে পরেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
news-55201269
https://www.bbc.com/bengali/news-55201269
ইতিহাসের সাক্ষী: কীভাবে জেমস বন্ডকে সৃষ্টি করেছিলেন ইয়ান ফ্লেমিং
ইংরেজ লেখক ইয়ান ফ্লেমিং তার বিশ্ববিখ্যাত স্পাই থ্রিলার সিরিজের নায়ক জেমস বন্ড-কে সৃষ্টি করেছিলেন ১৯৫০এর দশকে।
ইয়ান ফ্লেমিং ফ্লেমিং ছিলেন একজন সাংবাদিক এবং শেয়ারবাজারের দালাল - তবে তার আগে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছিলেন। তার সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে কীভাবে তিনি জেমস বন্ডকে সৃষ্টি করেছিলেন - ইতিহাসের সাক্ষীর এ পর্বে তারই কাহিনি শুনিয়েছেন বিবিসির এ্যালেক্স লাস্ট । জেমস বন্ড নামে যে স্পাই চরিত্রটি সৃষ্টি করেছিলেন ইয়ান ফ্লেমিং - তা শুধু যে থ্রিলার সিরিজ হিসেবেই সফল হয়েছিল তাই নয়, তাকে নিয়ে পরবর্তীকালে তৈরি হওয়া সিনেমাগুলো শত শত কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। ইয়ান ফ্লেমিং বলেছিলেন, "আমি জেমস বন্ডের চরিত্র সৃষ্টি করেছিলাম ঠিকই, তবে তার সাথে আমার খুব বেশি মিল নেই। বন্ডের মতই আমি স্ক্র্যাম্বলড এগ খেতে ভালোবাসি না, হাফহাতা শার্ট পছন্দ করি না। তবে জেমস বন্ডের মতো খিদে বা সাহস আমার নেই। তবে তিনি যাই বলুন, অনেক বিশেষজ্ঞ সমালোচকরা বলেন, ইয়ান ফ্লেমিং এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য অবশ্যই জেমস বন্ডের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায়। ইয়ান ফ্লেমিংএর জন্ম লন্ডনে ১৯০৮ সালে এক ধনী পরিবারে। তার বাবা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মারা গিয়েছিলেন। মি. ফ্লেমিং বড় হয়ে উঠেছিলেন ব্রিটিশ সমাজের উঁচুতলার প্রাচুর্যের মধ্যেই। তিনি কিছু কাল কাটিয়েছিলেন অস্ট্রিয়া এবং সুইৎজারল্যান্ডে - সেখানে পর্বতারোহণ এবং স্কি করা ছিল তার নেশা। পরে তিনি চেয়েছিলেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে, কিন্তু সেখানে সুযোগ মেলেনি। কিছুকালের জন্য তিনি কাজ করেন রয়টার বার্তা সংস্থায় সংবাদদাতা হিসেবে। সোভিয়েত রাশিয়ায়ও ছিলেন তিনি। পরে লন্ডনে শেয়ারবাজারে দালালির কাজ করতে শুরু করেন তিনি। সিনেমায় প্রথম জেমস বণ্ড হয়েছিলেন শন কনোরি দীর্ঘদেহী এবং সুদর্শন ইয়ান ফ্লেমিং মেয়েদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। তবে ব্রিটেনের উচ্চশ্রেণীর জীবনে হাঁপিয়ে উঠছিলেন ফ্লেমিং। কিন্তু তার জীবন বদলে দিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । একত্রিশ বছর বছর বয়সে ফ্লেমিং যোগ দিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ইনটেলিজেন্স বিভাগের প্রধানের ব্যক্তিগত সহকারী পদে। সেখানে তার একজন সহকর্মী ছিলেন এডমিরাল ডেনিং। এডমিরাল ডেনিং বলেন, "আমাদের যেসব প্রাত্যহিক রুটিন কাজ ছিল - সেগুলোতে ফ্লেমিং একেবারেই ভালো ছিলেন না। তবে তার কাছ থেকে আপনার হয়তো কিছু আইডিয়া মিলে যেতে পারতো, অথবা তিনি আপনাকে কিছু লোকের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারতেন। মনে হতো যেন তার দুটো জীবন আছে। একটা হচ্ছে তার দিনের বেলার জীবন - যখন তিনি এখানে কাজ করতেন। আরেকটা ছিল তার রাতের জীবন - সেখানে তিনি তার সামাজিক মেলামেশার জগতে ঘুরে বেড়াতেন, তাতে ছিল তাসের আড্ডা আর আনুষঙ্গিক অন্য ব্যাপারগুলো।" যুদ্ধের সময় ফ্লেমিং এর জীবন কিন্তু মোটেও জেমস বন্ডের মত ছিল না। তিনি তখন নৌবাহিনীর সদর দফতরের কর্মচারী, তবে মাঝে মাঝে তার মাথায় কিছু ভালো আইডিয়া আসতো না তা নয়। জেমস বন্ড সিরিজের গোল্ডফিঙ্গার ছবির একটি দৃশ্যে শন কনোরি তবে যুদ্ধের সময় আমেরিকা ও কানাডা সফরে গিয়ে সিক্রেট সার্ভিসগুলো কিভাবে কাজ করে - তা ভেতর থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার। এই কাজের সময় স্পাইদের ট্রেনিংএর জন্য একটা কোর্স হচ্ছিল - ফ্লেমিং ভাবলেন, একবার চেষ্টা করে দেখলে মন্দ হয়না। সুযোগ পেয়ে সেই কোর্সে ঢুকে পড়লেন তিনি। দেখা গেল, ওই কোর্সে ফ্লেমিংই হয়ে উঠলেন সবচেয়ে ভালো শিক্ষানবিশদের একজন। সাগরে ডুবে থাকা জাহাজ থেকে লিম্পেট মাইন অপসারণের কাজও করেছিলেন তিনি। তার বান্ধবীদের একজন ছিলেন ক্লেয়ার ব্ল্যানচেট। তখন নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতেন তিনি। "আমি খুবই আকৃষ্ট হয়েছিলাম তার প্রতি। দেখলাম, এ্যাডভেঞ্চার জিনিসটাকে ইয়ান একেবারে শিশুর মতো আনন্দ নিয়ে উপভোগ করছেন।" ক্লেয়ার ব্ল্যানচেটের সাথে ইয়ান ফ্লেমিংএর দেখা হয়েছিল শ্রীলংকায় । তিনি বলছেন, তার চোখে কেমন মানুষ ছিলেন ইয়ান ফ্লেমিং। "তিনি খুব একটা মার্জিত ব্যক্তি ছিলেন না। সহজ-সরল জিনিসগুলোই ছিল তার পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন মাঠে খেলতে আসা একটি শিশুর মতো, যে চারপাশে তাকিয়ে শুধু খেলার সাথী খুঁজছে।" সরাসরি যুদ্ধ না করলেও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছিল ফ্লেমিংকে, করতে হয়েছিল ব্রিটেনের শত্রুদের মোকাবিলার নানা কৌশলী পরিকল্পনা। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ কমান্ডো দলও গড়ে তুলেছিলেন তিনি। প্রথম জেমস বণ্ড ছবি ডক্টর নো'র বিজ্ঞাপন "এটা আমার কাছে খুবই উপভোগ্য জীবন বলে মনে হতো। এটা ছিল বেশ বিপদজনক কাজ" - বলছেন ইয়ান ফ্লেমিং - "তা ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আমি উত্তেজনাপূর্ণ কিছু দু:সাহসিক কাজে অংশ নিয়েছি। সব মিলিয়ে বলবো - আমার জন্য এর চেয়ে উপভোগ্য জীবন এবং আগ্রহউদ্দীপক একটা যুদ্ধ আর হতে পারতো না।" এই আগ্রহ থেকেই তার যুদ্ধ শেষ হবার পর একটা বই লেখার চিন্তা তার মাথায় এসেছিল, বলছিলেন ইয়ান ফ্লেমিংএর বন্ধু এবং লেখক উইলিয়াম প্লুমার। "একবার, তখন যুদ্ধ চলছে - একসাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় আমি তাকে কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা ইয়ান, যুদ্ধের পর তুমি কি করবে? কিছু ভেবেছো? সে বলেছিল 'আমি ভেবেছি, একটা থ্রিলার লিখবো'। উইলিয়াম প্লুমার বলছেন, "তার পর অবশ্য ব্যাপারটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। যুদ্ধ শেষ হবার পর একদিন আমরা একসাথে লাঞ্চ করতে গেলাম। সেসময় ইয়ান বললো, উইলিয়াম - আমি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। ধরো তুমি একটি মেয়েকে পেলে, যার ভেতর সিগারেটের ধোঁয়া ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তুমি কি করে সেটা বের করবে?" "এটা ছিল থুবই অদ্ভূত একটা প্রশ্ন। আমি প্রশ্ন করলাম, আসলে তুমি কি করছো আমাকে বলো তো ? সে বললো, ওয়েল, তুমি নিশ্চয়ই এক্সহেইল শব্দটা ব্যবহার করতে পারো না। তুমি তাহলে কিভাবে ব্যাপারটা বর্ণনা করবে?। তখন আমি বললাম, ওহ আমি বুঝতে পারছি তোমার সমস্যাটা কি - তুমি নিশ্চয়ই একটা বই লিখছো।" ফ্লেমিং মন দিয়ে লিখতে শুরু করলেন ১৯৫২ সালে। তখন তিনি একটি একটি সংবাদপত্রের জন্য কাজ করছেন। শীতের সময় লম্বা ছুটির সময় লিখতেন তিনি । সেসময় তিনি থাকতেন জ্যামাইকায় - যেখানে তার একটি বাড়ি ছিল। বাড়িটির নাম দিয়েছিলেন তিনি 'গোল্ডেন আই।' প্রথম যে বইটি তিনি লিখলেন তার নাম 'ক্যাসিনো রয়াল।' সেই বইয়ের প্রধান চরিত্র ব্রিটিশ স্পাই জেমস বণ্ড। সেসময় একজন বিখ্যাত আমেরিকান পাখি বিশেষজ্ঞ ছিলেন যার নাম ছিল জেমস বন্ড। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাখীদের ওপর একটি বই লিখেছিলেন - আর সেই বইটি ইয়ান ফ্লেমিংএর প্রিয় ছিল। সেই পাখি বিশেষজ্ঞের নামটিই তার স্পাইয়ের জন্য নিয়েছিলেন ফ্লেমিং। ফ্লেমিং বলছেন, "আমি কখনো জেমস বন্ডকে নায়ক হিসেবে দেখাতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম সে হবে একটা ভোঁতা অস্ত্রের মত । তাকে পাঠাবে একটা সরকারি বিভাগ এবং নানা রকম বিচিত্র অকল্পনীয় সব পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে সে, আর গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসবে। একটি ছবির শুটিংএর ফাঁকে জেমস বন্ড চরিত্রে রজার মুর এই চরিত্রটা কি অনেক দিন ধরে তার মনের ভেতরে গড়ে উঠেছিল? প্রশ্ন করা হয়েছিল ইয়ান ফ্লেমিংকে। ফ্লেমিং বলেন, "না, আমি সেটা বলতে পারবো না। আমি আসলে তখন বিয়ে করতে যাচ্ছি, তার ঠিক আগে আগে জীবনের এক নতুন পর্বে প্রবেশ করার যে উৎকণ্ঠা - তা থেকে মনটাকে সরিয়ে নেবার জন্যই আমি ঠিক করলাম যে একটা বই লিখবো।" নিশ্চয়ই তার নৌবাহিনীতে গুপ্তচর সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা তাতে কাজে লেগেছিল? প্রশ্ন করা হয়েছিল ফ্লেমিংকে। "হ্যাঁ, সেখানে কাজ করেই আমি জেনেছি - কিভাবে একটা গুপ্তচর সংস্থা কাজ করে। কিন্তু আমার বইয়ে আমি সেটা ওভাবে বলতে পেরেছি কিনা বলতে পারবো না কারণ এটা কল্পকাহিনী এবং বাস্তব জীবনের চাইতে অনেক আলাদা।" বন্ড চরিত্রটি কি কোনবিশেষ ব্যক্তির আদলে তৈরি হয়েছে নাকি অনেকের চরিত্র মিলিয়ে তৈরি - এ প্রশ্নের জবাবে ফ্লেমিং বলেন, না তা নয়। "যেসব কমান্ডার এবং সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের আমি যুদ্ধের সময় দেখেছি - তাদের একটি কাল্পনিক মিশ্রণ এই বণ্ড। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এতে আমার নিজের চরিত্রের ছায়া পড়েছে কিনা - তা যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলবো, না আমি আশা করি পড়েনি।" কিন্তু নাট্যকার নোয়েল কাওয়ার্ড - যিনি ছিলেন ইয়ান ফ্লেমিংএর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু্ - তিনি বলছেন ঠিক উল্টো কথা। "আমার মনে হয় জেমস বন্ড ইয়ানেরই ফ্যান্টাসি, - সে হয়তো যা হবার স্বপ্ন দেখতো তারই প্রতিমূর্তি। বন্ডের মধ্যে যে নির্দয়, ড্যাশিং ব্যাপারটা আছে তা ইয়ানেরও ছিল। বলতে পারেন, অনেকটা একটা স্কুলেপড়ুয়া ছেলের মত।" তার প্রথম বই শীতলযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা। এখানে সোভিয়েত স্পাই, তাস খেলা, নির্যাতন, প্রেম ও প্রতারণা - সবই আছে। উইলিয়াম প্লুমার বলছেন, তার মনে হয়েছিল বইটার সম্ভাবনা আছে। তাই তিনি পান্ডুলিপিটা প্রকাশক জোনাথন কেপের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ফ্লেমিং এর সাবেক দুই প্রেমিকা লিজেল পপার এবং কেট ব্ল্যানচার্ড বইটা পড়ে তত উৎসাহিত হননি। লিজেল পপার বলছিলেন, "সে আমার কাছে এসে বললো, তুমি কি এটা একবার পড়ে দেখবে? আমি পড়লাম। পড়ে বললাম, এটা একেবারেই আবর্জনা, ঈশ্বরের দোহাই - এটা তুমি ছাপাতে দিওনা।" কেট ব্ল্যানচার্ড বলেন, "মেয়ে চরিত্রগুলো তো অসহ্য। একেবারেই কার্ডবোর্ডের চরিত্র। তাদের কাজকর্মও অস্বাভাবিক।" জেমস বণ্ড চরিত্রে পিয়ের্স ব্রসনান কিন্তু ক্যাসিনো রয়াল ঠিকই প্রকাশিত হলো, ১৯৫৩ সালে, যুক্তরাজ্যে। সমালোচকদের প্রশংসাও পেলো। বইটা দারুণ বিক্রিও হলো। এর পর আরো কয়েকটি বন্ড সিরিজের আরো কয়েকটি পর্ব বেরুলো। কিন্তু এসব বইতে যে পরিমাণ যৌনতা এবং সহিংসতা ছিল - তাতে ১৯৫০ দশকের ব্রিটেনের অনেকেই ভ্রু কুঁচকোলেন। পল জনসন নামে এক সমালোচক এক কড়া নিবন্ধ লিখলেন পত্রিকায়। পল জনসন পরে বলেন, "আমি তার প্রথম যে বইটা পড়েছিলাম তা হলো ডক্টর নো। আমার মনে হলো এটা একটা দানবিক লেখা। এতে ছিল অমার্জিত ধর্ষকামিতা, জঘন্য যৌনতা, নিম্নস্তরের নাক-উঁচু ভাব। আমার বইটা পড়ে জঘন্য লেগেছিল। সেসময় আলজেরিয়ান যুদ্ধ চলছিল। তখন প্রতিদিন খবর বেরুতো কিভাবে ফরাসীদের হাতে আলজেরিয়ানরা নির্যাতিত হয়ে মারা যাচ্ছে। আমি খুবই ক্রুদ্ধ একটা সমালোচনা লিখলাম, তাতে বললাম - এ ধরণের বই যদি লোকে কেনে এবং প্রশংসা করে, তাহলে সভ্য দেশের সরকারগুলো যে অন্য দেশে গিয়ে এরকম কাজ করছে তাতে বিস্মিত হবার কিছুই নেই।" সাংবাদিকরা ফ্লেমিংকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার বইয়ে যেসব নির্যাতনের বর্ণনা আছে তা খুবই পাশবিক। ফ্লেমিং জবাব দেন: "আপনি কতগুলো পড়েছেন আমি জানি না, কিন্তু বাস্তব জীবনে যা হচ্ছে তার তুলনায় এগুলো কিছুই নয়। গত বিশ্বযুদ্ধের পর আমাদের বোধবুদ্ধি অনেক বেড়েছে। তবে এটা ঠিকই যে সমালোচকদের পক্ষে বইয়ের অনেক কিছুই হজম করা কঠিন হবে।" আরেকটি প্রশ্ন ছিল : জেমস বন্ডের কাছে মনে হয় সেক্স জিনিসটা এক গ্লাস পানি খাবার মতই সহজ? ফ্লেমিংএর জবাব: "সেটা বলতে পারেন - তবে বন্ডের প্রতিটি বইতে একটি করে নতুন মেয়ে থাকে, তার মানে বছরে একটি। সে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জায়গায় যায়। সে যে সব জায়গাতেই সুন্দরী মেয়েদের পেয়ে যায় সেটা আমি খুব খারাপ কিছু মনে করি না। বরং সে জন্য আমি তাকে হিংসে করি।" ফ্লেমিং প্রতি বছর একটি করে বন্ড সিরিজের বই লিখেছিলেন ১৯৬৪ সালে ৫৬ বছর বয়েসে মারা যাবার আগে পর্যন্ত। এর মধ্যে তিনি আরো কয়েকটি বই লিখেছেন, লিখেছেন শিশুদের জন্য্ও। সবশেষ জেমস বণ্ড চরিত্র রূপায়নকারী ড্যানিয়েল ক্রেগ, অভিনেত্রী লি সেদু'র সাথে তার মৃত্যুর কিছু দিন আগে বন্ড সিরিজ নিয়ে সিনেমা বানানো শুরু হয়। বন্ড ছবিগুলো এক দশক ধরে শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা করে। তবে ফ্লেমিং এর কিছু বন্ধু মনে করেন, এই বিরাট সাফল্যর জন্য তাকে কিছু মূল্যও দিতে হয়ছে। বান্ধবী লেজলি বলছেন, "সে যখন প্রথম বইটি লিখেছিলো, তা যে জনপ্রিয় হয়েছিল এবং এত অর্থ তিনি উপার্জন করেছিলেন - তা তাকে অবাক করেছিল। তখন তিনি লেখাটা উপভোগ করতেন। কিন্তু পরে যেটা হলো যে এত অর্থ আসছিল বলেই তিনি সেটা ছাড়তেও পারছিলেন না।" "শেষ দিকে তিনি বন্ডকে রীতিমত ঘৃণা করতেন। তিনি জানতেন যে এটা এখন চালিয়ে যেতে হবে। তবে সিনেমাটা তার ভালো লেগেছিল। তার মনে হয়েছিল এটা খুবই মজার। কিন্তু আমার মনে হয় এই বণ্ড তাকে নি:শেষ করে ফেলছিল।" সাহিত্যিক বন্ধু প্লুমার বলেন, "যে জেমস বন্ডকে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন - তা এক বিশাল চরিত্র হয়ে দাঁড়ালো। একটা ফ্রাংকেনস্টাইন বলতে পারেন। লোকে জেমস বন্ডকে নিয়ে কথা বলতে লাগলো কিন্তু ইয়ান ফ্লেমিংকে তারা ভুলে গেল।" ফ্লেমিং একবার বলেছিলেন - "আমি মনে করিনা যে বন্ডের জন্য আমি কোন সিরিয়াস লেখা লিখতে পারছি না। আমি শেকসপিয়ার হতে চাইনা। আমার সেরকম কোন উচ্চাভিলাষ নেই।"
news-56696037
https://www.bbc.com/bengali/news-56696037
প্রিন্স ফিলিপ: ৯৯ বছর, ১৪৩টি দেশ এবং অতি বিখ্যাত এক স্ত্রী
ডিউক অব এডিনবারা, যাকে যুক্তিযুক্তভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত স্বামী বলা যেতে পারে, তিনি ৯৯ বছর বয়সে আজ (শুক্রবার) মারা গেছেন।
তিনি জীবনের সাতটি দশক কাটিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছায়ায়। তবে তাঁর ছিল এমন এক ব্যক্তিত্বের ছটা, যে কারণে তাকে কেবল একজন স্বামী বলে বর্ণনা করা ঠিক হবে না। ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের পেছনের এই লোকটি কে, এবং কীভাবে তিনি রানিকে বিয়ে করেছিলেন? স্বামী, কিন্তু রাজা কখনোই নন প্রথমেই একটা কথা বলে রাখা ভালো: ডিউক, যিনি প্রিন্স ফিলিপ নামেও পরিচিত ছিলেন, কখনোই আসলে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারের লাইনে ছিলেন না। তাঁর বড় ছেলেই রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী। প্রিন্স ফিলিপ কখনোই রাজার উপাধি ধারণ করেন নি। এর কারণ, যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, একজন নারী যদি রাজাকে বিয়ে করেন, তিনি আলংকারিকভাবে রানি উপাধি পান, কিন্তু একজন পুরুষ যখন সিংহাসনে থাকা রানিকে বিয়ে করেন, তিনি কখনো রাজার উপাধি ব্যবহার করতে পারেন না। যিনি সিংহাসনে আসীন সত্যিকারের রাজা, এই উপাধি কেবল তার। রানি এবং প্রিন্স ফিলিপের চার সন্তান: প্রিন্স চার্লস (৭২), প্রিন্সেস অ্যান (৭০), প্রিন্স এ্যান্ড্রু (৬১) এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড (৫৭)। এই চারজন যখন তরুণ ছিলেন, তখন প্রিন্স ফিলিপের ইচ্ছেটাই বেশিরভাগ সময় প্রাধান্য পেত, যেটা তারা নিজেরাই বলেছেন। রাজপরিবারের জীবনীকার ইংগ্রিড সেওয়ার্ড প্রিন্স এ্যান্ড্রুকে উদ্ধৃত করে বলেন, তাদের শৈশবে তারা দরদ শিখেছেন রানির কাছ থেকে, আর দায়িত্ব ও শৃঙ্খলা শিখেছেন প্রিন্স ফিলিপের কাছ থেকে। তবে প্রিন্স এ্যান্ড্রু একথাও মনে করতে পারেন, কিভাবে তাদের বাবা তাদের ঘুম পাড়ানোর আগে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতেন, অথবা বাচ্চারা যখন রুডইয়ার্ড কিপলিং এর 'জাস্ট সো স্টোরিজ' পড়তো, সেটা শুনতেন। যে দীর্ঘজীবন তিনি পেয়েছিলেন, সেই সময়কালে তিনি তার আট নাতি-নাতনিকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন, দশ জন প্রপৌত্র-প্রপৌত্রীর জন্ম দেখেছেন। কোথায় তার জীবন শুরু হয়েছিল? প্রিন্স ফিলিপের জন্ম ১৯২২ সালের ১০ই জানুয়ারী গ্রিসের এক দ্বীপ কর্ফুতে। তিনি ছিলেন গ্রীসের প্রিন্স এ্যান্ড্রু এবং ব্যাটেনবার্গের প্রিন্সেস এলিসের কনিষ্ঠতম সন্তান এবং একমাত্র পুত্র। বাবা-মায়ের দিকের এই বংশধারার ফলে তিনি ছিলেন একইসঙ্গে গ্রিস এবং ডেনমার্কের রাজকুমার। কিন্তু এর পরের বছরেই গ্রিসে এক অভ্যুত্থানের পর তাদের পরিবার সেদেশ থেকে বিতাড়িত হয়। গ্রিস থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর প্রিন্সেস অ্যালিসের সঙ্গে শিশু প্রিন্স ফিলিপ একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ তাদের নিরাপদে ইতালি নিয়ে যায়। ফল রাখার এক বাক্সের মধ্যে তৈরি করা বিছানায় বহন করা হয় শিশু ফিলিপকে। কীভাবে তিনি বেড়ে উঠেছেন? ফিলিপের শৈশব ছিল কিছুটা ছন্নছাড়া, একের পর এক বিয়োগান্তক ঘটনার পরিণামে। ১৯৩০ সালে, যখন তার বয়স মাত্র ৮ বছর, তখন তার মাকে মানসিক রোগীদের এক চিকিৎসা কেন্দ্রে রাখা হয়, কারণ তার একের পর এক নার্ভাস ব্রেকডাউন হচ্ছিল। এর পরবর্তী বছরগুলোতে ফিলিপ তার বাবা-মাকে কমই দেখেছেন। তার বাবা এক প্রেমিকাকে নিয়ে চলে যান ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরাতে। তাঁর মায়ের দিকের আত্মীয়রা এসময় ফিলিপের লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পরে তিনি তাদের মাউন্টব্যাটেন নামই যুক্ত করেন নিজের নামের শেষে। ব্যাটেনবার্গ নামটিই ইংরেজিতে হয়ে যায় মাউন্টব্যাটেন। তার কৈশোর কেটেছে স্কটল্যাণ্ডের এক বোর্ডিং স্কুলে। এটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান শিক্ষক ছিলেন ইহুদী শিক্ষাব্রতী কার্ট হান। নাৎসীদের নিন্দা করায় জার্মানি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই স্কুলটি ফিলিপের জীবনকে একটা ছাঁচের মধ্যে নিয়ে আসলো, তাকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করলো। স্কুলের নিয়মকানুন ছিল বেশ কড়া। সকালে ঘুম থেকে উঠতে হতো বেশ তাড়াতাড়ি এবং উঠেই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় স্নান করতে হতো। এরপর দৌড়ের মতো নানা রকম শরীরচর্চা। প্রধান শিক্ষক কার্ট হানের ধারণা ছিল, বয়ঃসন্ধিকালের "বিষাক্ত আবেগ" ঠেকাতে এটা খুব প্রয়োজন। স্কটল্যাণ্ডের যে বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছেন প্রিন্স ফিলিপ ১৯৩৭ সালে প্রিন্স ফিলিপের চার বোনের একজন, সিসিল এক বিমান দুর্ঘটনায় তার জার্মান স্বামী, শাশুড়ি এবং দুই সন্তান সহ মারা যান। সিসিল তার কিছু আগে নাৎসী পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন, যে দলটি পুরো জার্মান রাষ্ট্র পুরোপুরি তাদের কব্জায় নিয়ে গেছে। ফিলিপের বয়স তখন ১৬ বছর। ডার্মস্ট্যাড শহরের রাস্তা দিয়ে তার বোনের কফিনের পেছনে যখন তিনি হাঁটছিলেন, তখন দুপাশের জনতা 'হেইল হিটলার' স্যালুট দিচ্ছিল। প্রিন্স ফিলিপ পরে এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, তখন আসলে এটাই ঘটেছিল। "আমাদের পরিবার ভেঙে গেছে, আমার মা ছিলেন অসুস্থ, আমার বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে, এবং আমার বাবা তখন ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে। আমাকে এই সবকিছু মেনে নিতে হচ্ছিল।" ফিলিপের সঙ্গে রানির প্রণয় হলো কিভাবে? প্রিন্স ফিলিপ যখন স্কুল ছাড়লেন, তখন ব্রিটেনের সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধ শুরু হওয়ার উপক্রম। তিনি ডার্টমুথের রয়্যাল নেভাল কলেজে যোগ দিলেন। সেখানে তিনি তার ক্লাসের সেরা ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করলেন। ১৯৩৯ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জ যখন সেখানে এক সরকারি সফরে গেলেন, তখন প্রিন্স ফিলিপের ওপর দায়িত্ব পড়লো রাজার দুই মেয়ে, প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং প্রিন্সেস মার্গারেটের দেখাশোনা করার। তাদের গভর্নেস মেরিয়ন ক্রফোর্ড পরে তার স্মৃতিচারণে বলেছেন, তখন প্রিন্স ফিলিপ নিজেকে বেশ একটু জাহির করছিলেন। ১৩ বছর বয়সী প্রিন্সেস এলিজাবেথের মনে তিনি বেশ ভালো ছাপ রাখতে সক্ষম হন। গর্ডনস্টাউন স্কুলে প্রিন্স ফিলিপের এক বিরল ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রিন্স ফিলিপ বেশ কৃতিত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। তিনি ভারত মহাসাগরে প্রথম বারের মতো লড়াই প্রত্যক্ষ করেন। ১৯৪২ সালের অক্টোবরে তার বয়স যখন মাত্র ২১ বছর, তখন তিনি রাজকীয় নৌবাহিনীর কনিষ্ঠতম এক ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট। কিশোরী রাজকুমারী এলিজাবেথ এবং নৌবাহিনীর অফিসার ফিলিপের মধ্যে পত্র-যোগাযোগ ছিল। ১৯৪৩ সালের ক্রিসমাসের সময়টা প্রিন্স ফিলিপ রাজপরিবারের সঙ্গে কাটান। এসময় রাজকুমারী এলিজাবেথের টেবিলে শোভা পাচ্ছিল প্রিন্স ফিলিপের ইউনিফর্ম পরা ছবি। এর মাধ্যমে যেন তিনি তার মনের পছন্দ তুলে ধরছিলেন। কিন্তু রাজপরিবারের অনেকের মধ্যে সংশয় ছিল। অনেকে অবজ্ঞাভরে বলছিল, "প্রিন্স ফিলিপ বেশ রুক্ষ, ব্যবহার জানে না, অশিক্ষিত এবং সে স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে না।" তবে প্রিন্স ফিলিপের জীবনীকার ফিলিপ এইডের মতে, ১৯৪৬ সালে যেসব চিঠি প্রিন্স ফিলিপ লেখেন, তাতে একজন উৎসাহী তরুণ যেন জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছেন এমন ধারণাই পাওয়া যায়। তিনি তার ভাবী শাশুড়িকে লিখেছিলেন, "আমি জানি, আমার জীবনে ভালো যত কিছু ঘটেছে, তার সবকিছুর উপযুক্ত আমি নই। যুদ্ধ থেকে বেঁচে এসে বিজয় দেখা, বিশ্রামের সুযোগ পাওয়া এবং নিজেকে নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া, এরপর পুরোপুরি প্রেমে পড়া- এতকিছুর পর নিজের ব্যক্তিগত এবং বিশ্বের তাবৎ সমস্যাকে একেবারেই ক্ষুদ্র মনে হয়।" ১৯৪৭ সালে বিয়ের আগে বাগদানের পর বাকিংহাম প্রাসাদের বাইরে রানি এলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ রাজা জর্জ তার মেয়ের সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপের বিয়ের অনুমতি দিলেন। কিন্তু এজন্যে প্রিন্স ফিলিপকে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব নিতে হলো, তার বিদেশি খেতাব বর্জন করতে হলো এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডের অনুসারী হতে হলো। ১৯৪৭ সালের ২০শে নভেম্বর, তাদের বিয়ের দিনে, তাকে ডিউক অব এডিনবারা খেতাব দেয়া হলো। বাকী জীবন তিনি এই নামেই পরিচিত হয়েছেন। বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ২৬, তার স্ত্রীর বয়স ২১। এই দম্পতির কাঁধে রাজকীয় দায়িত্ব এসে পড়ার আগে তারা মাত্র চার বছরের কিছু বেশি সময় পেয়েছিলেন। ততদিনে তাদের দুটি সন্তান হয়েছে। ১৯৫২ সালে কেনিয়ায় তারা যখন এক শিকার অভিযানে ছিলেন, তখন খবর এসে পৌঁছালো রাজা ষষ্ঠ জর্জ, এলিজাবেথের পিতা, ৫৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। এই মুহূর্তটি, যখন ডিউক অব এডিনবারা উপলব্ধি করলেন যে, তার স্ত্রী এখন রানি হতে যাচ্ছেন, তার স্মৃতিচারণ করেছেন ডিউকের বন্ধু কমান্ডার মাইকেল পার্কার। "তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তার মাথার ওপর অর্ধেক পৃথিবী ভেঙ্গে পড়েছে। জীবনে আর কোন মানুষের জন্য আমার জীবনে আর এতটা করুণা হয়নি। তিনি বেশ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলেন। তিনি স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছিলেন, তাদের যে সরল সুখী দাম্পত্য জীবনের বুঝি এখানেই শেষ।" প্রিন্স ফিলিপ নৌবাহিনীতে আরও উচ্চপদে যাওয়ার যেসব আকাঙ্ক্ষা লালন করছিলেন, সেগুলো বাদ দিতে হলো। নতুন রানি এলিজাবেথ এখন তার স্বামীকে সারাক্ষণ তার পাশে-পাশে চান। শিশুপুত্র চার্লস এবং কন্য অ্যানের সঙ্গে প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ, ১৯৫০ সালে। ডিউক অব এডিনবারাকে এখন থেকে রানির সঙ্গী বলে ঘোষণা করা হলো। তার প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে তার স্ত্রীকে সব কাজে সহযোগিতা-সমর্থন দেয়া। তবে প্রিন্স ফিলিপ চেয়েছিলেন রাজপরিবার তার নামের শেষাংশ, মাউন্টব্যাটেন ব্যবহার করুক। ১৯৫০ এর দশকে এটা নিয়ে বেশ দীর্ঘ বিতর্ক চলে। কিন্তু রানি এলিজাবেথ তার হাউস অব উইন্ডসরের নামই ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। প্রিন্স ফিলিপ বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন, "এই দেশে আমিই একমাত্র ব্যক্তি, নিজের ছেলে-মেয়েদেরকে নিজের নাম দেয়ার অধিকার যার নেই। আমি যেন একটা অ্যামিবা।" রাজপ্রাসাদে তার জন্য যে সীমিত ভূমিকা নির্ধারিত ছিল, তিনি সেটার মধ্যে জীবনের কোন মানে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বাকিংহ্যাম প্যালেসের যে আড়ষ্ট পরিবেশ, সেখানে তিনি নতুন বাতাস সঞ্চারের জন্য ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রিন্স ফিলিপ রাজপরিবারকে কিভাবে বদলে দিয়েছেন? গ্রিস থেকে যে তাদের পুরো পরিবারকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, সেটি প্রিন্স ফিলিপ কখনো ভুলতে পারেন নি। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজতন্ত্রকে টিকে থাকতে হলে ক্রমাগত খাপ খাইয়ে নিতে হবে। তিনি এমন কিছু মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করলেন, যেখানে রানি সমাজের বিভিন্ন পটভূমির মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা রাজভৃত্যদের মাথার চুল রঙ করার রীতি তিনি বন্ধ করলেন। এবং তিনি যখন জানতে পারলেন যে, রাজপ্রাসাদে কেবল রাজপরিবারের সদস্যদের রান্নার জন্য দ্বিতীয় একটি রান্নাঘর চালু আছে, সেটি তিনি বন্ধ করে দিলেন। বাকিংহাম প্রাসাদে ডিনারের আয়োজন এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন ছিল আরও ব্যক্তিগত এবং এতে নানা ধরণের গ্যাজেটের প্রতি তার শিশুসুলভ আগ্রহেরই প্রতিফলন ছিল। অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে ১৯৪৯ সালে যখন তারা ক্লারেন্স হাউসে থাকতে আসেন, তখন তিনি সেখানে এমন অনেক যন্ত্রপাতি বসিয়েছিলেন যাতে শ্রম বাঁচবে। এর মধ্যে ছিল এমন একটি যন্ত্র, যেটি লাগানো হয়েছিল তার কাপড়ের আলমারিতে। এই যন্ত্রের বোতাম টেপার সঙ্গে সঙ্গে আলমারি থেকে একটা স্যুট বেরিয়ে আসবে। ১৯৬৯ সালে 'রয়্যাল ফ্যামিলি' নামে এক যুগান্তকারী টেলিভিশন ডকুমেন্টারি বেশ সাড়া ফেলেছিল। ডিউক এই টিভি ডকুমেন্টারির কাজে সহায়তা করেন। এতে দেখা গিয়েছিল, রানি তার ঘোড়াকে গাজর খাওয়াচ্ছেন, টিভি দেখছেন এবং বালমোরাল প্রাসাদের বারবিবিকিউ পার্টিতে সালাদ নিয়ে আলাপ করছেন, আর পাশে প্রিন্সেস অ্যান সসেজ রান্না করছেন। বাকিংহাম প্রাসাদে প্রিন্স ফিলিপ ইন্টারকম বসান, যাতে করে তার হাতে লেখা চিঠি নিয়ে রাজভৃত্যদের বারে বারে রানির কাছে দৌড়াতে না হয়। প্রিন্স ফিলিপ তার নিজের ব্যাগ নিজেই বহন করতেন এবং নিজের রুমে নিজের ব্রেকফাস্ট নিজেই বানাতেন। সেখানে একটি ইলেকট্রিক ফ্রাইং প্যান ছিল। কিন্তু ঘরে গন্ধ হচ্ছে বলে রানি আপত্তি করার পর সেটা তাকে বন্ধ করতে হয়। 'র‍য়্যাল ফ্যামিলি' ডকুমেন্টারির একটি দৃশ্য। এটি তৈরিতে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ তিনি সময় কাটাতেন কীভাবে? ব্রিটিশ ইতিহাসে প্রিন্স ফিলিপ হচ্ছেন কোন রানির সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের সঙ্গী। তিনি মোট ২২ হাজার ১৯১টি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তিনি যখন ২০১৭ সালে রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অবসরে গেলেন, তখন তিনি ৭৮০টির বেশি সংস্থা বা সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক, প্রেসিডেন্ট বা সদস্য। রানি যখন কমনওয়েলথের কোন দেশ বা অন্য কোথাও রাষ্ট্রীয় সফরে যেতেন, তাকে সাথে যেতে হতো। তিনি ১৪৩টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি ফরাসী এবং জার্মান, এই দুটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তবে তার সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার হিসেবে থেকে যাবে 'ডিউক অব এডিনবারা' পুরস্কার। তার সাবেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুর্ট হানের তাগিদে তিনি ১৯৫৬ সালে এই এটি চালু করেন। ১৪ হতে ২৫ বছর বয়সীরা স্বেচ্ছা-সেবামূলক কাজ, শারীরিক দক্ষতা অর্জন এবং পর্বতারোহণ বা পালতোলা নৌকায় অভিযানে গিয়ে এই পুরস্কার পেতে পারে। ২০১৬ সালে এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় বিশ্বের ১৩০টি দেশের ১৩ লাখ তরুণ-তরুণী। অবসর সময়ে তিনি খেলাধুলা করতেন, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ। তিনি তার স্কুল গর্ডনস্টাউনে পালতোলা নৌকা চালাতে শেখেন এবং যুক্তরাজ্যের আইল অব ওয়াইটে যে রেগাটা হয়, সেটিতে নিয়মিত অংশ নিতেন। তিনি ঘোড়ার শকট চালাতে পছন্দ করতেন। ১৯৬০ এর দশকে তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের সেরা চার জন পোলো খেলোয়াড়ের একজন। তিনি পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলনের পক্ষেও কাজ করেছেন। ১৯৬১ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড-লাইফ ফান্ডের (ইউকে) প্রেসিডেন্ট হন। তবে সেবছরই ভারত সফরে গিয়ে একটি শিকার করার বাঘের সঙ্গে তোলা তার ছবি ফাঁস হওয়ার পর তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। জয়পুরের মহারাজা এবং মহারানির সঙ্গে রানিএলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ। ১৯৬১ সালে এই বাঘ শিকার নিয়ে সমালোচিত হন তিনি। তার নিজের এবং স্ত্রীর দৃষ্টিতে তিনি: ব্রিটিশ জীবনে তার অবদান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর অকপটে তিনি জবাব দিয়েছিলেন: "আমার যা সেরা, সেটাই আমি করার চেষ্টা করেছি। অনেকে মনে করেন, যার করেছি, ঠিকই করেছি। অনেকে তা মনে করে না। আপনি কী করতে পারেন? আমি যেভাবে কাজ করি, সেটা তো আমি বদলাতে পারবো না। এটাই আমার স্টাইল‍।" তবে প্রিন্স ফিলিপ বার বার বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন তার খোলামেলা মন্তব্য বা অসংবেদনশীল বর্ণবাদী মন্তব্যের কারণে। একবার ১৯৮৬ সালে চীন সফরে গিয়ে তিনি সেখানে একদল ব্রিটিশ ছাত্রকে বলেন, "এখানে বেশিদিন থাকলে তোমাদেরও কিন্তু চেরা চোখ হয়ে যাবে।" সমালোচকরা মনে করেন তিনি বেশি বেফাঁস কথা বলেন আর তিনি একেবারেই সেকেলে। তবে যারা তার পক্ষে, তারা যুক্তি দেন যে, তিনি ভিন্ন যুগের মানুষ, একটু রসিকতা করার চেষ্টা করেন। যারা ভেতরের খবর জানেন, তাদের মতে, এই হাস্যরসই আসলে প্রিন্স ফিলিপ এবং রানিকে এক করে রেখেছিল। তবে তিনি নিজে বলেছেন, এক্ষেত্রে সব কৃতিত্ব আসলে রানির সহনশীলতার। প্রিন্স ফিলিপ এবং রানি এলিজাবেথ। ২০০৭ সালের ছবি। রানির সব বক্তৃতা একসময় শুরু হতো, "আমার স্বামী এবং আমি…" এই বলে। এটা নিয়ে ১৯৬০ এর দশকে বেশ রঙ্গ-রসিকতা হতো। এরপর তিনি এই কথা বলা বন্ধ করে দেন। তবে আবেগটা থেকে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তিনি কেবলই "আমি।" তাদের বিয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে রানি তার স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন এভাবে: "বেশিরভাগ সময়, আমার মনে হয়, প্রিন্স ফিলিপকে কেবল আমার বক্তৃতা শুনতে হয়। তবে আমরা কোন বক্তৃতার আগে এটা নিয়ে বেশ আলোচনা করি, এবং আপনারা নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারেন, তার মতামত আমার বক্তৃতায় সোজাসুজিই প্রতিফলিত হয়। "তিনি এমন একজন, যিনি সহজে নিজের প্রশংসা গ্রহণ করেন না, কিন্তু সোজা কথায় বলতে গেলে, তিনিই আমার জীবনের সাহস, এত বছর ধরে তিনি এবং তার পুরো পরিবার আমার পাশে আছেন। এই দেশ এবং বিশ্বের আরও অনেক দেশের অনেক ঋণ তার কাছে, তিনি যতটা দাবি করেন, বা যতটা আমরা জানি, তার চেয়ে অনেক বেশি।"
news-55925019
https://www.bbc.com/bengali/news-55925019
ইতিহাসের সাক্ষী: কীভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সার্চ ইঞ্জিন গুগলের
গুগল হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। কিন্তু কীভাবে শুরু হয়েছিল এই গুগলের যাত্রা? কার মাথায় এসেছিল এমন একটা কিছু চালু করার চিন্তা?
গুগল এখন পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে গেছে এর সূচনা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র - যারা তখন পিএইচডি করছিলেন। তাদের নাম ল্যারি পেজ আর সের্গেই ব্রিন। এ দু'জনের হাতেই সৃষ্টি হয়েছিল গুগলের - যা এখন পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান কোম্পানি। গুগলের ওই দুই প্রতিষ্ঠাতার সাথে একই সময় স্ট্যানফোর্ডে ছিলেন তামারা মাঞ্জনার - একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী । কীভাবে তার দুই বন্ধু ল্যারি আর সের্গেই ইন্টারনেটের প্রথম যুগে একটা নতুন ধরনের সার্চ ইঞ্জিনের আইডিয়া নিয়ে এসেছিলেন - তারই স্মৃতিচারণ করেছেন তামারা মাঞ্জনার, বিবিসির ফারহানা হায়দারের কাছে। এ নিয়েই ইতিহাসের সাক্ষীর এ পর্ব। বৈপ্লবিক পরিবর্তন সেটা ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি। স্ট্যানফোর্ডের দুজন পোস্টগ্র্রাজুয়েট ছাত্রের মাথায় এমন একটা আইডিয়া এলো - যা পরে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল ইন্টারনেটের জগতে। সের্গেই ব্রিন বলেন, "আমাদের সবসময়ই মনে হয়েছিল যে এরকম একটা উদ্যোগের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সে সময়টা আমাদের চিন্তা ছিল একটা খুব ভালো সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করা, এবং যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে তা পৌঁছানো।" ল্যারি পেজের কথায়, "আমাদের মিশন ছিল বিশ্বের তথ্যকে সুবিন্যস্ত করা, যেখানে সারা দুনিয়ার লোক ঢুকতে পারবে, সবার উপকার হবে। আমার মনে হয়েছিল সারা পৃথিবীর জন্য এটা একটা দারুণ ব্যাপার হবে। " সেসময় পেজ ও ব্রিনের সাথেই স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি করছিলেন আরেকজন ছাত্রী - যার নাম তামারা মাঞ্জনার। তামার বলছিলেন, "ল্যারি খুব হাসতো। ও ছিল খুব বুদ্ধিমান, কিন্তু মজার। আর সের্গেই ছিল একটু সিরিয়াস। কিন্তু দু'জনেরই মধ্যে এরকম একটা ভাব ছিল যে - 'আমরা আমাদের মত করে কাজটা করতে চাই'।" "এটা হয়তো তাদের ব্যক্তিত্বের একটা অংশ ছিল এবং এ জন্যই গুগল এত অন্যরকম একটা জায়গা হয়ে উঠতে পেরেছে।" সিলিকন ভ্যালিতে তখন সৃষ্টির প্রাণচাঞ্চল্য ল্যারি পেজের জন্ম মিশিগান অঙ্গরাজ্যে। আর সের্গেই ব্রিনের জন্ম হয়েছিল রাশিয়ায়। তবে দুজনেরই বাবা-মায়েরা ছিলেন শিক্ষাবিদ এবং দুজনেই স্ট্যানফোর্ডে এসেছিলেন কম্পিউটারে সায়েন্সে পিএইচডি করতে। তাদের প্রথম পরিচয় হয় ১৯৯৫ সালে। তখন ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি ছিল এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার জায়গা। "সবখানেই একটা প্রাণচাঞ্চল্য, সবখানেই নতুন কিছুর জন্ম হচ্ছে। সবকিছুই সম্ভব। ১৯৯০এর দশকের মাঝামাঝি সময়টার সবচেয়ে দারুণ ব্যাপারটা ছিল - যে কোন একটা পার্টিতে গেলেই একাধিক দারুণ এবং আকর্ষণীয় চাকরির অফার পেয়ে যেতেন ।" "কাজেই প্রতি সপ্তাহেই আমাকে মনে মনে নতুন করে একটা প্রতিজ্ঞা করতে হতো যে কোন অবস্থাতেই গ্র্যাড স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে দিলে চলবে না" - বলছিলেন তামারা। ল্যারি পেজ আর সের্গেই ব্রিন, ২০০৩ সালে "সবখানেই তখন স্টার্ট-আপ - মানে নতুন কিছু একটা ব্যবসা শুরু করা - প্রায় বিস্ফোরণের মত। তখনকার গ্র্যাজুয়েট কোর্সের ছাত্রদের এক-চতুর্থাংশই তখন কিছু-না-কিছু স্টার্ট-আপ করছে।" "ফ্যাকাল্টিগুলোরও তখন স্টার্ট-আপ ছিল। কাজেই স্ট্যানফোর্ডের প্রফেসরদের বেশির ভাগই তখন তাদের আগেকার স্টার্ট-আপের আয়ের কারণে মাল্টি-মিলিওনিয়ার হয়ে গেছেন।" "একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানীর জন্য সেটা ছিল এক আশ্চর্য জায়গা।" 'খুব সহজেই তর্ক বেধে যেতো তাদের' স্ট্যানফোর্ডে ল্যারি পেজ এবং আরো তিন জনের সাথে একই অফিসে কাজ করতেন তামারা। "ল্যারির সাথে দেখা হলে আপনার সের্গেইয়ের সাথে দেখা হবেই - কারণ ওদের সবসময়ই এক সাথে দেখা যেতো। তখনও কিন্তু তাদের বন্ধুত্বটা ঠিক সরল রেখা্য় চলতো না।" দু'জনই পরে বলেছেন, প্রথম তাদের যখন দেখা হয়েছিল তখন তাদের একের অপরকে একেবারেই পছন্দ হয়নি। "তাদের মধ্যে খুব সহজেই তর্ক বেধে যেতো" - বলেন তামারা। ১৯৯৬ সালে পেজ আর ব্রিন একটি থিসিস প্রকল্প শুরু করলেন - কিভাবে ইন্টারনেটে বিভিন্ন পেজ খুঁজে পাবার প্রক্রিয়াটাকে উন্নত করা যায়। 'সার্চ ইঞ্জিন বলে তখন প্রায় কিছুই ছিল না' এখন এটা কল্পনা করা মুশকিল, কিন্তু ইন্টারনেটের প্রথম যুগে কোন কিছু খুঁজে পাবার প্রক্রিয়াটা ছিল খুবই বিশৃঙ্খল এবং খুব ঝামেলার। কারণ তখনকার দিনে সার্চ ইঞ্জিন বলে কিছু ছিল না। তামারার কথায়, "আজকালকার লোকেরা হয়ত বুঝবে না যে তখনকার ইন্টারনেট কেমন ছিল। আসলে আক্ষরিকভাবেই তখন সার্চ বলে কিছু ছিল না। আপনাকে কিছু পেতে হলে হাতে তৈরি ইনডেক্স বা সূচি থেকে কোন কিছু খুঁজে বের করতে হতো।" "ইন্টারনেটের দুনিয়া তখন এত ছোট ছিল যে আমার ওয়েবপেজে কেউ ক্লিক করলে আমি তা লগ করে রাখতাম, কি উত্তেজনা - আমার ওয়েবপেজে কেউ একজন ক্লিক করেছে !" পেজ আর ব্রিন বুঝতে পারলেন, কেউ যখন কোন ওয়েবপেজ থুঁজছে তখন সেটা যে শুধু প্রাসঙ্গিক হতে হয় তাই নয়, বরং সেটা আগেকার ব্যবহারকারীদের চোখে মূল্যবান কিনা - তাও দেখা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগলের একটি অফিস "যেমন আপনি যখন 'কিভাবে চকলেট কেক তৈরি করতে হয় বলে সার্চ দিচ্ছেন, আপনি শুধু যে চকলেট কেক কথাটা আছে এমন পেজ খুঁজছেন তাই নয়, আপনি চান সেই পেজটা - যাতে সেরা চকলেট কেক বানানোর পদ্ধতি আছে বলে অন্য লোকেরা রায় দিয়েছে। " পেজ র‍্যাংকিং, এ্যালগরিদম - এক নতুন আইডিয়া একে বলে পেজ র‍্যাংকিং এবং এটা ছিল একটা নতুন আইডিয়া। একাডেমিক নিবন্ধ যেভাবে অন্যরা পড়ে মূল্যায়ন করেন - তা থেকেই এর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন পেজ আর ব্রিন। কারণ তারা তাদের বাবা-মায়ের কাজ থেকেই এটা জানতেন। আর এজন্য তারা ব্যবহার করেন জটিল এক ধরণের গণিত - যাকে বলা হয় এ্যালগরিদম। "কম্পিউটার কি কাজ করবে এবং কিভাবে কাজ করবে - তাকে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলে দেয়ার একটা পদ্ধতি হচ্ছে এ্যালগরিদম।" " পেজর‍্যাংকের মূলে যে চমৎকার আইডিয়াটা কাজ করছে তা হলো - এ ক্ষেত্রে আপনি ওয়েবের গঠনটাকেই ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ অন্য লোক যত বেশি আপনার পেজটির প্রতি আকৃষ্ট হবে ততই আপনার পেজটি শক্তিশালী, বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রধান হয়ে উঠবে।" "অসংখ্য রকম নেটওয়ার্ক মিলে যে ইন্টারনেট - তাতে ঠিক কোন্ জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ - তা নির্ধারণের জন্য এখানে ব্যাকলিংক কাঠামোর সুবিধাটা নেয়া হচ্ছে। এর ওপর ভিত্তি করেই পেজর‍্যাংকিং এ্যালগরিদমটা কাজ করছে। " এই এ্যালগরিদমটা ছিল ব্যাকরাব নামে একটা সার্চ ইঞ্জিনে - এটা পেজ ও ব্রিন চালু করেছিলেন ১৯৯৬ সালে। এটা যেভাবে কাজ করে তা দেখে তামারা খুবই মুগ্ধ হয়েছিলেন। "আমি বেশ আগে থেকেই ব্যাকরাব ব্যবহার করতে শুরু করেছিলাম। কারণ এটা ইন্টারনেট সার্চের জন্য খুব স্পষ্টভাবেই অন্যগুলোর চাইতে ভালো ছিল।" বানানের ভুলে 'গুগোল' হয়ে গেল 'গুগল' ব্যাকরাব তখন এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে প্রায়ই চাপ সামলাতে না পেরে স্ট্যানফোর্ডের ইন্টারনেট ক্র্যাশ করতো। এসময়ই এর দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি ও সের্গেই ভাবলেন - কোম্পানিটার একটা নতুন নাম দরকার। সেজন্য নানা জনের আইডিয়া শোনার জন্য সবাই একটা 'ব্রেনস্টর্মিং' সভায় বসলেন। সেই সভা এখন তথ্যপ্রযুক্তিযুগের কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে। সেখানেই গুগল নামটির প্রস্তাব করা হয়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা বোর্ডে লেখা হলো সেই নাম। এটা ছিল Googol - গণিতশাস্ত্রের একটা শব্দ - যার অর্থ ১ এর পিঠে ১০০টা শূন্য। কিন্তু সেটা লিখতে গিয়ে বানানে একটা ভুল হয়ে গেল - হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে, অথবা কে জানে - হয়তো ইচ্ছে করেই। তামারা বলছিলেন, "এটা ছিল তাদের স্বভাবসুলভ দীর্ঘ একটা বৈঠক। আমি জানি - কারণ পরদিন এসে আমিও দেখলাম, সব্বনাশ, এরা তো বানানটা ভুল লিখেছে।" "কারণ আসলে শব্দটা হচ্ছে googol - 'জি ডবল ও জি ও এল' - যার মানে হচ্ছে একটা গাণিতিক সংখ্যা, একের পিঠে একশটা শূন্য 'জি ডবল ও জি এল ই' নয়। কিন্তু সেটাই টিকে গেল।" ১৯৯৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর গুগল ডট কম ডোমেইন নামটি রেজিস্টার করা হলো। আমরা নেই, 'বার্নিং ম্যান' দেখতে গেছি তার কিছুদিন পরই বেরুলো প্রথম গুগল ডুডল - অর্থাৎ গুগল লোগোতে কোন বিশেষ ব্যক্তি, ঘটনা বা দিনকে স্মরণ করে যে পরিবর্তন আনা হয় । প্রথম ডুডলটি ছিল একটি জ্বলন্ত মানুষ - যার অর্থ পেজ ও ব্রিন নেভাদার 'বার্নিং ম্যান' উৎসবে বেড়াতে গেছেন। "গুগল এমন অনেক জিনিসই করেছে যা কর্পোরেট জগতে করা হয়নি। যেমন এই গুগল ডুডল।" "প্রথম ডুডলে ছিল গায়ে আগুন লাগা মানুষের ছবি - যার অর্থ সবাইকে জানিয়ে দেয়া যে তারা এখানে নেই, স্ট্যানফোর্ডের বাইরে কোথাও গেছেন।" পরের বছর পেজ আর ব্রিন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছেড়ে বাইরে বেরোলেন। তারা বন্ধু, পরিবার, আর কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সাহায্য নিয়ে ১০ লাখ ডলার তুললেন, এবং চালু করলেন তাদের কোম্পানি। এর অফিস ছিল তাদের এক বন্ধুর গ্যারাজে। গুগল এখন পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন সার্চ ইঞ্জিনটা ব্যবহার করা ছিল খুবই সহজ। আপনাকে শুধু তাদের ইন্টারফেসে একটা-দুটো শব্দ টাইপ করতে হতো। তাদের কোম্পানির আকার হুহু করে বাড়তে লাগলো। "তারা কতটা ভালো করছে - তা বোঝা যেতো যখন তাদের কোন একটা পার্টিতে গিয়ে দেখা যেতো আগেরবারের চেয়ে অনেক বেশি জায়গা নিয়ে তাদের পার্টি হচ্ছে। বলতে হতো "ও, তোমরা তো দেখছি অনেক বড় অফিস নিয়েছো।"" আগস্ট ২০০৪ সালে গুগল তাদের নতুন সদর দফতরে উঠলো - ক্যালিফোর্নিয়ায়। যার নাম গুগলপ্লেক্স। সেই একই বছর কোম্পানি স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হলো। সেই ভুল বানানের 'গুগল' এখন একটি বিশেষ্য এবং ক্রিয়াপদ গুগল এখন এমনভাবে আমাদের জীবনের অংশ হযে গেছে যে তা একটা বিশেষ্য এবং ক্রিয়াপদে পরিণত হয়েছে। তারা বিজ্ঞাপন থেকে শত শত কোটি ডলার আয় করছে। তাদের বিরুদ্ধে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া, বাজারে একচেটিয়া প্রাধান্য কায়েম করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং চীনে তাদের বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগও উঠেছে। তামারা মাঞ্জনারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দুই বন্ধূ কি তাদের শুরুর সময়কার নীতিতে অটল থাকতে পেরেছে? "তাদের আদর্শ ছিল তারা যেন অশুভ কিছু হয়ে না ওঠে। তারা ঠিক সেটাই বিশ্বাস করতো। তারা পৃথিবীকে আরো বাসযোগ্য করার জন্য কাজ করেছে। তবে আমি বুঝি যে এত বড় কোম্পানি হয়ে ওঠায় এখন তাদের হাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষমতা এসে গেছে। কিন্তু প্রথম দিকে তারা এটাই চাইতো।" তামারা এখন বিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তার কি এখন অনুতাপ হয় এই ভেবে যে কেন তিনি সে সময় গুগল এর সাথে জড়িত হননি, হয়তো তাহলে তিনি একজন বিলিওনিয়ার হয়ে যেতেন? "আমি ভেবেছিলাম, কিন্তু কিভাবে আমি কাজ করতে চাই তা ঠিক করতে পারিনি। তা ছাড়া আমার চিন্তাভাবনাও তাদের চেয়ে আলাদা ছিল।" "আমার তখন মাথায় ছিল পিএইচডি শেষ করার চিন্তা। আমি ভেবেছিলাম - না না, কোন স্টার্ট-আপে যোগ দিলে আমার পিএইচডি আর শেষ হতো না।"
news-47153700
https://www.bbc.com/bengali/news-47153700
সাংবাদিককে কেন 'আত্মহত্যার পরামর্শ' দিলেন রেল সচিব?
ঢাকার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে 'খামোশ' বলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন। এর জের ধরে তাকে দু:খ প্রকাশ করতে হয়েছিলো বিবৃতি দিয়ে এবং ওই প্রতিবেদক সশরীরে দেখা করার পর তাকে সমবেদনা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীও।
রেল সচিব কথা বলছেন সাংবাদিক নাজমুস সালেহীর সাথে। সে ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার আরেকজন সাংবাদিকের সাথে সরকারের একজন সচিবের কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ওই সচিব সাংবাদিককে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দিচ্ছেন। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করেছে বেসরকারি সময় টেলিভিশন। প্রতিবেদনে দেখা যায় রিপোর্টার নাজমুস সালেহী গিয়েছিলেন ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে। সেখানে তিনি দেখতে পান ঢাকা কোলকাতা ট্রেনের টিকেটের দাম হলো ২,৪৩২ টাকা কিন্তু টিকেটে মোট মূল্য লেখা ২,৫০০ টাকা। প্রতি টিকেটে এভাবে ৬৮ টাকা করে বেশি নেয়া হলে বছরে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে মোট বেশি নেয়া হচ্ছে বছরে ৪০ লাখেরও বেশি বলে ওই প্রতিবেদন বলা হচ্ছে। এ টাকা কোথায় যাচ্ছে - তা নিয়ে কর্মকর্তারা কিছু বলতে রাজী হওয়ায় মিস্টার সালেহী যান রেল সচিব মোফাজ্জল হোসেনের কাছে। তিনি সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেন, "এটা নিয়ে আপনার এতো উৎসাহ কেনো। যে নিয়মিত কোলকাতায় যায় সে জিজ্ঞেস করুক। তাকে বলবোনে। আমাদের কাছে তো এটার ব্যাখ্যা আছে"। এ পর্যায়ে রিপোর্টার সে ব্যাখ্যা তাকে (সচিবকে) অন রেকর্ড দিতে বললে সচিব বলেন, "এ ব্যাখ্যা আপনার দরকার কেন?" এরপর আরেকজন কর্মকর্তা মিয়া জাহানকে ডেকে পাঠান সচিব। সেখানে মিয়া জাহান পরদিন বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু একদিন সময় দিয়েও ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজী না হওয়ায় সাংবাদিক নাজমুস সালেহী আবারো সচিবের কাছে যান। সেখানেই কথোপকথনের এক পর্যায়ে রিপোর্টারকে উদ্দেশ্য করে সচিবের কণ্ঠে শোনা যায়, "আপনি এখন আত্মহত্যা করেন। একটি স্টেটমেন্ট লিখে যান যে রেলের লোকেরা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেনা। এই মর্মে ঘোষণা দিলাম যে তারা কথা না বলার কারণে আমি আত্মহত্যা করলাম"। সচিবের এমন বক্তব্য তার কণ্ঠেই সময় টেলিভিশন তার প্রচার করেছে রেল টিকেটের বিষয়ে তাদের প্রতিবেদনে। রিপোর্টার নাজমুস সালেহী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, "প্রতিবেদনে আমরা পুরো ঘটনা তুলে ধরেছি। ঘটনাটা সম্পূর্ণ সত্যি। রেল সচিব আমাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন। এখন আমার অফিস বিষয়টি দেখছে"। সাংবাদিকদের কাছে দু:খ প্রকাশ করলেন ড. কামাল হোসেন কেন ভিয়েতনামকে বেছে নিলেন ট্রাম্প? 'বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ থেকে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্তের দেশ' রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মো: মোফাজ্জেল হোসেন। সচিব বলছেন - তিনি রসিকতা করেছিলেন রেল সচিব মোফাজ্জল হোসেন স্বীকার করেছেন তিনি কথাগুলো (আত্মহত্যা করতে বলা) বলেছিলেন কিন্তু সেটি তিনি বলেছিলেন 'রসিকতা' করে। "আমি রসিকতা করে বলেছিলাম। আমি বুঝিনি যে সে ওভাবে নেবে। একেবারেই ফান করার জন্য বলেছিলাম, মিন করে বলিনি"। "তারপরেও কোনো ভুল হলে আমি স্যরি বলছি। তাকে আপন ভেবেই রসিকতা করে বলেছি। তাকে আমি স্নেহের দৃষ্টিতে দেখি। ব্যাপারটা সে এভাবে নেবে তা ভাবিনি"। মিস্টার হোসেন বলেন, ঘটনার দিন তিনি খুবই ব্যস্ত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা ছিলো। তারপরেও তিনি ওই সাংবাদিককে সহযোগিতা করেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। একজন কর্মকর্তাকে ডেকে ওই সাংবাদিকের সাথে কথা বলারও নির্দেশ দিয়েছিলাম, সচিব বলেন। সচিবের বক্তব্য সম্পর্কে আইনজীবীর অভিমত আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে বলেছেন সচিব রসিকতা বা তামাশা যাই বলুননা কেন সচিবের পদে থেকে এটা তিনি ঠিক করেননি। "এটি আত্মহত্যার প্ররোচনা হবে কিনা সেটার সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। তবে রেল সচিব সরকারি একজন কর্মকর্তা। কর্মকর্তা না হলে হয়তো কেউ তার কাছে এ বিষয় মন্তব্য নিতে যেতোনা।" "দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে এ ধরনের মন্তব্য পেশাদারী অসদাচরণ। তাই সেটি মুখ ফসকে হলেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন"। মিস্টার বড়ুয়া বলেন, এখন সচিব বলছেন তিনি মজা করে বলেছেন কিন্তু যাকে বলেছেন তার সাথে সম্পর্কটি মজার হলে তো বিষয়টি বাইরে এভাবে আসতোনা। এ বিষয়টিও ভেবে দেখার সুযোগ আছে। তবে এ বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক নেবেন কি-না তা নিশ্চিত নয়। বিবিসি বাংলাকে তিনি শুধু বলেছেন, "বিষয়টি তার অফিস দেখছে"। তদন্ত হবে ভাড়া নিয়ে ওই প্রতিবেদনে ঢাকা কোলকাতা রেলের বেশি ভাড়া নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন রেল সচিব। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "বিষয়টা হলো দুদেশের রেলের জয়েন্ট কমিটি ভাড়া নির্ধারণ করে। ভাড়া ডলারে নির্ধারিত হয় কিন্তু পেমেন্ট হয় টাকা।" "সে কারণে টাকার পরিমাণ কম বেশি হয়। যে কারণে রাউন্ড আপ করে এভাবে ভাড়া নির্ধারণ করি"।
news-56811154
https://www.bbc.com/bengali/news-56811154
ভারত-পাকিস্তান: সংযুক্ত আরব আমিরাত-ইউএই কাশ্মীর নিয়ে শত্রুতায় মধ্যস্থতার ঝুঁকি কেন নিলো
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুলাওয়ামাতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর পর দক্ষিণ এশিয়ার পারমানবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধের প্রবল ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল।
আবুধাবির ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন যায়েদ যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত হয়নি, তবে ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক হিমঘরে ঢুকে পড়ে। কয়েক মাস পর অগাস্টে নরেন্দ্র মোদীর সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা রহিত করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ে। কিন্তু গত মাস দু'য়েক ধরে হঠাৎ করেই সেই বরফ যেন গলতে শুরু করেছে। প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় ২৫শে ফেব্রুয়ারি, যখন দুই দেশের সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরল এক বৈঠকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ২০০৩ সালে সই করা একটি চুক্তি মেনে চলার সিদ্ধান্ত হয়। ওই খবরে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন তখন। এরপর মার্চের মাঝামাঝি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার রশীদ বাজওয়া যখন "অতীতের বিরোধকে কবর দিয়ে" ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রীতি এবং "শান্তিপূর্ণ উপায়ে" কাশ্মীর সঙ্কট সমাধানের কথা বললেন, তখন ধারণা আরও শক্ত হয় যে বল হয়তো গড়াতে শুরু হয়েছে। কী ঘটতে চলেছে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে? কীভাবে ক্ষুদ্র আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের এক পরাশক্তি হয়ে উঠছে এর কিছুদিন পর ভারত থেকে তুলা ও চিনি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে নরেন্দ্র মোদী তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে একটি বার্তা পাঠান। একের পর এক এসব খবর বের হওয়ার সময় কয়েকটি মিডিয়ায় বেনামি সূত্র উদ্ধৃত করে ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোপনে যোগাযোগ এবং কথাবার্তা শুরু হয়েছে। মার্চে আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হঠাৎ করে যখন দিল্লি যান, কানাঘুষো আরও বেড়ে যায়। রয়টার্স বার্তা সংস্থা এমন একটি খবরও দেয় যে জানুয়ারিতে দুই দেশের উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দুবাইতে গোপন এক বৈঠকও করেছেন। অবশেষে গত ১৫ই এপ্রিল এই মধ্যস্থতার কথা খোলাখুলি জানিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রে ইউএই‘র রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভারসিটির এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি বলেন যে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে সংযুক্ত আরব আমিরাত মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা এখন আশা করছেন ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক এমন একটি 'সুস্থ' পর্যায়ে আসবে যেখানে তারা পরস্পরের সাথে কথা বলবে, একে অন্যের রাজধানীতে দূত ফেরত পাঠাবে। “হয়তো তারা ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু হবে না, কিন্তু আমরা চাই তাদের মধ্যে কথা শুরু হোক।“ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী আমিরাতী কুটনীতিকের ওই বক্তব্যের তিনদিনের মাথায় রোববার একই দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী আবুধাবি যান। ওই দু'জন মুখোমুখি বসে কথা বলেছেন কিনা, তা পরিষ্কার নয়। তবে এটা এখন স্পষ্ট যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপনকারীর ভূমিকা নিয়েছে ইউএই। প্রশ্ন হচ্ছে, অতি দুরূহ এই কাজের দায়িত্ব কেন কাঁধে নিলো উপসাগরীয় এই ক্ষুদ্র দেশটি? কতটা প্রভাব তাদের রয়েছে? লড়াই ছেড়ে 'ইমেজ, প্রেস্টিজ' সামরিক দক্ষতার জন্য প্রাচীন গ্রীসে স্পার্টা নামের একটি নগরের বিশেষ সুনাম ছিল। খুদে আরব আমিরাতের সামরিক উচ্চাভিলাষ দেখে সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাতিস এর নাম দিয়েছিলেন 'লিটল স্পার্টা'। ছোট এই উপসাগরীয় দেশটি কাছের ইয়েমেন থেকে শুরু করে আফগানিস্তান, লিবিয়া, পূর্ব আফ্রিকা এবং আফগানিস্তানে সরাসরি সামরিক তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেশটি শান্তির মধ্যস্থতাকারী একটি রাষ্ট্রের ইমেজ তৈরিতে তৎপর হয়েছে। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি হলেন আবুধাবির ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন যায়েদ। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিল ভারত সরকার ২০১৮ সালে ইথিওপিয়া এবং এরিত্রিয়ার মধ্যে শান্তি স্থাপনে ভূমিকা রাখে ইউএই। ইথিওপিয়া এবং সুদানের মধ্যে সীমান্ত বিরোধে মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়েছিল দেশটি। নীল নদের ওপর ইথিওপিয়ার একটি বাঁধ তৈরি নিয়ে মিশরের সাথে তাদের বিরোধ নিরসনেও ভূমিকা নিয়েছে। এক সময় লিবিয়ায় মিলিশিয়া নেতা খলিফা হাফতারের অস্ত্রের বড় যোগানদাতা ছিল ইউএই। এখন তারা সেখানে রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলছে - অবশ্য সে পথ তারা নিয়েছে লিবিয়ায় তুরস্কের সামরিক হস্তক্ষেপের পর। ইয়েমেনেও সামরিক তৎপরতা অনেক কমিয়ে এনেছে ইউএই। তবে ভারত ও পাকিস্তানকে কাছে আনার লক্ষ্যে মধ্যস্থতা করার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত ইউএই‘র সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী শান্তি প্রকল্প। কাশ্মীরকে ভারত প্রায় সব সময় কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখে - ফাইল ছবি লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি বলেন, কাতারের সাথে পাল্লা দিয়ে ইউএই এখন বিশ্বের কাছে শান্তি স্থাপনকারীর একটি ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উদগ্রীব। “ইউএই দেখাতে চাইছে যে তারা এমন একটি আধুনিক শক্তিশালী উদার একটি রাষ্ট্র, যারা বিশ্বে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করছে, এবং তাদের প্রভাব এবং গ্রহণযোগ্যতা এখন এতটাই যে ভারত ও পাকিস্তানের মত দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতেও তারা ভূমিকা রাখছে।“ বিবিসি বাংলাকে সামি হামদি আরও বলেন, তাদের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি আসুক বা নাই আসুক, তার চেয়ে ইউএই‘র বড় বিবেচনা হলো তাদের "ইমেজ, প্রেস্টিজ (মর্যাদা)।" “সে কারণে দেখবেন তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু বা তাতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার কথা ভারত বা পাকিস্তান জানায়নি। জানিয়েছে ইউএই।“ তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কেন নানা মঞ্চে কাশ্মীর প্রশ্ন তুলছেন তবে মি. হামদি মনে করেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শত্রুতা প্রশমনে আমিরাতের নিজেরও কিছু ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। “আফগানিস্তানে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের পর সেখানে তুরস্কের প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনায় নিয়ে ইউএই চিন্তিত। এজন্য পাকিস্তানকে প্রয়োজন তাদের। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে পারলে সেই আস্থা অর্জন সহজ হতে পারে বলে ইউএই হয়তো ভাবছে।“ মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াশিংটনে গবেষণা সংস্থা আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের গবেষক হুসেইন ইবিশ ব্লুমবার্গ সাময়িকীতে এক বিশ্লেষণে লিখেছেন যে কাশ্মীর সমস্যার একটি "বাস্তবসম্মত" বোঝাপড়া ইউএই নিজেও চায়। “কট্টর ইসলামী এবং সন্ত্রাসী অনেক গোষ্ঠী কাশ্মীরীদের দুর্দশা তুলে ধরে সাধারণ মুসলমানদের আবেগে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করে। এই গোষ্ঠীগুলোকে ইউএই নিজেদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে দেখে। তাই কাশ্মীর সমস্যার একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে তাদের স্বার্থ রয়েছে।“ কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান কেন ইউএই‘র মধ্যস্থতা মেনে নিলো? দিল্লিতে জওহারলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় ভরদোয়াজ কথায়, ইউএই‘র মধ্যস্থতার বিষয়টি জেনে প্রথমে তিনিও বিস্মিত হরেছিলেন, কারণ ভারত কখনই কাশ্মীর বা পাকিস্তানের সাথে বোঝাপড়ায় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রস্তাব মানেনি। শ্রীনগরে সেনা টহলের মধ্যেই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন পুলাওয়ামা সংকটের পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে পাওয়া মধ্যস্থতার প্রস্তাবও ভারত প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাহলে এখন ইউএই‘র মধ্যস্থতায় কেন সায় দিচ্ছে ভারত? ড. ভরদোয়াজ মনে করেন, আফগানিস্তানসহ ভূ-রাজনৈতিক বেশ কিছু নতুন বাস্তবতা ভারতের এই নমনীয় অবস্থানের পেছনে কাজ করছে। “আমেরিকান সৈন্য আফগানিস্তান থেকে চলে গেলে সেখানে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে। কিন্তু ভারতও মধ্য এশিয়ায় তাদের বাজারের জন্য আফগানিস্তানে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। পশ্চিমা দেশগুলো তাই মনে করছে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বোঝাপড়া জরুরী।“ কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলার প্রস্তাব নিয়ে অগ্রসর হওয়া এ মুহূর্তে ভারতের জন্য যেমন, পাকিস্তানের জন্যও তেমনই বিড়ম্বনার। ইউএই‘র মধ্যস্থতাকে তাই এ মুহূর্তে গ্রহণযোগ্য একটি বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করছে ভারত। তেইশ বছর জেল খেটে বেকসুর খালস কাশ্মীরি যুবক লকডাউনে কাশ্মীর: ১২টি মাস আর ১২টি জীবনের কথা ড. ভরদোয়াজ বলেন, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সৌদি আরব বা ইউএই‘র কাছ থেকে তেমন কোনও সমর্থন পাকিস্তান পায়নি। “এই দুই প্রভাবশালী ইসলামী দেশ কাশ্মীরকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে মনে করেছে। তাই ইউএই‘র ওপর ভরসা করছে ভারত।“ অন্যদিকে, কাশ্মীর বা ভারত নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের আপত্তি কখনই ছিল না। তাছাড়া, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং কাশ্মীর নিয়ে মাথা গলাতে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর ক্রমাগত অনীহা পাকিস্তানকে ভারতের সাথে একটি বোঝাপড়ায় সম্মত হতে এক রকম বাধ্য করেছে। লন্ডনে সোয়াস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির গবেষক এবং পাকিস্তান রাজনীতির বিশ্লেষক ড. আয়েশা সিদ্দিকা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতের সাথে বোঝাপড়ায় পাকিস্তানের উৎসাহের র পেছনে “প্রধান যে তাড়না তা হলো অর্থনৈতিক তাড়না।" "পাকিস্তান বুঝতে পারছে যে, আমেরিকার প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের নীতিতে তারা অনুপস্থিত। ভারত সেখানে মধ্যমণি। সেটা অবশ্যই পাকিস্তানের বড় মাথাব্যথা।" ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর সামি হামদিও মনে করেন, সৌদি আরব এবং ইউএইর বিকল্প হিসাবে কাতার এবং তুরস্কের সাথে ঘনিষ্ঠতায় পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। “ইমরান খান আবারও তাই পুরনো মিত্রদের দিকে তাকাচ্ছেন।“ ইউএইর মধ্যস্থতায় সাফল্যের সম্ভাবনা কতটা? মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ইথিওপিয়া ও এরিত্রিয়ায় যে ঝামেলা ইউএইকে সামলাতে হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তার মাত্রা হয়তো লক্ষগুণ বেশি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববারও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মিডিয়ার সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে ভারতকে অবশ্যই কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা পুনর্বহাল করতে হবে। এই অবস্থানে পাকিস্তান অনড় থাকলে যে কোনও মুহূর্তে আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে। ড. ভরদোয়াজ বলছেন, “কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান বেশি চাপাচাপি করলে ফলাফল হবে শূন্য।“ সামি হামদি বলেন, মধ্যস্থতায় ইউএই কতটা সফল হবে বা ব্যর্থ হবে, তা নির্ভর করবে প্রত্যাশার মাত্রার ওপর। জঙ্গী মদতের যে সব অভিযোগকে ঘিরে ফের সংঘাতে ভারত-পাকিস্তান তার কথায়, “আপনি যদি মনে করেন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে ইউএই, সেটা হয়ত সম্ভব নয়। কাশ্মীর সমস্যার ম্যাজিক সমাধান কেউই দিতে পারবে না। তবে আপনি যদি মনে করেন যে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমবে, সেটি হয়তো একটি সম্ভাবনা।“ মি. হামদি মনে করেন, পাকিস্তান এবং ভারত নিজের মধ্যে কথা বলতে চাইছে বলেই মধ্যস্থতার সুযোগ পেয়েছে ইউএই, তাই সাফল্য বা ব্যর্থতাও নির্ভর করবে এই দুই দেশের ওপর। তবে একটা ইতিবাচক দিক হলো, যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা কোনও দেশ এই মধ্যস্থতার ভূমিকা নিলে যে হাজারো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম হতো এখন হয়তো তা হবে না। ইউএই'র সাথে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেরই ভালো সম্পর্ক। দুই দেশের লাখ লাখ মানুষ সেদেশে কাজ করেন, থাকেন। এবং ইউএই'র এই মধ্যস্থতার খবর জানাজানির পর দুই দেশের মিডিয়া বা ভাষ্যকাররা এ নিয়ে ইতিবাচক কথাই বলছেন। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে হেফাজত নেতাদের সাক্ষাৎ, যা জানা যাচ্ছে গুপ্তচর বিতর্ক তুঙ্গে; চেক কূটনীতিকদের পাল্টা বহিষ্কার করলো রাশিয়া মহীসোপানে বাংলাদেশের যে দাবিতে ভারতের আপত্তি সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ?
news-48815618
https://www.bbc.com/bengali/news-48815618
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচে যত নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিলো
বিশ্বকাপ এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে যে প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, ঠিক তখন পাকিস্তান প্রায় হারতে বসা একটি ম্যাচে ৩ উইকেটের জয় পায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে, যেটিকে এবারের আসরে এখন পর্যন্ত হওয়া ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ন ম্যাচের একটি বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচে ভক্তদের মধ্যে মারামারি বেঁধে যায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঐ জয় পাকিস্তানের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছে। লো স্কোরিং ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করে আফগানিস্তান ২২৭ রান তোলে। ২২৮ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান প্রথম ওভারেই উইকেট হারালেও সহজ জয়ের পেই এগুচ্ছিলো। কিন্তু বিপত্তি শুরু হয় দলীয় ১৫৬ রানে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ আউট হবার পর। তখন ৬৬ বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৭২ রান। সেই পরিস্থিতি থেকে দলকে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছান ৫৪ বলে ৪৯ রান তোলা ইমাদ ওয়াসিম, ওয়াহাব রিয়াজের ৯ বলে ১৫ রানের ছোট ইনিংসও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে খেলার বাইরেও এই ম্যাচে অনেক ঘটনা ঘটে যা নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। আরো পড়ুন: যেসব কারণে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের আজকের ম্যাচ মাশরাফীর প্রতি সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের আহ্বান মাশরাফী কি বিশ্বকাপে নিজের খেলা নিয়ে সন্তুষ্ট মাঠের ভেতরেই মারামারি লিডসের হেডিংলি স্টেডিয়ামের নিরাপত্তারক্ষীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় এই ম্যাচে দুই পক্ষের সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সমর্থকরা একে অপরের সাথে হাতাহাতি করা শুরু করে এক পর্যায়ে। সাথে বোতল ছোড়াছুড়ি, এমনকি আবর্জনা ফেলার পাত্র ছোড়ারও ঘটনা ঘটে। ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামের বাইরে আফগান সমর্থকরা মাঠের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে মারামারি শুধু মাঠে হট্টগোল করেই ক্ষান্ত থাকে না সমর্থকরা, মাঠের বাইরে মাঠ সংলগ্ন রাস্তার লোহার ব্যারিয়ার দিয়েও মারামারি করে দুই দলের সমর্থকরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে গত অনেক বছরে এমনটি দেখা যায়নি। মাঠে উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতাও কম পড়ে যায় হাতাহাতির প্রাবল্যের কাছে। জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকিনফোর তথ্যমতে, খেলার শুরুতে কিছু সমর্থক দেয়াল ডিঙ্গিয়ে মাঠে ঢুকে পড়ে, যাদের কাছে টিকেটও ছিল না। খেলার জায়গায় ঢুকে যায় দর্শকরা একটা সময় ক্রিকেটের খুব পরিচিত দৃশ্যের মধ্যে একটি ছিল খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে দর্শকদের মাঠে ঢুকে পড়া। আফগানিস্তান-পাকিস্তান ম্যাচে আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটে সেই ঘটনার। ঠিক খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বেশ কয়েকজন দর্শক মাঠে ঢুকে পড়েন। এসময় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের নিরাপদে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমান থেকে এমন বার্তা পাঠানো হয় 'জাস্টিস ফর বালুচিস্তান' ব্যানার নিয়ে বিমান উড়ে যায় হেডিংলিতে ম্যাচ চলাকালীন একটি বিমান উড়ে যায়, যেখানে লেখা ছিল 'জাস্টিস ফর বালুচিস্তান।' এর সাথে যোগ করা ছিল "হেল্প এন্ড ডিজ্যাপিয়ারেন্স ইন বালুচিস্তান" অর্থাৎ 'বালুচিস্তানে গুম বন্ধ করতে সাহায্য করা হোক।' আইসিসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংগঠনটি কোনো ধরণের রাজনৈতিক বার্তাকে প্রশ্রয় দিবে না, লিডসের আকাশপথ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি দেখবে। পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশটির সাথে আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্ত রয়েছে। বালুচিস্তানে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন সক্রিয় রয়েছে বিধায় ঐ অঞ্চলের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সেখানে সেনা অভিযান পরিচালনা করা এবং সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। কী বলছে আইসিসি পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচের দর্শক সমর্থকদের দ্বন্দ্বের বিষয়টিকে আইসিসি'ও গুরুত্ব সহকারে দেখছে। "কিছু ভক্ত সমর্থকদের মারামারির কথা আমরা শুনেছি, আমরা এখন ভেন্যুর নিরাপত্তা দলের সাথে কাজ করছি, সাথে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীও আছে, এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা আমরা নিশ্চিত করবো," বলেন আইসিসির এক মুখপাত্র। আফগানিস্তানের নাটকীয় হার হেডিংলির ঐ ম্যাচে আফগানিস্তান মূলত দ্বিতীয় ইনিংসের ৪৬তম ওভারে ছিটকে গিয়েছে। পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুটা ভাল হলেও ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় রান ও বলের ব্যবধান বাড়তে থাকে। মাঝপথে আফগানিস্তানের স্পিনাররা ডট বল ও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেয়। ম্যাচ যত গড়াচ্ছিল, হেডিংলির উইকেটে স্পিন খেলা দু:সাধ্য হয়ে পড়েছিল। আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী, পুরো ১০ ওভার বল করে ২৩ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। বিশ্বকাপের আগে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে দুই দল কিন্তু ৪৬তম ওভারে গুলবাদিন নাইব বল হাতে নিয়ে ১৮ রান দেন, সেখানেই রান ও বলের দূরত্ব কমিয়ে আনেন ইমাদ ওয়াসিম। রশিদ খানও নিজের সামর্থ্যের পুরোটা দিতে পারেননি এই টার্নিং উইকেটে। হামিদ হাসান চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় একজন বোলার কমে যায় আফগানিস্তানের। শেষ পর্যন্ত ইমাদ ওয়াসিম ও ওয়াহাব রিয়াজ পাকিস্তানকে মূল্যবান দুটি পয়েন্ট এনে দিতে বড় ভূমিকা রাখেন। বিবিসি বাংলার কিছু খবর: লন্ডনে এসে যেভাবে খুনি হয়ে উঠলো খুরাম বাট ধর্ষণে বাধা দেয়ায় মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া, আটক ২ নাগরিকত্ব তালিকায় না থাকায় কি আত্মহত্যা বাড়েছে?
news-51260360
https://www.bbc.com/bengali/news-51260360
করোনাভাইরাস: উহানের বাংলাদেশিদের বিচলিত না হবার আহ্বান
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের কেউ ফিরতে চাইলে তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা নেবার নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চীনের উহান পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরীতে এমন নির্দেশনা জারির খবর ফেসবুকের ভেরিফায়েড পাতায় লিখেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এজন্য ইতিমধ্যেই সরকার চীন সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি হটলাইন খোলা হয়েছে, যার নম্বর: +৮৬১৭৮০১১১৬০০৫ বিজ্ঞপ্তিতে উহান শহরে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের বিচলিত না হয়ে চীনের সরকারের নির্দেশনা মেনে চলবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গণপরিহন বন্ধ করে দেয়ায় উহানসহ চীনের কয়েকটি শহরে বাংলাদেশি নাগরিকদের আটকে পড়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তরফ থেকে এসব উদ্যোগ নেবার খবর এলো। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীনে অবস্থানরত ২৪৫ জন বাংলাদেশি একটি উইচ্যাট গ্রুপের মাধ্যমে যুক্ত আছেন। এই গ্রুপে দূতাবাসের দুজন কর্মকর্তাও যুক্ত হয়েছেন এবং তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উহান শহর থেকেই আলোচিত রহস্যময় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। উহান শহরটিকে কার্যত এখন বন্ধ করে রেখেছে চীনের কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। কাউকে ঢুকতেও দেয়া হচ্ছে না। অথচ এই উহানের একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা রয়েছেন, যারা এখন সেখানে অবস্থান করছেন। গত শনিবারই উহানে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করা শামিমা সুলতানা বিবিসিকে বলেছিলেন, "বাংলাদেশে ফেরার সুযোগ থাকলে এক মুহূর্তও এখানে থাকতাম না"। সোমবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মিঃ আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নাগরিক যারা চীন থেকে ফিরতে চাইবেন তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "আমরা চীন সরকারের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছি। কি প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে তা বাস্তবতার নিরিখে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সম্মতির ভিত্তিতে করা হবে।" ফেসবুকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পোষ্ট মিঃ আলম আরো লিখেছেন, "আমাদের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই বিষয়ে আজকের দিনের শেষে একটি প্রাথমিক নির্দেশনা জারি করা হবে যার মূল উদ্দেশ্য থাকবে আগ্রহীদের তালিকা প্রণয়ন।" করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে এ পর্যন্ত ৮০ জন মানুষ মারা গেছেন, অসুস্থ হয়েছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটিতে সরকারী ছুটি আরো তিনদিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস: লক্ষণ ও বাঁচার উপায় কী? চীনের উহান এবং এর আশেপাশের কয়েকটি শহরে ইতিমধ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এদিকে, চীনের কয়েকটি শহরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বাংলাদেশে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, তাদের অনেকে বিবিসিকে জানিয়েছেন দেশটির সরকার সেখানকার সব ধরণের গণপরিবহনে চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় এক রকম ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। চীনে বসবাসরত প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে প্রায় তিনশ জনের বসবাস উহান এবং এর আশেপাশের শহরগুলোয়। চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস বিবিসিকে জানিয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে বাংলাদেশি নাগরিকদের যেকোনো সহায়তা চাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে দূতাবাসের এমন একটি হটলাইন নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে। চীনে বাংলাদেশি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন মাসুদুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন, আতঙ্ক দূর করতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে দূতাবাস যৌথভাবে কাজ করছে। এছাড়া চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কোন শিক্ষার্থীর যদি, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, সর্দি বা বুকে ব্যথা হয়- অর্থাৎ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলে সাথে সাথে ডর্মেটরির সুপারভাইজারকে জানাতে হবে। যদিও এখনো পর্যন্ত কোন বাংলাদেশির এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসের কারণে চাপা আতঙ্কের মধ্যে আছে সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের কীভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস অবশ্য এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাদের নানাবিধ সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। উহানের একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, উহান শহরে বসবাসরত অন্যান্য শিক্ষার্থীরা শুরুতে ভাইরাসের আতঙ্কে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার কথা আশ্বাস দেয়ায় উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। কিন্তু চীনা সরকারের নির্দেশনা মানতে গিয়ে এক রকম আটক অবস্থায় সতর্ক হয়ে চলতে হচ্ছে তাদের। মি. আহমেদ বলেন, "দূতাবাস থেকে আর ইউনিভার্সিটি থেকে সব সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছে। ইউনিভার্সিটি থেকে বলেছে যেন আমরা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হই। সব সময় যেন মাস্ক পরি, তারা ওই মাস্ক দিয়েছে। বারবার হাত ধুতে বলেছে, প্রচুর পানি খেতে বলেছে। মানে যতভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন - তারা রুমে রুমে এ সংক্রান্ত নোটিশ দিয়ে গেছে।" শিক্ষার্থীরা যেন তাদের প্রয়োজনীয় বাজার সেরে নিতে পারে এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা বাস সপ্তাহে দুই দিন এই শিক্ষার্থীদের ডর্মেটরি থেকে পাশের সুপার শপে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। এছাড়া কোন শিক্ষার্থীর যদি, জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, সর্দি বা বুকে ব্যথা হয়- যেগুলো কিনা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। তাহলে সাথে সাথে এই তথ্য ডর্মেটরির সুপারভাইজারকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মি. আহমেদ বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ নেয়া হচ্ছে যে আমরা ঠিক আছি কিনা। তারপরও যদি কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। আসলে সাবধানে থাকা আর নির্দেশনা মেনে চলা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।" ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উহানের সব গণপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস কিভাবে সাহায্য করছে চীনে বসবাসরত প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে প্রায় তিনশ জনের বসবাস উহান এবং এর আশেপাশের শহরগুলোয়। করোনাভাইরাসের এই বিস্তারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলার কথা জানিয়েছে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস। বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে উহানে বসবাসরত দুই শতাধিক বাংলাদেশি ইতোমধ্যে এক হয়ে তাদের সমস্যাগুলোর কথা দূতাবাসকে অবহিত করেছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকেও সব বাংলাদেশি নাগরিককে জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো সহায়তা চাওয়ার জন্য সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টার একটি হটলাইন নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলেছে। বিশেষ করে কেউ অসুস্থ হলে দূতাবাসের পক্ষ থেকেই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। যদিও এখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশি বা বিদেশি নাগরিকের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। মানুষের আতঙ্ক দূর করতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে দূতাবাস যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান চীনে বাংলাদেশি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন মাসুদুর রহমান। "আমরা বুঝতে পারছি যে, উহানের বাংলাদেশিরা যে একপ্রকার আটক হয়ে অসহায় অবস্থায় আছে। চীনা সরকার এখনও যেহেতু কাউকে সরিয়ে নেয়ার কোন নির্দেশনা দেয়নি, তাই আমরা সেটা করতে পারছি না। এখন চীনা স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে যে পরামর্শ দিচ্ছে সেগুলো মেনে চলতে বলছি।" "এছাড়া আমরা যে হটলাইন নম্বর চালু করেছি, সেখানে প্রতিদিন প্রচুর ফোন আসে। কারো বাসায় বাজার নেই, সে কিভাবে যাবে। কিন্তু কেউ আক্রান্ত হয়েছে এমন খবর আমরা পাইনি।" বলেছেন মি. রহমান। চীনা মন্ত্রণালয়ের সাথে দূতাবাসগুলো কিভাবে কাজ করছে তবে চীনা নববর্ষের কারণে দেশটির সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে এক ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন বাংলাদেশের দূতাবাস কর্মকর্তারা। এমন অবস্থায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, চীনে থাকা দূতাবাসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে একজন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করেছে। এই ভাইরাসকে ঘিরে বিদেশি নাগরিকরা তাদের আতঙ্ক বা অভিযোগগুলোর কথা তাদের দেশের দূতাবাসকে অবহিত করছেন। এবং দূতাবাস সেগুলো জানাচ্ছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তাকে। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
news-47638476
https://www.bbc.com/bengali/news-47638476
নারীর ওপর পর্নোগ্রাফির কী ধরনের প্রভাব পড়ে?
সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের শুরু থেকেই যৌনতার কিছু বিবরণ রয়েছে।
নারীর মস্তিষ্কে পর্নোগ্রাফির প্রভাব নিয়ে গবেষণা হয়েছে খুব কমই। "আমি যখন প্রথম পর্নোগ্রাফি দেখি, তখন আমার বয়স ছিল ১২," বললেন নীলম টেলর। এখন তার বয়স ২৪। তার মতো আরো অনেকেই আছে যারা এতো অল্প বয়সেই পর্নোগ্রাফি দেখেছেন। ২০১৬ সালের এক জরিপে দেখা গেছে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের ৫৩% অনলাইনে যৌনতার দৃশ্য দেখেছে। পুরুষদের পর্নোগ্রাফি দেখা নিয়ে অনেক গবেষণা ও জরিপ হয়েছে কিন্তু নারীর ওপর এই পর্নোগ্রাফি কী ধরনের প্রভাব ফেলে সেটা নিয়ে জানা যায় খুব কমই। যৌনতার প্রতি সামান্য কৌতূহল থেকেই শুরু হয়েছিল নীলমের আসক্তি। নীলমের গল্প নীলমের বয়স যখন মাত্র ১১ থেকে ১৬ তখন তিনি বেশিরভাগ দিনই পর্নোগ্রাফি দেখতেন। নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে দিয়ে তিনি পর্ন সাইটে কাটাতেন অনেক সময়। কোন ছবি ছিল মাত্র ১০ মিনিটের আবার কোন কোন ছবি ছিল এক ঘণ্টার। তার বাবা মা এর কিছুই জানতেন না। "আমার মনে হয় পর্নোগ্রাফি মানুষকে অনেক বেশি অসংবেদনশীল করে তোলে। পর্নোগ্রাফিতে অনেক সহিংস দৃশ্যও থাকে এবং একটা সময়ে মনে হয় এসব যেন খুবই স্বাভাবিক," বলেন নীলম। কীভাবে এটা শুরু হয়েছিল সেটা বলতে গিয়ে নীলম বলেন, "মনে হয় একটা ছবি দেখার পর এবিষয়ে আমি আরো কিছু জানতে আগ্রহী হয়ে পড়েছিলাম। অথবা যৌনতার জন্যে আমার আকাঙ্ক্ষা হয়তো খুব তীব্র ছিল। আমি তখন কিশোর বয়সে ঢুকতে শুরু করেছি। যেসব ছবিতে প্রচুর সেক্সের দৃশ্য আছে আমি সেগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে দেখতে শুরু করলাম।" নীলম বলেন, স্কুলে থাকতেই তিনি পর্নোগ্রাফির কথা শুনেছেন। কিন্তু তিনি এমন একটা স্কুলে পড়তেন যেখানে শুধু মেয়েরাই পড়তো। নীলম টেলর মাত্র ১১ বছর বয়সে পর্নোগ্রাফি দেখতে শুরু করেন। "সবসময় মনে করা হতো যে এসব বুঝি শুধু ছেলেরাই দেখে। এটাই আমার কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমার অনেক লজ্জাও লাগতো কারণ আমার মনে হতো যে আমি একটা অস্বাভাবিক কাজ করছি। মনে হতো মেয়েরা তো এসব দেখে না।" পর্নোগ্রাফি দেখতে দেখতেই নীলমের মধ্যে বিশেষ কিছু ভিডিওর ব্যাপারে আগ্রহ বাড়তে শুরু করলো। "একটা সময় আমি এমন সব ছবি দেখতে লাগলাম যেখানে মেয়েরা অনুগত হয়ে সেটা করছে, কিম্বা তাকে সেক্স করতে জোর করে বাধ্য করা হচ্ছে। অথবা আমি খুঁজে দেখতাম কোন ছবিতে একজন বয়স্ক লোক কম বয়সী মেয়ের সাথে সেক্স করছে। আমি জানতাম না কেন আমি এসব দেখতে চাইতাম। কারণ ওই বয়সে যৌনতার বিশেষ কোন দিকের ব্যাপারে আমার মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার কথা না।" সারাহর গল্প একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে ২৫ বছর বয়সী সারাহরও। "১৩/১৪ বছর বয়স থেকে আমি পর্নোগ্রাফি দেখতে শুরু করি। কম করে হলেও সপ্তাহে দু'বার দেখতাম। আমার মনে হতো যে আমি বুঝি আমার একটা চাহিদা পূরণ করছি।" "এক পর্যায়ে আমি এমন ভিডিও দেখতে শুরু করলাম যেখানে ১০ জন পুরুষ মিলে একজন নারীর সাথে সেক্স করছে। অথবা ওই সময় নারীকে চড় মারা হচ্ছে অথবা তাকে অপমান করা হচ্ছে। আমি নিজে সেক্স করার আগেই আমি এসব দেখেছি।" এখনও সারাহ এসব ভিডিও দেখেন। কিন্তু আগের মতো নয়। কিন্তু তিনি মনে করেন ১০ বছর ধরেও এধরনের ভিডিও নিয়মিত দেখার পর যৌনতার মাধ্যমে চরম তৃপ্তি (অর্গাজম) পাওয়া তার জন্যে খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। পর্নোগ্রাফি ও পুরুষের মস্তিষ্ক পুরুষদের পর্নোগ্রাফি দেখার ব্যাপারে প্রচুর লেখালেখি হয়। বিজ্ঞানীরাও এই বিষয়ে কাজ করেছেন। ব্রিটেনে এঞ্জেলা গ্রেগরি নামে একজন ব্রিটিশ যৌন থেরাপিস্ট ২০১৬ সালে বিবিসিকে বলেছিলেন, খুব সহজেই দেখা যায় বলে পুরুষদের মধ্যে যৌন সমস্যার সংখ্যা বাড়ছে। এবিষয়ে চিকিৎসা নিতে তারা ডাক্তারদের দ্বারস্থ হতেন। তিনি হাসপাতালে কাজ করতেন। ব্রিটিশ একটি দাতব্য সংস্থা তার গবেষণায় বলেছে, ব্রিটেনে যখন ব্রডব্যান্ডের যাত্রা শুরু হলো, ২০০০ সালের দিকে, তখন এই পুরুষদের ২ থেকে ৫% যৌন অক্ষমতার জন্যে পর্নোগ্রাফিকে দায়ী করা হতো। বর্তমানে এই হার প্রায় ৩০%। এটা শুধু শারীরিক অক্ষমতারই কারণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রে গবেষকরা বলছেন, যেসব পুরুষ অল্প বয়সে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ে তাদের মধ্যে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যও গড়ে উঠতে দেখা যায়। মস্তিষ্কের রসায়ন। ব্রিটেনে আরো একজন থেরাপিস্ট থ্যাডিয়াস বির্চার্ড যৌনতায় আসক্তদের চিকিৎসার ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। "সাধারণত পর্নোগ্রাফিতে পুরুষদের চিন্তাভাবনাই প্রতিফলিত হয়।" কখন শুরু হয় দেখা যেসব শিশু তাদের ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সে পর্নোগ্রাফি দেখে তাদের ৯৪% এসব দেখতে শুরু করে ১৪ বছর বয়স থেকেই। তাদের মধ্যে কিশোর যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনেক কিশোরীও। সাম্প্রতিক কালে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ১,০০০ মানুষের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের ৪৭% নারী গত মাসে পর্নোগ্রাফি দেখেছেন এবং ১৪% নারী মনে করেন যে তারা হয়তো পর্নোগ্রাফিতে কিছুটা হলেও আসক্ত। নীলমের বয়স যখন ১৬ তখন তিনি পর্নোগ্রাফি দেখা বন্ধ করে দেন। তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন শরীরের ওপর এর প্রভাবকেই। "প্রথম ছেলে-বন্ধুর সাথে আমার সম্পর্ক হওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম যে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে আমি শারীরিকভাবে জেগে উঠতে পারছি না। আমার মনে হয় কাউকে উদ্দীপ্ত করার ব্যাপারে পর্নোগ্রাফি একেবারেই অস্বাভাবিক একটি উপাদান। একজন সাধারণ পুরুষ সঙ্গীর পক্ষে সেটা পূরণ করা অসম্ভব।" তিনি বলেন, পর্নোগ্রাফি দেখা ও বাস্তব জীবনে সেক্স করার সময় তার মধ্যে যে শারীরিক পরিবর্তন ঘটতো তাতেও তিনি একটা পার্থক্য লক্ষ্য করেন। একসময় মনে হতো সেক্স করার আগে আমার হয়তো টয়লেটে গিয়ে পর্নোগ্রাফি দেখতে হবে যাতে আমি একটা উত্তেজনা বোধ করি।" নীলম মনে করেন না যে তিনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ছিলেন। সেরকম হলে তিনি সেসব দেখা বন্ধ করে দিতে পারতেন না। অনেকেই মনে করেন পর্নোগ্রাফি হচ্ছে অস্বাভাবিক যৌনমিলনের দৃশ্য। শরীরের ওপর প্রভাব ২৮ বছর বয়সী হান্নাও মনে করেন যে খুব বেশি পর্নোগ্রাফি দেখলে মানুষের সংবেদনশীলতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে তিনি বলেছেন, এথেকে তার কিছু লাভও হয়েছে। "আমি একজন সমকামী নারী। আমার বয়স যখন ৮/৯ তখনই আমি বুঝতে পারি যে আমি আসলে নারীদের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হই। কিন্তু লেসবিয়ান পর্নোগ্রাফি দেখার পরেই আমি এবিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হই।" কিন্তু পরে পর্নোগ্রাফির প্রতি হান্নার আসক্তি কেটে যায়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, "বেশিরভাগ লেসবিয়ান পর্ন হচ্ছে পুরুষদের ফ্যান্টাসি। তারা দেখতে চায় দুজন নারী সেক্স করলে সেটা দেখতে কেমন লাগে," বলেন তিনি। ড, লেইলা ফ্রডশ্যাম একজন গাইনোকলজিস্ট। ইন্সটিটিউট অফ সাইকোসেক্সুয়াল মেডিসিনের মুখপাত্রও তিনি। "আমি ২০ বছর ধরে লোকজনকে চিকিৎসা দিচ্ছি। কিন্তু আমি এমন কোনো নারীকে পাইনি যিনি বলেছেন যে পর্নোগ্রাফি নিয়ে তার সমস্যা আছে।" তিনি জানান, এনিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। একটি গবেষণা হয়েছে ৪৮ জনের উপর। তাতে দেখা গেছে পর্নোগ্রাফির কারণে নারীর শারীরিক উত্তেজনায় তার কোনো প্রভাব পড়েনি। মধ্যপ্রাচ্যে ২০০ নারীর ওপর চালানো আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে পর্নোগ্রাফি দেখলে যৌনমিলনের সংখ্যার কোনো তারতম্য হয় না। তবে দেখা গেছে যে যৌন ইচ্ছা ও শারীরিকভাবে জেগে ওঠার বিষয়ে এই পর্নোগ্রাফির একটা প্রভাব রয়েছে। ফ্রডশ্যাম তিনি বলেন, মানুষের যৌনাঙ্গে নয় বরং তাদের চোখে মুখে যৌনসংক্রান্ত অসুখ বিসুখ ছড়িয়ে পড়েছে- যার অর্থ পর্নোগ্রাফির আরো প্রসার ঘটেছে। তার মতে এটা হয়ে নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই এবং খুব অল্প বয়স থেকেই তারা এখন পর্ন দেখছে। এরিকা গার্জা চিকিৎসাও নিয়েছেন। এরিকার গল্প আমেরিকান লেখিকা এরিকা গার্জা মাত্র ১২ বছর বয়স থেকে সফ্টকোর পর্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। সেটা নব্বই এর দশকের কথা। সেসময় গভীর রাতে টেলিভিশনে এসব দেখানো হতো। তখনও ইন্টারনেটের অতোটা চল ছিল না। "আমার মেরুদণ্ডে তখন একটা সমস্যা হয়েছিল। সেজন্যে আমাকে একটা ব্রেস পরতে হতো। স্কুলে এটা নিয়ে অনেকে হাসি ঠাট্টা করতো। খুব খারাপ লাগতো আমার। তখন আমি পর্নোগ্রাফি দেখতাম ও হস্তমৈথুন করে সেসব ভুলে থাকতে চাইতাম।" এরিকা বলেন, "নারীরা কী কারণে শারীরিকভাবে উত্তেজিত হয় সেবিষয়ে খুব একটা কথাবার্তা বলে না। কারণ তাদেরকে হয়তো খারাপ মনে করা হতে পারে। নারীর এই আকাঙ্ক্ষার কারণেও তার মধ্যে লজ্জা শরম তৈরি হতে শুরু করে। তখন হয়তো তারা পর্নোগ্রাফি দেখতে শুরু করে।" এরিকা প্রত্যেকদিন পর্নোগ্রাফি দেখতেন না। কিন্তু তিনি মনে করেন তার জীবন ও সম্পর্কের ওপর এই পর্নোগ্রাফির একটা প্রভাব পড়েছে। "আমি যখন মানসিক চাপের মধ্যে থাকি কিম্বা আমার মধ্যে কোন উদ্বেগ কাজ করে তখন আমি পর্নোগ্রাফি দেখি। কিন্তু এটা আমাকে অন্যান্য কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তখন নিজে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। নিজের ব্যাপারে খারাপ লাগতে শুরু করে। মনে হতে শুরু করে যে আমার মধ্যে হয়তো খারাপ কিছু আছে। আমি তখন নিজের ভেতরে লুকিয়ে যাই।" তিনি জানিয়েছেন যে এই যৌন আসক্তির ব্যাপারে তিনি চিকিৎসাও করিয়েছেন। তিনি বলেন, তার উপর এসব পর্নোগ্রাফির নানা রকম প্রভাব পড়েছিল। তিনি এমন কিছু যৌন দৃশ্যের ব্যাপারে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন যা খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না। "যেমন বিছানায় আমার সাথে কেউ খারাপ আচরণ করছে। এমন দৃশ্য যেখানে হয়তো পুরুষরা তাদের চাইতেও অনেক কম বয়সের নারীদের সাথে মিলিত হচ্ছে। তখন আমিও পুরুষের কাছ থেকে সেরকম আগ্রাসী আচরণ প্রত্যাশা করতে শুরু করি।" তিনি বলেন, পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে তার মধ্যে এই ভাবনাও তৈরি হতে শুরু করে যা তার শরীর কেমন হওয়া উচিৎ। এসব দেখার পর তিনি তার শরীরের সব রোম উপড়ে ফেলতে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন। পর্নোগ্রাফি দেখলে কী হয় নীলমের মধ্যে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। বয়স্ক পুরুষের সাথে কম বয়সী নারীর যৌন মিলনের ভিডিও দেখতে দেখতে তিনিও, যখন তার বয়স ১৭,১৮,১৯ তখন তিনিও বয়স্ক পুরুষের সাথে সম্পর্ক করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। "আমি জানি না কেন এরকম হয়েছিল। পর্নোগ্রাফির কারণে নাকি অন্যকিছুর ফলে সেটা আমি বলতে পারবো না," বলেন তিনি। "যখন আমার বয়স কম ছিল সেক্সের কথা মনে হলেই মনে হতো যে আমাকে প্যাসিভ হতে হবে। সেক্স হচ্ছে এমন একটা জিনিস যা কেউ একজন আমাকে নিয়ে করবে। এটা কি সবসময় আমার মধ্যে ছিল নাকি পর্নোগ্রাফি দেখে আমার মধ্যে এটা তৈরি হয়েছিল?" ২০১০ সালে তিনশোটিরও বেশি পর্নোগ্রাফি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তার ৮৮% জুড়ে আছে শারীরিক আগ্রাসনের দৃশ্য। অনেকে মনে করেন পর্নোগ্রাফি দেখার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। ওই একই গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষরাই সেই আচরণ করছে এবং তাদের লক্ষ্য হচ্ছে নারী। এবং নারীরা এসব দেখে আনন্দ পাচ্ছে বলেই পর্নোগ্রাফিতে দেখানো হচ্ছে। এধরনের আরেকটি গবেষণায় আগ্রাসনধর্মী পর্নোগ্রাফির কী প্রভাব পড়ছে পুরুষের ওপর সেবিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে বলা হয়েছে, এসব পর্নোগ্রাফির সাথে সহিংসতার সম্পর্ক খুব বেশি নয়। তবে নারীদের ওপর এর কী ধরনের প্রভাব পড়ে সেবিষয়ে জানা যায় আরো কম। নীলম মনে করেন, এবিষয়ে স্কুলের আরো এগিয়ে আসা উচিত যৌন শিক্ষার ব্যাপারে। "আমার মনে হয় সেক্স এবং পর্ন স্কুলগুলোতে এখনও একটা ট্যাবু। এসব বিষয়ে মেয়েরা জানতে পারবে হয় স্কুলে কিম্বা পর্নোগ্রাফি থেকে। কিন্তু আমি মনে করি না যে পর্নোগ্রাফি থেকে মেয়েরা ভাল যৌন-শিক্ষা পাবে।" কিন্তু এরিকা মনে করেন, পর্ন দেখার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। এটা হচ্ছে ওয়াইন খাওয়ার মতো। কেউ এক গ্লাস খেয়েই রেখে দেবে আবার অন্য একজনকে হয়তো পুরো বোতলটাই খেয়ে ফেলতে হবে।" পর্নোগ্রাফি নীলমকে এখন আর আগের মতো আকৃষ্ট করে না। তিনি বলেছেন, কয়েক বছর আগে তিনি এসব আবারও দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আর অতো ভাল লাগেনি বলে তিনি জানিয়েছেন। হান্না এখনও এসব ভিডিও মাঝে মধ্যে দেখে থাকেন। তবে এসব তিনি বাছাই করে দেখেন। তার মধ্যে রয়েছে দম্পতিদের ঘরে তৈরি ভিডিও যার সাথে বাস্তবতার মিল রয়েছে।
news-53967626
https://www.bbc.com/bengali/news-53967626
করোনা ভাইরাস: মহামারির এই খারাপ বাজারে নতুন চাকরি পেতে যে আটটি কাজ করতে পারেন
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চাকরির বাজারের পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পাল্টে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা না হওয়ার কারণে কর্মী ছাঁটাই করছে আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাটাই না করলেও নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।
চাকরির বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে। (ফাইল ছবি) এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা অবস্থার মুখে পড়েছেন বেকার জনগোষ্ঠী। সদ্য পাশ করা কর্মহীন গ্র্যাজুয়েটদের সাথে সাথে, করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে নতুন করে বেকার হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বাংলাদেশে প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে (২৭.৩৯%)। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই বেকারত্ব বাড়ছে। টানা বেশ কয়েক মাস ধরে বেকার রয়েছেন লালবাগ এলাকার বাসিন্দা শাকিলা জেরিন। তিনি জানান, কয়েক মাস আগেও বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পরই চাকরিটি ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে। তবে বর্তমানে চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। মিজ জেরিন জানান, চাকরি খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার মুখে পড়ছেন তিনি। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সার্কুলার থাকলেও ইন্টার্ভিউয়ের জন্য ডাকছে না নিয়োগ দাতারা। "চাকরির সার্কুলার আছে। বিডি-জবস বা অন্যান্য যেখানে বিভিন্ন সেকশনে চাকরির সার্কুলার আছে। অ্যাপ্লাইও করছি। কিন্তু সেই হিসেবে ডাক পড়ছে না।" তিনি বলেন, অন্য আরেকটি সমস্যা হচ্ছে তার ৩ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলেও তিনি যে ধরণের চাকরি খুঁজছেন সে ধরণের চাকরির তিনি পাচ্ছেন না। "যেখানে চাকরির ডাক পড়ছে সেখানে আমার যে অভিজ্ঞতা সেই অনুযায়ী পদ, বেতন কিংবা পরিবেশ-কোনটিই ঠিক মিলছে না," বলেন শাকিলা জেরিন। এদিকে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চার মাস ধরে চাকরি খুঁজছেন শিপ্রা সরকার। মিজ সরকার বলেন, চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে এখন আসলে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার্কুলার আসছে না। আর যে সার্কুলার গুলো আসছে সেগুলোতে অভিজ্ঞতা নেই এমন মানুষদের সুযোগ কম বলেও জানান তিনি। "রিকোয়্যারমেন্টস (নিয়োগকর্তাদের চাহিদা) এখন অনেক হাই হয়ে গেছে। ৩-৪ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা ছিল এমন মানুষদের প্রেফার (অগ্রাধিকার) করছে। নতুনদের জন্য সুযোগ কম।" এ ধরণের অভিযোগগুলোর বিষয়ে অনেকটা একই রকম মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শুধু বাংলাদেশে নয় বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চাকরির সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে মানবসম্পদ কর্মকর্তাদের একটি অ্যাসোসিয়েশন, গ্রিন এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশের সভাপতি রওশন আলী বুলবুল বলছেন, "বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরির অবস্থা খারাপ। প্রত্যেকটা কোম্পানির একই অবস্থা।" "প্রত্যেকটা কোম্পানি ৫০% কর্মী নিয়ে কাজ করছে। তাদের যে জনবল আছে সেটাই ভালভাবে ব্যবহার করতে পারছে না তারা। তো নতুন কাজের সুযোগ হলে আগে পুরনো কর্মীদের সেখানে কাজে লাগানো হবে। তারপর নতুন নিয়োগ। আর এ কারণেই চাকরির ডাকও কম হচ্ছে।" তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়েও চাকরি পেতে কি ধরণের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হচ্ছে- চাকরি হারানোর আশঙ্কায় আছেন অনেকে। ১. নিজের আকর্ষণীয় প্রোফাইল তৈরি করুন: কিভাবে কোথায় চাকরি খুঁজবেন সেটা অনেক সময়ই বেশ ঝামেলার মনে হতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি জব মার্কেট বা চাকরির বাজার থেকে বেশ কিছু সময় ধরে বাইরে থাকেন তাহলে সেটি আরো বেশি কঠিন মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি কাজ করতে পারে সেটি হচ্ছে, প্রথমেই নিজের একটি আকর্ষণীয় অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করুন। যাতে করে একদিকে আপনার জন্য যেমন চাকরির আবেদন করা সহজ হবে ঠিক তেমনি অন্যদিকে নিয়োগকর্তারাও আপনাকে সহজে খুঁজে পাবে। এই প্রোফাইল তৈরি করার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে আপনার মূল দক্ষতার জায়গাগুলো হাইলাইট করতে হবে। সিভি বা বায়োডাটা অথবা জীবন বৃত্তান্ত বানানোর সময় আপনার দক্ষতাগুলোকে অগ্রাধিকার দিন। অভিজ্ঞতাগুলোকে এর পর স্থান দিন। যেমন, আপনি সিভিতে বলতে পারেন যে, কোন কোন প্রজেক্ট আপনি নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং বাজেটের মধ্যে করতে পেরেছেন। আপনি আগের কোম্পানিকে কিভাবে কতগুলো নতুন ক্লায়েন্ট জোগাড় করে দিয়েছেন সেগুলো বর্ণনা করুন। আবেদন করার আগে তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে আপনার সিভি ও আবেদনপত্রটি পড়তে দিন। কোন ভুল থাকলে সেগুলো সংশোধন করুন। প্রতিবার আলাদা কোম্পানি এবং পদের জন্য আলাদা আলাদা সিভি এবং আবেদনপত্র তৈরি করুন। এটি একটু সময় সাপেক্ষ হলেও এতে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে ডাক না পেলে ফোন করে খোঁজ নিতে পারেন। এতে ওই কোম্পানির জন্য আপনাকে ইগনোর করা বা পাত্তা না দেয়াটা একটু কঠিন হয়ে পড়বে। ২. কোথায় চাকরি খুঁজবেন? বিভিন্ন জব সাইটে চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়া থাকে। আবার অনেক কোম্পানি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিজেদের ওয়েবসাইট বা পোর্টালে দিয়ে থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। কোন নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে চাইলে খবর নিন যে সেখানে নিয়োগ হচ্ছে কিনা। আপনি যদি কোন একটি নির্দিষ্ট পদে চাকরি করতে চান তাহলে নিজে উদ্যোগী হন, ওই পদে যারা কাজ করছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চেষ্টা করুন যে তারা কিভাবে সেটি পেয়েছেন। প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলো এক্ষেত্রে কাজে দিতে পারে। যেমন ধরুন লিংকডইন, ফেসবুক গ্রুপ, শিল্প কিংবা কমিউনিটি সংস্থা ইত্যাদি। এসব জায়গায় বিভিন্ন চাকরির খোঁজ যেমন থাকে ঠিক তেমনি কিভাবে আপনি সেটি অর্জন করবেন তার নির্দেশনাও থাকে। ৩. অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরুন: করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেকটাই বেশি। এক্ষেত্রে অন্যদের থেকে নিজেকে কিভাবে আলাদা প্রমাণ করবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরিচয় অনেকটাই কাজে আসতে পারে। আপনার বন্ধু, পরিবারের সদস্যরা কিংবা অন্যান্য পরিচিতরা-যেই হোক না কেন তাদেরও পরিচিত আরো অনেক মানুষ থাকে। যাদের মধ্যে কেউ হয়তো নিয়োগকর্তা হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকে আপনার চাকরির খোঁজ সম্পর্কে বলে রাখতে পারেন। কারণ, পরিচিত থাকলেই যে চাকরি হবে সেটা হয়তো না, কিন্তু অনেক নিয়োগকর্তাই রয়েছেন যারা পরিচিতদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। এছাড়া পরিচিত থাকলে আপনি হয়তো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসার আগে থেকেই জানতে পারবেন যে কোথায় চাকরির সুযোগ রয়েছে আর কোথায় নেই। বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীর কাছে সরকারি চাকরির প্রাধান্য বেশি ৪. যে পদের জন্য আবেদন করছেন সে বিষয়ে জানুন: চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নিয়োগকর্তা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে জানা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইমপ্লয়ার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, যে প্রতিষ্ঠান বা পদের জন্য আবেদন করছেন সে বিষয়ে অবশ্যই জানতে হবে। "ওই পদে চাকরি না করেও বাইরে থেকে যতটা জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব সেটা করতে হবে। এখন ইন্টারনেটের যুগ এছাড়া বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকেও ধারণা নেয়া যায়।" সেই সাথে ওই পদে চাকরিটি হলে তার দায়িত্ব কি হবে, তিনি কিভাবে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে লাভবান করতে পারবেন সেটিও জানতে হবে। "যেহেতু আগের তুলনায় এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, তাই অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলে অনেক বেশি দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।" ৫. কোন কাজকে ছোট মনে না করে শুরু করতে হবে: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাকরি লাভের ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় হচ্ছে ধৈর্য্য ধরতে হবে। সব কিছু একদিনে বা চাইলেই হয়ে যাবে না সেটি মাথায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের চাকরি সংক্রান্ত একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিডি-জবসের প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, বসে না থেকে যেকোন কাজে ঢুকে পড়তে হবে। এতে করে নতুন অভিজ্ঞতা বাড়বে। "আমি কত টাকা বেতন পাচ্ছি বা আমার পদটা কি সেটা দিয়ে কোন কাজের মূল্যায়ন হয় না। আমি কতটা ভ্যালু অ্যাড করছি বা নতুন কাজের কতটুকু শিখতে পারছি সেটাই বড় ব্যাপার।" বলেন তিনি। ৬. অভ্যস্ততা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: বিডি-জবসের প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, যারা করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন তাদের জন্য চাকরি পাওয়ার পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদেরকে আসলে কমফোর্ট জোন বা অভ্যস্ততার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি একটি চাকরি করতে করতে হয়তো তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি হয়তো একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতনও পেতেন। "তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাকে মাথায় রাখতে হবে যে, তার কাজের সেক্টর একই নাও থাকতে পারে, তার বেতনের জায়গাটাতে হয়তো কম্প্রোমাইজ করতে হতে পারে।" নতুন করে চাকরির আবেদন করতে গেলে এসব বিষয় মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি। এখন তার চাকরিতে যোগ দেয়াটাই জরুরি। পরে হয়তো তার আগের জায়গাটা চলে আসবে। কিন্তু ৬ মাস বা এক বছর বসে থাকলে সেটি পরবর্তীতে চাকরি পেতে আরো বেশি সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন মি. মাশরুর। "সিভি-তে যদি থাকে যে সে অনেক দিন বসে ছিল তাহলে সেটাকে ভালভাবে দেখা হয়না," বলেন তিনি। ৭. মাল্টি-টাস্কিং হতে হবে: এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশের সভাপতি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন-এর উপ-পরিচালক রওশন আলী বুলবুল বলেন, বর্তমান চাকরির বাজারে একজন চাকরি-প্রার্থীকে অন্য প্রার্থীদের থেকে এগিয়ে থাকতে হলে তাকে অবশ্যই মাল্টি-টাস্কিং হতে হবে। আগে যেমন যে পদের জন্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে শুধু সেই পদের দায়িত্ব এবং যোগ্যতা থাকলেই তাকে নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে তা বদলে গেছে। এখন সংশ্লিষ্ট পদের যোগ্যতা ছাড়াও আইটি বা প্রযুক্তি সম্পর্কিত দক্ষতা থাকাটা খুব জরুরি বলে মনে করেন তিনি। মি. আলী বলেন, "করোনার পর অনেকেই বাসায় বসে অফিস করছে। আগে টেকনিক্যাল নলেজ(জ্ঞান) না থাকলেও হতো, কিন্তু এখন সেটা বাধ্যতামূলক। আইটি-সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।" এ বিষয়ে বিডি-জবসের প্রধান নির্বাহী মি. মাশরুর বলেন, যারা মার্কেটিংয়ে কাজ করেন তারা হয়তো আগে স্বশরীরে গিয়ে উপস্থিত হয়ে মিটিং বা ক্লায়েন্টদের সাথে দেখা করতেন। কিন্তু এখন আর সেরকমটা নেই। এখন হয়তো ডিজিটালি তাকে সব কিছুতে যোগ দিতে হচ্ছে। "তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশি ব্যবহার করতে হবে। গুগল বা সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহার জানতে হবে। তার পণ্যগুলো যাতে সার্চ করতে গেলে সবার আগে আসে সে বিষয়টা কিভাবে করতে হয় তা জানতে হবে।" ৮. নিজে নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন: যাদের চাকরি চলে গেছে তাদের নতুন চাকরি পেতে সমস্যাই হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নতুন দক্ষতা বাড়ানোর সাথে সাথে নিজে নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। নতুন কোন প্রতিষ্ঠান বা সেক্টরে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন-এর উপ-পরিচালক রওশন আলী বুলবুল বলেন, "করোনার পর বর্তমানে অনলাইনে কাজের সুযোগ বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। স্বপ্ন, আগোরা, মিনাবাজার, ফুডপাণ্ডার মতো প্রতিষ্ঠানে লোক লাগছে। তো নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে এ ধরণের অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কাজের মানসিকতা থাকতে হবে।" সেই সাথে এই সেক্টরে নিজে নতুন কিছু করারও চিন্তা করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
news-49708260
https://www.bbc.com/bengali/news-49708260
পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত: কেন আর কীভাবে করা হয়?
অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতদেহ বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর কারণ জানার যে চেষ্টা করা হয়, তাকেই পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত বলা হয়।
অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ জানার জন্য পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত করা হয়ে থাকে পোস্টমর্টেম শব্দটি অটোপসি, নিক্রোপসি ইত্যাদি দ্বারাও বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর কয়েকশো ময়না তদন্ত হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালে আলাদা আলাদাভাবে সেটি হওয়ায় এর মোট সংখ্যাটি কারো জানা নেই। পোস্টমর্টেম কেন করা হয়? নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মমতাজ আরা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, 'মৃত্যুর কারণ জানার জন্য পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত করা হয়। ''কোন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে বা তার মৃত্যু নিয়ে কোন সন্দেহ তৈরি হলে, মৃত্যুর সঠিক কারণটি জানার জন্য মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মৃতদেহ বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করা হয়, ঠিক কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।'' তিনি বলছেন, অনেক সময় শরীরের ভেতরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা হয়। যেমন ধর্ষণের অভিযোগে সিমেন সংগ্রহ করে ডিএনএ ম্যাচ করা হতে পারে। আবার আত্মহত্যার মতো অভিযোগে ভিসেরা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বোঝা যায় যে বিষপ্রয়োগের কোন ঘটনা ঘটেছে কীনা। অনেক সময় কোন ব্যক্তি অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করার পরেও যদি ওই মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়, তাহলে তখন যে পোস্টমর্টেম করা হয়, তাকে বলা হয় ক্লিনিক্যাল পোস্টমর্টেম। ময়নাতদন্ত নাম কীভাবে এলো? অটোপসি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ অটোপসিয়া থেকে। যার অর্থ মৃতদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা। ডা: মমতাজ আরা বলছেন, ময়না শব্দটি ফার্সি বা উর্দু থেকে এসেছে, যার অর্থ ভালো করে খোঁজা বা অনুসন্ধান করা। ফলে ময়না তদন্ত মানে হলো ভালো করে তদন্ত করে দেখা। যেহেতু মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকরা এই কাজটি করে থাকেন, এ কারণেই এর নাম হয়েছে ময়না তদন্ত। ফ্রান্সের একটি পোস্টমর্টেম মর্গের ভেতরের ছবি কীভাবে ময়না তদন্ত করা হয় হত্যা, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনার মতো যেকোনো অপমৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ঘটনায় প্রথমেই পুলিশ একটি সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। অর্থাৎ মৃতদেহ কী অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এরপর মৃত্যু সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ময়না তদন্ত করতে পাঠানো হয়। মর্গে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকরা সেই সুরতহাল প্রতিবেদন দেখে, প্রথমে মৃতদেহের বাহ্যিক অবস্থার বিশ্লেষণ করেন। সেখানে কোন আঘাত বা ক্ষত আছে কিনা, ত্বক ও জিহ্বার রঙ ইত্যাদি দেখে প্রথম প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এরপরে মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করে মস্তিষ্ক, ফুসফুস, লিভারসহ শরীরের ভেতরটা যাচাই করে দেখা হয়। ফলে শরীরের ভেতরে কোন আঘাত থাকলে, রক্তক্ষরণ বা বিষক্রিয়া থাকলে, সেটি চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন। কোথাও আঘাতের চিহ্ন থাকলে সেটি কীভাবে হয়েছে, তা ভালো করে যাচাই করা হয়। এই কাজটি করতে গিয়ে মৃতদেহের নানা অংশ কেটে দেখতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। এ সময় শরীরের নানা প্রত্যঙ্গও সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে। ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহ আবার সেলাই করে আগের মতো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। তবে শরীরের অভ্যন্তরীণ কোন কোন অংশ কেটে আরো পরীক্ষার জন্য গবেষণাগারে পাঠানো হতে পারে। আরো পড়ুন: কবর বা দাহ নয়, মৃতদেহ 'গলিয়ে' সৎকার মানুষের মৃতদেহ থেকে জৈব সার তৈরি হবে আমেরিকায় বজ্রপাতে নিহতদের মৃতদেহ ঘিরে কী রহস্য মৃত্যুর পর দান করা মানুষের মৃতদেহ দিয়ে কী হয়? ময়না তদন্ত থেকে কী জানা যায়? ময়না তদন্তে বেশ কয়েকটি বিষয় জানার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বিষয় হলো মৃত্যু কীভাবে হয়েছে এবং কখন মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা, আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে কিনা, বিষ খাওয়ানো হয়েছে কিনা, রক্তক্ষরণের কোন ঘটনা আছে কিনা- ইত্যাদি বিষয়ও ময়না তদন্তে বেরিয়ে আসে। কোন মৃত্যুর ময়না তদন্ত করা হয়? ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, কোন মৃত্যুর ঘটনাগুলোয় ময়না তদন্ত করা হবে। ''হত্যাকাণ্ড, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, বিষপানে মৃত্যু, শরীরের যদি কোন আঘাতের দাগ থাকে, অর্থাৎ স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বলে সন্দেহের অবকাশ থাকলেই সেখানে মৃত্যুর কারণ জানার জন্য পোস্টমর্টেম করতে হবে।'' এ ধরনের ঘটনায় প্রথমে পুলিশ একটি সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। অর্থাৎ পুলিশ কর্মকর্তা কী অবস্থায় মৃতদেহটি দেখেছেন, মৃতদেহের বিস্তারিত বর্ণনা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এরপর থানায় মামলা বা সাধারণ ডায়রির পরে পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্ত করার জন্য পাঠিয়ে থাকে। তবে পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হলে একজন ম্যাজিস্ট্রেট সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। এরপর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত কোথায় হয়? বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজে মর্গ রয়েছে। সেখানে ময়না তদন্তের জন্য বিশেষ স্থান থাকে। সেখানে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা ময়না তদন্ত করে থাকেন। এর বাইরে যেসব জেলা শহরে আড়াইশো শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে ময়না তদন্ত করা হয়ে থাকে। মেডিকেল কলেজগুলোয় ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপকরা ময়না তদন্ত করলেও, জেলা শহরে সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে আবাসিক সার্জনরা সেটা করে থাকেন। অধ্যাপক ডা. মমতাজ আরা বলছেন, যত দ্রুত ময়না তদন্ত করা যাবে, তত ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে অনেক সময় মৃত্যুর অনেক পরেও, দাফন হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পরেও পুনরায় ময়না তদন্তের উদাহরণ রয়েছে। ময়না তদন্তের প্রকারভেদ মৃত্যুর কারণ জানার জন্য মূলত ময়না তদন্ত করা হলেও এর আরো কয়েকটি ভাগ রয়েছে। যেমন: মেডিকেল: অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ জানতে এই ময়না তদন্ত করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি একটি প্রচলিত পদ্ধতি। একাডেমিক: চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করা হয়ে থাকে। ক্লিনিক্যাল: অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুর পরেও কারো মৃত্যু নিয়ে যদি বিতর্ক তৈরি হয়, তখন ক্লিনিক্যাল পোস্টমর্টেম করা হয়। ময়না তদন্তের ব্যতিক্রম অনেক সময় অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেও পরিবারের স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়না তদন্ত ছাড়াও মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদুর রহমান বলছেন, ''বাস দুর্ঘটনার মতো অনেক অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো ঘটনায় যখন মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ থাকে না, তখন পরিবারের অনুরোধে ময়না তদন্ত ছাড়াই মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। কারণ পরিবারের সদস্যরা চান না, তাদের স্বজনদের মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করা হোক। তখন ম্যাজিস্টেটের অনুমতি নিয়ে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হতে পারে।'' কিন্তু মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ থাকলে অবশ্যই ময়না তদন্ত করা হবে, তিনি বলছেন। ময়না তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন সম্প্রতি পুলিশ বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ময়না তদন্তের ভুল দেখতে পেয়েছে। এ বিষয়ে ডা: মমতাজ আরা বলছেন, '' আমার বিশ্বাস, কোন চিকিৎসক পক্ষাবলম্বনের জন্য ভুল প্রতিবেদন তৈরি করেন না। হয়তো অনেকদিন পরে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছে, ফলে সঠিক চিত্রটি বেরিয়ে আসেনি। কিন্তু ইচ্ছা করে কেউ এটা করেছেন বলে আমি মনে করি না।'' ময়না তদন্তের ইতিহাস সহকারী অধ্যাপক ডা: মমতাজ আরা বলছেন, সতেরশো শতক থেকেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পোস্টমর্টেমের রীতি চালু রয়েছে। তবে তখনকার তুলনায় এখন অনেক আধুনিকভাবে ময়নাতদন্ত করা হয়ে থাকে। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: যে দশ লক্ষণ দেখে বুঝবেন একটি দেশ গণতান্ত্রিক নয় ভারতীয়রা নতুন ট্রাফিক আইন মানতে চায় না কেন দেড় হাজার কোটি টাকা দিয়ে কী তৈরি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্বাস্থ্য: হৃদরোগ ঠেকাতে খাদ্যভ্যাসে ৫টি পরিবর্তন
news-48458260
https://www.bbc.com/bengali/news-48458260
ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাট স্ক্যান্ডালের মেসেজ ফাঁস: 'ফ্ল্যাটের সবাইকে ধর্ষণ করে উচিত শিক্ষা দাও'
সতর্কতা: এই খবরে এমন সব তথ্য রয়েছে, যা অনেক পাঠক পীড়াদায়ক বলে মনে করতে পারেন। একটি মেসেজ এরকম, 'ফ্ল্যাটের সবাইকে ধর্ষণ কর। তাতে ওদের একটা উচিত শিক্ষা হবে'।
বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি যেভাবে সামাল দিয়েছে, চ্যাটে উল্লেখ করা হয়েছে এমন দুটো মেয়ে সে ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন অ্যানা - যেটি তার আসল নাম নয় - ফেসবুকের গ্রুপ চ্যাটে তার বন্ধুদেরই লেখা এমন শত শত যৌন সহিংসতামূলক মেসেজ স্ক্রল করছিলেন। সেখানে তার এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য মেয়েদের নাম বেশ কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে। এসব আপত্তিকর মেসেজ যারা লিখেছে তারা অ্যানারই সহপাঠী। ব্রিটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিষয়ের শিক্ষার্থী এরা সবাই। তারা শুধু অ্যানার সহপাঠীই নয়, বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। যারা চ্যাটে অংশ নিয়েছিল, তারা শুধু অ্যানার সহপাঠীই নয় বরং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুও অ্যানা যখন এসব মেসেজ দেখে ফেললেন, বিষয়টা আর গোপন থাকল না। যেটা ছিল নিছকই নিজেদের মধ্যে গোপন মেসেজ আদান-প্রদান, সেটা সবাই জেনে ফেলল। অ্যানা এবং তার আরেক মেয়ে সহপাঠী—যাদের নাম ওই মেসেজগুলোতে বারবার নেওয়া হয়েছে-তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর দোষী প্রমাণিত হওয়ায় এক ছাত্রকে বরখাস্ত ও ক্যাম্পাসে আজীবন নিষিদ্ধ করা হল। দুইজনকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ও বহিষ্কার করা হল। আরো দুই ছাত্রকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হল। পরে ১০ বছরের জন্য বহিষ্কৃত দুই ছাত্রের সাজা কমিয়ে মাত্র ১২ মাস করা হয়। আর তাতেই আলোচনার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়টি যেভাবে ঘটনাটি তদন্ত করেছে তা নিয়ে ওঠে নানা প্রশ্ন। এক বছর পরেও এ ঘটনার রেশ কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে কী ঘটেছিল? 'নিছকই ছেলেদের আলাপ-সালাপ' গত বছরের প্রথম দিকের ঘটনা। তখন অ্যানার বয়স ১৯ - একদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রুমের সোফায় বসেছিলেন। তার পাশে থাকা বন্ধুর ল্যাপটপে হঠাৎ একের পর এক মেসেজ আসা শুরু হলো। অ্যানা তার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঘটনা কী? অ্যানা কৌতূহলী হয়ে দেড় বছর ধরে লেখা গ্রুপ মেসেজগুলো পড়তে শুরু করলেন বন্ধুটি বলল, "তোমার কাছে খারাপ মনে হতে পারে। তবে আমাদের ছেলেদের এই গ্রুপে আমরা মজা করে অনেক কথাই বলি। তুমি চাইলে দেখতে পার।" অ্যানা কৌতূহলী হয়ে দেড় বছর ধরে লেখা গ্রুপ মেসেজগুলো পড়তে শুরু করলেন। তখনই দেখলেন এগুলো নিছকই মশকরা করে লেখা মেসেজ না, 'রীতিমত ধর্ষণের হুমকি'। অ্যানা দেখলেন, ওই ফেসবুক চ্যাট গ্রুপে তার বন্ধুরা নিজেদের নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ও সিরিয়াল রেপিস্টদের নামে নিজেদের নাম রেখেছে। 'ওরা আমাদের এক সহপাঠীকে নিয়ে কথা বলছিল। ওরা লিখছিল কীভাবে ওকে ওরা অপহরণ করবে, তারপর শেকল দিয়ে বিছানায় বেঁধে রাখবে, ওকে বিছানায় প্রস্রাব করিয়ে তার ওপর ঘুমাতে বাধ্য করবে।' ওই গ্রুপে লেখা বেশিরভাগ মেসেজ ছিল এর চেয়েও ভয়াবহ। অ্যানা বললেন, 'এটা কোনো উটকো মন্তব্য নয়। একটা পুরো অনলাইন কমিউনিটি এ ধরনের কথা বলছে। তারা খুবই আনন্দের সাথে এ ধরনের ভয়াবহ কথা বলছে। এটা নিয়ে তারা বেশ গর্বিতও!' অ্যানা ওই চ্যাট গ্রুপে নিজের নাম সার্চ দিয়ে দেখলেন শত শতবার তাকে নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছে। অ্যানার বন্ধুটি বলল, 'এগুলো সবই মজা করে বলা। সিরিয়াস কিছু না। ছেলেরা এভাবেই কথা বলে। এগুলো নিছকই রসিকতা।' অ্যানা স্ক্রল করে চলেছিলেন। আর নিজের ফোনে ওদের এসব চ্যাটের ছবি তুলে রাখছিলেন। অ্যানা বলেন, 'আমি আমার বন্ধুকে বলেছিলাম যে এটা আমার মনের শান্তির জন্য করছি। কিন্তু আমার চেহারা দেখে আমার বন্ধুটি আঁচ করতে পেরেছিল যে ঘটনাটি আমি স্রেফ মজা হিসেবে নেইনি।' বিষয়টি অ্যানা সিরিয়াসভাবে নিচ্ছে বুঝতে পেরে বন্ধুটি ভোল পাল্টে ফেলল। সে তখন তাকে বলল যে সে জানে ওই গ্রুপের কোনো কোনো মেসেজ খুবই আপত্তিকর। তাই অ্যানার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলেই তাকে সে মেসেজগুলো দেখতে দিয়েছে। মেসেজগুলো দ্রুত স্ক্রল করতে করতে অ্যানা যখন গণধর্ষণ, যৌনাঙ্গ ব্যবচ্ছেদ বিষয়ে ডজন ডজন মেসেজ দেখেন, ভয়ে আঁতকে ওঠেন তিনি। তিনি বলেন, 'আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার কী করা উচিত। কারণ যারা এমনসব ভয়াবহ কথা বলছে তারা সবাই আমার বন্ধু, আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ।' এর কয়েকদিন পরেই ইস্টারের ছুটি কাটাতে তিনি বাড়িতে যান। কিন্তু ক্যাম্পাসে ফেরার পর আবার এইসব ছেলেদের সাথে তার দেখা হবে ভাবতেই তার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। 'আমি ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য আমার জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলাম। কিন্তু ওখানে ফিরে যেতে আমার আর একটুও ইচ্ছা করছিল না।' সেদিনই অ্যানা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন। 'দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা' অ্যানা ও তার আরেক মেয়ে সহপাঠী, যার নাম বারবার ওই মেসেজগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছিল, তারা দুজন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ জানালেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাল যে তাদের দুইজনকে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞসাবাদ করা হবে। আশ্চর্যের বিষয় হল যে লোকটি তাদের ইন্টারভিউ নিচ্ছিল সে ছিল ইউনিভার্সিটির প্রেস ডিরেক্টর। অ্যানা বললেন, 'আমার কাছে বিষয়টি খুবই আজব মনে হয়েছে। তদন্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এ কোন লোককে বেছে নিল!' প্রেস প্রধান হিসেবে পিটার ডানের দায়িত্ব ছিল ব্রিটেনের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি হিসেবে স্বীকৃত ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখা, এজন্য মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। আর তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তার দায়িত্ব হল, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। শিক্ষার্থীদের পত্রিকা, 'দ্য বোয়ার'-এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে বিষয়টি জাতীয় গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে। আরো পড়ুন: ধান কাটা: শুধু ফটোসেশন নাকি কৃষকের সহায়তা জিয়াউর রহমানের মৃতদেহের খোঁজ মিলল যেভাবে মিয়ানমার আর্মির বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাচঁ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে যে, মি. ডানের এই দুই দায়িত্বপালন কিছুটা সাংঘর্ষিক। তবে তারা দাবি করে যে ওই সময়ে মি. ডান তার প্রেস বিষয়ক দায়িত্বের কিছুটা অন্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। যদিও বিবিসি এক ইমেইলে দেখেছে যে, মি. ডান ওই দুই মেয়েকে জানিয়েছেন তিনি গণমাধ্যমে এই অভিযোগটির বিষয়ে একটি বিবৃতি দিতে চান এবং এ বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চান। অ্যানা বলেন, 'বিষয়টি অবশ্যই সাংঘর্ষিক। যে লোক গণমাধ্যমে বিবৃতি লিখছেন তিনি আমার জীবনের এত ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জানেন! আমার মনে হচ্ছিল আমি একটি পরাবাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।' বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবিসি'কে জানায়, 'এরকম একটি স্পর্শকাতর বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে সামাল দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুবই যৌক্তিক। আমরা তদন্তকারী কর্মকর্তা পিটার ডানকে এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।' ওই দুই মেয়ের সাথে কথা বলার এক মাস পরে, চ্যাটকারী পাঁচ ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। দু'জন দশ বছর, দু'জন এক বছর এবং একজন আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত হয়। অ্যানা এবং তার বন্ধু জানায়, তারা জানত না দোষীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারা গণমাধ্যমে এ খবর জানতে পারে। তবে তারা জানে না কোন ব্যক্তিকে কোন সাজা দেয়া হয়েছে। তবে ঘটনাটি এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। দশ বছরের জন্য যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারা এ শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করে। টুইটারে নিন্দার ঝড় চার মাস পর, দশ বছরের জন্য বহিষ্কৃতদের সাজা কমিয়ে মাত্র এক বছর করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অ্যানা বলেন, 'আমাদেরকে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো কারণ জানানো হয়নি। আমাদেরকে বলা হয়েছে যে নতুন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, কিন্তু আমরা জানি না সেই নতুন তথ্য-প্রমাণগুলো কী।' 'আমার মনে হচ্ছিল আমাকে হাল ছেড়ে দিতে হবে। আমরা যে দুইজন অভিযোগ করেছি, আমরা দুইজন যেন পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছি, যারা কখনোই আমাদের কথা শুনবে না।' অ্যানা এবং তার বন্ধু শেষ চেষ্টা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর স্টুয়ার্ট ক্রফট তাদের জানান যে তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা অবহেলার প্রমাণ তারা পাননি। তিনি তদন্তের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তিন সপ্তাহ পরে, এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট এক মেয়ে শিক্ষার্থী বিষয়টি টুইটারে তোলেন, খুব দ্রুতই #শেমঅনইউওয়ারউইক ট্রেন্ডিং হতে শুরু করে। ফলে ঘটনাটি আবারো জাতীয় গণমাধ্যমগুলোর আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তদন্ত প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছ থেকে বিভিন্ন বিভাগ নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়া শুরু করে। কিছুদিন পরেই এক হাজার শব্দের এক বিবৃতিতে প্রফেসর ক্রফট জানান যে, ওই চ্যাটগুলি পড়ে তার মনোভাবের সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা তাঁর এই প্রতিক্রিয়াকে ভালোভাবে নেয়নি। তাদের কাছে এ বক্তব্য খুবই দায়সারা মনে হয়েছে। এর তিনদিন পরে তিনি ঘোষণা দেন যে, যাদের শাস্তি কমানো হয়েছিল তারা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরবে না। তবে এটা কী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, না-কি শাস্তিপ্রাপ্তদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, এ বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করেননি। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। দুদিন পরেই, শত শত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মিছিল করে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কার্যালয় অভিমূখে মিছিল করে। প্রতিবাদের দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ঘটনার শিকাররা যে মর্মপীড়ায় ভুগেছে, তার জন্য তারা 'গভীরভাবে দুঃখিত'। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েদের কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনামূলক কোন ব্যক্তিগত বার্তা পায়নি। আর কখনো যাব না ওয়ারউইক-এর এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে অনলাইনে যৌন সহিংসতা এবং এ ধরনের সমস্যাগুলো রোধে কাজ করে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা ও আপিল প্রক্রিয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে, যা ২০১৯ এর সামারে শেষ হবে। প্রফেসর ক্রফট বিবিসি'কে জানান যে, তিনি আশা করেন এই পর্যালোচনা ঘটনা থেকে আমাদের নেয়া শিক্ষাকে প্রতিফলিত করবে। কিন্তু যেসব মেয়ে এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন, তারা অবশ্য মনে করেন না যে এর এর সুষ্ঠু সমাধান আদৌ হয়েছে। অ্যানা এখন থার্ড ইয়ারে পড়ছেন। আর কিছুদিন পরে তার গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবে। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে, এক বছরের বেশী এটা চলেছে।' 'আমি আমার গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে যেতে চাই না। আমি এখন শুধু দিন গুণছি কখন এই দিনগুলো শেষ হবে আর এমন দিন আসবে যখন আমার আর কখনো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে না।'
news-51339775
https://www.bbc.com/bengali/news-51339775
বিবিসি বাংলার সংবাদদাতার চোখে ঢাকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোটার উপস্থিতি, ইভিএম ব্যবহার এবং পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরেছেন বিবিসির সংবাদদাতারা।
এবারের সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে ইভিএম এর মাধ্যমে। এবারের নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রেই রয়েছে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টি। অনেক কেন্দ্রেই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও ভোটার দেখা গেছে অল্প কয়েকজন। চোখে পড়েনি ভোটারদের লাইন। ধানমন্ডি, জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, লালবাগ, তেজগাঁও বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা কাদির কল্লোল সকাল থেকেই ঢাকার ধানমন্ডি, জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, লালবাগ এবং তেজগাঁও এলাকার ৮টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। ঢাকার দু'টি সিটি কর্পোরেশনের এসব ভোট কেন্দ্রে সকালে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটারের অভাবে খাঁ খাঁ করছিল। কোনও কোনও কেন্দ্রে লম্বা সময় অপেক্ষা করে দুই তিনজন করে ভোটার চোখ পড়েছে। কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের চাইতে কর্মকর্তাদের সংখ্যা বেশি এমনটাই মনে হয়েছে। কোথাও ভোটারদের কোন লাইন দেখা যায়নি। ঢাকার জিগাতলা এলাকায় সরকারি প্রাথমিক স্কুলে নারী ভোটারের কেন্দ্রে দেখা যায়, এই কেন্দ্রে ১ হাজার ১শো'র বেশি ভোট থাকলেও সকালে প্রথম এক ঘণ্টায় ১২টির মতো ভোট পড়েছে। কোনও কোনও বুথে সকাল ৯টা পর্যন্ত একটিও ভোট পড়েনি। তেজগাঁও এলাকায় ইন্সটিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ভোটকেন্দ্রে ২ হাজার ৪শো'র বেশি ভোটার। কিন্তু সেই কেন্দ্রে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত প্রথম দেড় ঘণ্টায় ৫০টি ভোট পড়ে। মিরপুর ও মোহাম্মদপুর বিবিসি বাংলার আকবর হোসেন মিরপুর এবং মোহাম্মদপুরের অন্তত ১৪টি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। এরমধ্যে মিরপুরের ৯টি কেন্দ্রে কয়েক ঘণ্টায় তিনি দেখতে পান, সেখানে গড়ে কোনভাবেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পড়ছে না। কোন কোন কেন্দ্রে ৬%-৭% ভোট পড়লেও, কিছু কেন্দ্রে এই হার ২ শতাংশেরও কম। মোহাম্মদপুরের ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোট পড়ার হার মিরপুরের তুলনায় কিছুটা বেশি। সেখানে গড়ে ভোট পড়ার হার ছিল ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। ভোটগ্রহণ ইভিএম পদ্ধতিতে হওয়ায় ওই ভোটকেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা এবং তাদের মধ্যে কতজন ভোট দিয়েছেন সেটা বুথে থাকা কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছিল। সেই হিসাবটি পরে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে মিলিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন বিবিসির সংবাদদাতা। ঢাকা দক্ষিণের চিত্রও ছিল প্রায় একই রকম উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মতো দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে প্রায় একই ধরণের চিত্র দেখেছেন সংবাদদাতা সায়েদুল ইসলাম। সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আওতাভুক্ত ১৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেন তিনি। শুরুতেই তিনি যান কলাবাগানের মেহেরুন্নিসা গার্লস স্কুল ভোটকেন্দ্রে। সকাল থেকেই ওই কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। আরও পড়তে পারেন: নির্বাচন পরিচালনায় কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কী কী? মেয়র-কাউন্সিলর পোস্টারে ২৫০০টন প্লাস্টিক বর্জ্য মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবসম্মত? অনেকক্ষণ পরপর একজন/দুজন করে ভোটার আসছিলেন। কর্মকর্তারা দীর্ঘসময় বসে ছিলেন ভোটারের প্রতীক্ষায়। তাদের আশা ছিল, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো ভোটারের উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু উপস্থিতি সামান্য বাড়লেও সেটা ছিল চোখে না পড়ার মতোই। দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ইশরাক হোসেনের ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতেও ভোটার সংখ্যা ছিল খুব কম। প্রশ্নের তীর নির্বাচন কমিশন আর প্রার্থীদের দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে শুরু করে মেয়র প্রার্থীদেরও এই ইস্যুতেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এই ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে বিএনপি প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রগুলোকে ঘিরে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটা ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপির প্রার্থীরা সরাসরি অভিযোগ করেন যে তাদের ১০০ জন এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। 'মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে, তাই তারা ভোট দিতে আসেনি' বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ভোটকেন্দ্রগুলো ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে, একারণে মানুষ ভোট দিতে আসেনি। কিন্তু তাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটির সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভোটের তারিখ হঠাৎ করে পরিবর্তন করায় ভোটের তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি শনিবারে পড়েছে। এ কারণে অনেক ভোটার ঢাকার বাইরে চলে গেছে বলে তারা মনে করছেন। এছাড়া কেন্দ্রে কোন পোলিং এজেন্টকে যেতে বাধা দেয়া হয়নি বলেও তারা দাবি করেন। কেন্দ্র কারও দখলে বা নিয়ন্ত্রণে ছিল না বলেও তারা জানান। প্রার্থীদের দায়ী করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবার ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার দায় চাপিয়েছেন প্রার্থীদের ওপর। তার মতে, প্রার্থীদের দায়িত্ব ছিল ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার। আবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের বক্তব্যও আলোচনায় এসেছে, যেমন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন যে বাংলাদেশ যে উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তার প্রমাণ, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসও এ বিষয়ে বলেছেন, উন্নত দেশে ভোটার উপস্থিতি কম হয়। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ায় অর্থাৎ বিএনপি থেকে দুজন প্রার্থী অংশ নেয়ায় ধারণা করা হয়েছিল নির্বাচনে ভোটের লড়াই দেখা যাবে। তারপরও ভোট যে এতো কম পড়বে সেটা ভাবা যায়নি। ভোট দেয়া-না-দেয়ায় কিছু আসে যায় না - বলছেন ভোটাররা উত্তর সিটিতে কেন্দ্রের বাইরে বেশ কয়েকজন ভোটারকে দেখা গেলেও তাদের মধ্যে ভোট দিতে অনাগ্রহ দেখা যায়। এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলেছেন যে, বাংলাদেশের যে নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ভোট দেয়া না দেয়া তাদের কাছে একই অর্থ বহন করে। ভোট দিলেও যিনি জিতবেন, না দিলেও তিনিই জিতবেন। দক্ষিণ সিটির এমন কয়েকজন ভোটারদের কাছে বিবিসির সংবাদদাতা জানতে চেয়েছিলেন, যে তারা কেন ভোট দিতে যাননি। উত্তরে ওই ভোটাররা বলছেন যে, তাদের ভোট দেয়া না দেয়ায় কিছু যাবে আসবে না। কারণ বিজয়ী কে হবেন, সেটা তারা জানেন। তাই তারা আর ভোট দেয়ার দরকার মনে করেননি। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বাইরে কোথাও বিরোধী প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের সেভাবে দেখা যায়নি। পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে না দেয়ার অভিযোগ বিবিসির কাদির কল্লোল জানাচ্ছেন, কেন্দ্রগুলোয় ঘুরেছের তার কোনটিতেই তিনি বিএনপির এজেন্ট দেখেননি। এগুলোর একটিতে বিএনপির এজেন্ট আসার পর কেন্দ্র থেকে তাকে বের করার দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাকি কেন্দ্রগুলোতে বিএনপি এজেন্টদের প্রবেশ করতেই দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ এসেছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪টি কেন্দ্রের মধ্যে মোহাম্মদপুরের একটি কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টকে দেখেছেন সংবাদদাতা আকবর হোসেন। তবে সেই এজেন্ট ছিলেন ভোটকেন্দ্রের বাইরে। তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলেও কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ তাকে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। অন্য দলের এজেন্ট নেই কেন, এমন প্রশ্নে প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের কাছে ধানের শীষ মার্কার কোন এজেন্ট আসেননি। এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই। অবশ্য ভোটকেন্দ্রের আশপাশে খোঁজখবর নিয়েও বিরোধী প্রার্থীর কোন এজেন্ট এমনকি কোন সমর্থককেও দেখা যায়নি। দক্ষিণ সিটির ওই ১৫টি ভোটকেন্দ্রের সবকটিতে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টদের দেখা গেলেও এর ১৪টি কেন্দ্রে বিএনপির কোন পোলিং এজেন্টকে দেখেননি বিবিসির সংবাদদাতা। আজিমপুরের যে একটি কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট পরিচয়ে এক নারীকে দেখা গেছে, তাকে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তার কাছে, প্রার্থীর নাম জানতে চাওয়া হলে, তিনি সেটা বলতে পারেননি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে তাদেরকে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন চাপ দিচ্ছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, অনেক পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রের প্রবেশ মুখ থেকেই বের করে দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা সকাল থেকে এজেন্টদের জন্য অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু কেউ আসে নি। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের বাইরে টেবিল চেয়ারে বসে যারা ভোটারদেরকে নাম পরিচয় ও ভোটার নম্বর সংবলিত স্লিপ দিচ্ছেন তাদের সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী। কোথাও বিএনপির কোন কর্মীকে তিনি ভোটার স্লিপ বিতরণের কাজে দেখা যায়নি। এ নিয়ে মি. তাপস ওই এজেন্টদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি বলেছেন, বিএনপির শক্তি নেই, এজন্য তারা এজেন্ট রাখতে পারছেন না। অন্যদিকে আতিকুল ইসলাম বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। এদিকে ভোটকেন্দ্রের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে অভিযোগের পর অভিযোগ করছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তাদের অভিযোগ অস্বীকার করছেন। বিবিসির সংবাদদাতারা ভোটকেন্দ্রগুলোর বাইরে ভোটারদের ভোটের নম্বর দিয়ে সহায়তা করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের দল বেঁধে থাকতে দেখেছেন। এভাবে ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে অনেকেই জটিলতার মুখে পড়েছেন। বিরোধী দলের সমর্থকদের বলতে গেলে কোন ভোটকেন্দ্রেই সেভাবে দেখা যায়নি। সার্বিকভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ ছিল। এছাড়া দুই একটি কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে। মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষ হয়েছে। ইভিএম ভোট নিয়ে জটিলতা এবারের পুরো নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম-এর মাধ্যমে। এর আগে জাতীয় নির্বাচনে হাতে গোনা কয়েকটি বুথে ইভিএম থাকলেও পুরোপুরি ইভিএমে ভোটগ্রহণ এটাই প্রথম। এই ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সায়েদুল ইসলাম। কারও কারও কাছে ইভিএমে ভোট দেয়া বেশ সহজ মনে হয়েছে। তারা আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে সহজেই ভোট দিতে পেরেছেন। আবার অনেকের কাছে এই পদ্ধতিটি বেশ জটিল লেগেছে। কারো কারো আঙ্গুলের ছাপ মিলছিল না। এজন্য কয়েকজন ভোট না দিয়েই ফিরে গেছেন। আবার অনেকে আঙ্গুলের ছাপ বা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারলেও ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে যান। অনেকেই বুঝতে পারছিলেন না ভোট কিভাবে দেবেন। বিশেষ করে প্রবীণ ভোটারদের তিনি এই জটিলতায় পড়তে দেখেন। কোন কোন কেন্দ্রে এটাও দেখা গেছে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার গোপন কক্ষে ঢুকে ভোটারদের ভোট দেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছেন, যেটা কিনা নির্বাচনী নিয়ম বহির্ভূত। তাদের দাবি হল যারা বুঝতে পারছেন না যে কিভাবে ভোট দেবেন তাদেরকে সেটা সহায়তার জন্য তারা ভেতরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ইভিএমের মাধ্যমে দেয়া ভোটের স্বচ্ছতা নিয়েও আশঙ্কার প্রকাশ করেছেন। উত্তর সিটির ভোটকেন্দ্রগুলোয় ইভিএম নিয়ে সন্তুষ্টির পরিবর্তে ভোটারদের অভিযোগের কথাই বেশি শুনেছেন আকবর হোসেন। মোহাম্মদপুরের একটি ভোটকেন্দ্রে তার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তারা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট না দিয়েই ফিরে যাচ্ছিলেন। এর কারণ হিসেবে তাদের একজন জানিয়েছেন, তিনি যখন তার ভোটার নম্বর মিলিয়ে তার ভোটটি দেয়ার জন্য পর্দার আড়ালে গেলেন, তখন পেছন থেকে এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তার কাছে এসে বলেন যে ওই বাটনটা চাপুন। উনি যখন ওই বাটনটি চাপ দিলেন তখন দেখতে পান যে উনি যে মার্কায় ভোট দিতে চান, সেই মার্কা সেখানে নেই। তখন তিনি এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন আপনি যেকোনো একটায় ভোট দিয়ে দেন। ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি। এছাড়া বিবিসির সংবাদদাতা দেখতে পেয়েছেন যে ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের যে এজেন্ট বা নির্বাচন কর্মকর্তা আছেন তারা পর্দায় ঘেরা জায়গাটিতে ঢুকে ভোটারকে বলছেন যে তিনি যেন এই বাটনটি চাপেন। প্রিজাইডিং অফিসারদের এসব অভিযোগের কথা জানালেও তারা সব অস্বীকার করেন। কোন নির্বাচনী কর্মকর্তা অভিযোগ না করা পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়া যাবে না বলে তারা উল্লেখ করেন। আবার আরেকটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটগ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের পাঁচটি ইভিএম মেশিন অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও, পরে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন। শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণীর যেসব ভোটাররা ভোট দিতে এসেছেন, তাদের ভোট দিতে কোন সমস্যা হয়নি, তারা সহজেই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ভোটারদের মধ্যে যে শ্রমজীবী মানুষরা আছেন তারা একেবারেই বুঝতে পারছিলেন না যে কিভাবে ভোট দেবেন। এ অবস্থায় তারা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছিলেন নির্বাচনী কর্মকর্তা বা ক্ষমতাসীন দলের এজেন্টদের ওপর। আবার তারা যে ভোট দিয়েছেন সেটা ঠিকভাবে গণনা করা হবে কিনা। এটা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।
news-39618996
https://www.bbc.com/bengali/news-39618996
ফেসবুকের শুদ্ধি অভিযান ও ‘লাইকের রাজা’ বৃত্তান্ত
"অটোলাইক শেখানো হয় বা নিজের পোস্টে ইচ্ছা মতো লাইক নিয়ে দেয়া হয়"। বিবিসির ফেসবুক পাতার একটি খবরে এমন কমেন্ট করেছেন এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে 'লাইকের রাজা' হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এবং ফোন নম্বরটিও দিয়ে দিয়েছেন, যাতে তার সাথে 'অটোলাইক' শিখবার জন্য যোগাযোগ করা যায়।
ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। আরেকজন লিখেছেন, ১৮ ঘণ্টা 'এক্টিব' থাকি আর সব সময় লাইক কমেন্ট করার চেষ্টা করি। চাইলে 'এড' করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক সম্প্রতি একটি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে, যেখানে ফেক বা ভুয়া একাউন্ট তারা বাতিল করছে। এই সপ্তাহেই জানা গেছে সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফেসবুক ব্যবহারকারীর শহর ঢাকা। কিন্তু ফেসবুক কর্মকর্তা শবনম শেখের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে বিশ্বের যেসব দেশে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রাচুর্য সবচাইতে বেশী, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতার এক একটি পোস্টে একসময় এই 'লাইকের রাজা' বা ১৮ ঘণ্টা 'এক্টিব'-এর মতো বহু কমেন্ট দেখা যেত, কিন্তু আজ এ ধরণের অপ্রাসঙ্গিক এবং বিজ্ঞাপনী কমেন্ট কিছু কম পাওয়া গেল। বোঝাই যাচ্ছে, শুদ্ধি অভিযানের কিছুটা প্রভাব এখানে আছে। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে 'ভাল' একাউন্টও এই শুদ্ধি অভিযানের কবলে পড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। ধানমন্ডির তাসলিমা চৌধুরী গত শনিবার দুপুরে আবিষ্কার করেন তার দশ বছরের পুরনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি গায়েব হয়ে গেছে। আরো পড়ুন: ফেসবুক ব্যবহারে সারা পৃথিবীতে দু'নম্বরে ঢাকা ফেসবুক লাইভে আবারো হত্যাকাণ্ড বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় 'লাইকের রাজা'র বিজ্ঞাপনী কমেন্ট। আজ তিন দিন ধরে বহু চেষ্টা করছেন তিনি, কিন্তু উদ্ধার করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত না পেরে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। মিসেস চৌধুরী বলছিলেন, "২০০৭ সাল থেকে অ্যাকাউন্টটা আছে। অনেক পুরনো মেমোরিজ। অনেক ছবি। সব নেই হয়ে গেলো। এটাই খারাপ লাগছে"। একই দিনে তার স্বামী তাজুল ইসলামও খুইয়েছেন তার সাত বছরের পুরনো 'আসল' ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি। তিনিও বাধ্য হয়েছেন নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে। কিন্তু বহাল তবিয়তে আছে 'লাইকের রাজা'র অ্যাকাউন্ট। তার কমেন্টে উল্লেখিত নাম্বারটিতে ফোন করি। অপর প্রান্তে ফোন তুলেই এক ব্যক্তি শুধালেন, "অটোলাইক শেখার জন্য ফোন দিয়েছেন?" জবাবে হ্যাঁ বলতেই তিনি গড়গড় করে অটোলাইক কিভাবে করতে হয়, এর সুবিধা-অসুবিধা-ব্যয় ইত্যাদি আমাকে বলে গেলেন। তিনি বলছিলেন, তাকে বিকাশের মাধ্যমে মোটে দেড়শ টাকা পাঠিয়ে দিলেই তিনি ওয়েবসাইটের একটি টুল বানিয়ে দেবেন, যে টুলটি ব্যবহার করার পর ফেসবুকে কোন স্ট্যাটাস কিংবা ছবি দিলেই তাতে বৃষ্টির মতো 'লাইক' পড়তে শুরু করবে। তিনি বলছিলেন, এগুলো সব আসল অ্যাকাউন্ট থেকেই আসবে এবং এর কোন সীমা থাকবে না। জানতে চাই এই লাইক পেয়ে লাভ কি? বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় 'লাইকের রাজা'র বিজ্ঞাপনী কমেন্ট। জবাবে তিনি বলেন, লাভ এটুকুই আপনার একটা ছবিতে দশ-বিশ হাজার লাইক থাকবে, যখন অন্য কারো ছবিতে থাকবে দশ-বিশ-একশটা। তিনি আরো বলছিলেন, আজ এখন পর্যন্ত তিনজন গ্রাহককে 'অটোলাইক' শেখানোর সেবা দিয়েছেন। গত একমাসে তার গ্রাহক ছিল ছয় শতাধিক। তিনি আরো বলছিলেন, এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি তার নয়, তার বড় ভাইয়ের। তারা রাজশাহীতে থাকেন এবং দুভাই মিলে এই একটি অ্যাকাউন্ট দিয়ে ব্যবসা চালান। তার নিজের নামে কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই, তবে অনেকগুলো 'ভুয়া' অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার। তার ভুয়া অ্যাকাউন্ট কতগুলো? জানতে চাইলে বলেন, "আইডির হিসেব নাই। আমি নিজেও কইতে পারব না"। তবে একটা ধারণা দিলেন যে তার ভুয়া আইডির সংখ্যা এক থেকে দেড়শ'র মধ্যে হতে পারে। তিনি আরো বলছিলেন, "আমার এই অ্যাকাউন্টগুলো ফেসবুক বন্ধ করতে পারবে না। বন্ধ করলেও রিকভার করতে পারবো। কারণ প্রতিটি অ্যাকাউন্টের স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ আছে। আর প্রমাণ দাখিল করলেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দিতে বাধ্য"। ফেসবুক বলছে, শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে তারা ভুয়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনার একটি আন্তর্জাতিক চক্রের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করেছে, যারা বাংলাদেশকেও তাদের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতো। এই 'লাইকের রাজা'ও এই চক্রের সদস্য কি না, সেটা নিশ্চিত নয়, কিন্তু লাইক কেনা-বেচা বা অটোলাইক বাণিজ্য করে এমন বহু মানুষ বাংলাদেশে রয়েছে, যাদের বিজ্ঞাপনী কমেন্ট বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টেই পাওয়া যায়। ফেসবুকে অনেক ই-কমার্স পাতা কিংবা সেলেব্রিটিরা তাদের লাইকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এদের সাহায্য নেয় বলে প্রচলিত আছে। ফেসবুকের মাধ্যমেও লাইক সংগ্রহ করা যায়, কিন্তু এই 'ফেসবুক বুস্ট' সেবা ব্যবহার করার জন্য যে পরিমাণ ডলার খরচ করতে হয়, সেটা অনেকেই এড়াতে চান এবং শরণাপন্ন হন স্বল্প ব্যয়ের 'লাইকের রাজা'র। আর এই সুযোগে বাংলাদেশের হাজারো 'লাইকের রাজা' ফেসবুকে খুঁজে নিয়েছেন অবৈধ এবং বিকল্প এক কর্মসংস্থান।
news-54191597
https://www.bbc.com/bengali/news-54191597
থাইল্যান্ড: দেশটিতে রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার সাহস দেখালেন যে ছাত্রী
''আমার মনের ভেতর একটা ভয় কাজ করছিল, পরিণতি নিয়ে গভীর শঙ্কায় ছিলাম,'' বলছেন পানুসায়া সিথিজিরাওয়াত্তানাকুল।
পানুসায়া সিথিজিরাওয়াত্তানাকুল রাজতন্ত্রের সংস্কার দাবি করে অগাস্ট মাসে দশ দফা ঘোষণাপত্র দেন অগাস্ট মাসে ২১ বছর বয়সী এই ছাত্রী থাইল্যান্ডের এক মঞ্চে বেশ ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়ান এবং রাজতন্ত্রের প্রতি খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। থাইল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর করতালির মধ্যে দিয়ে ওই মঞ্চে পানুসায়া দেশটির রাজতন্ত্রের সংস্কারের লক্ষ্যে যে দশ দফা দাবি তুলে ধরেছিলেন, তা এখন দেশটিতে বহুল আলোচিত ও বিখ্যাত দশ-দফা ম্যানিফেস্টো নামে পরিচিত হয়ে গেছে। তার ওই পদক্ষেপ ছিল খুবই সাহসী ও অবাক করে দেয়ার মত। থাইল্যান্ডে জন্মের পর থেকে প্রত্যেককে শিখতে হয় কীভাবে রাজতন্ত্রকে ভালবাসতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে এবং থাই রাজপরিবারের বিরুদ্ধে কিছু বললে তার পরিণতি কী হতে পারে। 'জীবন আর আগের মত থাকবে না' পৃথিবীতে খুব কমই দেশই আছে যেখানে রাজপরিবারকে অসম্মান করার জন্য আইন আছে। থাই আইনে রাজা, রানি, রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী বা রাজ দায়িত্ব পালনকারী কারো সমালোচনা করার শাস্তি ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। কিন্তু গত কয়েক মাসে থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভ হচ্ছে দেশ জুড়ে আর এই বিক্ষোভের কেন্দ্রে আছেন পানাসুয়ার মত শিক্ষার্থীরা। "আমি জানতাম আমার জীবন আর আগের মত থাকবে না," তিনি বিবিসি নিউজ থাইকে বলেন। থাইল্যান্ড কয়েক মাস ধরে গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভে উত্তাল এবং তিন আঙুলের অভিবাদন এই আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। রাজধানী ব্যাংককে বিরল ও বিশাল সমাবেশে এই দশ দফা দাবি পড়ে শোনানোর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সেটি তাকে দেখানো হয়। এতে রাজপরিবারকে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি দায়বদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয় এবং রাজপরিবারের ব্যয়বরাদ্দ কমানোর ও রাজপরিবারকে রাজনীতিতে জড়িত না হবার প্রস্তাব দেয়া হয়। অধিকাংশ থাই নাগরিকের জন্য এই আহ্বান ছিল অভাবনীয়। "ওরা আমার হাতে ওটা দিয়ে বলল, আমি চাইলে ওগুলো ব্যবহার করতে পারি। তখন সবারই মনে হচ্ছিল এগুলো বেশ কঠিন দাবি। আমারও সেটা মনে হয়েছিল। আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম- আমিই হবো সেই ব্যক্তি যে এগুলো বলবে। "আমি আমার বন্ধুদের হাত ধরলাম- চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলাম -আমরা কি এখানে ঠিক কাজ করছি?" বলছিলেন পানুসায়া। "উত্তর এল - হ্যাঁ এটা ঠিক কাজ। আমি একটু বসলাম। মঞ্চে ওঠার আগে একটা সিগারেট খেলাম। তারপর আমার মাথার ভেতর যা ঘুরছিল, সব বলে দিলাম।" মঞ্চ থেকে জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন: "সব মানুষের রক্ত লাল। আমরা আলাদা নই। এই পৃথিবীতে কেউ নীল রক্ত নিয়ে জন্মায়নি। কেউ হয়ত বেশি ভাল ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে। কিন্তু কেউ কারো থেকে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে জন্মায়নি।" পানুসায়ার ওই বক্তৃতা নিয়ে হৈচৈ সৃষ্টি হয়েছিল। মুক্তমনা শিক্ষাবিদরা তাকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, রাজতন্ত্রপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলো নিন্দায় ফেটে পড়েছিল আর থাই জনগণ এমন বক্তব্য বিশ্বাসই করতে পারছিল না। 'নিজের দেশকে ঘৃণা করা একটা অসুখ' ওই সমাবেশের কয়েকদিন পর রাজতন্ত্র সমর্থকদের ফেসবুক পেজ, পানুসায়ার বিরুদ্ধে আক্রমণে সোচ্চার হয়ে ওঠে। কেউ কেউ অভিযোগ করে রিপাবলিকান রাজনীতিকরা তাকে দিয়ে এসব করাচ্ছে। পানুসায়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। থাইল্যান্ড এখনও কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে সামরিক বাহিনী। দেশটির একজন শক্তিধর জেনারেল আপিরাত কংসোমপং বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা "দেশটির প্রতি ঘৃণা" (থাই ভাষায় "চুং চার্ট") দ্বারা আক্রান্ত। তিনি আরও বলেছেন যে, এটা "ভয়াবহ করোনা মহামারির থেকেও মারাত্মক রোগ"। "নিজের দেশকে ঘৃণা করা একটা অসুখ যা সারানো যায় না," তিনি বলেন। আরও পড়তে পারেন: গণতন্ত্র পন্থীদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন রাজপন্থীরা পানুসায়া বলছেন তার মনে আছে, এমনকী তিনি যখন ছোট ছিলেন তখনও তিনি থাই জীবনে রাজপরিবারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করতেন। তার মনে আছে খুব গরমের এক দিনে, একজন কর্মকর্তা তাদের বাসার দরোজায় কড়া নেড়ে তার পরিবারকে বলেছিল বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তার ফুটপাতে গিয়ে বসতে, কারণ রাস্তা দিয়ে কিছু সময়ের মধ্যে রাজার গাড়িবহর যাবে। "কেন গাড়িবহর দেখতে চড়া রোদে আমাদের আধ ঘন্টা বসে থাকতে হবে? আমার মাথায়ই আসেনি কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে। আমি বেরিয়ে অপেক্ষমান জনতার সাথে যোগ দিইনি।" তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট পানুসায়া। অল্প বয়স থেকেই রাজনীতিতে তার আগ্রহ ছিল। যখন হাই স্কুলে পড়তেন, তখন অবসর সময়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে রাজনীতি আলোচনা করে তিনি সবচেয়ে বেশি মজা পেতেন। ২০১৪ সালে যখন একটা অভ্যুত্থান হয়, তার বাবা তাকে এনিয়ে আরও জানতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। পরিবারে একমাত্র তার বাবাই সেসময় রাজনীতি সচেতন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা বিক্ষোভকারীদের দাবিদাওয়া প্রত্যাখান করেছেন তবে পানুসায়া ছোটবেলা লাজুক ছিলেন। এবং স্কুলে বড়দের হম্বিতম্বিতে তিনি মুখচোরা থাকতেন। একটা শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচিতে আমেরিকায় পাঁচ মাস কাটানোর মধ্যে দিয়ে তিনি আমূল বদলে যান। "আমি দেশে ফিরে আসি অন্য মানুষ হয়ে। আমি তখন কথা বলতে বা কিছু করতে ভয় পেতাম না।" প্রথম সারির বিখ্যাত থাম্মাসাত ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর তিনি রাজনৈতিকভাবে ক্রমশ আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। দুবছর আগে তিনি "ডোম রেভল্যুশন" নামে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনৈতিক দলে যোগ দেন। ফেব্রুয়ারি মাসে, তরুণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় ফিউচার ফরোয়ার্ড নামে একটি রাজনৈতিক দলকে ভেঙে দেবার পর যে আকস্মিক প্রথম গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছিল, তার আয়োজনে তিনি সাহায্য করেন। দলটি তাদের নেতার কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ ঋণ নিয়েছিল এই রায়ের পর দলটি ভেঙে দেয়া হয়। দলটি ২০১৯এর নির্বাচনে ভাল ফল করেছিল। দলটির রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে থাকায় দলটি নিশ্চিহ্ণ করার এটি একটি প্রয়াস হিসাবে মনে করেছিল দলটির সমর্থরা। তবে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে থাইল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যে গণতন্ত্রকামী আন্দোলন গতি পাচ্ছে তাতে তরুণ সম্প্রদায়ের যোগদানকে শুধু ওই পদক্ষেপই উৎসাহিত করেনি। রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ন, যিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন ২০১৬ সালে, তাকে জনসমক্ষে প্রায় দেখাই যায়নি। খবরে বলা হয়ে থাকে তিনি বেশিরভাগ সময় বিদেশে কাটান - বিশেষ করে দেশটিতে মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর। থাইল্যান্ডে বেশ কিছু দুর্নীতি কেলেংকারিও সামনে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১২ সালে ভয়ঙ্কর এক সড়ক দুর্ঘটনার সাথে জড়িত পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থা রেড বুলের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা যেভাবে পরিচালিত হয়েছিল তা তদন্তের জন্য গঠিত সরকারি কমিটি এতে "দুর্নীতির যে ছায়া" পেয়েছিল সেটিও। থাই সরকার বলে তারা বাক স্বাধীনতা সমর্থন করে এবং সমালোচনা গ্রহণ করতেও প্রস্তুত। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আইনের মধ্যে থেকে তাদের অধিকার মানতে হবে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করলে তা মেনে নেয়া হবে না। আরও পড়তে পারেন: পানুসায়া থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে অবশ্যই উদ্বিগ্ন। ২০১৪-য় সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পর বিদেশে পালিয়ে যাওয়া অন্তত নয়জন যারা থাইল্যান্ডের সবচেয়ে সম্মানিত রাজতন্ত্রের সমালোচনা করেছিলেন তারা নিখোঁজ হয়ে যান। পরে এক নদীর ধারে দুজনের লাশ পাওয়া যায়। থাই সরকার তাদের নিখোঁজ হয়ে যাবার ব্যাপারে কোনভাবে সংশ্লিষ্ট থাকার কথা জোরের সঙ্গে অস্বীকার করে। পানুসায়া বলেন যে রাতে তিনি ওই দশ দফা ম্যানিফেস্টো পড়েছিলেন, তার পর থেকে কর্তৃপক্ষ দিনরাত ক্যাম্পাসের ভেতরে, তার ডরমেটরির ভেতর তার গতিবিধি ওপর সবসময় নজর রাখছে। "যদিও তারা সাদা পোশাকধারী, আমি বুঝতে পারি তারা পুলিশের লোক, কারণ তাদের চুলের ক্রু-ছাঁট এবং তারা প্রকাশ্য স্থানে সবসময় আমার ছবি তোলে।" পানুসায়া বলছেন ওই ম্যানিফেস্টো পড়ার পর তার পক্ষে আর সেখান থেকে ফেরার প্রশ্ন ওঠে না পানুসায়াকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি, এবং তিনি বলেছেন তিনি কখনও কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। তার বিরুদ্ধে রাজতন্ত্রকে অবমাননা করার অভিযোগও আনা হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ব্যবহৃত হয়েছে কম। তবে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হতে পারে। এছাড়াও কম্প্যুটার নেটওয়ার্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ আইন লংঘনের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হতে পারে। বলা হতে পারে তিনি করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ ভেঙে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন। শুধু রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগের সাজা সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মত পানুসায়া বাসাতেও অশান্তির মধ্যে রয়েছেন কারণ তার বিরুদ্ধে "মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার" অভিযোগ রয়েছে ঘরেও। তার সিদ্ধান্তে পানুসায়ার মা আতঙ্কিত। তিনি তাকে সমাবেশে যোগ না দেবার জন্য অনুরোধ করেছেন। এর পর পাঁচদিন মা মেয়ে কথা বলেননি। "অবশ্যই আমার মা উদ্বিগ্ন। কিন্তু সেটা তিনি প্রকাশ করেন না এবং আমি যখন ধারেকাছে থাকি তিনি দেখান কিছু হয়নি, সব স্বাভাবিক আছে। কিন্তু আমার বড় বোনের কাছে থাকলে তিনি কাঁদেন," পানুসায়া বলেন। শনিবার ১৯শে সেপ্টেম্বরের সমাবেশের জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পানুসায়া কারাবাসের জন্য মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছেন। শনিবারের সমাবেশে রাজতন্ত্র থেকে শুরু করে সেনা বাহিনীতে, সংবিধানে, এবং শিক্ষাখাতে বিভিন্ন সংস্কারের দাবি জানানো হবে। "আমার মাকে বুঝতে হবে আমরা মজা করার জন্য এসব করছি না। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এবং আমাদের এটা করতেই হবে। আমরা এটাকে আমাদের কর্তব্য বলে মনে করছি, মাকে সেটা বুঝতে হবে। আমি চাই তিনি আমার জন্য গর্ব বোধ করবেন।"
news-56231275
https://www.bbc.com/bengali/news-56231275
টেস্টটিউব বেবির অনেক খরচ, তাই যুক্তরাজ্যে কিছু নারী শুক্রাণু দাতা খুঁজে নিচ্ছেন ফেসবুক থেকে
ব্রিটেনে যে দম্পতিদের সন্তান হচ্ছে না - তাদের অনেকেই নানা কারণে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসা পান না। ফলে এদের কেউ কেউ গর্ভধারণের জন্য ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে খুঁজে নিচ্ছেন স্পার্ম ডোনার বা শুক্রাণু দাতা। তেমনি দুই নারী তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন বিবিসিকে।
এক বছর ধরে সন্তান নেবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ক্লো আর তার সঙ্গী এক বছর ধরে সন্তান নেবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ক্লো আর তার সঙ্গী। কিন্তু কিছুতেই তার গর্ভসঞ্চার হচ্ছিল না। পারিবারিক ডাক্তার তাদের বললেন, জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বা এনএইচএসের স্থানীয় ফার্টিলিটি ক্লিনিকে যেতে। সেখানে গিয়ে নানা পরীক্ষার পর দেখা গেল, ক্লো-র সঙ্গীর শুক্রাণুর কিছু সমস্যা রয়েছে এবং গর্ভধারণ করতে হলে তাকে কোন একজন দাতার শুক্রাণু নিতে হবে। ক্লিনিক থেকে তাদের শুক্রাণুদাতার একটি তালিকা দেয়া হলো। সেই তালিকা থেকে মাত্র একজন উপযুক্ত দাতার সন্ধান পেলেন তারা - যে ক্লো-র মত একই জাতিগোষ্ঠীর, এবং যাকে অন্য কোন দম্পতি এখনো বেছে নেননি। তার শুক্রাণু ব্যবহার করে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ক্লো-র প্রথম আইভিএফ বা কৃত্রিম গর্ভসঞ্চারের চেষ্টা করা হলো। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। শুক্রাণু দাতার সাথে ক্লোর দেখা হয় একটি কার পার্কে তখন ক্লিনিক থেকে ক্লো-কে বলা হলো, তারা আইসিএসআই নামে আরেকটি পদ্ধতি চেষ্টা করে দেখতে পারেন - যাতে সরাসরি ডিম্বাণুর ভেতরে শুক্রাণু প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এ পদ্ধতিটি আরো ব্যয়বহুল, এবং এর খরচ তাদেরকেই বহন করতে হবে। "আমাদের পক্ষে তখন হাজার হাজার পাউণ্ড খরচ করা সম্ভব ছিল না" - বলছিলেন ক্লো। ফেসবুকে শুক্রাণু দাতার গ্রুপ ততদিনে ক্লো আর তার সঙ্গী বিয়ে করেছেন। তার স্বামীই একদিন বললেন, অনলাইনে একজন শুক্রাণু দাতার খোঁজ করলে কেমন হয়? ক্লো তাই করলেন। তবে তার বন্ধুরা ও পরিবার যাতে ব্যাপারটা জানতে না পারে - সে জন্য তিনি একটা ভুয়া নাম নিয়ে ফেসবুকে কিছু গ্রুপে যোগদান করলেন, এবং কয়েকদিনের মধ্যে একজন সম্ভাব্য শুক্রাণু দাতা পেয়েও গেলেন। সেই শুক্রাণু দাতা লোকটি তার মেডিক্যাল ও পারিবারিক ইতিহাস জানালেন। তার কোন যৌন রোগের সংক্রমণ হয়েছিল কিনা - তা চেক করার দলিলপত্রও দিলেন। দাতার সাথে দেখা কার পার্কে এসব কিছুর পর ক্লো যেখানে থাকতেন - তার কয়েক মাইল দূরে একটি কারপার্কে লোকটির সাথে দেখা করার পরিকল্পনা করা হলো। "প্ল্যানটা ছিল, সেই দাতা তার নিজের বীর্য নিয়ে আসবেন, আমাদের দেখা হবে। তিনি আমার হাতে জিনিসটা তুলে দেবেন। তার পর আমি একটা টয়লেটে ঢুকবো এবং যা করতে হবে তা করবো" - বলছিলেন ক্লো। তাই করা হলো। ক্লো-র নিরাপত্তার কথা ভেবে তার স্বামীও সাথেই এসেছিলেন, এবং গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছিলেন। তারা মোট ৬ বার এটা করেছিলেন। ক্লো এতে একবার গর্ভবতী হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হয়ে যায়। ক্লো-র দাতা একটি ক্লিনিকে শুক্রাণু দান করেন - যা থেকে ১০টি সন্তানের জন্ম হয় প্রতিবার তারা সেই দাতা লোকটিকে তার শুক্রাণুর জন্য ৫০ পাউণ্ড এবং যাতায়াতের জন্য ১০ পাউণ্ড দিয়েছিলেন। বলা দরকার যে এ ধরণের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের আইনকানুনে কিছু অস্পষ্টতা আছে। ক্লো-র বাড়িতে এলেন শুক্রাণু দাতা এর মধ্যে শুরু হলো করোনাভাইরাস মহামারি। লকডাউনের কারণে কোথাও যাতায়াত করার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় ক্লো এবং তার স্বামী ভিন্ন উপায় বের করলেন। তারা ফেসবুক থেকেই অন্য একজন শুক্রাণুদাতা খুঁজে বের করলেন। এই লোকটি এলেন ক্লো-র বাড়িতে। এতে ব্যাপারটা তার জন্য অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক হয়েছিল - বলছিলেন ক্লো। "এতে আমি আমার নিজের সময়-সুবিধা অনুযায়ী কাজটা করতে পেরেছিলাম। তাড়াহুড়োর কিছু ছিল না। আমাকে একটা টয়লেটে ঢুকতে হয়নি। নিজের বাড়িতে হওয়ায় ব্যাপারটা আমার জন্য অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক হয়েছিল।" এবং এবার ক্লো সাফল্য পান। তিনি এখন সন্তানসম্ভবা। মা হবার আনন্দ "আমরা ভীষণ আনন্দিত। অনেক দিন চেষ্টার পর এখন আমাদের একটি সন্তান হতে যাচ্ছে, পরিবার হতে যাচ্ছে - যা আমরা দু'জনে অনেকদিন ধরে চেয়ে আসছি" - বলছেন ক্লো। ক্লো এবং তার স্বামী যে সন্তানের জন্য একজন শুক্রাণুদাতা ব্যবহার করেছেন - তা তারা তাদের পরিবার বা বন্ধুদের বলেননি। আইভিএফ ব্যয়বহুল বলে ব্রিটেনে অনেক নারী ফেসবুক থেকে খুঁজে নিচ্ছেন শুক্রাণু দাতা একটা কারণ হচ্ছে: ক্লোর স্বামী যে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম তা তারা কাউকে জানতে দিতে চান না। আরেকটা কারণ হলো: কিছু লোক আছে যারা ভাববে যে এটা একটা গুরুতর অন্যায় কাজ করেছেন তারা। শুক্রাণুদাতাকে গর্ভবতী হবার কথা জানানো হয়েছে ক্লো বলছেন, সৌজন্যবোধ থেকেই তিনি তার গর্ভবতী হবার কথা শুক্রাণুদাতাকে জানিয়েছেন। তবে তিনি বলছেন, এ শিশুর ওপর দাতার কোন অধিকার থাকবে না এবং সন্তানের জন্ম সনদেও থাকবে ক্লোর স্বামীর নাম। এই দাতা লোকটি আরো সন্তানের পিতা হয়েছেন। একটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তিনি অতীতে শুক্রাণু দান করেছেন। তবে ক্লিনিকের একটি নিয়ম আছে যে একজন দাতা ১০টির বেশি পরিবারকে তার শুক্রাণু দান করতে পারবেন না - যে সীমা তিনি ইতিমধ্যেই স্পর্শ করেছেন। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে এমন আরো তিনজন নারী তার শুক্রাণু নিয়ে সন্তানের মা হয়েছেন। ২০০৫ সালে ব্রিটেনে একটি আইন হয়েছে - যার ফলে দান-করা শুক্রাণু থেকে জন্ম হয়েছে এমন সন্তানের বয়স ১৮ হলে তারা তাদের আসল পিতার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। লোরেন এবং তার সঙ্গিনী একটি সন্তান নিতে শুক্রাণুদাতার সাহায্য নেন তবে ক্লো এবং তার স্বামী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাদের সন্তানের কিভাবে জন্ম হয়েছিল তা তাকে বলা হবে না - যদি না কোন মেডিক্যাল কারণ থাকে। "তাদের এটা জানার দরকারও নেই" বলেন ক্লো - "আমরা একটি সন্তান চেয়েছিলাম এবং এটাই ছিল আমাদের একমাত্র বিকল্প। আইভিএফের খরচ যে যোগাতে পারবে না - তার জন্য আর কোন উপায় নেই।" এতে অনেক রকম বিপদের ঝুঁকি রয়েছে ক্লোর ক্ষেত্রে বলতে হবে যে তিনি সফল হয়েছেন। কিন্তু তিনি জানেন যে এতে অনেক ঝুঁকি আছে। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে তিনি জেনেছেন যে এতে বহু রকম অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি জেনেছেন, অনেক সময় স্পার্ম ডোনাররা যখন জানতে পারেন যে তার শুক্রাণু ব্যবহার করে কোন নারী গর্ভবতী হয়েছেন - তখন তিনি সেই নারীর জীবনের অংশ হতে চান - অথবা সেই সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখতে চান। এমন নারীর কথাও ক্লো জানেন, যারা একজন দাতাকে শুক্রাণু নিয়ে আসতে বলার পর সেই লোকটি এসে বলেছেন, তিনি যৌনমিলন করতে চান। অবশ্য ফেসবুক গ্রুপগুলো এধরনের লোকদের দূরে সরিয়ে রাখতে সবসময়ই চেষ্টা করে থাকে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: ব্রিটেনে শুক্রাণু দান করতে পুরুষদের অনীহা পুরুষ বন্ধ্যাত্ব: যা নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না পুরুষের শুক্রাণু কমে যাচ্ছে, ‘বিলুপ্ত হতে পারে মানুষ’ শুক্রাণু দানকারীই হবেন শিশুর বৈধ পিতা -অস্ট্রেলিয়া ব্রিটেনে সব তরুণের শুক্রাণু হিমায়িত করে রাখার প্রস্তাব ক্লো বলেন, এ জন্য ফেসবুক গ্রুপগুলো ঝুঁকিপূর্ণ পুরুষদের তালিকা করেছে, যে লোকদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে তাদের নামের তালিকাও তৈরি করেছে। "কিন্তু এসব লোকেরা আবার একাধিক নামে অনেকগুলো একাউন্ট চালায়" - জানান ক্লো। লোরেনের বিচিত্র কিছু অভিজ্ঞতা লোরেন একজন লেসবিয়ান নারী। তার বয়স যখন ৩৮ তখন তিনি এবং তার নারী সঙ্গিনী সিদ্ধান্ত নেন যে - তারা একটা পরিবার গড়বেন, সন্তান নেবেন। কিন্তু ব্রিটেনে সরকারী স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় সমলিঙ্গের দম্পতির জন্য এধরণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আছে। আর প্রাইভেট ক্লিনিকে কোনো দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে আইভিএফ বা 'টেস্টটিউব বেবি' নেয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে লোরেন আর কোন উপায় না দেখে ফেসবুকের এক গ্রুপে যোগ দিলেন। তিনি তার প্রোফাইলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তিনি শুধু কৃত্রিম গর্ভসঞ্চার করতে চান - শুক্রাণু দাতার সাথে যৌনমিলনের কোন আগ্রহ তার নেই। তিনি তার ঋতুচক্রের সময়ের হিসেব রাখা শুরু করলেন। আর যোগাযোগ রাখতে লাগলেন ২০ জন সম্ভাব্য শুক্রাণুদাতার সাথে । কেন কমে যাচ্ছে পশ্চিমা পুরুষদের শুক্রাণু? "তাদের কেউ কেউ খুব চমৎকার লোক। কিন্তু সবাই নয়।" "একজন দাতা আমাকে সাহায্য করতে রাজি হবার পর বলা শুরু করলো, 'আমার মনে হচ্ছে তুমি খুবই সুন্দরী' তার পর সে বললো সে 'প্রাকৃতিক পন্থায় গর্ভধারণ চায়' অর্থাৎ সেক্স করতে চায়।" "সে তখন আমাকে একটি অশালীন ছবিও পাঠায়।" আবার অন্য কিছু দাতা আছে - যারা হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। লোরেন এদের সম্পর্কে জানার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অনলাইন চ্যাট করেছেন। তাদের প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু যেই তার ঋতুচক্রে গর্ভসঞ্চারের উপযুক্ত সময় এলো এবং দাতার সহায়তা দরকার হলো - অমনি তারা মেসেজের জবাব দেয়া বন্ধ করে দিল। "আপনি তখন দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন, তাদেরকে ঘন ঘন টেক্সট করতে শুরু করলেন। তার পর হঠাৎ একদিন আপনাকে ওদিক থেকে ব্লক করে দেয়া হলো।" লোরেন বলছেন, তার ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। "আমার মন ভেঙে গিয়েছিল। আমি ভাবছিলাম - এ চেষ্টা ছেড়ে দেই কারণ আমি ব্যাপারটা নিতে পারছিলাম না।" এক বছর চেষ্টার পরও গর্ভসঞ্চার না হলেই দম্পতিদের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলা হয় তার পর একদিন রাতে ফেসবুকে আরেকজন দাতার সাথে তার আলাপ হলো। তার একদিন পরেই লোরেনের ওভুলেশন অর্থাৎ ঋতুচক্রের উর্বর সময়টা শুরু হবার কথা। সেই সময় ফেসবুক গ্রুপে তিনি একজন লোককে পেলেন - যিনি এক পোস্টে দীর্ঘ ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে কেন তিনি শুক্রাণু দান করতে চান। লোকটির ভাই একজন সমকামী এবং সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম - তাই তিনি ঠিক করেছেন এমন পরিস্থিতিতে পড়া লোকদের তিনি সাহায্য করবেন। লোরেন বলছেন, তিনি এই লোকটির সাথে কথা বলতে শুরু করলেন এবং এই প্রথমবার তিনি নন, বরং সেই লোকটিই তাকে নানা রকম প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। লোকটি বললেন, তিনি নিজে কিছু নিয়ম মেনে চলেন। তিনি শুধু প্রতিষ্ঠিত দম্পতি - যারা ধূমপায়ী বা মাদকসেবী নন - তাদেরকেই শুক্রাণু দান করবেন। তিন ঘন্টা ধরে কথাবার্তা হবার পর লোরেন অবশেষে লোকটিকে জানালেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তার ওভুলেশন হবে। পর দিন লোকটি লন্ডন থেকে ট্রেনে উঠলেন। তিনি শুক্রাণুর জন্য কোন অর্থ নেননি। লোরেন তাকে শুধু তার ট্রেনভাড়া বাবদ ৩৬ পাউণ্ড ফেরত দিলেন। তিন বার চেষ্টার পর লোরেন আবিষ্কার করলেন, তিনি গর্ভবতী হয়েছেন। তার কন্যাসন্তানের বয়স এখন আট মাস। তিনি সেই দাতা লোকটিকে মেয়ের একটি ছবি পাঠিয়েছেন। সেই লোকটিও তার অনুমতি নিয়ে ফেসবুকে তার সন্তান জন্মের কথা জানিয়েছেন। তিনি নাকি তার প্রতিটি 'সাফল্যের' সময়ই এটা করে থাকেন। লোরেন এভাবেই জানতে পেরেছেন যে তার এরকম ১৪টি সন্তান হয়েছে। আর লোরেনের মেয়ে হওয়ার পর সেই দাতার আরো তিনটি সন্তান জন্মেছে। লোরেন পরিকল্পনা করেছেন যে তার মেয়েকে তিনি এক সময় জানাবেন যে একজন বিশেষ ভদ্রলোক তাদের মত পরিবারকে সাহায্য করে চলেছেন। যুক্তরাজ্যের একটি স্পার্ম ব্যাংক শুক্রাণু দাতার ছোটবেলার একটি ছবিও আছে তার কাছে। লোরেনের ইচ্ছে আছে যে একসময় তিনি সেই ছবিটি তার মেয়েকে দেবেন, ফেসবুকে দেয়া তার নামটিও জানাবেন। যদিও তিনি জানেন যে সেই নাম তার আসল নাম নয়। লোরেন এবং সেই দাতা ১৬ পাতার একটি লিখিত দলিলে স্বাক্ষর করেছেন - যাতে বলা আছে যে তিনি বাচ্চার সাথে কোন সম্পর্ক রাখবেন না, এবং লোরেনের পরিবারও তার কাছে কোন টাকা দাবি করবে না। তবে আদালতে হয়তো এ দলিলের কোন মূল্য থাকবে না। কারণ এটা কোন আইনজীবীর মাধ্যমে করা হয়নি - বলছেন লোরেন। এসব ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে চুক্তি করা না হলে বর্তমান আইনের চোখে সন্তানের পিতা হিসেবে হয়তো শুক্রাণু দাতাকেই দেখা হবে, এবং অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত দায়িত্ব হয়তো তার ওপরই পড়তে পারে। এ ধরনের চুক্তিতে যারা জড়িত হয়েছেন তাদের সুরক্ষার জন্য এখনো ব্রিটেনে কোন আইন নেই - বলেন যুক্তরাজ্যের ফাটিলিটি বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এইচএফইএ-র চেয়ারপারসন স্যালি চেশায়ার। দম্পতির সন্তান না হবার পেছনে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কারণ পুরুষ, গবেষকরা বলেন তা ছাড়া কোন ক্লিনিকের বাইরে শুক্রাণু বেচাকেনার ব্যাপারে গত পাঁচ বছরে কেউ পুলিশের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে - এমন কোন নজিরও নেই। বিবিসি এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে যে এরকম কোন রিপোর্ট কখনো তারা পায়নি। ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ফেসবুকে আমরা লোকজনকে শুক্রাণু দান নিয়ে আলোচনা করতে দিয়ে থাকি। কিন্তু স্থানীয় আইন ভঙ্গ করে এমন যে কোন কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাখে কাজ করি। লোরেন মনে করেন ব্রিটেনের প্রাইভেট ক্লিনিকে শুক্রাণুর দাম অত্যন্ত বেশি এবং এটা বিনামূল্যের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় পাওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। তার কথা, "আমাদের হাজার হাজার পাউণ্ড নেই বলেই আমরা এসব জঘন্য পন্থা নিতে বাধ্য হচ্ছি।" ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার একজন মুখপাত্র বলেন, এসব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে ক্লিনিক্যাল কমিশনিং গ্রুপগুলো। ** প্রতিবেদনে চরিত্রদের নাম বদলে দেয়া হয়েছে। ছবিগুলো এঁকেছেন ক্রিস ভ্যালান্স।
news-48389830
https://www.bbc.com/bengali/news-48389830
উবার, পাঠাও সহ রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তায় কী করছে?
মোটরসাইকেলের পেছনে চেপে ইদানীং ঢাকার প্রায় সব যায়গায় যাচ্ছেন একটি ট্রাভেল এজেন্সির কর্মী মিরপুরের বাসিন্দা জেসমিন আক্তার।
চালকরা বেপরোয়াভাবে হয়ে উঠছে বলে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলছেন, ঢাকার যানজটের কারণে আরও অনেকের মতো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বেছে নিচ্ছেন তিনি। কারণ মোটরসাইকেলে দ্রুত পৌঁছানো যায়। কিন্তু যে দ্রুততার জন্য এই বাহন ব্যবহার করছেন সেই একই কারণে আজকাল নিজের নিরাপত্তার জন্যেও উদ্বেগ বোধ করছেন তিনি। একদিন সন্ধ্যের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে তিনি বলছিলেন, "ছেলেটি একটু অল্প বয়স্ক ছিল। মানে সে এরকমভাবে চালাচ্ছিল যে, একটুর জন্য বাসের সাথে লাগায় দেয় নাই। আমার মনে হচ্ছিলো কখন শেষ হবে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।" ঢাকার ভয়াবহ যানজট আর সহজলভ্যতা - এই দুটো কারণে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মোটরসাইকেল আজকাল খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসেবে, মোটরসাইকেলের নিবন্ধন আগের চাইতে অনেক বেড়েছে। ২০১৭ সালে সারাদেশে তিন লাখ ২৫ হাজারের মতো নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছে। পরের বছর এর সংখ্যা ছিল ৭০ হাজারের বেশি। এর একটি বিশাল সংখ্যা শুধু ঢাকাতেই। আবার একই সাথে অভিযোগের তীরও মোটরসাইকেল চালকদের দিকেই বেশি। একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মী ফারিহা রহমান বলছিলেন, "পিক আওয়ারে ড্রাইভাররা একটু পাগলের মতো বিহেভ [আচরণ] করে। তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে, ওকে অন্য আরেকজনকে নিতে হবে।" তিনি সম্প্রতি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। আরো পড়ুন: উবার, পাঠাওসহ রাইড সেবা: যা জানা জরুরি ঢাকায় মোটর সাইকেল কেন জনপ্রিয় বাহন হয়ে উঠলো? অ্যাপ ব্যবহারে অনাগ্রহ বাড়ছে বাইক চালকদের উবার-নির্ভর হয়ে উঠছে ঢাকা শহর ঢাকার ভয়াবহ যানজটের কারণে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মোটরসাইকেল খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। তার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছেন, "আমার ছোটখাটো অ্যাকসিডেন্ট অনেকবার হইছে। সায়েন্স ল্যাবের ওখানে একটা ঢালের মতো, সেখানে পানি ছিল। তো ওই যায়গায় যাওয়ার দরকার ছিল না।" "কিন্তু সে খুব তাড়াহুড়া করে চালাচ্ছিল। আমি তাকে কয়েকবার বলছি। উনি একজনকে ওভারটেক করতে গিয়ে ঢালে পিছনের চাকাটা পড়ে যায়, আমিও মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই।" সেই যাত্রা কোন রকমে বেঁচে গেছেন কিন্তু এমন ঘটনার শিকার তিনি আরও হয়েছেন। এদিকে চালকরা বরং যাত্রীদের উপরেই দোষ চাপাচ্ছেন। তারাই দ্রুত গন্তব্যে যেতে চান বলে তাড়া দেন বলে অভিযোগ করলেন কয়েকজন চালক। নুর মোহাম্মদ লিমন নামে একজন চালক বলছেন, "অনেক সময় যাত্রীরাই বলে যে আমার অফিস ধরতে হবে একটু তাড়াতাড়ি যান। এটা নিয়ে রিপোর্ট কখনো আসে না যে যাত্রীরা তাড়া দেয়। সবসময় আসে আমাদের রাইডারদের দোষ।" ওদিকে যারা একটু আয়েশি, গাড়ির মালিক নন অথচ গাড়িতে চড়ার স্বাদ পেতে চান, গাড়ির কেনার ঝামেলায় যেতে চাননা, অথবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ঘুরতে যেতে চান, এমন অনেক ক্ষেত্রেই শুধু স্মার্টফোনে কয়েকটি ক্লিক দিলেই মিনিট কয়েক পরই দোরগোড়ায় এসে হাজির হচ্ছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি। এই সুবিধার কারণেই এতটা জনপ্রিয় হচ্ছে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের গাড়ি সেবাও। মোটরসাইকেলের সেবার মতো এতটা না হলেও তাদের নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে যে অভিযোগগুলো আসে তার মধ্যে অন্যতম হল চালকের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি, পছন্দ মতো জায়গায় যাত্রীকে তুলতে না চাওয়া অথবা ভাড়া নিয়ে বিবাদ। কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগই সবচাইতে বেশি। অনেকেই গাড়ি না কিনেও এসব অ্যাপ দিয়ে গাড়ির সুবিধা পাচ্ছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী করছে তারা? উবারের বাংলাদেশ প্রধান কাজী জুলকারনাইন ইসলাম বলছেন, তারা চালকদের বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। অনিয়ম হলে চালকদের জন্য নানা ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। তিনি বলছেন, "প্রথমত অ্যাপটির ব্যবহার শেখানো হয়। তারপর ন্যাভিগেশন, কিভাবে এটি ব্যবহার করে যাত্রীর কাছে যাবেন। এরপর সড়ক নিরাপত্তার আইন আর চতুর্থ হচ্ছে কাস্টমারকে কিভাবে ভালো সার্ভিস দেয়া যায়।" প্রথমে সরাসরি সামনে বসিয়ে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর সেই ট্রেনিং এর ভিত্তিতে একটি পরীক্ষা নেয়া হয়। সেটিতে পাশ করলেই সে চালক হিসেবে অ্যাপে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারবে। কিন্তু তারপরও প্রাথমিক দিকে প্রথম ৫০ টি যাত্রা পর্যন্ত নানা তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। এরপর আবার সেই তথ্যের উপর পরীক্ষা চলে। সেটিতে পাশ না করলে আবার ট্রেনিং দেয়া হয়। তার অবস্থা যাচাই করে একদম বাদও দেয়া হয় বলে জানান তিনি। একজন চালককে শুরুতেই লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিতে হয়। কাজী জুলকারনাইন ইসলাম বলছেন ঢাকা শহরে বিশৃঙ্খল যানবাহন ব্যবস্থা তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। সেগুলো লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষের কাছে এসএমএস পাঠিয়ে যাচাই করা যায়। চালকদের যাচাই করার জন্য এসব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় বলে জানালেন মি. ইসলাম। এই পদ্ধতি মোটামুটি সবগুলো রাইড শেয়ারিং অ্যাপই করে থাকে। 'বিশৃঙ্খলতা ঢাকা শহরের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ' তবে মি. ইসলাম বলছেন, ঢাকা শহরে বিশৃঙ্খল যানবাহন ব্যবস্থা তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ঢাকা শহরের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা যে মারাত্মক বিশৃঙ্খল তা নিয়ে বোধকরি নতুন করে বলার কিছু নেই। পুলিশের হিসেবে এই শহরে গড়ে প্রতিদিন একজনের বেশি পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ট্রাফিক আইন অমান্য করা, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, বারবার লেন পরিবর্তন করা, পথচারীকে সম্মান না করা, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব - এমন নানা অভিযোগ রয়েছে এই শহরের চালকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই একই চালকেরা নিবন্ধন করছেন রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর সাথে। সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারকারীদের দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। সর্বশেষ আলোচিত দুটি ঘটনার একটি হল গত মাসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মৃত্যু। অন্যটি ছিল ঢাকার নিউ মার্কেটের কাছে। বরিশাল থেকে আসা একটি পরিবারের অ্যাপে ভাড়া করা গাড়ির সাথে অন্য একটি গাড়ির সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু। এছাড়াও ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। এই খাতটির যেমন আরও ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, তেমনি যাত্রীদের নিরাপত্তায় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতার প্রশ্নও উঠছে। পাঠাও অ্যাপের নির্বাহী পরিচালক হুসেইন এম ইলিয়াস বলছেন যাত্রী ও চালক দুজনের জন্যেই বিমার আওতায় রয়েছে। বীমার ব্যবস্থা কতটা রয়েছে? পাঠাও অ্যাপের নির্বাহী পরিচালক হুসেইন এম ইলিয়াস বলছেন, তারা সে বিষয় মাথা রেখেই চালকদের প্রশিক্ষণ দেন। বাহনের যাত্রী ও চালক দুজনের জন্যেই বীমার ব্যবস্থার কথা জানালেন তিনি। তিনি বলছেন, "পাঠাও-এর প্রত্যেকটা রাইড ইনসিউরড করা থাকে। পাঠাওয়ে থাকা অবস্থায় যদি কোন দুর্ঘটনা হয়, তাদের জন্য হাসপাতাল বেনেফিট আছে। এক্সট্রিম কেসে ডেথ বেনেফিটও আছে।" তিনি বলছেন, এই বীমার অর্থ পেতে হলে তাদের অ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্ট করা যায়। সেখানে বিস্তারিত দিতে হয়। তখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুক্তভোগী ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা হয় বলে জানালেন তিনি। এই বীমার ব্যবস্থা অন্য অ্যাপগুলোরও রয়েছে। কিন্তু ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদকর্মী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাদল অভিযোগ করছেন, কিছুদিন আগে একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মোটরসাইকেল চালকের অসতর্কতায় দুর্ঘটনা শিকার হয়ে তার হাত ভেঙে গিয়েছিল। আরও বেশ কিছু আঘাতের পাশাপাশি মাথায় আঘাত লাগার পর এখন প্রায়ই স্মৃতিভ্রম হয়। চার মাস পর কাজে ফিরতে পেরেছেন। তিনি বলছেন, যখন রাইড শেয়ারিং কোম্পানির কাছে বীমার অর্থ দাবি করেন তখন তাকে দীর্ঘ সময় পর খুব সামান্য অর্থ দেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন তিনি বলছেন, "আমি সম্পূর্ণ বিবরণ তাদেরকে দিয়েছি। দুর্ঘটনা সমস্ত ছবি দিয়েছি, কোথায় চিকিৎসা নিছি [নিয়েছি], সব কিছু।" "আমি তাদেরকে এটাও বলছি যে আমার সমস্ত ক্ষতিপূরণ যে তাদের দিতে হবে এমন না। এটলিস্ট [কমপক্ষে] একটা স্টেপ [পদক্ষেপ] যেন আপনারা নেন। তারা সেটা নেয়নি।" মি. বাদল বলেন, "আমার দেড় লাখের মতো খরচ হয়েছে সেখানে তারা চারমাস ঘুরিয়ে আমাকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়েছে। এটা মেনে নেয়ার মতো না।" আসছে আরো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কিন্তু এতসব অভিযোগের পরও আরও নতুন রাইড শেয়ারিং সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে। বিআরটিএ জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ১৬টি রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিআরটিএর কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। বাংলাদেশে ঢাকাসহ বড় কয়েকটি শহরে ৭টির মতো কোম্পানি ইতিমধ্যেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঢাকা শহরে বিশৃঙ্খল যানবাহন ব্যবস্থা একটি চ্যালেঞ্জ। ঢাকার অন্যতম বড় দুটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের একটি পাঠাও-এর সাথে যুক্ত রয়েছে দুই লাখের মতো চালক ও বাহন। আর আন্তর্জাতিক কোম্পানি উবার জানিয়েছে, তাদের সাথে রয়েছে এক লাখের বেশি। উবার বলছে, প্রতি মিনিটে ঢাকায় ২০৫ জন তাদের অ্যাপ খোলে। বছর দুয়েক আগে অপেক্ষাকৃত নতুন এই সেবাটির জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়। নীতিমালা কার্যকর হয়নি এখনো গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা অনুমোদন করা হলেও এখনো সেই নীতিমালা কার্যকর হয়নি। কোন প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন পায়নি, এমনকি যারা ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় তারাও না। এই অ্যাপগুলো সম্পর্কিত একটি নীতিমালাটি কার্যকর হতে কী কারণে এত সময় নিচ্ছে, তা বলছিলেন বিআরটিএর রোড সেফটি বিষয়ক পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী। তিনি বলছেন, "অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে তড়িঘড়ি করে এই নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে। একটা সার্ভিস গড়ে উঠেছে এবং যাত্রীরা সেটা সবাই চাচ্ছে। এটা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে।" "ছোটখাটো দু'একটা ঘটনা ছাড়া কিছু ঘটে নি। এই কারণে কোন নীতিমালা ছাড়াই ব্যবসা করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা কোন আইনি ব্যবস্থায় যাইনি।" তিনি বলছেন, নীতিমালার দু'একটি বিষয় নিয়ে অপারেটরদের কিছু আপত্তি রয়েছে। যেমন কয়টি গাড়ি অ্যাপে নিবন্ধন করা যাবে তার একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেয়া, ভাড়া ঠিক করে দেয়া ও একদম নতুন গাড়িকে এই সেবায় দেয়া যাবে না। তবে মি. রব্বানী বলছেন, "এগুলো ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে কোন সমস্যা হবেনা।" বিআরটিএর রোড সেফটি বিষয়ক পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী। প্রযুক্তিনির্ভর অ্যাপ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা কিন্তু একই সাথে পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর, অপেক্ষাকৃত নতুন এই সেবা খাতকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও তার মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সড়ক দুর্ঘটনা ও যানবাহন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি বলছেন, "এই ধরনের একটা প্রযুক্তি নির্ভর সেবার মানদণ্ড ঠিক রাখতে গেলে যে ধরনের মনিটরিং, এনফোর্সমেন্ট এবং আইটি রিলেটেড পেশাদারি লোক দরকার তার কিছুই কিন্তু বিআরটিএর নাই। সরকারকে আগে সক্ষম হতে হবে।" তিনি আরও বলছেন, "রাইড শেয়ারের এই প্রযুক্তি এখানে আসবেই। অপরিকল্পিত একটা শহর যেখানে কোন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নাই। কোন বিকল্প নাই মানুষের কাছে। প্রযুক্তি নির্ভর এই সেবার জন্য একটা স্পেশালাইজড ইউনিট দরকার। এভাবে কিন্তু চলবে না।" কিন্তু আপাতত সেভাবেই চলছে। কোনও কার্যকরী নীতিমালা ছাড়া আস্ত একটি খাত পরিচালিত হচ্ছে। আর তাতে ঝুঁকিতে পড়ছে জেসমিন আক্তারের মতো আরও অনেক যাত্রীর জীবন।
news-40000901
https://www.bbc.com/bengali/news-40000901
নিজের অজান্তেই কি নারী-পুরুষ নিজেদের সম্পর্কে গৎবাঁধা ধারণা লালন করছে?
কাজের সূত্রে এখনও দিল্লিতে। ব্যস্ত হোটেল-এর ততোধিক ব্যস্ত কফি শপ-এ ব্রেকফাস্ট সারছি সহকর্মী বন্ধুর সঙ্গে। বন্ধুটি উত্তর পূর্ব ভারতের নামকরা এক চিত্র পরিচালক। জাতীয় স্তরে পুরস্কার পাওয়া এই ছেলের ঝকঝকে উপস্থিতি আর আচার আচরণ ও জীবনবোধের ব্যালেন্স আমার ভারী পছন্দ।
সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে দেখা হলেই আমাদের নিয়ম মাফিক রসিকতায় উঠে আসে পাঁচতারা হোটেলের রান্না কতটা অখাদ্য হতে পারে তার বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা। সেদিনও তাই হচ্ছিল। রোজ এই অখাদ্য কী করে বানায় এরা তার তদন্ত কমিটি বসিয়ে ফেলেছিলাম প্রায়। বন্ধুটি ফস করে জিজ্ঞেস করে বসল- তুমি রাঁধতে পারো? পারি। মাস্টার শেফ খেতাব জোটেনি, তবে আমার হাতের রান্না খেয়ে কারও অন্নপ্রাশনের মেনু মনে পড়ে গেছে এমনটাও শুনিনি কখনও। বন্ধুটি বেজায় হেসে বলে, বলছ? তা হলে তো এ বার কলকাতা গিয়ে তোমার হাতের রান্না খেতে হয়। উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করি। তুমি পার? রাঁধতে? নাহ। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে বন্ধুটি। না কেন? ভুরু কুঁচকে যায় আমার। একটা চিরাচরিত পুরুষ পুরুষ গন্ধ আছে কি ওর উত্তরে? রান্না শিখতে না চাওয়ার পেছনে কি একটা পুরুষ পুরুষ গন্ধ পাওয়া যায়? আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ধর্ষণ এবং বিচারহীনতা নিয়ে রোকেয়া লিটার ব্লগ। আমার চোখ মুখের ভাব দেখে বিপদের সিগন্যাল টের পেয়ে যায় বুদ্ধিমান এই পুরুষ। তুমি যা ভাবছ তা না ম্যাডাম। আসলে রান্না শেখার দরকার পড়েনি কখনও। বাড়িতে থাকতে মা বা অন্য কেউ আর কাজের সূত্রে বাইরে থাকলে এই রকম কোনও হোটেল বা হোম ডেলিভারি। এতেই দিব্বি কেটে গেছে জীবন। প্রয়োজন পড়েনি তাই শিখিনি। সিম্পল। এর পেছনে অন্য কোনও কারণ খুঁজতে যেও না প্লিজ। হুম। যুক্তিটা একেবারে ফেলনা নয় তাও কোথাও একটা খচখচ করছিল। তুমি ড্রাইভ করো? প্রায় ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া উপমা সাবধানে এক চামচ মুখে তুলে বিস্বাদের অনুভূতিতে আরও বিরক্ত হয়ে জানতে চাই আমি। এ বার উচ্ছ্বসিত আমার বন্ধু। করি মানে! ড্রাইভিং আমার প্যাশন বলতে পারো। মুম্বাইয়ে থাকতে শুরু করার পরে সে প্যাশন যদিও মাথায় উঠেছে। তাও মাঝেমাঝে বাড়ির সবাইকে নিয়ে বা একটু রাতের দিকে একাই লং ড্রাইভে বেড়িয়ে পড়ি। বর্ষা নামলে মুম্বাই চলে এসো। তোমায় ড্রাইভ করে পুনে নিয়ে যাব। দেখবে ইয়োরোপ-এর লং ড্রাইভ-এর উচ্ছ্বাস নিমেষে উধাও হয়ে যাবে। বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে, ড্রাইভিং-এর গল্প আর থামছেই না তার! ঠক করে কফি-র কাপটা টেবিলে নামিয়ে সশব্দে হাসি আমি। পথে এসো বাবা! মানে? উচ্ছ্বাস কথনে বাধা পড়ায় খেই হারিয়ে প্রশ্ন করে আমার বন্ধু। নারী কি শুধু গাড়ির সৌন্দর্য দেখে? নাকি পুরুষের মত চালকের আসনেও বসতে চায়? আরো পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্বের রাজনীতি নিয়ে মালবী গুপ্তের কলাম। আমার গলায় হাল্কা শ্লেষ, ড্রাইভিং শিখতে গেলে কোন দুঃখে? বাড়িতে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ জানতেন গাড়ি চালাতে, তা ছাড়া ড্রাইভার রাখতে পারতে। এ দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাও অত্যন্ত ভাল। তা হলে? বন্ধুটি থমকেছে। কুকিং শেখনি, ড্রাইভিং শিখছ, অথচ এই দুটো ক্ষেত্রে তোমার দেওয়া তথাকথিত প্রয়োজনের যুক্তি এক রাস্তায় হাঁটে না কেন? কাটা কাটা উচ্চারণে জিজ্ঞেস করি আমি। বুঝতে পারছি কোন দিকে যাচ্ছ তুমি। ঠিক দিকেই যাচ্ছি স্যার। রান্না শেখার প্রয়োজন পড়েনি মেনে নিলাম। সেই একই যুক্তিতে গাড়ি চালানোও না শেখা উচিত ছিল তোমার। কিন্তু সেটা শিখেছ কারণ প্রথম কাজটা মেয়েলি, দ্বিতীয়টা নয়। অর্থাৎ এই কাজগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্টেরিওটাইপ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারনি তুমি। আজকাল কিন্তু ছেলেরা প্রচুর রান্না করে, মেয়েরাও ড্রাইভ করে এন্তার। ছেলেরা তখনই রান্না করে যখন তার সঙ্গে স্বীকৃতি এবং অর্থ জড়িয়ে থাকে। ভেবে দেখো, বড় হোটেল-এর শেফ হিসেবে বা টেলিভিশন-এর কুকারি শো-তে ছেলেরা যতটা স্বচ্ছন্দ, রোজের হেঁশেল ঠেলায় ততটা কি? আমার বন্ধুর ভুরু কুঁচকে জ্যামিতিক চেহারা নিয়ে ফেলেছে। গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে এক টুকরো তরমুজ মুখে পুরে আমার দিকে প্রশ্ন ছোঁড়ে- তুমি ড্রাইভ করতে পারো? মেয়েদের ড্রাইভিং-এর প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেলে বলে প্রশ্নটা মাথায় এল। না পারি না। শেখার প্রয়োজন পড়েনি কখনো। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই থমকে যাই। উল্টো দিকে বসে থাকা পুরুষটির ঠোঁটের কোণে চিলতে হাসি আমার অস্বস্তি বাড়ায়। আমি যদি বাজে যুক্তি দিয়ে থাকি তাহলে সেই একই দোষে তুমি ও দুষ্ট। আয়েশ করে তরমুজের আরও একটা টুকরো মুখে পুরে বলে ও। আমি চুপ। ভেবে দেখো, তুমি বা আমি সমাজের যে স্তরে বাস করি তাতে রান্না বা ড্রাইভিং কোনওটা শেখাই বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু তাও তুমি রান্না শিখেছ, ড্রাইভিং না। আর আমি ড্রাইভিং শিখেছি, রান্না না। এ ক্ষেত্রে আমাদের দুজনেরই অবচেতনে একটা ইচ্ছে-অনিচ্ছে কাজ করেছে যেটা আমাদের নারী-পুরুষ পরিচয় ও সেই সংক্রান্ত ধ্যান ধারণার পরিপূরক বোধহয়। সত্যি তো। ড্রাইভিং না শিখলে খুব একটা এসে যায় এমন কখনও মনে হয়নি অথচ রান্না শিখেছি নিজের তাগিদে। সেই তাগিদ কি আমার ভেতরে মেয়ে হিসেবে যে ইমেজটা ঘাপটি মেরে বসে আছে তাকে তুষ্ট করতেই? স্টেরিওটাইপ-এর লালন পালনে আমার পুরুষ বন্ধুর থেকে আমিই বা কম যাই কিসে! আমার সামনে রাখা কফির কাপ জুড়িয়ে যায়। জুড়িয়ে জল হয়ে যায়।
news-55637666
https://www.bbc.com/bengali/news-55637666
বিশ্লেষণ: ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব এবং 'ব্র্যাণ্ড আমেরিকার' সর্বনাশ
সারা বিশ্ব - বিশেষ করে আমেরিকার মিত্র দেশগুলোর অনেক নেতা - গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে নজিরবিহীন তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করেছেন বিস্ময় এবং একইসাথে আতঙ্ক নিয়ে।
ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব ব্র্যাণ্ড আমেরিকার অপূরণীয় ক্ষতি করেছে প্রথম প্রতিক্রিয়া দেন নেটো জোটের সেক্রেটারি জেনারেল ইয়েন স্টলটেনবার্গ । তিনি টুইট করেন, “ওয়াশিংটনে ভয়ঙ্কর দৃশ্য। নির্বাচনী ফলাফলকে অবশ্যই মর্যাদা দিতে হবে।“ একটি জোটের শীর্ষ কর্মকর্তা সেই জোটেরই প্রধান এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশকে নিয়ে এমন মন্তব্য করবেন - এ কথা কেউ কি কখনো কল্পনা করেছিল? বোধ হয় না। আপনি হয়ত ধারণা করতে পারতেন যে বেলারুস বা ভেনেজুয়েলা নিয়ে মি. স্টলটেনবার্গ এ ধরনের কথা বলবেন। কিন্তু তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার গণতন্ত্র এবং রাজনীতি নিয়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চারটি বছরে আমেরিকার মর্যাদা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে - তা নেটো কর্মকর্তার একটি টুইট দেখেই অনেকটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই সময়কালে বিশ্বে আমেরিকার প্রতিপত্তি এবং ‘সফট পাওয়ার‘ - অর্থাৎ মজবুত গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ভিত্তির জোরে প্রভাব তৈরির যে ক্ষমতা - তার রক্তক্ষরণ বহুগুণে বেড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন, ইরানের সাথে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে আমেরিকাকে বের করে এনেছেন। তিনি বিদেশে সামরিক তৎপরতা কমিয়েছেন, কিন্তু বিকল্প হিসাবে কূটনীতির কোনো ব্যবস্থা করেননি। ফলে, ইসরায়েল, সৌদি আরব, তুরস্কের মত অনুসারীরাও এখন নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে শুরু করেছে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের গতিবিধির ওপর তারাও ভরসা করতে পারছে না। মিত্রদের আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে জো বাইডেনের জন্য সেই সাথে, মি. ট্রাম্প গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতাদের সাথে যতটা না উষ্ণতা দেখিয়েছেন - তার চেয়ে একনায়ক কর্তৃত্ববাদী নেতাদের বেশি কাছে টেনেছেন। ফলে একসময় আমেরিকাকে দেখে সারা পৃথিবীর গণতন্ত্র-কামীরা যেভাবে উৎসাহিত হতো তা চরমভাবে গোঁত্তা খেয়েছে। উল্টো আমেরিকার নিজের গণতন্ত্রের দুর্বলতা নগ্ন হয়ে পড়েছে। ‘অকার্যকর এবং বিভক্ত আমেরিকা‘ মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়ান ব্রেমার বলছেন, “শিল্পোন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা এখন রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে অকার্যকর এবং বিভক্ত একটি দেশে পরিণত হয়েছে।“ এই অবস্থার গুরুত্ব অনেক - কারণ মি. ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির কারণে বিশ্ব ব্যবস্থা গত চার বছরে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীন এবং রাশিয়া দুটো দেশেই ভাবছে, ট্রাম্পের শাসনামলে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েছে। সেইসাথে, উদার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন জাতিসংঘ এবং তার অনেক সহযোগী প্রতিষ্ঠান, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: ক্যাপিটল হিলে হামলা: নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে ট্রাম্প সমর্থক ও ডানপন্থীরা 'সশস্ত্র বিক্ষোভের' পরিকল্পনা করছে ক্যাপিটল হিলে হামলার পর কী হবে জো বাইডেনের অভিষেকের দিন ইতিহাস কীভাবে মনে রাখবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিদায়কে? ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিলেন, 'দুর্দান্ত সমর্থকদের' প্রশংসাও করলেন ট্রাম্প শিনজিয়াংয়ে চীনা সৈন্যদের টহল। চীনকে সামলানো জো বাইডেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে সাইবার হামলা দিন দিন মহামারির মত বাড়ছে। প্যানডেমিক বা জলবায়ু পরিবর্তনের মত বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে যে ধরণের শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল, মি. ট্রাম্প তার ধারে-কাছেও ছিলেন না। এটা সত্যি যে আমেরিকার নাক গলানোর কারণে অনেক সময় সমস্যা সমাধানের বদলে তা শতগুণে বেড়ে গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা নীতি এখন অনেকটাই অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শীতল যুদ্ধের সময়কার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলো ধসে পড়েছে। অথচ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মত নতুন নতুন বিপজ্জনক মারণাস্ত্র যেখানে তৈরি হচ্ছে, সেখানে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির গুরুত্ব বহুগুণে বেড়েছে। সেইসাথে, চীন যেভাবে দিনে দিনে খবরদারি-সুলভ আচরণ করছে এবং রাশিয়া যেভাবে মারমুখী হয়ে উঠছে - তা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমেরিকার নেতৃত্ব এখন তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই সময়েই গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডব আমেরিকার প্রতিপক্ষরা যে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করেছে - তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নতুন একজন প্রেসিডেন্ট যখন ক্ষমতা নিচ্ছেন - তখন আমেরিকা কোভিড প্যানডেমিকের জেরে নাজেহাল। অন্যদিকে, প্রতিপক্ষ চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হয়ত যথার্থই মনে করছেন যে তার রাষ্ট্রব্যবস্থাই আমেরিকানদের চেয়ে শ্রেয়। মি. ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির কারণে বিশ্ব ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়া এখন আমেরিকার যতটা না কৌশলগত 'প্রতিদ্বন্দ্বী' - তার চেয়ে বেশি 'উৎপাত'। কিন্তু ট্রাম্পের সময়কালে রাশিয়ার পক্ষ থেকে হ্যাকিং এবং ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রবণতা বহুগুণে বেড়ে গেছে। যে প্রশাসনের দায়িত্ব জো বাইডেন নিতে চলেছেন, তার নানা অঙ্গের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে হয়ত রুশরা গোপনে ঢুকে বসে রয়েছে। এই পাইরেসির মাত্রা কত - তা হয়তো কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না , কিন্তু গোপনীয়তা যে ভেঙেছে তা নিয়ে কারো মধ্যেই কোনো সন্দেহ নেই। আমেরিকার মিত্ররাও বুঝতে পারছে যে নতুন প্রশাসনের জন্য কাজ করা সহজ হবেনা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জি-সেভেন জোট জো বাইডেনকে সাদরে সম্ভাষণ জানাবে, কিন্তু সৌদি আরব, ইসরায়েল বা তুরস্কের মত দেশগুলো দ্রুত তাদের নীতি অদল-বদল করে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করবে বা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। তারা নতুন মার্কিন প্রশাসনের সাথে নতুন করে দর কষাকষির পরিকল্পনা করছে। নতুন মার্কিন প্রশাসনের প্রতি পশ্চিমা মিত্রদের হানিমুন কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে সেই নিশ্চয়তা দেয়াও কঠিন। মি. বাইডেন তার ইইরোপীয় মিত্রদের ওপর মি. ট্রাম্পের মতই শর্ত আরোপ করবেন হয়তো। তিনিও চাইবেন ইউরোপীয়রা যেন প্রতিরক্ষা বাজেটা বাড়ায়, নেটো জোটে বেশি পয়সা দেয়।। ইরান, চীন এবং রাশিয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ কৌশলের জন্যও ইউরোপীয়দের প্রতিশ্রুতি চাইবেন তিনি। আমেরিকার নেতৃত্বের ওপর আস্থা তৈরি করা নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য কঠিন হতে পারে কিন্তু নীতি বা কৌশলের ব্যাপারে এই কোয়ালিশন বা ঐক্য সহজ হবেনা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চীনের সাম্প্রতিক বিনিয়োগ চুক্তি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। বাইডেন হয়তো এই চুক্তি বিলম্বিত করতে চাইতেন। আমেরিকানরা মনে করছে যে চীন যেভাবে উইগর মুসলিমদের সাথে আচরণ করছে, হংকংয়ে যে নীতি অনুসরণ করছে বা অস্ট্রেলিয়াকে যেভাবে চাপের মধ্যে রেখেছে, তাতে চীনের সাথে এমন চুক্তি করা সঙ্গত হয়নি। ফলে, নীতি নিয়ে মতভেদ বা ইউরোপের নিজের নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব অর্জনের অভিলাষের কারণে ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্কে জটিলতা দেখা দেবে। ট্রাম্প-বাদ নিয়ে মিত্রদের উদ্বেগ সেই সাথে রয়েছে আরো একটি বড় সমস্যা, আর তা হলো অনেক দেশ এখন মনে করছে ট্রাম্প আপাতত সরে গেলেও ট্রাম্পিজম বা ট্রাম্প মতবাদ হয়তো পাকাপাকিভাবে চলে যাচ্ছেনা। তাদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে মি. বাইডেন হয়ত চার বছরের জন্য একটি বিরতি নিশ্চিত করছেন, কিন্তু তার পর ট্রাম্প-বাদ নতুন শক্তিতে ফিরে আসবে। ফলে, মি. বাইডেনের ব্যাপারে খুব ভরসা কি তারা করবেন? অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আমেরিকার বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার গণতন্ত্র পুন:নির্মাণ করে অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে ‘ব্রান্ড আমেরিকা‘ নিশ্চিত করতে পারলেই শুধু আমেরিকার শত্রু এবং মিত্ররা আমেরিকাকে আগের মত গুরুত্ব দেবে, তার নেতৃত্বকে সমীহ করতে শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অনেকটা শাঁখের করাতের মতো। যদি মি. বাইডেন বৈদেশিক সম্পর্কে সাফল্য চান, মর্যাদা চান - তাহলে তাকে তার বিদেশ নীতির প্রতি দেশের জনগণের সমর্থন আদায় করতে হবে। কিন্তু সেই ভারসাম্য রক্ষা কঠিন। উদাহরণ হিসাবে চীনের কথা বলা যেতে পারে। সাধারণ আমেরিকানরা চাইবে, চীনা নীতি যেন এমন হয় - যাতে তাদের চাকরি ফিরে আসে বা নতুন সুযোগ তৈরি হয়। সেখানেই মি. বাইডেন সমস্যায় পড়তে পারেন, কারণ তিনি চীনের সাথে প্রতিযোগিতা করতেও চান, আবার সহযোগিতাও চান।
news-41077377
https://www.bbc.com/bengali/news-41077377
সুন্দরবনে শান্তি ফেরালেন যে সাংবাদিক
জঙ্গল থেকে জীব নে : পর্ব-৪ গত বছর ২৮শে মে'র রাত। সুন্দরবনের জয়পুটিয়া ভাড়ানির এক গোপন জায়গায় ওঁত পেতে আছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-এর একটি ইউনিট।
আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের সাথে মোহসীন-উল হাকিম তারা অপেক্ষা করছে একদল জলদস্যুর। তবে তারা কোন অভিযান চালাচ্ছে না। তারা অপেক্ষা করছে কখন এই দস্যুদল এসে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। একই সময়ে সুন্দরবনের অন্যদিকে ঘটছিল ভিন্ন এক ঘটনা। দুর্ধর্ষ জলদস্যু দল মাস্টার বাহিনীর প্রধান কাদের মাস্টার এবং অন্যান্যদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলেন একজন সাংবাদিক। দস্যুদের মন দুলছে অজানা শঙ্কা আর নামহীন সন্দেহে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের শান্ত করলেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক মোহসীন-উল হাকিম। পরদিন ভোরবেলা দেখা গেল র‍্যাবের অবস্থানের দিকে এগিয়ে আসছে একটি ট্রলার। কাছে ভেড়ার পর মোহসীন-উল হাকিমের পেছনে ট্রলার থেকে একে একে নেমে এলো নয় জন জলদস্যু ও তাদের নেতা কাদের মাস্টার। বাংলাদেশে এই প্রথম একটি দস্যু দল বিনা রক্তপাতে স্বেচ্ছায় নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে তুলে দিল। সাথে জমা দিল ৫১টি আগ্নেয়াস্ত্র। আর পাঁচ হাজারেরও বেশি গুলি। যমুনা টিভির জন্য রিপোর্ট করছেন মোহসীন-উল হাকিম। আরো দেখুন: জঙ্গল থেকে জীবনে পর্ব-১ বেঁচে থাকার তাগিদে সুন্দরবন ছাড়ছে জলদস্যুরা জঙ্গল থেকে জীবনে পর্ব-২ শুধু প্রতিশ্রুতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে জলদস্যু দমন জঙ্গল থেকে জীবনে পর্ব-৩ সুন্দরবন দখল যাদের নিত্যদিনের লড়াই ঠিক এর দু'দিন পর মংলায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করে দলটি। সারা দেশ জানতে পারলো সুন্দরবনের জলদস্যু দমনের রোমাঞ্চকর ঘটনার একজন নায়ক মোহসীন-উল হাকিম। "এটা আত্মপ্রচারের বিষয় না। সাংবাদিক হিসেবে আমার মনে হয়েছে প্রতিদিনের খবর জোগাড়ের বাইরে যদি কিছু করতে পারি, যাতে দেশের মানুষের কোন উপকার হয়!" বিবিসির সাথে এক আলাপচারিতায় বলছিলেন তিনি। আর সেই পথের সন্ধান দিলেন গাবুরার গ্রামবাসী। তিনি তখন দেশ টিভির সাংবাদিক। দু'হাজার নয় সালের মে মাসে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় আইলা বিধ্বংসী শক্তি দিয়ে তছনছ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূল। অন্যান্য সাংবাদিকদের মতোই সেই ঝড়ের খবর সংগ্রহ করতে মোহসীন-উল হাকিমও গিয়েছিলেন বাগেরহাটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলির একটি গাবুরায়। কিন্তু তিনি অবাক হলেন যখন গাবুরার মানুষজন তাকে জানালো যে ঝড়ে তাদের ক্ষতি তারা হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবেন। অস্ত্র ও গুলিগোলা সমর্পণের জন্য তৈরি হচ্ছে এক জলদস্যু দল। কিন্তু ঝড়ের চেয়ে মারাত্মক এক ঝড় তাদের জীবনকে লণ্ডভণ্ড করছে প্রায় প্রতিদিন। তার নাম জলদস্যু। "সেইবারই প্রথম বুঝতে পারলাম জোয়ারে মানুষের বাড়ি ডুবে গেছে, চারিদিকে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন। কিন্তু সেটাকেও তারা বড় সমস্যা বলে ভাবছে না। তারা আমাকে বললেন, আমরা আর পারছি না। ভাই, যেভাবেই হোক জলদস্যু ঠেকানোর জন্য কিছু একটা করুন।" কথাটা মি. হাকিমকে এতটাই ধাক্কা দিয়েছিল যে তিনি এরপর থেকে জলদস্যু সমস্যা সম্পর্কে খোঁজখবর করা শুরু করেন। ঐ অঞ্চলে শুরু করেন যাতায়াত। এরপর ২০১০ সালে তিনি প্রথমবারের মতো যোগাযোগ করতে সক্ষম হন মোতালেব বাহিনীর প্রধান মোতালেবের সঙ্গে। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন দস্যুতা ত্যাগ করতে। গোড়াতে কিছুটা নিমরাজি হলেও মোতালেব পরে পিছিয়ে যায়। এক সময়ে সে র‍্যাবের সাথে 'বন্দুকযুদ্ধেৰ প্রাণ হারায়। "কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। এরপর বহু ডাকাতের সঙ্গে একে একে আমার আলাপ হয়। আমি বোঝার চেষ্টা করি তারা ঠিক কী ভাবছে। তারা আমাকে বলে যে আত্মসমর্পণ করলে র‍্যাব তাদের মেরে ফেলবে। আমিও বেশ নরমভাবেই বিষয়টাতেই এগিয়ে যেতে থাকি।" ইতোমধ্যে মি. হাকিম যোগ দিয়েছেন যমুনা টিভিতে। সেখানে তিনি নিয়মিতভাবে সুন্দরবনের জলদস্যুদের ওপর রিপোর্ট প্রচার শুরু করেন। পুনর্বাসন চাহিদা সম্পর্কে সাবেক জলদস্যুদের মতামত নিচ্ছেন মহসীন-উল হাকিম। সুন্দরবনের আশেপাশে লক্ষ লক্ষ মানুষ কতখানি আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সেই কাহিনী তুলে ধরতে থাকেন। "এপর্যন্ত আমি সুন্দরবন গেছি প্রায় ১০০ বার। ফলে গোটা অঞ্চল যেমন আমার চেনা হয়ে যায়। তেমনি জলদস্যুরাও আমাকে চিনতে পারে। আমার সম্পর্কে জানতে পারে। তাদের সাথে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম, মোবাইল ফোনে কথা বলতাম। ফলে তারাও আমার আস্থা রাখতে শুরু করে।" "পুরো বিষয়টাকে আমি পেশাদারিত্বের সঙ্গে হ্যান্ডল করার চেষ্টা করেছি। রিপোর্টিং-এর সময় কোন পক্ষ নেইনি। কোন আইন ভঙ্গ করিনি। প্রতিবার জঙ্গলে ঢোকার সময় আমি কর্তৃপক্ষকে আগাম জানিয়ে রাখতাম", বলছিলেন তিনি, "আত্মসমর্পণের আলোচনা চালানোর সময়ও আমি দস্যুদের কোন ধরনের প্রতিশ্রুতি দেইনি। কোন ধরনের সুবিধে নেইনি তাদের কাছ থেকে। ফলে তারা আমাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করে। আমার জন্য এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।" কিন্তু আত্মসমর্পণ প্রশ্নে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সরকারের তরফ থেকে গোড়ার দিকে খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্ধকারের জীবন সম্পর্কে আলম বাহিনীর প্রধান আলম সরদার। ইতোমধ্যে জলদস্যু দমনে সরকার তৈরি করেছে এক বিশেষ টাস্কফোর্স। র‍্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো সুন্দরবন অঞ্চল জুড়ে জাল ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে একের পর এক নিহত হচ্ছে দস্যুরা। তাদের আয়ে টান পড়েছে। সাঁড়াশি অভিযানের মুখে তাদের তৎপরতার জায়গা ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে। এই পটভূমিতে আত্মসমর্পণ প্রশ্নে প্রথম অগ্রগতি হয় ২০১৫ সালে। মাস্টার বাহিনী দলনেতা কাদের মাস্টার তাকে জানালেন যে তিনি জঙ্গল ছাড়তে চান। এ সম্পর্কে মোহসীন-উল হাকিম যমুনা টিভিতে যে রিপোর্ট প্রচার করেন তারপরই নড়েচড়ে বসে সরকার। তারা মি. হাকিমের সাথে যোগাযোগ করে। বরিশাল-ভিত্তিক র‍্যাব- এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ আনোয়ারুজ্জামান মি. হাকিমের ক্যাডেট কলেজের সহপাঠী। সেই সূত্রে র‍্যাব-৮ এর সাথে তার একটি কার্যকর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তিনি বেশ কয়েকবার বনের ভেতরে ঢুকে মাস্টার বাহিনীর সাথে কথা বলেন। আত্মসমর্পণের জন্য তাদের লিখিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সরকারের হাতে তুলে দেন। দীর্ঘ এক বছর আলোচনার পর আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। মি. হাকিম নিজে বনের ভেতরে মাস্টার বাহিনীর আস্তানায় গিয়ে তাদের বের করে আনেন এবং র‍্যাবের হাতে তুলে দেন। "এই আত্মসমর্পণের পরিণতি সম্পর্কে অন্য গ্রুপগুলোর মনে ভয় ছিল। তারা মনে করেছিল আত্মসমর্পণের পর মাস্টার বাহিনীর সবাইকে মেরে ফেলা হবে," বলছিলেন তিনি, "কিন্তু সেটা যখন ঘটলো না। তখন অন্যান্য দলগুলো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করলো।" এরপর একে একে সুন্দরবন থেকে বেরিয়ে এল মজনু বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, শান্ত বাহিনী, আলম বাহিনী, সাগর বাহিনী, খোকাবাবু বাহিনী, নোয়া বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, ছোটরাজু বাহিনী, আলিফ বাহিনী আর কবিরাজ বাহিনী। প্রতিটি আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটলো মহসীন-উল হাকিমে মধ্যস্থতায়। জলদস্যুরা জঙ্গল ছাড়লো তারই হাত ধরে। তার প্রতি সাবেক জলদস্যুদের গভীর আস্থা আর শ্রদ্ধার প্রকাশ, এক জলদস্যুর কথায়: "মোহসীন ভাই বললি পাঁচ তলা থিকি ঝাঁপ দিতি পারি। ওপর আল্লাহ নীচে এই ভাই।" এসব বাহিনীর মোট ১৫০ জন জলদস্যু এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। আত্মসমর্পণের সময় র‍্যাবের কাছে জমা পড়েছে প্রায় ২৪৭টি আগ্নেয়াস্ত্র। এই অস্ত্রগুলোই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ আর উপকূলে জেলেদের ঘুম কড়ে নিয়েছিল। "এখনও দু'একটি দল সুন্দরবনে তৎপর রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এরাও নিশ্চই একসময় নিজেদের ভালটা বুঝতে পারবে," বলছিলেন মোহসীন-উল হাকিম। তাই আপাতত তিনি সন্তুষ্ট এই ভেবে যে আট বছর পরে হলেও গাবুরার গ্রামবাসীদের তিনি একটা সুখবর দিতে পারছেন।
news-46082916
https://www.bbc.com/bengali/news-46082916
ভারতের মুঙ্গেরে তৈরি অবৈধ অস্ত্র যেভাবে ঢুকছে বাংলাদেশে
বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের শহর মুঙ্গের একসময়ে ছিল উচ্চ বা মধ্যবিত্ত বাঙালীদের হাওয়া বদলের জায়গা।
এসপি বাবু রামের সামনে রাখা উদ্ধারকৃত অবৈধ অবৈধ অস্ত্র কিন্তু গত কয়েক দশকে সেই মুঙ্গের আরও বেশী পরিচিত হয়ে উঠেছে বেআইনী অস্ত্র তৈরীর জন্য। ভারতে তো বটেই, মুঙ্গেরে তৈরী অস্ত্র পাচার হয় বাংলাদেশেও। মুঙ্গের সম্প্রতি আবারও এসেছে সংবাদ শিরোনামে। মাস খানেক আগে সেখান থেকে পাওয়া গেছে ২০টি একে-৪৭ বন্দুক। জেলার পুলিশ সুপার বাবু রাম বিবিসিকে বলছেন, "এই অস্ত্রগুলো জবলপুরের অর্ডিন্যান্স ডিপো থেকে আনা হয়েছিল। এছাড়ারও ৩০টা ম্যাগাজিন, পিস্তলও পাওয়া গেছে। একে-৪৭ গুলো পাওয়া গেছে একটা কুয়োর ভেতর থেকে। ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা।" মি. বাবু রাম আরও জানাচ্ছিলেন যে অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে, আর লাইসেন্স প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণেও বেআইনী অস্ত্র কারবারীদের কাছ থেকে বন্দুক-পিস্তল কিনছে অনেকে। মুঙ্গেরের একটি বৈধ বন্দুকের দোকানের মালিক ঠাকুর নরেশ সিং কথায় এমন আভাস মেলে। তিনি বলছিলেন, তার দোকানে আগে বছরে শ'খানেক বা তার বেশি বন্দুক বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হয় বছরে দু'তিনটি। তবে এসপি বাবু রামের দাবী, "আমাদের লাগাতার চাপের মুখে মুঙ্গের থেকে অনেক বেআইনী অস্ত্র কারবারী এখন পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খন্ডে চলে গেছে।" পুলিশ অধীক্ষক কার্যালয়, মুঙ্গের গত কয়েক বছরে কলকাতার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু অস্ত্র কারখানার হদিশ পেয়েছে পুলিশ। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ বসবাসের বাড়ি ভাড়া নিয়ে কারখানা চালু করা হয়েছিল, কিন্তু কারিগর নিয়ে আসা হত মুঙ্গের থেকেই। একটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মুঙ্গেরে পুলিশের চাপের ফলে নতুনভাবে কারবার ফাঁদছে অনেক বেআইনী অস্ত্র ব্যবসায়ী। যেরকম অস্ত্রের অর্ডার তারা পাচ্ছে, সেই অনুযায়ী মুঙ্গের থেকে কারিগর নিয়ে এসে কাজ শেষ হলেই আবার কারখানা তুলে দিয়ে চলে যাচ্ছে। তবে বেআইনী অস্ত্র তৈরী মূল ব্যবসা এখনও চলে মুঙ্গেরেই। বিহার পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত মহানির্দেশক দেবকী নন্দন গৌতম একসময় মুঙ্গেরের পুলিশ সুপার ছিলেন। ঠাকুর নরেশ সিং, মুঙ্গেরের একটি বন্দুকের দোকানের মালিক তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "আমার মনে আছে, ১৯৮৬ সালে মুঙ্গেরের দিয়ারা এলাকায় একটা সার্চ অপারেশন চালিয়ে আমরা একে-৪৭ এর প্রায় ১০০ কার্তুজ উদ্ধার করেছিলাম। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, ওই একে-৪৭ সেই বছরেই চেকোস্লাভাকিয়ায় তৈরী হয়েছিল। এক বছরের মধ্যেই তার গুলি পাওয়া গিয়েছিল মুঙ্গেরে। এদের নেটওয়ার্ক এতটাই সচল।" মুঙ্গেরে তৈরী সব অস্ত্রই যে বেআইনী তা নয় ইংরেজ সরকার ১৮৭৮ সালে যে অস্ত্র আইন তৈরী করেছিল, সেই অনুযায়ী মুঙ্গেরসহ বিহারের বেশ কয়েকটি শহরে ২০ জনকে নিজেদের বাড়িতে অস্ত্র তৈরীর ছাড়পত্র দিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে ১৯৪৮ সালে নতুন অস্ত্র আইন আর তার ধারা অনুযায়ী সারা দেশে ১০৫ জন বন্দুক তৈরীর লাইসেন্স পেয়েছিলেন। মুঙ্গেরের ৩৭ জন লাইসেন্স পেয়েছিলেন বন্দুক তৈরীর। এই বেসরকারী বন্দুক নির্মাতারাই ১৯৬২-র চীন ভারত যুদ্ধের সময় .৪১৯ বোরের মাস্কেট রাইফেল তৈরী করেছিলেন সেনাবাহিনীর জন্য। মুঙ্গের শহরের একটি রাস্তা প্রায় ১০ একর এলাকা জুড়ে মুঙ্গেরে বন্দুক তৈরির কারখানা রয়েছে, যেখানে ১২ বোরের সিঙ্গল আর ডবল ব্যারেল বন্দুক তৈরী হয়। অন্যতম বন্দুক প্রস্তুতকারক সংস্থা ফাইজার গান ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মালিক সৌরভ নিধি বলছিলেন, "২৫টা বন্দুক তৈরীর কারখানার মধ্যে আটটার অবস্থা বেশ খারাপ। দুটো তো বন্ধই হয়ে গেছে।" বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার একটি, মুঙ্গের বন্দুক নির্মাণ সহযোগ সমিতি লিমিটেড ভারতের একমাত্র বন্দুক কারখানা ছিল, যেটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল সমিতি রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী। সৌরভ নিধি বলছেন, "কেন্দ্রীয় সরকার বিহারের মোট ৩৭টি বন্দুক নির্মাণ সংস্থার জন্য বছরে ১২৩৫২ টা ডবল আর সিঙ্গল ব্যারেল বন্দুক তৈরীর কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ১৯৫৮ সালে। সেই কোটা আজও চলছে। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় বছরে হাজার দুয়েক বন্দুক তৈরী হয়। একেকটা বন্দুক তৈরী করতে নয় জন আলাদা আলাদা কারিগর দরকার হয়। এই যদি অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে বাকি কারখানাগুলোও খুব তাড়াতাড়িই বন্ধ হয়ে যাবে।" একসময়ে মুঙ্গেরের বন্দুক কারখানাগুলোতে হাজার দেড়েক কারিগর কাজ করতেন। এখন সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে একশোর মতো। কীভাবে মুঙ্গের অস্ত্র তৈরীর মূল কেন্দ্র হয়ে উঠল শহরের পুরোনো অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা গিরিধারীলাল এন্ড কোম্পানির মালিক বিপিন কুমার শর্মার কথায়, মুঙ্গেরে অস্ত্র তৈরী হচ্ছে দুশো বছরেরও বেশী সময় ধরে। এই শ্রমিকরা বন্দুকের কারখানায় কাজ করেন "বাংলার নবাব মীর কাশিম আলি মুর্শিদাবাদ ছেড়ে তাঁর রাজধানী সরিয়ে এনেছিলেন মুঙ্গেরে। সঙ্গে তাঁর অস্ত্রাগারও নতুনভাবে এখানেই তৈরী হয়েছিল। নবাবের অস্ত্রাগারে কাজ করতেন অত্যন্ত কুশল কারিগররা। সেই কারিগরী বিদ্যা পরবর্তী পরবর্তী প্রজন্ম উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছে।" তিনি বলছেন, এভাবেই মুঙ্গেরে এত ভাল বন্দুক তৈরীর কারিগর রয়েছে। তাদেরই পরবর্তী প্রজন্ম অস্ত্র তৈরীর কাজ করে চলেছেন।" একদিকে বৈধ কারখানা বন্ধ, অন্যদিকে বাড়ছে অবৈধ বন্দুক ব্যবসা বৈধ বন্দুকের চাহিদা কমলেও অবৈধ কারবার ফুলে ফেঁপেই উঠছে। ফাইজার গান ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মালিক সৌরভ নিধি মুঙ্গেরের চুরওয়া, বরহদ, নয়া গাঁও, তৌফির দিয়ারা, মস্তকপুর, শাদিপুর - এই সব গ্রামগুলোতে অবৈধ বন্দুক তৈরীর কারখানা গড়ে উঠেছে কুটির শিল্পের মতো। এইসব অবৈধ কারখানাগুলোতে তৈরী হওয়া পিস্তল, রিভলবার, রাইফেলের অর্থে বহু ঘরে উনুন জ্বলে। মনে করা হয়, অবৈধ কারখানাগুলোতে যেসব কারিগররা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই একটা সময়ে হয়তো লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক কারখানাগুলোর শ্রমিক ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ মহানির্দেশক মি. গৌতমের কথায়, "যারা কাজ জানে, তাদের তো ব্যবহার করবেই কেউ না কেউ। বন্দুক তৈরীর কুশলী কারিগরে এই অঞ্চলটা ছেয়ে রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র তৈরীর কাজে টাকাও বেশী। তাই সরকারের উচিত এইসব শ্রমিকদের কারিগরী জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য এঁদের কোনও কারখানায় পুনর্নিয়োজিত করা যায় কীনা, সেটা ভেবে দেখা।" অবৈধ কারখানাগুলোতে পুলিশ মাঝে মাঝেই তল্লাশী অভিযান চালায়। গত দুবছরে প্রায় ৫০০ বেআইনী বন্দুক - যার মধ্যে দেশী-বিদেশী কাট্টা বন্দুক, রাইফেল, পিস্তল - এসব বাজেয়াপ্ত করেছে। আবার অনেক সময়ে বন্দুকের নানা অংশও আলাদা করে খুঁজে পাওয়া গেছে তল্লাশীর সময়ে। বাংলাদেশেও পাচার হয় মুঙ্গেরের বেআইনী অস্ত্র মুঙ্গেরে তৈরী বেআইনী অস্ত্র যে শুধু ভারতের দুষ্কৃতিরা ব্যবহার করে তা নয়। এর একটা ভাল বাজার রয়েছে বাংলাদেশেও। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: বাংলাদেশে অবৈধ দেশি অস্ত্রের ক্রেতা কারা? অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ মহানির্দেশক দেবকী নন্দন গৌতম বিএসএফ নিয়মিতই সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলগুলি থেকে বেআইনী অস্ত্র উদ্ধার করে, যা বাংলাদেশে পাচারের জন্যই নিয়ে আসা হয় বলে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মনে করে। বিএসএফ-এর দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের দেওয়া একটি হিসাব অনুযায়ী এবছর এখনও পর্যন্ত তারা ২৩টি বেআইনী অস্ত্র পাচারের আগেই উদ্ধার করেছে। যার মধ্যে রয়েছে দেশী পিস্তল, রিভলবার, ৭.৬৫ মিলিমিটার বন্দুক। অনেকবার এমনও ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চল থেকে, যাদের কাছে বন্দুকের নানা অংশ পৃথকভাবে পাওয়া গেছে - কারও কাছে নল পাওয়া গেছে, তো কারও কাছে স্প্রিং বা ট্রিগার। একটা সময়ে যেমন শুধু মুঙ্গেরে তৈরী বেআইনী অস্ত্রই নিয়ে আসত পাচারকারীরা, আজকাল পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গাতেও মুঙ্গের থেকে কারিগর নিয়ে এসে অস্ত্র তৈরী করানো হচ্ছে। অক্টোবর মাসেই বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় এরকমই একটি বেআইনী অস্ত্র কারখানার হদিশ পায় পুলিশ। সেখান থেকে ২৪টি রিভলবার, এবং ২০০টি আধা-তৈরী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। দুজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে, যারা আদতে মুঙ্গেরের বাসিন্দা। এবছরেরই জুন মাসে ওই মালদাতেই বেআইনী অস্ত্র সহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছিল - তাদের প্রত্যেককেই মুঙ্গের থেকে অস্ত্র তৈরীর জন্য মালদায় নিয়ে আসা হয়েছিল। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: সংলাপ: অসন্তুষ্ট বিএনপি এখন কী করবে? সৌদি আরবকে সরাসরি দোষারোপ করলেন এরদোয়ান
news-46727751
https://www.bbc.com/bengali/news-46727751
বাংলাদেশে ২০১৮ সালের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাবলী
২০১৮ সালটিতে বাংলাদেশে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিল যা তখন আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচন ছাড়াও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ নানা ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে ২০১৮ সাল।
২০১৮ সালের আলোচিত সব ঘটনা ১. সংসদ নির্বাচন ও রাজনীতির উত্তাপ ২০১৮ সালের পুরো সময়টাতেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় ছিল। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী কার্যক্রমের তৎপরতা অক্টোবরের শুরু থেকে দেখা যায়। ১৩ই অক্টোবর গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি এবং কয়েকটি ছোট দল জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামে নতুন একটি জোট গঠনের কথা ঘোষণা করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সংসদ বাতিলসহ আরো কিছু দাবি তোলে তারা। পরে ২৪শে অক্টোবর এসব দাবি নিয়ে সিলেট শহরে প্রথম জনসভা করে তারা। এরপর গত ২৮শে অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটি চিঠিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের সাত-দফা দাবি নিয়ে সরকারকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব করা হয়। ঐ প্রস্তাবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংলাপে বসতে রাজী হওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে বিরোধী দলীয় নেতারা বিস্মিত হন। পরে অবশ্য ৭ই নভেম্বর সরকার ও ঐক্যফ্রন্ট আরো এক দফায় সংলাপে বসলে কার্যতঃ কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। পরের দিনই মতপার্থক্য আর বিতর্কের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তখন ২৩শে ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তা পিছিয়ে ৩০শে ডিসেম্বর নেওয়া হয়। সরকার-ঐক্যফ্রন্ট সংলাপের ফলাফল- বিবিসির চোখে নতুন জোট থেকে কী লাভ হবে বিএনপির আওয়ামী লীগ থেকে ড. কামাল যেভাবে বেরিয়ে আসেন সংলাপ শুরুর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও ড. কামাল হোসেন এর মধ্যে ১১ই নভেম্বর নির্বাচনে অংশগ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত জানায় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু ড. কামাল হোসেন কোন মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এসময় ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতে ইসলামের নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারটিও আলোচনায় আসে। এদিকে ৯ই ডিসেম্বর মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট শরীকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করার পরের দিনই ১০ই ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হয়। তবে ১২ই ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে এবং বিরোধী জাতীয় ঐক্যজোট নেতা ড. কামাল হোসেন সিলেট থেকে তাদের প্রচারাভিযান শুরু করেন। ১৭ই ডিসেম্বর ঐক্যফ্রন্ট এবং ১৮ই ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার’ ইশতেহারের কাটাছেঁড়া বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট: ইশতেহারে মিল-অমিল কোথায়? তবে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিরোধী কোন প্রার্থীই লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড পায়নি বলে নানা রকম অভিযোগ আসে। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী-সমর্থকদের উপর পুলিশী হামলা ও ব্যাপক ধরপাকড়ের খবরও পাওয়া যায়। এসব অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে ২৫শে ডিসেম্বর বৈঠকে বসলেও এক পর্যায়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যজোট ওয়াকআউট করে। পরের দিন তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেন। প্রতিদিনই হচ্ছে সহিংসতা: কি করছে নির্বাচন কমিশন? কেন বিতর্ক এড়াতে পারছে না নির্বাচন কমিশন? অসম প্রচারণার শেষে ভোটের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ তবে নির্বাচনের আগের দিন থেকে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করেছিল বিটিআরসি। ভোটের পরের দিন পর্যন্ত থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা ব্যাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে একাদশ সংসদ নির্বাচন। ২৯৯ টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। গাইবান্ধার একটি আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেই আসনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ২৮৮টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। অপর দিকে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি জোট ৭টি আসন পায়। অন্যান্যরা বাকি ৩টি আসন পায়। তবে ভোট গ্রহণের সময় বিবিসির ক্যামেরায় বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছিল। সংসদ নির্বাচন: চট্টগ্রামে ভোটের আগে ব্যালট বাক্স ভরা দেখতে পেলেন বিবিসি'র সাংবাদিক সংসদ নির্বাচন: ঢাকা-৭ আসনে দরজা বন্ধ, ভেতরে ভোট চলছে! সংসদ নির্বাচন: শেওড়াপাড়ার ভোটকেন্দ্রে যা দেখেছেন বিবিসি'র সাংবাদিক বিরোধী জোটে 'কারচুপি ও অনিয়মের' অভিযোগে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখান করে পুন:নির্বাচনের দাবি তুললেও আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন তা নাকচ করে দিয়েছে। ২. খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড ও নির্বাচনে অযোগ্য গত বছরের শুরু থেকে সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয়টি ছিল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ফেব্রুয়ারি মাসের আট তারিখ থেকে কারাবন্দী রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ২০০৮-এর ৩রা জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি বিশেষ আদালত। তখন থেকেই তিনি জেলে আছেন। এরপর ৩০শে অক্টোবর একই মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে হাইকোর্ট। অন্যদিকে আরেকটি দুর্নীতি মামলায় (জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট) আরেকটি বিশেষ আদালত তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। তবু একাদশ সংসদ নির্বাচনের অংশগ্রহণ করার জন্য বিএনপির থেকে তার পক্ষে ফেনী-১ এবং বগুড়া ৬ ও ৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছিল। তবে ২রা ডিসেম্বর বাছাইয়ের সময় কারাদণ্ডের কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নেয়া সিদ্ধান্তে সেই আপিল নাকচ হয়ে যায়। পরে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। ১৩ই ডিসেম্বর খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি-না সে নিয়ে বিভক্ত রায় দেয় হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই রিট আবেদনের শুনানির পর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। এরপর তাঁর রিট তৃতীয় আর একটি বেঞ্চে পাঠানো হলে সেটিও ১৮ই ডিসেম্বর তা খারিজ করে দেয় আদালত। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মতো তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হলেন। খালেদা জিয়ার অতীত নির্বাচনের ফলাফল কেমন ছিল? খালেদা জিয়ার মাথায় আরো যেসব মামলা ঝুলছে ৯১ সালের পর এই প্রথম হাসিনার বিপক্ষে নেই খালেদা ৩. নেপাল বিমান দুর্ঘটনা ২০১৮ সালের একটি বড় ঘটনা ছিল নেপালের কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা। বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ২১১ ১২ই মার্চ ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হলে ৪৯ জন মানুষ নিহত হন। এর মধ্যে ২৬জন আরোহী বাংলাদেশী। এই দুর্ঘটনার পর থেকে আকাশপথের নিরাপত্তা ইস্যুতে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল। পরে ১৯শে মার্চ নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২৩ জনের লাশ ঢাকায় এনে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকিদেরটা পরে আনা হয়। এই ঘটনার তদন্তের আগেই দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি দুর্ঘটনার পরপরই ককপিট এবং কন্ট্রোল রুম এটিসির মধ্যকার কথোপকথন ফাঁস হয়ে যায়। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিমান সংস্থা এবং নেপালের কর্মকর্তারা পাল্টাপাল্টি দোষারোপও করেছিলেন। এ দুর্ঘটনার পর নেপাল কর্তৃপক্ষ অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন গঠন করেছিল। তাদের খসড়া রিপোর্টের কপি নেপালের কাঠমান্ডু পোস্ট পত্রিকা ও আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির হাতে গিয়েছিল বলে তারা দাবি করে। এ দুটি সংবাদ মাধ্যম লিখেছিল যে তদন্ত রিপোর্টে বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলট আবিদ সুলতানের আচরণকে দায়ী করা হয়েছে। তবে সেটিকে 'ভিত্তিহীন' বলে আখ্যা দিয়ে গত ২৮শে অগাস্ট তদন্ত কমিশনের সদস্য বাংলাদেশের সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেছিলেন, "ইউএস বাংলা বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে।" নেপালে তদন্ত দল কোন প্রশ্নের জবাব খুঁজছে? বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে আসলে কী দেখা হয়? নেপালে বিধ্বস্ত বিমান:'পাইলট কাঁদছিলেন, সিগারেট খাচ্ছিলেন' নেপাল বিমান দুর্ঘটনা: চলছে স্বজনদের শোকের মাতম ৪. মাদক বিরোধী অভিযান চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে যে ইস্যুটা ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল সেটি হলো মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান। গত বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে ৪ শতাধিক লোক নিহত হয়েছে - বলছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। বছরের মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত মাদক-বিরোধী অভিযানে চার শতাধিক লোক নিহত হয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে। মাদক বিরোধী অভিযানকে অনেকেই সাধুবাদ জানালেও কথিত বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উদ্বেগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরেছেন। তবে ২৬শে মে টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেখানকার পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে রেকর্ড করা অডিও প্রকাশ হওয়ার পর এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক নেটওয়ার্কে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই ৩০শে মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন যে মাদক বিরোধী অভিযান চলছে তাতে কাউকেই রেহাই দেয়া হবে না। 'মাদক ব্যবসার চেয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা বড় অপরাধ' একরাম 'হত্যার' অডিও: সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় 'ডাকি নিই যাই আমার স্বামীরে তারা মারি ফেলিসে' ৫. নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবীতে আন্দোলন বাংলাদেশে এর আগে হলেও গত বছরের অগাস্ট মাসের মত আলোড়ন তৈরি হয়নি কখনোই। নিরাপদ সড়কে দাবিতে আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা। ২৯শে জুলাই ঢাকার রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সড়কে প্রাণহানি: বিক্ষোভকারীদের প্রতি পুলিশী আচরণ নিয়ে প্রশ্ন প্রথম কয়েকদিন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও পরবর্তীতে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হয় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। এসময় তাদের প্ল্যাকার্ড - পোস্টারসহ নানা স্লোগানে উত্তাল হয় ঢাকার রাস্তা। তারা রাস্তায় নেমে বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স ও কাগজপত্রও চেক করছিল। তাদের এই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ৪ঠা অগাস্ট কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শনিবার আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাথে সংঘর্ষে ঢাকার ধানমণ্ডির জিগাতলা এবং সায়েন্স ল্যাব মোড় অনেকটা রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল। পরে গত ৫ই আগস্ট আলোচিত শহিদুল আলমকে পুলিশ আটক করে। তার বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে 'অসত্য এবং উস্কানিমূলক তথ্য' ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আটক হয়েছিলেন সুপরিচিত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। শহিদুল আলমের মুক্তি দাবি করে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, ফটোগ্রাফার রঘু রাই, ব্রিটিশ টিভি তারকা কনি হক সহ দেশ-বিদেশের অনেক ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়। পরে ১০৮ দিন কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে বের হন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম সাময়িকী ২০১৮ সালের আলোচিত চরিত্র "দ্যা গার্ডিয়ান্স এন্ড দ্য ওয়ার অন ট্রুথ" তালিকায় তিনি স্থান পান। যেসব ছবির মাধ্যমে আলোড়ন তোলেন শহিদুল আলম আন্দোলনের সময় আল জাজিরা টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সরকারের কড়া সমালোচনা করেছিলেন শহিদুল আলম। তারপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন: কী ঘটেছিল ধানমণ্ডিতে? এদিকে ৭ই অগাস্ট বসুন্ধরা এবং বাড্ডা এলাকায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার সাথে জড়িত সন্দেহে এবং পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে ঢাকায় কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা আর পরিবহন খাতের উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের নানামুখী দাবির 'দ্রুত ও আইনানুযায়ী বাস্তবায়নের' প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এই আন্দোলনের মুখেই যেন টনক নড়ে সরকারের, নড়েচড়ে বসে যানবাহন খাতের সাথে সম্পৃক্ত চালক-মালিক, সরকারি-বেসরকারি সকল সংস্থাই। আন্দোলনের পর ১৯শে সেপ্টেম্বর 'বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন বিল ২০১৮' জাতীয় সংসদে পাশ হয়। তবে আইনের বিরোধীতা করে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরাও কয়েকদিন পরিবহন ধর্মঘট পালন করে। পরিবহন আইন নিয়ে এতোদিন কোথায় ছিলেন নেতারা? কতটা বিপজ্জনক সড়কে চলাচল করছেন আপনি? শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সমর্থন অভিভাবকদের শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি জিগাতলার দিকে যেতে চেয়েছিল ৬. কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০১৮ সালে বাংলাদেশে আলোচিত আরেকটি বড় ইস্যু হলো সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন। কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এর আগে বিভিন্ন সময় কোটা পদ্ধতি সংস্কার করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হলেও এপ্রিলে সেই আন্দোলন তীব্র হয়ে দেশের বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়েছিল। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের নিয়মিত সংঘর্ষ হতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় উপাচার্যের বাসভবনে ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনার পর ব্যাপক পুলিশী অভিযান চালানো হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এভাবে শুরুতে সরকার কোটা পদ্ধতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিলেও সেই আন্দোলনের মুখে এক পর্যায়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। জাতীয় সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা থাকবে না। কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রীসভা সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের জন্য কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করে। নিম্নপদের জন্য কোটা পদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে। অবশেষে ৪ঠা অক্টোবর কোটার বিলুপ্তি ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই কোটা ব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের জন্য ছিল ৩০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ ছিল নারীদের জন্য, প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ ছিল জেলা কোটা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবার নামের দুইটি সংগঠনও আন্দোলনে নেমেছিল। কোটা পদ্ধতি বাতিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরিতে কোটা: যে পাঁচটি তথ্য আপনি জানতে চাইবেন হামলা-গ্রেফতারে উত্তেজনা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ৭. উন্নয়নশীল দেশ ও স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ গত বছরের ১২ই মার্চ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদের উন্নয়ন নীতি বিষয়ক কমিটি বা সিডিপি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে আসার যোগ্যতা অর্জন করেছে বলে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। একটি বিশেষজ্ঞ টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবার পর যেকোন দেশের মূল্যায়ন হয়। ২০২১ সালে এ বিষয়ে প্রথম রিভিউ হবে, বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে তা অর্জনকে কতটা সুদৃঢ় করেছে, এরপর ২০২৪ সালে আরেকটি মূল্যায়ন হবে। তবে ২২শে মার্চ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে ধুমধাম করে উদযাপন করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি বাংলাদেশকে কী দেবে? উন্নয়নশীল দেশ হওয়া কেন উদযাপন করছে সরকার? উন্নয়নশীল দেশের তকমায় লাভ কী হবে বাংলাদেশের? কিন্তু এর ঠিক একদিন পরেই জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'বেরটেলসম্যান স্টিফটুং' তাদের এক রিপোর্টে জানায়, বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং সেখানে এখন গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদন্ড পর্যন্ত মানা হচ্ছে না। বিশ্বের ১২৯ টি দেশে গণতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি এবং সুশাসনের অবস্থা নিয়ে এক সমীক্ষার পর তারা এই মন্তব্য করে। ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের রিপোর্টে ১২৯টি দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে যে সূচক এই সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০ নম্বরে। একই অবস্থানে আছে রাশিয়া। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সমীক্ষায় বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া ও উগান্ডায় এখন আর গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদন্ড পর্যন্ত মানা হচ্ছে না বলে রিপোর্টে বলা হয়। নতুন পাঁচ 'স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায়' বাংলাদেশ স্বৈরশাসন প্রশ্নে জার্মান সমীক্ষা প্রত্যাখ্যান করলো বাংলাদেশ স্বৈরশাসন তালিকায় বাংলাদেশ বিতর্ক: কীভাবে দেখছে বিএনপি? তবে বেরটেলসম্যান স্টিফটুং এর এই রিপোর্টটি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, "এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন।" ৮. ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বাতিল হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নতুন রূপে তা ফিরে আসছে বলে অভিযোগ গণমাধ্যমকর্মীদের। গত বছরের শুরুর দিনই অর্থাৎ পহেলা জানুয়ারি মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ নামের একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করেছিল, যে আইনে তথ্য প্রযুক্তি বা আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়। এরপর থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের কর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, আইনটির অনেক ধারায় হয়রানি ও অপব্যবহার হতে পারে। এরমধ্যেই এটি ১৯শে সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাশ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ৩রা অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে এই আইনের পক্ষে শক্ত অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'মিথ্যা তথ্য' পরিবেশ না করলে সাংবাদিকদের এই আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। তবে আইনের সংশোধনীর দাবিতে ১৫ই অক্টোবর রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ডিজিটাল আইনের যে তথ্যগুলো জানা থাকা দরকার বিতর্কিত ‘৫৭ ধারা’ নতুন আইনে কীভাবে আসছে? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে সম্পাদকদের মানববন্ধন। ৯. রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি গত বছরের ১৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশ আর মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার প্রতিদিন তিনশো করে প্রতি সপ্তাহে ১৫শ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে এবং দুই বছরের মধ্যে এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শেষ করা হবে। তবে ঠিক কখন এই প্রত্যাবাসন শুরু হবে সেটি তখন না জানালেও ১৫ই নভেম্বর তারিখে প্রথম দফায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রথম দফায় দুই হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিলো। মিয়ানমারের পক্ষ থেকেই তাদের যাচাই করে এই তালিকা দেয়া হয়েছে। প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ফিরতে রাজী না রোহিঙ্গারা। ১৫ই নভেম্বর প্রথম দিন দেড়শ জনের মতো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা থাকলেও সেটি পরে সম্ভব হয়নি। এদিকে মিয়ানমার সরকার দাবি করেছিল যে, বাংলাদেশ সরকার ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পিছিয়ে দিতে চাইছে। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছিলেন, "সেটা হয়নি কারণ যারা যাবেন তারা রাজি হয়নি। এখানে আমরা যেটা বুঝেছি যে এখানে আস্থার সংকট আছে তাদের।" জাতিসংঘে হাসিনা: রোহিঙ্গা সংকট কি জটিলতর হলো? রোহিঙ্গারা স্লোগান দিচ্ছে 'যাবো না' ভাসানচরে যেতে চান না রোহিঙ্গারা এর আগে ২রা জুলাই রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতা ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। সেসময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মিয়ানমার সরকার তাদের বিরুদ্ধে আনা সহিংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
news-51270497
https://www.bbc.com/bengali/news-51270497
ভারতের 'চিকেনস নেক' মটকাতে বলে দেশদ্রোহে অভিযুক্ত মুসলিম ছাত্রনেতা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাকি দেশকে সংযুক্ত করে রেখেছে মাত্র ২২ কিলোমিটার লম্বা একফালি সরু ভূখন্ড, যাকে ডাকা হয় ভারতের 'চিকেনস নেক' (মুরগির ঘাড়) বা 'শিলিগুড়ি করিডর' নামে। ভারতের মানচিত্রে জায়গাটিকে সরু, বাঁকানো গলার মতো দেখায় বলেই অমন অদ্ভুত নাম।
শার্জিল ইমাম সেই 'ঘাড়' মটকে দিয়ে মুসলিমদের উচিত হবে উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, জনসভায় এই আহ্বান জানিয়ে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছেন শার্জিল ইমাম নামে এক তরুণ ছাত্র নেতা। "আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারলে তবেই সরকার প্রতিবাদকারীদের কথা শুনতে বাধ্য হবে", এই মন্তব্য করার পর শার্জিল ইমামের বিরুদ্ধে ভারতের অন্তত পাঁচটি রাজ্যে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের হয়েছে। শার্জিল ইমাম নামে জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি (জেএনইউ) ও মুম্বাই আইআইটি-র ওই সাবেক ছাত্রের বিহারের বাড়িতেও গত রাতে পুলিশ হানা দিয়েছে - তবে তাকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি। ভারতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আয়োজিত একটি সমাবেশে শার্জিলের বক্তৃতার ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছিল - যাতে তাকে ওই বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়। শাসক দল বিজেপির নেতারা ওই মন্তব্যের জন্য শার্জিল ইমামকে গ্রেপ্তার করারও দাবি জানাচ্ছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র দুদিন আগে টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছিলেন, "শাহীন বাগের আসল চেহারা চিনে নিন!" ওই ভিডিওতে একটি সমাবেশে বক্তৃতা দিতে দেখা যাচ্ছিল ছাত্রনেতা শার্জিল ইমামকে, যেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, "আসামকে ভারত থেকে আলাদা করে ফেলা আমাদের দায়িত্ব। তাহলেই সরকার আমাদের কথা শুনবে।" দিল্লির শাহীন বাগে এনআরসি-বিরোধী সমাবেশ, যে প্রতিবাদের অন্যতম সংগঠক ছিলেন শার্জিল "আসামে মুসলিমদের কী হাল করেছে তা তো আপনারা জানেনই। এখন যদি আমরা আসামে ফৌজ আর রসদ ঢোকা বন্ধ করতে পারি, সেখানে যাওয়ার রাস্তা কেটে দিতে পারি তাহলেই কেল্লা ফতে।" "আর এটা খুবই সম্ভব - কারণ যে 'চিকেনস নেক' ভারতের সঙ্গে আসামের সংযোগ ঘটাচ্ছে, সেটা তো আমাদের মুসলিমদেরই এলাকা।" পরে অবশ্য জানা গেছে, শার্জিল ইমামের এই ভিডিও দিল্লির শাহীন বাগে নয় - আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে। তবে শাহীন বাগ প্রতিবাদের কোঅর্ডিনেশন কমিটি ইতিমধ্যেই তাদের অন্যতম সংগঠক শার্জিল ইমামের ওই মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তবে তার আগেই একের পর এক রাজ্য ওই মুসলিম ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে দিয়েছে। আসামে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের চার্জ আনার কথা ঘোষণা করে ওই রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, "প্রাথমিকভাবে আমরা সন্তুষ্ট যে শার্জিল ইমামের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে।" স্বাধীন ভারতে এই প্রথম হিন্দু-শিখ-খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের লড়ার ডাক দেওয়া হল বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এরপর উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও দিল্লিতেও দেশদ্রোহের অভিযোগে এফআইআর করা হয় শার্জিল ইমামের বিরুদ্ধে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা রবিবার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের রাতে বিহারের জেহানাবাদ জেলায় শার্জিলের গ্রামের বাড়িতে হানা দেয় যৌথ পুলিশ বাহিনী, যদিও সেখানে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, আলিগড়ে গিয়ে শার্জিল কী বলেছে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তিনি অবশ্য পুলিশকে আশ্বাস দেন, "শার্জিল কোথায় সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই - তবে আমরা পলাতক শার্জিলকে লুকোনোর কোনও চেষ্টাই করব না, বরং তাকে আত্মসমর্পণ করতেই বলব।" শার্জিল ইমামের ওই মন্তব্য যে ভারতে নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনকেই দুর্বল করে দেবে, প্রকারান্তরে তা স্বীকার করে নিয়ে হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও বলেন তিনি কঠোর ভাষায় ও নি:শর্তে এ ধরনের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। মেধাবী ছাত্র শার্জিলের পৈতৃক বাড়ি বিহারের জেহানাবাদ জেলায় এ ধরনের কথা বলাকে 'চরম বোকামো' বলেও বর্ণনা করেন তিনি। বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, শুধু নিন্দাই যথেষ্ট নয় - শার্জিল ইমামের বিরুদ্ধে কঠোর পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি। দলীয় মুখপাত্র নলিন কোহলি আরও বলছেন, "ভারতে আন্দোলনকারীরা কেন তার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে আমন্ত্রণ করে বক্তৃতা দিতে ডেকে আনছেন সেটাও জানা জরুরি।" তবে এখনও পালিয়ে বেড়ানো শার্জিল ইমামের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু। মি কাটজু বলেছেন, শার্জিলের বক্তব্য সমর্থনযোগ্য নয় কিছুতেই - তবে তার পরেও সে কোনও অপরাধ করেছে বলে তিনি মনে করেন না।
news-55914268
https://www.bbc.com/bengali/news-55914268
মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থান: তৃতীয় দিনে প্রতিবাদ দানা বাঁধছে মিয়ানমারে
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের তৃতীয় দিনে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। দেশটির বড় শহরগুলোর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের চিকিৎসক, ফিজিশিয়ানসহ সেবাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
রেড রিবন মুভমেন্ট শুরু করেছে মিয়ানমারের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মীরা। সেনা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অনেকেই তাদের চাকরি ছেড়েছেন। অনেক চিকিৎসক রোগীর কথা বিবেচনায় নিয়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তারা জান্তা সরকারের নতুন মন্ত্রীসভাকে স্বীকৃতি দেবে না বলে জানিয়েছেন। একই সাথে তারা রেড রিবন মুভমেন্ট মিয়ানমার ২০২০ নামে কর্মসূচীও ঘোষণা করেছে। অনলাইন কিংবা অফলাইনে এই কর্মসূচীর সাথে একাত্মতা জানিয়েছে ইয়াঙ্গনের বাসিন্দারাও। তারা নিজেদের প্রোফাইল পিকচার বদলে লাল করেছে কিংবা তিন আঙুল দিয়ে স্যালুট দিয়েছে। এই কর্মসূচীটি মূলত সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্কিত ব্যবসা এবং সেবা পরিহার কর্মসূচী। এছাড়া বাসিন্দারা রাতে মোমবাতি জ্বালানো, রান্নার পাত্র এবং গাড়ির হর্ন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে ধাতব বালতি বাজানোর মাধ্যমে শয়তানের আত্মা তাড়ানোর প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আরো পড়ুন: অনেক এমপিকে নেপিডোতে মিউনিসিপাল বা সরকারি অতিথি ভবনে আটকে রাখা হলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়। তবে সেনা অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি না দেয়ার কারণে অনেক এনএলডির এমপিই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সরকারি অতিথি ভবন ছেড়ে যেতে এই এমপিদের ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ দিয়েছে সামরিক বাহিনী। মিয়ানমারের জায়গিও মার্কেট এলাকায় বিক্ষোভের গুঞ্জন ওঠার পর সেখানে অবস্থান নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। জাতিসংঘে চীনের বিরোধিতা মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আনা নিন্দা প্রস্তাব আটকে দিয়েছে চীন। সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেয় এবং অং সান সু চিসহ কয়েকশ শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে। এর পর থেকে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা কর্মকর্তারা একটি সুপ্রিম কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছে যা মন্ত্রীসভার উপরে থাকবে। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গনে যদিও প্রতিরোধ এবং বেসামরিক নাগরিকদের অসন্তোষ বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে বসে কিন্তু চীনের সমর্থন না করায় তারা কোন যৌথ বিবৃতি দিতে পারেনি। যৌথ বিবৃতি দিতে হলে চীনের সমর্থন দরকার কারণ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার কারণে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে চীনের। বৈঠকের আগে মিয়ানমারে থাকা জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা নেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল সামরিক বাহিনী মেনে নিতে অসম্মতি জানানোর পর এই অভ্যুত্থান ঘটলো। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে, "নির্বাচনের ফলে সু চির দলের জন্য বিপুল ব্যবধানে জয় নিশ্চিত হয়েছিল।" মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আনা নিন্দা প্রস্তাব রুখে দেয় চীন। (ফাইল ফটো।) জাতিসংঘের পদক্ষেপ কেন রুখে দিল চীন? ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এলিয়ট প্রাসে-ফ্রিম্যান বিবিসিকে বলেন, "গ্যাসলাইটিং বা পেছন থেকে নিয়ামক হিসেবে কাজ করার মতোই এই বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে জেনারেলদেরকে চীন স্পষ্ট করে না হলেও জোরালো সমর্থনের আভাস দিচ্ছে।" "চীন এমনভাবে আগাচ্ছে যে মনে হচ্ছে, এটা পুরোপুরি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় যাতে 'মন্ত্রীসভায় রদবদল' দেখা যাচ্ছে। অন্তত চীনের রাষ্ট্রীয় মাধ্যম এভাবেই বিষয়টিকে চিত্রিত করছে।" যদিও জাতিসংঘের এই বিবৃতি তাৎক্ষনিকভাবে কোন ফল বয়ে আনবে না ,তারপরও এটা "আন্তর্জাতিক সুসংহত প্রতিক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। যা আপাতত আসছে না বলে মনে হচ্ছে।" দ্য ডিপ্লোম্যাটের লেখক এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সম্পাদক সেবাস্টিয়ান স্ট্রাংগিও বিবিসিকে বলেন, "আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে চীনের সন্দেহ প্রবণতার সাথে তাদের বর্তমান অবস্থান খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ।" গত কয়েক দিন ধরে চীন বলে আসছে যে, নিষেধাজ্ঞা কিংবা আন্তর্জাতিক চাপ পুরো পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে। পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারকে দূরে ঠেলে রাখার বিষয়টি থেকে কৌশলগত ভাবে সুযোগ নেয় চীন। তার মানে এই নয় যে সেনা অভ্যুত্থানে চীন খুশি, বলেন সেবাস্টিয়ান স্ট্রাংগিও। "এনএলডির সাথে তাদের বেশ ভাল বন্দোবস্ত করা ছিল এবং অং সান সু চির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তারা অনেক বিনিয়োগও করেছে। সামরিক বাহিনীর ফিরে আসা মানে হচ্ছে চীনকে নতুন করে মিয়ানমারের এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে কাজ করবে হবে। এরা ঐতিহাসিকভাবেই চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান।" অং সান সু চি কোথায়? অং সান সু চি যিনি নির্বাচিত সরকারের প্রধান ছিলেন তাকে সোমবার সকালে সামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর আর দেখা যায়নি। তবে তাকে নেপিডোতে তার বাসভবনে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরো অনেকেই আটক রয়েছেন যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, তার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এবং তার ব্যক্তিগত অ্যাটর্নি। তাদেরকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট এবং অং সান সুচি সহ ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দলের যেসব নেতাদের আটক করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মঙ্গলবার সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি-এনএলডি তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে। তারা সামরিক বাহিনীকে গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফল মেনে নেয়ার আহ্বান জানায়। ওই নির্বাচনে এনএলডি ৮০% ভোট পায়। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছে এবং ক্ষমতা নেয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা অভ্যুত্থান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর মানে হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বর্তমান সরকারকে সহায়তা করতে পারবে না, যদিও এর বেশিরভাগ সহায়তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যরাও ক্ষমতা দখলের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। মিয়ানমার, যেটি বার্মা নামেও পরিচিত, সেটিকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সামরিক বাহিনী শাসন করেছে। এদিকে মঙ্গলবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন টেলিভিশন নেটওয়ার্কের পেইজটি বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক। এদিকে রাখাইন ও দক্ষিণের শিন রাজ্যে দোসরা ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতের পর ইন্টারনেট ও ফোরজি টেলি যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি কী? সেনাপ্রধান মিন অং লাইংয়ের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। অর্থ, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রসহ ১১ জন মন্ত্রী ও ডেপুটির পদে রদবদল করা হয়। মঙ্গলবার তার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে মিন অং লাইং আবারো বলেন যে, ক্ষমতা নেয়াটা "অনিবার্য" হয়ে পড়েছিল। সেনা অভ্যুত্থানের পর পর দেশটি শান্তই ছিল। সব বড় শহরগুলোর রাস্তায় টহল দিয়েছে সেনারা। রাতে জারি করা হয়েছিল কারফিউও। মিয়ানমারে সেনা শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অনেক বাসিন্দা এখনো আগের সেনা অভ্যুত্থানের ভয়ঙ্কর স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাড়ির হর্ন এবং রান্নার হাড়ি বাজিয়ে ইয়াঙ্গনের রাস্তায় প্রতিবাদ জানায় স্থানীয়রা। রান্নার হাড়ি বাজিয়ে ইয়াঙ্গনের রাস্তায় প্রতিবাদ জানায় স্থানীয়রা। অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোও নাগরিক প্রতিরোধ কার্যক্রমের ডাক দিয়েছে। তারা ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করে তাদের প্রচেষ্টাকে সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা করছে। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সু চির মুক্তির দাবিতে ৭০টি হাসপাতাল ও মেডিকেল বিভাগের কর্মীরা কাজ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এক নজরে মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ মিয়ানমার যার জনসংখ্যা ৫ কোটি ৪০ লাখ। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড এবং লাওসের সাথে সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের। ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সামরিক সরকার শাসন করেছে দেশটি। যার কারণে নিন্দা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে দেশটি। গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে বছরের পর বছর ধরে প্রচারণা চালিয়ে এসেছেন অং সান সু চি। ২০১০ সালে ধীরে ধীরে ক্ষমতা ছাড়তে শুরু করলেও সামরিক বাহিনীর হাতে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ২০১৫ সালে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে অং সান সু চির ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু দুই বছর পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর সামরিক বাহিনীর নির্মম অভিযানের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায় এবং এ বিষয়টি সু চি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরায়। তবে নিজের দেশে জনপ্রিয়ই ছিলেন সু চি এবং ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনেও তার দল বিপুল জয় পায়। কিন্তু আবারো নিয়ন্ত্রণ নিতে এসেছে সামরিক বাহিনী।
news-56398505
https://www.bbc.com/bengali/news-56398505
ফাহাদ রহমান: ষোল বছর বয়সে যেভাবে দাবার আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছিলেন
১০ বছর বয়সেই ফিদে মাস্টার হন ফাহাদ রহমান। তিনি যখন এই খেতাব পান তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বিরা ছিলেন ৪০ বছরের বেশি বয়সী।
এখন বিশ্বকাপের অপেক্ষায় আছেন তিনি। ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স হয়ে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফাহাদ। বিবিসির ক্রীড়া সংবাদদাতা রায়হান মাসুদ কথা বলেছেন তার সাথে। দাবা নিয়ে আরো দেখুন: অন্ধরা যেভাবে দাবা খেলেন ত্রিশের পর খেলা শুরু করে যিনি দাবার রানী বাংলাদেশের দাবা: সাত-আট বছরের শিশুদের প্রতিপক্ষ ৫০-৬০ বছর
news-47984605
https://www.bbc.com/bengali/news-47984605
ইন্টারসেক্স বা উভলিঙ্গ মানুষ: বাচ্চার লিঙ্গ বিষয়ে যখন ডাক্তার প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকলেন
ক্যাথরিনের সন্তান যখন জন্ম নিলো তখন চিকিৎসক তাঁর বাচ্চার জন্ম সংক্রান্ত কাগজপত্রে সন্তানের লিঙ্গ কী সে প্রসঙ্গে লিখেছিলেন কেবল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
চিকিৎসক ক্যাথরিনের বাচ্চার জন্ম সংক্রান্ত কাগজপত্রে তার সন্তানের লিঙ্গ কী সে প্রসঙ্গে লিখে দিয়েছিলেন কেবল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি। ক্যাথেরিন হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন - যা কেনিয়াতে ইন্টারসেক্স বা উভলিঙ্গ শিশুদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সূচনাকে উৎসাহিত করেছে। ২০০৯ সালের কথা। ক্যাথেরিন (এটি তাঁর ছদ্মনাম) সবে পাঁচদিন হলো তাঁর প্রথম শিশুসন্তানের জন্ম দিয়েছেন নাইরোবিতে নিজের বাড়িতে। কিন্তু শিশুর জন্মের পর থেকেই একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, "আমার বাচ্চার শরীরে কিছু একটা অসামঞ্জস্য ছিল"। ক্যাথেরিন তাঁর প্রতিবেশীকে ডাকলেন এবং বাচ্চাটিকে দেখতে বললেন। ক্যাথেরিন শিশুটির যৌনাঙ্গের দিকে নির্দেশ করলেন এবং প্রতিবেশীটি এগিয়ে এসে দেখতে লাগলেন। কোন রকম পরীক্ষা না করেই তিনি ক্যাথেরিনকে বললেন দুশ্চিন্তা না করতে। এমনকি তিনি আশ্বস্তও করলেন যে তাঁর বাচ্চা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ক্যাথেরিন দ্বিতীয় কারো মতামত নিতে চাইলেন। যৌন নির্যাতন: শিশুদের কীভাবে সচেতন করবেন আফসান চৌধুরীর শৈশবের যৌন নিপীড়নের কষ্টের স্মৃতি এবার তিনি এক আত্মীয়কে খবর দিলেন, যিনি সম্পর্কে তাঁর কাজিন হন - "আমার কাজিন জানতে চাইলো কী সমস্যা। আমি কেবল তাকে বললাম যে যাও আমার বাচ্চাটাকে একটু ভালো করে দেখো"। ক্যাথেরিনের বোন একমত হলেন যে, "কিছু একটার অভাব আছে"। তিনি ক্যাথেরিনকে স্থানীয় হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন। পরদিনই ক্যাথেরিন এবং তাঁর স্বামী গেলেন তাদের স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পাঠয়ে দিলেন কেনিয়াত্তা ন্যাশনাল হাসপাতালে, যেটি দেশটির সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। হাসপাতাল থেকে যে সমস্যা নির্ণয় করা হলো, তা স্তব্ধ করে দিল এই দম্পতিকে। ক্যাথেরিন এবং তাঁর স্বামীকে বলা হলো যে, তাদের বাচ্চাটি ইন্টারসেক্স বা উভলিঙ্গ হিসেবে জন্ম নিয়েছে। শিশুটির শরীরে নারী এবং পুরুষ উভয় ধরনের যৌনাঙ্গ রয়েছে। ডাক্তারি কাগজপত্রে যেখানে শিশুর লিঙ্গ সম্পর্কে লেখার কথা, সেখানে নির্দিষ্ট কোনকিছুর পরিবর্তে চিকিৎসক আঁকলেন একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন। "চিকিৎসকের রিপোর্ট সাথে নিয়ে কেনিয়াত্তা হাসপাতাল থেকে ফেরার পর থেকে আমার স্বামী আমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে"। ক্যাথেরিন এমনকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন তাদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়ে যায়। ক্যাথেরিনের স্বামী চিৎকার করে বলতে লাগলেন যে তাঁর পরিবারের কারো মধ্যে নারী এবং পুরুষ উভয়ের যৌনাঙ্গ থাকার ইতিহাস কোনদিন ছিলনা, সুতরাং কোনভাবেই শিশুটি তাঁর হতে পারে না। "সে আমাকে অপমান করতে থাকে, পতিতা বলে ডাকতে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি বাচ্চাচা তার না হয় তাহলে সে কোথা থেকে এসেছে?" - শান্তকন্ঠে কথাগুলো বলেন ক্যাথেরিন। "ঈশ্বরই সব কিছুর নিয়ন্তা, সব তারই ইচ্ছা"। এরপর তাঁর স্বামী শিশুটির পরবর্তী চিকিৎসার জন্য কোন হাসপাতাল খরচ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দেন। ক্যাথেরিনের কাছে মনে হলো যে, ইন্টারসেক্স শিশুটিকে তাঁর একাই বড় করে তুলতে হবে, এবং ভবিষ্যতের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন তিনি। "আমার খুব নিঃসঙ্গ এবং দ্বিধাগ্রস্ত বোধ হচ্ছিল । একদিন আমি ইঁদুরের ওষুধ কিনে আনলাম, যাতে আমি নিজেকে এবং বাচ্চাটাকে শেষ করে দিতে পারি। সেটা খাবারের সাথে মেশালাম"। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি নিজেকে থামালেন। দৌড়ে গেলেন গির্জায় ধর্মযাজকের সাথে কথা বলতে। ধর্মযাজক ক্যাথেরিনকে আশ্বস্ত করলেন যে সে একাই নয়, তাঁর বাচ্চার মত এমন আরও শিশু এই পৃথিবীতে রয়েছে - তাঁর শিশুটি কোনও স্খলন বা কোনও অভিশাপ নয়। "তিনি আমাকে বলেন যে জীবন চলতে থাকবে। প্রভু আমাকে আশীর্বাদ দেবেন এবং আমি এবং আমার সন্তান - আমরা দু'জনেই বাঁচতে পারবো"। এরপর ক্যাথেরিন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। বাচ্চাটির জন্মের একমাস পর তিনি তাঁর স্বামীকে ত্যাগ করেন এবং বোন ও তাঁর পরিবারের সাথে সেখান থেকে চলে যান। তিনি যথেষ্ট নির্যাতিত এবং অপদস্থ হয়েছেন এবং তিনি চাননি এমনভাবে নিজের এবং সন্তানের জীবন কাটুক। সন্তান জন্মদানের কয়েক সপ্তাহ পরেই ক্যাথেরিন তার কর্মক্ষেত্রে ফিরে যান। তাকে যে বিষয়টা চিন্তায় ফেলেছিল সেটা হলো তার সন্তানের শারীরিক গঠনগত ত্রুটি সংশোধনের অস্ত্রোপচারের পরামর্শ। "ডাক্তার আমায় বলেছিলেন যে আমার বাচ্চার 'পুরুষ হরমোন মেয়ে হরমোনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং সেজন্য তার যোনিপথ আমরা সেলাই করে দেয়ার জন্য অস্ত্রোপচার করবো এবং পুরুষ হরমোন প্রয়োগ করবো'"। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তারি এই পরামর্শের বিরোধিতা করে আসছিলেন ক্যাথেরিন। কিন্তু সন্তান জন্মদানের এক বছর পরে তিনি শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেন এই বিশ্বাসে যে এটা হয়তো তাঁর সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তবে দ্রুতই তাঁর অনুশোচনা তৈরি হলো। জন্মসনদ সংক্রান্ত দ্বিতীয় সঙ্কট কেনিয়াতে কোন বার্থ সার্টিফিকেট পেতে হলে বাচ্চার নির্দিষ্ট কোন একটি লিঙ্গ পরিচয় দিতেই হবে। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তাররা তাঁর বাচ্চার লিঙ্গগত বৈশিষ্ট্যের নির্দেশক ছকে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন। একটি প্রশ্নবোধক চিহ্নের অর্থ হচ্ছে যে তার নামে জন্মসনদ ইস্যু করা হবে না এবং সে আইডি কার্ড কিংবা পাসপোর্ট পাবে না। ক্যাথেরিন জানতেন এইসব কাগজপত্র ছাড়া তিনি তাঁর বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করতে পারবেন না, আর বড় হয়ে তার ভোটদানের কোন অধিকারও থাকবে না। ঘটনাক্রমে তাঁর একজন সহকর্মীকে তিনি বিষয়টি জানান। সেই সহকর্মী জানান যে তাঁর পরিচিত এমন একজন আছেন, যিনি ক্যাথেরিনকে হয়তো সাহায্য করতে পারবেন। এভাবেই ক্যাথেরিনের পরিচয় হয় জন চিগিতির সাথে। ২০১০ সালের শুরুর দিকেই জন চিগিতি কেনিয়ায় বেশ সুপরিচিত হয়ে গেছেন । কারণ এই আইনজীবী একজন ইন্টারসেক্স বা উভলিঙ্গ ব্যক্তি রিচার্ড মুয়াসিয়ার হয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছেন, যাকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। নারী হিসেবে রূপান্তরের জন্য মুয়াসিয়ার করা আবেদন নাকচ করে দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু চিগিতি এরই মধ্যে সুনাম অর্জন করেন, কারণ লোকজন দেখলো যে অন্তত একজন কেউ আছেন যিনি উভলিঙ্গ মানুষদের জন্য তার সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন - আর তা এমন এক দেশে, যেখানে জনগণের মতামত প্রায়ই প্রতিকূল। তৃতীয় লিঙ্গ উভলিঙ্গ বৈশিষ্ট্য নিয়ে শিশুর জন্মকে প্রায়ই অভিশাপ বা পরিবারের জন্য খারাপ কিছু হিসেবে দেখা হয়, এবং যাদের অনেককে শৈশবেই হত্যা করা হয়। ক্যাথেরিন যে তিনটি বিষয় চাইতেন, তা হলো - * তার সন্তানের পরিচয়পত্র, যাতে করে সে স্কুলে যেতে পারে। * মেডিকেল প্রয়োজনীয়তা না থাকলে উভলিঙ্গ শিশুদের সার্জারি প্রতিরোধ করার জন্য একটি আইন। * এবং এ ধরনের শিশুদের পিতা-মাতার জন্য সঠিক তথ্য এবং মানসিক সমর্থন। জন চিগিতি ক্যাথেরিনের প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়ে রাজি হন এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বছর শেষ হওয়ার আগেই তারা কেনিয়ার উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। নিজের সন্তানের পরিচয় সুরক্ষিত করতে ক্যাথেরিন তাঁর বাচ্চাকে নাম দেন 'বেবি এ'। ফলে এই মামলাটি পরিচিতি পায় 'বেবি এ ভার্সেস অ্যাটর্নি জেনারেল, কেনিয়াত্তা ন্যাশনাল হাসপাতাল এবং জন্ম-মৃত্যুর রেজিস্ট্রার' হিসেবে। ২০১৪ সালের যুগান্তকারী এক রায়ে আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয় ক্যাথেরিনের পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাকে জন্মসনদ ইস্যু করতে। একই সাথে অ্যাটর্নি জেনারেলকে এমন একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়, যারা ইন্টারসেক্স শিশুদের জন্য আরও ভালো সহায়তা কিভাবে দেয়া যায় সেই উপায়গুলো খুঁজে বের করবেন। এই টাস্কফোর্স চলতি সপ্তাহে তাদের সুপারিশগুলো অ্যাটর্নি জেনারেলের হাতে তুলে দিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এ ধরণের শিশু লিঙ্গ পরিচয় বেছে নেয়ার বিষয়টি তারা নিজেরাই চূড়ান্ত না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারে বিলম্ব করার কথা একটি সুপারিশে বলা হয়েছে। এছাড়া, কেনিয়াতে ঠিক কত উভলিঙ্গ মানুষ রয়েছে, তা নিয়ে একটি শক্তিশালী জরিপ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। সেইসাথে দাপ্তরিক দলিল-দস্তাবেজে পুরুষ অথবা মহিলার পাশাপাশি ইন্টারসেক্স মার্কার যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। অনেক দেশই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এই টাস্কফোর্সের পরিকল্পনা ভিন্ন - তারা জন্মের সময় থেকেই ইন্টারসেক্স হিসেবে নিবন্ধিত করার চিন্তার কথা বলছে। এমবাগে এনগাংগা এই টাস্কফোর্সের প্রধান। তিনি বলেন, "'বেবি এ'র মামলাটি এক্ষেত্রে প্রেরণাদায়ক"। বর্তমানে ক্যাথেরিন সাবান তৈরি এবং বিক্রি করে জীবিকা চালাচ্ছেন। তাঁর নিকটতম আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবার 'বেবি এ'র চিকিৎসা বিষয়ে সচেতন। তাকে সমর্থনও যোগাচ্ছেন তারা। ক্যাথেরিন বাচ্চাটিকে ধীরে ধীরে বড় করে তুলছেন একটি ছেলে শিশু হিসেবে, যার বয়স এখন ১০ বছর । কিন্তু এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল কিনা, সে নিয়ে সংশয় কাজ করছে তাঁর মধ্যে। কারণ তাঁর সন্তানকে ছেলে হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যময় মনে হয় না। কিন্তু ছেলেকে কখনো এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাও করেননি। সে সবার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারবে কিনা, এ নিয়ে শঙ্কিত তার মা। "সে অন্যদের সঙ্গ পছন্দ করে না, অন্য বাচ্চাদের সাথে তাকে দেখা যাবে না"। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে ক্যাথেরিন অন্য বাবা-মায়েদের উদ্দেশ্যে বলেন: "আপনার যদি উভলিঙ্গ সন্তান থাকে, তাহলে তাকে একা ছেড়ে দিন। যখন সে বড় হবে, তাকে নিজেকেই ঠিক করতে দিন সে সার্জারি বেছে নেবে কি-না"। তাঁর মতে, এমনকি ডাক্তারি পরামর্শ থাকলে তার জন্য গবেষণা দরকার, চিকিৎসকের প্রবৃত্তি বা সংস্কারের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নয়। "কারণ চিকিৎসক ঈশ্বর নন"। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: বাড়ছে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের প্রকোপ, ঝুঁকিতে মধ্যবয়সীরাও ফেসবুকে নারীদের মত প্রকাশ কতটা নিরাপদ? যেভাবে শপথ নিয়েছিল ১৯৭১'এর মুজিবনগর সরকার
news-56362366
https://www.bbc.com/bengali/news-56362366
মিয়ানমার অভ্যুত্থান: মিয়ানমারের ভেতর কী হচ্ছে বিবিসির কাছে তার প্রথম বিবরণ দিলেন ভারতে পালানো পুলিশরা
সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া মিয়ানমারের পুলিশ অফিসাররা বিবিসিকে বলেছেন গত মাসের অভ্যুত্থানে ক্ষমতা গ্রহণ করা সেনাবাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করার পর তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। মিয়ানমারের ভেতর কী ঘটছে তা নিয়ে এই প্রথমবার দেয়া এই সাক্ষাৎকারে বারো জনের বেশি পুলিশ অফিসার বলেছেন তাদের নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করতে বা তাদের ক্ষতি করতে বাধ্য করা হবে এই আশংকায় তারা পালিয়ে গেছেন।
মিয়ানমারের ভেতর কী হচ্ছে তার প্রথম প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ দিয়েছেন দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রথম এই পুলিশ অফিসারদের দলটি ''বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে আমাকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আমি তাদের বলেছিলাম আমি পারব না।'' মিয়ানমারের পুলিশ বাহিনীতে নয় বছর ধরে কাজ করেছেন নাইং। এটি তার আসল নাম নয়, নিরাপত্তার কারণে তার নাম বদলে দেয়া হয়েছে। এখন তার বয়স ২৭। তিনি ভারতের উত্তর পূর্বের মিজোরাম রাজ্যে লুকিয়ে রয়েছেন। তার সাথে আমি কথা বলেছি। পালিয়ে আসা দলটির আরও কিছু পুরুষ ও নারী পুলিশ অফিসারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের বয়স বিশের কোঠায়। তারা বলেছেন সেনা বাহিনীর নির্দেশ মানতে অস্বীকার করার পর তারা তাদের দেশ ও চাকরি ছেড়ে পালিয়েছেন। "আমার আশংকা ছিল সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষদের হত্যা বা ক্ষতি করতে আমাকে বাধ্য করা হবে," বলেছেন একজন অফিসার। ''আমরা মনে করি সামরিক বাহিনীর একটা নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা ভুল কাজ।'' মিয়ানমারের সেনা বাহিনী, যারা পরিচিত তাৎমাডো নামে, তারা পয়লা ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গণতন্ত্রপন্থী হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে লাগাতার প্রতিবাদ করছে। অভ্যুত্থানের পর থেকেই হাজার হাজার প্রতিবাদকারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। এবং তাদের ওপর ক্রমশই অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ৫০জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। মিয়ানমারের পশ্চিমে একটি শহরে পুলিশে নিচু পদমর্যাদার পুলিশ কর্মী নাইং। তিনি বলছেন ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ওই শহরে বিক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। তিনি বলেছেন বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে দুবার তিনি গুলি চালাতে অস্বীকার করার পর তিনি পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। "আমার বস-কে আমি বলেছিলাম আমি ওদের ওপর গুলি চালাতে পারব না এবং আমি জনগণের পক্ষ নেব। "সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এতে খুব স্বচ্ছন্দ ছিল না। তারা দিনে দিনে ক্রমশ আরও নির্দয় হয়ে উঠছিল।'' আমি যখন নাইং-এর সাথে কথা বলছিলাম, তখন তিনি তার ফোন বের করে আমাকে তার পরিবারের সদস্যদের ছবি দেখালেন- তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে- একজনের বয়স ৫ আর অন্যজনের বয়স মাত্র ছয় মাস। "তাদের সাথে আমার হয়ত আর দেখা হবে না, আমি চিন্তিত," তিনি আমাকে বলেন। আরও পড়তে পারেন: এই পুলিশদের স্বদেশভূমি মিয়ানমার থেকে দশ মাইলেরও কম দূরত্বে ভারতের উত্তর পূর্বে মিজোরাম রাজ্যে বিবিসি তাদের সাথে দেখা করে আমি তার ও দলের বাকিদের সাথে দেখা করি অজ্ঞাত একটি স্থানে, যেখান থেকে দেখা যায় ভারতের উত্তর পূর্বের পাবর্ত্য রাজ্য মিজোরামের পাহাড়ের মাথা ও উপত্যকা এলাকাগুলো। যেখানে বসে কথা হচ্ছিল সে এলাকাটি তাদের স্বদেশ ভূমি মিয়ানমার থেকে ১০ মাইলেরও কম দূরত্বে। মিয়ানমারের ভেতরে আসলে কী হচ্ছে তার প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ এই প্রথমবারের মত বর্ণনা করলেন দেশটি থেকে প্রথম পালানো এই পুলিশ কর্মীরা। তারা বলছেন মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামী বেসামরিক মানুষ যে আইন অমান্য আন্দোলন (সিডিএম) গড়ে তুলেছে, তাতে ক্রমশই যোগ দিচ্ছে আরও পুলিশ অফিসাররা। তারাও সেই যোগদানকারী দলেরই অংশ। তবে এই পুলিশ অফিসাররা আমার কাছে যে দাবি করেছেন, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা বিবিসির পক্ষে সম্ভব হয়নি। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যে দমনপীড়ন চলছে তাতে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, আমেরিকা এবং আরও বেশ কিছু দেশ। তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তবে সামরিক বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আনা সমালোচনা নাকচ করে দিয়েছে এবং বলেছে তাদের ক্ষমতা গ্রহণের পর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং দেশটিকে একঘরে করা হয়েছে তা মোকাবেলা করতে তারা প্রস্তুত। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার থেকে শতাধিক লোক মিজোরামে পালিয়ে গেছে। মিয়ানমারের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার থেকে শতাধিক লোক মিজোরামে পালিয়ে গেছে। হতুৎ - তার আসল নাম নয়- বলেছেন সামরিক জান্তা যেদিন নির্বাচিত সরকারকে হঠিয়ে ক্ষমতা দখল করল, সেই রাতের কথা তার মনে আছে। অভ্যুত্থানের আগে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং তাদের পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই সেনা চৌকি বসানো হয়েছিল। ''এর কয়েক ঘন্টা পরে আমরা শুনলাম সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা হাতে নিয়েছে।" হতুতের বয়স ২২। তিনি বলছেন তাকে এবং অন্য পুলিশ অফিসারদের প্রত্যেকের সাথে একজন করে সেনা সদস্য দেয়া হলো এবং তারা জোড়া বেঁধে রাস্তা টহল দিতে শুরু করল। যেসব গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারী থালা বাসন বাজিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল তাদের গ্রেফতারের হুমকি দেয়া হলো। আরও পড়তে পারেন: হুতুতের বাড়ি মিয়ানমারের বড় একটি শহরে। তিনি বলেছেন তাকেও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে বলা হয়। কিন্তু তিনি সেই দাবি অগ্রাহ্য করেছিলেন। ''দায়িত্বে থাকা সেনা অফিসার আমাদের নির্দেশ দিলেন পাঁচজনের বেশি লোককে একসঙ্গে আসতে দেখলেই গুলি করবে। মানুষজনকে পেটানো হচ্ছিল। আমি রাতের পর রাত ঘুমাতে পারিনি। ''যখন দেখলাম নিরাপরাধ মানুষকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলা হচ্ছে, আমার বিবেক তখন এই অন্যায় অনাচারে সায় দিতে রাজি হয়নি।" হতুত বলেছেন, তিনি যে পুলিশ ফাঁড়িতে কাজ করতেন সেখান থেকে তিনিই প্রথম পালিয়ে গেছেন। তিনি পালান মোটরবাইকে চেপে । তিনি বলেন ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে তিনি যখন গ্রামের পর গ্রাম পার হচ্ছিলেন তখন তিনি খুবই ভয়ে ছিলেন। ভারতে পালিয়ে যাওয়া যাদের সাথে আমরা কথা বলেছি তারা তিয়ায়ু নদী পার হয়ে ভারতে ঢুকেছে। ২৫০ মাইল বিস্তৃত এই নদী সেখানে ভারত ও মিয়ানমারের জলসীমা। মিয়ানমার থেকে পালানোরা সীমান্তবর্তী এই তিয়ায়ু নদী পার হয়ে ভারতে ঢুকছেন পুলিশ অফিসারদের যে দলটির সাথে আমরা কথা বলেছি তাদের ধারণা আগামী কয়েকদিনে আরো পুলিশ অফিসার এই পথে ভারতে ঢুকবেন। গ্রেস, যার নাম আমরা বদলে দিয়েছি, যে দুজন নারী পুলিশ সদস্য মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতে এসেছেন তাদের একজন। তিনি বলেছেন প্রতিবাদকারীদের ধরপাকড় করতে সৈন্যদের লাঠি এবং রাবারের বুলেট ব্যবহার করতে তিনি দেখেছেন। তিনি একটি ঘটনায় এক দল বিক্ষোভকারীর ওপর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে দেখেছেন, যে দলে শিশুরাও ছিল। "ওরা আমাদের বলেছিল বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে, আমাদের বন্ধুদের ধরপাকড় করতে, কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি," তিনি বলেন। "পুলিশের কাজ আমরা ভালবাসি, কিন্তু এখন সব নিয়মকানুন বদলে গেছে। আমরা এই নতুন ধারায় কাজ করতে পারছি না।" গ্রেস (আসল নাম নয়) বলছেন পরিবারকে ফেলে রেখে পালাতে তিনি বাধ্য হয়েছেন- তার কোন বিকল্প ছিল না চব্বিশ বছরের এই তরুণী বলছেন মিয়ানমারে তার পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে আসার বিষয়টি নিয়ে তিনি মনের সঙ্গে অনেক লড়াই করেছেন। বিশেষ করে তার মাকে ছেড়ে আসতে, যিনি হার্টের গুরুতর সমস্যায় ভুগছেন। "আমার বাপমা বৃদ্ধ হয়েছেন, তারাও ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের বয়স কম। আমাদের পালানো ছাড়া গতি নেই। তাই তাদের ফেলেই পালাতে হয়েছে।" মিয়ানমার ভারতকে বলেছে দুই দেশের "বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে" তারা যেন পালিয়ে যাওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যর্পণ করে। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী যোরামথাঙ্গা বলেছেন যারা সেখানে পালিয়ে গেছেন তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া হবে। ভারত সরকার পরবর্তীতে কী করবে সে সিদ্ধান্ত জাতীয় পর্যায়ে নেয়া হবে। স্থানীয় মানুষরা আমাদের বলেছেন তারাও ধারণা করছেন আগামী কয়েকদিনে মিয়ানমার থেকে পালানো আরও মানুষ মিজোরামে ঢুকবে। শুধু যে পুলিশ অফিসাররাই ভারতে পালাচ্ছেন তা নয়, আমাদের সাথে দেখা হয়েছে এক দোকানীর যিনি মিয়ানমার থেকে মিজোরামে পালিয়ে গেছেন। গণতন্ত্রকামীদের আন্দোলনে যোগ দিতে অনলাইনে সমর্থকদের উৎসাহ দেবার অভিযোগে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করার পর তিনি পালান। ইয়াঙ্গনের রাস্তায় টহলরত সেনা পুলিশ "আমি স্বার্থপরের মত পালিয়ে আসিনি," তিনি বলেন। তিনি বলেছেন কেন তিনি সর্বস্ব ফেলে পালিয়ে আসার ঝুঁকি নিয়েছেন। "দেশের ভেতর সবাই উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। "আমি এখানে নিরাপদ, আমি এখান থেকেই এই আন্দোলনকে সমর্থন করতে যা করা দরকার করব। আমি কাজ করব এপাশ থেকে।"
news-44486466
https://www.bbc.com/bengali/news-44486466
সাফা বাউলার: এক ব্রিটিশ কিশোরীর জঙ্গি হওয়ার গল্প
যুক্তরাজ্যের প্রথম ফিমেল টেরর সেল এর অংশ হয়ে হামলার ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলো কিশোরী সাফা বাউলার। আর এ ঘটনাটি থেকেই বের হয়ে আসে একটি সত্যিকার অকার্যকর হয়ে পরিবারের কার্যক্রম।
সাফা বাউলার ২০১৭ উত্তর পশ্চিম লন্ডনের একটি বাড়িতে সশস্ত্র পুলিশ গ্যাস নিক্ষেপ করতে করতে প্রবেশ করে এবং পরে পুলিশ যখন ওখানে ঢুকে তখন ২১বছর বয়সী একজন গুলিবিদ্ধ হয়। ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন আর ক্ষুব্ধ কণ্ঠে চিৎকার করে রাস্তার দিকে যাচ্ছিলেন ফার্স্ট এইডের জন্য। "আমাকে স্পর্শ করোনা।আমার শরীর পোশাক স্পর্শ করোনা" তিনি বলছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছিলো। এই তরুণীই ওই অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো। সেখান থেকে প্রায় ৫০ মাইল দুরে রিজলেইন এর মা মিন ডিস আটক হন এক যুব কারাগারের সামনে থেকে। সেখানেই বিচারের অপেক্ষায় বন্দী ছিলো সাফা তখন তার বয়স মাত্র সতের। সাফার বোন ও মাও ততক্ষণে তার সাথে নিরাপত্তা হেফাজতে যাওয়ার পথে এবং তারা সবাই অভিযুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রথমবারের মতো মেয়েদের একটি দলের সন্ত্রাসী পরিকল্পনার ঘটনায়। অভিযান শেষ হয় সাফা বাউলারকে যখন উইটনেস বক্সে নেয়া হয় তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তখন সে পুরোপুরি পেশাদার একজন শিক্ষার্থী। মিনিস্কার্ট, টপ ও কার্ডিগান পরিহিত সাফার চুলে তখন হালকা রং করানো। সে ছিলো বিনয়ী কিন্তু দৃঢ় এবং কথা বলছিলো ধীরে কিন্তু স্পষ্ট করে। অথচ এক বছর আগে তার আটকের সময় তার পরনে ছিলো রক্ষণশীল মুসলিম পোশাক। রিজলেইন ও সাফা বাউলার টেমসের তীরবর্তী একটি এলাকায় বড় হচ্ছিলেন যেটি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সদর দপ্তরের কাছেই। তাদের মরক্কো-ফরাসী বাবা মায়ের মধ্যে ভাঙ্গন ধরেছিলো অত্যন্ত তিক্ততার মধ্য দিয়ে। তখন সাফার বয়স মাত্র ছয়। অবশ্য বাবার সাথে তার সম্পর্ক ছিলো ভালো। পরে বিচারের সময় সে তার মাকেই অভিযুক্ত করে সহিংসতা ও প্রতিহিংসার জন্য। মিনা মগ ছুড়ে মারতো কিংবা রড ছুড়ে মারতো কিন্তু পরদিন এমন আচরণ করতো যে কিছুই হয়নি। আর বলতো সে তার সন্তানদের গভীরভাবে ভালোবাসে। মেয়েদের সাথে মা মিনা ডিচ মায়ের শিক্ষা পরিবারটি খুব বেশি ধর্মান্ধ ছিলোনা। কিন্তু সন্তানেরা যখন বড় হচ্ছিলো তখন মিনা ইসলামের চরমপন্থি ব্যাখ্যা গুলো গ্রহণ করতে শুরু করেন। এটি তিনি করছিলেন কোন সত্যিকার ধর্মীয় নির্দেশনা ছাড়াই অনেকটা অনলাইন থেকে। তিনি তার মেয়েদের পর্দার কথা বলতেন। যখন দেখলেন ১৬ বছর বয়সী রিজলাইন অনলাইনে একজনের সাথে কথা বলছে ও পশ্চিমা পোশাক পড়ছে তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি তার কন্যাকে প্রহার করেন এবং রিজলাইন দৌড়ে পালায়। সাফা যখন ফোনে তার স্কুলের ছেলেদের সাথে কথা বলতো তখন তার মা ব্যথিত হতো। তিনি ফোন কেড়ে নিতেন ও মেয়েকে ইসলামি রক্ষণশীল পোশাক পরাতেন। মায়ের চাপে এক পর্যায়ে রিজলাইন মায়ের মতাদর্শ গ্রহণ করতে শুরু করে। অন্যদিকে সাফার জীবন বিপর্যয়ে পড়ে ১৪ বছর বয়সেই। তার টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। ফলে সারাজীবনই তাকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হবে। কিন্তু বিচারের সময় সে আদালতে বলে যে পরীক্ষা নিরীক্ষায় এ ধরনের ফল আসায় সে বেশ খুশীই হয়েছিলো। "আমি মায়ের কাছে গুরুত্ব পেতে শুরু করলাম যা আমার দরকার ছিলো। সে আমাকে ছোট যুবরাজ্ঞীর মতো যত্ন করতো"। কিন্তু একমাস পর সে নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ে তার করণীয় শিখে যায়। তাকে বারবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কিন্তু তার বাড়িটি হয়ে উঠে ধর্মীয় বক্তৃতার কেন্দ্র অথচ সেখানে সন্তানদের দেখাশোনা বা অভিভাবকত্বের বিষয় ছিলো কমই। মিনা ডিচ ২০১৪ সালের ২৯শে অগাস্ট সাফা পালায়। "ঘর আমার জন্য সঠিক জায়গা নয়," এই নোট সে লিখে যায় যাওয়ার সময়। কিন্তু এই পালানো দীর্ঘস্থায়ী হয়না, তাকে পাওয়া যায় স্থানীয় একটি পার্কে। সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা ২০১৪ সালে পরিবারে যখন চরম হট্টগোল তখন সাফার বড় বোন রিজলাইন সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে সাফা ও তার বড় ভাইয়ের ফোন পেয়ে পুলিশ তাকে থামায়। এরপর রিজলাইনকে ইস্তাম্বুল থেকে ফেরত আনা হয়। পরে সে স্থিতাবস্থা অর্জন করা পর্যন্ত পুলিশ ও সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়টি মনিটর করে। কিন্তু বিচারে সাফা বলেছে রিজলাইনকে তার মা এক লোকের সাথে বিয়ে দেন যে তার মাত্র পাঁচ দিনের পরিচিত ছিলো। এরপর একটি বাচ্চা হওয়ার পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। ওদিকে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ায় সাফাকেও কিছুটা স্থিতিশীল মনে হচ্ছিলো কিন্তু এ নিয়ে সে খুশী ছিলোনা। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিস অ্যাটাকের ঘটনা তার ওপর প্রভাব ফেলে। পালানোর চেষ্টা করেছিলেন রিজলাইন সিরিয়ার নিজস্ব ধরনের ইসলামিক স্টেট সম্পর্কে তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং একজন ভালো মুসলিম হতে করণীয় সম্পর্কে তার মায়ের বক্তৃতা থেকে জানতে চাইতেন মুসলিম হিসেবে একে সহায়তা করা তার দায়িত্ব কিনা। অনলাইনে তিনি একজন নারীর সাথে যোগাযোগ করেন যিনি রাকায় মেয়েদের রিক্রুট করছিলেন। ওই নারী ছিলেন প্রথম ইংরেজি ভাষী নারী যিনি আইএসের হয়ে প্রচারণা চালাতেন। মূলত তার মাধ্যমেই শতশত নতুন মানুষের সাথে সাফার যোগাযোগ তৈরি হয়। "এটা ছিলো বিশেষ কিছু ও এক্সাইটিং", সে বিচারের সময় বলে কারণ স্কুলের বন্ধুদের সাথে বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিলোনা তার। তাই নতুন বন্ধু পাওয়া ছিলো আনন্দের। এর মধ্যে একজন মানুষ তার জীবন পাল্টে দেন। তার নাম নাভিদ হুসেইন যিনি ২০১৫ সালে তার এক বন্ধুর সাথে সিরিয়া যান। তারা কখনো দেখা করেননি কিন্তু অনলাইনেই রোমান্স উপভোগ করতে থাকেন। নাভিদ হুসেইন নাভিদ রাকায় তার ব্যস্ত জীবনের কিছু ছবিও পোস্ট করেন। যুদ্ধের কোন ছবি ছিলোনা। কিন্তু সে সাফাকে এমন ভয়াবহ ছবি পাঠান যেখানে তিনি প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এমন একজনের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। রিক্রুটাররা যে বলেন ওখানে জীবন চমৎকার সেটি তিনি নিশ্চিত করেন নানাভাবে। আর এগুলো সবই তিনি করেছেন একজন তরুণীকে প্রলুব্ধ করার জন্য। সাফা তার সাথে চ্যাট করেছেন দিনে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। "তিনি ছিলেন খুব যত্নশীল, মিষ্টি ও প্রাঞ্জল। এই প্রথম কোন পুরুষের কাছ থেকে এ ধরনের গুরুত্ব পাচ্ছিলাম"। ২০১৬ সালের অগাস্টে সাফা তখন মরক্কোতে দাদা বাড়িতে। এক গভীর রাতে নাভিদ হুসেইনের সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তার কথা হয়। হুসেইন তাকে লিখেন, "আমি তোমাকে ভালোবাসি। মিস করি। স্পর্শ করতে চাই এটি নিশ্চিত হতে যে তুমি সত্যি কেউ এবং আমি কোন স্বপ্ন দেখছিনা"। নাভিদ এ ছবিটি সাফাকে পাঠিয়েছিলেন জবাবে সাফা লিখেন, "আমিও"। তারা একে অপরকে চুমু ছুড়ে দেন এবং সিরিয়ায় একে অন্যের সাথে সাক্ষাত করার এবং শত্রুর সামনে দুজনে একসাথে নিজেদের উড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সাথে নাভিদ হুসেইন বোমাসহ বেল্ট পরিহিত নিজের একটি ছবি দেন সাফাকে। "বেল্ট তোমাকেও পরতে হবে। পিন খুলে ফেলতে কোন দ্বিধা করোনা। কোনো কাফিরের জীবনের চেয়ে তোমার সম্মান বড়", নাভিদ লিখে সাফাকে। "এই পিন কি আমাকে নিয়ে যাবে?" সাফা জানতে চায়। নাভি জবাবে বলে, " হ্যাঁ সোজা উড়িয়ে নেবে। আমারটায় পাঁচ সেকেন্ডের টাইমার দেয়া আছে"। বিস্ফোরক বেল্টসহ নাভিদ সাফা হাসির একটি ইমোজি পাঠায় এবং বলে, "কখন তুমি এগুলোর ব্যবহার আমাকে শেখাবে আল্লাহর ইচ্ছায়?" তার বিচারের সময় প্রসিকিউটাররা বলেন যে এই আলোচনা ছিলো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের একটি প্রস্তুতি। একটি বিবাহ এই জুটির সম্পর্ক এগিয়ে চলে। মেসেজিং অ্যাপে একটি গোপন অনুষ্ঠান হয়। যেখানে সাফা, হুসেইন, আইএস এর একজন শেখ ও একজন কথিত অভিভাবক একসাথে অনলাইনে আসেন। টেক্সট বার্তা লিখে লিখে ১৬ বছর বয়সী সাফা বাউলার নাভিদ হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আবার যখন যুক্তরাজ্যে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তখন সব বার্তাই তিনি ডিলিট করে দেন গোপনীয়তার স্বার্থে। সাফা বিচারকদের বলেন সে তার বোন ২০১৬ সালেই সিরিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যেই তিনি হুসেইনকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। দু বোনই যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিরিয়া যাওয়ার বিষয়ে একমত ছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসেন এবং মরক্কো থেকে ফেরার সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। পুলিশ তার ফোন ও পাসপোর্ট জব্দ করে। আটকের পর রিজলা্‌ইন সেখানে নাভিদ হুসেইনের সাথে কথা বলেছেন ও সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেন। কিন্তু বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখেন। এরপর গোয়েন্দা সংস্থার তার দিকে নজরদারি আরও বাড়িয়ে দেয়। এমআই ফাইভ সাদা পোশাকে একটি টীমও মোতায়েন করেন এবং তারা অনলাইনে উগ্রপন্থী হিসেবে অভিনয় করেন। তাদের দায়িত্ব ছিলো যত বেশি সম্ভব তথ্য হুসেইনের কাছ থেকে বের করে আনা। হুসেইনের কাছে তাদের পরিচয় ছিলো আবু মারিয়াম ও আবু সামিনা। তারা যুক্তরাজ্যে হামলা সংগঠনের প্রস্তাব দেয়। এ অভিযানের লক্ষ্য ছিলো হুসেইন ছাড়াও আর কারা আছে সেটি বের করা। ওদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুসেইন এমআইফাইভ কে উদ্দেশ্য করে বার্তা দেয়। হুসেইন সম্ভাব্য টার্গেটের একটি তালিকা দেয়। যার মধ্যে লন্ডন জাদুঘরও ছিলো। ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে টার্গেট করার চক্রান্ত হচ্ছিলো কিন্তু সে বলে রাকার আইএস কমান্ডাররা সহযোগিতা করতে পারবে যদিও সে স্বেচ্ছাসেবকদের চিনতে পারে। কমপক্ষে পাসপোর্টের কপি, রেকর্ড করা বার্তা-- যেটা হামলার পর প্রচার করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই এমআইফাইভ সেটি দিতে পারেনি। "ভাই আমরা একা আমাদের মিশনে। দু:খজনকভাবে এখান থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যাবেনা। কারণ দ্যা স্টেট (আইএস) জানেনা তোমরা কারা এবং তারা ভেরিফাই ও করতে পারেনি। তাই আল্লাহকে বিশ্বাস করে আমিই তোমাদের জন্য একমাত্র সহযোগিতাকারী।" হুসেইন এরপর আরও সহযোগিতার অফার দেয় যদি গোপনে কাজ করার অফিসাররা অস্ত্র ও বোমার ব্যাক প্যাক নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। হুসেইন জানায় আরও দুই 'ভাই' হামলার দিন যোগ দেবে। তাই এমআইফাইভ বিষয়টি নিয়ে আরও তথ্য পেতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ওই দুই ভাই সম্পর্কে। ব্রিটিশ মিউজিয়াম এই সময়ে হুসেইন বুঝতে পারেন সাফার পাসপোর্ট নেই ও তার সিরিয়া আসার পরিকল্পনা নেই। তাই তিনি যুক্তরাজ্যেই হামলার বিষয়ে তাকে প্রলুব্ধ করতে থাকে। যে বার্তা সাফা ও গোপনে থাকা গোয়েন্দাদের তিনি দেন তাতে গ্রেনেডকে উল্লেখ করা হয় আনারস হিসেবে। হুসেইন বিশ্বাস করতে শুরু করে যে এমআইফাইভ ভাইয়েরা অস্ত্র সহযোগিতা দেবে। প্রসিকিউটররা বলেন সাফা বাউলার হুসেইনের পরিকল্পনার অংশ হতে একমত হয়েছিলেন এবং তিনিই ছিলেন গোপন থাকা 'দুই ভাইয়ে'র একজন। এমআইফাইভ সদর দপ্তরের সামনে সেলফি তুলেছিলেন সাফা ২রা এপ্রিল হুসেইন গোপন পরিচয়ে থাকা কর্মকর্তাদের চাপের মুখে তার পরিকল্পনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশ করেন। " ব্রাদার ৪ আমার পরিবার"। যদিও এমআইফাইভ জানতো যে চার নাম্বার ভাই হুসেইনের আসল ভাই নয়। তার নাম ছিলো নাদিম এবং সে ইতোমধ্যেই ইসলামিক স্টেটের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বন্দী ছিলো। তাই সাফার দিকেই দৃষ্টি গেলো তাদের। পরদিন সন্ধ্যার সময় হুসেইন সাফাকে জানায় যে সে নামাজ যাচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খবর আসে যে হুসেইন নিহত হয়েছে যদিও খবরটি নিশ্চিত করা যায়নি। পরে অবশ্য তারা নিশ্চিত হয়ে যায়। পরে বার্তা আসে। এমআইফাইভের বাইরে সিসিটিভিতে সাফা "সালাম আমি আবু নাদিম। আবু উসামার ভাই ও আমির। বোন, আমি তোমাকে একটি চমৎকার সংবাদ দিচ্ছি যে আবু উসামা শহীদ হয়েছে। আল্লাহ তাকে স্বর্গে গ্রহণ করুন।এখন থেকে তোমাকে কিছু করতে হবেনা- যতক্ষণ না আমি আবার যোগাযোগ করি"। এর মধ্যেই বাউলার পরিবারের মধ্যে এমআইফাইভের একটি রেকর্ডিং ডিভাইস রাখা ছিলো। আদালতে যখন সেটি বাজানো হয় তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সাফা আর তার মা চিৎকার করে বলতে থাকে যে , "আল্লাহ মহান"। এর মধ্যেই সাফা তার মায়ের কাছে তার সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে ও তার মাও নাভিদ হুসেইনের সাথে ফোনে কথা বলেন। সাফার গ্রেফতার পরদিন আবু নাদিম (গোপন পরিচয়ে থাকা গোয়েন্দা কর্মকর্তা) সাফার সাথে আবারো যোগাযোগ করে এবং হুসেইনের সাথে তার পরিকল্পনার বিষয়ে আরও জানতে চায়। এই বক্সে করেই সাফাকে ফোন পাঠিয়েছিলো নাভিদ জবাবে সে জানায় যে তাকে বিস্তারিত জানানো হয়নি। "আমি জানিনা কত দ্রুত আমি প্রভুর কাছে যাবো। সে আমাকে কয়েকটি বিষয় বলেছে তোকারেব (একটি রাশিয়ান অস্ত্র) ও আনারস সম্পর্কে"। "আর সে একটি স্থানের নাম বলেছে"। সাফা বাউলার আটক হয়েছেন এবং সন্ত্রাসী ঘটনার প্রস্তুতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তদন্তকারীদের আরও জানা প্রয়োজন যে আর কারা এর সাথে আছে"। তার ফোন কলগুলো মনিটর করা হয়েছে। সেখানে একবার সে তার মায়ের কাছে জানতে চেয়েছে যে পুলিশ তার বালিশ কি করে পেলো যেখান তার গোপন ফোন ছিলো। মায়ের কাছে সে জানতে চেয়েছে যে তার বালিশটি ফেলে দিয়েছে কি-না। পরে তার মা জানায় যে সেটি পুলিশ নিয়ে গেছে। মায়ের কয়েকজন জঙ্গি বন্ধুর সাথে সাফা (বিচারে উপস্থাপিত তথ্য থেকে) টি পার্টি প্রসিকিউটাররা আদালতে বলেছেন সাফা তার মা ও বোনকে মিশন শেষ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সেখানে তারা হামলার কোড দিয়েছিলেন 'টি-পার্টি' ও 'কেক'। পুলিশ অভিযান চালানোর তিন দিন আগে রিজলাইন তার বোনের সাথে কথা বলেন যার রেকর্ডও আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে নানা কথার মধ্যে সাফা বলে, "এই বৃহস্পতিবার? তুমি সিরিয়াস?" রিজলাইন বলে, "হ্যাঁ"। এই কথোপকথনই বড় প্রমাণ হিসেবে এসেছে রিজলাইন বাউলার ও মিনা ডিচের বিরুদ্ধে। রিজলাইন ও তার মা ওয়েস্ট মিনিস্টার এলাকাতেও গিয়েছিলেন হামলার লক্ষ্য ঠিক করতে। তারা ছুড়ি কিনেছিলেন কিন্তু পরে বড় একটি ফেলেও দেন। মিনা এরপর কেন্টে কারাগারে গিয়ে সাফার সাথে কথা বলেন। আর রিজলাইন তার বন্ধু খাওলা বার্গহুটির সাথে দেখা করে। খাওলাকে পরে রিজলাইনের প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশকে না জানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। রিজলাইনের ঠিকানায় পাওয়া ছুড়ি কোন নেতা নেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাউন্টার টেররিজমের সিনিয়র ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর ডিন হেইডন বলেছেন বাউলার পরিবার নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তার টীম সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। "পরিবার হিসেবে এটি ছিলো অকার্যকর। তাছাড়া নিরাপত্তা ইস্যু ছিলো"। পুলিশ পরিবারে কোন নেতা আছে এটি চিহ্নিত করতে পারেনি। এমনকি মিনা কখন হুমকি হয়ে উঠলো তাও বোঝা যায়নি। যদিও তার কন্যা বলেছে যে তার মা আই এস সম্পর্কিত নানা কিছু অনলাইনে ডেভেলপ করেছে। তারপরেও সম্ভবত মিনা সাফাকে বড় কিছুতে জড়িত হতে বাধাই দিয়েছে। সাফা বলেছে নরকের ভয়েই সে বেশী ধর্মীয় হতে চেয়েছে। আদালতে প্রথম বার এর মধ্যে বিচার শুরুর পর সাফা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত একজন নারী। "কারাগারে আসার পর ভিন্ন ধরনের নানা ব্যক্তির সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আমি শিখছি কিভাবে ভালো মানুষ হতে পারি"। বিবিসি বুঝতে পারছে ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তি পেতে সাফা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে অপরাধ থেকে মুক্ত। পুরো মামলাতে সাফার আত্মপক্ষ সমর্থন ছিলো সাধারণ। সে ব্যবহৃত হয়েছে। মা ও বড় বোন দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছে। যদিও বিচারকরা দেখছেন সে সিরিয়া যেতে চেয়েছে সক্রিয়ভাবে এবং যুক্তরাজ্যেও হামলা চালাতে চেয়েছে। এমনকি আটক হওয়ার পরেও তার মা ও বোনকে সেজন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন তার কারাদণ্ডের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
news-44030355
https://www.bbc.com/bengali/news-44030355
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের দলগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ছে কেন
বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কিছু সন্দেহভাজনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের ধরার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে সেখানে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান আরও জোরদার করার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
পাহাড়ের পরিস্থিতি আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা হত্যাকাণ্ড এবং পরদিনই আরও পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা পার্বত্য এলাকায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পাহাড়িদের মধ্যে হতাশা থেকে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে। রাঙামাটিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে সেখানকার প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, কিছু সন্দেহভাজনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে এবং তাদের ধরার জন্য পার্বত্য এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো যৌথভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে। মি: খান মনে করেন, পাহাড়ি দু'টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব থেকে সর্বশেষ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। "এটাতো তাদের নিজেদের দুই গ্রুপের মারামারি, এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে তা অনুমান হচ্ছে। সন্দেহভাজন যাদের শনাক্ত করতে পেরেছি, তাদের ধরার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।" তিনি আরও বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী সবসময় জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন। এই ঘটনায়ও উনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে অভিযান চালিয়ে এই অস্ত্র উদ্ধার এবং এদের ধরা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে যা যা করার আমরা করবো।" রাঙামাটির নানিয়ারচর গত কয়েক মাস ধরেই পার্বত্য অঞ্চলে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রাঙামাটির নানিয়ারচরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাহাড়িদের দু'টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বকে দায়ী করছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ড পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য চুক্তি বিরোধী মহলের দীর্ঘদিনের তৎপরতার অংশ। "এই হত্যাকাণ্ড আকস্মিক আমি বলবো না। পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন শান্তিচুক্তি হয়, তখন থেকেই একটি মহল এর বিরোধিতা করেছে। তাদের তৎপরতা আছেই। এছাড়া এখনকার ঘটনাগুলোর পিছনে বাইরের যে উস্কানি আছে, এবং বাইরের কোন কোন সংস্থা এর মধ্যে সম্পৃক্ত, এতে আমার কোন সন্দেহ নাই।" আরো পড়ুন: বাল্য বিয়ে ঠেকানোর মোবাইল অ্যাপ এলো বাংলাদেশে ভারতে দলিত হত্যার কিছু কাহিনি প্রয়োজনে আসাদকে হত্যার ইঙ্গিত ইসরায়েলি মন্ত্রীর জানা যাবে বজ্রপাতের পূর্বাভাস শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রবণতা দূর করবেন কিভাবে? ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় পাহাড়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির আধিপত্য ছিল। চুক্তির পরে জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ নামের একটি দল গঠিত হয়। এখন চুক্তির পর বিশ বছরে আঞ্চলিক এই দলগুলো নিজেরা আরও বিভক্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সদস্য নিরুপা দেওয়ান মনে করেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরগতির কারণেই পাহাড়ে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়েছে। "চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা। একারণে তাদের মধ্যে কোন্দলটা বেড়ে গেছে। এবং তারা মনে করছে, আসলে এটা ভুল হয়েছিল। তাদের মধ্যে বিভিন্ন দল হয়ে গেছে। আমি বলবো, হতাশা থেকে এমনটা হয়েছে।" যদিও চুক্তির বেশিরভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে সরকার দাবি করে থাকে। তবে পার্বত্য এলাকার এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এইচ টি ইমাম বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত রেখে তা আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত যেমন সরকার নিয়েছে, একইসাথে রাজনৈতিক দিক থেকে সরকার চুক্তির পক্ষের পার্বত্য এলাকার নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজবে। "এটি গুরুতর বিষয়। যথেষ্ট উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব শক্ত অবস্থানে গিয়ে শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এছাড়া সেখানকার নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তাদের সাথে বৈঠক করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা সমাধান বের করতে হবে। এটা নিয়ে কাজ চলছে।" চুক্তির পর বিশ বছরেও পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি সমস্যা নিয়ে সমাধানের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন সরকার মূল সমস্যাগুলো সমাধানে নজর দেয়া কথাও বলছে।
news-54332419
https://www.bbc.com/bengali/news-54332419
বাসমতি চাল কার- ভারত ও পাকিস্তানের নতুন বিরোধ
বাসমতি চাল নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নতুন করে বিরোধে জড়িয়েছে।
সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে বাসমতি চালের রয়েছে বিশ্বখ্যাতি। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় এই চাল চিরবৈরী এই দুটো দেশের বিশেষ কিছু অঞ্চলেই শুধু উৎপন্ন হয়। সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে বাসমতি চালকে 'ভারতীয় পণ্য' হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে আবেদন করার পর এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের এই আবেদনে আপত্তি উঠেছে পাকিস্তানে। তারা বলছে, শুধু ভারতে নয়, এই একই চাল পাকিস্তানেও উৎপাদিত হয়। ফলে বাসমতি চালকে শুধু ভারতীয় পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত হবে না। পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই চালকে শুধুমাত্র ভারতীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হলে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এজন্য ভারতীয় আবেদনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের এই আবেদনে পাকিস্তানের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। পাকিস্তান চাইলে ভারতের মতো তারাও এই পণ্যটিকে নিজেদের দাবি করে আবেদন করতে পারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাসমতি চালের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক এবং পাকিস্তান ও ভারত এই দুটো দেশই এই জোটের দেশগুলোর কাছে প্রচুর পরিমাণে বাসমতি চাল রফতানি করে থাকে। কী আছে ভারতের আবেদনে? ভারত সরকার সম্প্রতি এই বাসমতি চালের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই ট্যাগের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে আবেদন করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অফিসিয়াল জর্নালে ভারতের এই আবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ১১ই সেপ্টেম্বর। এই আবেদনে বলা হয়েছে বাসমতি চাল ভারতীয় উপমহাদেশের একেবারে স্বতন্ত্র একটি চাল। আকারে এটি লম্বাটে। অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধের কারণে সারা বিশ্বে ভারতীয় এই চালের সুখ্যাতি রয়েছে। বাসমতি চালের বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্য। ভারত বলছে, হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল, বিশেষত ইন্দো-গাঙ্গেয় অঞ্চলে বাসমতি চাল উৎপন্ন হয়। ভারতে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান ড. অশোক কুমার সিং বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সবচেয়ে ভাল মানের বাসমতি চাল উৎপাদিত হয় ভারতের যে সাতটি রাজ্যে সেগুলোকে ইতোমধ্যে জাতীয়ভাবে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই দেওয়া হয়েছে। "জম্মুর তিনটি জেলা, অরুণাচল, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশের কিছু এলাকায় ভাল মানের বাসমতি চাল হয়। এসব রাজ্যকে ইতোমধ্যেই জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। জাতীয়ভাবে এই ট্যাগ দেওয়ার পর সেটা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নিতে হয়। ভারত এখন সেটাই করেছে।" পাকিস্তানের উদ্বেগ করাচি থেকে সাংবাদিক তানভীর মালিক জানিয়েছেন, ভারতের এই আবেদনের পর পাকিস্তানের চাল ব্যবসায়ী ও সরকারের ভেতরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান মনে করে ভারতের এধরনের পদক্ষেপ নেওয়া একেবারেই উচিত হয়নি। কারণ এই চাল শুধু ভারতে নয়, পাকিস্তানেও উৎপাদিত হয়। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, বালুচিস্তান এবং পাঞ্জাবে উৎপাদিত বাসমতি চালের খ্যাতি রয়েছে ইউরোপের বাজারে। করাচি-ভিত্তিক সংবাদপত্র বিজনেস রেকর্ডারের সাংবাদিক মি. মালিক বলেন, "পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে দিল্লিকে এই ট্যাগ দেওয়া হলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে পাকিস্তানের বাসমতি চাল রপ্তানির বাজারে বড় ধরনের ধ্বস নামবে।" ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশের পর পাকিস্তান সরকারও ভারতীয় আবেদনের জবাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে পাল্টা আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্যে তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও এই খাতের সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে যারা যারা জড়িত তাদের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা শুরু করেছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা আশা করছেন যে ভারতের এই আবেদন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। তারা বলছেন, সফল কূটনীতির মাধ্যমে তারা দিল্লির এই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেবেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে খুব শীঘ্রই তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে ভারতীয় আবেদনের বিপরীতে পাল্টা আবেদন দায়ের করবেন। জিআই আইন কী বাসমতি চালকে নিজেদের দাবি করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জিআই আইনে আবেদন করেছে ভারত সরকার। জিআই এর অর্থ হলো জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন। অর্থাৎ পণ্যটির উৎস, উৎপত্তি, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি এই আইনটিতে নিশ্চিত করা হয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোকে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এই আইনটিকে গ্রহণ করতে হয়। দুবাই এর একটি সুপারমার্কেটে বিক্রি হচ্ছে বাসমতি চাল। আরো পড়তে পারেন: আমরা যা খাই তার যতটুকু আমদানি করতে হয় যেসব দেশ থেকে যে ছয়টি কাজ করলে ছয় বছরে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ পাকিস্তানও ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই আইনটি গ্রহণ করেছে। তবে এর বাস্তবায়ন এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু ভারতে এই আইনটি গৃহীত হয়েছে বহু আগে, ১৯৯৯ সালে। এই আইনের আওতায় যে পণ্যটির গায়ে জিআই ট্যাগ থাকবে সেটি যে অঞ্চলে উৎপন্ন হয় সেই এলাকা ছাড়া ওই পণ্যের নাম আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। ভারতের যে পণ্যটিতে সর্বপ্রথম এই জিআই ট্যাগ লাগানো হয় সেটি হচ্ছে দার্জিলিং চা। এর পর এই তালিকায় তিনশোটিরও বেশি পণ্য যুক্ত হয়েছে। এখন তাদের টার্গেট: বাসমতি চাল। পাকিস্তানের আপত্তি পাকিস্তানের একজন চাল রপ্তানিকারক এবং চাল রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তৌফিক আহমেদ খান বিবিসি উর্দু সার্ভিসকে বলেছেন, বাসমতি চালকে ভারতীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য দিল্লি সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হওয়ার আগের দলিলপত্রের ওপর ভিত্তি করে ভারত যুক্তি দিতে চাইছে যে বাসমতি চাল তাদের নিজেদের পণ্য। তার মতে, "পাকিস্তানের যেসব অঞ্চলে বাসমতি চাল উৎপন্ন হয় সেসব ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল এবং ভারত এখন এই কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বাসমতি চালকে নিজেদের পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে।" কী বলছে ভারত কিন্তু ভারত বলছে, এনিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগের কিছু নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, "ভারত ও পাকিস্তানের সরকারি পর্যায়ে এনিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। বাসমতি চাল এই দুটো দেশেই উৎপাদিত হয়। দুটো দেশেরই পণ্য এই চাল।" তিনি বলেন, "ভারত স্বীকৃতি চেয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবেদন করেছে। পাকিস্তান চাইলে তারাও সেটা করতে পারে। এখানে তো বিরোধের কিছু নেই।" ভারতে চালের একটি মিলে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। বাসমতি চালের ঐতিহাসিক দিক ভারতীয় উপমহাদেশে বাসমতি চাল উৎপাদনের ইতিহাস বহু পুরনো। দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই চালটি ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হচ্ছে। অভিনব সুগন্ধ ও স্বাদের জন্য চালের এই বিশেষ জাতটি বিশ্বখ্যাত যা অখণ্ড ভারতের বিশেষ কিছু এলাকায় উৎপন্ন হতো। এই বাসমতি চাল শুধু আজকের ভারত ও পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে হিমালয়ের পাদদেশের এলাকায় উৎপাদিত হয়। প্রাচীন কাল থেকে সুতলেজ ও চানাবের মধ্যবর্তী সমতলভূমিতে বাসমতি চলের চাষ হয়ে আসছে। ব্রিটিশ ভারত ভাগ হওয়ার পর আজকের পাকিস্তানে যেসব অঞ্চলে এই চাল উৎপন্ন হয় সেগুলো হচ্ছে গুর্জরানওয়ালা, মান্দি বাহাউদ্দিন, হাফিজাবাদ, সিয়ালকোট, শেইখুপুরা, গুজরাট এবং আরো কিছু এলাকা। আদিকাল থেকে ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং জম্মু কাশ্মীরে বাসমতি চালের চাষাবাদ হয়ে আসছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাবেও এই চালটির উৎপাদন হয়। বাসমতি চাল এখন ভারত ও পাকিস্তানের আরো কিছু অঞ্চলেও উৎপন্ন হচ্ছে। কিন্তু এসব চালের গুণগত মান ও গন্ধ আদি জায়গাগুলোর চালের চেয়ে আলাদা। পাকিস্তানের চাল রপ্তানিকারক তৌফিক আহমেদ খান জানান, আফ্রিকা ও আমেরিকাতেও বাসমতি চাল উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সেগুলো সফল হয়নি। তিনি বলেন, "বাসমতি চাল ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ ঐতিহ্য এবং তাদের উৎপাদিত এই চালের স্বাদ ও গন্ধ চালের অন্যান্য জাতের চেয়ে ভিন্ন।" এই চালের জন্য যেসব ভৌগলিক উপাদান প্রয়োজন সেগুলো শুধু ভারত ও পাকিস্তানের কিছু এলাকাতেই আছে। বাসমতি চাল রপ্তানি পাকিস্তান সাধারণ প্রতি বছর ৫০ থেকে ৭০ লক্ষ টন চাল রপ্তানি করে থাকে। গত অর্থ বছরে রপ্তানি করেছে ৪০ লাখ টন। তার মধ্যে পাঁচ লাখ টন ছিল বাসমতি চাল। চাল রপ্তানি করে পাকিস্তান গত অর্থ বছরে আয় করেছে দুশো কোটি ডলার। বাসমতি চাল একটু লম্বাটে। শুধু ভারত ও পাকিস্তানের কিছু এলাকায় উৎপন্ন হয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, চীন এবং কেনিয়াতে সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানি করে পাকিস্তান। তার মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাসমতি চাল, চীন সব ধরনের চাল আমদানি করে থাকে। পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে বাসমতি চাল রপ্তানি করে ভারত। গত অর্থ বছরে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৪ লাখ টন যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় পাঁচশো কোটি ডলার। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ভারতের বাসমতি চাল রপ্তানি হয় খুবই কম। ভারতের কাছে বাসমতি চালের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব ও ইরান। ভারতে বাসমতি চাল বিশেষজ্ঞ এবং ভারতে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান অশোক কুমার সিং বলেন, "ভারত সারা বিশ্বে যতো বাসমতি চাল রপ্তানি করে তার ৭৫ শতাংশই করা হয় মধ্যপ্রাচ্যে। ভারতের জন্য বাসমতি চালের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব ও ইরান।" পাকিস্তানের উদ্বেগের কারণ কী পাকিস্তানের চাল রপ্তানিকারক তৌফিক আহমেদ খান মনে করেন, অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই ভারত বাসমতি চালকে নিজেদের পণ্য বলে দাবি করছে। তিনি বলেন, ভারত যদি এতে সফল হয় তাহলে সবচেয়ে খারাপ যেটা হতে পারে তা হলো ভারত হয়তো পাকিস্তানকে বাসমতি নাম ব্যবহার করতে বাধা দিতে পারে। "তখন হয়তো পাকিস্তান তার চালের ব্যাগ কিম্বা প্যাকেটের গায়ে বাসমতি নামটি ব্যবহার করতে পারবে না।" তার আশঙ্কা বাসমতি নামটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও এই নামের জন্য ভারতকে হয়তো রয়্যালটি প্রদান করতে হতে পারে। তিনি জানান, ভারতীয় আবেদনের বিরুদ্ধে পাল্টা আবেদনের জন্য পাকিস্তানের হাতে এখনও তিন মাস সময় আছে। ইতালির একটি মেলায় বাসমতি চালের প্যাভিলিয়ন। পাকিস্তান কী ঠেকাতে পারবে? ভারতের আবেদনের পর এবিষয়ে পাকিস্তান সরকার তৎপর হয়ে উঠেছে এবং তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছে। পাকিস্তানি পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সেনেটের একটি প্যানেলও ভারতীয় আবেদন ঠেকানোর ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। সেনেট কমিটির চেয়ারম্যান মির্জা মোহাম্মদ আফ্রিদি বলেছেন, পাকিস্তানে জিআই আইনটি পাস হয়েছে এবছরের মার্চ মাসে কিন্তু ভারতে বহু আগেই সেটা করা হয়েছে। "ভারত এথেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে," বলেন তিনি। তিনি আশা করেন যে সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে ভারতের আবেদন ব্যর্থ হবে এবং তারাও "মেইড ইন পাকিস্তান" এই ট্যাগ লাগিয়ে বাসমতি চালের রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পারবেন। পাকিস্তানে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান মুজিব খান বলেছেন, ২০০৬ সালের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক আইনে বাসমতি চাল ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ পণ্য হিসেবে ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় আবেদনের বিরোধিতা করতে পাকিস্তানের প্রস্তুতি চলছে এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিলে হেরে গেলেও তারা ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের কাছে নিয়ে যাবেন।
news-53861131
https://www.bbc.com/bengali/news-53861131
মেজর সিনহা হত্যা: সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো কেন?
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হবার পর থেকে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর দিক থেকে যেসব তৎপরতা দেখা যাচ্ছে সেটি নজিরবিহীন।
সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অনেক সময় একসাথে কাজ করতে হয়। এই ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা এবং সাক্ষীদের নিয়ে টানাটানি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই'র রিপোর্ট গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া - এ সবকিছু বেশ অস্বাভাবিক। এই ঘটনার জন্য পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে দু:খ প্রকাশ করার পরেও পুলিশের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত মেজর সিনহার অন্যতম সহযোগী শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে তাকে হেনস্থার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এর মাধ্যমে পুলিশও হয়তো পরোক্ষভাবে পাল্টা জবাব দিতে চাইছে। এসব ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, মেজর সিনহা রাশেদ নিহতের ঘটনায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশের মধ্যে এক ধরণের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই ঘটনার পর পুলিশের তরফ থেকে মেজর সিনহা এবং তার সহযোগীদের উপর দায় চাপিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর মেজর সিনহার বোনের দায়ের করা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমারসহ নয়জন পুলিশ সদস্যকে কারাগারে যেতে হয়েছে। সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সেটি বেশ নজিরবিহীন। বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তার জন্য বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়। কেন এই পরিস্থিতি? অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে কতটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় উভয়ের বেশ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে। সিনহা ও তার সহযোগীদের দায়ী করে করে পুলিশ যে মামলা দায়ের করেছে, সে মামলার সাক্ষীদের আটক করছে র‍্যাব। অন্যদিকে মেজর সিনহার বোনের দায়ের করা মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেনাবাহিনীর বর্তমান এবং সাবেক অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, পুলিশের লাগাম টেনে ধরতে হবে। অন্যদিকে পুলিশের কিছু কর্মকর্তার দিক থেকেও পাল্টা কয়েকটি কাজ করা হয়েছে যেগুলোকে দুই বাহিনীর মধ্যে দূরত্বের বহি:প্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সিফাতের মুক্তির দাবিতে বরগুনার বামনা উপজেলায় যখন মানব বন্ধন করা হয়েছিল পুলিশের লাঠিপেটায় সেটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এছাড়া নিহত সিনহার অন্যতম সহযোগী শিপ্রা দেবনাথের কিছু ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অনেকে মনে করেন, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে যে শীতল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেটি শুধু সিনহা হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়। এই ঘটনা একটি অনুষঙ্গ মাত্র। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঘটনা এতদূর কেন এল? অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন "রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়, লোকাল রাজনীতি বলেন বা ন্যাশনাল রাজনীতি বলেন, পুলিশের যে ভাব তৈরি হয়েছে, এটার সাথে বাহিনীর ভেতরে এক ধরণের গরিমা এসেছে। নিয়ে এক ধরণের মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না আমি বলবো যে এক ধরণের কোথাও কোথাও একটা মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে," বলছিলেন ব্রিগেডিয়ার হোসেন। সেনা ও পুলিশ প্রধান এরই মধ্যে সিনহা হত্যার বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন মনে করেন, এখানে দুই বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখছেন না একই সাথে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাও নয়। "যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে,আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি যে তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো কিলিংস-এর (হত্যাকাণ্ডের) অভিযোগ আছে। ওই রিজিওনটাতে পুলিশের এক ধরণের ক্ষমতা আছে," বলেন আমেনা মহসিন। অধ্যাপক আমেনা মহসিন বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, শুধু মেজর সিনহা নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই যে দুই বাহিনীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা নয়। এর একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের অধ্যাপক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাইদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, মূল বিষয়টি হচ্ছে গণতন্ত্রের সংকট। একটি দেশে গণতন্ত্র যত দুর্বল হয়, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ততটা দুর্বল হতে থাকে, বলছেন তিনি। অন্যদিকে শক্তিশালী হয়ে উঠে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র এক্ষেত্রে কে কার চেয়ে শক্তিশালী সেটি প্রতিষ্ঠিত করার এক ধরণের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশে সেটাই হয়েছে বলে মনে করেন মি. আহমেদ। "যখন একটি রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র মুখ্য হয়ে উঠে তখন কম্পিটিশনটা হয় বিভিন্ন আমলা গোষ্ঠীর মধ্যে। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নেই, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্গান মনে করে আমরাই এখানে সবচেয়ে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে পারি," বলছিলেন সাইদ ইফতেখার আহমেদ। "প্রত্যেকটা গোষ্ঠী চেষ্টা করে তাদের প্রাধান্য বজায় রাখার। ফলে একটা কম্পিটিশন তৈরি হয় রাষ্ট্রের বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠীর মধ্যে।" সেনা ও পুলিশ প্রধান কক্সবাজার পরিদর্শন করে এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্ত তারপরেও সেনাবাহিনীর বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তারা সেটি মানতে নারাজ। তাদের ধারণা এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ বাহিনী চাপের মধ্যে রয়েছে। সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব প্রদর্শন? কক্সবাজার থেকে পাঠানো ডিজিএফআইর'র যে গোপন রিপোর্ট সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে যে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর প্রতি পুলিশ সদস্যদের অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম. সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, দুই বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। তবে এক ধরণের চাপা উত্তেজনার বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। অনেকে মনে করেন, পুলিশের প্রতি সেনাবাহিনীর মনোভাব ইতিবাচক নয়। কার ক্ষমতা বেশি? এনিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোন প্রতিযোগিতা চলছে কি না? এমন প্রশ্নে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, "সুপ্রিমেসির কোন ব্যাপার থাকার কথা নয়। পুলিশ ফোর্স তার একটি আলাদা ম্যান্ডেট। সেনাবাহিনী তার একটা আলাদা ম্যান্টেড। পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রে সেনাবাহিনী সিনিয়রিটি ও প্রটোকলের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ জনগণের বাহিনী, এটা একটা সার্ভিস সেক্টর। কাজেই এখানে সু্প্রিমেসির কোন বিষয় আমি এখানে মনে করিনা।" তবে গত ২০-৩০ বছর অনেক জায়গায় বিভিন্ন আঙ্গিকে পুলিশ সেনাবাহিনীর সমকক্ষ হবার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত। "যেমন ধরুন - পতাকা, স্টার, কে সিনিয়র কে জুনিয়র, কে ফোর স্টার, কে থ্রি স্টার - এগুলো কিন্তু আগে ছিলনা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরেও ছিল না। যখনই এগুলো শুরু হলো সেনাবাহিনীর আদলে, তখন থেকেই একটা মানসিক বিষয় হতে পারে। হতে পারে। আমি আবারও বলছি, অনুমান ভিত্তিক হতে পারে।" সাঈদ ইফতেখার আহমেদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিক্ষক আরও পড়তে পারেন: 'ক্রসফায়ার' টিকিয়ে রেখেছে সব সরকার, অভিযুক্ত অধিকাংশ বাহিনী সিনহা রাশেদ: যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সেনা ও পুলিশ প্রধান যা বললেন সিনহা রাশেদ নিহতের ঘটনায় পুলিশ ও ডিজিএফআই’র পরস্পরবিরোধী ভাষ্য অধ্যাপক সাঈদ ইফতেখার আহমেদের বিশ্লেষন হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী কোনভাবেই চাইবে না যে তাদের কর্তৃত্ব অন্য কারো দ্বারা খর্ব হোক। "১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সমস্ত ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং এ ধরণের প্রতিষ্ঠান যখন মনে করে যে অন্য আরেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা তাদের তাদের দীর্ঘদিনের চর্চা কোন না কোন ব্যাঘাত ঘটছে, তারা চেষ্টা করবে তাদের চর্চার ধারাটা ফিরিয়ে আনতে, প্রভাবটাকে বজায় রাখতে" বলেন মি. আহমেদ। সেনাবাহিনী ও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেজর সিনহা নিহত হবার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে তথাকথিত ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার কোন খবর সংবাদমাধ্যমে আসেনি। সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ অনেকেই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর হেফাজতেও বিচার অপারেশন ক্লিনহার্টসহ বিভিন্ন সময় নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, সেনাবাহিনীকে কি আসলেই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের পক্ষে কি না সেটি নিয়ে বিশ্লেষকদের নানা সন্দেহ রয়েছে। আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, এই মুহূর্তে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের উদ্যোগ নেয়া। "কিন্তু আজকে বাংলাদেশে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের বিরুদ্ধে কিছু সিভিল সোসাইটি এবং কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল ছাড়া কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান বলিষ্ঠ কোন অবস্থান নিচ্ছে না। সেনাবাহিনী নিজেও এ কাজের সাথে যুক্ত ছিল। তারাও যে সেটার বিরোধিতা করেছে সেটা নয়। আজকে তাদের একজন সদস্য এর শিকার হওয়ার ফলে তারা কনসার্নড বলে আমার মনে হচ্ছে," বলেন মি. আহমেদ। পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি মোখলেসুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরণের শীতল সম্পর্ক কারো জন্যই ভালো হবে না। সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর কক্সবাজারে সেনা ও পুলিশ প্রধানের যৌথ সংবাদ সম্মেলন। "দীর্ঘ সময় ধরে একটি শীতল সম্পর্ক যাক, এটা তো কোন মতেই কাম্য হতে পারেনা। পুলিশের হাতে মানুষ এভাবে নিহত হোক এটাও কেউ চাইতে পারেনা। যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটির বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে," বলেন মি. রহমান। সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, থানা পর্যায়ে পুলিশের একটি সংস্কার প্রয়োজন। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি এবং অনিয়ম যেভাবে গেড়ে বসেছে, সেগুলো বজায় রেখে শুধু পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সংস্কার আনার বিষয়টিতে কোন লাভ হবেনা। রাজনৈতিক মাত্রা পাচ্ছে? মেজর সিনহা নিহতের ঘটনাটি এক ধরণের রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে বলেও অনেকের ধারণা। সরকার সমর্থকদের অনেকেই মনে করেন এর মাধ্যমে কোন একটি পক্ষ রাজনৈতিক ফায়দা তুলে নিতে পারে। সম্প্রতি পুলিশ এসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিনাত হুদা ওয়াহিদ মনে করেন, দুই বাহিনীর মধ্যে সংকট সৃষ্টির সাথে সরকারের স্থিতিশীলতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। মিস্ ওয়াহিদ প্রশ্ন তোলেন, "দূরত্ব তৈরি হয়েছে, নাকি দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে? আসলেই কি কেউ বর্তমান সরকারকে বিব্রত করবার জন্যই এই দুই বাহিনীর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক সংকট তৈরি করবার চেষ্টা করছে কিনা - সেটিও ভেবে দেখার বিষয় আছে।"
news-52955378
https://www.bbc.com/bengali/news-52955378
করোনা ভাইরাস: লকডাউনের রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোন - কোথায় কী নিয়ম?
বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন বা লাল, হলুদ ও সবুজ - এই তিন ভাগে ভাগ করে জোনভিত্তিক লকডাউন করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এই মধ্যে কোথায় কী ধরণের অঞ্চল হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত রোডম্যাপ তুলে ধরা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা এবং এলাকাকে রেড, ইয়েলো, গ্রিন - এই তিন জোনে ভাগ করা হয়েছে কোনো একটি এলাকার করোনাভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা ও সেসব এলাকায় সংক্রমণের ধরণ বিবেচনা করে এই জোন ভাগ করার চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানান আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন। লাল, হলুদ আর সবুজ - এই তিন জোনে ভাগ করা হবে বিভিন্ন এলাকাকে। একেক জোনের বাসিন্দাদের জন্য একেক রকম নিয়ম কানুন বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হলেও এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানান তিনি। মুশতাক হোসেন বলেন, "সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রেড জোন হবে, মাঝারিটা হবে ইয়েলো আর যেসব এলাকায় সংক্রমণ নেই বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংক্রমণ হয়েছে সেসব এলাকা থাকবে গ্রিন জোনে।" মুশতাক হোসেন জানান সংখ্যাগত এবং গুণগতভাবে বিচার করে কোন এলাকা কোন জোনে রাখা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে গ্রিন জোনকে নিরাপদ হিসেবে ধরে নেয়া হলেও সেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম না করা, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার মত নিয়ম মেনে চলতে হবে মানুষকে। রেড জোন যেসব এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে সেগুলোতে কড়াভাবে লকডাউন কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান মুশতাক হোসেন। তবে সুপারিশগুলো সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানান তিনি। রেড জোনে যেসব কোভিড-১৯ রোগী থাকবেন এবং যারা কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, তাদের নিজেদের বাসা থেক বের হতে দেয়া হবে না। আক্রান্ত রোগী ও কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের খাবার ও জরুরি ওষুধ তাদের বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি? বিশ্ব মহামারি শেষ হতে কতদিন লাগবে? কোথায় কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু, নির্মূলের উপায় করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন বাংলাদেশে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সাধারণ ছুটি চললেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি "এর বাইরে এলাকাবাসী যারা থাকবেন তারা ঘর থেকে বের হয়ে জরুরি প্রয়োজনে দোকানে যেতে পারবেন, কিন্তু পালাক্রমে। একই সময়ে একসাথে বেশি মানুষ বের হতে পারবেন না। আর তাদের কেউ এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না," জানান মুশতাক হোসেন। তবে সেসব এলাকায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, গ্যাস, বিদ্যুৎ বা গণমাধ্যম সেবার সাথে জড়িত জরুরি কর্মীদের বিশেষ অনুমতিপত্র থাকবে যেটি দেখিয়ে তারা এলাকায় যাওয়া আসা করতে পারবেন। লকডাউন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে এসব জরুরি সেবার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আলাদাভাবে থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান মুশতাক হোসেন। এলাকা লকডাউন করা হলেও এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাওয়ার বড় রাস্তা লকডাউনের আওতায় থাকবে না বলে জানান তিনি। ''বড় বড় রাস্তা, যা অন্যান্য বাসিন্দারা ব্যবহার করবেন, সেটি বন্ধ করা হবে না। হয়তো চারদিকে রাস্তা আছে, তার মাঝখানের অংশটুকু বেষ্টনীর ভেতরে থাকবে। রাস্তার অপর পাশ হয়তো আরেকটি বেষ্টনীর ভেতর থাকবে।'' রেড জোনে থাকা এলাকাগুলোতে যারা ঘরে কোয়ারেন্টিন করতে পারবেন না, তাদের জন্য কমিউনিটি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করা হবে। এছাড়া প্রত্যেকটি রেড জোনের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে একটি হাসপাতাল। "এলাকার মধ্যে বা আশেপাশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থাকলে সেটিকে ঐ এলাকার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।" এছাড়া রেড জোনের এলাকাগুলোতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জরুরি সেবার সাথে জড়িত অফিস ছাড়া অন্য কোনো ধরনের অফিস খোলা থাকবে না। মুশতাক হোসেন জানান রেড জোনের লকডাউন কার্যকর করার খুঁটিনাটি সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বাংলাদেশে ঈদের আগে ফেরি ঘাটের দৃশ্য এটি ইয়েলো জোন মুশতাক হোসেন বলেন কোভিড-১৯ রোগী এবং কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের জন্য রেড জোন আর ইয়েলো জোনের নিয়ম একই থাকবে। তবে ইয়েলো জোনের আক্রান্ত না হওয়া বাসিন্দারা এলাকা থেকে বের হতে পারবেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এছাড়া ইয়েলো জোনে হাসপাতাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সেবার অফিস ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কিছু অফিস খুলে দেয়া হতে পারে। কিন্তু কোন অফিসগুলো খুলে দেয়া হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মুশতাক হোসেন। এছাড়া এই এলাকাগুলোতে একসাথে অনেক মানুষ যেন প্রবেশ করতে বা বের না হতে পারেন, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এসব সিদ্ধান্ত? বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন ঘোষণা করার পর তা কার্যকরভাবে পালন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় ও কমিউনিটি নেতৃত্বকে সংযুক্ত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মুশতাক হোসেন। "মানুষজন ঠিকমতো কোয়ারেন্টিন মানছে কিনা তা নিশ্চিত করতে এবং কোয়োরেন্টিনে থাকাদের কাছে খাবার, ওষুধ পৌঁছে দিতে স্থানীয় ভলান্টিয়ার, সমাজ কল্যাণ সমিতি, হাউজিং সমিতির সদস্যদের যুক্ত করা হবে।" কোয়ারেন্টিন করা ব্যক্তিদের তালিকা করা হবে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের স্থানীয় দোকানের সাথে সমন্বয় করে তাদের বাসায় খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দেয়া হবে। মুশতাক হোসেন বলেন, "এই ক্ষেত্রে আমরা টোলারবাগ মডেল অনুসরণ করবো। শুরুর দিকে টোলারবাগে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যখন, তখন এভাবে মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।" তিনি জানান প্রথমদিকে প্রত্যেক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজে প্রত্যেক জেলায় কমিটি ছিল, ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় সেরকম কমিটি তৈরি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। "সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি থাকবে, আবার ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটিও থাকবে। আবার জোনভিত্তিক কমিটিও করা হতে পারে।" বিভিন্ন জেলার কমিটিগুলোর আদলে তৈরি হলেও এসব কমিটিতে কীভাবে এনজিওসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করা সংস্থাগুলোকে সংযুক্ত করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান মুশতাক হোসেন। আর যারা এই পুরো কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকবে, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
news-40351199
https://www.bbc.com/bengali/news-40351199
সতীত্ব ফিরে পাওয়ার চেষ্টা তিউনিসিয়ার তরুণীদের
তিউনিসিয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে কসমেটিক সার্জারি।
বিয়ের আগে সতীত্ব পুনরুদ্ধারের আগ্রহ বাড়ছে তিউনিসিয়ার তরুণীদের মধ্যে মুখমণ্ডল, নাক, স্তনে পরিবর্তন আনতে এ ধরণের সার্জারির জনপ্রিয়তা রয়েছে অনেক দেশেই। তবে এর বাইরে আরও একটি দিক উঠে আসছে এখন আর সেটি হলো- সতীত্ব পুনর্গঠন,আর সেটির প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে তিউনিসিয়ায়। অর্থাৎ সামান্য সার্জারির মাধ্যমে যৌনাঙ্গ এমন অবস্থায় আনা যাতে করে মনে হয় তার আগে কোন যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি। এর কারণ হলো তিউনিসিয়ায় বিয়ের পর অনেক পুরুষ সন্দেহ করেন যে তার নবপরিণীতা স্ত্রী আগেই সতীত্ব হারিয়েছেন। এর এই সার্জারিগুলো হচ্ছে রাজধানী তিউনিসের ক্লিনিকগুলোতে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে। বিবিসি সংবাদদাতা কথা বলেন এমন একজন তরুণীর সাথে, যার নাম ইয়াসমিন (ছদ্মনাম)। ক্লিনিকে অপেক্ষমান কক্ষে বসে তিনি বলেন বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেই চিন্তিত যে এটা কতটা গোপন থাকবে। "এটা অনেকটা আত্মপ্রবঞ্চনার মতো এবং আমি আসলেই উদ্বিগ্ন যে কোন দিন হয়তো আমার স্বামীর সাথে আলাপচারিতার সময় ভুলবশত নিজের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলতে পারি। বা আমার স্বামী হয়তো সন্দেহ করার জন্য কিছু ক্লু পেয়ে যাবেন"। ২৮ বছর বয়সী ইয়াসমিন জন্মগ্রহণ করেছেন একটি উদার পরিবারে এবং বহু বছর এ পরিবারটি বসবাস করেছে তিউনিসিয়ার বাইরে। তার ভয় তার হবু বর যদি তার যৌন অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারেন তাহলে হয়তো বিয়েই ভেঙ্গে দেবেন। "একজনের সাথে আমার প্রেম ছিলো এবং তখন আমি বুঝতেই পারিনি সমাজে এটা নিয়ে কেমন চাপ কাজ করে আর এর পরিণতিই বা কেমন হতে পারে। আর সে কারণেই এখন আমার ভয় লাগছে। আমি যদি এগুলো আমার হবু বরকে বলি তাহলে আমি নিশ্চিত সে বিয়ে বাতিল করে দেবে"। যৌনাঙ্গ পুনর্গঠনের একটি বিশেষ পদ্ধতির সার্জারির জন্য চিকিৎসককে দিতে হবে প্রায় চারশো ডলার, এর মাধ্যমে তার সতীত্ব ফিরে পাওয়ার কথা। অর্থাৎ সতী বা ভার্জিন মনে হবে তাকে। পরিবার ও প্রেমিক যার সাথে তার বিয়ে হবে তাকে না জানিয়েই টাকা জমিয়ে এ ধরনের সার্জারিতে যাচ্ছেন এই তরুণী। যদিও এ অপারেশনটি যিনি করবেন সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একজন পুরুষ। প্রতি সপ্তাহেই এ ধরনের গড়ে দুটি করে অপারেশন তাকে করতে হয়। পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থার এ দেশটির ধর্মীয় রীতিনীতির প্রভাব জোরালো তিনি বলছিলেন, "স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের সতীত্ব পুনর্গঠনের অপারেশনটি করে থাকেন। এটা খুব ব্যতিক্রম কিছু নয়। যদিও অনেক চিকিৎসক এটা করতে চাননা। আমি করি কারণ আমি তাদের সাথে একমত নই।" "এটা ধর্মীয় নীতিমালায় পরিপূর্ণ একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। যেহেতু সবকিছু পুরুষ নিয়ন্ত্রিত তাই সবদিক থেকেই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে" -বলছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওই পুরুষ। নারী অধিকার সুরক্ষার জন্য উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে তিউনিসিয়া খুবই প্রশংসিত একটি দেশ। এ সত্ত্বেও দেশটিতে ধর্ম ও প্রথাই অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রক। এমনকি সেটি নারীর সতীত্বের ক্ষেত্রেও। সমাজের নিয়মটাই এমন দাঁড়িয়েছে যে বিয়ের আগে নারীকে যে কোনো মূল্যে সতীত্ব রক্ষা করতে হবে। সমাজবিজ্ঞানী সামিয়া ইলৌমির মতে তিউনিসিয়ার সমাজ প্রতারণায় পরিপূর্ণ। তিনি বলেন, "তিউনিসিয়ার সমাজ একটি মুক্ত সমাজ কিন্তু আমরা আসলে প্রতারক হয়ে যাচ্ছি। এখানে যেমন কিছু সামাজিক রীতি নীতি আছে যেগুলো পালনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ আমরাই আবার দাবি করি যে এটি একটি আধুনিক সমাজ। আমরা ততটুকু আধুনিক হইনি যা প্রতিফলন নারী যৌনতা ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দেখা যায়"। দেশটির এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিশেম। আগামী বছরেই বিয়ে করবেন তিনি। বিবিসির সংবাদদাতা তার কাছে জানতে চান যে তার হবু স্ত্রীর সতীত্ব আছে কি- নেই তার কোনো মূল্য তার কাছে আছে কি-না। "আমার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পর আমি যদি বুঝতে পারি যে সে ভার্জিন নয় তাহলে আমি কখনোই তাকে বিশ্বাস করতে পারবোনা। আমি এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেই বিবেচনা করবো। আর আমি কিন্তু সতীত্ব পুনর্গঠনেও বিশ্বাস করিনা। আমার মনে হয়না এটা কার্যকর কিছু"। আর এমন সব দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই ক্লিনিকগুলোকে নারীদের আসা যাওয়া চলছে অনেক নীরবেই যাতে করে কারও দৃষ্টিতে না পড়তে হয়। আরও পড়ুন: সৌদি আরবের ভবিষ্যত বাদশাহ সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে কাতার সংকটে যেভাবে শাস্তি পাবে গাজায় ফিলিস্তিনিরা সাদ্দামের ফাঁসির সময়ে কেঁদেছিলেন যে মার্কিন সৈন্যরা
news-47846610
https://www.bbc.com/bengali/news-47846610
লোকসভা নির্বাচন: হোয়াটসঅ্যাপের কল্যাণে ফেক নিউজের ঝড়
হোয়াটসঅ্যাপ ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপের প্রবল সমালোচনা হচ্ছে কারণ ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে নানা ধরনের মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এবং অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
পাকিস্তানে ২০১৪ সালের আত্মঘাতী হামলার শিকার ব্যক্তিদের দেখানো হয়েছে পাকিস্তানী জঙ্গি হিসেবে। হোয়াটসঅ্যাপের মালিক ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এসব বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা বলা যতটা সহজ, করা ততটা সহজ হবে না। এবছর মার্চ মাসের শুরুর দিকে ভারতে দেশপ্রেমের বন্যা বয়ে যায়। পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে ঢুকে ভারতের বিমান হামলা চালানোর দাবী করে ভারতের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে নানা ধরনের ছবি শেয়ার করা হয়। ভারতে সরকার দাবি করে যে ২৬শে ফেব্রুয়ারির ঐ হামলায় 'বিপুল সংখ্যক জঙ্গি' নিহত হয়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার বলে যে এরকম কোন প্রাণহানির কোন ঘটনা ঘটে নি। বিবিসির সত্যানুসন্ধানী দল এই নিয়ে তদন্ত করে জানতে পারে যে বিধ্বস্ত জঙ্গি আস্তানা কিংবা নিহত জঙ্গিদের যে ছবি শেয়ার করা হয়েছে সেগুলো সবই পুরনো ছবি। ভুয়া শিরোনাম দিয়ে এগুলো চালিয়ে দেয়া হয়েছে। কাশ্মীরে ভূমিকম্পের দৃশ্যকে ভারতীয় বিমান হামলার দৃশ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনটি মরদেহ ঘিরে একদল মুসলমান নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দাবি করা হয়েছে, এটা ভারতীয় হামলায় নিহত জঙ্গিদের ছবি। আসলে এই ছবি ২০১৪ সালে পাকিস্তানের আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতদের ছবি। এটি ছাড়াও বহু ছবি শেয়ার করা হয়েছে যেখানে বিধ্বস্ত বাড়িঘর, ধ্বংসস্তূপ আর নিহত মানুষের ছবি দেখিয়ে বলা হয়েছে এসবই ভারতীয় হামলার ফল। কিন্তু ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ ছবি ২০০৫ সালের পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের ভূমিকম্পে ধ্বংসযজ্ঞের ওপর। বিশ্বের নানা দেশে নির্বাচনকে ঘিরে যেসব ভুয়া খবর, মিথ্যে মেসেজ, বানোয়াট ছবি আর ভিডিও প্রচার হয় হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক সেগুলো ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। সেই বিবেচনায় ভারতের আসন্ন নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে একটা বড় পরীক্ষা হিসেবে। গত নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ভোটের আগে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ফেসবুক শত শত অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে, হোয়াটসঅ্যাপ নতুন একটি পরিষেবা চালু করেছে যার মধ্য দিয়ে তথ্য যাচাই করা সম্ভব। একই সাথে এই প্ল্যাটফর্মে মিথ্যে তথ্য কিভাবে ছড়ানো হচ্ছে তারা সেটিও খতিয়ে দেখবে। সমস্যা কতখানি প্রকট? ভুয়া তথ্য ছাড়ানোর বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হোয়াটসঅ্যাপের পথনাট্য। আরো পড়তে পারেন: 'গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না'- লেখা টি-শার্টের পেছনের গল্প ভারতে মুসলিম লীগের পতাকা নিয়ে বিতর্ক কেন? প্রথমে হাতির পায়ের নিচে, পরে সিংহের পেটে ফেসবুকের জন্য ভারত একটা বিশেষ সমস্যা। এটা হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় বাজার - প্রায় ২০ কোটি ভারতীয় এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে ভারতীয় অনেক বেশি কন্টেন্ট শেয়ার করেন। গত বছর বিবিসির এক গবেষণায় দেখা গেছ, ভারতে 'ফেক নিউজ' বা ভুয়া খবর ছড়ানোর পেছনে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে জাতীয়তাবাদী ধারার পুনরুত্থান। এই জরিপে যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা জানান, বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের ওপর তারা বিশ্বাস রাখেন। এবং কোন বাছবিচার না করেই সেগুলো তারা অন্যদের সাথে শেয়ার করেন। প্রশান্ত কে. রায় একজন প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক। তিনি দিল্লিতে যে স্কুলে পড়াশুনা করেছেন সেই স্কুলের একশোরও বেশি বন্ধুদের সাথে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে যুক্ত। হিন্দু-প্রধান হলেও এই গ্রুপে মুসলমান এবং খ্রিস্টান সদস্যও রয়েছেন। "গত কয়েক বছর ধরে একটা মেরুকরণ লক্ষ্য করছি," বলছিলেন তিনি, "গ্রুপের কিছু সদস্য অযথাই ফেক নিউজ ছড়িয়ে যাচ্ছিল। আমরা সত্যতা যাচাই করে তাদের এধরনের পোস্ট শেয়ার করতে বারণ করি। কিন্তু তারা কথা শোনেনি। পরে তাদের গ্রুপ সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে একটা উত্তেজনা এখনও আছে।" বহু ভারতীয় প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটের স্বাদ গ্রহণ করেন তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে। রয়টার্স ইন্সটিটিউট ভারতে ইংরেজি ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর সম্প্রতি একটি জরিপ চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫২% জানিয়েছেন দিনের খবর তারা পান হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। একই সংখ্যক উত্তরদাতা জানান তারা ফেসবুক থেকেও খবর পেয়ে থাকেন। গুজব ঠেকাতে হোয়াটসঅ্যাপ ভারতে মেসেজ আদানপ্রদান সীমিত করে। কিন্তু ভারতে হোয়াটসঅ্যাপে যে ধরনের কন্টেন্ট শেয়ার করা হচ্ছে তার জেরে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিবিসির তৈরি এক বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্য সোশাল মিডিয়ায় ছাড়ানো গুজবের ফলে উত্তেজিত জনতার হাতে অন্তত ৩১ ব্যক্তি খুন হয়েছে। নির্বাচনের আগে ঠিক কী ঘটছে? ভারতের ৯০ কোটি ভোটারদের মন জয় করতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন শাসক দল বিজেপি এবং বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টি উভয়েই হোয়াটসঅ্যাপের শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা খবর দিচ্ছে, প্রচারাভিযান শুরু হওয়ার আগে বিজেপি ৯,০০,০০০ লোক নিয়োগ করেছে, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে প্রচারপত্রগুলিকে স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে দেয়া। অন্যদিকে, নেহেরু পরিবারের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস পার্টির নির্বাচনী ফোকাস হচ্ছে ফেসবুক। তারা প্রচারের কন্টেন্ট আপলোড করছে ফেসবুকে আর সেগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। কিন্তু এই দুটি দলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে যে নির্বাচনকে ঘিরে তারা মিথ্যে এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। পয়লা এপ্রিল ফেসবুক কংগ্রেস পার্টির সাথে সম্পর্কিত ৬৮৭টি ফেসবুক পেজ এবং অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ: এসব অ্যাকাউন্ট থেকে একযোগে ভুয়া তৎপরতা চালানো হচ্ছিল। ভারতের পত্রিকায় ফেক নিউজের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন। অন্যদিকে, খবর পাওয়া যাচ্ছে বিজেপি-পন্থী ২০০টি ফেসবুক পেজও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে একই অভিযোগে। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই খবর স্বীকার করেনি। শিভাম শঙ্কর সিং একজন একজন ডেটা অ্যানালিস্ট। তিনি ২০১৭ ও ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলিতে বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন। তিনি জানান, বিজেপি ২০১৬ সাল থেকেই ব্যাপক সংখ্যায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গড়ে তুলতে থাকে। ভোটার লিস্টের সাথে ভোটারের মোবাইল নাম্বার যুক্ত করে ধর্ম ও বর্ণ-ব্যবস্থার ভিত্তিতে তারা ছোট ছোট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গড়ে তোলে। মি. সিং এখন বিহারে বিজেপির বিরোধী দলগুলোর সাথে কাজ করছেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশেই ২০,০০০ বিজেপি-পন্থী হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গড়ে তোলার প্রশ্নে কোন নীতিমালা থাকার কথা অস্বীকার করেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগারওয়াল। তিনি বলেন, শুধুমাত্র দলের কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এসব গ্রুপকে ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে কর্মী-সমর্থকরা এধরনের গ্রুপ তৈরি করতে পারেন, মি. আগারওয়াল জানান, তবে এর সঙ্গে দলের আনুষ্ঠানিক কোন সম্পর্ক নেই। হোয়াটসঅ্যাপের জন্য সমস্যা কোথায়? ভারতে তথ্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট রয়েছে, যেমন অল্টনিউজ কিংবা বুম। ফেসবুক ও টুইটারে যেসব ফেক নিউজ ছাড়ানো হয়, তারা সেগুলোকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করে। যেমন, এক খবরে বলা হয়েছে ভারতের নির্বাচনে একজন ব্রিটিশ বিশ্লেষক কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে 'নির্বোধ' বলেছেন। কিংবা ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন পাইলট, যাকে জাতীয় বীর হিসেবে মর্যাদা দেয়া হচ্ছে, তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এধরনের পোস্ট দলের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা না হলেও, সমর্থকরা দলের বাইরে এধরনের গ্রুপ ব্যবহার করে ব্যাপকহারে এগুলো ছড়িয়ে দেন। তাদের কাছ থেকে নিয়ে রাজনৈতিক নেতারাও মাঝেমধ্যে এধরনের পোস্ট শেয়ার করেন। "ফেসবুক এবং টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো খুব রাখঢাক করে কাজ করে না। ফলে আমাদের মতো ফ্যাক্ট-চেকারের জন্য এগুলো যাচাই করা খুব কঠিন হয় না," বলছিলেন ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সাইট বুম-এর কর্মকর্তা জেন্সি জেকব। প্রশান্ত কে. রায় বলছিলেন, ফেসবুক এবং টুইটারের সাথে হোয়াটসঅ্যাপের পার্থক্য হলো হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজগুলো এনক্রিপটেড থাক। ফলে "এটা অনেকটা কৃষ্ণ গহ্বরের মতো," বলছেন তিনি। "এসব টেক্সট মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপ নিজেও দেখতে পায় না, খুলে পড়তে পারে না এবং এগুলোতে কোন কাটছাঁট করতে পারেনা।" হোয়াটসঅ্যাপের এই নীতিতে যে পরিবর্তন ঘটবে এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। হোয়াটসঅ্যাপ গভীরভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় বিশ্বাস করে। কী পদক্ষেপ নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ? গত বছরে ভারতে গণপিটুনিতে পর পর ক'টি মৃত্যুর ঘটনার পর হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের মেসেজের সংখ্যা সীমিত করে দেয়। প্রতি ইউজার দিনে শুধুমাত্র পাঁচটি মেসেজ ফরোয়ার্ড করতে পারবেন। একই সাথে হোয়াটসঅ্যাপ সারা দেশ জুড়ে ১০টি ভারতীয় ভাষায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে, যা কোটি কোটি মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। এতে হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, মানুষের কাছে অযথা মেসেজ পাঠায় সারা বিশ্বে এমন ২০ লক্ষ অ্যাকাউন্ট তারা প্রতি মাসে বাতিল করে থেকে। হোয়াটসঅ্যাপে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নতুন সেটিং-এ এখন ইউজাররা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তারা কাকে গ্রুপের সদস্যপদ দেবেন বা কাকে বাইরে রাখবেন। গত ২রা এপ্রিল হোয়াটসঅ্যাপ ভারতে একটি নতুন পরিষেবা চালু করে যার নাম 'চেক পয়েন্ট"। এর মাধ্যমে ইউজাররা ইংরেজিও ছাড়া চারটি ভারতীয় ভাষায় সন্দেহজনক মেসেজ যাচাই করতে পারবেন। মেসেজটি যদি সত্যি, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর কিংবা বিতর্কিত হয় হোয়াটসঅ্যাপ তাহলে সেটা বলে দেবে। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের পদক্ষেপে কী ফল হচ্ছে? যদিও হোয়াটসঅ্যাপ বলছে, তারা মেসেজ ফরোয়ার্ড করার হার ২৫% কমাতে পেরেছে, কিন্তু যারা সত্যাসত্য যাচাই করেন তারা বলছেন ফেক নিউজ একটুও কমেনি। তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন এই কারণে যে যেসব খবর বা গুজব কিংবা ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব তারা আগে মিথ্যে বলে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো বারে বারে করে ফিরে আসছে। এর মধ্যে একটি হলো নেহেরু পরিবারের মুসলিম শেকড়, যা আগেই ভুয়া বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। তারা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপ তার এনক্রিপশন এবং গোপনীয়তার নীতিমালায় পরিবর্তন না আনবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটা ঠেকানো অসম্ভব। তারা বলছেন, ফেসবুকের মতো ব্যবস্থা চালু করতে হবে যেখানে ভুয়া তথ্য ফরোয়ার্ড করার সময় জানিয়ে দেয়া হয় যে এটি ভুয়া। সমালোচকরা বলছেন, যে বিপুল সংখ্যক গ্রুপ ইতোমধ্যেই কাজ করছে হোয়াটসঅ্যাপের এসব নতুন পদক্ষেপ তাদের ওপর কোন প্রভাবই ফেলবে না। সেদিক থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বেশি সুবিধেজনক অবস্থায় থাকবেন বলে বলছেন, ডেটা অ্যানালিস্ট শিভাম শঙ্কর সিং। "বিজেপি হচ্ছে একমাত্র দল যার এত বিপুল সংখ্যক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে," তিনি বলেন, "আর অন্য দলগুলো এখন চাইলেও তা পারবে না। কারণ হোয়াটসঅ্যাপ তার নীতিমালায় পরিবর্তন ঘটিয়েছে।"
news-56936278
https://www.bbc.com/bengali/news-56936278
প্রতিশোধমূলক পর্ন: রিভেঞ্জ পর্ন নারীদের জীবন যেভাবে তছনছ করছে ইন্দোনেশিয়ায়
চব্বিশ-বছর বয়সী সিতির সাথে এক লোকের পাঁচ বছরের সম্পর্ক। তার পরিবার একথা জানতো না। পাঁচ বছর পর তাকে নিয়েই বের হয় প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফি। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে এখানে সিতির নাম বদলে দেয়া হয়েছে।
প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক যখন খারাপ হয়ে পড়লে সিতি গত বছর সম্পর্কটি ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করেন। আর ঠিক তখনই তার সাবেক প্রেমিক তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। 'রিভেঞ্জ পর্ন' বা প্রতিশোধমূলক পর্ন মানে হলো সেক্স করার ভিডিও বা ছবি অনুমতি ছাড়াই অনলাইনে প্রকাশ করা। প্রতিশোধমূলক পর্ন থেকেও ব্যবসা করছে পর্নহাব বাংলাদেশে পর্ণ সাইট বন্ধ করা কি সম্ভব ? অনেক দেশেই এটা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং যাদের বিরুদ্ধে এসব করা হয়, কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য সুবিচারের ব্যবস্থা করে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় সিতির মতো যারা প্রতিশোধমূলক পর্নের শিকার হয়েছেন, তাদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যেতে ভয় পান। কারণ সে দেশে পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত যে আইনটি রয়েছে, তাতে কে অন্যায় করেছে এবং কে এর শিকার, তার মধ্যে কোন তফাৎ রাখা হয়নি। দু'হাজার উনিশ সালে এক নারীর যৌনমিলনের একটি ব্যক্তিগত ভিডিও তার অনুমতি ছাড়াই প্রকাশ করা হয়। এবং এ নিয়ে যে মামলা হয়, তাতে দেখা যায় ফরিয়াদীকেই তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পরে অবশ্য উচ্চতর আদালতে আপিল করার পর রায়টি বাতিল হয়ে যায়। সম্পর্কিত খবর‍: ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিশোধমূলক পর্নের যারা শিকার তারা মনে করেন, সুবিচারের জন্য কোথায়ও যাওয়ার জায়গা তাদের নেই। "মানসিক আঘাতে জর্জরিত হয়ে একেক সময় মনে হয় আমি আর এ থেকে মুক্তি পাব না। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি কাঁদতে চাই, কিন্তু চোখে আর পানি আসে না," বলছেন সিতি। মুসলমান-প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ায় যৌনতা এবং বিয়ের আগের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে ধর্মীয় বিধিনিষেধ রয়েছে। সামাজিকভাবেও একে কলঙ্ক হিসেবে দেখা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় নারীদের আইনগত সাহায্য দিয়ে থাকেন এমন একজন আইনজীবী হুসনা আমিন বলছেন, পুরো দেশ জুড়ে সিতির মতো পরিস্থিতির শিকার বহু নারী। ইন্দোনেশিয়ার নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ক জাতীয় কমিশনের এক হিসেব অনুযায়ী, সে দেশে ২০২০ সালে অনলাইনে ১,৪২৫টি জেন্ডার সহিংসতার অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হবে, কারণ অনেক নারীই তাদের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হতে চান না। "নারীরা ভয় পান কারণ এসব খবর প্রকাশিত হলে পর্নোগ্রাফি আইনটি তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হতে পারে," বলছেন হুসনা আমিন। পর্নোগ্রাফি আইনে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি "স্বেচ্ছায় পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কোন কন্টেন্টে নিজে মডেল হতে পারবেন না, অথবা এই কাজে কোন অনুমতিও দিতে পারবেন না।" এতে আরও বলা হয়েছে, "কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি তৈরি, প্রযোজনা, বিতরণ, নকল, সম্প্রচার, আমদানি, রপ্তানি, বাণিজ্য এবং ভাড়া দিতে পারবেন না।" পাশাপাশি আইটিই নামে পরিচিত আরেকটি আইনে বলা হয়েছে, "শালীনতা ভঙ্গ হয় এমন কোন কন্টেন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক দলিল বিতরণ ও সম্প্রচার নিষিদ্ধ।" এই আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কোন ফাঁস হওয়া ভিডিওতে যে কাউকে দেখা গেলে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে। 'অভিনেত্রী হতে চাইলে যৌন সম্পর্ক করতে হবে' নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই আইনকে ব্যবহার করে নির্যাতনকারী ও প্রতিশোধকামী পুরুষরা পার পেয়ে যাচ্ছে। কারণ নারীদের রয়েছে কলঙ্কের ভয় এবং আইনটি শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। সিতির ভালবাসার সম্পর্কের সূচনা অন্য সবার মতোই। তারা একই স্কুলে পড়তো। তাদের বন্ধুরা ছিল দু'জনেই পরিচিত। সে সময় তার প্রেমিককে খুবই বিশ্বস্ত, মনোযোগী এবং দয়ালু বলে তার মনে হয়েছিল। "খুবই বোকার মতো কাজ করেছিলাম আমি। ভেবেছিলাম সে-ই আমার স্বামী হতে যাচ্ছে। তাই তাকে আমার কিছু ছবি এবং ভিডিও তুলতে দিয়েছিলাম," তিনি বলেন। কিন্তু সম্পর্কের চার বছরের মধ্যে তার প্রেমিকের আচরণ বদলে যেতে থাকে। "আমার বন্ধুদের সাথে দেখা হোক সে সেটা চাইতো না। দিনে ৫০ বার ফোন করে জানতে চাইতো আমি কোথায় আছি, কার সঙ্গে আছি।" "আমার মনে হয়েছিল আমাকে খাঁচায় পুরে ফেলা হচ্ছে। যদি আমি খাঁচায় বন্দী থাকি, তাহলে সে খুশি। খাঁচা থেকে বের হলেই তার মাথা খারাপ হয়ে যেতো।" একদিন সিতির প্রেমিক হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এসে হাজির হয় এবং সিতিকে গালাগাল করতে থাকে। সিতির ছবিগুলো সে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে দেবে বলেও ভয় দেখায়। "সে আমাকে 'কুত্তি, 'সস্তা', 'পতিতা' ইত্যাদি নামে ডাকতে থাকে," জানান তিনি। "আরেকদিন তার সাথে গাড়িতে বসে আমি যখন বলছি যে আমাদের সম্পর্ক শেষ, সে তখন আমার গলা চেপে ধরেছিল।" "গাড়ি চালানোর সময় আমার খুব ভয় করতো। আত্মহত্যার কথা ভাবতাম। মাঝেমাঝেই মনে হতো চলন্ত গাড়ি থেকে বাইরে ঝাঁপ দিলে কেমন হয়!" 'আমিই ভিকটিম' সিতি তার সাবেক প্রেমিকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে নালিশ করতে চান না। কারণ অভিযোগ করতে হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া তার সব অন্তরঙ্গ ভিডিও এবং ছবি থানায় জমা দিতে হবে এবং সাক্ষী জোগাড় করতে হবে। "আমি পরিস্থিতির শিকার। কিন্তু তার পরও আমি চাইবো না যে এগুলো ছড়িয়ে পড়ুক," বলছেন তিনি। "পুলিশ আমাকে সত্যি সত্যি সাহায্য করবে এটাও আমি বিশ্বাস করি না। কারণ তাদের বেশিরভাগই পুরুষ। আমার পরিবারকেও কিছু বলতে পারছি না। কারণ ঘটনাটি সম্পর্কে তারা এখনও কিছুই জানে না।" পুলিশের কাছে অভিযোগ করার ব্যাপারে নারীদের এই দ্বিধা নিয়ে বিবিসির ইন্দোনেশিয়া বিভাগ পুলিশের আইজি পোল রাদেন প্রাবোয়ো আর্গোর সাথে কথা বলেছে। তিনি জানিয়েছেন, ভিকটিম যেখানে নারী, সেখানে অভিযোগ জানানোর ব্যাপারে বিশেষ নিয়মকানুনের ব্যবস্থা রয়েছে এবং এসব মামলার তদন্ত করবে নারী পুলিশ কর্মকর্তারা। কিন্তু আইনি সাহায্য সংস্থা এলবিএইচ-এপিআইকে বলছে, অনলাইনে লিঙ্গ-ভিত্তিক যেসব অপরাধ ঘটে, তার মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ সম্পর্কে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। সংস্থাটি বলছে, রিভেঞ্জ পর্নসহ অনলাইনে নারীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সহিংসতার মাত্রা অনেক বেড়েছে। এই মহামারির মধ্যেই তারা প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিনটি করে অভিযোগ পাচ্ছে। "এই পরিস্থিতির শিকার অনেক নারী মনে করেন, যে সাহায্য তাদের পাওয়া দরকার সেটি তারা পাচ্ছেন না। এখানে আইনি প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘ, আর আইন সাধারণত মেয়ে পক্ষ নেয় না।," বলছেন হুসনা আমিন। 'শোবার ঘরে সরকারি নজরদারী' ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৯ সালে একটি মামলা সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল। এতে পর্নোগ্রাফি আইনে এক নারীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই আইনে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের সাজার বিধান রয়েছে। গোপনে তোলা এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ওই মহিলা একাধিক পুরুষের সঙ্গে সেক্স করছেন, এবং ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। ওই নারীর পক্ষে মামলা লড়েছিলেন আস্রি ভিদিয়া। তিনি বলছেন, তার মক্কেল ছিল নির্দোষ। কারণ তিনি তার স্বামীর হাতে নিয়মিত নির্যাতিত হতেন এবং তিনি ছিলেন যৌন উদ্দেশ্যে পাচারের শিকার। পর্নোগ্রাফি আইনকে বড় বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে - এর কারণে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তার মন্তব্য। আস্রি ভিদিয়া বিষয়টি নিয়ে তিনি এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়েন যে গত বছর ইন্দোনেশিয়ার সাংবিধানিক আদালতে তিনি পর্নোগ্রাফি আইনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, "আমার মক্কেলের ওপর নির্যাতন চলেছিল দুই ভাবে - প্রথমত, সে একজন ভিকটিম হলেও পর্নোগ্রাফিতে একজন মডেল হিসেবে বিবেচনা করে তাকে জেল দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তাকে একজন যৌনকর্মী আখ্যা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে ছিল পরিস্থিতির শিকার।" ইন্দোনেশিয়ার নারীদের জন্য এই দুটি মামলার গভীর তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করেন মিজ ভিদিয়া। "নারী-পুরুষ ঘনিষ্ঠ হয়ে ছবি তুললে, বা ভিডিও করলে, তারপর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে, তাদের ছবি আর ভিডিওগুলো যদি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে জেল-জরিমানা হবে তাদেরই।" করোনাভাইরাস এবং সেক্স: আপনার কী কী জানা প্রয়োজন কিন্তু আদালত ২০২০ সালে চ্যালেঞ্জটি খারিজ করে দেয়। আস্রি ভিদিয়া বলছেন, এরপর নারীদের যৌন সহিংসতার হাতে থেকে রক্ষার আশা নিভু নিভু প্রদীপের মতো জ্বলছে। 'এভাবে চলতে পারে না' বন্ধুবান্ধবের সহায়তায় গত বছর থেকে সিতির জীবন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। "প্রতি রাতে আমি কাঁদতাম, প্রার্থনা করতেম। আমি আর নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল আমি পাগল হয়ে যাব। কিন্তু পরে কিছুটা সাহস ফিরে এলো।" সিতি আইনি সংস্থা এলবিএইচ-এপিআইকের সাহায্য নেয়ার পর আইনজীবী হুসনা আমিন সিতির সাবেক প্রেমিকের প্রতি একটি সমন পাঠিয়ে তার সব কার্যকলাপ বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন। সিতি সম্প্রতি টের পেয়েছেন যে তার সাবেক প্রেমিক তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। তার আশঙ্কা, এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আবার তার ছবি ও ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হবে। "আমি এখন কাউকেই বিশ্বাস করতে পারি না," বলছিলেন তিনি। বিবিসি ইন্দোনেশিয়া বিভাগ এসব বিষয়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু-রক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে জাতীয় কমিশন জানাচ্ছে, তারা একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে যেখানে যৌন সহিংসতার শিকার নারীরা নিজেরই বিচারের সম্মুখীন হবে না, নিজের মামলার জন্য তাদের নিজেদের প্রমাণ খুঁজে বের করতে হবে না এবং তার বক্তব্যকেই আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার রক্ষণশীল ইসলামপন্থীদের সরব প্রতিবাদের মুখে খসড়াটি আটকে আছে। তাদের আশঙ্কা এই আইনের মাধ্যমে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ককে অনুমোদন দেয়া হবে এবং নারীবাদকে উসকে দেয়া হবে। ফলে, সিতির মতো অনেকেই এখন এমন এক জীবনে আটকা পড়ে আছেন যেখানে হয় তাদের বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে চুপ থাকতে হচ্ছে, নয়তো মুখ খুলে বিচার, নিপীড়ন আর বৈষম্যের ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। অতিরিক্ত রিপোটিং: রাজা এবেন লুমবানরাউ এবং এনডাং নুরদিন ছবি: ডেভিস সুরিয়া
150813_sr_child_rape_feature
https://www.bbc.com/bengali/news/2015/08/150813_sr_child_rape_feature
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে কেন?
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ছেলে শিশুরাও। পুলিশের ধারণা শিশুরা একশ্রেণীর মানুষের যৌন বিকৃতির টার্গেটে পরিণত হয়েছে। শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছেন বিবিসির শায়লা রুখসানা। ঘটনা ১
আট বছরের শিশু সামিয়াকে (প্রকৃত নাম ব্যবহার করা হচ্ছে না) ঘরে রেখে এলাকার পানির কল থেকে পানি আনতে গিয়েছিলেন তার মা। ঘিঞ্জি এলাকার খুপরি ঘরগুলো একটির সাথে আরেকটি লাগোয়া। মনের মাঝে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও শিশুকন্যাটিকে একাই রেখে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু ফিরে এসে মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার মা। “তিন মাস আগে রাত নটার দিকে আমি পানি আনতে গেলাম। মেয়ে বলল সে একাই ঘরে থাকতে পারবে। এরপরে আমি পানি নিয়ে এসে দেখি আমার বাচ্চা ঘরে নাই। তখন ভাবলাম পাশের বাড়িতে যে পুরুষলোকটি বসা ছিল, সে কোথায় গেল? তখন আমি পাশের বাড়ির দরজা ধাক্কাই, কিন্তু কেউ খোলে না”। শিশুটির মা কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারেন তার মাত্র আট বছরের শিশুটিকে প্রতিবেশী বৃদ্ধ ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের শিকার আট বছরের একটি শিশুর মা বলছিলেন তারা এখন সামাজিক হেনস্থার মধ্যে রয়েছেন। “কি হয়েছে বাচ্চাটা পুরোপুরি খুলে বলতে পারছে না। বলে মা দাদা আমার পাজামা খুলে দিয়েছে। নিজের কাপড় খুলেছে। আমি খেলতেছিলাম। মুখ চেপে ধরে নিয়ে গেছে। প্রতিবেশী তো । তাই দাদা ডাকতো”। জানান শিশুটির মা। 'জানুয়ারি থেকে জুলাই: ২৮০ শিশু ধর্ষণের শিকার' আড়াইশোর বেশি মানবাধিকার সংগঠনের জোট শিশু অধিকার ফোরামে বলছ, গত ৭ মাসে বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৮০ টি। শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুছ সহীদ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন,গতবছর এই সংখ্যা ছিল ১৯৯টি। আর ২০১৩ সালে ১৭০টি এবং ২০১২ সালে ছিল ৮৬টি। এই সংখ্যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর বাইরেও থাকতে পারে। ঘটনা ২ কিছুদিন আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি আবাসিক মাদ্রাসার ছাত্রটি তার নিজের শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় পুলিশ ওই শিক্ষককে আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মাদ্রাসা শিক্ষক নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তবে এই বিষয়টিতে ধর্ষণের শিকার ছেলেটির পরিবারের সদস্যরা প্রথমে উদ্যোগ নিলেও পরে আর মামলা করতে এগিয়ে আসেন নি বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন। পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি। বেশিরভাগ শিশু ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ঘটনা এভাবেই আড়ালে থেকে যায় বলে উল্লেখ করছেন শিশু অধিকার ফোরামের আব্দুছ সহীদ মাহমুদ। তিনি জানান, মেয়ে শিশুদের পাশাপাশি ছেলে শিশু ধর্ষণের সংখ্যাও বাড়ছে। সেইসাথে ছেলে শিশুদের ধর্ষণের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্র এখন আরও বেড়েছে। “ছেলে এবং মেয়ের আনুপাতিক হিসাবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের যৌন নির্যাতনের সংখ্যা বেশি। কিন্তু ছেলেদের ধর্ষণের ঘটনা আগে সীমিত ছিল। বোর্ডিং স্কুল বা মাদ্রাসায় হত। এখন সেই ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে। লঞ্চ-ঘাটে, বাস টার্মিনালে কিংবা বিপণি বিতানে যেসব শ্রমজীবী শিশু থাকে কিংবা যারা পথশিুশ তারাও ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের দ্বারাও ধর্ষণের ঘটনা হচ্ছে। তবে সেগুলো চার দেয়ালের বাইরে আসে না”। এ ধরনের ঘটনা যে হালে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে তেমনটি বলতে রাজি নন অনেকেই। সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের ঘটনা বাড়ার পেছনে কাজ করছে। ঘটনা ৩ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সদ্য স্নাতক শেষ করা রেজাউর রহমান (ছদ্মনাম)। খুব ছোটবেলায় কাছের একজন আত্মীয়ের দ্বারাই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তিনি জানান, “তখন আমি ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। তো আমি আমার এক বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে বোনের দেবরের সাথে আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয়া হয়। তো রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ার পর হঠাৎ খেয়াল করলাম সে তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে আমার পশ্চাদ্দেশে গুঁতো দিচ্ছে। আমি উঠে কি হয়েছে জানতে চাইলে সে বলে তার হাত লেগেছে। এরপর আমি আবারও ঘুমিয়ে পড়লে সে একই কাজ আবার করে। এবং প্রায় সারারাতই সে এই কাজটি করে”। এরপরও আর দুয়েকবার এ ধরনের নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। রেজাউরের শিশুমনে বিষয়টি তৈরি করেছিল ভয় আর আতঙ্কের এক প্রতিক্রিয়া। সেই অনুভূতি তাকে আজও তাড়া করে। বিষয়টি এই প্রতিবেদক ছাড়া আর কারও কাছেই শেয়ার করতে পারেননি তিনি। সংখ্যা বাড়ছে নাকি খবর প্রকাশ হচ্ছে? নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের অধীনে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সেবায় গঠিত সরকারের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে ২০০০ সাল থেকে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকল্পটির পরিচালক আবুল হোসেন বলছেন, নির্যাতনের ঘটনাগুলো আগের মতই ঘটে চলেছে। তবে তা প্রকাশ পাচ্ছে আগের তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, আমাদের হিসেব মতে, সংখ্যা আসলে বাড়েনি, বরং মানুষের প্রকাশ বেড়েছে। সাম্প্রতিক কারণে মিডিয়ার কারণে খবরগুলো আসছে। বিষয়গুলো ঘটার সাথে সাথে মানুষ কমিউনিটিতে সেটা জানাচ্ছে”। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান শিশুদের ওপর নির্যাতন বাড়া কিংবা শিশু ধর্ষণ বাড়ার কারণ হিসেবে অনেকই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হচ্ছে, শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে । পুলিশ সদরদপ্তরের গণমাধ্যম বিভাগের এআইজি মোঃ নজরুল ইসলাম বলছেন, শিশুরা এখন একশ্রেণীর লোকের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “এটা ঠিক শিশু ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। তারা শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফী তৈরি করছে। একশ্রেণীর মানুষ শিশুদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখছে। এতে অনেক ক্ষেত্রে পণোর্গ্রাফির প্রভাব রয়েছে। শিশুদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। নানা শ্রেণীর এবং বয়সের ব্যক্তিরা এটি করছে”। শিশুদের ওপর বল খাটানো বা প্রভাবিত করা, ভয় দেখানো সহজ হয়। ফলে সেই সুযোগটি নিচ্ছে অপরাধীরা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন। তিনি বলছেন, মূলত দরিদ্র শ্রেণীর শিশুরা বাবা শ্রমজীবী বাবা-মায়েদের এবং তাদের অনুপস্থিতিতে এইসব শিশুদের দেখার কেউ থাকে না। আরেকটি গ্রুপ যারা নিজেরাই কর্মজীবী তারা, এবং গৃহকর্মীরা ধর্ষণের ঝুঁকিতে থাকছে বেশি। বাংলাদেশে পথবাসী, শ্রমজীবি এবং দরিদ্র শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রায়ই, বলছেন গবেষকরা। তিনি বলছেন, অনেকে অজ্ঞতার কারণে আর বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অনেকেই আদালত বা পুলিশের দোড়গোড়ায়া পৌঁছাচ্ছেন না। ফলে এসব অপরাধ ঘটছেই। “ অনেকে শিশু বা অভিভাবকই জানে না কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়। আর অনেকে দেখছেন অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে কিন্তু বিচার তো হচ্ছে না। বাইরে মিটমাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অনেক দেশে কিন্তু দ্রুত বিচার আইনে সাজা হয় এবং মানুষ তা দেখে সচেতন হয়”। অধ্যাপক নাসরীন বলছেন, শিশু মনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে। “ ভবিষ্যৎ জীবনে তারও এ ধরনের অপরাধ কর্মে জড়ানোর আশংকা থাকে। এইসব শিশুরা স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন না । সেও অন্যের প্রতি এমন আচরণ করে”। বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ধর্ষণের মামলা চলাকালীন বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি এবং বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা তৈরি করে, বলছেন শিশু অধিকার কর্মীরা। ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে কি ভাবছে রাষ্ট্র? মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ তুলছেন, জামিন অযোগ্য অপরাধ হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, অপরাধ করে সহজে জামিন পাওয়া গেলে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। “অপরাধ করে সহজে জামিন পাওয়া গেলে হয়তো অপরাধের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তবে অপরাধী জামিন পাবে না -আইনজীবী হিসেবে তো সেটা বলা যায় না। সুতরাং শিশু ধর্ষণের ব্যাপারে যদি আলাদা সেল করা হয় , মামলার গতি তদারকি করা হয়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমতে পারে” । অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মনে করেন, এ ধরনের মামলার বিচারের দীর্ঘসুত্রতা দূর করতে উদ্যোগ নেয়া দরকার। ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য আইনের সাহায্য নিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের সন্নিবেশ ঘটাতে গিয়ে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। বিষয়টি আরও সহজ করার যায় কি-না? অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে আইন সংশোধন করা যেতে পারে, যেখানে শিশু ভিকটিমকে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে না। “ আইন সংশোধন করা যেতে পারে এভাবে যে, এক্সপার্টদের কাছে ভিকটিমকে নেয়া হবে। এরপর তারা রিপোর্ট দেবে। এরপর আর কোনও প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে না। ওই চিকিৎসকদের রিপোর্টের ভিত্তিতে চার্জশিট দেবে পুলিশ। চিকিৎসকদের সাথে মানবাধিকার কর্মীও থাকতে পারেন”। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু এমন অনেক নজির আছে যে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন শিশু অধিকার কর্মীরা। তবে এ বিষয়ে অ্যটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিচারক স্বল্পতা এখানে একটি সংকট হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া মামলা ঝুলিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ডিফেন্স ল ইয়ারের মানসিকতারও পরিবর্তন আনতে হবে। সামাজিক হেনস্থা শেষ করার আগে আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই মিরপুরের আট বছরের শিশুটির কথা। চলে আসবার আগে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম শিশুটি এখন কেমন আছে? উত্তরে তিনি জানালেন, এই ঘটনার পর থেকে শিশুটি পুরুষ মানুষ দেখলেই আতঙ্কিত হয় পড়ছে। তার নিজের পিতাকেও সে সহ্য করতে পারছিল না। ধর্ষণকারী বর্তমানে কারাগারে আটক থাকলেও তার পরিবার বিষয়টি আপোষে মিটিয়ে ফেলতে চাপ দিচ্ছে। নির্যাতিত শিশুর পরিবারটি আপোষে রাজি নয় মোটেই। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পেলে আবার কোনও ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কি-না সেই আশংকায় রয়েছে এই পরিবারটি। দেখা যাচ্ছে নির্যাতনের শিকার হয়েও সামাজিক হেনস্থার ভয়ে কোণঠাসা থাকছে নির্যাতিত শিশুটির পরিবারটিই ।
news-45570095
https://www.bbc.com/bengali/news-45570095
‘আমার পরিবারই আমার স্বামীকে হত্যা করে সে ভিন্ন জাতের বলে’
২৪ বছর বয়সী প্রণয় পেরুমল্লাকে কয়েক দিন আগে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের মিরিয়ালগুড়া শহরে মেরে ফেলা হয়।
প্রণয় পেরুমল্লা এবং অমৃতা বর্ষিণী স্কুল থেকেই যাঁর সঙ্গে প্রেম, সেই অমৃতা বর্ষিণীকেই বিয়ে করেছিলেন প্রণয়। গর্ভবতী স্ত্রীকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে বেরিয়ে আসার সময়েই তাঁকে ঘাড়ে কোপ মারা হয়। পুলিশ বলছে, প্রণয়কে হত্যা করার জন্য পেশাদার খুনী নিয়োগ করেছিল তাঁর স্ত্রী অমৃতার পরিবারই। এর জন্য এক কোটি ভারতীয় টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। একমাসের বেশী সময় ধরে এই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। নলগোন্ডা জেলার পুলিশ সুপার এ বি রঙ্গনাথ জানিয়েছেন, অমৃতার বাবা, চাচা, তাদের ড্রাইভার আর বাবার পরিচিত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেরায় অমৃতার বাবা জানিয়েছেন, প্রণয় নীচু জাতির ছেলে ছিল, পড়াশোনাও ভাল মতো করে নি আর মধ্যবিত্ত লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। স্কুলে প্রথম দেখা থেকে শুরু করে চোখের সামনে স্বামীর হত্যা - সব কিছুই অকপটে বিবিসি তেলুগুর সংবাদদাতা দীপ্তি বাথিনীকে অকপটে জানিয়েছেন ২১ বছর বয়সী অমৃতা বর্ষিণী। ৫ মাসের গর্ভবতী অমৃতার সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে বসে। প্রণয় একেবারে নিজের মায়ের মতো আমার খেয়াল রাখত। আমাকে স্নান করিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে খাইয়ে দেওয়া, রান্না করা - সব কিছুই করত ও। আমার রোজকার জীবনের একটা অংশই ছিল প্রণয়। স্কুলে আমার থেকে একবছরের উঁচু ক্লাসে পড়ত ও। ছোটথেকেই দুজন দুজনকে পছন্দ করতাম। আমি যখন ক্লাস নাইনে, আর ও টেনে, তখনই প্রেম করতে শুরু করি। বেশী কথাবার্তা হত ফোনেই। দেখবেন, ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছিলাম - আমাদের দুজনের ছোটবেলার ছবি। লিখেছিলাম, 'ছোটবেলার প্রেম যার সঙ্গে, তাকেই বিয়ে করতে পারার থেকে ভাল কিছু হয় না। আমরা সবসময়ে একসঙ্গে থাকার জন্যই যেন জন্মেছি।' অমৃতা বর্ষিণী কথা বলেছেন বিবিসির সাথে এই যে কমাস পরে যে জন্মাবে, এই পেটে যাকে ধরেছি, এ তো আমাদের দুজনের প্রেমেরই চিহ্ন। প্রণয়কে চিরকাল আমার কাছে এ-ই রেখে দেবে। প্রথম থেকেই কখনও প্রণয়ের জাতি বা আর্থিক অবস্থার কথা ভাবি নি আমি। আমার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে আমি ওকে ভালবাসি আর একে অপরকে ভাল বুঝতে পারি। এটা একটা খুব ছোট শহর তো। সব খবর খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটাও জেনে গিয়েছিল বাড়িতে। ধমক-ধামক, ভয় দেখানো তো চলতই, গায়ে হাতও পড়েছে আমার বাড়িতে। তখনই আমরা ঠিক করি যে বিয়ে করব। আমি যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, সেকেন্ড ইয়ারে, তখনই, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে আমরা বিয়ে করি। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করাই নি তখন আমরা। আমার বাড়ির লোকজন ব্যাপারটা জানতে পেরে ঘরে বন্ধ করে রেখে দিয়েছিল আমাকে। আমার কাকা প্রণয়কে ভয় দেখিয়েছিল, আমাকে ডাম্বেল দিয়ে মেরেছিল। সবকিছুই হয়েছিল কিন্তু আমার মায়ের সামনে। আরও প্রায় জনা কুড়ি আত্মীয়স্বজনও সেখানে ছিল। কেউ আমার পাশে দাঁড়ায় নি। তারপরেই ঘরে আটকিয়ে রাখা হয়। রোজ কিছুটা ভাত আর আচার দেওয়া হত আমাকে খাবার জন্য। সবাই চাইছিল আমি প্রণয়কে যাতে ভুলে যাই। একটাই আপত্তি সবার - প্রণয় তপশীলি জাতির ছেলে। ছোট থেকেই আমার মা অন্য জাতের বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে বারণ করত। কিন্তু সেটা যে এই পর্যায়ে চলে যাবে, ভাবি নি কখনও। আরো পড়তে পারেন: প্রেম, বিয়ে - অতঃপর বন্দী আর শঙ্কার জীবন বাংলাদেশী কিশোর-কিশোরীর প্রেম শেষ হল ভারতে অনেকদিন ঘরে আটকিয়ে রাখার পরে এবছরের ২০ জানুয়ারী আর্য সমাজ মন্দিরে যখন আমরা আবার বিয়ে করতে গেলাম, তখনই প্রণয়কে অতদিন পরে দেখলাম। মাঝের সময়টায় শুধু ফোনে মাঝে মাঝে কথা বলতাম আমরা। নিহত প্রণয় পেরুমল্লা নিজের ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হত না বাড়ি থেকে। তাই শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে যেতাম হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার বা হাসপাতালের কারও ফোন থেকে খুব কম সময়ের জন্য প্রণয়ের সঙ্গে কথা হত। কী যে ভাল লাগত ওইটুকু সময়ের জন্য কথা বলতে পেরে! ওই সময়েই আমরা ঠিক করি যে আর্য সমাজে গিয়ে আবার বিয়ে করব, কারণ আগেরবারের বিয়েটার কোনও রেজিস্ট্রেশন করাই নি। কোনও কাগজপত্র কিছুই ছিল না আমাদের। প্রণয়ের বাড়িতেও অবশ্য কেউ আমাদের বিয়ের ব্যাপারে জানত না। বিয়ের পরেই আমরা চলে গিয়েছিলাম হায়দরাবাদে। দুজনেরই ভয় ছিল যে বাড়ি থেকে চাপ আসবে। প্রায় মাস দেড়েক হায়দরাবাদে ছিলাম আমরা। ওদিকে আমার বাবা খোঁজ নেওয়ার জন্য কয়েকটা গুণ্ডা ভাড়া করেছিল। তাই আবার আমরা মিরিয়ালগুড়ায় প্রণয়ের বাড়িতে থাকার জন্য ফিরে আসি। ভেবেছিলাম পরিবার পরিজনের মধ্যে থাকলে ভয়ের কিছু থাকবে না। প্ল্যান করছিলাম যে দুজনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ চলে যাব। কিন্তু এর মধ্যেই আমি গর্ভবতী হয়ে পড়লাম। তাই যতক্ষণ না সন্তানের জন্ম দিচ্ছি, ততদিন এখানেই থেকে যাব, এটাই ঠিক করেছিলাম আমরা। আর তারপরে পড়াশোনার জন্য কানাডা চলে যাওয়ার সব ব্যবস্থাও করা হয়ে গিয়েছিল। মা হওয়ার জন্য বোধহয় আমার বয়সটা একটু কম। কিন্তু প্রণয় ওর আত্মীয়স্বজনকে বোঝাতে পেরেছিল যে সন্তানের জন্ম দিতে পারলে আমি নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে আরও শক্ত হয়ে লড়তে পারব। আমার বাড়ির লোকদেরও জানিয়েছিলাম যে মা হতে চলেছি। প্রথম থেকেই ওরা বলছিল গর্ভপাত করিয়ে নেওয়ার জন্য। কদিন আগে গণেশ চতুর্থীর আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য বাড়িতে ফোন করেছিলাম। তখন আবারও বলেছিল অ্যাবরশন করানো কথা। ভয় একটা সবসময়েই ছিল যে আমার বাবা আর তার ভাড়া করা গুণ্ডারা ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেটা যে এরকম ভয়ানক হবে, দু:স্বপ্নেও ভাবি নি। সেদিন একটু দেরী করে উঠেছিলাম ঘুম থেকে। এগারোটা নাগাদ। পিঠে একটা ব্যথা হচ্ছিল। আমি প্রণয়কে ডেকেছিলাম। এখনও কানে বাজছে ওর উত্তরটা, 'কন্না, আসছি'। ও আদর করে আমাকে কন্না বলে ডাকত। আমি জলখাবার খেয়ে নিয়েছিলাম। প্রণয় খায় নি। ও আমাকে আগে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে দুজনে কথা বলছিলাম যে পিঠের ব্যথাটা কী করে সারানো যায়। এরপরে যখন ডাক্তার ভেতরে ডাকলেন, তখনই আমার বাবা ওই ডাক্তারকে ফোন করেন। গর্ভপাত করানোর ব্যাপারে কথা হয় দুজনের। 'আমি হাসপাতালে নেই' বলে ডাক্তার বাবার ফোনটা কেটে দিয়েছিলেন। তারপরেই বাবার একটা মিসড কল এসেছিল আমার ফোনে। ডাক্তারকে দেখিয়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়েছিলাম আমরা। আমি প্রণয়কে কী যেন একটা জিজ্ঞাসা করছিলাম। জবাব না পেয়ে ওর দিকে তাকাতে গিয়ে দেখি ও মাটিতে পড়ে আছে আর একটা লোক ওর ঘাড়ে কোপ মারছে। সঙ্গে আমার শাশুড়িও ছিলেন। তিনি ওই লোকটাকে ধাক্কা মারা চেষ্টা করেন। হাসপাতালের ভেতরে দৌড়ে যাই আমি লোকদের সাহায্য চাইতে। ভিন্ন জাতের হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্ত্রী বলছেন কিছুক্ষণ পরে বাবাকে ফোন করেছিলাম। তিনি বললেন, 'আমি কী করতে পারি! হাসপাতালে নিয়ে যাও!' কদিন আগের কয়েকটা ঘটনা এখন মনে পড়ছে একে একে। কিছুদিন আগে বাবার একটা ছোট অপারেশন হয়েছিল। মা বলেছিল আমি যেন বাবাকে একবার দেখতে যাই। আমি মাকে মিথ্যা বলেছিলাম যে আমরা বেঙ্গালুরু যাচ্ছি। পরের দিন একজন লোক এসেছিল আমার শ্বশুরবাড়িতে। বাইরে একটা গাড়ি দাঁড় করানো ছিল, সেটার ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছিল। অদ্ভুত উচ্চারণ ছিল লোকটার। আমার শ্বশুর তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে হাসপাতালে যে প্রণয়ের ঘাড়ে কোপ মারছিল, ওই গাড়ির খোঁজ করতে আসা লোকটা সে-ই। বাবা কিছুদিন আগে থেকেই বোধহয় প্ল্যান করছিল আমাদের বড়সড় ক্ষতি করার। এখনও পর্যন্ত আমার বাড়ির কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলে নি। মা আগে নিয়মিত ফোন করত। আমার শরীর স্বাস্থ্য কেমন আছে জানতে চাইত। জেনে বুঝেই হোক বা অজান্তে হয়তো সেইসব কথা বাবাকে জানিয়ে দিত মা। ওরা সকলেই দোষী এই ঘটনার জন্য। ওদের বাড়িতে আর কখনও ফিরব না আমি। প্রণয়ের পরিবারই এখন আমার পরিবার। আমার শ্বশুর-মশাই মি. বালাস্বামী, প্রণয়ের মা হেমলতা আর ওর ছোটভাই অজয় আমাকে সবসময়ে আগলিয়ে রাখছেন। কখনও একা ছাড়েন না আমাকে। প্রণয় খুন হয়ে যাওয়ার পরে মাঝে মাঝেই নারী সংগঠন বা দলিত সংগঠনগুলো বাড়িতে আসছে। 'জয় ভীম' বা 'প্রণয় অমর রহে'র মতো স্লোগান দিচ্ছেন ওরা। ওই স্লোগান শুনেই আমার শাশুড়ির চোখে জল এসে যায়। আমি ওঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে অজয়ই তো এখন আমার ভাই। আর এই ঘরেই আমার সন্তান জন্ম নেবে। একটা ফেসবুক পেজ বানিয়েছি আমি 'জাস্টিস ফর প্রণয়' নামে। সমাজ থেকে জাতপাতের ব্যাপারটাই যাতে উঠে যায়, সেই কাজের জন্য ওই পেজটা এখন ব্যবহার করতে চাই আমি। প্রণয় সবসময়ে বলত প্রেমিক-প্রেমিকার জাত নিয়ে কোনও সমস্যা তৈরী হওয়া উচিত না। জাতপাতের জন্য আমার এত ভুগলাম, এত কষ্ট সহ্য করলাম। কিন্তু সে-ই চলে গেল। আমার ইচ্ছা আছে ওর একটা মূর্তি শহরের ঠিক মাঝখানে বসাবো। যেখান থেকে যা অনুমতি লাগে যোগাড় করব। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনরা ভয় পাচ্ছেন যে আমার বাবা আমার অনাগত সন্তান বা শ্বশুরবাড়ির কারও ক্ষতি না করে দেয়। একই সঙ্গে আমার আর সন্তানের ভবিষ্যতের জন্যও ওরা ভাবছেন। নিজের মেয়ের মতোই দেখেন ওরা আমাকে। আবার এটাও তাঁদের মাথায় ঘুরছে যে আমাকে আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে হবে। কিন্তু সেখানে একটাই সমস্যা। প্রেম-বিয়ে এসব নিয়ে পরিবারের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে আমি তো পড়াশোনাটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে আমি চাই, আমার আর প্রণয়ের সন্তান বেড়ে উঠবে একটা সাম্যের পৃথিবীতে। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: রোহিঙ্গা নির্যাতন: প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আইসিসি মোবাইলের নতুন কলরেট নিয়ে প্রতিবাদ ২৩ হাজার পোস্ট-মর্টেম করেছেন যিনি
news-54248963
https://www.bbc.com/bengali/news-54248963
ফিনসেন ফাইলস: ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য অর্থ দান করেন চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক রোমান আব্রামোভিচ
বিবিসির আরবি বিভাগের এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে রুশ ধনকুবের এবং ইংলিশ ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচের কিছু কোম্পানি এমন একটি ইসরায়েলি কোম্পানিকে ১০ কোটি ডলার দান করেছে -যারা অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে ইহুদি বসতি স্থাপনের কাজ করে।
রোমান আব্রামোভিচকে সারা দুনিয়ার লোক জানে চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক হিসেবে অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের এই সংগঠনের নাম এলাদ। সিলওয়ানকে তারা ডাকেন 'ইর ডেভিড' বলে - যে হিব্রু নামের অর্থ 'সিটি অব ডেভিড'। এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তখন থেকে এ পর্যন্ত এই সিলওয়ানে প্রায় ৭৫টি বাড়িতে ইহুদি পরিবারের বসতি স্থাপন সম্পন্ন করেছে এলাদ। এ প্রতিষ্ঠানটি আবার পর্যটনের ক্ষেত্রেও কাজ করে। সিটি অব ডেভিডের পুরাতাত্বিক আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেখতে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক আসে। আর ওই পর্যটক আকর্ষণের স্থানগুলো পরিচালনা করে তারাই। এলাদের সাবেক বিপণন পরিচালক হচ্ছেন শাহার শিলো। তিনি বিবিসিকে বলছেন, এলাদের কৌশলটা হলো, তারা সিটি অব ডেভিডে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি করার জন্য পর্যটনকে ব্যবহার করছে। এলাদ তার কাজের অর্থায়নের জন্য নির্ভর করে দাতাদের ওপর । গত ২০০৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তারা দান হিসেবে যে অর্থ পেয়েছে - তার অর্ধেকই এসেছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের (বিভিআই) চারটি কোম্পানি থেকে। তবে এই কোম্পানিগুলোর পেছনে যারা আছেন, তাদের নাম এতকাল সবার অজানাই ছিল - অন্তত এখন পর্যন্ত । ফিনসেন ফাইলস সম্প্রতি 'ফিনসেন ফাইলস' নামে যেসব ব্যাংকিংখাতের দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে - তার মধ্যে কিছু দলিলপত্রে বিভিআইয়ের ওই চারটি দাতা কোম্পানির নাম আছে। এসব দলিলপত্রে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক লেনদেন এবং কোম্পানির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য রিপোর্ট করেছে। বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে মি আব্রামোভিচ এলাদকে ১০ কোটি ডলার দান করেছেন এসব দলিলপত্র ফাঁস করা হয়েছে বাজফিড নিউজের কাছে - যা তারা শেয়ার করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম এবং বিবিসির সাথে। এই সব দলিল পত্রে দেখা যায় রোমান আব্রামোভিচের নাম। তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক। এলাদকে অর্থ দান করে এমন তিনটি কোম্পানির চূড়ান্ত মালিক হচ্ছেন মি. আব্রামোভিচই - আইনের ভাষায় যাকে বলে 'বেনেফিশিয়াল ওনার' । আর চতুর্থ কোম্পানিটিও নিয়ন্ত্রণ করেন তিনিই। এলাদের এ্যাকাউন্টে দেখা যায়, এই কোম্পানিগুলো তাদেরকে যে অর্থ দিয়েছে তার পরিমাণ এখনকার বিনিময় হারে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি হবে। এর মানে হলো গত ১৫ বছরে এলাদকে এককভাবে সবচেয়ে অর্থ দান করেছেন রোমান আবামোভিচ। পুরাতাত্বিক খনন কাজ অধিকৃত এলাকায় যেসব আইনের অধীনে পুরাতাত্বিক খনন কাজ চালানো হয়, তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। এমন হতে পারে ইসরায়েল এলাদকে যেভাবে সিলওয়ানে যেসব পুরাতাত্বিক অনুসন্ধান চালাতে দিচ্ছে - তা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। তার ওপর অধিকৃত এলাকায় বসতি স্থাপন করতে দেয়ার মধ্যে দিয়েও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করছে বলে মনে করা হয়। সিটি অব ডেভিডের পুরাতাত্বিক এলাকাগুলো দেখতে লক্ষ লক্ষ পর্যটক আসে আরো পড়তে পারেন: ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি এলো যেভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে আরব বিশ্ব, কতটা রয়েছে ফিলিস্তিনিদের জন্য আবেগ-সমর্থন ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতের মূলে যে দশটি প্রশ্ন হারাম আল-শরিফ কেন এত স্পর্শকাতর একটি স্থান? ছ'দিনের যে যুদ্ধে পশ্চিম তীর ও জেরুসালেম দখল করে ইসরাইল কিন্তু ইসরায়েল এলাকাটি 'অধিকৃত' বলে মনে করে না এবং এসব ধারণা প্রত্যাখ্যান করে। এলাদ বলছে, এখানে পুরাতাত্বিক অনুসন্ধান চালানো ইহুদিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন। এলাদ বিবিসিকে বলেছে, তারা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত ইসরায়েলের আইন ও বিধিসমূহ এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার শর্তগুলো মেনে চলে। রোমান আব্রামোভিচ তাদের দাতাদের একজন কিনা, এ প্রশ্ন করা হলে এলাদ বলেছে, তাদের নীতি হচ্ছে অর্থদাতাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা। মি. আব্রামোভিচের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, "মি. আব্রামোভিচ ইসরায়েলি এবং ইহুদি সুশীল সমাজের একজন নিবেদিতপ্রাণ ও উদার সমর্থক। গত ২০ বছরে তিনি স্বাস্থ্যসেবা, বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং ইসরায়েল ও বিশ্বের অন্যত্র ইহুদি কমিউনিটির জন্য ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি দান করেছেন।" এই অর্থায়ন ছাড়া এলাদ এই ফিলিস্তিনি এলাকাটিতে ইহুদিদের উপস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে এত দ্রুত ও সফলভাবে কাজ করতে পারতো না। সম্পত্তি আইন বসতিস্থাপনকারীরা বাস করেন এমন কিছু বাড়ি তাদের পূর্বতন ফিলিস্তিনি মালিকদের কাছ থেকে কিনে নেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য কিছু বাড়ি থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে - এ্যাবসেন্টি প্রপার্টি ল' নামে একটি বিতর্কিত ইসরায়েলি আইনের মাধ্যমে। ২০০৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এলাদ যে অর্থ পায় তার অর্ধেকই ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের (বিভিআই) চারটি কোম্পানি থেকে আসা। এই আইনটির মাধ্যমে সংঘাতের কারণে যে ফিলিস্তিনিরা বাড়ি থেকে চলে গেছে বা পালিয়ে গেছে - সেই সব বাড়ির দখল নিয়ে নিতে পারে ইসরায়েল। এরকমই একটি ঘটনার কেন্দ্রে আছে সুমারিন হাউস। এটির অবস্থান এলাদের যে দর্শনার্থী কেন্দ্র - তার ঠিক পাশেই। একটি পরিবারের ১৯ জন সদস্য সেখানে বাস করে - যার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ জনের বয়স দু'মাসেরও কম। পরিবারের মা আমল সুমারিন বলছিলেন, আমি বিয়ের পর এখানে থাকতে এসেছিলাম। আমার স্বামী তখন তার চাচা হজ মুসা সুমারিনের সাথে থাকতেন। "তার স্ত্রী মারা যাবার পর আমিই তার যত্ন নিতাম, রান্না করে তাকে খাওয়াতাম। তিনি স্নান করার সময় আমার স্বামী তাকে সাহায্য করতো, তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতো। তিনি আমাকে বলতেন, বাছা এ বাড়ি তোমারই। তোমার আর তোমার স্বামীর জন্যই এ বাড়ি।" এলাদ চিহ্নিত বাড়িগুলোতে ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে এবং তারা পুরাতাত্বিক স্থানও পরিচালনা করে মুসা সুমারিন মারা যান ১৯৮৩ সালে। এর চার বছর পর ১৯৮৭ সালে এ্যাবসেন্টি আইনে ইসরায়েল এ বাড়ির দখল নিয়ে নেয়। বাড়িটা ইহুদি ন্যাশনাল ফান্ড বা জেএনএফের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হেমনুতার কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। জেএনএফের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে ইহুদি জনগণের পক্ষ থেকে জমি কেনা এবং বাড়িঘর নির্মাণ করা। উনিশশো একানব্বই সালে হেমনুতা আদালতে আর্জি জানায় যেন সুমারিন পরিবারকে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সেই থেকে এ নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। এতে সুমারিনদের অর্থায়ন করে সাহায্য করছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং কিছু বেসরকারি সংস্থা। গত ১০ বছর ধরে সুমারিনদের আইনজীবী হচ্ছেন মোহাম্মদ দাহলে। তিনি বিবিসিকে বলছেন, যদি কোন ফিলিস্তিনির বাড়িকে একবার ইহুদি বা ইসরায়েলি সম্পত্তি বলে ঘোষণা করা হয়, তাহলে তা টিকিয়ে রাখার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। সুমারিন পরিবার ১৯৯১ সাল থেকে ইসরায়েলি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়ছে সত্যিই তাই। আগস্ট মাসে সুমারিনদের পরিবার জেরুসালেমের জেলা আদালতে তাদের আপিলের মামলায় হেরে যায়। তারা এখন ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। সেখানে মামলার শুনানি হবে ২০২১ সালের এপ্রিলে। আইনী যুদ্ধ বিবিসি নিউজের আরবি বিভাগ জানতে পেরেছে যে এলাদ চেষ্টা করছে উচ্ছেদের তারিখ এগিয়ে আনতে। তারা এজন্য এই মামলার সংশ্লিষ্ট সব আইনি খরচ পরিশোধ করতে রাজী হয়েছে। ১৯৯১ সালে হেমনুতাকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা বলা হয়। তা ছাড়াও সিলওয়ান এলাকার আরো কয়েকটি পরিবারের উচ্ছেদের মামলার খরচও তারা দিচ্ছে। হেমনুতা মামলার ব্যাপারে কোন প্রশ্নের জবাব দেয়নি। এলাদ মামলার সব খরচ এখনো দিয়ে চলেছে কিনা - তা তারা নিশ্চিত করেনি। এলাদ বলেছে, তাদের সব বাড়ি-জমি নিরপেক্ষ এবং আইনগতভাবেই পাওয়া। অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমের সিলওয়ানে বহু ফিলিস্তিনি উচ্ছেদের সাথে এলাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় "সিটি অব ডেভিডে কখনো আদালত, মামলা ও মামলা উপস্থাপনের সুযোগ, এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া কোন ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে দেয়া হয় নি" - বলছেন ডরন স্পিয়েলম্যান। কিন্তু মোহাম্মদ দাহলে বলছেন, "পরিস্থিতিটা এখানে এমন যে একটি জাতিগত গোষ্ঠী তাদের নিজ স্বার্থের জন্য আইন করছে, আর অন্য জাতিগোষ্ঠী ওই আইনের কারণে দুর্ভোগে পড়ছে। অর্থায়নের পাশাপাশি এলাদের প্রভাবও বেড়েছে। ইসরায়েলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান ইসরায়েলি বসতির কড়া সমর্থক, এবং তিনি সিটি অব ডিভিডে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশও নিয়েছেন। ২০০৭ সালে রোমান আব্রামোভিচের কোম্পানি সহ বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া দানের অধিকাংশই খরচ হয় বসতি নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যখন ২০১৯ সালে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তখন ফ্রিডম্যান ছিলেন তার একজন পৃষ্ঠপোষক। তা ছাড়া ২০২০ সালে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, তখন এলাদের বহু জায়গাকে ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয় - যার সংরক্ষণ প্রয়োজন। এই জায়গাগুলোর সবই অধিকৃত এলাকায়।
news-43811333
https://www.bbc.com/bengali/news-43811333
বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে দুর্ভাবনায় ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা
বাংলাদেশে এ বছরের শেষে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটির ব্যাপারে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের চিন্তা-ভাবনা কী? অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি ভারতীয় থিংক ট্যাংক এই নির্বাচন সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ডিস্টিংগুইশড ফেলো মনোজ যোশী এই নির্বাচন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য 'চ্যালেঞ্জ' ছুঁড়ে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে ভারতের মোদি সরকার কী অবস্থান নেবে? মনোজ যোশীর এই বিশ্লেষণটি বুধবার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রকাশ করে। 'বাংলাদেশ পোলস পোজ এ চ্যালেঞ্জ টু রিজিওনাল স্টেবিলিটি' নামে এই লেখায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে। মনোজ যোশি লিখেছেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, তাতে মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সেই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এবং সেসময় অনেক সহিংসতা হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশা বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন যেন আগের বারের চাইতে বিশ্বাসযোগ্য হয়। বিএনপির ব্যাপারে ভারতের সন্দেহ মনোজ যোশী মনে করেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাকে ভারত কিছুটা উদ্বেগের চোখে দেখে। এর কারণগুলো তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে ভারত বিএনপির ব্যাপারে সন্দিহান। বিএনপি এর আগে যে দু দফা ক্ষমতায় ছিল (১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬) সেসময় বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদ শেকড় গেড়েছিল এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানের সমর্থন পেয়েছিল। আর বাংলাদেশ এই বিষয়টি না দেখার ভান করেছিল। বাংলাদেশে যেভাবে ইসলামী জঙ্গীদের তৎপরতা বাড়ছে, এমনকি আত্মঘাতী হামলা পর্যন্ত হয়েছে, সেখানে এই সমস্যা মোকাবেলায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগকেই বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে ভারত। মনোজ যোশী লিখেছেন, "কিছু ভারতীয় কর্মকর্তা বলছেন, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ এবং তৃতীয় দেশগুলোর গুপ্ত সংস্থার তৎপরতা মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের একযোগে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ ইতিবাচক। তার বলছেন, ইসলাম জঙ্গীবাদ দমনে শেখ হাসিনা খুবই সক্রিয়। অথচ বিএনপি ইসলামী জঙ্গীবাদে যদি উৎসাহ নাও দিয়ে থাকে, তারা এটিকে সহ্য করেছে।" প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ভারতীয় কর্মকর্তারা অবশ্য আবার একই সঙ্গে এমন দাবিও করছেন যে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রশ্নে তারা নিরপেক্ষ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত বছরের অক্টোবরে যখন বাংলাদেশ সফরে যান, তখন যে তিনি বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া এবং তাঁর দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, সেটি তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা মনোজ যোশী বলছেন, বাংলাদেশে যে নির্বাচন এ বছরের শেষে হওয়ার কথা, সেটাকে 'বিশ্বাসযোগ্য' করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক, কিন্তু তারা চায় একটি 'দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের' অধীনে এই নির্বাচন হোক, যে কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে সম্প্রতি তারা 'কেয়ারটেকার সরকারের' অধীনে নির্বাচনের দাবিতেও আন্দোলন শুরু করেছে। বিএনপি আশা করছে, ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ, সেটি তাদের পক্ষে যাবে। তবে বিএনপির নিজের সাংগঠনিক অবস্থা খুব ভালো নেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অনেক মামলা ঝুলছে। লন্ডনে বসে এখন দলটি পরিচালনা করছেন তাঁর ছেলে তারেক রহমান। বিএনপির ব্যাপারে ভারতের সন্দেহ কাটছে না বিএনপির সাবেক প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামী এখন আর নিবন্ধিত দলও নয়, কাজেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কিন্ত দলটি তাদের ছাত্র সংগঠন 'ইসলামী ছাত্র শিবিরের' মাধ্যমে এখনো রাস্তায় লোক জড়ো করার উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রাখে। নির্বাচনে শেখ হাসিনার সমস্যা মূলত দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা থেকে উৎসারিত। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আলাদা ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যদিও ভালো করছে, ভারতের চেয়েও তাদের প্রবৃদ্ধি ভালো, তারপরও সরকারের ভেতর অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে যা সহজে কাটানো যাচ্ছে না। সেনাবাহিনীর ভূমিকা মনোজ যোশী বলছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এখনো পর্যন্ত যদিও নিরপেক্ষ, ২০০৬ সালে কিন্তু তারা একটি কেয়ারটেকার সরকারকে দুবছর ধরে মদত দিতে হস্তক্ষেপ করেছিল। মনোজ যোশী মনে করেন, যদি আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে, তখন এমন সম্ভাবনা আছে যে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য করতে সেনাবাহিনীকে টেনে আনা হতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনা এখনো পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে তার খুব কাছাকাছি রেখেছেন। তিনি সেনাবাহিনীর আকার দ্বিগুন করেছেন, তাদের জন্য বাজেট বাড়িয়েছেন উদারভাবে, নতুন সেনা ঘাঁটি স্থাপন করেছেন এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত করেছেন। আঞ্চলিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে একতরফা নির্বাচন হয়, সেটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর ভুরু কুঁচকিয়েছিল। কিন্তু এটি চীনকে সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার। চীনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব দুদিক থেকে- প্রথমত ভারতকে মোকাবেলায় কাজে লাগানো, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মুখে এবং মিয়ামারের প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থান সেটিকে কাজে লাগানো। কারণ মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের বিরাট বিনিয়োগ আছে। অন্যান্য খবর: জাতিসংঘের কালো তালিকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী 'ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়েছে মহাভারতের যুগে' ইউরোপে কিভাবে 'দাসপ্রথা' চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া ? বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। মনোজ যোশী বলছেন, ভারত যদিও বাংলাদেশের বহুবছরের মিত্র, এখন চীন সেখানে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০০৭ সালের পর থেকে চীন বাংলাদেশে প্রায় তিনশো কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। তারা বাংলাদেশে সেতু, সড়ক থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অনেক কিছুই নির্মাণ করছে। তারা এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র যোগানদাতা। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে গিয়ে আরও দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন। এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে চীন হয়ে উঠবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশ। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তাহলে কী দাঁড়াতে পারে? এ প্রশ্ন তুলে মনোজ যোশী দুই ধরণের আশংকার কথা বলছেন। এক: সবচেয়ে খারাপ যে পরিস্থিতির দিকে বাংলাদেশ যেতে পারে তা হলো সেখানে সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলি দুর্বল হয়ে ইসলামী গোষ্ঠীগুলো সেখানে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে (হেফাজতে ইসলাম)।দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে সেনা সরকার গঠিত হতে পরে, যেটি দেশটির ইতিহাসে এর আগে কয়েক বার ঘটেছে। মনোজ যোশীর উপসংহার হচ্ছে, এই মূহুর্তে বাংলাদেশ হয়তো তুলনামূলকভাবে একটি ভালো অবস্থানে আছে, কিন্তু ভবিষ্যতে নতুন ধরণের খুবই সহিংস এক ইসলামী জঙ্গীবাদ দেশটিকে ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলতে পারে। ওআরএফ কারা চালায়? অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ভারতের নীতিনির্ধারণে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানটির এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন চেয়ারম্যান আর কে মিশ্রর সঙ্গে জর্ডানের প্রিন্স হাসান বিল তালাল অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) ভারতের একটি সুপরিচিত থিংক ট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ওআরএফ নিজেদেরকে 'স্বাধীন' বলে দাবি করলেও ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী রিলায়েন্সের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। রিলায়েন্স গ্রুপ এই থিংক ট্যাংকের অন্যতম স্পন্সর। একই সঙ্গে ভারত সরকারের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে এক যোগে কাজ করে ওআরএফ। প্রতি বছর নয়াদিল্লিতে 'রাইসিনা ডায়ালগ' নামে বহুপাক্ষিক সম্মেলন হয়, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন সেটির মূল আয়োজক, আর এতে সহায়তা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সম্মেলনে মূলত ভূ-রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা আলোচনায় অংশ নেন। ভারত সরকারের আঞ্চলিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এখন ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করা হয়। ওআরএফ এর ফেলো মনোজ যোশী ভারতের খুবই সুপরিচিত একজন সাংবাদিক এবং তিনি ভারত সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের একজন সদস্য ছিলেন।
news-45936517
https://www.bbc.com/bengali/news-45936517
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজি হত্যাকাণ্ড: সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত কারা এই ১৫ জন?
সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ১৫ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে তুরস্কের গণমাধ্যম।
জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত সন্দেহভাজন। তুর্কি কর্মকর্তাদের দাবি, সৌদি নাগরিকের সমন্বয়ে গঠিত ওই হিট স্কোয়াড মিস্টার খাসোগজির আলোচিত অন্তর্ধানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সৌদি সরকারের সমালোচনাকারী জামাল খাসোগজি গত ২রা অক্টোবর ইস্তান্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন, কিন্ত এরপর থেকে তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। মিস্টার খাসোগজি কনস্যুলেটে পৌঁছানোর ঘণ্টাখানেক আগেই সন্দেহভাজনদের বেশিরভাগ দু'টি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে ইতাবুলে আসেন। বিমান দু'টির টেইল নম্বর ছিল এইজিএসকে - ১ এবং এইজিএসকে - ২। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: খাসোগজি হত্যাকাণ্ড: যে গল্পের শেষ নেই খাসোগজি হত্যা: 'বলির পাঁঠা' জেনারেল আসিরি? 'জামাল খাসোগজিকে খুন করে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়েছে' জামাল খাসোগজি, সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক ওই একইদিন তাঁরা আবার ওই বিমানগুলোতেই সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ফিরে যান। তুর্কি কর্মকর্তাদের ধারণা, যারা ইস্তান্বুলে এসেছিলেন তাঁরা সবাই সৌদি নাগরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তবে সৌদি আরব শুরুতে মিস্টার খাসোগজির নিখোঁজের পেছনে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে তারা এটা জানায় যে কনস্যুলেটের ভেতর হাতাহাতির এক পর্যায়ে ওই সাংবাদিক মারা যান। সন্দেহভাজনদের নাম ও ছবিসহ তালিকা: ১. ড. সালাহ মুহাম্মদ এ তুবাইজি: সাতচল্লিশ বছর বয়সী এই ব্যক্তি একজন ফরেনসিক প্যাথোলজিস্ট, যিনি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। ড. সালাহ মুহাম্মদ এ তুবাইজি। ২০১৫ সালে তিনি টানা তিন মাস অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফরেনসিক মেডিসিনে কাজ করেন। নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টে তাঁর পরিচয় দেয়া আছে ফরেনসিক মেডিসিনের অধ্যাপক এবং সৌদি সাইন্টিফিক কাউন্সিল অব ফরেনসিকের প্রধান হিসেবে। তাঁর এই টুইটার অ্যাকাউন্টটি সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৪ সালে লন্ডনের একটি আরবী ভাষার সংবাদপত্র "আশরাক আল-আওসাত"-এর খবরে জানা যায়, ড. তুবাইজি সে সময় সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেনারেল ডিরেক্টরেট অব পাবলিক সিকিউরিটির ফরেনসিক সায়েন্স বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর ছবিযুক্ত একটি সাক্ষাতকারে দেখা যায় যে তিনি সেই পদের উপযুক্ত ইউনিফর্ম পরে আছেন। সেই সাক্ষাতকারে তিনি নিজের নকশা করা একটি ভ্রাম্যমান পরীক্ষাগার নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর ওই ল্যাবরেটরির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল সেখানে মাত্র সাত মিনিটের মাথায় প্যাথোলজিস্টরা লাশের ময়নাতদন্ত করতে পারেন। হজ পালন করতে এসে যখন হাজীরা মারা যান, তখন যেন দ্রুততম সময়ে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যায়, সে লক্ষ্যেই এই পরীক্ষাগারটি নকশা করেছিলেন তিনি। তুর্কি কর্মকর্তারা এটাও জানান যে রিয়াদ থেকে ইস্তান্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় ডা. তুবাইজি একটি "বোন ‍স" বা করাত বহন করছিলেন। তিনি বেলা সোয়া তিনটার দিকে রিয়াদ থেকে ইস্তান্বুলে পৌঁছান এবং সৌদি কনস্যুলেটের পাশেই মুভেনপিক হোটেলে অবস্থান করেন। পরে রাত ১১টার দিকে ব্যক্তিগত বিমানে দুবাই হয়ে রিয়াদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তুর্কি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মিস্টার খাসোগজির অন্তর্ধানের দিনে কনস্যুলেটের ভেতরের অডিও রেকর্ডিংয়ে সম্ভবত ড. তুবাইজির কণ্ঠ শোনা গিয়েছে। তাদের মতে, সেখানে খাসোগজিকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। এরপর সৌদি কর্মকর্তারা তাঁর লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলেন। জামাল খাশোগজির সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার সিসিটিভি ফুটেজ। এরপর তাদের কয়েকজন ওই দুটি ব্যক্তিগত বিমানে এবং বাকিরা বাণিজ্যিক বিমানে ইস্তান্বুল ছেড়ে যায়। তুর্কি কর্মকর্তারা ওই অডিও রেকর্ড থেকে একজন ডাক্তারকে সনাক্ত করেছেন, যিনি কিনা মিস্টার খাসোগজির মৃতদেহ টুকরো করার সময় অন্যদেরও তার সঙ্গে হেডফোনে গান শোনার কথা বলছিলেন। যে ব্যক্তিগত বিমানে ওই ১৫ জন চলাচল করেছেন, সেগুলো স্কাই প্রাইম অ্যাভিয়েশন সার্ভিসের উড়োজাহাজ। গত বছর দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে এই প্রতিষ্ঠানটিকে বাজেয়াপ্ত করেছিল সৌদি সরকার। মিস্টার খাশোগজির অন্তর্ধানের বিষয়ে ড. তুবাইজি কোন মন্তব্য করেননি। তবে এক ব্যক্তি নিজেকে তুবাইজির 'আঙ্কেল' পরিচয় দিয়ে টুইট-বার্তায় বলেছেন যে, ড. তুবাইজি কখনোই এ ধরণের অপরাধ করতে পারেন না। মাহের আবদুল আজিজ এম মুতারেব। ২. মাহের আবদুল আজিজ এম মুতারেব: ৪৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি লন্ডনের সৌদি দূতাবাসে দুই বছর ধরে কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। ২০০৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের প্রকাশিত এক নথি থেকে জানা যায়, এই নামের একজন ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করতেন। তিনি একজন ইন্টেলিজেন্স সিকিউরিটি অপারেটিভ বলে বিবিসিকে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেই সূত্র ২০১১ সালে মিস্টার মুতারেবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং তিনি তাকে সৌদি আরবের হয়ে স্পাইওয়্যার প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। সেই প্রশিক্ষক মুতারেবকে "অন্ধকার মুখো" বলে ডাকতেন, কেননা তিনি সবসময় বিরস মুখে খুব চুপচাপ থাকতেন। লন্ডনে একটি সৌদি সূত্রের বরাতে সিএনএন জানায়, মুতারেবের পরিচিতরা তাকে সৌদি গোয়েন্দা বিভাগে একজন কর্নেল হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। এছাড়া একটি জনপ্রিয় আরবী অ্যাপলিকেশনেও এই নামের পরিচয় হিসেবে "রাজ আদালতের কর্নেল" হিসেবে দেখায়। "MenoM3ay" নামের ওই অ্যাপ থেকে যেকোনো ফোন নম্বরের সঙ্গে যুক্ত ব্যবহারকারীর পরিচয় জানা যায়। সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদের সঙ্গে মিস্টার মুতারেবকে বিভিন্ন ইভেন্টে দেখা যায়। (সর্বডানের ব্যক্তি) মার্চ মাসে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি সফরের একটি ছবিতে মাহের মুতারেব নামে এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল। এরপর আরও তিনটি ইভেন্টে তাকে প্রিন্স মোহাম্মদের সঙ্গে দেখা যাওয়ায় ধারণা করা হয় যে তিনি হয়তো কোন নিরাপত্তায় দায়িত্বে ছিলেন। তুরস্কের সরকার-পন্থী সংবাদপত্র "সাবাহ" সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ওই ১৫ জনের ছবি প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় মিস্টার মুতারেব ২রা অক্টোবর সকাল ১০ টার দিকে ইস্তান্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করছেন। অর্থাৎ তাঁরা পৌঁছান মিস্টার খাশোগজি সেখানে পৌঁছানোর তিন ঘণ্টা আগে। পরে বিকেল ৪টার দিকে তিনি কনসাল জেনারেলের বাড়িতে যান। তুর্কি গণমাধ্যম জানায় যে মিস্টার মুতারেব, ড. তুবাইজির সঙ্গে একই বিমানে ইস্তান্বুলে এসেছিলেন এবং একই হোটেলে অবস্থান করেন। একই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে স্কাই প্রাইম অ্যাভিয়েশনের আরেকটি ব্যক্তিগত বিমানে তিনি ইস্তান্বুল ছাড়েন বলে জানা যায়। আব্দুল আজিজ মোহাম্মদ এম আলহাওসাউই ৩. আব্দুল আজিজ মোহাম্মদ এম আলহাওসাউই: নিউইয়র্ক টাইমসের খবর অনুযায়ী, ৩১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি একজন ফরাসি নিরাপত্তা কর্মকর্তা, যিনি সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। বিশেষ করে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সফরকারী নিরাপত্তা দলের সদস্য হিসাবেও তাঁর পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। এছাড়া "MenoM3ay" অ্যাপেও এই নামের ব্যক্তির পরিচয় আসে সৌদি রয়াল গার্ড রেজিমেন্টের সদস্য হিসাবে। মিস্টার আলহাওসাউই একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ইস্তান্বুলে এসেছিলেন। বেলা ২টার আগেই তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছে যান। এরপর তিনি সৌদি কনস্যুলেটের এক কিলোমিটার দক্ষিণে ওয়য়াইন্ডহাম গ্র্যান্ড ইস্তান্বুল লেভান্ত হোটেলে অবস্থান করছিলেন। এবং তিনি ডা. তুবাইজির সঙ্গে ইস্তান্বুল ছেড়ে যান। থার গালেব টি আলহারবি ৪. থার গালেব টি আলহারবি: গত অক্টোবরে জেদ্দায় ক্রাউন প্রিন্সের প্রাসাদের প্রতিরক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য রয়্যাল গার্ডে কর্মরত এই নামের এক ব্যক্তিকে লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। ওই ঘটনায় এক বন্দুকধারীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়। ঊনচল্লিশ বছর বয়সী মিস্টার আলহারবি ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তান্বুল পৌঁছেছিলেন এবং ড. তুবাইজির হোটেলে অর্থাৎ মুভেনপিকে অবস্থান করেন। পরে দুই নম্বর ব্যক্তিগত বিমানে ফিরে যান। মোহাম্মদ সাদ এইচ আলজাহরানী ৫. মোহাম্মদ সাদ এইচ আলজাহরানী: "MenoM3ay" অ্যাপে এই নামের ব্যক্তির পরিচয় আসে রয়্যাল গার্ডের সদস্য হিসাবে। ২০০৭ সালের একটি ইভেন্টের ছবি ও ভিডিওতে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রক্ষীর গায়ে এই নামের ব্যাজ পরে থাকতে দেখা যায়, এমনটি জানিয়েছেন ইয়াদ আল-বাগদাদি নামে একজন অ্যাকটিভিস্ট। তুর্কি মিডিয়া জানায়, ৩০ বছর বয়সী মিস্টার আলজাহরানী একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ইস্তান্বুল পৌঁছেছিলেন এবং তিনি ওয়াইন্ডহ্যাম গ্র্যান্ড হোটেলে অবস্থান করেছিলেন। তিনিও ব্যক্তিগত বিমানে তুরস্ক ছাড়েন। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্টে বলা হয়েছে, "MenoM3ay" অ্যাপে তালিকাভুক্ত ওই নম্বরে কল করার পর যিনি ফোনটি রিসিভ করেন তিনি মিস্টার খাসোগজির নিখোঁজের সময় তুরস্কে থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। খালিদ এধ জি আলোতাইবি ৬. খালিদ এধ জি আলোতাইবি: "MenoM3ay" অ্যাপে এই নামের ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করা হয় রয়্যাল গার্ডের সদস্য হিসাবে। ওয়াশিংটন পোস্টে বলা হয়েছে, সৌদি পাসপোর্টধারী একই নামের এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতেন। তাঁর ভ্রমণের সময় সৌদি রাজ পরিবারের ভ্রমণের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়। ত্রিশ বছর বয়সী আলোতাইবি একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ইস্তান্বুল যান এবং ওয়াইন্ডহাম গ্র্যান্ড হোটেলে অবস্থান করেন। তিনি রাত ৯টা নাগাদ ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ অফিসে ছিলেন। নাইফ হাসান এস আলারিফি ৭. নাইফ হাসান এস আলারিফি: এই নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যকাউন্টে সৌদি আরবের বিশেষ বাহিনীর চিহ্ন সম্বলিত ইউনিফর্ম পরা ছবি দেখা গেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক সৌদি বংশোদ্ভূত সিরীয় উদ্যোক্তা কুতাইবি ইদলবি এই তথ্য জানান। তিনি মিস্টার খাশোগজির পরিচিত ছিলেন। "MenoM3ay" অ্যাপে এই মিস্টার আলারিফি নামের পরিচয় সনাক্ত করা হয় ক্রাউন প্রিন্সের অফিসের একজন কর্মচারী হিসাবে। ৩২-বছর বয়সী আলারিফি একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ইস্তান্বুল পৌঁছেছিলেন এবং পরে ওয়াইন্ডহ্যাম গ্র্যান্ডে অবস্থান করেন। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তিনি ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তান্বুল ছাড়েন। মুস্তাফা মোহাম্মদ এম আলমাদানী ৮. মুস্তাফা মোহাম্মদ এম আলমাদানী: "MenoM3ay" অ্যাপে এই নামের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে সৌদি আরবের গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসাবে। ৫৭ বছর বয়সী আলমাদানী ব্যক্তিগত বিমানে এসে পৌঁছেছিলেন এবং মুভেনপিক হোটেলে অবস্থান করেছিলেন। তিনি রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ইস্তান্বুল ছাড়েন। মেশাল সাদ এম আলবোস্তানি ৯. মেশাল সাদ এম আলবোস্তানি: ৩২-বছর বয়সী এই ব্যক্তির নাম সম্বলিত ফেসবুক পেজে তাঁর পরিচয় দেয়া হয়েছে সৌদি বিমান বাহিনীর লেফটেন্যান্ট হিসেবে। এছাড়া "MenoM3ay" অ্যাপে এই নামের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে সৌদি রয়্যাল গার্ডের দেহরক্ষী হিসাবে - মিস্টার ইদলবি এই তথ্য জানান। মিস্টার আলবোস্তানি বেলা ২টার দিকে ইস্তান্বুলে আসেন এবং ওয়াইন্ডহ্যাম গ্র্যান্ডে অবস্থান করেন। পরে ব্যক্তিগত বিমানে ফিরে যান। গত ১৮ই অক্টোবর তুরস্কের সরকার-পন্থী সংবাদপত্র "ইয়েনি সাফাক" জানায় যে মিস্টার আলবোস্তানী রিয়াদে একটি সন্দেহভাজন গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। যদিও এই বিষয়ে আর বিস্তারিত কোন তথ্য জানানো হয়নি। ওয়ালেদ আব্দুল্লাহ এম আলসেহরি ১০. ওয়ালেদ আব্দুল্লাহ এম আলসেহরি: স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, সৌদি বিমান বাহিনীতে কর্মরত এই নামের এক ব্যক্তিকে ক্রাউন প্রিন্স গত বছর স্কোয়াড্রন লিডার পদে পদোন্নতি দেন। ৩৮-বছর বয়সী এম আলসেহরি ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তান্বুল আসেন এবং মুভেনপিক হোটেলে অবস্থান করেন। পরে অপর ব্যক্তিগত বিমানে তিনি ফিরে যান। মনসুর ওথমান এম আবাহুসেইন ১১. মনসুর ওথমান এম আবাহুসেইন "MenoM3ay" অ্যাপে এই একই নামের ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত হয়েছে সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসাবে - মিস্টার ইদলবি এই তথ্য জানান। ২০১৪ সালে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবরে এই নামের এক ব্যক্তিকে জনপ্রতিরক্ষা বিভাগের জেনারেল ডিরেক্টরেটের কর্নেল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ৪৬-বছর বয়সী আবাহুসেইন বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ইস্তান্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছান এবং ওয়েন্ডহ্যাম গ্র্যান্ডে অবস্থান করে পরে ব্যক্তিগত বিমানে তুরস্ক ছেড়ে যান। ফাহাদ শাবিব এ আলবালাউই ১২. ফাহাদ শাবিব এ আলবালাউই: এই নামের এক ব্যক্তির পরিচয় MenoM3ay অ্যাপে রয়্যাল গার্ডের সদস্য হিসাবে দেয়া আছে। ৩৩-বছর বয়সী মিস্টার আলাবালাই ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তান্বুলে আসেন। তিনি মুভেনপিকে অবস্থান করেন এবং পরে ব্যক্তিগত বিমানে ফিরে যান। বদর লফি এম আলোতাইবি ১৩. বদর লফি এম আলোতাইবি: মিস্টার ইদলবির মতে, এই নামের এক ব্যক্তির পরিচয় MenoM3ay অ্যাপে একজন প্রধান সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসাবে দেয়া আছে। ৪৫ বছর বয়সী মিস্টার আলোতাইবি একটি ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তাম্বুলে যান। তিনিও মুভেনপিকে অবস্থান করেন এবং একটি ব্যক্তিগত বিমানে ফিরে যান। সাইফ সাদ কিউ আলকাহতানি ১৪. সাইফ সাদ কিউ আলকাহতানি: ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, "MenoM3ay" অ্যাপে এই নামের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্মচারী হিসেবে। ৪৫ বছর বয়সী আলকাহতানি ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তান্বুল পৌঁছান এবং মুভেনপিক হোটেলে অবস্থান করেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে উঠতে ইস্তান্বুল বিমানবন্দরের পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ বুথ অতিক্রম করেন। তুর্কি মুসেররেফ এম আলসেহরি ১৫. তুর্কি মুসেররেফ এম আলসেহরি: ছত্রিশ বছর বয়সী এই ব্যক্তি একটি ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তান্বুলে আসেন এবং মুভেনপিক হোটেলে অবস্থান করেন। পরে অপর আরেকটি ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তান্বুল ছেড়ে যান। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: যেভাবে ফেসবুক বা ইউটিউবে নজরদারি করবে সরকার মন্দির অবমাননার জন্য মুসলিম নারীকে মুরতাদ ঘোষণা শরীরের ভেতরে গোপন ‘দেহঘড়ি’: ১২টি অজানা তথ্য
news-38446711
https://www.bbc.com/bengali/news-38446711
রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজন নারীবাদী শিক্ষা
বাংলাদেশে কিছুদিন আগেই বাংলা তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে 'রোকেয়া দিবস' পালিত হলো। ফেসবুক নিউজ ফিডে অনেকের প্রতিক্রিয়া পড়ে জানতে পারলাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বেগম রোকেয়ার ছবির বদলে 'বেগম' পত্রিকার প্রয়াত সম্পাদক নূরজাহান বেগমের ছবি দিয়ে ব্যানার করেছে।
বাংলাদেশের নারীরা বাংলাদেশের সমাজে জন্ম গ্রহণ করে, বেড়ে উঠে, দেশের প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনা করবার পরও তারা আজও বেগম রোকেয়া, নূরজাহান বেগম, সুফিয়া কামাল, নীলিমা ইব্রাহীম, তসলিমা নাসরিন, সেলিনা হোসেন এর লেখা এবং তাদের নারীবাদী আদর্শের সাথে পরিচিত নয়। দৈনন্দিন জীবনে নারীরা তাদের পরিবার, কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক জীবনে যে সকল শোষণ এবং নির্যাতনের শিকার হয় সে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য নারীবাদী আদর্শ নারীদের চেতনা জাগানোর কাজ করে। নারীবাদ সমাজের লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের জন্য পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে বলে সমাজে প্রতিবাদী নারীদের নিয়ে রয়েছে সমাজে নানা নেতিবাচক ভ্রান্ত ধারণা। সমাজে সুশিক্ষিত পুরুষরাও নারীবাদী আদর্শের ধারক হতে পারে কিন্তু তাঁরা সংখ্যায় কম হবার কারণে আমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে কম। আমাদের নারী অধিকারের অগ্রদূত যারা তাদেরকে অসচেতন বাঙ্গালী নারীরা জানে না। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, নারীবাদীরা যে জ্ঞান-এর আলো নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, মুষ্টিমেয় সচেতন কিছু নারী ছাড়া তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ নারীই সেই জ্ঞানের আলো থেকে বহু দূরে বসবাস করে। আজও অনেকে তাঁদের আদর্শের সাথে পরিচিত নন: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, নূরজাহান বেগম ও সুফিয়া কামাল। যে দেশের সরকারি দল এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী সে দেশেও 'বাল্যবিবাহ আইন ২০১৬' পাশ হবার পথে। এই আইন-এর যারা প্রণেতা ও অনুমোদনকারী, তারা যে নারীবাদী আদর্শ সম্পর্কে অজ্ঞ এবং বেগম রোকেয়ার আদর্শই লালন করেন না তা আজ স্পষ্ট। রোকেয়ার 'সুলতানার স্বপ্ন' কে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন আজীবন অলীক স্বপ্নই হয়ে থাকবে। উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বাংলাদেশের কয়টি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়? এই বিষয়টি নারী -পুরুষ উভয়ের জন্য একটি বাধ্যতামূলক বিষয় হওয়া উচিত সমাজে লিঙ্গ সমতা তৈরির লক্ষ্যে । নারীর ক্ষমতায়নের কথা আমরা বলি কিন্তু নারীবাদী আদর্শ সম্পর্কে রয়েছে নেতিবাচক ধারণা, বিষয়টি নিয়ে জানতে চাই না, ইতিহাসের পাতায় নারীবাদী নারীদের নারী অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের গল্পকে তুলে আনছি না বা তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পর্যন্ত দিচ্ছিনা। নারীদের প্রাপ্য অধিকার অর্জনে রক্ষণশীল পুরুষরাই সব সময় বাধা হিসেবে কাজ করে এসেছে, তাহলে নারীর উপর নির্যাতন, সহিংসতা তো বাড়বেই। বাংলাদেশের সমাজ এক উদ্ভট উটের পিঠে চড়ছে। কানাডার মতো উন্নত দেশে যে সকল উচ্চশিক্ষিত বাঙ্গালী নারী অভিবাসী হয়ে আসেন তারা বেশিরভাগই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে আসেন, এখানে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকুরীও করেন । এইসকল উচ্চ শিক্ষিত অভিবাসী নারীও অধিকাংশই কানাডার মহীয়সী নারীদের চেনে না, তাঁদের জীবন আদর্শ ও কর্ম সম্পর্কে জানা তো দূরের কথা তাদের নামটি পর্যন্ত জানেন না। ইন্টারনেট-এর যুগে এই সকল জ্ঞান বা তথ্য জানাটা দুরূহ কোন ব্যাপার নয়। আর এই দেশে প্রতিটি কমিউনিটিতে অনেক সুযোগ-সুবিধা সহ লাইব্রেরীও রয়েছে। তাদের সম্পর্কে জানবার আগ্রহটা অভিবাসী নারীদের মধ্যে নেই বললেই চলে। অন্য কলামগুলো পড়তে ইলে নিচে ক্লিক করুন: বাংলাদেশ ও ভারতে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে রোকেয়া লিটা নারীর সাহস আর ভয় নিয়ে দেবশ্রুতি রায়চেীধুরী পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে দিয়া চক্রবর্তী ঢাকায় সহিংসতার বিরুদ্ধে নারীদের প্রতিবাদ সমাবেশে ১০ বছরের ফুল বিক্রেতা পুতুল ছবির জন্য দাঁড়িয়ে। প্রবাসী সচ্ছল বাঙ্গালী নারীদের নানা সামাজিক পটলাক ও বেবি শাওয়ার পার্টিতে মুখরোচক বাহারি রান্না করা খাবার আর সর্বাঙ্গে অলংকার, সাজপোশাকের অতিশয্যের মাঝে তাদের খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু কমিউনিটির প্রাতিষ্ঠানিক এবং অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষামূলক কোন স্থানে তাদের উপস্থিতি শূন্যের কোঠায় বললে অত্যুক্তি হবে না । নারীদের আত্ম জাগৃতি ঘটবে তেমন ধরণের উদ্যোগ (আমি কানাডার যে শহরে থাকি, সেই) সাস্কাটুনের প্রবাসী নারী মহল থেকে নেয়া হয়েছে বলে এখনও চোখে পড়েনি। প্রবাসী অভিবাসী বাঙ্গালী নারীদের সাজসজ্জা আর ভোগ বিলাসের প্রতিযোগিতা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকার সংস্কৃতি দেখে বেগম রোকেয়ার বিভিন্ন প্রবন্ধের কথা মনে পড়ে যায়। তাঁর চিন্তার একটি বড় বিষয় বা সমালোচনা ছিল নারীদের অধঃপতন তথা অবনতির জন্য নারী নিজেই দায়ী। তিনি তাঁর 'বোরকা' নামক প্রবন্ধে নারীদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন নারী তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অলঙ্কার ব্যবহারের জন্য অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু শিক্ষার জন্য করে না। জ্ঞানগর্ভ একটি বই পড়লে যে অনির্বচনীয় সুখ লাভ হয়, দশটি ফ্যাশনেবল অলঙ্কার পড়লেও তার শতাংশের একাংশ সুখও পাওয়া যায় না --- এই বক্তব্য বেগম রোকেয়া সেই একশো বছর আগে বলেছিলেন। কিন্তু অবস্থার খুব কি পরিবর্তন এসেছে ? এ যুগের নারীরা বড় বড় বই পড়ে শেষ করেছে আজ ডিগ্রী পাবার আশায় , চাকরি লাভের আশায়, ভালো চাকুরীজীবী স্বামী পাবার আশায়। এই সকল ব্যাপারে একটা বিশাল পরিবর্তনও এসেছে সমাজে, কিন্তু তাদের আত্মিক পরিবর্তন কতটুকু এসেছে, তারা কতটুকু স্বনির্ভর, সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে তা এখনও প্রশ্ন সাপেক্ষ। নারী অধিকার আদায়ের হিস্যা বুঝে নেবার লড়াইয়ে তাদের মানসিক সংযুক্ততা বা উপলব্ধি কতটুকু? আমাদের পূর্ব প্রজন্মের নারীরা যারা নারী অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলো বলেই আজ আমরা শিক্ষিত হতে পেরেছি , নারী স্বাধীনতা উপভোগ করতে পেরেছি, সে কথা আমরা কয়জন নারী অনুভব করি এবং সেই সকল মহীয়সী নারীদের সম্মাননা জানাই, অন্তরের অন্তঃস্থল হতে কৃতজ্ঞতা ভরে ? কানাডার নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ: জোয়া হাইট, ভাওলেট ম্যাকনটন ও এরমা স্টকিং। ইউনিভার্সিটি অফ সাস্কাচুয়ান ক্যাম্পাসে ডিফেনবেকার সেন্টারে চলছে কয়েক মাস ব্যাপী "সিস্টার'স ইউনাইটেড" নামে এক প্রদর্শনী, কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কজন ছাত্র -ছাত্রী তার খবর রাখে? এই সাস্কাচুয়ান প্রদেশের নারীরা মাত্র একশত বছর আগে কেমন করে নারীদের ভোটের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করেছিল এবং কেমন করে তাঁরা সফল হয়েছিল আর কারাই বা সেই সকল মহীয়সী নারী, তাঁদের জীবন এবং কর্মকে তুলে ধরবার জন্যই এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়েছে নারীর ভোটাধিকার অর্জনের ১০০ বছর পূর্তিতে । কানাডার প্ৰেয়রি প্রদেশগুলোর মধ্যে ম্যানিটোবা এবং সাস্কাচুয়ান কানাডায় প্রথমবারের মতো ১৯১৬ সালে নারীদের ভোটাধিকার দেয়। যে সমস্ত নারী ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন তাঁদেরকে বলা হয় "সাফ্রাজেটস্‌ "। তাঁদের যুগান্তকারী কর্ম ও স্মৃতিকে স্মরণীয় করার জন্য এবং সর্বকালের সকল নারীবাদীদের উৎসাহিত করবার জন্য এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়েছে। এখানে শিক্ষনীয়ভাবে প্রধান সাতজন সাফ্রাজেট নারীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও তখনকার সময়ে রক্ষণশীল পুরুষরা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কেন এবং কীভাবে নারীদের তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতো সেই ইতিহাসও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ভায়োলেট মাকনটেন ছিলেন সবচেয়ে খ্যাতিমান সাফ্রাজেটস্‌ নেত্রী যিনি আলবার্টা এবং ম্যানিটোবার সমমনা নারীদের সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করেন। তিনি ছিলেন একজন কৃষক নারীবাদী। তিনি নারীদের ভোটাধিকার বোর্ড এর গোড়াপত্তন করেন। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। সাস্কাচুয়ান এর বাইরের পাঠকরা সাস্কাচুয়ান জন ডিফেনবেকার কানাডা সেন্টার এর ভার্চুয়াল প্রদর্শনীটি সম্পর্কে জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। সাস্কাচুয়ান সাফ্রাজেটস্‌দের সম্পর্কে জানাটা জরুরি কারণ এই ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের হাত ধরেই পরবর্তীতে নারীর সমঅধিকারের আন্দোলন, নারীর সামাজিক জীবনের স্বাধীনতা, যে কোনো পেশায় যাবার অধিকার, শিক্ষার অধিকার এবং রাজনৈতিক ন্যায় বিচার অর্জনের পথগুলো প্রশস্ত হয়ে উঠে । যার ফলশ্রুতিতে অভিবাসী নারীরাও আজ সকল কানাডিয়ান নাগরিক অধিকারগুলো উপভোগ করতে পারছে। নারীবাদী আদর্শ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন শুধু নারীর প্রতি ন্যায় বিচারের জন্য নয়, প্রয়োজন একটি অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী সমাজের জন্য। মানবিকভাবে সহনশীলতাই পারবে সমাজে লিঙ্গ সমতা তৈরি করতে।
news-56775488
https://www.bbc.com/bengali/news-56775488
নাইজেরিয়ায় অপহরণ থেকে বাঁচাতে ছাত্রীদের বিয়ে দিতে চান বাবা মায়েরা
নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে স্কুল থেকে ছাত্রী অপহরণের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।
এর ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। নিরাপত্তার কারণে মেয়েকে স্কুলে না পাঠিয়ে ভাবছেন তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথা। বলা হচ্ছে, গত ডিসেম্বরের পর ৮০০ জনেরও বেশি ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহৃত এক ছাত্রী বর্ণনা করছেন তার অভিজ্ঞতা:
news-52313536
https://www.bbc.com/bengali/news-52313536
স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে কীভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে?
যখন থেকে ধারণা পাওয়া গেছে যে, বেশ দীর্ঘ দিন ধরেই লকডাউনে থাকতে হবে, তখন থেকেই ইন্টারনেটে নানা ধরণের প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই ভাবছেন যে এটা আমাদের রোমান্টিক সম্পর্কের উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলবে।
কোয়ারেন্টিনে থাকাটা সম্পর্ক ভাল করার সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই চিন্তাগুলো মূলত সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে সামনে আসতে শুরু করে যখন বারগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং পরস্পর থেকে দুই মিটার দূরত্ব রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু মানসিক বিষয়টি কেমন হবে? মহামারির সময় আমাদের সম্পর্কগুলো সুখকর আর ভাল রাখতে কী করা উচিত? লকডাউনের সময় দুটো জিনিস হতে পারে; এক হয়তো সব সময়ই একসাথে থাকতে হবে অথবা এক সাথে থাকার মতো সময় মোটেই পাওয়া যাবে না। ২৪শে মার্চ যখন যুক্তরাজ্য কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জোরদার করে তখন ইংল্যান্ডের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জেনি হ্যারিস একটি বিষয়ে কথা বলেন: আর তা হল যেসব যুগলরা একসাথে বাস করে না তাদের উচিত একসাথে বসবাস করতে শুরু করা যাতে তারা তাদের সম্পর্কের দৃঢ়তা পরীক্ষা করতে পারে। আপনি যদি আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে দূরে স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে যান তাহলে তার অভাব অনুভূত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আইসোলেশনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ সরাসরি সংস্পর্শ থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়। ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক করি ফ্লয়েড এই বিষয়টিকে বলেছেন "স্কিন হাঙ্গার" বা সরাসরি বা শারীরিক সংস্পর্শের অভাব। একাকীত্ব ছাড়াও এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় যে মানুষ কেন কারো সাথে কথা বলে বা ভিডিও কলে দেখেও কেন সরাসরি কাছে পাওয়ার মতো আনন্দ দেয় না। প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে তাদের পাঠানো কোনকিছু সহায়ক হতে পারে। ওয়েইনি স্টেট ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ক্যাথরিন ম্যাগুয়ের বলেন, এক্ষেত্রে পুরনো দিনের মতো হাতে লেখা চিঠি খুব ভাল কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, প্রিয়জনের স্পর্শে আসা কোন কিছু স্পর্শ করতেও ভাল লাগে। "লেখা চিঠিটি তাদের হাতে ছিল, আপনি তাদের হাতের লেখা দেখতে পারবেন, তারা যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে তাহলে আপনি তার গন্ধ পাবেন, সব কিছু মিলিয়ে এটি পরিস্থিতিকে জীবন্ত করে তোলে।" অনেক যুগল এখন অনেক বেশি সময় ধরে একসাথে থাকছেন আবার অনেকে দীর্ঘদিন ধরে আলাদা থাকছেন। কিন্তু তাই বলে যুগল হিসেবে একসাথে থাকা কিংবা বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তারাহুরো করে নেয়া উচিত নয়। যেসব যুগলরা একে অপরের থেকে দূরে থেকে সম্পর্ক বজায় রাখে তাদের উপর করা গবেষণায় দেখা যায় যে, আলাদা বসবাসের বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে। যেমন, বন্ধু কিংবা পরিবারের থেকে দূরে থাকা মানেই খারাপ কিছু নয়। বাস্তব ক্ষেত্রে এক সাথে আইসোলেশনে গেলে সেখানেও কিছু চাপ তৈরি হতে পারে। "বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের সীমা পার করে ফেলছি- অনেক কিছুই অস্পষ্ট," বলেন ম্যাগুয়ের। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি? কখনো কখনো আলাদা থাকাটাই ভাল সম্পর্ক ভাল রাখতে হলে সঙ্গীকে মিস করাটা জরুরী। শীতকালীন ছুটির সময় যেসব শিক্ষার্থীরা বলে যে তারা তাদের সঙ্গীকে মিস করেছে, পরবর্তীতে দেখা যায় যখন তারা আবার একত্র হয়, তখন তারা আরো বেশি ইতিবাচক, খোলামেলা এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়। সালস্টেইন পার্সেল বলেন, অনেকেই মনে করেন যে সম্পর্ক তখনই তৈরি হয় যখন সঙ্গীরা এক সাথে থাকে এবং সরাসরি দেখা করার সময় যখন "টান" অনুভব করে। তবে এটা সত্যি নয়। তিনি বলেন, একে অন্যের থেকে দূরে থাকাটা যুগলদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে এবং এটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। যেসব যুগলরা পরস্পর থেকে দূরে থাকে বা লং-ডিসট্যান্স রিলেশনে থাকে তারা একসাথে থাকার সময়টাকে বিশেষ ভাবে "কাপল টাইম" হিসেবে উদযাপন করে এবং যখন আলাদা থাকে তখন "ব্যক্তিগত সময়" বা "ইনডিভিজ্যুয়াল টাইম" হিসেবে কাটায়," বলেন সালস্টেইন পার্সেল। "আমার মনে হয় দূরে থেকেও সফল সম্পর্কের চাবিকাঠি হচ্ছে, এই ধরণের সময়ের বিভাজন খুব কঠোর হওয়া উচিত নয়।" লং-ডিসট্যান্স রিলেশনশিপের ক্ষেত্রে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাটা জরুরী। পুর্নমিলন কেন খারাপ হতে পারে আইসোলেশনে যাওয়া যুগলদের জন্য অনেক সময় ধরে আলাদা থাকাটাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটাও সমানভাবে কঠিন। সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবার বা দূরে থাকা যুগলদের উপর চালানো গবেষণায় দেখা যায়, একসাথে হওয়া বা পুর্নমিলনীর পর প্রথম ছয় মাসের মধ্যে হয় সম্পর্ক টিকে যায় নয়তো ভেঙ্গে যায়। বিচ্ছেদের পর পুনর্মিলন কিভাবে কাজ করে সেটা ভালভাবে বোঝা যায় সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের দিকে খেয়াল করলে। কারণ তারা যখন আলাদা থাকে তখন সামরিক কর্মকর্তা আর তার পরিবার নিজেদের মতো আলাদা রুটিন অনুসরণ করে চলে। সামরিক কর্মকর্তাকে হয়তো সকাল সকাল উঠতে হয় এবং খাবারের সময়গুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হয়। যা তাদের পরিবারের সাথে মিলতে নাও পারে। ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ের লিয়ান নবলচ জনসন বলেন, ওই কর্মকর্তাটি যখন বাড়ি ফিরে আসে তখন "সম্পর্কে ঝড়" চলতে থাকে। রুটিনের আলাদা সময় এক সাথে মিলে যেতে কিছুটা সময় লাগে। "কিন্তু ঝড় মানেই এটা নয় যে তা দূর করা যাবে না," বলেন জনসন। "এটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নয়, বরং ওই মুহূর্তে এটি সমস্যা। আমরা একজন আরেক জনের সাথে পথ চলি, তাই আমাদেরকে শিখতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে যে ঝড় আসতে পারে এবং সেটা কষ্টদায়কও বটে।" আরেকটি বিষয় হচ্ছে অনেকেই মনে করে থাকেন যে, তার সঙ্গীটি হয়তো আর আগের মতো নেই। ম্যাগুয়ের বলেন, "এটা মনে করা বোকামি যে, যত সময়ই পার হয়ে থাকুক না কেন আপনার সঙ্গীটি একই থাকবে। বরং আপনার উচিত তাকে আবার নতুন করে জানা: কারণ সময়ের সাথে যে পরিবর্তনগুলো আসবে সেগুলো হয়তো হঠাৎ করেই জানা যাবে না।" রোমান্টিক সঙ্গীর সাথে আইসোলেশনে যাওয়াটাও কঠিন হতে পারে কোয়ারেন্টিন সবার জন্যই কঠিন। কোভিড-১৯ মহামারির পর লন্ডনের কিংস কলেজের সামান্থা ব্রুক কোয়ারেন্টিনের প্রভাব বিষয়ে তার মানসিক গবেষণা আবার পুর্নমূল্যায়ন করেছেন। বেশিরভাগ গবেষণাতেই বলা হয় যে, কোয়ারেন্টিনে বিরক্তি, হতাশা এবং ক্ষোভ তৈরি হয়। কিন্তু কিছু কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, এর কারণে দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। আইসোলেশনের সময়ে অনুযায়ী পোস্ট-ট্রমাটিক সিম্পটম বা উপসর্গও দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন দেশে লকডাউনের সময় পারিবারিক সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। তবে সবার ক্ষেত্রে একই ফলাফল হবে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরিষ্কারভাবেই এই সময়টা যুগলদের জন্য মানসিক চাপের। ব্রুক বলেন, যদি কর্তৃপক্ষ আমাদের বলছে যে, মানুষের বৃহৎ স্বার্থেই আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে তবুও এর কারণে কিছু মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে। যাদের পারিবারিক সম্পর্ক ভাল নয়, নির্যাতনের মতো ঘটনা হয়ে থাকে, তাদের জন্য বাড়ির গন্ডির বাইরে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে সেটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। "আমরা ধারণা করছি যে, লকডাউনের কারণে বেকারত্ব এবং অনিশ্চয়তার কারণে পারিবারিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়বে। সামাজিক সহায়তার ক্ষেত্র কমে যাওয়ায় সেটি নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। যদি অন্য কোথাও থাকার দরকার হয় তাহলে আমরা বন্ধুদের বাড়িতেও যেতে পারবো না," ইলিনয়ের অরোরা ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক রেনে ফ্র্যানিউক বলেন। যাই হোক, বিভিন্ন দেশে লকডাউনের সময় পারিবারিক সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। স্পেনে এই হার ৫ গুন, ফ্রান্সে ৩ গুন বেড়েছে এবং একই ধরণের ধারা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনেও দেখা গেছে। পুনর্মিলনীর জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের মধ্যে যাদের পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে চিন্তা করতে হয় না, তাদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা কঠিন হবে। রোমান্স বাদ রাখলেও, আমাদের অনেকেই হয়তো পরিবারের সাথে দীর্ঘ সময় কাটানো কিংবা বন্ধুদের সাথে কম সময় কাটানোতে অভ্যস্ত হতে পারবে না। অনেক দিন আলাদা থাকার পর পুনর্মিলনের সময় যুগলদের পরস্পরকে নতুন করে জানতে হবে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলোতে নানা ধরণের অনিশ্চয়তার কারণে কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তাই এটা বোঝাও মুশকিল যে কবে এবং কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের ক্ষেত্রে অন্তত একটা নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকে। সালস্টেইন পার্সেল পরামর্শ দেন, এই সময়ে আসলে আলাদা থাকার সময়টার নানা বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। যারা দূরে থেকে সম্পর্কে রয়েছেন তাদের উচিত যেকোন ধরণের সংঘর্ষ এড়িয়ে চলা। সালস্টেইন পার্সেল বলেন, যুগলরা যখন সরাসরি দেখা করে তখন তারা যেকোন ধরণের সংঘর্ষ এড়িয়ে চলে কারণ তারা ওই সময়টাকে একসাথে ভালভাবে উপভোগ করতে চায়। আলাদা থাকার সময় ঝগড়া করা এবং একসাথে থাকার সময় মতবিরোধের মতো ঘটনাগুলো এক ধরণের চক্র তৈরি করে যা সম্পর্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়। ম্যাগুয়ের বলেন, একমাত্র সমস্যা যদি হয় একে অন্যের থেকে দূরে থাকা- তাহলে সেটি আসলে ভাল লক্ষণ। একইভাবে যেসব যুগলরা এক সাথে আইসোলেশনে রয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কোয়ারেন্টিনের মানসিক চাপ একসময় দূর হয়ে যাবে।
news-54561224
https://www.bbc.com/bengali/news-54561224
ঔপনিবেশিক ভারতে কেন নারীদের যৌনাঙ্গ পরীক্ষায় বাধ্য করতে আইন করা হয়েছিল
আঠারোশ' আটষট্টি সালের কথা। ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের কলকাতা শহরে সুখীমণি রাউর নামে এক নারীর কারাদণ্ড হলো। তার অপরাধ ছিল তিনি তার যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করাতে অস্বীকার করেছিলেন।
১৮৭০ সালে তোলা দুই ভারতীয় নারীর ছবি সে সময় নিবন্ধিত যৌনকর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক একটি আইন ছিল যে তার যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করাতে হবে। সুখীমণি সেই আইন লঙ্ঘন করেছিলেন, কারণ তার দাবি ছিল - তিনি যৌনকর্মী নন। ঔপনিবেশিক ভারতে ওই আইনটির উদ্দেশ্য ছিল যৌনসম্পর্কবাহিত রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনা। সংক্রামক ব্যাধি আইন নামে ওই আইনের বিধান ছিল: যৌনকর্মীদের থানায় গিয়ে নিজেদেরে নিবন্ধন করাতে হবে, তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে এবং পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকতে হবে। সুখীমণি রাউর সেই আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি আদালতে এক আবেদন করলেন তাকে মুক্তি দেবার দাবি জানিয়ে। "আমি যৌনকর্মী ছিলাম না এবং তাই আমি এক মাসে দুবার সেই পরীক্ষা করাতে যাইনি" - আদালতে বলেন সুখীমণি। তিনি আরো জানান যে তিনি কখনোই যৌনকর্মী ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ১৮৬৯ সালের মার্চ মাসে কলকাতা হাইকোর্ট সুখীমণির পক্ষে রায় দেয়। রোগের বিস্তার ঠেকাতে যৌনকর্মীদের পরীক্ষা বিচারকরা রায়ে বলেন, সুখীমণি রাউর একজন "নিবন্ধিত গণ যৌনকর্মী ছিলেন না"। শুধু তাই নয়, আদালত বলেন, যৌনকর্মী হিসেবে নিবন্ধন হতে হবে স্বেচ্ছামূলক, অর্থাৎ নিবন্ধন করানোর জন্য কারো ওপর জোর খাটানো যাবে না। এ নিয়ে এক বিস্তারিত গবেষণার পর একটি বই লিখেছেন অধ্যাপক দুর্বা মিত্র। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ও লিঙ্গ বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। নাচিয়ে মেয়েদের বিবেচনা করা হতো যৌনকর্মী হিসেবে অধ্যাপক মিত্র বলছেন, ঔপনিবেশিক যুগের দলিলপত্র ঘেঁটে তিনি দেখেছেন যে, সেসময় হাজার হাজার নারীকে তাদের যৌনাঙ্গ পরীক্ষার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম লংঘনের অভিযোগে সে যুগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। 'ভারতের যৌনজীবন' বা 'ইন্ডিয়ান সেক্স লাইফ' নামের বইটি প্রকাশ করেছে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস। এই বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের বুদ্ধিজীবীরা আধুনিক ভারতের সমাজকে নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠিত করতে নারীদের যৌন বিচ্যুতির ধারণা গড়ে তুলেছিলেন। 'ঘৃণ্য পরীক্ষা পদ্ধতি' দুর্বা মিত্র বলছেন, যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় ছিল যে নারীদের যৌনকর্মী হিসেবে দেখা হয় তাদের শ্রেণীবিভাগ, নিবন্ধন এবং ডাক্তারি পরীক্ষা করা। এর প্রতিবাদে ১৮৬৯ সালে কোলকাতার কিছু যৌনকর্মী ওপনিবেশিক কর্তৃপক্ষের কাছে এক আবেদন পেশ করেন। তারা অভিযোগ করেন, নিবন্ধীকরণ এবং যৌনাঙ্গ পরীক্ষায় বাধ্য করার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ তাদের নারীত্বের অবমাননা করছে। তারা এই "ঘৃণ্য পরীক্ষা পদ্ধতির" প্রতিবাদ জানান যাতে তাদের কুৎসিতভাবে দেহের গোপন অংশ দেখাতে হয়। তারা লিখেছিলেন, "যারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তাদেরকে ডাক্তার ও তার অধীনস্থ লোকদের কাছে নিজেদের অনাবৃত করতে হয়" এবং "নারীর সম্মানবোধ তাদের মন থেকে এখনো পুরোপুরি মুছে যায়নি।" কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুতই এ আবেদন খারিজ করে দেন। কারণ শহরের ক্ষমতাধর কর্মকর্তারা বলেন, গোপন যৌনকর্মীরা যারা নিবন্ধন এড়িয়ে যাচ্ছে তারা নতুন আইনের প্রতি হুমকি হয়ে উঠেছে। কলকাতার একটি বড় হাসপাতালের প্রধান ডা. রবার্ট পেইন বলেন, বেঙ্গল প্রদেশের যৌনকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ এবং নিবন্ধনের কাজটা নারীদের সম্মতি ছাড়াই করা উচিত। অধ্যাপক মিত্র বলছেন, ১৮৭০ থেকে ১৮৮৮ সালের মধ্যে এই আইন লংঘনের জন্য শুধু কলকাতাতেই দৈনিক ১২ জন নারীকে গ্রেফতার করা হতো। ভারতের যৌনকর্মীদের ব্যাপারে ঔপনিবেশিক আমলে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার বর্ণনা কর্তৃপক্ষ আরো খেয়াল করেছিলেন নজরদারির ব্যাপারটা টের পেলে অনেক নারীই শহর থেকে পালিয়ে যেতেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এক পর্যায়ে একটা বিতর্ক শুরু করেন যে বাংলা প্রদেশের পুলিশ আইনগতভাবে যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করতে পারে কি না - বিশেষ করে যে নারীদের বিরুদ্ধে শিশুহত্যা এবং ভ্রুণহত্যার অভিযোগ আছে। একজন ম্যাজিস্ট্রেট যুক্তি দেন যে, যৌনাঙ্গ পরীক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে করা না হলে ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মিথ্যা অভিযোগ বেড়ে যাবে।আরেকজন যুক্তি দেন যে, মেয়েদের সম্মতি নিতে হলে তা বিচার প্রক্রিয়াকে পঙ্গু করে দেবে। প্রদেশের সচিবকে লেখা এক চিঠিতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার স্টুয়ার্ট হগ আভাস দেন যে, আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে নারীদের থেকে পুরুষদের যৌন রোগে সংক্রমিত হওয়া অব্যাহত রয়েছে। হিজড়ারাও ছিল আইনের লক্ষ্যবস্তু ইতিহাসবিদ জেসিকা হিঞ্চি বলছেন ঔপনিবেশিক ভারতে শুধু যে যৌনকর্মীদেরই যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করানো হতো তা নয়, বরং খোজা বা হিজড়াদেরও ১৮৭১ সালের একটি বিতর্কিত আইনের অধীনে যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করানো হতো। ওই আইনে কিছু জনগোষ্ঠীর লোককে 'বংশানুক্রমিকভাবে অপরাধী' বলে চিহ্নিত করা হয়। মিজ হিঞ্চির মতে ওই আইনটির লক্ষ্য ছিল হিজড়াদের ভারতীয় সমাজ থেকে ক্রমশঃ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। এ জন্য তাদের ওপর নাচগান ও মেয়েলি পোশাক পরাসহ বিভিন্ন রীতিনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা, হিজড়াদের বাড়ি থেকে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া, পুলিশ নিবন্ধন - ইত্যাদি নানা রকম নিয়মকানুন চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। 'নিম্নবর্ণের সকল নারীই সম্ভাব্য যৌনকর্মী' ঔপনিবেশিক ভারতের এক লজ্জাজনক অধ্যায় বলে মনে করা হয় এই আইনকে। একজন যৌনকর্মীকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে - তার জন্য এক প্রশ্নমালা দেয়া হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও ডাক্তারদের। অধ্যাপক মিত্র বলছেন, ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ জবাব দিয়েছিল যে "ভারতের সকল নারীই" সম্ভাব্য যৌনকর্মী। একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা এ এইচ জাইলস যুক্তি দেন যে "উচ্চবর্ণের নয় এবং বিবাহিত নয় এমন সকল নারীকেই" যৌনকর্মী হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে। A street scene in Calcutta (now Kolkata) in 1870 বাংলা ভাষার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক এবং 'বন্দেমাতরম' গানের রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জি সেসময় ছিলেন একজন মাঝারি শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলেন যে, ভারতে বহু ধরণের নারী গোপনে যৌনকর্মীর কাজ করেন। অধ্যাপক মিত্র বলছেন, উচ্চবর্ণের হিন্দু ও বিবাহিত মহিলাদের বাইরে প্রায় সকল নারীকেই তখন যৌনকর্মী বলে বিবেচনা করা হতো। এর মধ্যে তথাকথিত ড্যান্সিং গার্ল বা নাচ-গান করা মেয়ে, বিধবা, একাধিকবার বিয়ে হওয়া হিন্দু ও মুসলিম নারী, ভিক্ষুক, গৃহহীন, নারী কারখানা-শ্রমিক, গৃহকর্মী - সবাই ছিল। ১৮৮১ সালে বেঙ্গল প্রদেশে যে ঔপনিবেশিক আদমশুমারি করা হয়েছিল - তাতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের সকল অবিবাহিত নারীকেই যৌনকর্মী বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। An Indian house help with her European charges, 1870 কলকাতা শহর ও তার আশপাশের এলাকাগুলোর আদমশুমারিতে ১৪৫,০০০ নারীর মধ্যে ১২,২২৮ জনকে যৌনকর্মী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৮৯১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজারে। অধ্যাপক মিত্র বলছেন, ওই আইনটা ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন - যেখানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের জ্ঞানের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ভারতীয় নারীদের যৌন আচার-আচরণ। অন্যদিকে পুরুষদের যৌন আচরণ রাষ্ট্রের আওতার সম্পূর্ণ বাইরে থেকে যায়। তিনি আরো বলছেন, বাংলা প্রদেশের মতো জায়গায় নারীদের যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি ভারতীয় পুরুষরা সমাজের ব্যাপারে তাদের নিজেদের ভাবনার একটি বিশেষ দিকে পরিণত করেছিলেন - যা একটি-বিয়ে-করা উচ্চবর্ণের হিন্দু আদর্শ অনুযায়ী সাজানো। এখানে মুসলিম ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ঠাঁই হয়নি। তার কথায়, "বিপথগামী" নারীরা তাদের চোথে এমন একটি সমস্যা ছিলেন যা সমাধান করা সহজ ছিল না। ফলে নানাভাবে তাদের বিচার, জেল, জোরপূর্বক দেহ পরীক্ষা ইত্যাদির শিকার হতে হতো। নারীদের ক্ষেত্রে এখন যা হচ্ছে তাতে ওই ইতিহাসেরই প্রতিধ্বনি দেখা যায় - মনে করেন অধ্যাপক দুর্বা মিত্র। আরো পড়তে পারেন: ভারতের যে সম্প্রদায়ে পতিতাবৃত্তিকে ঐতিহ্য ভাবা হয় অমীমাংসিত দায়বদ্ধতা : লক্ষ্য যখন যৌনকর্মী বদলে গেছে এশিয়ার বৃহত্তম যৌন পল্লীর চেহারা 'খদ্দের নেই, না খেয়ে মরার অবস্থা' - কলকাতার এক যৌনকর্মী
news-49341133
https://www.bbc.com/bengali/news-49341133
কাশ্মীরে বিক্ষোভের ঘটনা স্বীকার করলো ভারত সরকার, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার
কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছিল, প্রাথমিকভাবে ভারত সরকার সেগুলো 'অতিরঞ্জিত' ও 'ভুল' বলে দাবি করলেও মঙ্গলবার এক টুইটে শ্রীনগরে হওয়া একটি বিক্ষোভের সত্যতা স্বীকার করে তারা।
৯ই অগাস্ট কাশ্মীরে হওয়া বিক্ষোভের ঘটনাটি স্বীকার করেছে ভারত সরকার মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের করা এক টুইটে ৯ই অগাস্ট শ্রীনগরের সাওরা অঞ্চলে হওয়া বিক্ষোভের বিষয়টি স্বীকার করা হলেও বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ কোনো গুলি ছোঁড়েনি বলে দাবি করা হয়। বুধবার ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে দশদিন আগে কাশ্মীরের ওপর আরোপ করা ব্যাপক নিরাপত্তা কড়াকড়ি জম্মু থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। তবে কাশ্মীর উপত্যকায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই কড়াকড়ি আরোপিত থাকবে। শ্রীনগরে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যটির একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা মুনির খান কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। একই দিনে একটি ভারতীয় পত্রিকাকে কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল মালিক জানান যে ১৫ই অগাস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পর কাশ্মীরের ওপর চলমান ভারতীয় বাহিনীর নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি তুলে নেয়া হবে। কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ ঘোষণা করার পর গত দশদিন ধরে কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে কাশ্মীর। টেলিফোন, ইন্টারনেট এবং সব ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়। ঐ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়। ভারত সরকারের বক্তব্য পরিবর্তন ভারত শাসিত কাশ্মীরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর ৯ই অগাস্ট শুক্রবার হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ প্রকাশ করার একটি ভিডিও ফুটেজ বিবিসি'র হাতে আসে, যেটিকে ভারত সরকার দাবি করে যে সেরকম কোনো বিক্ষোভ আসলে হয়নি। ১০ই অগাস্ট ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে থেকে টুইট করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঐ ভিডিওগুলোকে অতিরঞ্জিত বলা হলেও ১৩ই অগাস্ট আরেকটি টুইটে শ্রীনগরের সাওরা অঞ্চলে হওয়া বিক্ষোভের বিষয়টি স্বীকার করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নতুন টুইটটিতে বলা হয়, "গণমাধ্যম শ্রীনগরের সাওরা এলাকার খবর প্রকাশ করেছিল। ৯ই অগাস্ট স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে সাধারণ মানুষ যখন ঘরে ফিরছিলো, তখন কিছু দুষ্কৃতিকারী তাদের সাথে যোগ দেয় এবং পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে।" পরে আরেকটি টুইটে বলা হয়, "আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধৈর্যের সাথে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে।" আরো পড়তে পারেন: কাশ্মীরকে চূড়ান্ত সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ভারত? কাশ্মীর: কারফিউর মধ্যে ঈদ, বড় মসজিদ-ঈদগাহ বন্ধ যেভাবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কাশ্মীরের তরুণরা এক নজরে কাশ্মীর ও ৩৭০ অনুচ্ছেদের ইতিহাস তবে ঐ টুইটে জোর দিয়ে দাবি করা হয় যে, অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেনি। এর আগে ১০ই অগাস্ট রয়টার্সের একটি খবরের সমালোচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র একটি টুইট করেন। ঐ টুইটে বলা হয়, "রয়টার্সের প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে ১০ হাজার মানুষ শ্রীনগরে বিক্ষোভ করেছেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং অতিরঞ্জিত খবর। শ্রীনগর ও বারামুলায় ছোট ছোট কিছু বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে কিন্তু কোথাও ২০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হয়নি।" হাজারো কাশ্মীরির বিক্ষোভের ওপর পুলিশের ছররা গুলি কাশ্মীরের বিক্ষোভ নিয়ে বিবিসি'র ভিডিও ৯ই অগাস্ট শুক্রবার শ্রীনগরের সাওরা এলাকার বিক্ষোভের একটি ভিডিও বিবিসি'র কাছে আসে। বিবিসির সংবাদদাতা রিয়াজ মাসরুর শ্রীনগর থেকে এ ভিডিও পাঠান। ভিডিওতে দেখা যায়, হাজার হাজার লোকের সেই বিক্ষোভে কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে মুহুর্মূহু স্লোগান উঠছে। ওই বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও ছররা গুলিও নিক্ষেপ করে। ভিডিওতে গুলির শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, আর দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীদের ছোটাছুটি। বিক্ষোভকারীদের কারও হাতে কালো বা সবুজের ওপরে চাঁদতারা-আঁকা পতাকা, কারও হাতে 'উই ওয়ান্ট ফ্রিডম' লেখা পোস্টার দেখা যায়। মানুষের গলাতেও শোনা যাচ্ছে স্বাধীনতার দাবীতে স্লোগান। কয়েকজন এ ভিডিওতে বলছেন তারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা চান।
news-54450794
https://www.bbc.com/bengali/news-54450794
ধর্ষণ নিয়ে ক্ষোভ, ক্রসফায়ার নিয়ে বিতর্ক আর রোহিঙ্গা নিয়ে প্রশ্ন
আপনারা অনেকেই নিশ্চয়ই জানেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একজন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং তার ওপর নির্যাতন চালানোর ভিডিও এই সপ্তাহে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
ন্যায় বিচারের দাবী: নোয়াখালীতে নারী নির্যাতন-এর প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ। এই ঘটনা অনেক শ্রোতা-পাঠককে বিচলিত করেছে, বিক্ষুব্ধ করেছে। সে বিষয়ে চিঠি দিয়ে আজ শুরু করছি, প্রথমে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার: ''বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে চরমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কেবল তাই নয়, ঘটনার একমাস পর সেই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আত্মগোপনে থাকা ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে আটকও করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় একটি ঘটনা দীর্ঘ এক মাসেও কেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজরে এলো না? কিন্তু যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার কি তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবে, না কি আইনের ফাঁক গলিয়ে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা বেরিয়ে যাবে?'' সেটাই বড় প্রশ্ন মি. সরদার। পুলিশ এত দিন নির্লিপ্ত ছিল নাকি ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিল না? যারা কাজটি করেছে তারা গোপনীয়তা রক্ষা করেই করেছে আর ভুক্তভোগী নারীও প্রাণের ভয়ে পুলিশের কাছে না যেয়ে লুকিয়ে ছিলেন বলেই মনে হচ্ছে। যাই হোক, মূল কথা হলো ভিকটিম রক্ষা পেয়েছেন এবং পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। এখন সবাই আশা করছেন তদন্ত কাজে কোন গাফিলতি থাকবে না এবং ভিকটিম আদালতে ন্যায় বিচার পাবেন। ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড দাবি করে বিক্ষোভ আরো লিখেছেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে মোহাম্মদ আব্দুল মাতিন: ''সম্প্রতি নোয়াখালীর নারী নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে 'ক্রসফায়ার' ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরণের বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, গত কয়েক বছর গুম,হত্যা,ধর্ষণ আগুনে পুড়িয়ে মারা, সন্দেহজনকভাবে ছেলে ধরা মনে করে মারা, গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ আবরার ফাহাদ এর মত একজন মেধাবী ছাত্রকে নির্মম ভাবে হত্যা করা, এধরনের সকল বিষয় থেকে ন্যায় বিচার কি পেয়েছি? পাওয়ার আশাও কি আছে? একের পর এক ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা উদ্ঘাটন হচ্ছে আর পূর্বের গুলো সব লুকিয়ে যাচ্ছে।'' ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংবিধান পরিপন্থী একটি কাজ মি. মাতিন, এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। ক্রসফায়ারই যখন একটা অপরাধ তখন আপনি কীভাবে একটি অপরাধ দিয়ে অন্য একটি অপরাধ দমন করবেন? আপনি ঠিকই বলেছেন যে আবরার হত্যার মত অনেক অপরাধের কোন বিচার না হওয়ায় জনমনে অবিশ্বাস এবং অনাস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আমার মনে হয় সব অপরাধের বিচার আইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করে দোষীকে আইন সম্মত শাস্তি প্রদান করা প্রয়োজন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনীর হাতে প্রায় চার হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ক্রসফায়ারের বিষয়ে লিখেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান: ''অপরাধ যত বড় বা হিংস্রই হোক না কেন, ক্রসফায়ার কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য কোন সমাধান নয়। আদালতের দায়িত্ব যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়, তবে নগণ্য হলেও নির্দোষ মানুষ এর শিকার হবেই। বিগত বছরগুলো থেকে আমরা তা দেখে আসছি। এটা ভিন্নমত দমনের একটা হাতিয়ারও বটে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যতই অস্বীকার করুক না কেন, এর অপব্যবহার হবেই। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব এটি বন্ধ করা হবে, ততই মঙ্গল। প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। '' শুধু অপব্যবহারই যে হচ্ছে তা নয় মি. রহমান, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ধারণাটাই আইনের শাসনের পরিপন্থী। এ'ধরণের হত্যাকাণ্ডকে 'ক্রসফায়ার'-এর মত নাম দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হয়ে যায় না। বাংলাদেশে এমন কোন আইন আছে কি, যেটা সরকারকে বিনা বিচারে দেশের নাগরিককে হত্যা করার অধিকার দেয়? আমার জানা মতে নেই। নোয়াখালীর ঘটনা নিয়ে সোমবার সন্ধ্যার রেডিও পরিবেশনা ভাল লেগেছে জানিয়ে লিখেছেন অনুতম বণিক, তবে তিনি কোথা থেকে লিখেছেন তা বলেন নি: ''বেগমগঞ্জ-এর ন্যক্কারজনক ঘটনা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও সময়োপযোগী একটি প্রতিবেদন শুনে অনেক ভালো লাগল। আরও বেশি ভাল লাগল জাকারিয়া স্বপনের সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কিত আরও একটি সম্পূরক প্রতিবেদন শুনে। আশাকরি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে।'' আপনাকেরও ধন্যবাদ মি. বণিক। অনুষ্ঠান আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমাদেরও ভাল লাগলো। নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে যুদ্ধের কারণে বহু মানুষ শরণার্থী হয়ে পড়েছেন। এবার বহির্বিশ্ব নিয়ে একটি চিঠি। আযেরবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ: ''চলমান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া দুটি দেশের ভবিষ্যৎ ফলাফল কোনদিকে মোড় নিচ্ছে? ইতোপূর্বে ঘটে যাওয়া নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে বহুল আলোচিত দ্বন্দ্ব এখনো বিদ্যমান। তবে বিবিসির কাছে আমার প্রশ্ন এ দুটি দেশের মধ্যে এ পরিস্থিতির জন্য কারা দায়ী?'' নাগোর্নো-কারাবাখ-এর যে অংশ নিয়ে বিবাদ, তার অধিকাংশ নাগরিক আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত। কিন্তু প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন সেই এলাকাকে আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত করে। নাগোর্নো-কারাবাখ ইসলাম এবং ক্রিশ্চিয়ানিটি, দু'ধর্মের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে নাগোর্নো-কারাবাখ আর্মেনিয়া যোগ দেবার ঘোষণা করে এবং কয়েক লক্ষ আজেরিকে বের করে দেয়। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় প্রথম দফা যুদ্ধ অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়, কিন্তু এখন আজারবাইজান তুরস্কের সহায়তায় তাদের হারানো জমি উদ্ধারের জন্য চরম লড়াই শুরু করেছে। তাহলে কে দায়ী? হয়তো ইতিহাস দায়ী। বাংলাদেশের কক্সবাজারে একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি রোহিঙ্গা বিষয়ে বেশ কিছু খবর আমাদের পরিবেশনায় ছিল, বিশেষ করে ভাসানচরে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক। সে বিষয়ে দু'একটি চিঠি, প্রথমে লিখেছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে তানসু দাশ: ''সেই ২০১৭ সালে এক বিরাট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আসলেও আজকে তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এর কোনো ফলপ্রসূ সমাধান হলো না। রোহিঙ্গারা প্রতি বছর হাজার হাজার শিশুর জন্ম দিয়ে এক বিরাট জনসংখ্যা সৃষ্টি করে চলেছে যা আগামীতে আরো ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। যেহেতু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই তাই তারা ধীরে ধীরে বিভিন্ন অন্যায় কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এসব বিষয় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে এটা নির্মূল করার কতটা কঠিন হয়ে উঠবে সরকারের জন্য? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কী প্রভাব পড়তে পারে?'' আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব হয়তো খুব বেশি পড়বে না মি. দাশ, যদি না জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য একমত হয়। সে'রকম ঐক্যমত্যের কোন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সমস্যা যে ক্রমশ একটি সঙ্কটে পরিণত হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ক্যাম্পে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার যেভাবে গড়িমসি করছে, বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিশ্চয়ই সেটাই বড় চিন্তার বিষয়। বিচ্ছিন্ন জীবন: রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি আবাসন (লাল ছাদ) সহ ভাসানচর, স্যাটেলাইট থেকে তোল ছবি। পরের চিঠি লিখেছেন বগুড়ার সোনাতলা থেকে আশরাফুল আলম সিদ্দিকি: ''বিবিসি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে খুবই ভালো ভূমিকা পালন করছে। তাদের কথা চিন্তা করে আমার খুব চিন্তা হয়। তারা এভাবে আর কতদিন থাকবে। এভাবে তো আর এত মানুষের জীবন চলতে পারে না। তাদেরও তো একটা ভবিষ্যৎ আছে। ভারত বলেন আর চীন বলুন বা অন্য কেউ, সবাই মুখে বুলি আওড়াচ্ছে কেউ গায়ে মাখতে চাইছে না। কিসের ভয়ে আমি বুঝি না। সারা বিশ্ব কি মিয়ানমার সরকারের কাছে এতই অসহায়? এই রোহিঙ্গাদের অন্যায় কী? কেন তাদের নিয়ে বারবার হেলা করা হচ্ছে?'' পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা দেখেছি মি. সিদ্দিকি, কীভাবে সাধারণ মানুষ জাতিগত বিদ্বেষের কারণে দেশ হারিয়েছেন, গণহত্যার শিকার হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের দুর্ভাগ্য যে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনরা, এমনকি গণতন্ত্রের প্রতীক বলে এক সময়ে খ্যাত অং সান সু চিও এ'ধরণের বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন নাই। বরং রোহিঙ্গাদের 'বাঙালি' আখ্যায়িত করে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার নীতি গ্রহণ করেছেন। মিয়ানমার এই নীতি থেকে সরে না আসা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের এই দু:স্বপ্নের শেষ হবে না। আসামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আশংকা বাংলাভাষী হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিলে তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। এবারে অন্য এক প্রসঙ্গে আসি। বিবিসি বাংলা কি ভারতের নেতিবাচক ঘটনাগুলো এড়িয়ে যায়? পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুরের বাসিন্দা সবুজ বিশ্বাস তাই মনে করছেন: ''বিবিসির সংবাদ আমার ভালো লাগে। কিন্তু, একটা বিষয় লক্ষ্য করে অবাক হই। বিবিসি ভারতের খবর তো সম্প্রচার করেই থাকে, কিন্তু লক্ষণীয়ভাবে দেখা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতে যে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে, তা নিয়ে বিবিসি নীরব। যেখানে, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া নানান বিষয় নিয়ে বিবিসি চুল চেরা বিশ্লেষণ করে থাকে, যা ভালো লাগে। কিন্তু, ভারতের বিষয়গুলো নিয়ে বিবিসি চুপ কেন? ''যদিও আমি নিজে একটি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় কাজ করি। তবুও এটা স্বীকার করেই বলছি যে, ভারতের মিডিয়া তো নতুন ধারার সংবাদ পরিবেশন করে ইতিমধ্যেই 'মোদী মিডিয়া' উপাধি অর্জন করেছে। আপনারও কি এই নৈরাজ্যের কথা তুলে ধরে তামাম বিশ্বকে জানিয়ে দেবেন না?'' কথাটা আপনি মনে হয় ঠিক বলছেন না, মি. বিশ্বাস। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে যত বড় ঘটনা ঘটেছে বা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটা গোমাংস খাওয়ার জন্য মুসলিম হত্যাই হোক, ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরের মর্যাদা বদলানোই হোক, আসামে নাগরিক পঞ্জী দিয়ে বাংলাভাষীদের বিতাড়িত করার পদক্ষেপ হোক, জাতীয়তা আইনে সংশোধন এনে ধর্ম-ভিত্তিক নাগরিকত্ব দেয়ার নীতি ঘোষণাই হোক বা সেই আইন ঘিরে প্রতিবাদ এবং দাঙ্গা - বিবিসি বাংলা সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিস্তারিত খবর এবং বিশ্লেষণ রেডিও এবং অনলাইনে দিয়েছে। তবে নৈরাজ্য বলে না, ঘটনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলেই খবর সম্প্রচার করা হয়েছে। ভারতে আমাদের সাংবাদিক মাত্র দু'জন কিন্তু তা সত্ত্বেও বড় ঘটনা সব সময় বড় করেই কাভার করা হয়েছে। আহমদ শফী তবে বিবিসি বাংলাকে অন্য ভাবে দেখছেন ভারতের পাঠক অর্ক রায়: ''বিবিসিকে আগে নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক সংবাদ মাধ্যম হিসেবে জানতাম। কিন্তু বিবিসির বাংলাদেশি শাখা বিবিসি বাংলা যেভাবে নির্লজ্জভাবে উগ্র ইসলামিক কট্টরপন্থীকে সমর্থন করছে তাতে বিবিসির বাংলার সাংবাদিকদের ধিক্কার জানাই। বিবিসি বাংলা ক'দিন আগে শফি হুজুর মারা যাওয়ার পর যেভাবে তাকে নিয়ে নিউজ দিচ্ছিল, যেন তিনি মহান কোন নেতা। অথচ তার মত একজন উগ্র কট্টর ইসলামিক ব্যক্তি যিনি গোটা বাংলাদেশে শাপলা চত্বরের ঘটনার মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তার মত একজন উগ্র কট্টর মহিলা বিরোধী ব্যক্তি যিনি মহিলাদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করেছিলেন তাকে নিয়ে বিবিসি বাংলা একের পর এক নিউজ দিয়ে তাকে মহান প্রমাণ করতে চেয়ে ব্যস্ত ছিল।'' কাওকে মহান বা অন্য কিছু প্রমাণ করার জন্য বিবিসি বাংলায় কোন প্রতিবেদন, ফিচার, সাক্ষাৎকার কিছুই প্রচার করা হয় না মি. রায়। ধর্ম নয়, বরং আহমদ শফীর গুরুত্ব ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। তিনি বহু বছর মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে জড়িত কিন্তু সে কারণে তিনি জনসমক্ষে আসেন নি, এবং ইসলামিক শিক্ষা জগতে তাঁর অবস্থানের কারণেও মি. শফিকে নিয়ে এত জল্পনা কল্পনা হয় না। হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালে যা করেছিল তার রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল, এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আহমদ শফীর সখ্যতার কারণে বাংলাদেশে ইসলামীকরণের একটি অধ্যায় শুরু হয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। সে কারণেই আহমদ শফী একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং বিবিসি বাংলায় তার জীবন সেভাবেই পর্যালোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক টিউব ওয়েলের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমাদের অনুষ্ঠান বা কোন চলমান খবর নয়, পরের চিঠি এসেছে সামাজিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে, লিখেছেন নরসিংদী সদর থেকে ওয়ারেছ আলী খান: ''বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে ২০১৯ সালে সম্পাদিত গুচ্ছ জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সম্পাদিত ২০০৩ সালের সর্বশেষ সমীক্ষায় দেশের ২৯ শতাংশ নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক বিদ্যমান থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এরপর বিগত ১৭ বছরে আর্সেনিক দূষণের ওপর আর কোনো পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা হয়নি। ''এই নীরব ঘাতকের বিষক্রিয়া তথা আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত মানুষের হালনাগাদ তথ্যসহ যথাযথ চিত্র খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছেই অনুপস্থিত। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি-২০৩০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অংশ হিসেবে এবং আর্সেনিক-মুক্ত পানি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর শিগগির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কি?'' আমরা জানি মি. খান, আর্সেনিক নিয়ে আলোচনা বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে চলছে কিন্তু সমস্যার সমাধান মনে হচ্ছে এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। সবার জন্য সুপেয় এবং নিরাপদ পানি পৌঁছে দেয়া বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং সে লক্ষ্যে কাজ কেন হচ্ছে না, সেটাই বড় প্রশ্ন। বন্যার কবলে বাংলাদেশ (২০১৭ সালে তোলা ছবি, গাইবান্ধা এলাকায়) পানি নিয়ে আরেকটি চিঠি, তবে খাবার পানি না। লিখেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোহাম্মদ মাসুদ রানা: ''বন্যা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। বর্তমান সময়ে বন্যা যেন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর,পাবনা,সিরাজগঞ্জ জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে এক মাসের ব্যবধানে দুইবার বন্যার পানিতে কৃষকের শীতকালীন সবজি, ধান, পুকুর, ঘর-বাড়ি সহ রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ পানি বন্দী এবং বেকার হয়ে পড়ে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এসব বন্যা কবলিত জেলার সকল সংসদ সদস্য, বুদ্ধিজীবী, সকল স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার প্রধানের সাথে যৌথ সভার মাধ্যমে বন্যা মোকাবেলায় একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না কি?'' একটা কথা সব সময় বলা হয় মি. রানা, বন্যা বাংলাদেশের জন্য এক সময়ে আশীর্বাদ আবার অন্য সময়ে অভিশাপ। যুগ যুগ ধরে সেভাবেই চলে আসছে। কিন্তু বন্যাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, তা নিয়ে মত বিরোধ আছে। ষাটের দশকের বাঁধ নির্মাণ কতটুকু উপকার দিয়েছে, তা নিয়ে পরিবেশবিদ এবং প্রকৌশলীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। তবে বন্যার ব্যবস্থাপনা, যাতে অতিরিক্ত পানির উপকারিতা মানুষ পায় কিন্তু তার অপকারিতা থেকে ফসল এবং বাসস্থান রক্ষা পায়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ভূমিকা তো অবশ্যই থাকে। এরতুগ্রুল সিরিজের একটি প্রোমো এবারে আমাদের রেডিও অনুষ্ঠানে ভিন্নতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাকামে মাহমুদ চৌধুরী: ''তুরস্কের টেলি সিরিয়াল এরতুগ্রুল দেখার সৌভাগ্য না হলেও তার উপর শুভজ্যোতি ঘোষের এর প্রতিবেদনটি পড়ে বেশ রোমাঞ্চিত হলাম। এ ধরনের প্রতিবেদনগুলো তৈরির সময় বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনকারী ওয়েব সিরিজ, সিনেমা বা নাটকটি পুরো দেখার পরে তৈরি করেন, না কি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিবিসির ইংরেজি সংবাদদাতার প্রতিবেদন থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়? তবে যেখান থেকেই করা হোক না কেন, আপনাদের কাছে সংবাদের পাশাপাশি এরকম ভিন্নধর্মী কিছু প্রতিবেদন, বই রিভিউ ইত্যাদি বেশ ভালই লাগে। তবে আমার জানতে ইচ্ছা করে সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি এগুলো দেখার সময় কিভাবে মেইনটেইন করা হয়?'' আমাদের সংবাদদাতারা সাধারণত অনুবাদ করে রিপোর্টিং করেন না মি. চৌধুরী। শুভজ্যেতিও এরতুগ্রুল নিয়ে তার প্রতিবেদন বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বলে করেছেন। শিল্প সাহিত্য বা বিনোদন জগতের কিছু যখন 'খবর' হয়, তখন তারা প্রতিবেদন তৈরি করেন। সেটা ঐ বই, সিনেমা বা টেলি সিরিয়ালের রিভিউ না। সেরকম রিভিউ আমাদের অনুষ্ঠানে নেই তবে করা হয়তো যেতে পারে। ভেবে দেখার বিষয়। পরের চিঠি লিখেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক: ''বিবিসি'র সকালের দুটি অধিবেশন সেই কবেই বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপরও অনেক অনেক অনুষ্ঠান পুন:প্রচারের সুযোগ আপনারা পান কীভাবে? একমাত্র প্রীতিভাজনেসু অনুষ্ঠানটি পুন:প্রচার করা যেতে পারে, কিন্তু কই? সেটাতো কখনোই করতে দেখি না।'' আপনি সঠিক বলছেন না মি. ইসলাম। শুধু মাত্র শুক্রবারের বিশেষ প্রতিবেদন পুন:প্রচার করা হয়। অন্য কোন ফিচার পুন:প্রচার করার জায়গা এখন আমাদের অনুষ্ঠানে নেই। আগে বুধবারের ফোন-ইন পুন:প্রচার করা হতো, কিন্তু প্রীতিভাজনেসু ফিরে আসায় সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। শেষ করছি ভিন্ন ধরনের একটি চিঠি দিয়ে, পাঠিয়েছেন ঢাকা থেকে রাইহান যিনি শুধু একটি নামই ব্যবহার করেছেন: ''বিবিসি শুধু সংবাদ নয় , গোটা বাংলাদেশর খণ্ড খণ্ড ইতিহাস। শুনলে মন ভালো হয়ে যায়। আমার যখন দশ বছর বয়স, সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে নিজেকে বিবিসি র সাথে আঠার মতো লাগিয়ে রেখেছি। সেই ছোটবেলায় বড়দের সাথে বিবিসি শুনতাম এখন ছোটদের সাথে নিয়ে শুনছি। বিবিসি শুধু সংবাদের জন্য নয় এ যেন আমাদের দৈনন্দিন চাওয়া - পাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেদিন কোন কারণে বিবিসি শুনতে পাইনা , সেদিন কিছু অর্জন থেকে বঞ্চিত হই এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।'' বিবিসি বাংলা সম্পর্কে আপনার সুন্দর কথার জন্য ধন্যবাদ রাইহান। আশা করি ভবিষ্যতেও আপনি বিবিসির সাথে আঠার মতই লেগে থাকবেন। এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক: অনিক সরকার, বুয়েট, ঢাকা। ফয়সাল আহমেদ সিপন, ঘোড়াদাইড়, গোপালগঞ্জ। তানভীর আহমেদ। আরিফুল ইসলাম, পাইকগাছা, খুলনা। মোহাম্মদ শাহীন আলম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর। রিপন বিশ্বাস, জোত-শ্রীপুর, মাগুরা । মোহাম্মদ রেজাউল রহিম, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। শহীদুল ইসলাম, তালগাছিয়া, ঝালকাঠি।
news-50499210
https://www.bbc.com/bengali/news-50499210
নতুন মোবাইল প্রযুক্তি ৫জি কি টেলিভিশন সম্প্রচার শিল্পকে গিলে ফেলবে?
মোবাইল ইন্টারনেট যুগের পঞ্চম প্রজন্মের যোগাযোগ ব্যবস্থা ফাইভ-জি (৫জি) নিয়ে এখন প্রযুক্তি বাজার থেকে শুরু করে বিশ্ব রাজনীতি পর্যন্ত সর্বত্রই নানান আলোচনা এবং অস্থিরতা চলমান। অন্য কোন মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এমন বিতর্ক সৃষ্টির নজির নেই।
অবধারিতভাবেই টেলিভিশন শিল্পের জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত স্পেকট্রামের যে অংশ হাতছাড়া হবে, তা গিয়ে জমা হবে মোবাইল অপারেটরদের ঝুলিতে। স্পেকট্রাম না থাকার অর্থ হচ্ছে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় মাস ছয়েকের কিছু আগে সীমিত পরিসরে ৫জি চালু হয়েছে এবং পৃথিবীর আরও বেশ কিছু দেশে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রযুক্তি বিস্তৃত হওয়ার সাথে সাথে হুমকির মুখে পড়েছে প্রচলিত ব্যবস্থার টেলিভিশন সম্প্রচার শিল্প। সম্প্রচার জগতে আগামী দিনে টেলিভিশনের আধিপত্য কতটা টিকে থাকবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ৫জি কী কাজে লাগবে? প্রচণ্ড শক্তিশালী ৫জি একটি ব্যাপক-ভিত্তিক তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রযুক্তি, যার গতি এতটাই বেশি যে এটা প্রায় একই সময়ে (Real Time) তথ্য পাঠানো এবং এর প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করতে সক্ষম। ফোর-জি (৪জি) যদি হয় এক লেনের একটি ভিড়ে ঠাসা সরু সড়ক, তাহলে ৫জি হচ্ছে দশ লেনের এক বিশাল চওড়া হাইওয়ে যেখানে যানবাহন ছুটে চলে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এমনকি এই হাইওয়ে এমন ভাবে প্রস্তুত করা যে যানবাহনের সংখ্যা যত কম বা বেশিই হোক না কেন, কারো গতি কখনও কমবে না। অনন্য এই বৈশিষ্ট্যের কারণে ৫জি মানুষের আগামী দিনের জীবনযাপনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। এই প্রযুক্তিতে এমন কিছু নতুন সেবা গ্রহণের অভিজ্ঞতা মানুষ অর্জন করবে যা বর্তমানে পাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানের অনেক কিছুকেই ৫জি সম্পূর্ণভাবে রূপান্তর ঘটিয়ে মানুষকে অভিনব অভিজ্ঞতার স্বাদ দিবে। এর মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, রিমোট রবোটিক্স, এআর-ভিআর, গেমিং এবং আইওটি বা ইন্টারনেট অব থিংসের মত সেবা - যেগুলোতে তাৎক্ষণিক এবং সার্বক্ষণিক তথ্যের আদান-প্রদান প্রয়োজন হয়। সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত একটি প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে একজন ব্যক্তি ৫-জি'র অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন। টেলিভিশনের জন্য কী আছে? কন্টেন্ট উন্নয়নের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের জন্য এক অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে ৫জি। প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুটি সীমাবদ্ধতা - গতি এবং সীমিত ধারণ ক্ষমতা - দূর করতে পেরেছে ৫জি। এর ফলে আগামী দিনে টেলিভিশন ষ্টেশনগুলো তাদের আলট্রা-হাই-ডেফিনিশন বা ইউএইচডি টিভি সেট ব্যবহারকারী দর্শকদের জন্য এইচডিআর (হাই-ডাইনামিক রেঞ্জ), এইচএফআর (হাই ফ্রেম রেটস) এবং বিস্তৃত রং-এর সন্নিবেশ ঘটিয়ে উচ্চমান সম্পন্ন কন্টেন্ট পরিবেশন করতে পারবে। এছাড়াও টিভিগুলো ৫জি-র মাধ্যমে তাদের খবর, খেলাধুলা, মিউজিক ফেস্টিভ্যালের মত অনুষ্ঠান যেকোনো স্থান থেকে অত্যন্ত সস্তায় সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে। টেলিভিশন কেন হুমকিতে? প্রচলিত টেলিভিশন সম্প্রচার শিল্পের অস্তিত্বকে দুইভাবে হুমকিতে ফেলেছে ৫জি। প্রথমত, বৈচিত্র্যময় কন্টেন্টের ব্যাপক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে ৫জি। ভিজুয়াল কন্টেন্টের বিকল্প মাধ্যমগুলো ৫জি প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে টেলিভিশনের চেয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যেমন, ভার্চুয়াল, অগমেন্টেড এবং মিক্সড রিয়েলিটি কন্টেন্ট। এছাড়াও ৩৬০ ডিগ্রি ভিজ্যুয়াল মিডিয়া এবং পরবর্তী প্রজন্মের অডিও যা কিনা 'এনজিএ' বা 'এ্যাডভান্সড সাউন্ড সিস্টেম' নামে পরিচিত, ৫জি-র যুগে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। দ্বিতীয়ত, ৫জি-র কারণে বহুদিন থেকে নিজেদের জন্য ব্যবহার করে আসা স্পেকট্রাম হারাতে বসেছে টেলিভিশন শিল্প। যেহেতু ৫জি একটি ব্যাপকভিত্তিক প্রযুক্তি, তাই এটি পরিচালনার জন্য অনেক বেশি পরিমাণে স্পেকট্রামের প্রয়োজন হয়। আর এই প্রযুক্তি বিস্তারের কাজটি বিশ্বব্যাপী মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা পরিচালনা করছে এবং করবে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: আশ্বাসের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার মালিক-শ্রমিকদের পটকা থেকে জায়ফল: মৃত্যুও হতে পারে যে পাঁচ খাবারে 'কাজে ফাঁকি দিতে ভুয়া অসুস্থতার' কথা বলে কর্মীরা ভারচুয়াল, অগমেন্টেড এবং মিক্সড রিয়েলিটি কন্টেন্ট, ৩৬০ ডিগ্রি ভিজুয়াল মিডিয়া ৫জি-র যুগে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। কাজেই, অবধারিতভাবেই টেলিভিশন শিল্পের জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত স্পেকট্রামের যে অংশ হাতছাড়া হবে, তা গিয়ে জমা হবে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ঝুলিতে। আর টেলি-যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্পেকট্রাম হচ্ছে সবকিছুর ভিত্তি। সে কারণে কোন শিল্পের জন্য স্পেকট্রামের ঘাটতি বা না থাকার অর্থ হচ্ছে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি। ৫জি যেভাবে টিভি গিলবে বর্তমানে টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য যে স্পেকট্রাম ব্যবহৃত হয়, মোটা দাগে সেটা মূলত দুইভাগে বিভক্ত। সি-ব্যান্ড এবং কেইউ -ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সিতে চলে টেলিভিশনের বর্তমান সম্প্রচার। এরমধ্যে সি-ব্যান্ডে সম্প্রচার বেশি সুবিধাজনক, কেননা এতে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনেক বেশি এলাকায় সেবা পৌঁছানো যায়। এই ব্যান্ডেই মূলত টিভি চ্যানেলগুলো তাদের আপলিঙ্ক এবং কেবল অপারেটররা ডাউন লিংক করে থাকে। সি-ব্যান্ডের ডিশগুলো হয় বেশ বড় আকারের এবং বৃষ্টি বা আবহাওয়াজনিত কারণে এতে ছবির মানের হেরফের হয় না। অন্যদিকে কেইউ-ব্যান্ড মূলত ব্যবহৃত হয় ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) সেবার ক্ষেত্রে। এই প্রযুক্তিতে কোন একটি এলাকায় কাভারেজের জন্য সি-ব্যান্ডের চেয়ে বেশি সংখ্যায় স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হয়। তবে এই ডিশগুলো আকারে ছোট, সহজে পরিবহনযোগ্য এবং সস্তা। কিন্তু বৃষ্টি বা আবহাওয়াজনিত কারণে এতে ছবির মানের হ্রাস ঘটে। সি-ব্যান্ডে যে ফ্রিকোয়েন্সিগুলো ব্যবহৃত হয় তা মূলত ৩.৪ থেকে ৮.০ গিগাহার্টস পর্যন্ত বিস্তৃত। আর ইউএইচএফ টেরিস্ট্রিয়াল টিভি (আলট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সি) ব্যবহার করে ৪৭০ থেকে ৮৬২ মেগাহার্টস পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সিগুলো। মূলত এই ফ্রিকোয়েন্সি গুলোই টেলিভিশনের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ৫জি-র কারণে, বিশেষ করে সি-ব্যান্ড। অন্যদিকে ৫জি'র জন্য যে স্পেকট্রাম বরাদ্দ দিয়ে এর মান নির্ধারণ হতে যাচ্ছে, সেগুলো হল, ৭০০ মেগাহার্টস, ৩.৪ থেকে ৩.৮ গিগাহার্টস, ৪ গিগাহার্টসের পরবর্তী সমস্ত ফ্রিকোয়েন্সি এবং ২৪.২৫ থেকে ২৭.৫ গিগাহার্টস। প্রযুক্তিপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে এখন রয়েছে ৫-জি সুতরাং পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, সি-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সিগুলোকে নিজের দখলে নিয়ে নিচ্ছে ৫জি। এরফলে টেলিভিশনগুলোর হাতে সি-ব্যান্ড বলতে প্রায় আর কোন ফ্রিকোয়েন্সিই অবশিষ্ট থাকছে না। এছাড়া ৭০০ এবং ৮৫০ মেগাহার্টস ফ্রিকোয়েন্সিগুলো ৩জি, ৪জি ইতিমধ্যেই ব্যবহার করছে এবং ৫জি ও ৭০০ মেগাহার্টস ব্যবহার করবে। টেলিভিশনের জন্য উপায় কী? টেলিভিশনের জন্য একটা সহজ বিকল্প হচ্ছে সি-ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি কেইউ-ব্যান্ড ব্যবহার করা। কেইউ-ব্যান্ডের স্পেকট্রাম ১২ থেকে ১৮ গিগাহার্টস পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে এতে এই প্রযুক্তিতে কোন একটি এলাকায় কাভারেজের জন্য সি- ব্যান্ডের চেয়ে বেশি সংখ্যায় স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হওয়ায় খরচ বেশি হবে। আরেকটি বিকল্প হল, ৫জি'র নতুন প্লাটফর্মে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে টিভি। এতে করে প্রচলিত লিনিয়ার টিভি এবং অনলাইন ভিডিও সেবা (ওভার দ্যা টপ বা ওটিটি) একীভূত হয়ে একটি একক প্লাটফর্মে পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক পরিসেবার ব্যবহার বাড়বে। প্রচলিত লিনিয়ার টিভি যদিও মোবাইল ডাটা ব্যবহার করবে না, কিন্তু এ'ধরনের পরিবর্তনের ফলে নির্ভরযোগ্যতা কমবে এবং খরচ বাড়বে। কেননা, টেলিভিশনকে তাদের কন্টেন্ট পরিবহনের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ফী দিতে হবে। টিকে থাকতে কী করছে টেলিভিশন? এখনো ৫জি'র জন্য মান নির্ধারণ করা হয়নি তবে কাজ চলছে। আর আইটিইউ এর সাথে এই মান নির্ধারণের আলোচনায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের পাশাপাশি টেলিভিশনগুলোও যুক্ত আছে। বিবিসির মত বড় বড় টেলিভিশন সম্প্রচারক এই আলোচনায় সম্প্রচার শিল্পের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সেখানে টেলিভিশনের জন্য ৫জি'র স্পেকট্রামের মধ্যেই একটি নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে করে টিভি সম্প্রচারক মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ওপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে নিজেদের কার্যক্রম চালাতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভবিষ্যতে যদি ৬জি, ৭জি ইত্যাদির জন্য আরও অনেক বেশি স্পেকট্রামের দরকার হয়, তখন কী হবে?
news-55862348
https://www.bbc.com/bengali/news-55862348
স্বাধীনতার ৫০ বছর: শেখ মুজিব যেভাবে নেতা হয়ে ওঠেন, ছয় দফা ঘোষণা করে
ছয় দফা ঘোষণার পর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ-এর পূর্ব পাকিস্তান প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আপনি এই যে ৬ দফা দিলেন তার মূল কথাটি কী?" আঞ্চলিক ভাষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন শেখ মুজিব: "আরে মিয়া বুঝলা না, দফা তো একটাই। একটু ঘুরাইয়া কইলাম।"
শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেবার সময় তোলা ছবি। ঘুরিয়ে বলা এই এক দফা হলো পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্থাৎ স্বাধীনতা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলের স্বাধিকার আন্দোলনের দাবী উঠেছে কিন্তু ছয় দফার দাবির মধ্য দিয়ে এটি একক এজেন্ডায় পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী দলগুলোর এক সম্মেলনে এই দফা পেশ করেন। অনেকে এসব দাবিকে "রাজনৈতিক বোমা" বলে উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রওনক জাহান বলেন, এর আগে বাঙালির রাষ্ট্রভাষা থেকে শুরু করে আরো অনেক এজেণ্ডা ছিল। কিন্তু ছয় দফা দেওয়ার পর থেকে জাতীয়তাবাদের বিষয়টি একমাত্র এজেন্ডায় পরিণত হল। ''তখন লোকজনকে সংগঠিত করা অনেক বেশি সহজ হল। হয় আপনি আমাদের পক্ষে অথবা বিপক্ষে,'' তিনি বলেন। ''একারণে শেখ মুজিব খুব দ্রুত সকল মানুষকে জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার পক্ষে নিতে পারলেন এবং ৭০-এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে দেশকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত পথে নিয়ে গেলেন," রওনক জাহান বলেন। ছয় দফার পটভূমি ছয় দফা কোন রাতারাতি কর্মসূচি ছিল না। এর প্রস্তুতি ছিল দীর্ঘদিনের। উনিশ'শ চল্লিশ সালের লাহোর প্রস্তাব, '৪৭ সালের ভারত ভাগ, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, '৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন - এসবই ছয় দফার ভিত তৈরি করেছে। রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ মহিউদ্দিন আহমদ তার 'আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০' গ্রন্থে লিখেছেন, "ছয় দফা হঠাৎ করে আসমান থেকে পড়েনি। দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি ও ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এর তাত্ত্বিক ভিত্তি তৈরি হচ্ছিল। একই সঙ্গে তৈরি হয়েছিল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে অর্থনীতিবিদদের যুগলবন্দী, স্বাধিকারের দাবিতে যাঁরা এক মোহনায় মিলেছিলেন।" আরো পড়ুন: যে চার নেতা বদলে দিলেন ১৯৪৭-পরবর্তী পূর্ব বাংলার রাজনীতি ভাষা আন্দোলন কীভাবে সৃষ্টি করেছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা যে বৈষম্যের কারণে বাঙালিরা পাকিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সিলেটের আদালতে জামিন পাওয়ার পর ট্রেনে শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় দফার জন্মের পেছনে মূল কারণ ছিল মূলত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বৈষম্য। জন্মের পর থেকে পাকিস্তান যেসব বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তার বেশিরভাগ ব্যয় হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানের 'সোনালী ফসল পাট' বিদেশে রপ্তানি করে যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো সেটাও চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ৬০ শতাংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের কিন্তু প্রায় সমস্ত অর্থ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের ১৯৭০ সালের রিপোর্টে দেখা যায় উন্নয়ন ও রাজস্ব খাতে পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানে ৬০ শতাংশ বেশি ব্যয় করা হয়েছে। ফলে পশ্চিমের মাথা পিছু আয়ও বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। "আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারির পর ষাটের দশকের প্রথম থেকেই উন্নয়নের একটা প্রচারণা শুরু করে দিলেন। কিন্তু পূর্ব বাংলার অর্থনীতিবিদরা লেখালেখির মাধ্যমে দেখাতে লাগলেন যে এখান থেকে সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে'', রওনক জাহান বলেন। ''এক অর্থনীতির বদলে আমাদের দুটো অর্থনীতি দরকার। ফলে এতো দিন যে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হচ্ছিল সেটা একটা নতুন মাত্রা পেল," তিনি বলেন। তার সাথে ছিল রাজনৈতিক বৈষম্য। প্রশাসনে বাঙালিদের নিয়োগ দেওয়া হতো না। নেওয়া হতো না সেনাবাহিনীতেও। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক বৈষম্যও মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৭ দিনের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ৬ দফার আশু পটভূমি তৈরি হয়েছিল। "এই যুদ্ধের সময় লক্ষ্য করা গিয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সামরিক দিক থেকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। সেকারণে এই অঞ্চলের রাজনীতিবিদ ও সাধারণ লোকজনের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল,'' তিনি বলেন। ''শেখ মুজিব বলেছিলেন যে এই যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি নতুন গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে," অধ্যাপক হোসেন বলেন। যুদ্ধের সময় ভারত পূর্ব পাকিস্তানে আক্রমণ না করায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেছিলেন, "চীনের ভয়ে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধে জড়াতে সাহস করেনি।" জবাবে শেখ মুজিব বলেছিলেন, "পূর্ব পাকিস্তানকে যুদ্ধকালীন সময়ে এতিমের মতো ফেলে রাখা হয়েছে। ভারতীয় সৈন্যরা যদি দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত লেফট রাইট করে হেঁটে যেত তবুও তাদেরকে বাধা দেওয়ার মতো অস্ত্র বা লোকবল কিছুই পূর্ব বাংলার ছিল না। আর চীনই যদি আমাদের রক্ষাকর্তা হয় তবে পশ্চিম পাকিস্তানের বদলে চীনের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধলেই হয়।" কী ছিল ছয় দফায় যুদ্ধের পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা উনিশ'শ ছেষট্টি সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় সম্মেলন ডাকা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের পাট বিক্রি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। আরো পড়তে পারেন: বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: শেখ মুজিবুর রহমান বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৪- এ কে ফজলুল হক বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৯- মওলানা ভাসানী বিবিসির জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ২০তম স্থানে সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদকে সাথে নিয়ে ওই সম্মেলনে যান শেখ মুজিবুর রহমান এবং আগের দিন সম্মেলনের বিষয় নির্ধারণী কমিটির সভায় ছয় দফা পেশ করেন। এই ছয় দফা কে তৈরি করেছিলেন সেটি ইতিহাসে স্পষ্ট নয়। ছয় দফার ছিল তিনটি স্বতন্ত্র দিক- রাষ্ট্রের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কাঠামো। রওনক জাহান বলেন, "ছয় দফাতে যে রাজনৈতিক দাবি তুলে ধরা হয়েছিল সেটা অনেক আগেই থেকেই ছিল। কিন্তু এখানে অর্থনীতির বিষয়গুলো অনেক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। তখন আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের অর্থনৈতিক বিষয়গুলো জোরেশোরে সামনে চলে এলো।" ছয় দফার দাবিগুলো ছিল এরকম: সৈয়দ আনোয়ার হোসেনে বলেন, "এখানে স্বাধীনতার কোন কথা লেখা ছিল না। সেখানে ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়নের সুপারিশ। এবং স্বায়ত্তশাসনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা পথ-নির্দেশ। এটা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কৌশল।" ছয় দফা সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ মুজিব সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হককে বলেছিলেন: "আমার দফা আসলে তিনটা। কতো নেছো (নিয়েছ), কতো দেবা (দিবে), কবে যাবা?" ছয় দফার প্রতিক্রিয়া শেখ মুজিব বিরোধী দলগুলোর যে সম্মেলনে এসব দফা তুলে ধরেছিলেন সেখানেই তার বিরোধিতা করা হয়। সবার আপত্তির কারণে এই প্রস্তাব সম্মেলনের এজেন্ডায় স্থান পায়নি। ক্ষুব্ধ হয়ে শেখ মুজিব সম্মেলন থেকে ওয়াকআউট করেন। রাজনীতিবিদরা বলেন, এসব দফা বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তান থাকবে না, ভেঙে যাবে। পাকিস্তানের খবরের কাগজে তাকে চিহ্নিত করা হয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে। নিজের দল আওয়ামী মুসলিম লীগেরও সব নেতার সমর্থন ছিল না ছয় দফার প্রতি। তবে ছাত্রলীগের তরুণ নেতারা শেখ মুজিবের পাশে ছিলেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিও ছয় দফার বিরোধিতা করে। সামরিক শাসক আইয়ুব খান: ছয় দফাকে প্রয়োজনের অস্ত্রের ভাষায় মোকাবেলার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। রওনক জাহান বলেন, "বামপন্থীরা তো সবাই ন্যাপে চলে গিয়েছিল। আইয়ুব তখন চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে। ফলে তারা আর ছয় দফার সঙ্গে ছিল না। ফলে তারা জন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে লাগলো। ''ভাসানীর নেতৃত্বে যে ন্যাপকে শক্তিশালী দল বলে মনে হচ্ছিল ১৯৭০ এর মধ্যে তারা মানুষের সমর্থন হারিয়ে ফেললো। কোন বিষয়টি মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয় হবে সেটা বুঝতে তারা রাজনৈতিক ভুল করে ফেলেছিল," তিনি বলেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। প্রয়োজনে তিনি অস্ত্রের ভাষায় ছয় দফার জবাব দেওয়ার হুমকি দেন। উনিশ'শ ছেষট্টি সালে কনভেনশন মুসলিম লীগের সমাপ্তি অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বলেন দেশের অখণ্ডতা-বিরোধী কোন প্রচেষ্টা সরকার সহ্য করবে না। এর পর শেখ মুজিবকে বারবার গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রাখা হয় এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তখনই শোনা গেল 'জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো' এই স্লোগান।। শেখ মুজিবের উত্থান লাহোর থেকে ঢাকায় ফিরে পরের মাসেই এসে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। ছয় দফা কর্মসূচি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান সফর করতে শুরু করেন। এই কর্মসূচিকে তারা 'বাঙালির বাঁচার দাবি' হিসেবে অভিহিত করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলকে চাঙ্গা করা এবং দলের প্রধান হয়ে ওঠার জন্যেও শেখ মুজিবের এরকম একটি কর্মসূচির প্রয়োজন ছিল। রওনক জাহান বলেন, "১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দী মারা যাওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান দলটির হাল ধরেন। সোহরাওয়ার্দীর পরে পূর্ব বাংলায় এবং আওয়ামী লীগে যারা রাজনীতি করতেন তারা কেউ কেন্দ্রীয় সরকারে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করা, কিম্বা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না। "শেখ মুজিবর রহমান তখন দলের নেতা হতে যাচ্ছেন এবং এজন্য তার একটা কর্মসূচির প্রয়োজন ছিল যা বাঙালির আকাঙ্ক্ষাকে ধরতে পারবে। এখানে নতুন আঙ্গিকে স্বাধিকারের কথা বলা হলো যা তাদেরকে স্বাধীনতার পথ দেখালো,'' তিনি বলেন। শেখ মুজিবুর রহমান। এর পরই তিনি প্রেসিডেন্ট হলেন এবং এই কর্মসূচি নিয়ে সারা দেশে মহকুমায় মহকুমায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন। তখন তিনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসময় শেখ মুজিবের সফরসঙ্গী ছিলে তাজউদ্দীন আহমদ। তার কন্যা শারমিন আহমদ তার 'তাজউদ্দীন আহমদ/নেতা ও পিতা' গ্রন্থে লিখেছেন: "আইয়ুব খানের বৈদেশিক মন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো তখন ছয় দফাকে অযৌক্তিক প্রমাণ করার জন্য মুজিব কাকুকে ঢাকার পল্টনের জনসভায় তর্কযুদ্ধের আহবান জানালেন। মুজিব কাকু আব্বুর সঙ্গে পরামর্শ করে ভুট্টোর চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করলেন।" "আব্বু ভুট্টোর সঙ্গে দেখা করে মুজিব কাকুর চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সংবাদটি আনুষ্ঠানিকভাবে জ্ঞাপন করলেন। আব্বুর সঙ্গে কথা বলার পরপরই ভুট্টো বুঝতে পারলেন ছয় দফার যৌক্তিকতা আব্বু এমন নিপুণ ও তথ্যবহুল যুক্তিতে দাঁড় করিয়েছেন যে মুজিব কাকু ও তার দলকে তর্কে হারানো মুশকিল। আব্বুর সঙ্গে কথা শেষ করার পর ভুট্টো মুসলিম লীগ নেতাদের কাছে মন্তব্য করেছিলেন 'হি ইজ ভেরি থরো, শেখের যোগ্য লেফটেন্যান্ট আছে দেখছি।" কিন্তু পরে সেই তর্কযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় নি। এই ছয় দফাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গণজাগরণের সৃষ্টি হলো। দৈনিক ইত্তেফাক এর পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল ডাকা হয়। এদিন পুলিশের গুলিতে ১১ জন শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের সমসাময়িক রাজনীতিক অলি আহাদ তার 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-১৯৭৫' গ্রন্থে লিখেছেন, "সকাল আটটার দিকে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত কোহিনূর কেমিক্যাল কো. ও হক ব্রাদার্স কো. সম্মুখস্থ রাজপথের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত একটি চায়ের দোকানে ধর্মঘটী শ্রমিক দল চা-নাস্তা গ্রহণকালে একজন শ্রমিক সাইকেল তথায় আসিলে দোকানে উপবিষ্ট শ্রমিকদের একজন সাইকেলের হাওয়া ছাড়িয়া দেয়। এমনি আপোষী দৃশ্যে হাসি-কৌতুকের হিল্লোড় বাহিয়া যায়। হঠাৎ হরিষে বিষাদ সৃষ্টি করে একটি পুলিশ জিপের আগমন। পুলিশ জিপে আগত পুলিশ শ্রমিকদিগকে লাঠিপেটা আরম্ভ করে, শুরু হয় পাল্টা শ্রমিক প্রতিরোধ। অসহিষ্ণু পুলিশের রিভলবারের গুলিতে তিনজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়।" আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আদালতে যাচ্ছেন শেখ মুজিব। এসময় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনাও বন্ধ হয়ে যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রওনক জাহান বলেন, তখন নতুন একটা শ্রেণি এই আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়। ''নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে কারখানার শ্রমিকরাও এর সাথে শরিক হলো। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন আন্দোলনে মূলত শিক্ষার্থীরাই ভূমিকা পালন করেছিল। পরে '৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে কৃষকরাও আন্দোলনে যোগ দিল," তিনি বলেন। এর পেছনে কারণ ছিল, শেখ মুজিব সারা দেশে ঘুরে ঘুরে লোকজনকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তান কেড়ে নিচ্ছে। তাদের সুদিন আসবে যদি তারা তাদের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, "আমার নিজের কানে শোনা। ছাত্রলীগের নেতা সিরাজুল আলম খান একটি সভায় মন্তব্য করেছিলেন যে শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই এদেশকে স্বাধীন করতে হবে। কারণ লোকে তার কথা শোনে। ''অর্থাৎ ৬ দফার পর তিনি অবিসম্বাদিত নেতা হয়ে উঠতে শুরু করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মুক্তি পাওয়ার পর তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয় এবং এর পর থেকেই তিনি হয়ে উঠলেন বাঙালির মুখপাত্র।" ছয় দফা ঘোষণা করে শেখ মুজিব চলে এলেন একেবারে সম্মুখভাগে। রওনক জাহান বলেন, "শেখ মুজিব তখন সবকিছু তার কাঁধে তুলে নিলেন। ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন তিনি। একজন অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন। ১৯৬৬ থেকে ৭০ এই চার বছরে তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন। ছয় দফা আন্দোলন তাকে সাহায্য করলো বাঙালিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন প্রতীক হয়ে উঠতে।" ছয় দফা ঘোষণার পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের জন্ম হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান হন তার প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি।
news-54092577
https://www.bbc.com/bengali/news-54092577
রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার: দ্য হেগ থেকে আদালত বাংলাদেশে স্থানান্তরের অনুরোধ
রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে শুনানি হবে, সেটি যেন নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পরিবর্তে অন্য কোন দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে আদালত বসিয়ে করা হয়, সেরকম একটি আবেদন পেশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌশুলি ফাতো বেনসোদা (ডান থেকে প্রথম) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির সব কার্যক্রম সাধারণত চলে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে। কিন্তু এই প্রথম এরকম কোন উদ্যোগ নেয়া হলো, যেখানে ভিক্টিম বা নির্যাতিতদের শুনানির জন্য আদালতকেই অন্য কোন দেশে বসানোর আবেদন জানানো হয়েছে। আইসিসিতে এরকম একটি আবেদনের কথা জানা গেল এমন এক সময়, যখন মিয়ানমারের দুজন সৈন্য, যারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং দ্য হেগে গিয়ে পৌঁছেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। মিয়ানমারকে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য যে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন, সেখানে এই দুটি ঘটনাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবীরা। সম্ভাব্য দেশ বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দ্য হেগের যে বিচার আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের হত্যা-নিপীড়নের অভিযোগের শুনানি হওয়ার কথা, সেই আদালত যেন অন্য কোন দেশে বসিয়ে শুনানি করা হয়, সেরকম একটি আবেদন পেশ করা হয় গত মাসে। আবেদনটি করেন রোহিঙ্গাদের পক্ষে কাজ করছে এমন তিনটি 'ভিকটিম সাপোর্ট গ্রুপ‌ে'র আইনজীবীরা। তারা এমন একটি দেশে এই শুনানির অনুরোধ জানিয়েছেন, যেটি নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি কোন দেশে হবে। আবেদনে দেশের কথা উল্লেখ না থাকলেও, আইসিসি এই আবেদনের অগ্রগতির যে বিবরণী প্রকাশ করেছে, তাতে এই দেশটি 'সম্ভবত বাংলাদেশ‌‌‌' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসির তিন নম্বর 'প্রি ট্রায়াল চেম্বার‌' আদালতের রেজিস্ট্রি বিভাগকে আদেশ দিয়েছে, দ্য হেগ থেকে অন্য কোন দেশ, যেমন বাংলাদেশে আদালতের কার্যক্রম সরিয়ে নেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে। আগামী ২১শে সেপ্টেম্বরের আগেই এই সম্ভাব্যতা যাচাই করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কেন আদালত অন্য দেশে বসানোর উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবি আহমেদ জিয়াউদ্দীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, অন্য দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের শুনানির জন্য আদালত বসানোর উদ্যোগ খুবই বিরল এক ঘটনা। যেহেতু নির্যাতনের শিকার হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশেই আছেন, তাই এটি বাংলাদেশে হলে শুনানিতে তাদের সাক্ষ্য-প্রমাণ দেয়া সহজ হবে। আবেদনকারি আইনজীবীরাও এরকম যুক্তিই দিয়েছেন। সুপরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শ্যানন রাজ সিং নামে একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবি এ নিয়ে একটি ব্লগে লিখেছেন, "পাখির মত উড়ে গেলে, বৃষ্টিস্নাত দ্য হেগ থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব আনুমানিক ৮,০০০ কিলোমিটার। সেখানকার শরণার্থী শিবিরে নির্যাতনের শিকার যে রোহিঙ্গারা থাকেন, তাদের জন্য এই দূরত্ব একেবারেই অনতিক্রম্য‍।" এই ব্লগে তিনি আরও বলেছেন যে, আইসিসির রুল অনুযায়ী, স্বাগতিক দেশের (নেদারল্যান্ডস) বাইরে অন্য কোন দেশেও এই আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ আছে। রোম স্ট্যাটিউটের একটি ধারা উল্লেখ করে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আদালত প্রয়োজন অনুযায়ী কোন মামলার পুরো বা আংশিক শুনানির জন্য অন্য কোন স্থানেও বসতে পারে। মিয়ানমারের জন্য বড় ধাক্কা এ সপ্তাহে প্রকাশ পাওয়া এই দু্টি ঘটনা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারের দাবিতে যারা সোচ্চার, তাদের ভীষণভাবে উৎসাহিত করেছে। তাদের মতে, এর ফলে মিয়ানমার এখন রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বড় ধরণের চাপের মুখে পড়তে পারে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন দেশত্যাগ করা মিয়ানমারের দুই সৈনিকের অপরাধের স্বীকারোক্তির যে বিশদ বর্ণনা প্রকাশ করেছে, সেটিকে অবশ্য মানবাধিকার আইনজীবীরা খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ব্রাসেলসে কর্মরত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, নিউ ইয়র্ক টাইমস বা অন্যান্য মিডিয়ার রিপোর্টে এই দুই সৈনিকের যে ভিডিও টেস্টিমোনি বা স্বীকারোক্তিমূলক ভাষ্যের কথা বলা হচ্ছে, সেটার হয়তো সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোন থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতদিন যে অভিযোগগুলো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে করা হচ্ছিল, তাদেরই দুজন সদস্য সেই অপরাধের কথা স্বীকার করছেন। নিশ্চুপ থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যায় সায় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির বিরুদ্ধে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এখনো পর্যন্ত এই দু্ই সৈনিকের ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। প্রসিকিউটরের অফিস থেকেও কিন্তু বলা হয়নি এরকম দুজন সৈনিক তাদের তত্ত্বাবধানে আছে। যদি এই খবর সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্তে হয়তো এই দুই সৈনিকের ঘটনা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে মিয়ানমারের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে। এটা একদিক থেকে খুবই ভালো খবর। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে যে ভিডিও সাক্ষ্যের কথা বলা হচ্ছে, সেটার কি কোন মূল্য আছে? আহমেদ জিয়াউদ্দীন বলছেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসির কাছে এই সাক্ষ্যের কোন মূল্য সেভাবে নেই। "এর প্রথম কারণ হচ্ছে, আইসিসি নিজেই এখনো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করছে। সেই তদন্ত এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে। তদন্ত চলাকালে আইসিসি বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন তথ্য পেতে পারে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের যে রিপোর্টটির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে দুজন সৈনিকের যে বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে, আইসিসির তদন্তকারীরা সেসব তথ্যকে কেবল অতিরিক্ত কিছু তথ্য হিসেবে গণ্য করবেন। এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই। "কারণ কেউ যদি কোন অপরাধ স্বীকার করতে চান, সেটা আইসিসির আইন বা নিয়ম অনুসরণ করে হতে হবে। আর এই কাজটা কেবল মাত্র আইসিসির প্রসিকিউটর বা তদন্ত কর্মকর্তাই করতে পারেন। অন্য কারও কাছে দেয়া স্বীকারোক্তি, সেটা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছেই হোক, বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের কাছে হোক, আইসিসির এখন যে তদন্ত চলছে, এর চেয়ে বেশি কোন মূল্য তাদের কাছে আছে বলে আমার মনে হয় না।" আরো পড়ুন: রোহিঙ্গা: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার অভিযোগ কেন? গণহত্যা রোধে ব্যবস্থা নিন, মিয়ানমারকে আইসিজে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রমাণ নিয়ে দ্য হেগে বাংলাদেশ দল "আমরা যারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এসব অপরাধের বিচার চাচ্ছি, তাদের কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বলতে পারি, এতদিন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছিল, এটা তার প্রমাণ। এটা আমাদের কাছে প্রমাণ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আইসিসির কাছে এটা কোন প্রমাণ নয়।" কিন্তু কথিত দুই সৈনিক যদি আইসিসির কাছে একই সাক্ষ্য দেন তখন কী হবে? আহমেদ জিয়াউদ্দীন বলেন, এই দুই সৈনিক যদি আদালতের কর্মকর্তাদের কাছে একই সাক্ষ্য দেন, তাহলে সেটার অনেক মূল্য থাকবে। তবে আইসিসির তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে তারা যদি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়, শুধু দিলেই হবে না, তার সঙ্গে প্রমাণও দিতে হবে। তাহলে এটি গুরুত্বপূণৃ ভূমিকা রাখবে এবং আইসিসির বিচারকরা এসব কিছু বিবেচনা করবে। এই সৈনিকরা নিজেরাই তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, কাজেই তাদের কি করা হবে? লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে আহমেদ জিয়াউদ্দীন বলেন, এই সৈনিকদের আসামী করা হবে, নাকি তাদের সাক্ষী বানানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় হবে, সত্য উদঘাটন বা ঘটনার সুবিচার নিশ্চিত করা। তবে তিনি বলেন, এই দুজন সৈনিক মনে হচ্ছে খুবই নিম্নপদস্থ। সাধারণত যারা "ফুট সোলজার' বা সামনের কাতারের সৈনিক, তাদের খুব কম ক্ষেত্রেই আসামী করা হয়। "আইসিসির আইনে আসামী করা হয় তাদেরই, যার সর্বোচ্চ দায়িত্ব আছে, ‍'দ্য পার্সন উইথ হাইয়েস্ট ক্রিমিনাল রেসপন্সিবিলিটি'। সেখান থেকেই শুরু হয় আইসিসির প্রক্রিয়া। যারা এর পরিকল্পনা করেছে তাদের, যারা এটি কার্যকর করেছে, বাস্তবায়ন করেছে, তাদের। এর মাঝে যারা আছেন, তাদের যে ধরা হবে না তা নয়, একমাত্র আইসিসি সিদ্ধান্ত নেবে এদের প্রসিকিউশন করা হবে কি হবে না।" তিনি বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত হবে প্রসিকিউশনের জন্য। এই লোকগুলোকে সাক্ষী হিসেবে আনা হবে, নাকি অভিযুক্ত হিসেবে দাঁড় করানো হবে, এটা প্রসিকিউটর সিদ্ধান্ত নেবেন। আহমেদ জিয়াউদ্দীন বলেন, আইসিসিতে এসে বা আইসিসির প্রসিকিউটরদের কাছে এরকম সাক্ষ্য দেয়ার ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। কারণ ফুট সোলজার যারা থাকে, তারা তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ উৎস যে কোন প্রসিকিউশন বা ইনভেস্টিগেশনের জন্য। তিনি বলেন, "এরকম সাক্ষী দিতে আসা লোকজন যদিও নিজেরাই দোষী, তাদের কি করা হবে, সেই বিবেচনা প্রসিকিউটরকে করতে হবে। তারা দেখবে, ন্যায় বিচারের স্বার্থে, এদের বিচার করা ভালো হবে নাকি তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করে আরও বড় বড় যারা আছেন, যাদের দায়িত্ব অনেক বেশি, তাদেরকে শাস্তি দেয়া ভালো।"
news-46591141
https://www.bbc.com/bengali/news-46591141
সংসদ নির্বাচন ২০১৮: ঐক্যফ্রন্ট ইশতেহার 'ফাঁকা বুলির বাইরে বেশি কিছু ভাবা কঠিন'
বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও গণফোরাম সহ ছোট কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেছে, সেটা কতটুকু বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দুর্নীতি বিষয়ক সংস্থা মুখপাত্র।
অতীতে বিএনপির ইশতেহার বাস্তবায়নের ট্র্যাক রেকর্ড হতাশাব্যঞ্জক বলে মত বিশ্লেষকদের বিশ্লেষকরা বলছেন, অঙ্গীকার করার সময় ভাল কথা বলা হয়, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সেসব অঙ্গীকার পূরণের নজির খুবই কম। দুর্নীতি বিষয়ক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির অতীতের দিকে তাকাতে হবে। ''তাদের অতীতের ট্র্যাক রেকর্ড অনুযায়ী বলা যায় যে এগুলো ফাঁকা বুলির বাইরে বেশি কিছু ভাবা কঠিন।,'' ড: ইফতেখারুজ্জামান বলেন। তিনি বলছেন দৃষ্টান্তস্বরূপ বলেন, ২০০৮এর নির্বাচনের আগে বিএনপির সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল যে ক্ষমতায় গেলে তারা সাংবিধানিক পরিবর্তন এনে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ করে দেবে। ''অথচ সেইসময়ই সবচেয়ে বেশি সংসদ বর্জন হয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে। এবং সেটা তারাই করেছিলেন,'' তিনি বলেন। ঐক্য ফ্রন্টের তাদের ইশতেহারে ১৪টি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে: •দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেবার অঙ্গীকার। •দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার লক্ষ্যে বিধান তৈরি। •সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা কমিয়ে নারী প্রার্থী মনোনয়নের সংখ্যাবৃদ্ধি। •নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা। •গত ১০ বছরের মামলা, গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যা তদন্তে সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন কমিশন গঠন করে খোলা মনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমাধান করা। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: ২০০১ এর ইশতেহার কতটা বাস্তবায়ন করেছিল বিএনপি? কেন নির্বাচন করছেন না ড. কামাল হোসেন ঐক্যজোট আগামী ৫ বছরে ১৪দফা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে তাদের ইশতেহারে ঐক্যফ্রন্ট তাদের অঙ্গীকারে বলেছে "গত দশ বছরে কল্পনাতীত স্বেচ্ছাচারিতা এবং পুলিশকে দলীয় ক্যাডার হিসাবে ব্যবহার করে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, গুম, খুন , মামলার ঘুষ বাণিজ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় লক্ষ লক্ষ পরিবার ক্ষুব্ধ ও বিপর্যস্ত। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী ও আইনজীবী সম্বন্বয়ে সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন (ট্রুথ অ্যাণ্ড রিকনসিলিয়েশন) কমিশন গঠন করে খোলামনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।" শুধু গত ১০ বছর কেন? ড: ইফতেখারুজ্জামান বলছেন ট্রুথ অ্যাণ্ড রিকনসিলিয়েশনের বিষয়টি সাধারণত গঠন করা হয় কোন দেশে গৃহযুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায়ি। সেখান থেকে এই ধারণাটি নেওয়া হলেও তিনি প্রশ্ন তুলছেন, "শুধু বিগত দশ বছর কেন? গুম, অপহরণ, হত্যা এগুলো তো দশ বছরের আগেও হয়েছে বাংলাদেশে। তাহলে এই বিষয়টা কেন একপাক্ষিক হবে?" "আর দ্বিতীয়ত এসব অপরাধ কি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য? এখানে তাহলে ন্যায়বিচারটা কোথায় যাবে?" তিনি বলছেন এই অপরাধগুলো এমন নয় যে এগুলো ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। "তাহলে কি বিষয়টা এমন দাঁড়ায় যে এখানে একটি বিশেষ দল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জড়িত বলে সেখানে একটা নমনীয় হবার প্রচেষ্টা বা বার্ত দেয়া হচ্ছে, নাকি তারা সত্যিই বিষয়টা নিয়ে ট্রুথ অ্যাণ্ড রিকনসিলিয়েশন করতে চান!" ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে গুম, খুন, ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মামলার সমাধান করতে চায় জাতীয় ঐক্যজোট তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মির্জা তসলিমা সুলতানা বলছেন তারা যে একটা সত্যানুসন্ধান কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সেটাকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি বলছেন, গুম, খুন যেগুলো হয়েছে, এবং বিচারবহির্ভূত যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়ে তো কোন না কোনভাবে রিকনসিলিয়েশন (আপোষ) করতে হবে। ''নাহলে সবসময় প্রতিহিংসার যে পরিস্থিতিটা বিরাজমান, সেটা আরও বাড়বে। আমার মতে সত্য অনুসন্ধানের একটা পথ আমাদের খোলা রাখতে হবে, '' মিজ সুলতানা বলেন। তবে তিনি বলছেন সেটার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কীনা, সেটা নির্ভর করবে তারা ক্ষমতায় গেলে কাদের নিয়ে এই কমিশন গঠন করবেন তার উপর। তিনিও ড: ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে একমত যে গত ১০ বছরের আগে যদি বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন হয়ে থাকে, সেটা তাদের এড়ানোর চেষ্টা উচিত হবে না। দুর্নীতি দমন নিয়ে সন্দেহ দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে। ড: ইফতেখারুজ্জামান বলছেন বিএনপির আগের মেয়াদে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে তাতে এই অঙ্গীকার কতটা বাস্তবায়িত হতে পারে তা নিয়ে "সন্দেহ থেকেই যায়"। "২০০৪-এ ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপি যে কমিশন গঠন করেছিল একটা আইনের উপর ভিত্তি করে, সেই আইনটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু কমিশনের নেতৃত্বে তারা এমন মানুষকে বসিয়েছিল, তা ছিল এক অর্থে দলীয় বিবেচনায় এবং দুই তারা যেন কিছু করতে না পারে সেই বিবেচনায়।" তিনি বলছেন এই কমিশন গঠনের পেছনে নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সংস্থা এবং দাতা সংস্থাগুলোর একটা ভূমিকা ছিল। তারপরেও এক অর্থে দলটি অঙ্গীকার রক্ষা করলেও, ওই কমিশনের মেয়াদে সংস্থাটি দুর্নীতি দমনে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারে নি। "কাজেই ট্র্যাক রেকর্ড দেখলে এসব কথা শুনতে যতই ভাল লাগুক না কেন, বাস্তব বিবেচনায় এখান থেকে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করা কঠিন।" বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: দুর্নীতি দমন কমিশন কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করে? দুর্নীতি দমন কমিশন তবে মির্জা তসলিমা সুলতানা বলছেন, শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন নয়, রাষ্ট্রের যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোকে তার আইনত চলতে দিতে হবে। "অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। অতীতে তারা ইশতেহারে দেয়া অনেক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন যে করেনি, সেটার ফল কী হয়েছে, সেটা তো দলটি দেখছে। কাজেই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান ইশতেহারের বাস্তবায়ন তারা ক্ষমতায় গেলে কীভাবে করবে তা তাদের ভাবতে হবে।" জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তার রূপরেখা কী হবে তা স্পষ্ট করেনি। ড: ইফতেখারুজ্জামান বলছেন তাদের এই প্রস্তাবটি ইতিবাচক কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। জোটের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সব অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন সরকারের একটা চরিত্র নির্ধারণ করতে চায় তারা। "এটা করতে পারলে ভাল," এই মত পোষণ করে ড: ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "কিন্তু যখন ক্ষমতায় বসবেন তারা এই যে একটা অ্যাকোমোডেটিভ অ্যাপ্রোচ (আপোসকালীন দৃষ্টিভঙ্গি) যেটার কথা এখন বলা হচ্ছে- প্রতিটা অঙ্গীকারের সঙ্গে যে কথাগুলো জুড়ে দেয়া হয়েছে- যেমন আলোচনা সাপেক্ষে বা সকলের মতামত সাপেক্ষে- এই মনোভাবটা কতখানি থাকবে সেটা কিন্তু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।" তিনি বলছেন ক্ষমতায় বসে তারা তাদের ১৪ দফা প্রতিশ্রুতির কতটা ডেলিভারি করতে পারবেন সেটাই বড় প্রশ্ন। "অতীতে বিভিন্ন কমিটি অকার্যকর হওয়ার মূল কারণ স্বার্থের দ্বন্দ্ব।" "অতীতের ইশতেহারগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে দেখবেন মোটা দাগে পুরনো অনেক প্রতিশ্রুতিই আবার করে বলা হয়েছে - এবার কিছুটা পরিশীলিত ভাষায় এবং আধুনিকায়ন করে।" প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মেয়াদ দুটিতে সীমিত করার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন দুজন বিশ্লেষকই। ড: ইফতেখারুজ্জামান বলছেন শেষ পর্যন্ত এমনটা যেন না হয় যে "কোন না কোন কারণে এটা বাস্তবায়ন না করলে কী আসে যায়?" মির্জা তসলিমা সুলতানা বলছেন, "মূল ইস্যুটা হল দলে গণতান্ত্রিক চর্চা চালু রাখা, গণতান্ত্রিক চর্চা চালু থাকলে নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ম অনুযায়ীই হবে। এটা ভাল প্রস্তাব।" এবং এটা তারা বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: ঐক্যফ্রন্টের অঙ্গীকার দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয় প্রতিদিনই হচ্ছে সহিংসতা: কি করছে নির্বাচন কমিশন? ভারতে শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় কংগ্রেস নেতার যাবজ্জীবন
news-48017965
https://www.bbc.com/bengali/news-48017965
ডাক্তার নিজেই যখন জানলেন তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত
"অন্য অনেক নারীর মতো, আমি নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখিনি। আমি ভেবেছিলাম আমার ক্ষেত্রে এটা ঘটতে যাচ্ছে না-আমি একজন স্তন ক্যান্সার সার্জন"।
২০১৫ সালে তার প্রথম স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। কথা গুলো বলছিলেন লিয ও'রিয়ারডান। নিজের স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ার পর যিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পেশায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ২০১৫ সালে ৪০ বছর বয়সে তাকে মাস্টেক্টমি করতে হয় (অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্তন অপসারণ) এবং গত মে মাসে এই রোগের পুনরাবির্ভাব ঘটায় ভুগতে হয়েছে। ডক্টর ও'রিয়ারডান ভেবেছিলেন তিনি কুড়ি বছর ধরে সার্জন হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন কিন্তু কেবল দুয়েক বছর কাজ করতে পেরেছেন তিনি। ক্যান্সারের দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ তার কাঁধের নাড়া-চাড়াতে বাধাগ্রস্ত করে এবং "মানসিকভাবে ভীষণ কঠিন" সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার আগে ডক্টর ও'রিয়ারডান চাকার মতো অনুভব করেন এবং সেটি সিস্ট-এর দিকে যাচ্ছিল, যেখানে মাত্র ছয়মাস আগের এক মোমোগ্রাম রিপোর্টে তার স্তন সম্পূর্ণ সুস্থ বলে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আরেকটি চাকার পিণ্ড তৈরি হলে তার মার অনুরোধে তিনি স্ক্যানিং এর মধ্য দিয়ে যান। সাফোকের বাসিন্দা জানতেন তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য কি চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রথমে সে "আতঙ্কগ্রস্ত" হয়ে পড়ে এবং নানারকম প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরতে থাকে। বর্তমানে তিনি ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর লোকজন যেন কাজে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। "আমি স্ক্যান দেখেছি এবং জানতাম আমার স্তন অপসারণ করে ফেলতে হবে, এটাও জানাতাম আমার সম্ভবত কেমোথেরাপি প্রয়োজন হবে কারণ আমি বয়সে তরুণ ছিলাম এবং আমার দশ বছর বেচে থাকার সম্ভাবনা কতটা সম্পর্কেও ভালো ধারনা ছিল। এবং সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে মাথার মধ্যে এতসব চিন্তার ঘুরপাক খাচ্ছিল"। তার মাথায় দুশ্চিন্তা ভর করে "কিভাবে স্বামীর সাথে এবং বাবা-মায়ের সাথে বিষয়টি শেয়ার করবেন তা নিয়ে। একজন ক্যান্সার সার্জন হিসেবে নিজের পথচলা থামিয়ে দিয়ে কেবলমাত্র একজন রোগী হিসেবে পরিণত হওয়া কতটা সম্ভব?" যদিও সে নিজেই জানতো ক্যান্সার আক্রান্তের শরীরের ভেতরে কী ঘটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার অভিজ্ঞতা কতটা ভয়াবহ সে সম্পর্কে তা তো কোন ধারনা ছিলনা। লিয ও'রিয়াডান এবং তার স্বামী ডার্মট ২০১৭ সালে রাইড লন্ডন ১০০ সম্পন্ন করার পর। "কারো ব্রেস্ট ক্যান্সার আছে এটা তাদের বলা যে কেমন- তা আমি জানি। কিন্তু আমি জানতাম না যে ঠোঁট চেপে, চোখের জল লুকানো, ক্লিনিক থেকে বেরোনো, অপেক্ষা-গার পেরিয়ে, হাসপাতাল করিডর পেরিয়ে গাড়ি পর্যন্ত কোনরকমে পৌঁছানো এবং তারপর হাউমাউ করে কান্না।" স্বামী ডার্মটের সাথে আলাপ করার পর সে সিদ্ধান্ত নেয় নিজের ১৫০০ টুইটার ফলোয়ারের মাঝে বিষয়টি ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, যারা তাকে পছন্দ করতো বেকিং, ট্রায়াথলন এবং তার পেশার জন্য।। "কিভাবে ক্যান্সারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে সেটা আমাকে বললো স্বয়ং আমার রোগীরা। যখন আপনি উচ্চমাত্রায় স্টেরয়েড নিচ্ছেন তখন ভোররাত তিনটার সময়েও কেউ একজন জেগে আছে আপনার সাথে কথা বলার জন্য"। ক্যান্সার আক্রান্ত আরো যারা চিকিৎসা পেশা সংক্রান্ত ব্যক্তিরা আছেন তাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম তাকে যুক্ত রাখে এবং এরপর থেকে এই রোগের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলেন। তার ক্যান্সারের প্রথম দফা চিকিৎসা শেষে ডক্টর ও'রিয়ারডান সার্জন হিসেব ইপসউইচ হাসপাতালে কাজে ফিরে যান । তিনি জানান যে, তিনি অনুধাবন করতে পারেননি যে এটা "ইমোশনালি কতটা চ্যালেঞ্জিং" হবে। তিনি ভেবেছিলেন ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি হয়তো লোকজনকে ভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারবেন। নরম টিস্যুগুলির ফাইব্রোসিস এবং টিথারিং তার কাঁধের নড়াচড়া কমিয়ে করে দেয় "এটা ছিলো আমার দ্বারা সবচেয়ে কঠিন কাজ। যখন আপনি কাউকে একটি খারাপ খবর জানাচ্ছেন এবং কোনো নারীকে বলছেন যে তাদের শরীরে ক্যান্সার রয়েছে, এটা যেকোনভাবেই খুবই কঠিন। কিন্তু আমি স্মরণ করতে পারি যখন আমরা খবরটা শুনছিলাম এবং প্রচণ্ড কাঁপছিলাম তখন আমাকে এবং আমার স্বামীকে কেমন দেখাচ্ছিল তা আমি পরিষ্কার দেখতে পাই। "আপনাকে এমন কারো সাথে যুক্ত থাকতে হবে যারা একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে-কিন্তু আমি পারিনি কারণ তারা ছিল আমারই রোগী"। তিনি আরো বলেন " আমার মাস্টেক্টমির পর প্রচণ্ড ব্যথা এবং মাঝে মাঝে অপারেশন করছিলাম। কারণ আমি খুবই সতর্ক ছিলাম এই ভেবে যে আমি হয়তো তাদের ব্যথার কারণ হবো যেটা আমার আছে এবং সে কারণে আমি সার্জারি করতে চাচ্ছিলাম না্ এটা ছিল খুব খুব কঠিন"। ২০১৮ সালে ডক্টর ও'রিয়ারডানের ক্যান্সার আবার ফিরে আসে। প্রচণ্ড ব্যথার কারণে তার পুনর্গঠিত স্তন অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেয়ার আগ দিয়ে করা এক স্ক্যানে তা ধরা পড়ে। তিনি জানান দ্বিতীয়বারের মতো তার ক্যারিয়ার এগিয়ে নেয়ার জন্য সব ধরনের সহায়তার চেষ্টা করেছেন তার নিয়োগ-দাতা। এর ফলে একই জায়গায় দ্বিতীয় ডোজ রেডিওথেরাপি দেয়া হয় "যা বিরলভাবে সম্পন্ন করা হয়"। তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল যে পরবর্তীতে সে হয়তো তার বাহু ঠিকভাবে নাড়াচাড়া করতে পারবে না -কিন্তু যদি সে সার্জারি না করতো, তাহলে তার ফলাফল হতো শূন্য। আর চূড়াত পরিণতি হয়েছিল আরো ক্ষতিকর। নরম টিস্যুগুলির ফাইব্রোসিস এবং টিথারিং তার কাঁধের নড়াচড়া কমিয়ে করে দেয় এবং তার মানে দাঁড়ায় তার বাহুর শক্তি কমে গেছে। তিনি জানান দ্বিতীয়বারের মতো তার ক্যারিয়ার এগিয়ে নেয়ার জন্য সব ধরনের সহায়তার চেষ্টা করেছেন তার নিয়োগ-দাতা। অস্ত্রোপচারের আগে হাত পরিস্কার করছেন। "আমি ইনটেনসিভ ফিজিওথেরাপি নিয়েছি, একজন অর্থোপেডিক সার্জনের সাথে দেখা করি কারণ আমার অনেককিছু বলার ছিল, " আমার জীবনের ২০ বছর যে কাজে আমি সময় দিয়েছি, ডিগ্রী এবং পিএইচডি, পরীক্ষার পর পরীক্ষা এবং নিজের প্রিয় বিষয়ে একজন সুদক্ষ পেশাজীবী হওয়ার জন্য বিভিন্ন কোর্স-সবকিছুর পরও সেটা আমি আবার সে কাজটি করতে পারছি না"। দৈনন্দিন জীবনের সব কাজ করতে পারছিলাম কিন্তু নিরাপদে অস্ত্রোপচার- সেটি আর কখনোই হচ্ছে না-বলেন ও'রিয়ারডান। আগের চেয়ে এখন ক্যান্সার ফিরে আসার ঝুঁকি আরো বেশি। মজার ব্যাপার হল, সে এখন ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর লোকজন যেন কাজে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তার স্বামী একজন কনসাল্ট্যান্ট সার্জন। ও'রিয়ারডান বলেন তিনি যথেষ্ট সৌভাগ্যের অধিকারী যে তার সচ্ছলতা রয়েছে এবং বেতনভোগী হিসেবে কাজ করতে হয়না। গতবছর নিজের একটি প্রতিমূর্তি উদ্বোধন করেন ডক্টর ও'রিয়ারডান। সম্প্রতি তিনি সামাজিক উদ্যোগ ওয়ার্কিং উইথ ক্যান্সারের একজন স্বেচ্ছাসেবী অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৭ সালে কাজে ফেরার সময় তাকে উপদেশ-পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছে তারা। তবে নানারকম শারীরিক জটিলতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাকে-"আমি এখনও খুব ক্লান্তিতে ভুগি এবং আমার মস্তিষ্ককে আবারো কাজে ফেরানোর চেষ্টা করছি"। নিজ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, "আমি আগে কখনো বুঝতে পারিনি যে কারো ক্যান্সার হলে তাহলে আপনাকে আইনগত-ভাবে অক্ষম হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হবে ইকুয়ালিটি অ্যাক্ট অনুসারে এবং আপনার নিয়োগ-দাতাকে আপনাকে কাজে ফেরানোর জন্য যুক্তিসঙ্গত সমন্বয় সাধন করতে হবে।" ২০১৭ সালে স্যাফর্ডশায়ারে হাফ আয়রনম্যান এ অংশ নেন তিনি। বহু মানুষ ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তাদের জীবন ফিরে পেতে মরীয়া হয়ে ওঠে, কিন্তু সঠিক উপায় খুঁজে বের করা অকল্পনীয় কঠিন হতে পারে এবং অনেক নিয়োগ কর্তৃপক্ষ জানে না কিভাবে ক্যান্সার পেশেন্টকে সাহায্য করতে পারে বা কি করা উচিত"। তিনি জানান ওয়ার্কিং উইথ ক্যান্সারের বেশিরভাগ প্রশিক্ষকের শরীরে ক্যান্সার রয়েছে এবং তারা জানে অধিকার সম্পর্কে, এবং কর্মী এবং নিয়োগ-দাতাদের তারা তৈরি করে। একজন পরামর্শক হিসেবে প্রতিবছর শত নারীকে স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন করছেন চিকিৎসক ও'রিয়ারডান। তিনি বলছেন, "আমার বই, ব্লগ, বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় এবং অ্যাম্বাসেডর হিসেবে শত শত, হাজার হাজার নারীকে সাহায্য করতে পারি"। ক্যান্সার আক্রান্তদের যত্ন বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন ওরিয়ারডান।
news-49341132
https://www.bbc.com/bengali/news-49341132
কাশ্মীর: ভারত কি কাশ্মীরকে চূড়ান্ত সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?
ভারতের সংবিধান থেকে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া অনুচ্ছেদ ৩৭০'এর বিলোপের পর থেকে ভারত শাসিত কাশ্মীর কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের পর থেকে কাশ্মীরে বিক্ষোভ চলছে লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও তুলনামূলক রাজনীতি বিষয়ের অধ্যাপক সুমন্ত্র বোস বিশ্লেষণ করেছেন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। অক্টোবরের শেষে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের রাজ্য থাকবে না। গত সপ্তাহে ভারতের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত হয় যে কাশ্মীরকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে দু'টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হবে - জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো রাজ্যগুলোর চেয়ে অনেক কম স্বায়ত্বশাসন ভোগ করতে পারে এবং ঐ অঞ্চলগুলো সরাসরি দিল্লির শাসনাধীন। এই বিভক্তির ফলে সেখানকার প্রায় ৯৮% মানুষের ঠিকানা হবে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে, যেটি দুইটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত - মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকা এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু। আর বাকি মানুষের বসবাস হবে নতুন তৈরি হওয়া কেন্দ্রশাসিত পাহাড়ি অঞ্চল লাদাখে, যেখানকার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মুসলিম এবং অর্ধেক বৌদ্ধ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকার জনসংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ এবং জম্মুর জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। আর লাদাখের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের এই দাবিটি ১৯৫০'এর দশক থেকেই হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের অন্যতম প্রধান একটি দাবি ছিল। আরো পড়তে পারেন: যেভাবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কাশ্মীরের তরুণরা 'আসুন নতুন জম্মু-কাশ্মীর, নতুন লাদাখ' গড়ি: মোদী যেভাবে বদলে যাবে ভারতের অধীন কাশ্মীর কাশ্মীরের জন্য বিশেষ আইন কেন বিতর্কিত? কাশ্মীরিদের মতে, তারা 'উন্মুক্ত কারাগারে' বসবাস করেন হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যকে 'তুষ্ট' করে চলার উদাহরণ হিসেবে গত সাত দশক ধরে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০'এর সমালোচনা করে আসছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০'এর এই সমালোচনা আরো বেশি সঙ্গতি পায় ভারতকে কেন্দ্রশাসিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ভাবাদর্শিক বিশ্বাসের কারণে। তাই জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের অনেক পুরনো একটি আদর্শিক চিন্তার বাস্তবায়নের প্রতিফলনও ঘটেছে। ২০০২ সালে রাষ্ট্রীয় সমাজসেবক সংঘ (আরএসএস) - যারা হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান আহবায়ক হিসেবে কাজ করে - দাবি করেছিল কাশ্মীরকে তিন ভাগে বিভক্ত করার: হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু রাজ্য, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত লাদাখ অঞ্চল। আরএসএস'এর একটি সহযোগী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) সেসময় দাবি করেছিল রাজ্যটিকে চার ভাগে ভাগ করার: আলাদা জম্মু রাজ্য ও কাশ্মীর রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত লাদাখের পাশাপাশি কাশ্মীর উপত্যকা থেকে কিছু এলাকা নিয়ে আরেকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল - যেটি হবে কাশ্মীরি পন্ডিতদের জন্য আলাদা একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কাশ্মীরে ৯০'এর দশকে সশস্ত্র জঙ্গিবাদের উত্থান হওয়ার পর সেখান থেকে কাশ্মীরি পন্ডিতদের প্রায় সবাইকেই সপরিবারে সেখান থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়। অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ করার কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন, কাশ্মীরকে স্বায়ত্বশাসন দেয়া ঐ অনুচ্ছেদই সেখানে 'বিচ্ছিন্নতাবাদ' তৈরি করার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের আগে থেকেই কাশ্মীর কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে ঐতিহাসিক পটভূমি অনুচ্ছেদ ৩৭০'এর কারণে পাওয়া স্বায়ত্বশাসনের অধিকার অবশ্য ১৯৫০ এবং ১৯৬০'এর দশকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের জন্য বেশ খর্ব হয়। ১৯৬০'এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর অনুচ্ছেদ ৩৭০'এর যতটুকু কার্যকর ছিল তার সিংহভাগকেই প্রতীকি বলা চলে - রাজ্যের একটি আলাদা পতাকা, ১৯৫০'এর দশকে তৈরি করা একটি রাজ্য সংবিধান, যেটি একতাড়া কাগজের বেশি কিছু নয়, এবং রাজ্যের বিচারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য কাশ্মীরের পেনাল কোডের অবশিষ্টাংশ, যেটি ১৮৪৬ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত কাশ্মীরের জন্য কার্যকর ছিল। কাশ্মীরের বাইরের মানুষ সেখানে সম্পত্তির মালিকানা লাভ করতে পারতো না এবং কাশ্মীরিদের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার থাকতো যেই অনুচ্ছেদের সুবাদে, সেই অনুচ্ছেদ ৩৫এ তখনো কার্যকর ছিল - তবে এই আইন যে শুধু জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যেই বলবৎ ছিল তাও নয়। উত্তর ভারতের রাজ্য হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও পাঞ্জাব বাদেও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক রাজ্যের বাসিন্দাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই ধরণের আইন কার্যকর রয়েছে। কাশ্মীর রাজ্যে 'বিচ্ছিন্নতাবাদ'এর আসল কারণ ১৯৫০ ও ১৯৬০'এর দশকে রাজ্যটির স্বায়ত্বশাসন কার্যত অকার্যকর করে ফেলা এবং তার ফলস্বরুপ তৈরি হওয়া পরিস্থিতি। ক্ষোভে থমথমে শ্রীনগর : বিবিসি বাংলার ক্যামেরায় কাশ্মীর রাজ্যের নেতৃত্বে দিল্লির প্রভাব তখন থেকেই ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। পাশাপাশি প্রাগৈতিহাসিক আইন কার্যকর করে কাশ্মীরকে একটি পুলিশ ও সেনা নিয়ন্ত্রিত রাজ্যে পরিণত করে ভারত। তবে এখন জম্মু ও কাশ্মীরের কাছ থেকে রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার মাধ্যমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করলো যা স্বাধীনতা উত্তর ভারতে কখনো হয়নি। ভারতে যে রাজ্যগুলো রয়েছে (২৯টি, যা কিছুদিন পরই ২৮টিতে পরিণত হবে) সেগুলো যথেষ্ট স্বায়ত্বশাসন ভোগ করে। আর ভারতে যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো রয়েছে - বর্তমানে ৭টি, যা ৩১শে অক্টোবর থেকে ৯টিতে পরিণত হবে - সেগুলো কার্যত তেমন কোনো স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার অধিকার রাখে না। কট্টরপন্থী সিদ্ধান্ত ধারণা করা হচ্ছে, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস ও ভিএইচপি ২০০২ সালে যেরকম প্রস্তাব করেছিল, তার আলোকে কাশ্মীরে কাঠামোতে আরো পরিবর্তন আসতে পারে। যার ফলে ঐ অঞ্চলের হিন্দু ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিম লাদাখের কারগিল অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করা শিয়া মুসলিমরাও কেন্দ্রশাসিত লাদাখ অঞ্চরের সাথে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়নি। ভারত শাসিত কাশ্মীরে অতিরিক্ত প্রায় ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে পূর্ব লাদাখের লেহ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করা বৌদ্ধরা এবং জম্মুর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীও তাদের বিশেষ মর্যাদা হারানোর বিষয়টিতে ক্ষুন্ন। মি. মোদী ঐ অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে ভরপুর এক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের গঠনতন্ত্র তৈরি করার জন্য শীঘ্রই একটি নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি (কোনো গঠনতন্ত্র ছাড়াই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে লাদাখ)। ঐ ধরণের কোনো নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা কাশ্মীরের এবং জম্মুর মুসলিমরা প্রত্যাখ্যান করবে, তা অনেকটা নিশ্চিত। ফলে, ঐ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কার্যত অকার্যকর একটি বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যবস্থা তৈরি হবে। কাশ্মীর: 'মানুষ এখন আগ্নেয়গিরির মতো, যে কোন সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে' বিজেপি সরকারের নীতি ভারতের আগের যে কোনো সরকারের কেন্দ্রভিত্তিক বা কর্তৃত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সাথে তুলনা করলে বর্তমান সরকারের কাশ্মীর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত, এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় আঞ্চলিক রাজনীতিবিদদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। সাধারণত তারা ছিলেন কাশ্মীর অঞ্চলের অভিজাত রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। কিন্তু এখন মি. মোদী এবং মি. শাহ সেসব রাজনৈতিক প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অধিষ্ঠিত না করে অতি কেন্দ্রীয় একটি ধারার দিকে হাঁটছেন। দ্বিতীয়ত, ১৯৫০'এর দশকের পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরে চলা ভারতের অত্যাচার ও দমন নীতিকে সমর্থন করে আসা হয়েছে অদ্ভূত একটি যুক্তির মাধ্যমে। তা হলো, ভারতের 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র' হওয়ার দাবিকে ন্যায়সঙ্গতা দেয়ার জন্য যে কোনো মূল্যেই হোক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত থাকতে হবে। তবে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মি. মোদী এবং এবং মি. শাহ এই ধরণের খোঁড়া যুক্তিতে বিশ্বাসী নন। কাশ্মীর ইস্যুতে নেয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কারণে অক্টোবরে হতে যাওয়া ভারতের কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি লাভবান হতে পারে। একইসাথে ভারতের অর্থনীতির দূর্দশার বিষয়টি থেকেও সাময়িকভাবে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে বিজেপি'র কট্টরপন্থী সিদ্ধান্ত ঐ অঞ্চলে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা দ্বন্দ্বকে এমনভাবে উস্কে দিতে পারে, যা হয়তো প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। বিশ্বের অনেক গণতন্ত্রেই অভ্যন্তরীন বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব বর্তমান রয়েছে: যুক্তরাজ্যের ভেতরে স্কটল্যান্ড, কানাডার ভেতরে কুইবেক বা স্পেনের ভেতরে কাতালোনিয়ার মত। লন্ডনের রাস্তায় কাশ্মীরিদের পক্ষে হওয়া প্রতিবাদ বিজেপি সরকার যা করেছে তা অনেকটা ১৯৮৯ সালে সার্বিয়ার মিলোসেভিচ শাসনামলে কসোভের স্বায়ত্বশাসন কেড়ে নেয়ার মত। সেসময় কসোভোর আলবেনিয় সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর ওপর পুলিশি শাসন চাপিয়ে দেয়া হয়। তবে বিজেপি সরকার মিলোসেভিচ শাসনামলে কসোভোর আলবেনিয়ানদের বিরুদ্ধে নেয়া নীতিকেও ছাড়িয়ে গেছে, তারা কাশ্মীরকে নিজেদের অধীনে আনার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্রোহী মনোভাবসম্পন্ন মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ভারতীয় হিসেবে পরিচিতি প্রদান করতে চায়, যা বিজেপি'র অন্যতম রাজনৈতিক আদর্শ। এই নীতি অনেকটা জিনজিয়াংয়ে উইঘর মুসলিমদের সাথে চীন সরকারের নেয়া নীতির মতো। কিন্তু বিজেপি এটাও জানে যে ভারত একদলীয় শাসনব্যবস্থার কোনো দেশ নয়। এর পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ। সুমন্ত্র বোস লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও তুলনামূলক রাজনীতি বিষয়ের অধ্যাপক
news-56846437
https://www.bbc.com/bengali/news-56846437
এডিটার'স মেইলবক্স: ডাক্তার-পুলিশ ঝগড়া আর লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
ঢাকায় সম্প্রতি লকডাউনের নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করার কাজে নিয়োজিত পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে, একজন ডাক্তারের পরিচয় পত্র দেখানো নিয়ে প্রচণ্ড বাক-বিতণ্ডা হয়, যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায়।
চেকপোস্টে কর্মরত নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে চিকিৎসকের বিতণ্ডার চিত্র সে বিষয় দিয়েই আজ শুরু করছি, প্রথমে লিখেছেন ঝালকাঠির তালগাছিয়া থেকে শহীদুল ইসলাম: ''গত আঠারোই এপ্রিল লকডাউন চলাকালে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে একজন চিকিৎসক যেভাবে পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন, তা কারও কাছ থেকে কাম্য নয়। তিনি যেসব ভাষায় গালাগাল করেন তাও ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যেভাবে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন তাও প্রশংসার দাবি রাখে। এ ঘটনায় আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তার কাছে পরিচয়পত্র চাইলে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তিনি এমন আচরণ করতে পারেন?'' তবে বিষয়টি অন্য দৃষ্টিতে দেখছেন ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাসুম বিল্লাহ: ''লকডাউনে পুলিশের হয়রানি প্রতিদিন বেড়েই চলছে। যারা অকারণে বাহির হচ্ছে তাদের দিকে নজর না দিয়ে যারা জরুরী কাজে বের হচ্ছে তাদেরকেই হয়রানি করছে। সরকার জরুরী সংস্থা গুলোকে লকডাউনে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী সদস্যর তৎপরতা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কাজকে ব্যাহত করছে। একজন ডাক্তার হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে তাকেও রাস্তায় হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। লকডাউনের নামে এই সব অত্যাচার করার কারণ কী?'' আপনার দু'জনের কথা পড়ে বোঝাই যাচ্ছে লকডাউনের নিয়ম-কানুন এবং তার প্রয়োগ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে, যা থেকে অস্থিরতা এবং বাদানুবাদ সৃষ্টি হচ্ছে। কোন সন্দেহ নেই, সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশকে আরো সংযত হয়ে, বিনয়ী হয়ে কাজ করতে হবে। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষেরও বোঝা দরকার পুলিশকে একটি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এবং সে দায়িত্ব পালনে জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। তবে সেদিনকার বাক-বিতণ্ডার আরেকটি দিক নিয়ে দুটি চিঠি এসেছে, এবং তা হল মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরি হিসেবে পরিচয় দেয়া। প্রথমটি লিখেছেন বরিশালের কাউনিয়া থেকে মোহাম্মদ সাইদুর রহমান: ''তাদের পরিচয় যদি সত্যি হয়, তবে তারা তিনজনই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি, তাদের আচরণও সেরকম হওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু তাদের কারও আচরণই মার্জিত ও পরিশীলিত ছিল না। তারা তিনজনই একে অপরকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন, যা এ'ধরনের কর্মকর্তাদের কাছে জনসম্মুখে প্রত্যাশিত নয়। তাদেরকে বুঝতে হবে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, মানুষের করের টাকায় তাদের বেতন হয় এবং তারা জনগণের সেবক।'' মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১:মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণের পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার দেয়া হচ্ছে এবিষয়ে দ্বিতীয় চিঠিটি লিখেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক: ''এখানে একটি বিষয় বেশ লক্ষণীয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হলেই যে সৎ দেশ প্রেমিক হবে, এমনটা ভাবার কোন অবকাশ নেই। আমার মনে হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে তাদের কিছু অযোগ্য সন্তানদের উচ্চতর পদে আসীন করা হয়েছে। বিড়ম্বনা তো সইতেই হবে। কোটায় ভর করে পার পাওয়া চাকুরেদের থেকে এর চেয়ে ভালো আচরণ ও ভালো সেবা পাওয়া দুর্লভ বৈকি। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, কোটার যাঁতাকলে পিষ্ট আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।'' এই ঘটনার সাথে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সম্পর্ক কোথা থেকে খুঁজে পেলেন তা আমার বোধগম্য নয় মি. ইসলাম। আর যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন, সেটাও কি হলফ করে বলা যায়? আমার তো মনে হয় না। অন্যদিকে, মি. রহমান যে ক্ষমতার দাপটের কথা বলেছেন, সেটা তো অবশ্যই সত্য, যেহেতু দাপটের প্রমাণ ভিডিওতেই দৃশ্যমান। কিন্তু আমার মনে হয় এখানে ক্ষমতার দুটি ধরন ছিল। একদিকে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ছিল দায়িত্ব থেকে পাওয়া ক্ষমতা। অর্থাৎ, লকডাউনের দায়িত্ব পালনের জন্য সে ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে, গাড়ির আরোহী নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করে পুলিশের প্রশ্নকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ভ্যাপসা গরমের মাঝে হঠাৎ এক পসলা বৃষ্টির মত আনন্দময় এক ঝগড়া! তবে পুরো বিষয়টিকে নিছক বিনোদন হিসেবে দেখেছেন সাতক্ষিরার মুনজিতপুর থেকে মোহাম্মদ রাজিব হুসাইন রাজু: ''মহামারি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘনঘন লকডাউনে জনজীবন যখন বেশ স্থবির, একঘেয়েমি ও নিরানন্দময়, ঠিক তখনি ভ্যাপসা গরমের মাঝে হঠাৎ এক পসলা বৃষ্টির ঠাণ্ডা হাওয়ার মতো মন জুড়িয়ে দিল রাজধানী ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে ঘটে যাওয়া কয়েকজন সরকারি কর্তাব্যক্তিদের কিছুসময়ের উত্তপ্ত আলাপচারিতা।'' বুঝতে পারছি, আপনি বেশ মজা পেয়েছেন মি. হুসাইন। এখানে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে পুলিশের সাথে বিতণ্ডা কি সরকারের প্রতি মানুষের অনাস্থার লক্ষণ? তাই মনে করছেন মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, যিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের বাসিন্দা: ''সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা যে দিনদিন উঠে যাচ্ছে, তা দেখা যাচ্ছে চলমান লকডাউনকে মানুষের উপেক্ষা থেকে। সরকার করোনা মহামারী মোকাবিলায় যতটা সক্রিয় তার চেয়ে বেশি সক্রিয় হেফাজতে ইসলামকে মোকাবিলায়। চলমান লক ডাউনে খেটে-খাওয়া মানুষের যে ভোগান্তি বেড়ে গেছে, তাদেরকে যে সরকারি সাহায্য দেয়া দরকার, তাও সরকার করছে না। সরকারের কেন এই ব্যর্থতা, যার কারণে অনাস্থা তৈরি হয়েছে?'' মানুষ যদি লকডাউনের নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে তাহলে লকডাউন যে ভেস্তে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না মি. খলিল। এবং তার পরিণতি ভোগ করতে হবে সেই উদাসীন মানুষদেরকেই। আমার মনে হয়, সরকার যত পদক্ষেপ এখন নিচ্ছে, তা আরো এক-দেড় মাস আগে নেয়া উচিত ছিল, বিশেষ করে যখন থেকে ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ-এর শক্ত আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এই দেরীটা সরকারকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। ভ্যাক্সিনেই মুক্তি? করোনাভাইরাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছোট একটি প্রশ্ন করেছেন রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে মুশফিকুর রহমান ওলিউল্লাহ: ''কবে নাগাদ বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্ব এই করোনা মহামারি থেকে মুক্তি পাবে?আদৌ কি আমরা করোনা থেকে মুক্তি পাবো, নাকি করোনাকে সাথে নিয়ে জীবন যাপন করা শিখতে হবে?'' সবার মনে এই একই প্রশ্ন মি. ওলিউল্লাহ, কিন্তু এর জবাব কারো কাছে আছে বলে আমার জানা নেই। অনেক বিশেষজ্ঞর ধারণা, করোনাভাইরাস কখনোই নির্মূল হবে না, এবং মানুষকে সেটা মেনে নিয়েই জীবনযাপন করতে হবে। যেমন, ফ্লু বা নিউমোনিয়া নির্মূল করা যায়নি, কিন্তু ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে তার প্রভাব বশে আনা গেছে। প্রতি বছর ফ্লু এবং নিউমোনিয়ায় অনেক বয়স্ক লোকের মৃত্যু হলেও স্বাভাবিক জীবন থেমে থাকে না। করোনাভাইরাসের বেলায় হয়তো তাই হবে। বাংলাদেশ #trending অনুষ্ঠানের ড. সমীর সাহা করোনাভাইরাসের সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন। পরের চিঠিটিও ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত। চ্যানেল আইতে বিবিসি বাংলার বাংলাদেশ #trending অনুষ্ঠানটি দেখে একটি পর্যবেক্ষণ করে লিখেছেন ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের প্রভাষক, সেলিনা আহমেদ শেলী: ''চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে হঠাৎ চোখে পড়ল সময় টিভির পারমিতা হিম চ্যানেল আই-তে একটি প্রোগ্রাম করছেন। তিনি আমার খুব প্রিয় সংবাদ পাঠক তাই কৌতুহল থেকেই অনুষ্ঠানটি দেখলাম। এবং আরো অবাক হলাম করোনা ভাইরাসের সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিশেষজ্ঞের উত্তর দেখে। পরে বুঝলাম এটি বিবিসির অনুষ্ঠান, তাই এর আলোচনার বিষয় একদমই আলাদা। সত্যি বলতে, আমার নিজের মধ্যেও এমন ধারণা ছিল যে অক্সফোর্ডের টিকা দিয়ে আমাদের আসলে কোনো লাভই হলো না। অনুষ্ঠানটি দেখে আমার ধারণা বদলে গেছে। আমার মত অনেকের মনেই এমন ভুল ধারণা আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।'' আমাদের নতুন অনুষ্ঠান দেখে আপনি উপকৃত হয়েছেন জেনে আমাদের ভাল লাগল সেলিনা আহমেদ। আশা করি ভবিষ্যতেও দেখবেন, তবে বাংলাদেশ #trending অনুষ্ঠানটি রমজানের জন্য বন্ধ আছে, ঈদের পরে আবার চ্যানেল আই-এর পর্দায় ফিরবে প্রতি সোমবার রাত ন'টা ৩৫ মিনিটে। আপনার শুভেচ্ছা পারমিতাকে পৌঁছে দেব। চট্টগ্রামে আবার গুলি: আহত একজনকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে করোনাভাইরাসের বিষয়ে ফিরবো আরেকটু পরে, এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতের শ্রমিক নিহত হবার ঘটনা নিয়ে লিখেছে বগুড়ার শেরপুর থেকে সম্পদ কুমার পোদ্দার: ''চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে বকেয়া বেতনের দাবীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণে পাঁচজন নিহত হবার ঘটনা অগ্রহণযোগ্য ও চরমভাবে নিন্দনীয়। কোনো দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ হতেই পারে। এটা থামানোর একমাত্র পথ কি গুলি করে শ্রমিক হত্যা? প্রায় সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যারা শ্রমিক হত্যার বিচার চাইবেন, তারা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। একটা স্বাধীন দেশের পুলিশের এটা কী ধরনের উপনিবেশিক বর্বর আচরণ।'' বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গুলি চালানোর প্রবণতা নিয়ে কিছু দিন আগেও এই অনুষ্ঠানে কয়েকটি চিঠি নিয়ে আলোচনা হয়েছে মি. পোদ্দার। বিষয়টি সত্যই উদ্বেগজনক। বেতন-ভাতার দাবীতে শ্রমিকদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। তাদের প্রতিপক্ষ কোম্পানি মালিক, পুলিশ নয়। প্রশাসনের সেখানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার কথা এবং পরিস্থিতি যাতে উত্তপ্ত না হয়, সেজন্য তারা মধ্যস্থতাও করতে পারে। কিন্তু সেটা হয়নি। এ'ধরণের ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার, কিন্তু সেই তদন্ত নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ থাকতে পারে। পাকিস্তানে তেহরিক-ই লাব্বায়িক পাকিস্তান - টিএলপি'র নেতার মুক্তির দাবিতে সাম্প্রতিক প্রতিবাদ বিক্ষোভ পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সহিংসতার খবর বিবিসি বাংলায় কেন পরিবেশন কর হচ্ছে না, সে প্রশ্ন করে লিখেছেন ভারত থেকে অর্ক রায়: ''বিবিসি বাংলা ভারতের খবর নিয়ে যেভাবে সরব, পাকিস্তান নিয়ে ততটাই নীরব। এর কারণ কি বুঝতে পারলাম না। সেদিন ভারতের একজন মন্ত্রী লকডাউন নিয়ে একটি মন্তব্য করেছে সেটি বিবিসি বাংলার পেজে খবর হল। অথচ পাকিস্তানে ইসলামপন্থী একটি দল টিএলপিকে ইমরান খান নিষিদ্ধ করার পর থেকে গত ২দিন যেভাবে পাকিস্তানে সহিংসতা চলছে তার কোন খবর এখনও পর্যন্ত বিবিসি বাংলার পেজে দেখলাম না। এটা কেন আমার কাছে এখনও বোধগম্য হল না।'' আমি জানি না মি. রায়, আপনি কেন ভাবছেন ভারতের ঘটনা কাভার করলে পাকিস্তানেরটাও কাভার করতেই হবে। ভারতে আমাদের প্রচুর পাঠক আছেন, কিন্তু পাকিস্তানে একদম নেই। সেজন্য, পাকিস্তানের খবর বেশ বেছে বেছেই পরিবেশন করা হয়। যখন কোন ঘটনা এমন মোড় নেয় যাতে তার আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক গুরুত্ব চলে আসে, তখন আমরা অবশ্যই সেই খবরের দিকে মনোযোগ দেই। যেমন, টিএলপির তাণ্ডব ঘিরে যখন ফ্রান্স তাদের নাগরিকদের পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাবার পরামর্শ দিল, তখন আমরা সেই স্টোরি পুরো প্রেক্ষাপটসহ পরিবেশন করি। নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন অমিত শাহ ভারতের প্রসঙ্গেই থাকি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর একটি মন্তব্য নিয়ে লিখেছেন খুলনার পাইগাছা থেকে মোহাম্মদ আজিজুল হাকিম রাকিব: ''সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রশ্ন করা হয়, 'গত ১০-১৫ বছরে বাংলাদেশের তো আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে। তাও কেন লোকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করছে?' প্রশ্নের জবাবে মি. শাহ বলেন 'বাংলাদেশের গরীবরা খেতে পায় না, তাই ভারতে আসে'। ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে এমন বিরূপ মন্তব্য কী আদৌ সমর্থনযোগ্য?'' তার বক্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক অবশ্যই থাকবে মি. হাকিম। তবে অমিত শাহ-র বক্তব্য সমর্থনযোগ্য কি না, সে প্রশ্নের আগে জানতে হবে তার বক্তব্য সঠিক কি না। আপনি বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের বাসিন্দা, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বলতে পারবেন, তার কথাটা সঠিক না বেঠিক? বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন অমিত শাহ বেঠিক। করোনাভাইরাস নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন, পাঠিয়েছেন চাঁপাই নবাবগঞ্জের ভোলাহাট থেকে মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম: ''বাংলাদেশের জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে, গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে, কঠোর লকডাউন চলছে, টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তারপরও করোনায় মৃত্যু ও দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনা মোকাবিলায় সচেতনতার পাশাপাশি আর কোন ও বিকল্প পথ কি নেই?'' করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার উপায় হচ্ছে জনসমক্ষে বের হলে সব সময় মাস্ক পরা, নিয়মিত সাবান দিয়ে ধোয়া এবং নিজ পরিবারের নয়, এমন লোকজন থেকে ছয় ফিট দূরে থাকা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই নিয়মগুলোকেই সব চেয়ে কার্যকরী বলে মনে করে, কিন্তু অনেকেই এই সহজ নিয়মগুলোই মেনে চলতে চান না। অবশ্য, টিকা নেয়ার সুযোগ থাকলে সেটা অবশ্যই নেবেন। এখন পৃথিবীবাসীর আগ্রহের মূলে রয়েছে ভ্যাকসিন তবে টিকা নেয়া যে সহজ হবে না, তা বোঝাই যাচ্ছে সাম্প্রতিক কিছু খবর দেখে। যেমন লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার: ''বাংলাদেশে ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়াটি বেশ হুমকির মুখে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট চুক্তি মোতাবেক গত দু'দফার ভ্যাক্সিন এখনো দিতে পারে নি। বাংলাদেশ এখন অন্যান্য একাধিক উৎসের খোঁজ করছে ভ্যাক্সিন সংগ্রহের জন্য। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে করোনা ভ্যাক্সিনের যে বিপুল চাহিদা তাতে ভ্যাক্সিন পাওয়া খুব সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। ভ্যাক্সিন সংগ্রহের জন্য কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে থাকাটা কি যৌক্তিক ছিল বাংলাদেশের জন্য? এই সংকট থেকে বের হবার কোনো সহজ পথ কি বাংলাদেশের সামনে খোলা আছে?'' যে সঙ্কটের মুখে বাংলাদেশ পড়েছে, তা থেকেই বোঝা যায় শুধু একটি দেশ এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হয় নি। বিশ্বের অনেক দেশ একাধিক কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে। যেমন, ব্রিটেন চারটি কোম্পানির কাছ থেকে টিকা সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশের সামনে রাস্তা দুটি - শীঘ্রই অন্য দেশের সাথে টিকা আমদানির জন্য চুক্তি করা, যেমন ভারত করেছে রাশিয়ার সাথে তাদের স্পুটনিক ভি ভ্যাক্সিনের জন্য। আরেকটি পথ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অনুমোদনপ্রাপ্ত যে কোন টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের জন্য সত্ত্বাধিকারী কোম্পানির কাছ থেকে অনুমতি নেয়া। করোনা মহামারিতে কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছে অটিজমে আক্রান্ত শিশু দীপ? আমাদের অনুষ্ঠানে রমজান নিয়ে কিছু না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে লিখেছেন ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে কামাল হোসেন মিলন মুকছুদি: ''চৌদ্দই এপ্রিল ছিল বাংলা নববর্ষ এবং সেদিন বাংলাদেশ কঠিন লকডাউন শুরু হয়। এর পাশাপাশি ১৪ই এপ্রিল শুরু হয় মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ এ সবচেয়ে প্রভাবশালী মাস, রমজান। খুব আগ্রহ নিয়ে বিবিসি বাংলার পরিক্রমা শুনছিলাম, কিন্তু কোনভাবেই বাংলাদেশের মানুষের রমজান পালনের বিষয়টা বিবিসি খবরে প্রকাশ করল না। যা আমাকে খুবই হতাশ করেছে। বিবিসির কাছে এ ধরনের ইসলাম বিবর্জিত সংবাদ কখনোই আশা করি না।'' লকডাউনের শুরুটা সেদিনের সব চেয়ে বড় খবর ছিল তাই সেটাকেই সব চেয়ে গুরুত্ব দিতে হয়েছে মি. হোসেন। পহেলা বৈশাখ যেহেতু একদিনের ঘটনা, তাই সেটা নিয়ে অল্প কিছু আলাপ অনুষ্ঠানে ছিল। কিন্তু আমরা প্রতি বছরেই রমজান এবং ঈদ নিয়ে নানা রকমের প্রতিবেদন প্রচার করি এবং এ'বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে রমজান যেহেতু ৩০ দিনের, তাই প্রথম দিন কিছু না থাকলেও অসুবিধা হয় বলে আমাদের মনে হয় না। ভারতের ছত্তিসগড়ে ২০১০ সালে মাওবাদী গেরিলাদের সাথে বিবিসি বাংলার তৎকালীন সংবাদদাতা শুভজিৎ বাগচী। আমাদের অনুষ্ঠানে একটি তথ্য বিভ্রাট নিয়ে লিখেছেন ভারতের ছত্তিসগড় থেকে আনন্দ মোহন বাইন, এবং পঞ্চগড়ের বোদা থেকে রতন রঞ্জন রায়: ''আঠারো তারিখে হঠাৎ সন্ধ্যার অধিবেশনে শুনলাম ভারতে দৈনিক কোভিড রোগী আক্রান্ত হবার সংখ্যা ১ লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি। শুনে হোঁচট খেলাম,ভাবলাম ভুল শুনলাম না কি? কিন্তু না, আবার রাতের অধিবেশনে একই সংখ্যার খবর শুনলাম। কিন্তু আমি অন্য মাধ্যমে তথ্য নিয়ে দেখি সংখ্যাটি হবে ২ লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি। ব্যবধান ১ লক্ষ। মানলাম বিষটি অনিচ্ছাকৃত কিন্তু তাই বলে কি দুটি অধিবেশনে একই ভুল?'' আপনারা ঠিকই বলেছেন মি. বাইন এবং মি. রায়, ভুলটি অনিচ্ছাকৃত তো বটেই, কিন্তু কোন ভাবেই এটা দুটি অধিবেশনেই যাওয়া উচিত ছিল না। আসলে, মূল ইংরেজি কপিতে সংখ্যাটি দু'লক্ষ ষাট হাজার ছিল ঠিকই, কিন্তু যিনি অনুবাদ করেছেন তিনি ভুলটি খেয়াল করেন নি, এবং পরবর্তীতেও নতুন করে খবরটি লেখা হয় নি। এই ভুলের জন্য আমরা অত্যন্ত দু:খিত। আমাদের অনুষ্ঠানে ভাষার ব্যবহার নিয়ে লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর থেকে শামীম সরকার: ''যতদূর জানি ভারত সরকার মাওবাদীদের সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে আখ্যায়িত করে। কিন্তু আপনাদের প্রতিবেদনে মাওবাদীদের গেরিলা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আবার বিবিসি লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে আখ্যায়িত করেছে। তাহলে গেরিলা ও সন্ত্রাসী গ্রুপ কি একই, নাকি আলাদা?'' বিবিসিতে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী বলে সম্বোধন করা হয় না মি. সরকার। তবে সহিংস কার্যকলাপকে অনেক সময় সন্ত্রাসী কাজ বলা হয়। লেবাননের হিযবুল্লাহকে ইংরেজিতে মিলিটান্ট বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সেটাকে জঙ্গি হিসেবে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তবে জঙ্গি শব্দটা নিয়েও সমস্যা আছে তাই আমরা সেই শব্দ শুধুমাত্র সেসব গোষ্ঠীর বেলায় বলি যাদের সহিংসতা ছাড়া আর কোন কার্যকলাপ নেই। আর ভারতের মাওবাদীরা যেহেতু একটি রাজনৈতিক-সামরিক বাহিনী যারা ক্ষুদ্র পরিসরে যুদ্ধ করে নিজস্ব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে, তাই তাদের গেরিলা বাহিনী বলা হয়। সব শেষে প্রীতিভাজনেষু নিয়ে ছোট একটি চিঠি, লিখেছেন নোয়াখালী থেকে হাছান আহাম্মেদ: ''যে সব চিঠি পত্র প্রাপ্তি স্বীকার করা হয় ঐসব চিঠিপত্র গুলি পরের সপ্তায় শোনালে ভালো হয় না?'' ব্যাপারটি ঠিক সেরকম না মি. আহাম্মেদ। কয়েকটি চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়, যখন অনুষ্ঠানে সেগুলোর জায়গা করা যায় না, বা সে চিঠিতে যদি জবাব দেবার মত কোন বিষয় না থাকে। পরের সপ্তাহে নতুন চিঠি আসবে, আগের সপ্তাহের চিঠির জায়গা তখনও করা যাবে না। এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক: নুসরাত জাহান, তেঁতুলঝোড়া, সাভার। আনিছুর রহমান নয়ন,দারোয়ানি, নীলফামারী। আব্দুর রহমান জামী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেলিম রাজ ও শাফি, বেনুঘাট চওড়ার হাট, রংপুর। মুতাছিম নয়ন, পাইকগাছা, খুলনা। জহিন মুমতাহিনাহ, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা। মোহাম্মদ শিমুল বিল্লাল বাপ্পী, কপিলমুনি, খুলনা। দীপক চক্রবর্তী, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়। মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা। মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বয়রা আবাসিক এলাকা, খুলনা।
news-55182429
https://www.bbc.com/bengali/news-55182429
করোনা ভাইরাস: ‘না, এটি আপনার ডিএনএ বদলে দেবে না’- কোভিড-১৯ নিয়ে যতসব মিথ্যে গুজব
করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বহু মিথ্যে গুজব ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয়ার কথিত ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে মানুষের জেনেটিক কোড পরিবর্তন করে দেয়ার মত তত্ত্ব। বিবিসির রিয়েলিটি চেক টিম এগুলো অসার বলে প্রমাণ করেছে।
ডিএনএ পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র: করোনাভাইরাসের টিকা মানুষের শরীরের ডিএনএ পরিবর্তন করে দেবে এরকম একটা কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। বিবিসি এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিল তিনজন স্বতন্ত্র বিজ্ঞানীর কাছে। তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকা মানবদেহের ডিএনএ-তে কোন পরিবর্তন ঘটায় না। করোনাভাইরাসের যেসব নতুন টিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে ভাইরাসটির একটি জেনেটিক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এটিকে বলা হয় মেসেঞ্জার আরএনএ। ব্রিটেনে সদ্য অনুমোদন করা ফাইজার এবং বায়োএনটেকের টিকাটিও একইভাবে তৈরি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জেফরি অ্যালমন্ড বলছেন, "একজনের শরীরে যখন ইনজেকশনের মাধ্যমে আরএনএ ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তখন এটি মানবকোষের ডিএনএ-তে কোন প্রভাবই ফেলে না।" এই টিকা আসলে কাজ করে মানুষের শরীরকে এক ধরনের নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে। এই নির্দেশনার মাধ্যমে এমন এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়, যা করোনাভাইরাসের উপরিভাগে থাকে। মানুষের শরীরের যে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, এটি তখন এরকম প্রোটিন শনাক্ত করে এবং এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করতে পারে। বিল গেটস একটি টিকা ব্যবহার করে মানুষের ডিএনএ বদলে দিতে চান এমন দাবি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা মানুষের শরীরের ডিএনএ-তে পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবে, এমন দাবি আমরা এর আগেও যাচাই করে দেখেছি। গত মে মাসে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সেখানেও এধরণের দাবি করা হয়েছিল। তখনও আমরা এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছি। তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়েছিল যে আরএনএ (এমআরএনএ) ভ্যাকসিন প্রযুক্তি এর আগে কখনো পরীক্ষা করা হয়নি এবং অনুমোদনও করা হয়নি। এটি সত্য যে, বর্তমান সময়ের আগে এমআরএনএ টিকা কখনও অনুমোদন করা হয়নি। তবে গত কয়েক বছরে মানুষের শরীরে এমআরএনএ টিকা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। আর করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এই টিকার পরীক্ষা চালানো হয়েছে হাজার হাজার মানুষের ওপর। অনুমোদনের জন্য এই টিকাকে খুবই কঠোর এক যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যে কোন নতুন টিকা অনুমোদন পেতে গেলে যেসব নিরাপত্তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, এই নতুন টিকার ক্ষেত্রেও তাই করতে হয়েছে, যাতে করে এটিকে গণহারে ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা যায়। আরও পড়ুন: যখন কোন টিকার প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলে, তখন সেটি অল্পসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের উপর করা হয়। এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য থাকে টিকাটি নিরাপদ কি-না এবং কী পরিমাণ ডোজ প্রয়োগ করতে হবে। তবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে এসব টিকা পরীক্ষা করা হয় হাজার হাজার মানুষের ওপর। এই পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা হয় টিকাটি আসলে কতটা কার্যকর। এই পর্যায়ে যাদের ওপর টিকাটির পরীক্ষা চলে তাদের দুভাগে ভাগ করা হয়। একটি গ্রুপকে টিকা দেয়া হয়। আর দ্বিতীয় গ্রুপকে দেয়া হয় প্লাসিবো, অর্থাৎ তাদের টিকা দেয়া হয়েছে বলে বলা হলেও সেখানে আসলে টিকা থাকে না। এরপর এই দুটি গ্রুপের লোককেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় কোন ধরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে কীনা তা দেখার জন্য। আর একটি টিকা অনুমোদন পাওয়ার পরও কিন্তু এটি নিরাপদ কি-না, তা নিয়ে পরীক্ষা অব্যাহত থাকে। বিল গেটস এবং মাইক্রোচিপ বিষয়ক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব টিকা নিয়ে আরেকটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে দাবি করা হচ্ছে যে করোনাভাইরাস মহামারি আসলে একটি ষড়যন্ত্র। এর উদ্দেশ্য মানুষের শরীরে এমন একটি মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয়া যেটি সারাক্ষণ মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারবে। বলা হচ্ছে এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে আছেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। এরকম কোন ভ্যাকসিন মাইক্রোচিপ আসলে নেই এবং এমন কোন প্রমানও নেই যে বিল গেটস ভবিষ্যতের জন্য এরকম কোন ষড়যন্ত্র করছেন। 'দ্য বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন' বিবিসিকে জানিয়েছে এই দাবি পুরোপুরি মিথ্যা। একজন টিকটকে একটি ভিডিও তৈরি করেছেন যাতে দেখানো হচ্ছে শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে গত মার্চ মাসে যখন বিল গেটস এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন শেষ পর্যন্ত আমাদের এক ধরনের ডিজিটাল সার্টিফিকেটের দরকার হবে, তখন এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস থেকে কে সেরে উঠেছে, কাকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কে এই রোগের টিকা পেয়েছে সেটা জানার জন্যই এই ডিজিটাল সার্টিফিকেটের দরকার হবে। তার সাক্ষাৎকারে তিনি কোন ধরণের মাইক্রোচিপের কথা উল্লেখই করেন নি। কিন্তু এই ঘটনার পর ব্যাপকভাবে শেয়ার করা একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: "করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিল গেটস মাইক্রোচিপ ইমপ্লান্ট ব্যবহার করবেন।" এই প্রতিবেদনে গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থে পরিচালিত একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছিল। গবেষণাটি ছিল এমন এক প্রযুক্তি নিয়ে, যার মাধ্যমে কাউকে ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা দেয়ার সময়েই বিশেষ এক কালিতে সেই টিকা দেয়ার রেকর্ড সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। এই প্রযুক্তি কোন মাইক্রোচিপ নয় এটি বরং অনেকটা একটা অদৃশ্য ট্যাটু বা উল্কির মত। "এটি এখনও চালু করা হয়নি এবং এই প্রযুক্তি দিয়ে লোকজনকে ট্র্যাক করা অর্থাৎ তাদের ওপর নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। আর কারও কোন ব্যক্তিগত তথ্যও এর মাধ্যমে ডেটাবেজে ঢোকানো হবে না," বলছেন এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত একজন গবেষক আনা জ্যাকলেনেক। এবারের মহামারিতে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস সম্পর্কে আরো বহু ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান মূলত কাজ করে জনস্বাস্থ্য এবং টিকা উদ্ভাবন নিয়ে। একারণেই তিনি এই ধরনের গুজবের টার্গেট হয়েছেন। এসব গুজবের ব্যাপারে কোন প্রমাণ না থাকার পরও গত মে মাসে ১৬৪০ জন লোকের উপর জরিপ প্রতিষ্ঠান ইউগাভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ২৮ শতাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করেন মিস্টার গেটস লোকজনের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢোকানোর জন্য টিকা ব্যবহার করতে চান। একই জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকান সমর্থক লোকজনের মধ্যে এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা আরো বেশি, ৪৪ শতাংশ। মানব ভ্রূণের কোষ নিয়ে গুজব আমরা এরকম অনেক দাবিও দেখেছি যাতে বলা হয়েছে এই টিকায় গর্ভপাত করা একটি মানবভ্রুণের ফুসফুসের টিস্যু রয়েছে। এই এই দাবিটি ও মিথ্যে। ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটনের ডক্টর মাইকেল হেড বলছেন, টিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের মানবভ্রূণের কোষ ব্যবহার করা হয়না। টিকা বিরোধী সবচাইতে বড় একটি ফেসবুক গ্রুপের পাতায় একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল যাতে এমন একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটিতে ধারাভাষ্যদানকারী ব্যক্তি দাবি করছেন অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করা টিকার মধ্যে আসলে যে কী আছে, এই গবেষণাটি তারই প্রমাণ। কিন্তু এই ভিডিওতে ধারাভাষ্যদানকারী ব্যক্তি যে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তা ভুল। যে গবেষণার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে সেটিতে আসলে দেখা হয়েছে, কোন গবেষণাগারে মানবকোষে যখন টিকাটি প্রয়োগ করা হচ্ছে, তখন সেখানে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এটি নিয়ে এরকম বিভ্রান্তির কারণ হয়তো এ কারণে যে, টিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় এমন একটি ধাপ আছে, যেখানে পরীক্ষার কাজে গবেষণাগারে তৈরি কোষ ব্যবহার করা হয়। এই কোষগুলো গবেষণাগারে তৈরি করা হয় এমন ভ্রুণকোষ থেকে, যা হয়তো পরীক্ষার কাজে না লাগালে নষ্ট করে ফেলা হতো। গবেষণাগারে কোষ তৈরির এই কৌশলটি উদ্ভাবন করা হয়েছে ১৯৬০ এর দশকে। এই গবেষণার জন্য কোন মানবভ্রুণই হত্যা করা হয়নি। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির ডক্টর ডেভিড ম্যাথিউজ বলছেন, অনেক টিকাই কিন্তু এভাবে তৈরি করা হয়। তিনি বলছেন, টিকার মধ্যে কোষের যে অবশেষ থেকে যায়, সেটা কিন্তু পুরোপুরি অপসারণ করা হয়। এই কাজটি করা হয় খুবই উচ্চ মান বজায় রেখে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাটি যারা তৈরি করেছেন, তারা বলছেন তারা ক্লোন করা মানবকোষ নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু এই কোষগুলো গর্ভপাত করা মানবশিশুর কোষ নয়। গবেষণার কাজে ব্যবহৃত মানবকোষগুলো আসলে একটি কারখানার মত, যেখানে ভাইরাসের খুবই দুর্বল একটি রূপ উৎপাদন করা হয়। এই দুর্বল ভাইরাসটিকে আবার ব্যবহার করা হয় টিকা তৈরির কাজে। তবে এই দুর্বল ভাইরাসগুলো যদিও এ ধরনের ক্লোন করা কোষ থেকে তৈরি হয়, ভাইরাসটিকে বিশুদ্ধ করার সময় সেটি থেকে এই কোষের উপাদানগুলো পুরোপুরি অপসারণ করা হয়। টিকা তৈরির কাজে এই কোষের কোন উপাদান ব্যবহার করা হয় না। করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠার হার বিষয়ক দাবি কোভিড-১৯ এর টিকার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সমস্ত পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে, সেখানে এরকম কিছু যুক্তি আমরা দেখেছি যাতে প্রশ্ন করা হচ্ছে এই ভাইরাস থেকে মৃত্যুর হার যেখানে খুবই কম, সেখানে কেন আমাদের এই টিকা নিতে হবে। যারা এই টিকার বিরোধিতা করছেন তারা একটি মিম শেয়ার করেছেন, যেখানে দাবি করা হচ্ছে ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষই করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার চেয়ে এতে আক্রান্ত হওয়াটাই আসলে অনেক বেশি নিরাপদ বিকল্প। টিকার ব্যাপারে মিথ্যে দাবি সম্বলিত একটি মিম যাতে র‍্যাপার ড্রেকের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে শুরুতেই বলতে হয়, এখানে আক্রান্ত হওয়া মানুষদের মধ্য থেকে সেরে উঠা মানুষের যে পরিসংখ্যানটি উল্লেখ করা হচ্ছে, সেটি সঠিক নয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন পরিসংখ্যানবিদ জেসন ওক বলছেন, যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৯৯ শতাংশ সেরে উঠেছেন। এর মানে হচ্ছে আক্রান্ত প্রতি দশ হাজার লোকের মধ্যে ১০০ জন মানুষ মারা যাবেন। অথচ সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়া মিমে বলা হচ্ছিল প্রতি দশ হাজার আক্রান্তের মধ্যে মাত্র তিন জন মারা যাবেন। সেটি আসলে ভুল। মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে মিস্টার ওক একটা কথা বলছেন, যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি নির্ভর করে বয়সের উপর এবং এই ঝুঁকির ক্ষেত্রে স্বল্প এবং দীর্ঘকালীন অসুস্থতা বিবেচনায় নেয়া হয় না। আর এটা তো শুধু বেঁচে যাওয়ার ব্যাপার নয়। মারা যাওয়া প্রতিটি মানুষের বিপরীতে যারা বেঁচে যাচ্ছেন তাদের কিন্তু খুবই নিবিড় পরিচর্যার ভেতর রাখতে হচ্ছে এবং যারা সেরে উঠছেন তাদেরকে অনেক দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর ফলে কোভিড রোগীদের চাপে অনেক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে। হাসপাতালগুলোর যে সীমিত সম্পদ, তা দিয়ে অন্যান্য রোগীদের এবং অন্যান্য অসুস্থতা এবং আঘাতের চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক লিয়াম স্মিথ বলছেন, কেবলমাত্র মৃত্যুর সংখ্যার উপর মনোযোগ নিবদ্ধ করলে টিকা দানের আসল উদ্দেশ্যটি কিন্তু হারিয়ে যাবে। তিনি বলছেন টিকা নেয়ার ব্যাপারটিকে দেখতে হবে সমাজে অন্যদেরকে সুরক্ষা দেয়ার উপায় হিসেবে। তিনি বলেন "যুক্তরাজ্যে এই মহামারির সবচেয়ে খারাপ যে ব্যাপারটি, লকডাউন যে জারি করতে হয়েছে, তার কারণ কিন্তু একটাই- করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। যারা বয়োবৃদ্ধ এবং অসুস্থ হওয়ার কারণে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, যাদের কেয়ার হোমে রাখতে হয়, ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশংকা কিন্তু অনেক বেশি।" প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ক্রিস ব্র্যামওয়েল, ওলগা রবিনসন এবং মারিয়ানা স্প্রিং
news-56719238
https://www.bbc.com/bengali/news-56719238
হেফাজত ইসলামের নেতা আজিজুল হক সাত দিনের রিমান্ডে
বাংলাদেশের ইসলামপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিক্ষোভ করে হেফাজতের সমর্থকরা সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দু'হাজার তের সালের ৫ই মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্তরে অবৈধ সমাবেশ, হত্যাচেষ্টা, পুলিশের কাজে বাধা, এবং বিস্ফোরক আইনে তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা হয়। পল্টন থানার নিবন্ধন কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব জানান, এই মামলায় গতকাল রোববার আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম তালুকদার ১০দিনের রিমান্ড চান। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
news-47896932
https://www.bbc.com/bengali/news-47896932
নুসরাত জাহান: মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যু কেন নাড়া দিয়েছে সবাইকে?
নুসরাত জাহান সপ্তাহ দুয়েক আগেও ছিলেন আর পৌর শহরের স্কুল বা মাদ্রাসাপড়ুয়া আর দশজন সাধারণ মেয়ের একজন- কিন্তু শিক্ষকের দ্বারা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এবং মাদ্রাসার ভেতরে তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনা নাড়া দিয়েছে সারাদেশে।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে দগ্ধ অবস্থায় প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতালে পরে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে তিনি মারা যান বাংলাদেশে যেখানে শহরাঞ্চলেও যৌন নির্যাতনের অনেক অভিযোগ লোকলজ্জার ভয়ে লুকিয়ে রাখার কথা শোনা যায়, সেখানে মফস্বল শহর এবং রক্ষণশীল পরিবার থেকে আসা এই মেয়েটি তার অভিযোগ নিয়ে আদালত পর্যন্ত গিয়েছেন। শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ হবার পর ঢাকায় নিয়ে আসার পথে তার ভাইয়ের মোবাইলে রেকর্ড করা এক অডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে- "শিক্ষক আমার গায়ে হাত দিয়েছে, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো"। ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান মারা যাওয়ার পরে বাংলাদেশে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশ হয়েছে, শুক্রবারও মানববন্ধন করার কথা রয়েছে। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল এবং তার শরীরের ৮০ শতাংশই আগুনে পুড়ে গিয়েছিল বলে চিকিৎসকরা এর আগে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন। বুধবার রাতে তিনি মারা যান। গত শনিবার সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে ঐ মেয়েটিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ছাত্রীটির ভাই বিবিসি বাংলাকে বলেন, তার বোন কয়েকদিন আগে তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করেছিল, সেই ঘটনার জেরে ওই অধ্যক্ষের পক্ষের শিক্ষার্থীরা তার বোনকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে। এরপর থেকে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমের বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন। কিন্তু এই মৃত্যু কি যৌন হয়রানি বন্ধে মানুষের মনোভাব বদলাতে পারবে? আরো পড়ুন: সোনাগাজীর সেই অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যু সোনাগাজীর ওসি প্রত্যাহার, 'শম্পাকে' পায়নি পুলিশ মাদ্রাসা ছাত্রীর গায়ে আগুন: যা জানা যাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলছে, ২০১৮ সালের দেশে অন্তত ৯৪০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। তবে গবেষকরা বলছেন, বাস্তবে এসব ঘটনার সংখ্যা অনেক বেশি। ধর্ষণের যতগুলো ঘটনা ঘটছে, তার কুড়ি শতাংশের কম সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়। শেষ পর্যন্ত তার বিচার হয় ৬ শতাংশের কম ঘটনার। শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী সালমা আলী বলছেন, ''যৌন হয়রানির শিকার একটি মেয়ে যখন বিচার চাইতে যায়, সেখানেও তাকে নানা ধরণের হয়রানির মুখে পড়তে হয়। বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, মেয়েটিকে সামাজিকভাবে হেনস্থা করা, পুলিশের তদন্ত ঠিকমতো না করা বা তাদের সদিচ্ছার অভাব, প্রভাবশালীদের ক্ষমতার ব্যবহার বা টাকা পয়সার অভাব, নজরদারির অভাবে অনেক মেয়ে বিচারের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।'' ''ফলে এ ধরণের অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, সে আবার অপরাধ করে। আবার তাদের কোন শাস্তি না হওয়ায় আরো অন্যরা এ ধরণের অপরাধ করতে ভয় পায় না।'' বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসঞ্জ গ্রেফতার 'রোগে-শোকে নয়, শিশুরা বেশি মরছে পানিতে ডুবে' পুঁজিবাদের পথে রাশিয়ার মানুষের দুঃসহ অভিজ্ঞতা ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে যেসব ঝামেলায় পড়তে হয় এই আইনজীবী বলছেন, সমাজের সবাই এ ধরণের অপরাধ করে না। ফলে এ ধরণের একটি কষ্টকর ঘটনার পর সবাই এগিয়ে আসবেন, প্রতিবাদ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সমাজের মধ্যেই যে যৌন নির্যাতনকারী অপরাধীরা লুকিয়ে আছে, তাদের দমন করতে হলে আইনের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। '' ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি ঘটনা বন্ধে সবার আগে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এ ধরণের কোন ঘটনা কেউ ঘটালে তার উপযুক্ত বিচার হবে। তাহলেই আর কেউ ভয়ে এ ধরণের অপরাধ করার সাহস পাবে না।'' সালমা আলীর মতে, ''বাস্তবে যতগুলো ঘটনা ঘটে, তার অনেকগুলোই আমাদের কানে আসে না। গণমাধ্যমে রিপোর্ট বা থানায় মামলা হয়না, অনেক সময় স্থানীয়ভাবে বা সামাজিকভাবে আপোষ হয়ে যায়। কিন্তু সেগুলোও কিন্তু সমান মাত্রার অপরাধ। যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হলে, ধর্ষণ ঠেকাতে হলে এগুলোও বন্ধ করতে হবে।'' অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মাকসুদা আক্তার বলছেন, অনেক দিক থেকে ফেনীর ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাটি আলাদা। কারণ সামাজিকভাবে নানা চাপ ও ভয়ভীতি সত্ত্বেও মেয়েটি আপোষ করেনি, সে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। একটি হাসপাতালে শুয়ে থেকেও সে লড়াই করার মনোভাব দেখিয়েছে। তিনি বলছেন, মেয়েটির মৃত্যুর পর বোঝা যাচ্ছে, এই ঘটনা মানুষকে কতটা নাড়া দিয়েছে। ঘটনাটি কষ্টকর, মর্মান্তিক হলেও, সে মানুষকে সচেতন করে দিয়ে গেছে, তাদের ভেতরের বিবেক জাগিয়ে তুলেছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে, মানুষ প্রতিবাদ করেছে। তারপরেও আবার এরকম ঘটনা ঘটেছে। ফলে এ জাতীয় ঘটনার শাস্তি না হলে আরেকটি যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। এখন দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েটি অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন। সামাজিক মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া আলোড়ন বোঝা যায় সামাজিক মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে। অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে, অনেকে বিচার দাবি করেছেন, আর কারো কারো স্ট্যাটাসে ছিল হতাশা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রিজভী জামান লিখেছেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নুসরাত দেখে গেল, তার ধর্ষকের পক্ষে বিশাল জমায়েত ও মানব বন্ধন! এ নির্মম সমাজের নির্মম বিধিলিপি নিয়েই তাঁকে চলে যেতে হলো। লোপা হোসেইন লিখেছেন, সারাজীবন একটা কন্যা সন্তানের খুব শখ ছিল আমার। কিন্তু এখন ভয় পাই। অপূর্ণ রুবেল হতাশার কথা ব্যক্ত করেছেন এইভাবে, আহা, অত চাপ নিচ্ছেন কেন? তনুকে যখন ভুলতে পেরেছেন, নুসরাতকেওে পারবেন। প্লিজ নো চাপ। মোঃ আনোয়ার শেখের মন্তব্য মোঃ: আনোয়ার শেখ বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, আমাদের সমাজে এই রকম আরো অসংখ্য ঘটনা ঘটে। কিন্তু তার অধিকাংশ ঘটনাই আমাদের অজানা থাকে। লজ্জা আর ভয়ের কারণে অসংখ্য মেয়ে এর প্রতিবাদ করে না। শরিফা বুলবুল লিখেছেন,নারী হয়ে নারী নির্যাতনকারীর পক্ষ নিয়ে যারা নুসরাতের ওপর হামলা করেছে, সেই মুখোশ ধারীদের ধরতে হবে। তৈমুর হোসেন শুভ লিখেছেন, নুসরাত যখন বিচার দাবি করেছিলো, তখন স্বাধীন দেশের হাজারো গণমাধ্যম, নিজেদের আইডল ও জনগণের বন্ধু দাবি করা পুলিশ বাহিনী, মানবাধিকার সংগঠনগুলো কোথায় ছিলও? সাব্বির রহমান লিখেছেন, মরে গেছো, ভালোই হয়েছে বোন। বেঁচে থেকে কি হতো? দেহ মনে পোড়া ক্ষত নিয়ে বিচারের আশায় বছরের পর বছর ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকতে হতো। ফেনীতে অগ্নিকাণ্ডের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রীর শরীরের ৮০ ভাগই পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। (প্রতীকী ছবি) সমাজে কতটা পরিবর্তন আনতে পারবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলছেন, এই ঘটনায় সমাজে একেবারে কোন প্রভাব পড়বে না, সেটা বলবো না, তবে সত্যি কথা বলতে সেটা খুব সামান্য।'' ''এই যে মানুষের এতো হইচই, সেটা কি আর দশদিন পরে থাকবে? চুড়িহাট্টার ঘটনা, সাগর-রুনির ঘটনা, তনুকে নিয়ে অনেক হইচই হয়েছে, সেটা নিয়ে কি এখন আর কথা হয়?'' তিনি বলছেন, যেখানে আইন আছে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই, রাজনৈতিক চাপ আছে, পুলিশের সীমাবদ্ধতা আছে সেখানে হইচই, আন্দোলন করে সমাজে খুব বেশি কোন পরিবর্তন আসবে না। ''ঘটনাটা আমাদের নাড়া দিয়েছে, একটু সচেতনতা আসবে, এইটুকুই। কিন্তু এসব ঠেকাতে হলে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।'' তিনি বলছেন, ''মেয়েটি মারা গেছে, কিন্তু বেঁচে থাকলে এই সমাজ কি তাকে হয়রানি মুক্তভাবে গ্রহণ করতো। দুঃখজনক হলো সামাজিক সেই পরিবর্তন এখনো আমাদের আসেনি।'' এই ঘটনা থেকে অনেকের সেই চিন্তার পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা করেন।
news-52777492
https://www.bbc.com/bengali/news-52777492
খোদেজা বেগমের দুঃসাহসিক সমুদ্রযাত্রা: ‘রাতে নৌকার ছাদে জানাজা পড়ে লাশ ফেলা হতো সাগরে’
খোদেজা বেগমের সমুদ্রযাত্রার কাহিনী পুরোনো দিনের দস্যুজাহাজের ভয়ংকর অভিযানকেও যেন হার মানায়। যে নৌকায় তারা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার উপকূল পর্যন্ত, সেটি একের পর এক ভয়ংকর সব ঘটনার শিকার হয়েছে। পথে তারা ঝড়ের কবলে পড়েছেন। নানান দেশের উপকূলরক্ষীরা তাদের তাড়া করেছে। খাবার আর পানির অভাবে প্রতিদিন মানুষ মরেছে নৌকায়। তাদের লাশ ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে সাগরে। নৌকার বার্মিজ নাবিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন রোহিঙ্গারা। সেখানে ধর্ষণ, খুন-খারাবির মতো ঘটনা ঘটেছে। ৫৪ দিন সাগরে ভেসে অবশেষে উপকূলে ফিরেছেন তারা। বাংলাদেশের টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির থেকে টেলিফোনে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে খোদেজা বেগম তার এই ভয়ংকর সমূদ্রযাত্রার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন বিবিসি বাংলাকে:
মায়ের মৃত্যুর পর চার ছেলে-মেয়েকে নৌকার অপর পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের কিছু কিছু অংশ আপনার অস্বস্তির কারণ হতে পারে। "মেয়েটার নাম আমার মনে নেই। তবে তার কোন অসুখ ছিল না। আমাদের নৌকায় খাবার পানি ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই ও সাগরের নোনা পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আমার সামনে ও মারা যাচ্ছিল। আমি এই ঘটনাটা ভুলতে পারি না। ওর ছিল চারটা ছেলে-মেয়ে। মা মরা ছেলে-মেয়েগুলোকে দেখে আমার বুক ভেঙ্গে যাচ্ছিল।" খোদেজা বেগম ঠিক মনে করতে পারেন না, ঠিক কত তারিখে, কোথায় এই ঘটনা ঘটেছিল। কারণ প্রায় দুমাস ধরে যখন একটা বড় নৌকায় পাঁচশোর বেশি মানুষকে সাগরে প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হচ্ছিল, তখন তারা স্থান-কাল-দিন-তারিখের হিসেব হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি শুধু মনে করতে পারেন, এটি ঘটেছিল মালয়েশিয়ার উপকূল থেকে তারা ফিরে আসার পথে। নৌকার দোতলায় যে অংশটিতে মেয়েদের রাখা হয়েছিল সেখানে মেয়েটির তখন একেবারে শেষ অবস্থা। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। আর আবোল-তাবোল বকছিল। "নৌকার যে জায়গায় আমরা বসে ছিলাম, সেখানে পা সোজা করার উপায় পর্যন্ত নেই। গাদাগাদি করে বসে আমরা সবাই। প্রচন্ড গরম। আমি জানতাম এরপর মেয়েটার ভাগ্যে কী ঘটবে।" খোদেজা বেগমের ছেলে নুরুল ইসলামের কাজ ছিল নৌকায় মারা যাওয়া লোকজনের জানাজা পড়া। কেউ মারা গেলে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হতো একদম উপরে। সেখানে জানাজা পড়ানো হতো। তারপর লাশ ফেলে দেয়া হতো সাগরে। "মারা যাওয়ার পর লাশ নৌকার একদম উপরে নিয়ে গেল ওরা। ছেলে-মেয়েগুলোকে ওরা নিয়ে গেল নৌকার অপর পাশে। বড় মেয়েটির বয়স হবে ১৫/১৬, নাম শওকত আরা। পরেরগুলো একদম ছোট। ওদের হাতে বিস্কুট ধরিয়ে দিয়েছিল। আর অন্যদিকে তখন ওদের মায়ের লাশ ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছিল সাগরে।" নৌকায় দুই মাসের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাড়া করছে খোদেজা বেগমকে দুই মাস ধরে সাগরে ভেসে বেড়ানোর সময় এরকম আরও বহু মৃত্যু দেখেছেন খোদেজা বেগম। ভাগ্যক্রমে নিজে বেঁচে গেছেন, প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন টেকনাফের শরণার্থী শিবিরের পুরোনো ঠিকানায়, কিন্তু নৌকায় স্বচক্ষে দেখা এসব মৃত্যুর ঘটনা এখনো তাকে তাড়া করছে। "আমাদের নৌকায় কত মানুষ মারা গিয়েছিল কেউ জানেনা। কেউ বলছে ৫০ জন কেউ বলছে ৭০ জন। তবে আমি জানি অন্তত ১৬/১৮ জন মহিলা মারা গেছে। আর পুরুষ মারা গেছে তার চেয়ে বেশি," বলছিলেন তিনি। রহস্যময় নৌকা: ১৪ ই এপ্রিল রাতে টেকনাফের সাগর তীরে এক রহস্যজনক নৌকা এসে ভিড়লো। সেই নৌকায় শত শত মানুষ। বেশিরভাগ মানুষের অবস্থা এতটাই মুমূর্ষু যে, তাদের উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। কমান্ডার সোহেল রানা টেকনাফে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের অধিনায়ক। ১৪ ই এপ্রিল রাতেই তাদের কাছে এই নৌকার খবর এসে পৌঁছায়। সকালে সেখানে গিয়ে তিনি যে দৃশ্য দেখেছিলেন, তা অবর্ণনীয়। 'অন্তত দশজনকে আমি পেয়েছে, তাদের মনে হচ্ছিল যেন মৃতপ্রায়। অনাহারে, পানির অভাবে এদের অবস্থা ছিল শোচনীয়। দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়া কংকালসার মানুষের যে ছবি আমরা দেখি, এদের অবস্থা ছিল সেরকম। অনেকেই নানা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত।" নৌকার আরোহীদের সবাই রোহিঙ্গা শরণার্থী। থাকতেন কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে। এরা মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়। তখন তাদের নিয়ে নৌকাটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল সাগরে। নৌকার বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো তাদের সাগরযাত্রার যে কাহিনী জানালেন, তা শিউরে উঠার মত। "আমরা ওদের সবার সঙ্গে কথা বলে অনেক হিসেব করে যেটা বুঝতে পারছি এই নৌকাটি অন্তত ৫৪ দিন সাগরে ছিল। এরা দুইবার মালয়েশিয়ায় পর্যন্ত গিয়ে সেখানে নামার চেষ্টা করেছে। পথে তাদের খাবার আর পানি ফুরিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের কোস্ট গার্ড আর নৌবাহিনী তাদের তাড়া করেছে। নৌকায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বার্মিজ ক্রুদের অনেক বিবাদ হয়েছে। বহু মানুষ নৌকাতেই মারা গেছে," বলছিলেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সোহেল রানা। মোবাইল ফোন কল খোদেজা বেগম এবং তার সহযাত্রীদের এই দুঃসাহসিক সমুদ্রযাত্রার শুরু ফেব্রুয়ারিতে। বাংলাদেশে শরণার্থীর জীবন পেছনে ফেলে তারা মালয়েশিয়ায় এক নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছিলেন। "আমরা থাকতাম বার্মার রাখাইন রাজ্যের বুচিডং। আমার স্বামী কৃষিকাজ করতো। আমাদের কিছু জমি-জমা ছিল। কোনরকমে আমাদের চলে যেত। ২০১৭ সালে বার্মায় মিলিটারি এসে আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করলো। আমাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিল। আমার স্বামী আর একটা ছেলে তখন মিলিটারির হাতে মারা যায়। তারপর আমরা পালিয়ে আসলাম বাংলাদেশে।" টেকনাফের নয়াপাড়ায় যে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির, সেখানে ঠাঁই হয়েছিল খোদেজা বেগম আর তার ছেলে-মেয়েদের। তার বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, স্বামীর সঙ্গে আলাদা সংসারে থাকে। কিন্তু ছেলে নুরুল ইসলাম (২৫) এবং ছোট মেয়ে সুমাইয়া (১১) তার সঙ্গেই থাকে। "মালয়েশিয়া যাওয়ার চিন্তাটা এসেছিল আত্মীয়-স্বজনের কথা শুনে। যেসব রোহিঙ্গারা সেখানে গেছে, ওরা নাকি ভালো আছে। আমরাও তখন মালয়েশিয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম।" খোদেজা বেগম তার কিছু জমানো টাকা এবং স্বর্ণালংকার বিক্রি করে মোট ৬০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন দালালের হাতে। "একদিন অনেক রাতে মোবাইল ফোনে কল আসলো। ফোনের অপর পাশের লোকটা আমাকে বললো, তোমরা এখন টেকনাফের স্টেশনের ওখানে আসো। আমাদের খুব বেশি জিনিসপত্র নেই। আমরা তিনজন একটা ব্যাগে কাপড়-চোপড় নিলাম। আমার কিছু সোনার গয়না ছিল, সেটা সাথে নিলাম। কেউ যেন সন্দেহ না করে, সেজন্যে আগেই আমি সবাইকে বলেছিলাম, আমি ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছি। এরপর ঘরে তালা লাগিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম।" টেকনাফ বাস স্ট্যান্ডে যখন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন তারা, হঠাৎ একটা সিএনজি আসলো। ড্রাইভার তাদের সেটিতে উঠতে বললো। তারপর দ্রুত চালিয়ে নিয়ে গেল জঙ্গলের মধ্যে একটা বাড়িতে। সেখানে অপেক্ষা করছে তাদের মতই আরও বহু মানুষ। তারপর সবাইকে নিয়ে গেল নদীর ধারে এক বালুচরে। "সেখানে একটা সাম্পান ছিল। আমাদের ৩০/৩২ জন মানুষকে ঐ সাম্পানে তোলা হলো। এরপর সেটি থেকে তোলা হলো আরেকটা বড় নৌকায়। এরপর দুই দিন দুই রাত আমরা এই নৌকায় ছিলাম।" নৌকাটি সাগরে ভেসে বেড়িয়েছে প্রায় দু'মাস ধরে খোদেজা বেগম অনুমান করেন, বাংলাদেশের জিঞ্জিরা (সেন্ট মার্টিন) এবং বার্মার আকিয়াবের মাঝামাঝি সাগরে এই নৌকাটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। যে জাহাজে করে তারা মালয়েশিয়ায় যাবেন, সেটি এই এলাকাতেই থাকার কথা ছিল। "শেষ পর্যন্ত আমাদের যে জাহাজটিতে তোলা হলো, সেটি ছিল আসলে কাঠের তৈরি একটা বিরাট নৌকা। এটি যারা চালাচ্ছিল, তারা সবাই মগ (জাতিগত বার্মিজ)। জাহাজের ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে সবাই।" জাহাজটি সেখানে ঘোরাঘুরি করছিল প্রায় ৮ দিন ধরে। ছোট ছোট নৌকায় করে আরও মানুষ এনে সেটিতে তোলা হচ্ছিল। অনেক মানুষ। নানা বয়সী পুরুষ, নারী এবং শিশু। "ঠিক কত মানুষ ছিল বলতে পারবো না। চার-পাঁচশোর বেশি। পরে শুনেছিলাম ৫২৮ জন নাকি সেটিতে ছিল। সব মানুষ তোলা শেষ হলে আমরা মালয়েশিয়ার দিকে যাত্রা শুরু করলাম।" "যখন আমরা বড় নৌকায় উঠে গেলাম, তখন আমার আর অতটা ভয় করছিল না। আমি তখন মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। আমার কষ্টের জীবনটা পেছনে ফেলে একটা নতুন জীবন পাব, ভালো থাকবো, ভালো খেতে-পরতে পারবো, এই আশায় আমি বিভোর ছিলাম। তাই কোন কষ্ট হলেও সেটা মেনে নিচ্ছিলাম।" নৌকার সামনের অংশটা ছিল খোলা। পেছনে ছিল একটা কাঠের কেবিন। সেখানে দুটি তলা। মেয়েদের রাখা হয়েছিল মাঝখানের তলায়। একদম উপরে থাকতো জাহাজের ক্যাপ্টেন। আর তাদের লোকজন। বাকী সবাই নীচের খোলে। নৌকায় টয়লেট, গোসল করা- এসবের সেরকম কোন ব্যবস্থা ছিল না। "পেছনের দিকে দুটি কাঠের তক্তা দিয়ে একটা ল্যাট্রিন বানানো হয়েছিল। দুই তক্তার ফাঁক দিয়ে একদিন একটা বাচ্চা ছেলে সাগরের পানিতে পড়ে যায়। সেখানেই পানিতে ডুবে মারা যায় ছেলেটি।" এটি ছিল এই ভাগ্যবিড়ম্বিত নৌকার যাত্রীদের মধ্যে প্রথম কোন মৃত্যুর ঘটনা। মালয়েশিয়ার উপকূলে বাংলাদেশের উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করার পর মাত্র সাতদিনেই মালয়েশিয়ার উপকূলে গিয়ে পৌঁছায় নৌকাটি। প্রথমবারের এই যাত্রায় তাদের নৌকাটি ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়েছিল। "সাগরে বড় বড় ঢেউ উঠছিল। নৌকা যখন বড় ঢেউয়ের ওপর থেকে আছড়ে পড়তো, তখন আমার ভীষণ ভয় করতো। ‍সারাদিন আমরা কেবল দোয়া-দরুদ পড়তাম। কলেমা পড়তাম। মরে যাচ্ছি মনে করে যে কতবার শেষবারেরর মতো কলেমা পড়েছি।" "মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় আমাদের খাবারের বেশি সমস্যা ছিল না। প্রতিদিন দুই প্লেট করে ভাত দেয়া হতো। সাদা ভাত বা সাথে একটু ডাল। প্রতিদিন এক মগ পানি পেতাম।" 'এটিকে জাহাজ বলা যাবে না, এটি আসলে একটি বড় কাঠের নৌকা' নৌকার নাবিকরা সারাদিন দূরবীনে নজর রাখতো চারদিকে। যাতে কোন দেশের উপকূলরক্ষী বা নৌবাহিনীর খপ্পরে পড়তে না হয়। "ওরা যখনই দূরে কোন জাহাজ বা নৌকা দেখতো সাথে সাথে আমাদের নৌকার দুটি ইঞ্জিনই একসঙ্গে চালিয়ে দিয়ে দ্রুত অন্যদিকে চলে যেত।" মালয়েশিয়ার উপকূলে নৌকাটি অপেক্ষা করেছিল দুদিন। নৌকার ক্যাপ্টেন জানিয়েছিল, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য মালয়েশিয়া থেকে নৌকা আসবে। কিন্তু কেউ আসলো না। করোনাভাইরাস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যখন খোদেজা বেগম রওনা দিয়েছিলেন, তখন কোভিড নাইনটিন বা করোনাভাইরাসের কথা কিছু জানতেন না। "আমরা যখন রওনা দেই তখন করোনাভাইরাসের কথা শুনিনি। এটির কথা আমরা প্রথমে শুনি জাহাজে। আমরা মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নৌকার ক্যাপ্টেন একদিন ওয়ারলেসে কাদের সঙ্গে যেন কথা বলছিল। আমরা শুনেছি, ওরা বলাবলি করছিল, যে মালয়েশিয়ায় কোভিড-নাইনটিন বলে কি একটা রোগ ছড়িয়েছে।" পাঁচশোর বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে খোদেজা বেগমদের জাহাজ যতদিনে মালয়েশিয়ায় পৌঁছায়, ততদিনে করোনাভাইরাসের কারণে সীমান্তে জারি হয়েছে ভীষণ কড়াকড়ি। কোস্টগার্ড আর নৌবাহিনী সারাদিন উপকূলে টহল দিচ্ছে। আকাশে চক্কর দিচ্ছে হেলিকপ্টার। "নাবিকরা বললো, মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাস চলছে সেজন্য আমাদেরকে মালয়েশিয়ায় ঢুকানো যাচ্ছে না।" "মালয়েশিয়ায় ঢুকতে না পেরে আমাদের নৌকা ফিরে আসলে থাইল্যান্ডের কাছে। আমরা জানি না নৌকার নাবিকরা আমাদের সত্যি কথা বলছিল কীনা। রাতের অন্ধকারে তারা আমাদের কোনদিকে নিচ্ছে আমাদের তো বোঝার উপায় নেই।" নৌকাটিতে শত শত মানুষ তোলার পর নড়াচড়ার জায়গা ছিল না থাইল্যান্ডের উপকূলে নৌকায় কিছু রসদপত্র তোলা হয়েছিল। সেই সরবরাহ এসেছিল ছোট ছোট নৌকায়। এরপর থাইল্যান্ড থেকে নৌকা চলে আসে বার্মার উপকূলের কাছে। সেখানেই সাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এটি। "একদিন অনেক রাতে মিয়ানমারের নৌবাহিনি এসে আমাদের নৌকা তাড়া করে ধরলো। আমাদের জাহাজের যে দুই নম্বর ক্যাপ্টেন ছিল, তাকে খুব মারলো। তারপর চারজনকে তাদের জাহাজে নিয়ে গেল। আমি শুনেছি ওদের নাকি খুব মারধোর করেছিল। তারপর অবশ্য ওদের ছেড়ে দেয়। আমি শুনেছি তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছিল।" ততদিনে নৌকায় খাবার আর পানির তীব্র সংকট শুরু হয়েছে। প্রথমদিকে দুই বেলা খাবার দেয়া হলেও, ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ কমতে থাকে। পানির সংকট শুরু হয়। নৌকার রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়। নাবিকরা তখন দ্বিতীয়বার মালয়েশিয়ায় ঢোকার চেষ্টা চালায়। "এবারের মালয়েশিয়ার কোস্টগার্ড আমাদের আটকে দেয়। ওরা বললো, এখানে কোভিড নাইনটিন চলছে। তোমরা যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফেরত যাও। এরপর আমরা মালয়েশিয়া থেকে ফিরে বার্মার কাছে চলে আসি। ততদিনে জাহাজে যেন মড়ক লেগেছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। "কখনো একজন মরছে, কখনো দুজন মরছে। কেউ দিনে মারা যাচ্ছে, কেউ রাতে মারা যাচ্ছে। রাতের বেলাতেই জানাজা পড়ে দরিয়ায় লাশ ফেলে দিচ্ছে, যাতে কেউ টের না পায়। লাশ ফেলার সময় ওরা জোরে শব্দ করে ইঞ্জিন চালাতো। যাতে লাশ ফেলার শব্দ শোনা না যায়। কত মানুষ মারা গেছে, গুনে বলতে পারবো না। তখন আমরা সবাই যার যার জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত, হিসেব রাখার সময় ছিল না।" খোদেজা বেগমের ধারণা, নৌকায় পুরুষরাই বেশি মারা গিয়েছিল, কারণ পুরুষরা যেখানে থাকতো, সেখানে গরম ছিল বেশি। গাদাগাদি করে গায়ে গা লাগিয়ে বসে থাকতে হতো তাদের। একজনের গায়ের ওপর আরেক জনের পা তুলে দিতে হতো। প্রচন্ড গরমে পানিশূন্যতায় ভুগে মারা গেছে বেশিরভাগ মানুষ। "প্রথমদিকে আমাদের প্রতিদিন এক মগ করে পানি দিত। পরে আমাদের পানির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হলো। তখন পানি নিয়ে আমাদের বেশ কষ্ট হয়েছিল।" "আমাদের যখন পানি দিত না তখন অনেকে সাগরের লবণ পানিতে কাপড় চুবিয়ে তারপর কাপড় চিপে সেই নোনা পানি খেত। সাগরের পানি খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। ধর্ষণের গুজব এবং বিদ্রোহ ততদিনে নৌকায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গারা বিক্ষুব্ধ। প্রতিদিন মৃত্যুর ঘটনা তাদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। খোদেজা বেগম: 'আমার চোখের সামনে মানুষকে মরতে দেখেছি' "লোকজন তখন মরিয়া হয়ে বললো, আমরা কদিন এভাবে সাগরে ভাসবো। আমরা বললাম, আমাদের যে কোন দেশের কূল ধরিয়ে দাও। যদি আমাদের ধরে জেলে ঢুকিয়ে দেয়, ঢুকবো। আমরা তো এখানে এমনিতেই মারা যাচ্ছি।" কিন্তু জাহাজের মগরা বললো, তোমাদের নামাতে গেলে, আমাদেরকেও ধরবে। জেলে ঢোকাবে। আমাদের জাহাজও নিয়ে যাবে। অনেক কথাকাটির পর শেষ পর্যন্ত রফা হলো, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে একটা নৌকা চেয়ে পাঠাবে। সেই নৌকায় তাদের তুলে দেয়া হবে। কিন্তু সেই নৌকার ভাড়া তাদেরই দিতে হবে। এই উত্তেজনা আরও চরমে পৌঁছালো নৌকার রোহিঙ্গা নারীদের ওপর মগদের অত্যাচারের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। "একটা মগ ছিল বেশি খারাপ, সে মানুষকে অনেক মেরেছিল। যেসব মেয়ে ছিল, তাদের ওপর অত্যাচার করতো। একদিন কিছু লোক নাকি ওকে মেরে সাগরে ফেলে দিল। বিরাট মারামারি শুরু হলো।" নৌকার বার্মিজ ক্রুরা এরপর বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল, সংখ্যায় তারা কম, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও বুঝতে পারছিল, এই বার্মিজ ক্রুরা না থাকলে, তারা তীরে ফিরতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত একটা ফয়সালা হলো। "ওরা বললো, তোমাদের যার কাছে যা টাকা আছে সব তোল। এভাবে এক লাখ টাকা তোলা হলো। এরপর যখন বাংলাদেশ থেকে একটা নৌকা ডাকার জন্য ওরা ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করলো। কিন্তু কেউ নাকি নৌকা পাঠাতে রাজী হলো না। যে ছোট নৌকা আমাদের এই জাহাজে তুলে দিয়েছিল, তারাও না।" "তখন কিছু মানুষ এসে ঝগড়া থামালো। বললো, এরকম চললে তোমরাও মরবে, আমরাও মরবো।" টেকনাফের শরণার্থী শিবিরের ঘরে মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে খোদেজা বেগম "মগরা তখন আকিয়াব থেকে একটা বোট ডাকলো। ফজরের আজানের সময় একটা বোট আসলো। সেটি থেকে আমাদের জাহাজে চার বস্তা চাল তুলে দিল। কয়েকটা কয়লার বস্তা দিল। তারপর তারা হুড়মুড় করে জাহাজ ছেড়ে পালালো।" দুজন বার্মিজ ক্রু নৌকায় থেকে গিয়েছিল, পালাতে পারেনি। তাদের একজন নৌকাটি চালাতে পারতো। আরেকজন ছিল বাবুর্চি । "ওদের বলা হলো আমাদের বাংলাদেশে পৌছে দিতে। ওরাই জাহাজটাকে বাংলাদেশের টেকনাফের কূলে নিয়ে আসে।" টানা প্রায় দু'মাস পর খোদেজা বেগম এবং তার সহযাত্রীরা তীরের দেখা পেলেন অবশেষে। ১৪ই এপ্রিল তাদের নৌকা এসে ভিড়লো টেকনাফের ঘাটে। "প্রথম যখন তীর দেখলাম, এত যে খুশি লাগলো, বলতে পারবো না। পানিতে থাকতে থাকতে পানি দেখলেই মনে হতো যেন বাঘে ধরেছে। এত ভয় লাগতো। দুই মাস ধরে কেবল পানিতে ভেসেছি। শরণার্থী শিবিরে নিজের ঘরটিও হারিয়েছেন খোদেজা বেগম বাংলাদেশে কোস্ট গার্ড এই নৌকাটি থেকে উদ্ধার করেছিল মোট ৩৯৬ জন রোহিঙ্গাকে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে তাদের দুসপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। এখন তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। খোদেজা বেগম ক্যাম্পে ফিরে দেখেন, তিনি যে ঘরে থাকতেন, সেটিতে এখন থাকছে অন্য মানুষ। তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্য মানুষের ঘরে। "আমি সব হারিয়েছি। আমার কিছু নেই। অন্যের দয়ায় বেঁচে আছি। যে কষ্ট আমি পেয়েছি, সেই কষ্ট জীবনে ভুলবো না। আমি জীবনেও আর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ভাববো না। যদি অন্য কেউ মালয়েশিয়া যেতে চায় তাকে বলবো, ভুলেও এই কাজ করো না।" কাঠের নৌকায় সাগরে দুই মাস: 'রাতে জানাজা পড়ে লাশ ফেলে দেয়া হতো সাগরে' ছবি একেঁছেন লু ইয়াং
news-57000132
https://www.bbc.com/bengali/news-57000132
কোভিড: ভারতে চরম এই দুর্দশা তৈরি হলো কীভাবে
ভারতে বুধবারের সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩৭৮০ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে যা আরো একটি নতুন রেকর্ড। কারোরই এখন সন্দেহ নেই যে বেসরকারি হিসাব এর অনেক বেশি।
হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছেন একজন কোভিড রোগী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারা বিশ্বে গত এক সপ্তাহে মোট কোভিড সংক্রমণের প্রায় অর্ধেকই হয়েছে ভারতে। এ সময় বিশ্বে যত কোভিড রোগী মারা গেছে তার ২৫ শতাংশই হয়েছে ভারতে। রাজধানী দিল্লিসহ বহু জায়গা থেকে হাসপাতালে অক্সিজেনের সঙ্কটের খবর এখনও আসছে। ডাক্তাররা খোলাখুলি তাদের অসহায়ত্বের কথা বলছেন। বিরোধী দলগুলো নতুন করে দেশজুড়ে লক-ডাউন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে একের পর এক উচ্চ আদালত কোভিড সামাল দিতে সরকারের ব্যবস্থাপনাকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করছে, নির্দেশনা দিচ্ছে। মঙ্গলবার এলাহাবাদ হাইকোর্ট মন্তব্য করেছে হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু ঘটার মত পরিস্থিতি একটি “অপরাধ“ এবং “গণহত্যার চেয়ে তা কম নয়।“ সরকারের কাছে অক্সিজেনের এই সংকটের ব্যাখ্যা চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এই চরম দুরবস্থার মধ্যে ভারত পড়লো কীভাবে? ভুল কোথায় হয়েছে? সরকারের মধ্যে এই আত্ম-জিজ্ঞাসা বা আত্ম-সমালোচনার কোনো লক্ষণ এখনও চোখে পড়ছে না। সোমবারও ভারতের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে জোর গলায় দাবি করেন যে দিল্লি বা দেশের কোথাও অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পীযুষ গয়াল বলেন, “ অক্সিজেনের কোনো কমতি নেই, শুধু পরিবহনে কিছু সমস্যা হচ্ছে।“ দিল্লির যে জায়গায় বসে যখন তিনি একথা বলছিলেন সে সময় তার মাত্র কয়েক মাইল দূরে কয়েকটি ছোট হাসপাতাল এসওএস বার্তা পাঠাচ্ছিল যে তাদের অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছে এবং অনেক রোগীর জীবন হুমকির সামনে। তেমন একটি হাসপাতালের উদ্বিগ্ন একজন চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, “বিশেষ করে শিশুদের জীবন নিয়ে ভয়ে আমাদের কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।“ একজন স্থানীয় রাজনীতিকের চেষ্টায় ঐ হাসপাতালে শেষ মুহূর্তে কিছু অক্সিজেন পৌঁছায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অক্সিজেনের সঙ্কট পুরো সমস্যার একটি মাত্র দিক, কিন্তু তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারগুলো প্রস্তুত ছিল না। আরো পড়তে পারেন: ভারত কোভিড: মোদীর আসন বারাণসী বিপর্যস্ত, ক্ষোভে ফুটছে মানুষ ভারতে বহু হাসপাতালে শয্যা খালি নেই, প্রাণ রক্ষার লড়াই বাড়িতেই অক্সিজেনের অভাব মেটাতে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ পরামর্শ ছড়ানো হচ্ছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এপ্রিলের মাঝে কুম্ভ মেলায় অনুমতি দেওয়া হয় একের পর এক হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য কিন্তু অনেক আগে থেকেই বার বার এর জন্য সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। যেমন, গত বছর নভেম্বরে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় কমিটি সরকারকে সতর্ক করে যে অক্সিজেনের যথেষ্ট মজুদ নেই এবং হাসপাতাল বেডের বড় সংকট রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেন যে আরেক দফা ‘কোভিড সুনামি‘র সম্ভাবনা নিয়ে তারা শঙ্কিত। মার্চের শুরুর দিকে সরকারের তৈরি বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি সতর্ক করে যে করোনাভাইরাসের অধিকতর সংক্রামক একটি ভ্যারিয়্যান্ট সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এসব হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ৮ই মার্চ স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন ভারত “এই প্যানডেমিক প্রায় জয় করে ফেলেছে।“ কেন তিনি এই বাগাড়ম্বর করেছিলেন? একটি সম্ভাব্য কারণ হয়তো যে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিনের গড় সংক্রমণ ২০ হাজারের নীচে নেমে আসে যেটি সেপ্টেম্বরে ছিল প্রায় ৯০,০০০। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ঘোষণা দেন কোভিড পরাজিত, এবং সব ধরনের সমাবেশের জন্য সমস্ত জায়গা খুলে দেওয়া হয়। সরকারের একদম শীর্ষ মহল থেকে এ ধরনের কথাবার্তা, কাজকর্ম দেখে সাধারন মানুষজনও কোভিডের প্রটোকল অগ্রাহ্য করতে শুরু করে। যদিও মি. মোদী মানুষকে মাস্ক পরতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে পাঁচটি রাজ্যে গিয়ে বড় বড় নির্বাচনী জনসভা করেন যেখানে সিংহভাগ মানুষের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। ঐ সব জনসভায় হাজির সরকারের অনেক সিনিয়র মন্ত্রীও মাস্ক পরেননি। তারপর, অনুমতি দেওয়া হলো কুম্ভ মেলায় যেখানে লাখ লাখ হিন্দু পূণ্যার্থী গিয়ে হাজির হয়। “সরকারের মন্ত্রীরা মুখে যা বলছিলেন তাদের আচরণ ছিল পুরোটা উল্টো, “ দিল্লিতে বিবিসির সংবাদদাতা বিকাশ পাণ্ডেকে বলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. চন্দ্রকান্ত লাহারিয়া। প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ড. শহিদ জামিল বলেন, “সরকার দেখতেই পারেনি যে কোভিডের দ্বিতীয় আরেকটি ঢেউ আসছে। আগেভাগেই তারা বিজয়ের উৎসব শুরু করে দিয়েছিল।“ মার্চের শেষ দিকে পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একটি নির্বাচনী জনসভা নগ্ন হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল তবে এর পাশাপাশি আরো কাহিনী রয়েছে: কোভিডের এই বিপর্যয় চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছে ভারতে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা উপেক্ষিত, কতটা নাজুক। হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে - এমন করুণ দৃশ্য ভারতের স্বাস্থ্য অবকাঠামোর বেহাল দশা নগ্ন করে দিয়েছে।একজন বিশেষজ্ঞের ভাষায়, ভারতের “ জনস্বাস্থ্য অবকাঠামো সবসময়ই ভঙ্গুর ছিল। ধনী এবং মধ্যবিত্তরা সেটা এখন টের পাচ্ছে।“ ভারতে অবস্থাপন্নরা সবসময় বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেছে, কিন্তু দরিদ্র জনগণ সবসময় এমনকি একজন ডাক্তারের দেখা পেতেও চরম ভুগেছে। ভারতে গত ছয় বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হচ্ছে জিডিপির ৩.৬ শতাংশের মত। ব্রিকস জোটের পাঁচটি দেশের মধ্যে এটি সবচেয়ে কম - ব্রাজিলে স্বাস্থ্যখাতে ব্যায় সবচেয়ে বেশি ৯.২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৮.১ শতাংশ, রাশিয়ায় ৫.১ শতাংশ এবং চীনে ৫ শতাংশ (২০১৮ সালের হিসাবে)। সেই তুলনায় উন্নত দেশগুলো তাদের স্বাস্থ্যখাতে অনেক বেশি খরচ করে। যেমন ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করেছে তাদের জিডিপির ১৯.৯ শতাংশ এবং জার্মানি করেছে ১১.২ শতাংশ। এমনকি শ্রীলংকা বা থাইল্যান্ডের মত দেশও ভারতের চেয়ে স্বাস্থ্যখাতে বেশি খরচ করে। ভারতে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে ১০ জনেরও কম ডাক্তার। কোনো কোনো রাজ্যে এই সংখ্যা পাঁচেরও কম। মানুষকে কালোবাজার থেকে হাজার হাজার টাকা খরচ করে অক্সিজেন জোগাড় করতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তা রি-ফিল করতে হচ্ছে ভঙ্গুর প্রস্তুতি কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে গত বছর কয়েকটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করা হয়। কিন্তু তারপরও অক্সিজেন, হাসপাতাল বেড বা ওষুধের এই সংকট দেখে অনেক বিশেষজ্ঞ বিস্মিত হচ্ছেন। “প্রথম দফা সংক্রমণ যখন কমছিল, তখনই দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য তাদের প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি ছিল। অক্সিজেন বা রেমডিসিভিরের মতো ওষুধ মজুত করে রাখা জরুরি ছিল। উৎপাদন বাড়ানো দরকার ছিল, “ বিবিসিকে বলেন মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক স্বাস্থ্য সচিব মহেশ জাগাডে। সরকার এখন এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে অক্সিজেন নেওয়ার জন্য বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে। শিল্পে অক্সিজেনের ব্যবহার বন্ধ করেছে। কিন্তু অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মরতে শুরু করার পরই শুধু এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। “এই পরিকল্পনা-হীনতার যা ফল হয়েছে তা হলো মানুষকে কালোবাজার থেকে হাজার হাজার টাকা খরচ করে অক্সিজেন জোগাড় করতে হচ্ছে। তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তা রি-ফিল করতে হচ্ছে, “ বলেন ড. লাহারিয়া। সেই সাথে, যাদের পকেটে টাকা আছে তাদেরকে চড়া দামে রেমডিসিভির এবং টোসিলিজুমাবের মত ওষুধ কালোবাজার থেকে কিনতে হচ্ছে। রেমডিসিভির তৈরি করে এমন একটি ওষুধ কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে ওষুধের কোনো চাহিদাই ছিলনা। “সরকার কেনার অর্ডার দিলে আমরা ওষুধ তৈরি করে মজুদ করে রাখতাম। তাহলে কোনো সংকট হতো না। এখন আমরা উৎপাদন অনেক বাড়িয়েছি, কিন্তু চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে।“ ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে করে মুম্বাই, দিল্লি থেকে হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক গ্রামে ফিরে গেছে। ফলে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড সংক্রমণ ব্যতিক্রমী কেরালা তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার প্রস্তুতি ছিল অনেক ভালো। রাজ্যের কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য ড এ ফাতাহউদ্দিন বলেন, তাদের রাজ্যে অক্সিজেন বা ওষুধের কোনো সংকট নেই কারণ তারা অক্টোবর থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। মি জাগাডে বলেন, অন্য রাজ্যগুলোরও কেরালার মত প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু সাবধান হওয়ার জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে, এবং কোভিড সংক্রমণ এখন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। “যে কোনো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আপনাকে বলবেন যে দুর্বল একটি স্বাস্থ্য অবকাঠামোকে কয়েক মাসের মধ্যে শক্তিশালী করার কোনো উপায় নেই,“ বিবিসিকে বলেন দিল্লিতে একটি বড় বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। “এখন কোভিডের সাথে যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যত বেশি সংখ্যায় মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাতে হাসপাতালের ওপর চাপ কমে।“ ভারত জুলাইয়ের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিল। কিন্তু ড. লাহারিয়া বলছেন সেইমত যথেষ্ট ভ্যাকসিন জোগাড়ের পরিকল্পনা সরকারের ছিল না। “বরঞ্চ ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিশ্চিত না করেই সরকার সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।“ করোনা ভাইরাস: অক্সিজেনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন দিল্লির বাসিন্দারা এখন পর্যন্ত ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র দুই কোটি ৬০ লাখ মানুষ দু-ডোজ টিকা নিয়েছেন। ১২ কোটি ৪০ লাখ লোক প্রথম ডোজ পেয়েছেন। ৪৫ বছরের উপরের জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন দিতে সরকারের হাতে ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন লাগবে। কিন্তু তার জোগাড় অনিশ্চিত। দুর্ভাগ্য যে ভারতকে বিশ্বের ওষুধ প্রস্তুতকারী হিসাবে দেখা হলেও তারাই এখন ওষুধ এবং ভ্যাকসিনের সংকটে ভুগছে। ড লাহারিয়া বলছেন এই পরিস্থিতি থেকে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলোর শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে তাদেরকে বিনিয়োগ অনেক বাড়াতে হবে কারণ “এটিই বিশ্বের শেষ প্যানডেমিক নয়।“ “ভবিষ্যতে আরেকটি প্যানডেমিক, মানুষ যা ধারনা করছে, তার চেয়েও দ্রুত আসবে।“
news-51705705
https://www.bbc.com/bengali/news-51705705
মুজিব জন্মশতবার্ষিকী: শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার বেকার হোস্টেল ও অন্যান্য এলাকায় একদিন
সালটা ১৯৪৬, ফেব্রুয়ারি মাস। ৭৪ বছর আগের ঘটনা।
বেকার হোস্টেলে 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ'-তে শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সামনে দিয়ে কয়েকজন ছাত্র বন্ধুর সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক নীহার রঞ্জন চক্রবর্তী। সেটা ছিল রশিদ আলি দিবস। ক্যাপ্টেন রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য। তাঁর গ্রেপ্তারী আর কারাদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ব্যাপক গণ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। "রশিদ আলি দিবসে মুজিবকে দেখেছি খুব প্রমিনেন্ট রোল প্লে করতে। আমি নিজেও একদিন লালবাজারে কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভে লাঠির বাড়ি খেলাম। তারপর একদিন মেডিক্যাল কলেজের সামনে দিয়ে আমরা কয়েকজন হেঁটে ফিরছি। হঠাৎ দেখি মুজিব। এসে বলল, কার্ফু দিয়ে দিয়েছে। এবার চলে যান। ব্যাটারা গুলি করতে পারে। সে অন্য কোথাও চলে গেল, আর আমরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে আইন কলেজ হোস্টেলে চলে গেলাম," বলছিলেন নীহার রঞ্জন চক্রবর্তী। মিস্টার চক্রবর্তীর বয়স এখন ৯৬। অনেক কিছুই আর স্মরণে নেই। কথা বলতে বলতে হঠাৎ মনে পড়ে যাচ্ছিল কোনও ঘটনা। যেভাবে তার মনে পড়ল শেখ মুজিবুর রহমান যে একদিন তাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন গুলি চলতে পারে বলে। সম্প্রতি একটি সারাটা দিন মধ্য কলকাতার নানা এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছি, যেসব জায়গা বা ভবন শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, সেখানে। সবশেষে গিয়েছিলাম মি. চক্রবর্তীর বাড়িতে। চারদিকে সব অ্যান্টিক জিনিষপত্র সাজানো। একটা পালঙ্ক, যেটি তৈরি হয়েছিল ১৮৬৫ সালে। এই হোস্টেলে থাকতেন শেখ মুজিবুর রহমান। একটা ঝাড়বাতি ১৮৩৮ সালে রাণী ভিক্টোরিয়ার অভিষেকের বছরের। ইংল্যান্ডের একটি কোম্পানি সেই অভিষেককে স্মরণীয় করে রাখতে তৈরি করেছিল মাত্র কয়েকটি ওই ঝাড়বাতি। এরকমই একটা ঘরে বসে ছিলেন নীহার রঞ্জন চক্রবর্তী। শেখ মুজিবুর রহমান যখন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র, একই সঙ্গে মুসলিম লীগ আর ছাত্র লীগের সংগঠক, সেই সময়েই ছাত্র রাজনীতি করছেন মি. চক্রবর্তীও। আদতে কুমিল্লার মানুষ। তাই সেখান থেকে আসা ইসলামিয়া কলেজের অনেক ছাত্র আর বেকার হোস্টেলের বোর্ডারদের সঙ্গে পুরনো বন্ধুত্ব তার। তাই মাঝে মাঝেই শেখ মুজিবুর রহমানের হোস্টেলে যাওয়া আসা - চেনা পরিচিতি - আলাপ। "ইলিয়ট হোস্টেল আর বেকার হোস্টেল পাশাপাশি, আমরা ঠাট্টা করে বলতাম ইডিয়ট হোস্টেল", অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে নিজেই লিখেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। "সে যে বছর ইসলামিয়া কলেজের স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সেক্রেটারি, আমিও সেবছরই স্কটিশ চার্চ কলেজের সেক্রেটারি হতে কিছুটা বাধ্য হই দাদাদের কথায়। ওদের কলেজে আমার বন্ধুবান্ধবের কাছে শুনতাম খুব শক্তিশালী সংগঠক ছিল। কলেজ ইউনিয়নটা নাকি খুব ভাল চালাতো," পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছিল নীহার রঞ্জন চক্রবর্তীর। মি. চক্রবর্তীর কথা শোনার আগে সেদিন দুপুরেই গিয়েছিলাম মৌলানা আজাদ কলেজে। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের নাম দুবার পাল্টিয়েছে। প্রথমে এটাই ছিল ইসলামিয়া কলেজ, যেখানে শেখ মুজিব পড়তে এসেছিলেন। তারপরে ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয়বার নাম পাল্টিয়ে হয় সেন্ট্রাল ক্যালকাটা কলেজ। আরো পড়ুন: শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম দেখা হওয়ার দিনটি আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মের চোখে শেখ মুজিব শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডে যেমনটা ছিল ভারতের প্রতিক্রিয়া শেখ মুজিব হত্যার পর জেনারেল জিয়া যে মন্তব্য করেছিলেন মৌলানা আজাদ কলেজ। তবে শেখ মুজিবুর রহমান যখন এখানে পড়তে এসেছিলেন, তখন নাম ছিল ইসলামিয়া কলেজ। ১৯৬০ সাল থেকে মৌলানা আজাদ কলেজ। কলকাতার নামকরা সরকারি কলেজগুলির একটি। কলেজের দোতলায় দুটো বোর্ড আছে ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদকদের নাম লেখা। 'বার্মা টিক' কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো বোর্ডে রয়েছে সেই প্রথম বছর থেকে কারা ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৫-৪৬ সালের পাশে লেখা আছে 'এম রহমান'। ওই বছরের সম্পাদকের পুরো নামটা যদি লেখা থাকত, তাহলে সেটা হত শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান মুহম্মদ জীশান। অর্থনীতির ছাত্র। "আমি যখন এই কলেজে ভর্তির সুযোগ পাই, তখনই আমার বড়ভাই বলে যে এখানেই আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও পড়তেন। আমি যে কলেজে পড়ছি, সেখানেই তিনিও পড়েছেন, এতে যে আমার কতটা গর্ব হয়, বোঝানো কঠিন," বলছিলেন মৌলানা আজাদ কলেজের বাংলাদেশি ছাত্র নাজমুল হক আবিদ। কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরসূরি হিসাবে গর্বিত বর্তমান সময়ের কয়েকজন ছাত্রী আলিয়া সুলতানা, সহেলী দাস বা সরসী দত্ত মজুমদারও। কলেজে পড়লেও খুব একটা বেশি পড়াশোনা করার সময় ছিল না শেখ মুজিবুরের। আত্মজীবনীতে লিখেছেন, "কলেজে যখন ক্লাস করতে যেতাম প্রফেসর সাহেবরা জানতেন, আর দু'একজন বলতেনও, 'কি সময় পেয়েছো কলেজে আসতে?' আমি কোনো উত্তর না দিয়ে নিজেই হাসতাম, সহপাঠীরাও হাসতো। পড়তে চাইলেই কি আর লেখাপড়া করা যায়! ক্যাবিনেট মিশন তখন ভারতবর্ষে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করছে ক্যাবিনেট মিশনের সাথে। আমরাও পাকিস্তান না মানলে, কোনোকিছু মানব না। মুসলিম লীগ ও মিল্লাত অফিসে রোজ চায়ের কাপে ঝড় উঠত।" বেকার হোস্টেলের তিনতলার ২৪ নম্বর ঘরে থাকতেন শেখ মুজিব। সেটিকে এখন জাদুঘর করা হয়েছে, নাম দেওয়া হয়েছে 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ'। সেখানে রয়েছে নানা স্মৃতিচিহ্ন, বই, ছবি। কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক হওয়ার কথা আর তার ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলতেই লজ্জিত হয়ে মুহম্মদ জীশান বললেন, "কোথায় উনি আর কোথায় আমি! এটা ঠিকই উনি আমাদের কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান ছিলেন আর এখন আমি সেই ইউনিয়নের প্রধান, এজন্য গর্ব তো হয়ই। তবে তাঁর সঙ্গে আমার তুলনা হয় নাকি! উনি তো আমার, আমাদের সবার আইডল।" নাজমুল হক আবিদ থাকেন সেই বেকার হোস্টেলে, যেখানে তিনতলার ২৪ নম্বর ঘরে থাকতেন শেখ মুজিব। হোস্টেলের প্রাক্তন এই বোর্ডারের ঘরটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ'। শেখ মুজিবুর রহমানের বসবাসের কক্ষটিকে এখন জাদুঘর করা হয়েছে। হোস্টেলের সুপারিন্টেনডেন্ট সৈয়দ শাহ মারহুনুল ইরশাদ আল কাদরি নিয়ে গিয়েছিলেন সেই মিউজিয়ামটা দেখাতে। "উনি থাকতেন ২৪ নম্বর রুমে। কিন্তু ঘরটা এতই ছোট, যে আমরা পাশের ২৩ নম্বরটিকেও সংযোজন করে একটা মিউজিয়াম বানিয়েছি। এখানে যে চেয়ার, পড়ার টেবিল, খাট, আলমারি আছে, এগুলো তাঁরই ব্যবহার করা। এগুলোতে তাঁর ছোঁয়া লেগে আছে। হোস্টেলের সুপার হিসাবে এই ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারাটা আমার কাছে ভীষণ গর্বের," বলছিলেন অধ্যাপক আলকাদরি। স্মৃতি কক্ষে যেমন শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ মূর্তি আছে, তেমনই আছে অনেক ছবি আর তাঁকে নিয়ে লেখা বই। চোখে পড়ল 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'টিও সাজানো রয়েছে। অধ্যাপক আলকাদরি বলছিলেন, "কী অদ্ভুত দেখুন। এই ঘরে থাকার সময়কার অভিজ্ঞতা তিনি লিখে গেছেন, আর সেই ঘরেই তাঁর সেই লেখা বই রয়েছে।" বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক ছবি। ওই হোস্টেলেই মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন নীহার রঞ্জন চক্রবর্তী। দেখা হত শেখ মুজিবুরের সঙ্গেও। "হোস্টেলে কার অসুখ, কার কী সমস্যা, সব ওর জানা থাকত। ওর ব্যবহারটা খুবই ভাল ছিল বলে সকলের সঙ্গেই ভাব জমিয়ে ফেলতে পারত। মুসলিম লীগ করত ঠিকই, কিন্তু খুব লিবারেল ছিল। সোহরাওয়ার্দীকে খুব মান্য করত ও।" মুসলিম লীগের দপ্তরটা সে সময়ে ঠিক কোথায় ছিল, তা আর মনে করতে পারলেন না মি. চক্রবর্তী। একটা ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিলাম - ২ আর ৩ নম্বর ওয়েলেসলি ফার্স্ট লেন। ওই ঠিকানাটাই যে সঠিক, সেটা নিশ্চিত করলেন তথ্য চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার। ভারত ভাগ হওয়া নিয়ে একটি তথ্যচিত্র করতে গিয়ে সেই সময়ের মুসলিম লীগ রাজনীতির নানা তথ্য খুঁজে বার করেছেন তিনি। নিজেই নিয়ে গিয়েছিলেন আমাকে সেখানে। পুরনো ২ নম্বর বাড়িটা ভেঙ্গে সেখানে এখন বহুতল উঠেছে। তবে ৩ নম্বর বাড়িটা আছে সেই পুরনো কলেবরেই। "এই যে ২ আর ৩ নম্বর বাড়ি দুটো - এখান থেকে মুসলিম লীগের সব কাজকর্ম চলত, পত্রিকা বের হত। আর শুধু এই গলি নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে ছিল এই অঞ্চলের আরও নানা রাস্তায় - যেমন রিপন স্ট্রীট, আলিমুদ্দিন স্ট্রীট। তার সাংগঠনিক ক্ষমতার যে উন্মেষ আমরা পরে দেখেছি, তার শুরুটা কিন্তু এখানেই। তিনি যখন এইসব এলাকায় কাজ করছেন, তখন উত্তাল হয়ে উঠেছে উপমহাদেশের রাজনীতি। ভাবুন, এই রাস্তা দিয়ে পাকিস্তানের দাবী নিয়ে আলোচনা করতে করতে হাঁটছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর তাঁর তরুণ শিষ্য শেখ মুজিব!" বলছিলেন মি. ঘোষ দস্তিদার। ১৯৪৬-এর কলকাতার ভয়াবহ দাঙ্গা, যা 'গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং' নামে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে, সেই সময়েও এই সব অলিতে গলিতে তরুণ শেখ মুজিবুর ছুটে বেরিয়েছেন। কখনও হিন্দু পরিবারকে উদ্ধার করে ব্যবস্থা করছেন হিন্দু এলাকায় পাঠানোর, কখনও মুসলমান ছাত্রদের হোস্টেলে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে সেই দাঙ্গার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, "জিন্নাহ সাহেব ১৬ আগস্ট তারিখে 'ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে' ঘোষণা করলেন। ... কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার নেতারা এই 'প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস', তাদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা হয়েছে বলে বিবৃতি দিতে শুরু করলেন।.. সোহরাওয়ার্দী সাহেব তখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী। তিনিও বলে দিলেন 'শান্তিপূর্ণভাবে যেন এই দিনটা পালন করা হয়।" নীহার রঞ্জন চক্রবর্তী। "১৬ আগস্ট কলকাতার গড়ের মাঠে সভা হবে। ... কলকাতার মুসলমান ছাত্ররা ইসলামিয়া কলেজে সকাল দশটায় জড়ো হবে। আমার উপর ভার দেওয়া হল ইসলামিয়া কলেজে থাকতে। শুধু সকাল সাতটায় আমরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব মুসলিম লীগের পতাকা উত্তোলন করতে। আমি ও নূরুদ্দিন সাইকেলে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হলাম। পতাকা উত্তোলন করলাম। কেউই আমাদের বাধা দিল না। আমরা চলে আসার পরে পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিল শুনেছিলাম। আমরা কলেজ স্ট্রিট থেকে বউবাজার হয়ে আবার ইসলামিয়া কলেজে ফিরে এলাম।... আর যদি আধা ঘণ্টা দেরি করে আমরা বউবাজার হয়ে আসতাম তবে আমার ও নূরুদ্দিনের লাশও আর কেউ খুঁজে পেত না," আত্মজীবনীর ৬৩ নম্বর পাতায় লিখেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। কয়েক পাতা পরে তিনি আবার লিখেছেন, "কলকাতা শহরে শুধু মরা মানুষের লাশ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। মহল্লার পর মহল্লা আগুনে পুড়ে গিয়েছে। এক ভয়াবহ দৃশ্য। মানুষ মানুষকে এইভাবে হত্যা করতে পারে, চিন্তা করতেও ভয় হয়!" "মুসলিম লীগের নিশ্চয়ই অনেক দোষ ছিল। সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসাবে তারা প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু এটা বললে বোধহয় ঠিক হবে না, ১৯৪০ এর দশক থেকে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সাধারণ স্তরে জনপ্রিয়তা লাভ করল, সেটা শুধুই মুসলিম লীগের জন্য হয়েছে। মুসলিম লীগ যখন সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে, উল্টোদিকে হিন্দু মহাসভাও কিন্তু হিন্দু জাতীয়তাবাদ, হিন্দু সত্তাকে সাধারণের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আবার আমার গবেষণায় এটাও পেয়েছি যে কংগ্রেসের একটা অংশও কিন্তু হিন্দু মহাসভার সঙ্গে যোগাযোগ রাখত," বলছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সুরঞ্জন দাস। তার কথায়, "এই প্রেক্ষাপটেই ১৯৪৬-এর দাঙ্গাটাকে দেখতে হবে। ওই দাঙ্গার একটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই দাঙ্গা ছিল অনেকটাই সংগঠিত, যা আগের দাঙ্গাগুলো ছিল না।" দাঙ্গার ক্ষত কিছুটা শুকিয়ে আসতেই দেশভাগের সিদ্ধান্ত হল। যে পাকিস্তানের দাবীতে এতগুলো বছর আন্দোলন করলেন শেখ মুজিবুর রহমান বা শহীদ সোহরাওয়ার্দী, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার সময় এগিয়ে এলো। কলকাতার পাট গুটিয়ে ঢাকা ফিরতে হবে শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুজিব জন্মশতবার্ষিকী: কোন আলোকে তাঁকে তুলে ধরা হবে? অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে কলকাতা বাস শেষ করে ঢাকা যাওয়ার প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, "আমাদের পক্ষে কলকাতা থাকা সম্ভবপর না, কারণ অনেককে গ্রেফতার করেছে। জহিরুদ্দিনের বাড়ি তল্লাশি করেছে। আমাদেরও ধরা পড়লে ছাড়বে না। শহীদ সাহেবের কাছে বিদায় নিতে গেলাম। তাঁকে রেখে চলে আসতে আমার মনে খুব কষ্ট হচ্ছিল।... শহীদ সাহেবকে বললাম, "স্যার চলুন পাকিস্তানে, এখানে থেকে কি করবেন? বললেন যেতে তো হবেই, তবে এখন এই হতভাগা মুসলমানদের জন্য কিছু একটা না করে যাই কি করে?... বললাম, "ঢাকা যেতে হবে, শামসুল হক সাহেব খবর দিয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মীদের একটা সভা হবে। পরে আবার একবার এসে দেখা করব।" বললেন, 'এসো।' "সেই উত্তাল সময়ে মুসলিম লীগের রাজনীতি করতেন ঠিকই শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তাঁর আত্মজীবনীতেই আছে যে পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পরে খুব দ্রুতই তাঁর সেই রাজনীতি সম্বন্ধে মোহভঙ্গ হয়েছিল। তিনি ক্রমশ উপলব্ধি করছেন পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে বাঙালীর আত্ম উপলব্ধি সম্ভব হচ্ছে না," বলছিলেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী। শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় চলে যাওয়ার পরে নীহার রঞ্জন চক্রবর্তীর সঙ্গে আর একবারই তাঁর দেখা হয়েছিল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যখন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। "তিনি আমার কথা জেনে খবর পাঠিয়েছিলেন। অনেক লোক তাঁর চারদিকে। দেখেই বললেন, কী, ভাল আছ? আমি বললাম চিনতে পারছেন আমাকে? জবাবে বললেন, চিনব না? আমি কি অত ভুলোমন নাকি," মি. চক্রবর্তীকে বলেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
news-50810709
https://www.bbc.com/bengali/news-50810709
ভারতে নাগরিকত্ব আইন: শঙ্কিত আসামের যেসব হিন্দু-মুসলিম
আসামের বোকো জেলার একটি গঞ্জ এলাকা সমরিয়া।
আসামের বোকো জেলার সমরিয়াতে নতুন নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে 'সত্যাগ্রহ' বা অবস্থান ধর্মঘট সকাল থেকেই প্রস্তুতি চলছিল নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান ধর্মঘটের। অনুষ্ঠানে মাইকে বাজছিল ভূপেন হাজারিকার গান। পাশেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটছিলেন কয়েকজন যুবক। তাদের কাছে খোঁজখবর করে গিয়ে পৌঁছুলাম কিছুটা দূরের গ্রাম ষোলাগাঁওতে যেখানে এন আ রসি থেকে বাদ পড়েছেন অনেক মানুষ। বাঙালি হিন্দু প্রধান এই গ্রামের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষের নাম এন আর সি থেকে বাদ পড়েছে। এক চায়ের দোকানে কথা হলো জগবন্ধু রায়ের সঙ্গে যার পরিবারে চারজন সদস্যের মধ্যে তিনজনেরই নাম এন আর সিতে ওঠে নি। নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পরে কি তারা আশায় আছেন যে এন আর সি থেকে বাদ পড়লেও এখন তারা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন? জগবন্ধু রায় যে খুব স্বস্তিতে রয়েছেন, তা মনে হলোনা। "কেউ কেউ বলছে যে এন আর সিতে যাদের নাম আসে নি, তারা নাগরিকত্ব পাবে ঠিকই কিন্তু শরণার্থী হিসাবে। আমরা কেন শরণার্থী হিসাবে নাগরিকত্ব নিতে যাব! আমরা তো এখানকারই বাসিন্দা!" পাশেই ছিলেন গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা ঈশ্বর চন্দ্র রায়। তিনিও ভরসা পাচ্ছেন না। "আমাদের কোনও লাভ-অলাভ কিছুই হবে না। উল্টে অশান্তি ডেকে এনেছে। এখানে আমরা বাঙালী হিন্দু আছি, অসমীয়ারা আছে, আর মুসলমানরা আছে, তারাও বাঙালী। এই আইনের পরে তিনপক্ষের মধ্যে একটা অশান্তি লাগিয়ে দিল সরকার।" আসামে বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হয় নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে জ্বলছে পশ্চিমবঙ্গ 'সরকার বলছে তো এত আমাদের (হিন্দুদের) ভালো হবে...অঅমরা অতশত বুঝিনা'- সুস্মিতা রায় বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন গ্রামের দুই নারী সরস্বতী রায় আর সুস্মিতা রায় - একজন প্রবীণ, আরেকজন মধ্যবয়সী। নাগরিকত্ব আইনে হিন্দু বাঙালীরা কতটা লাভবান হবেন - এই প্রশ্নে সরস্বতী রায় বলেন, "নতুন আইনটা ঠিক কী জানি না, তবে শুনছি এন আর সি থেকে যারা বাদ গেছে, তাদের ভালই হবে। তাদের নাম এন আর সিতে ঢুকবে।" আর সুস্মিতা রায়ের কথা ছিল, "সরকার বলছে এতে আমাদের ভাল হবে, আবার অনেকে বলছে এটা খারাপ। এখন সরকারই বুঝবে আমাদের কীসে ভাল হবে। আমরা সাধারণ মানুষ তো অতশত বুঝি না!" মুসলিম প্রধান এক গ্রামের কথা ষোলাগাঁও থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের দিকে এগিয়ে বেশ কিছুটা দূরে সনতলী মূলত মুসলমান প্রধান এলাকা। গ্রামের বাজারে দেখা হল গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়র গবেষক ইউনুস আলি মোল্লার সঙ্গে। তার আশঙ্কা এই আইন করা হয়েছে মুসলমানদের দেশছাড়া করতে। "নাগরিকত্ব আইনের জোরে এন আর সি থেকে বাদ পড়া হিন্দু ভাইদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এন আর সি থেকে তো অনেক লাখ মুসলমানও বাদ পড়েছেন। তাদের কী হবে! আমার মনে হয় সরকার চাইছে মুসলমানদের দেশ ছাড়া করতে।" ওই সনতলি বাজারে দেখা হয় সিরাজুল হক ভুঁইয়ার সঙ্গে। নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ তুলতেই রাগে ফেটে পড়েলেন তিনি,"এটা মুসলিম বিদ্বেষী আইন! অন্যান্য যত ধর্মের মানুষ আছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে এই আইনে - শুধু মুসলমানরা বাদ ! এর অর্থটা কী!" ফেরার পথে সমরিয়ার হাটে দেখলাম নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যে সত্যাগ্রহের প্রস্তুতি চলছিল সকালে, সেখানে বহু নারী পুরুষ - হিন্দু মুসলমান- অসমীয়া মানুষ জড়ো হয়েছেন। নতুন নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে সমরিয়ার অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন হিন্দু-মুসলিম-অসমীয়া নারী-পুরষ তাদের মধ্যে অষ্টমী কলিতা নামে একজনের সাথে কথা হলো। তার কথা ছিল এরকম - আসামে হিন্দু-মুসলমান সকলেই একসঙ্গে বসবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কারও মধ্যে কোনও ঝগড়া নে।. কিন্তু নতুন আইন করে যদি বিদেশীদের এখানে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয় - তা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। "হিন্দু হোক বা মুসলমান - স্থানীয় ছেলেমেয়েরাই বেকার বসে আছে - এই অবস্থায় বাইরের মানুষকে নতুন করে নিয়ে আসা হলে স্থানীয়রা কী করবে?" তার সঙ্গে কথা শেষের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল তালি বাজিয়ে গান। অসমীয়ারা চরমভাবে ক্ষেপে গেছে নতুন এই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। অসমীয়াদের আশঙ্কা - এর ফলে সেখানে লাখ লাখ বাংলাভাষী হিন্দু নাগরিকত্ব তো পাবেই, সেই সাথে নাগরিকত্বের লোভে বাংলাদেশে থেকে নতুন করে হিন্দুরা এসে ঢুকবে।